সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

রোজকার কিচেনে নীল আলোর গাছ জন্মায়
আজও কি আকাশের চরিত্র আগের মতই
ধমকি ধামকি দিয়ে প্রেমের গান শোনায়?

সবুজের কাছে একটা চিঠি এসেছে,
প্রাপকের স্থলে লিখা আছে ময়ূরীর নাম
আমরা যেদিন চিড়িয়াখানা দেখতে যাবো সদলবলে
ঐ দিন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ছিলো সেটা

রোজকার এ্যালবামে কোন নীল আলোর গাছ জন্মালে
প্রত্যেকে প্রতিদিন তার নাম রাখার জন্য উতলা হয়ে ওঠে
অথচ তার নাম ছিলো অনামিকা-
এবার আকাশের জন্মদিনে আমরা ঠিক করেছি

কবিতা পাঠের আসর বসাবো

নীল আলোর জন্মদিন

at সোমবার, অক্টোবর ০১, ২০১২  |  No comments

রোজকার কিচেনে নীল আলোর গাছ জন্মায়
আজও কি আকাশের চরিত্র আগের মতই
ধমকি ধামকি দিয়ে প্রেমের গান শোনায়?

সবুজের কাছে একটা চিঠি এসেছে,
প্রাপকের স্থলে লিখা আছে ময়ূরীর নাম
আমরা যেদিন চিড়িয়াখানা দেখতে যাবো সদলবলে
ঐ দিন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ছিলো সেটা

রোজকার এ্যালবামে কোন নীল আলোর গাছ জন্মালে
প্রত্যেকে প্রতিদিন তার নাম রাখার জন্য উতলা হয়ে ওঠে
অথচ তার নাম ছিলো অনামিকা-
এবার আকাশের জন্মদিনে আমরা ঠিক করেছি

