
আমি যদি বলাকায় সিনেমা দেখার জার্নির কথা চিন্তা করি, তাইলে রীতিমত অধঃপতন হইছে। কিন্তু এই ঘটনাকে আমি অধঃপতন হিসেবে না দেখে দেখবো নতুন শুরু হিসেবে। সেই দিক থেকে আমার অভিজ্ঞতা মিশ্র। ভালো মন্দ দুই আছে। তা কেন সে প্রসঙ্গে বলার আগে বলি পরিচালক জাকির হোসেন রাজু সম্পর্কে। পরিচালক জাকির হোসেন রাজু বাংলাদেশের আশি ও নব্বই দশকের চলচ্চিত্র আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। তাঁর সমসাময়িকেরা যেখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা পরিচিত হলেও তাদের মূল পেশা দাঁড়িয়েছে অন্য কিছু। সেখানে তিনি তাদের থেকে একটু ব্যাতিক্রম। ব্যতিক্রম এই কারণে যে, তার সময়ের অন্য পরিচালকদের মতো তিনি বিকল্প পথে হাঁটেন নি। তিনি হেঁটেছেন প্রথাগত পথে। এবং এই পথেই রাজুর প্রচেষ্টাও অনুল্লেখ্য নয়। সেই দিক থেকে তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের পরিচিত পথের অনেক শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবেও একজন। পাশাপাশি তার প্রথম চলচ্চিত্র আমাদের শৈশবের নায়ক সালমান শাহ্র ছবি জীবন সংসার। জীবন সংসারের একটা দৃশ্য এখনো আমার মনে আছে। সালমানকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেওয়ার পর সে নিজের পয়সায় রোজগার করে পিতৃতুল্য বড় ভাই আর মাতৃতুল্য ভাবির জন্য মিষ্টি নিয়ে আসে। বাড়ির ভেতর যায় না। বাড়ির চাকরের কাছে এই মিষ্টি দিয়ে পাঠায়। চাকর তার এক ছোট ভাইয়ের প্রথম রোজগারের মিষ্টি বলে ভাই-ভাবিকে খাওয়ায়। এমন আবেগময় দৃশ্য তিনি নিজে নির্মাণ করছিলেন। তার এই ছবি ঐ সময় সুপারহিট হয়েছিলো। এর পরবর্তিতেও তিনি বেশ চমৎকার সৃজনশীল সামাজিক গল্প নিয়ে এফডিসির ভেতর থেকেই ছবি করেছেন। আর এই কারণেই তার কাছে প্রত্যাশাও অন্য সবার চেয়ে একটু বেশীই। সেই প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে বেশ কিছুদিন পর তিনি হাজির হলেন ‘পোড়ামন’ ছবি নিয়ে। আর সেই ছবি আমি আর আমার এক বন্ধু বলাকায় দেখে ফেলেছি। ছবি দেখার পর প্রথম যে কথা আমি বলবো, তা হলো পারলে ছবিটা দেখে ফেলুন।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। আমাদের দেশে নব্বই দশকের চলচ্চিত্র আন্দোলনকারীরা কিভাবে
কিভাবে যেনো ত্রিশ-পয়ত্রিশটা ইরানি ছবির ভিডিও টেপ আবিষ্কার করলো। আর এ নিয়ে তাদের কত উল্লাশ আর মাতামাতি। ইরানি ছবির আদলে তারা ছবি বানানোর স্বপ্নও দেখেছিলো। জাকির হোসেন রাজুর পরিচালক সত্ত্বা সৃষ্টি হওয়া সময়ের
সাথে এই কথাগুলোর স্মরণ করছি এই কারণে যে, এখন একটা ছেলে ইনারিতু, কিম কি দুক, কার্লোস রেগাদাস, ক্রিস্টোফার নোলান, অনুরাগ কাশ্যপদের অহরহ আবিষ্কার করে তাদের মতো করে সিনেমা
বানানোর স্বপ্ন দেখে। তাই
তাদের কাছে ২০১০ সালে পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতের তামিল নাডুতে বা কেরালায় কি ছবি
নির্মাণ হবে তা তো তাদের জানাই থাকে। এমনকি
সেইখানে কোন ছবিটা সমালোচনায় রেটিং বেশী পায়, কোনটা ব্যবসা ভালো করে এই খবরও তাদের জন্য কিছুই না। এইটা বোধহয় অনেকে জানেই না। এই কথাগুলো বলা ঐ জাকির হোসেন রাজু প্রসঙ্গেই। এই প্রসঙ্গ পরে আসুক। আগে
আসুক তার নির্মিত ‘পোড়ামন’ কেমন করলো বলে আমার মনে হচ্ছে।
পোড়ামনের শুরুটা অনেকটা জোর করে
