![]() |
বিনয় মজুমদার |
এ এক
আশ্চর্য প্রদীপ। যে
প্রদীপ নিজে জ্বলে-পুড়ে শুধু আলোই দেয় না মনের ভেতর জ্বালায় শিখার বুদবুদ। যেখান থেকে তরল আগুন এক সময় দৃঢ় থেকে
দৃঢ়তর হয়ে দেহের ভেতর, মনের ভেতর জ্বলে উঠে বিনয়। কিন্তু মোটেও বিনয় তৈরি হয় না। বিপরীতে
আগ্রাসন তৈরি হয়। এই
আগ্রাসনে বিনয় পাঠের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অন্য সকল পাঠ্য তালিকা স্থগিত হয়ে যায়। কদাচিৎ যদিও অন্য কোনও পাঠ্যপুস্তক (যে
বই পড়ার প্রয়োজন) হাতের কাছে চলে আসে তাও টেকে না। যদিও নিজের মনের মতো করে ভাবলে
বিনয়ের কবিতা ও তার ব্যক্তি জীবনে তুমুল বৈপরিত্য চোখে পরে। হতে পারে তা আমার সাময়িক ভাবনার পরিণতি। কিন্তু বৈপরিত্য তার জীবনে ও কবিতার রয়েছেই। তা জীবন ও কবিতা একই সমান্তরালে দেখলেই
বেড়িয়ে আসে। সেই
বিনয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব অল্প দিনের। অবশ্য এর চেয়ে অল্পদিনের পরিচয়েও আমার বন্ধু
হওয়া সহজ।
বিনয়কে নিয়ে সম্ভবত
প্রথম যে বাক্যটি শুনেছিলাম তা হলো- ‘অসম্ভব অভিমানী কবি।’ তখন
বিনয়ের দ্বার খুলে দেয়ার ভূমিকাকারী বিনয়কে দেখাত বোদলেয়ারের মতো করে। তখন পর্যন্ত বিনয়ের দুটো কবিতাই
মাত্র পড়া হয়েছে। আর
বিনয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা-সমালোচনা। এই আলোচনা-সমালোচনা পড়ার পর কেবল তাঁর কবিতায় জীবন খুঁজেছি, জীবনে
কবিতা খুঁজেছি। যখন মিল খুঁজে পেয়েছি তখন ভালো লেগেছে। যখন অমিল খুঁজে পেয়েছি তখন মন্দ
লেগেছে। জীবন
ও বাস্তবতার সাথে কবিতার খোজা-খোঁজিতে যত বৈপরিত্য দেখেছি তখনই তাকে তাঁর কবিতার দূর্বলতা
হিসেবে চোখে লেগেছে। বাস্তব
জীবনে যে কবির ভগ্নদশার পরিচালক গায়ত্রী চক্রবর্তি। সেই চক্রবর্তিকে নিয়ে কেন কবিতা
লেখা হলো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - ‘কাউকে নিয়ে তো লিখতে হয়- আমগাছ, কাঠালগাছ, রজনীগন্ধ্যা
নিয়ে কি চিরকাল লেখা যায়?’ বিনয় মূলত এই ধাঁচেরই একজন কবি। নির্মাণ বিনির্মাণের মাঝে তিনি স্বতন্ত্র।
তাঁর কবিতার
ভেতরকার গুপ্ততা ধীরে ধীরে আবার হঠাৎই ঔজ্জ্বল্যতা ছড়ায়। ব্যক্তির জীবন বৈপরিত্য পেয়ে কবিতায় এসেছে। কবিতা এই বৈপরিত্য পেয়ে রূপসীও হয়েছে মাঝে
মাঝে। কিন্তু কিছু কিছু
বৈপরিত্য তীব্র আকারে ধরা পড়ে চোখে। বিনয়ের কবিতায় বিনয় কিছু আপ্তবাক্য বা দর্শন তৈরি করেছেন। এই দর্শনের মাঝে একটা হলো-
মানুষ
নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়।
এই আপ্তবাক্য বা দর্শনটির কথা আমাদের
জানাই আছে। তা
জানতে গিয়েই আমারা তার কবিতার শুরুটা নিশ্চয়ই পড়ে থাকি। শুরুর ভাবনায় একটা বৈপরিত্য বসবাস করছে। যেমন
শুরুতেই রয়েছে-
মুকুরে
প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে।
এই বাক্য
দিয়ে শুরু করে যখন পূর্বোক্ত বাক্যে শেষ হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য
যদি শেষ বাক্যটি না হয়ে যদি সম্পূর্ণ কবিতাটি হয় তাহলে মনে করতে পারি
একই ভাবনার প্রকাশ তিনি সম্পূর্ণ কবিতাটিতে দেখান নি। এই ক্ষেত্রে খুব সহজেই
আরা ভেবে নিতে পারি দুইটি সমাধান- এক. বিনয়ের কবিতার স্টাইল বা ফর্মই
এটা, একই কথা ঘুরিয়ে বলা; দুই. বিনয় হয়তো প্রথম বাক্যটি ভেবেই
লিখতে বসেছিলেন, সর্বশেষ বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে
এসেছে। যদি
তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই চলে আসে তবে তা এটা রূপান্তরের ধারাপাতে বন্দি
হয়ে যায়। ফলে শুরুর কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়েই
সকল কথার অবতারণ নয়। আর
কবিতার শেষটাও অন্য কোথাও। যা একই কবিতায় বৈপরিত্য উপস্থাপন করে। অন্ততঃপক্ষে আমি মনে করি কবি
ও কবিতার ভেতর বৈপরিত্য থাকা সম্ভব। কিন্তু একই কবিতার ভাবে বক্তব্যে তা
কাম্য নয়। তবে
যদি তাই বিনয়-এর নিজস্ব ঢং এর হয়ে থাকে তবে তাই হোক!
0 মন্তব্য(গুলি):