কবিতা পাঠের আসর বসাবো

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

অফিস থেইক্যা বাসায় ফেরাটা দুইন্যার ঝামেলা। এই রুটে কোনও কাউন্টার সার্ভিস বাসও নাই। আচানক কথা। শহরের বেবাক রুটে আছে, এই রুটে নাই। অথচ কারও কোনও মাথা ব্যাথা নাই। আরে, মাথা থাকলে না ব্যাথা থাকবো। ১৫ মিনিটের বাসের পথ, গাড়িত উঠতেই লাগে দেড় ঘন্টা। মন চায় ঢাকা ছাইড়া পলাই। আর শালার যামু কই, ঢাকার বাইরে গেলে তো চাকরিও পামু না। পুরা সিস্টেমটাই ঢাকামুখী। আচুদা একটা সিস্টেম বানাইয়া রাখছে মান্দার পোতেরা। হেগোরে গালি দেয়া মানে নিজেরেই গালি দেয়া। পাঁচ বছর পরে পরে তাগোরে ভোট তো আমরাই দেই।
একটানা ক্ষোভের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো এক মহিলা। আমি তার পরে একই বাসে কোনওভাবে উঠে একটা দাঁড়ানোর যায়গা করে নিতে পারছি। তবে আমারও বাসে উঠতে আধাঘন্টার বেশী সময় লাগছে। যা অবস্থা রাস্তার। আর বৃহস্পতিবার তো মনে হয় সব চাকরিজীবী একবারে বাসায় যাইতে চায়। এই অবস্থায় আজকে যে আধা ঘন্টায় বাসে উঠতে পারছি, এ আমার সৌভাগ্য। মহিলার ঘ্যানর ঘ্যানর বিরক্ত লাগলেও কিছু বলার নাই। একটা কথা বলতে গেলেই আবার না কয়টা শুরু করে। আমি তাই চুপ করে আছি। সামনের বাস স্টপেজে মহিলা পেছনের ঐ মহিলা নেমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই স্টপেজ থেকে আরও এক গাদা লোক হুরমুর করে বাসে উঠে গেলো। সবারই বাড়ি যাওয়ার তারা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার যদি এই বাড়ি যাওয়ার তারা যাওয়ার তারা না থাকতো তবে কতই না ভালো হতো। অফিস থেকে বেড় হতে লেকের ধার ধরে কিছুক্ষণ একা একা হাটা যেতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে চা ওয়ালার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যেতো। পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করা যেতো, বাড়িতে কে কে আছে? সে তার বাড়ির বাকি সবার কথা বলতো, খুটিয়ে খুটিয়ে তার সাথে গল্প করা যেতো। যখন ইচ্ছা তখন বাড়ি ফেরা যেতো। কিন্তু না, তা তো সম্ভব না। এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্ম নিছো, তোমার এমন ভাবা অন্যায়। তাই তো, অন্যায়ই তো। আমার তো আর অন্যায় করা চলে না, মেয়ে হয়ে জন্মাইছি। প্রতিবন্ধকতা তো আমাদের চিরজনমের বন্ধু। তাই এগুলোকে বুকে বেধেই চলতে হচ্ছে। কিন্তু একি, আমার ইন্দ্রিয় কি ঠিক ঠিক সংকেত দিচ্ছে? যদি ঠিক ঠিক সংকেত পেয়ে থাকি, তবে আমার কি করা উচিত? আমি কি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবো, নাকি চুপচাপ মেনে নিবো? আমি যদি এখন বিষয়টা সবার সামনে বলতে যাই, কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াবে না, সবাই বলবে বাসে তো এমন একটু আধটু হয়েই থাকে। ভাবতেই আমার গা ঘেন্না ধরে এলো। সত্যি সত্যি কেউ একজন কি তবে আমার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে? নিরুপায় হয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, মনে হলো হঠাৎ একটা মুখ আমার পেছন ফেরা দেখেই তার দৃষ্টিটা মুহূর্তেই অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। বুঝতে বাকি থাকলো না ঘটনাটা। আমি তার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। কারণ আমি জানি, সে একবার হলেও এদিকে আমার অবস্থা দেখার জন্য মুখ ফেরাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তাই করলো সে। আমি শুধু ইতরটার চোখের দিকে তাকালাম, এক মুহূর্তের বেশী সময় সে তার চোখ আমার চোখে রাখতে পারলো না। সরিয়ে নিলো, আমার আর কিছু করতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই আমার গন্তব্য চলে আসায় আমি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে হচ্ছিলো ফুলসেরাত পার হচ্ছিলাম। এখন পৃথিবীতে। এইতো, পায়ের নিচে মাটি দেখতে পাচ্ছি। ভাবতেই মন কিছুটা ফুরফুরে হয়ে এলো। রাস্তা ক্রস করে বাড়ির জন্য রিকশা ঠিক করে উঠে পরলাম। রিকশা চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসে মনে হচ্ছিলো আমি পাখি হয়ে যাই।
রাত হয়ে গেছে বলা যায়। প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হুট করে সন্ধ্যাটা নেমে আসে। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গ সঙ্গে রাতও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সব নিরব হয়ে যায়। আমাদের বাড়ির এলাকা রাত আটটা বাজতেই নিরব হয়ে যায়। অথচ এইটাও ঢাকা শহর। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। বাসার কাছে দেখলাম ছোট ভাইটা হন্তদন্তের মতো কোথায় যেনো ছুটছে। আমি ডাকলাম, কই যাস? আমাকে দেখে সে মনে হয় একটু থতমত খেলো। বললো, না সামনেই। তুমি যাও আমি আইতাছি। আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়া ছোটভাই। দেখে মনে হয় খুব একটা সেয়ানা না। কিন্তু সে আসলে প্রচুর সেয়ানা। নিজেরটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তবে এমন ভাব করবে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। এই ধরনের পুরুষদের নাকি উন্নতি হয়। মা-খালারা বলে। মনে মনে বলি, সবারই উন্নতি হয়- শালার আমারই হয় না।
রিকশা বিদায় করে বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরে এত ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো। ভাবতে গেলেও আশ্চর্য হই। ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দেই বিছানায়। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির সাথে নরমাল পানি মিক্স করে মা গ্লাসে করে নিয়ে আসেন। একগ্লাস পানিকে তেমন কিছুই মনে হয় না। নিমিষেই শেষ করি। গ্লাস নিয়ে ফেরার পথে বলতে থাকেন, গোসলটা করে নে। আরাম পাবি। আর আরাম। কিছু ক্লান্তি মুছবে আর কি। আবার আগামীকালের জন্য এনার্জি সঞ্চয় করা ছাড়া কিছু নাই। কিন্তু তারপরও তাই করতে হবে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। বাসায় রাখা দৈনিক পত্রিকাটায় নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু প্রত্যাশিত নতুন কোনও চাকরি নাই। এই চাকরিটা করতে আর ভাল্লাগছে না। কিন্তু বদলাবার সুযোগ পর্যন্ত পাইতেছি না। কি যে করি।