গল্পে বেশ কিছু চরিত্রের এস্টাব্লিশ করার মাধ্যমে। শুরুর সিন দেখে ভাবছিলাম গল্পে অনেক বেশী জটিলতা/ প্যাচগোছ থাকবে। কিন্তু না। দ্বিতীয়
তৃতীয় সিন থেকেই বিরতির আগ পর্যন্ত পুরোটাই ফ্ল্যাশ ব্যাক। এবং ঐদিনটা ছিলো ঈদের আগের দিন। মনে রাইখ্যেন, ঈদের
আগের দিন। ঐদিন ফ্ল্যাশব্যাকে গল্প পিছাইলো। এই প্রসঙ্গে কোনও আপত্তি নাই। বিরতির পর দেখলাম ঐ গল্পের নায়ক পুলিশ হাজত থেকে পালাইছে। আর ডিআইজির সফর উপলক্ষে এই খবর ধামাচাপা পড়ে গেলেও ওসি
সাহেবের চাকরি বাঁচানোর চিন্তায় আসামী ধরতে যায়। ঐদিন
রাতে আর বাসায় ফিরে নি। তার
পরের দিন কিন্তু ঈদ মনে রাইখ্যেন। গিয়া
দেখে, আমগো নায়কের প্রেমিকা
নায়িকার বিয়া হইবো। বাড়িঘর
সাজানো হইতেছে। বর যাত্রীও আসে। যাই
হোক এইখানে ছবি পুরাই হিট। কারণ
নায়ক মারামারি করতে জানে। পিটাইয়া
তক্তা বানাইয়া ফেলছে। এইসব
দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু
পূজা আর ঈদ যদি স্ক্রিপ্ট রাইটার এক কইরা ফেলে তাইলে তো দিনে তিনটা ফিচার ফিল্মের
স্ক্রিপ্ট আমি লিখতে পারি। যাক, আমার এমন স্ক্রিপ্ট লেখার আগ্রহ নাই। এইভাবে বহু নাটকিয়তায় সিনেমা শেষ হইলো। সিনেমার ক্ষণে ক্ষণে দর্শকদের হাতে তালি, শিষ বাজানো আর নিজেদের প্রত্যাশার সাথে গল্পের মিল হইলে
পরে তালি শিষ দুইটাই একসাথে এইগুলো ব্যাপক এনজয়ের বিষয় ছিলো আমার জন্য।
ছবি দেখতে দেখতে মনে হইতেছিলো, পুরো ছবি বান্দরবানের মতো অসাধারণ লোকেশনে শ্যুট করা। এই ছবি মার্কেটিংয়ের একটা বড় পয়েন্টই হইতে পারতো
বাংলাদেশের পাহাড়ি প্রকৃতি। কিন্তু
দুই একটা গানে হাতে গোনা কয়েকটা দৃশ্যের দৃশ্যায়ন ছাড়া ঐ প্রকৃতির ছবিই চোখে
পড়লো না। অন্তত এই বান্দরবান দেইখ্যা আমি মোটেও বান্দরবানের
প্রকৃতির আহ্বানে সাড়া দিবো না। যতটা
না বন্ধুদের কাছ থেকে বলা, লেখা
ও তোলা ছবি দেখে আহ্বানে সাড়া দিতে রাজি।
এছাড়া এই ছবি দেখার আগে এই ছবি
সম্পর্কে যা জেনে গেছি তাতে এই সিনেমার গল্পটা না বলে ঐ মায়না ছবির গল্পটাই বলি।
তামিল প্রযোজক ও পরিচালক প্রভু
সলোমনের সপ্তম ছবি। উইকিপিডিয়ার
তথ্য মতে এই ছবির বাজেট ছিলো ৫০ কোটি রুপি। আমাদের
‘পোড়ামন’ ছবির বোধহয় এইখান থেকেই শুরু হইছে পেছানো। তার বাজেট কোনও ভাবেই ষাট লাখের বেশী হবে না। অন্তত তাই ধারণা করি। আর এই কারণে গল্প, সংলাপ, চরিত্রের
চিত্রায়ন প্রায় একই রকম করে নির্মাণ চেষ্টা করলেও মায়নার আশে পাশেও যায় নি এই
ছবি। তবে যারা তামিল ছবি দেখে না, খোঁজ খবর রাখে না তাদের কাছে এ্ই গল্প একেবারেই নতুন। আর তাদেরকেই সম্ভবত লক্ষ করে এই ছবির দর্শক চিন্তা করে
পরিচালক জাকির হোসেন রাজু এই ছবি নির্মাণ করছে। সেই লক্ষ্যে সফলতা থাকলেও আমার প্রশ্ন, নকল ছবিই যদি বানাবেন তবে তার জন্য জাকির হোসেন রাজুর মতো
পরিচালক কেন? তারপরো আমার একটা চাওয়া
আছে। যদি নকল ছবি দিয়াও সিনেমা হল মালিকরা হল টিকায়া রাখতে
পারে তবে চলুক।
লেখার গতি দারুন।
উত্তরমুছুনতবে 'পোড়ামন' সম্পর্কিত আলোচনা কম হইছে মনে হচ্ছে।
আরেকটু হইলে পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য হত।
সুজন ভাই। আসলে হইছে কি, ঐ নকল ছবিটা দেখার পর আর এই ছবিটা নিয়া কথা বলার সমস্ত আগ্রহ হারাইয়া ফেলছিলাম। নকল মানে কি? একদম হুবহু নকলের চেষ্টা। যেইটা আগেও আমাদের দেশে হইছে। কিন্তু যেখানে আশা থাকে সেখানে না হইলেই বরঙ ভালো হইতো।
মুছুন