গোসলটা না করলে মনে হয় শান্তি আসবে না। স্নানঘরটাকে আমার খুব আপন মনে হয়। মনে হয় আমার একবার একটা স্নানঘর প্রয়োজন। যেখানে আমার মনের মতো অনেক কিছুই থাকবে। একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকবে স্নানঘরে। বাথটাব তো অবশ্যই। বাথটাবে ঠান্ডা, গরম উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা। আরও ভালো হয় যদি সেখানে মিউজিকের ব্যবস্থা করা যায়। কোমল শব্দে ইন্সট্রুমেন্টাল বাজতে থাকবে আর বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে শুয়ে থাকব। ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গেলে জমিদার হৈতে হৈতো এক সময়। এখন ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী হৈলেই হয়। বাংলাদেশে তো মেয়েরা আর এত বড় কিছু করতে পারে না। এখন পর্যন্ত যেহেতু পারে নাই তাই জামাই থাকতে হয় ঐ রকম। আমার বেলায় তার কোনওটারই সম্ভাবনা নাই। তাই এই স্বপ্ন বাদ। কমন বাথরুমই ভরসা। যদিও সেই বিশাল আয়োজন নাই তবুও গোসলের সময় আমার অনন্তত একটা আয়োজন থাকেই। সারা দিনের গ্লানি আর ক্লান্তি মুছে নেওয়ার চেষ্টাও তাতে জড়িয়ে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করি উন্মুক্ত শরীরে। রোজকার মতো একই নিয়মে আজও আমার গা-ধোওয়া পর্ব শুরু হলো। শাওয়ার থেকে তীব্র বেগে শরীরে পানির বৃষ্টি পড়ছে। মনে হচ্ছে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে চামড়ার কদর্যতা। আহ, এইভাবে ভিজতে থাকলে যদি মনেরও কদর্যতা ধূয়ে খুয়ে চলে যেতো! কিন্তু যাবে না। তারপরও মনে হচ্ছে কিছু একটা ধুয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। এতক্ষণ চোখবন্ধই ছিলো। এ সময় বন্ধই থাকে। হঠাৎই চোখ খুললাম আমি। আর চোখদুটোও গেলো চট করে ভেন্টিলেটারের মত জানালাটার দিকে। আমার চোখ দুটোকেই আমি বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। সত্যিই কি ওখানে মানুষের দুটো চোখ? নাকি আমার কল্পনা? না, সত্যিই সেখানে এক জোড়া চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে গেলার চেষ্টা করছে। আমি আর কিছুই ভাবতে পারিনি। আমার আর কোনও কিছুই স্মরণেও ছিলো না। পরে জানতে পারি ঐ মুহূর্তেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি যখন নিজেকে সজ্ঞান হিসেবে আবিষ্কার করলাম, তখন আমি আমার বিছানায় ঘুমিয়ে। এই সময়কার মাঝখানের ঘটনা পরে আমি আম্মুর কাছ থেকে জেনেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার পর আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কেন আমি স্নানঘরে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সত্যি বলছি আমার কোনও কিছুই মনে ছিলো না। পরদিন সকাল থেকেই আমি আবার অফিস বাসা মিলে সেই চক্রাকারের জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার মা আমাকে বারবার ঐ দিনের ঘটনা জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু আমি কোনও উত্তর দিতে পারছিলাম না। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছিলাম। আমি কি জন্যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম তা মনে করার চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু সত্যিই ঐ দিনের ঘটনা আমি আর মনে করতে পারি নি। কিন্তু একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছিলাম স্নানঘরটা এর পর থেকে আমার কাছে আর আগের মতো এত আপন ছিলো না। কিছুটা অশ্বস্তিকর এবং শুধু প্রয়োজনেরই অংশ বলে মনে হতো আমার কাছে। আমি আর সেখানে নিজেকে উন্মোচিত করতাম না। কোথায় যেনো বাধা মনে হতো। কিন্তু সেই বাধার রহস্য আমি উন্মোচন করতে পারছিলাম না কোনও মতেই।
তারপর থেকে আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলাম। সকালে ওঠেই অফিস যাওয়ার তারা, মার সাথে নাস্তা তৈরিতে রান্না ঘরে হাত লাগানো। ছোটভাইটার ভার্সিটি যাওয়ার তারা। অফিসে যাওয়ার বাসের জন্য তারা। এইসবই চলছিলো। এর মাঝে একদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেই আম্মু হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে তো চক্ষু ছানাভড়া। বলে কি? এত ভালো চাকরি? তাও আবার সামনের মাস থেকেই জয়েনিং। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আনন্দে আটখানা হয়ে আম্মুকে একটা চুমু দিয়ে বসলাম। আম্মু শুধু মুচকি মুচকি হাসি দিলো। কারণ, আম্মু খামটা চুপিচুপি খুলে আগেই পড়ে নিয়েছে। তাই সে জানতোই ঘটনা।
ঐদিন আমি আসলে এত্ত বেশী এক্সাইটেট ছিলাম যে, নিজে এর পরিমাপ করতে পারছিলাম না। ঐ দিন আবার ঐ ঘটনাটা ঘটলো। দ্বিতীয় বারের মতো। স্নানঘরে আমি নিজেকে উন্মোচিত করেই স্নান শুরু করেছিলাম। এবং আচমকা সেই জোড়া চোখ। স্নানঘরের জানালায়। এবার আমি কিন্তু জ্ঞান হারাই নি। এবার চিৎকারও করি নি বা করতে পারিও নি। তবে আমি প্রচণ্ড শকড হয়েছিলাম। আমার রুটিন গোসল তখনও শেষ হয় নি। কিন্তু ওখানটাতে আমার দম বন্ধ হয়ে পড়ছিলো। আমি তৎক্ষণাৎ বেড় হয়ে আসি। বাইরে বের হওয়ার পর আমার শরীর আর কাজ করছিলো না। আমি শুয়ে পড়ি। সেদিন রাতেই আমার কিছুটা জ্বর এসেছিলো। ঠিক কিছুটা না, বেশ জ্বর। প্রচণ্ড গরমেও আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। কাঁথার উত্তাপ যখন গায়ে এসে লাগতে শুরু করলো, তখন সেই চোখদুটো কাঁথার ভেতর নিজেকে গেথে দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। বুঝতে পারলাম আমি একটি চিৎকার দিয়েছি। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মা ছুটে এলো। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেলাম, চোখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি চোখগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। চোখগুলো হারিয়ে গেলেও মনে হচ্ছিলো চোখগুলো আমাকে খুঁজছে বা আমি চোখগুলোকে খুঁজছি। আমি ঠিকমত কোনও কিছুতেই নিজেকে সুস্থীর করতে পারছিলাম না। ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না কি করা যায়। কোনওভাবে রাতটা আমার কেটে গেলো ঠিক। সকালে ওঠে আবার অফিসে যেতে হবে। তৈরি হওয়ার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথা গুলাতে লাগলো। মনে হতে লাগলো, দেয়ালের প্রতিটি টাইলস একজোড়া চোখ হয়ে আমাকে গিলতে চেষ্টা করছে। আর আমি প্রত্যেকজোড়া চোখ কে ধরে ধরে থেতলে দিতে চাইছি। ভেতরে আমার কি অবস্থা ছিলো তার বর্ণনা আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। আর কিছু আমার বোধে ছিলো না তখন। কিন্তু হঠাৎ আবিষ্কার করলাম স্নানঘরের দরজায় প্রচণ্ড শব্দে কেউ একজন ডাকছে। সঙ্গে মায়ের গলা শুনে দরজা খুলে দিতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকলো, কি হয়েছে মা? কি হয়েছে? কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু ঐ দেয়ালগুলোর দিকে তাকাতেই মনে হতে থাকতো আমাকে গিলে ফেলতে চাইছে একজোড়া, চোখ। একজোড়া চোখ বাড়তে বাড়তে তখন দেয়াল জোড়ে বহুজোড়া হতে লাগলো। স্নানঘর থেকে মা ধরে ধরে নিয়ে এলো আমাকে। আমার সাথে সাথে স্নানঘর থেকে চোখগুলো যেনো ফ্ল্যাটময় ছড়াতে শুরু করলো। ফ্ল্যাট থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শহর ও পৃথিবী। মনে হচ্ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত চোখগুলো আমাকে না গিলে ফেলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই। তাই আমার চারপাশে চোখজোড়া বাড়তেই থাকলো কেবল।

একজোড়া চোখ

at সোমবার, অক্টোবর ০১, ২০১২  |  No comments

অফিস থেইক্যা বাসায় ফেরাটা দুইন্যার ঝামেলা। এই রুটে কোনও কাউন্টার সার্ভিস বাসও নাই। আচানক কথা। শহরের বেবাক রুটে আছে, এই রুটে নাই। অথচ কারও কোনও মাথা ব্যাথা নাই। আরে, মাথা থাকলে না ব্যাথা থাকবো। ১৫ মিনিটের বাসের পথ, গাড়িত উঠতেই লাগে দেড় ঘন্টা। মন চায় ঢাকা ছাইড়া পলাই। আর শালার যামু কই, ঢাকার বাইরে গেলে তো চাকরিও পামু না। পুরা সিস্টেমটাই ঢাকামুখী। আচুদা একটা সিস্টেম বানাইয়া রাখছে মান্দার পোতেরা। হেগোরে গালি দেয়া মানে নিজেরেই গালি দেয়া। পাঁচ বছর পরে পরে তাগোরে ভোট তো আমরাই দেই।
একটানা ক্ষোভের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো এক মহিলা। আমি তার পরে একই বাসে কোনওভাবে উঠে একটা দাঁড়ানোর যায়গা করে নিতে পারছি। তবে আমারও বাসে উঠতে আধাঘন্টার বেশী সময় লাগছে। যা অবস্থা রাস্তার। আর বৃহস্পতিবার তো মনে হয় সব চাকরিজীবী একবারে বাসায় যাইতে চায়। এই অবস্থায় আজকে যে আধা ঘন্টায় বাসে উঠতে পারছি, এ আমার সৌভাগ্য। মহিলার ঘ্যানর ঘ্যানর বিরক্ত লাগলেও কিছু বলার নাই। একটা কথা বলতে গেলেই আবার না কয়টা শুরু করে। আমি তাই চুপ করে আছি। সামনের বাস স্টপেজে মহিলা পেছনের ঐ মহিলা নেমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই স্টপেজ থেকে আরও এক গাদা লোক হুরমুর করে বাসে উঠে গেলো। সবারই বাড়ি যাওয়ার তারা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার যদি এই বাড়ি যাওয়ার তারা যাওয়ার তারা না থাকতো তবে কতই না ভালো হতো। অফিস থেকে বেড় হতে লেকের ধার ধরে কিছুক্ষণ একা একা হাটা যেতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে চা ওয়ালার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যেতো। পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করা যেতো, বাড়িতে কে কে আছে? সে তার বাড়ির বাকি সবার কথা বলতো, খুটিয়ে খুটিয়ে তার সাথে গল্প করা যেতো। যখন ইচ্ছা তখন বাড়ি ফেরা যেতো। কিন্তু না, তা তো সম্ভব না। এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্ম নিছো, তোমার এমন ভাবা অন্যায়। তাই তো, অন্যায়ই তো। আমার তো আর অন্যায় করা চলে না, মেয়ে হয়ে জন্মাইছি। প্রতিবন্ধকতা তো আমাদের চিরজনমের বন্ধু। তাই এগুলোকে বুকে বেধেই চলতে হচ্ছে। কিন্তু একি, আমার ইন্দ্রিয় কি ঠিক ঠিক সংকেত দিচ্ছে? যদি ঠিক ঠিক সংকেত পেয়ে থাকি, তবে আমার কি করা উচিত? আমি কি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবো, নাকি চুপচাপ মেনে নিবো? আমি যদি এখন বিষয়টা সবার সামনে বলতে যাই, কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াবে না, সবাই বলবে বাসে তো এমন একটু আধটু হয়েই থাকে। ভাবতেই আমার গা ঘেন্না ধরে এলো। সত্যি সত্যি কেউ একজন কি তবে আমার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে? নিরুপায় হয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, মনে হলো হঠাৎ একটা মুখ আমার পেছন ফেরা দেখেই তার দৃষ্টিটা মুহূর্তেই অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। বুঝতে বাকি থাকলো না ঘটনাটা। আমি তার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। কারণ আমি জানি, সে একবার হলেও এদিকে আমার অবস্থা দেখার জন্য মুখ ফেরাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তাই করলো সে। আমি শুধু ইতরটার চোখের দিকে তাকালাম, এক মুহূর্তের বেশী সময় সে তার চোখ আমার চোখে রাখতে পারলো না। সরিয়ে নিলো, আমার আর কিছু করতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই আমার গন্তব্য চলে আসায় আমি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে হচ্ছিলো ফুলসেরাত পার হচ্ছিলাম। এখন পৃথিবীতে। এইতো, পায়ের নিচে মাটি দেখতে পাচ্ছি। ভাবতেই মন কিছুটা ফুরফুরে হয়ে এলো। রাস্তা ক্রস করে বাড়ির জন্য রিকশা ঠিক করে উঠে পরলাম। রিকশা চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসে মনে হচ্ছিলো আমি পাখি হয়ে যাই।
রাত হয়ে গেছে বলা যায়। প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হুট করে সন্ধ্যাটা নেমে আসে। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গ সঙ্গে রাতও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সব নিরব হয়ে যায়। আমাদের বাড়ির এলাকা রাত আটটা বাজতেই নিরব হয়ে যায়। অথচ এইটাও ঢাকা শহর। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। বাসার কাছে দেখলাম ছোট ভাইটা হন্তদন্তের মতো কোথায় যেনো ছুটছে। আমি ডাকলাম, কই যাস? আমাকে দেখে সে মনে হয় একটু থতমত খেলো। বললো, না সামনেই। তুমি যাও আমি আইতাছি। আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়া ছোটভাই। দেখে মনে হয় খুব একটা সেয়ানা না। কিন্তু সে আসলে প্রচুর সেয়ানা। নিজেরটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তবে এমন ভাব করবে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। এই ধরনের পুরুষদের নাকি উন্নতি হয়। মা-খালারা বলে। মনে মনে বলি, সবারই উন্নতি হয়- শালার আমারই হয় না।
রিকশা বিদায় করে বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরে এত ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো। ভাবতে গেলেও আশ্চর্য হই। ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দেই বিছানায়। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির সাথে নরমাল পানি মিক্স করে মা গ্লাসে করে নিয়ে আসেন। একগ্লাস পানিকে তেমন কিছুই মনে হয় না। নিমিষেই শেষ করি। গ্লাস নিয়ে ফেরার পথে বলতে থাকেন, গোসলটা করে নে। আরাম পাবি। আর আরাম। কিছু ক্লান্তি মুছবে আর কি। আবার আগামীকালের জন্য এনার্জি সঞ্চয় করা ছাড়া কিছু নাই। কিন্তু তারপরও তাই করতে হবে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। বাসায় রাখা দৈনিক পত্রিকাটায় নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু প্রত্যাশিত নতুন কোনও চাকরি নাই। এই চাকরিটা করতে আর ভাল্লাগছে না। কিন্তু বদলাবার সুযোগ পর্যন্ত পাইতেছি না। কি যে করি।

গোসলটা না করলে মনে হয় শান্তি আসবে না। স্নানঘরটাকে আমার খুব আপন মনে হয়। মনে হয় আমার একবার একটা স্নানঘর প্রয়োজন। যেখানে আমার মনের মতো অনেক কিছুই থাকবে। একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকবে স্নানঘরে। বাথটাব তো অবশ্যই। বাথটাবে ঠান্ডা, গরম উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা। আরও ভালো হয় যদি সেখানে মিউজিকের ব্যবস্থা করা যায়। কোমল শব্দে ইন্সট্রুমেন্টাল বাজতে থাকবে আর বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে শুয়ে থাকব। ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গেলে জমিদার হৈতে হৈতো এক সময়। এখন ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী হৈলেই হয়। বাংলাদেশে তো মেয়েরা আর এত বড় কিছু করতে পারে না। এখন পর্যন্ত যেহেতু পারে নাই তাই জামাই থাকতে হয় ঐ রকম। আমার বেলায় তার কোনওটারই সম্ভাবনা নাই। তাই এই স্বপ্ন বাদ। কমন বাথরুমই ভরসা। যদিও সেই বিশাল আয়োজন নাই তবুও গোসলের সময় আমার অনন্তত একটা আয়োজন থাকেই। সারা দিনের গ্লানি আর ক্লান্তি মুছে নেওয়ার চেষ্টাও তাতে জড়িয়ে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করি উন্মুক্ত শরীরে। রোজকার মতো একই নিয়মে আজও আমার গা-ধোওয়া পর্ব শুরু হলো। শাওয়ার থেকে তীব্র বেগে শরীরে পানির বৃষ্টি পড়ছে। মনে হচ্ছে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে চামড়ার কদর্যতা। আহ, এইভাবে ভিজতে থাকলে যদি মনেরও কদর্যতা ধূয়ে খুয়ে চলে যেতো! কিন্তু যাবে না। তারপরও মনে হচ্ছে কিছু একটা ধুয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। এতক্ষণ চোখবন্ধই ছিলো। এ সময় বন্ধই থাকে। হঠাৎই চোখ খুললাম আমি। আর চোখদুটোও গেলো চট করে ভেন্টিলেটারের মত জানালাটার দিকে। আমার চোখ দুটোকেই আমি বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। সত্যিই কি ওখানে মানুষের দুটো চোখ? নাকি আমার কল্পনা? না, সত্যিই সেখানে এক জোড়া চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে গেলার চেষ্টা করছে। আমি আর কিছুই ভাবতে পারিনি। আমার আর কোনও কিছুই স্মরণেও ছিলো না। পরে জানতে পারি ঐ মুহূর্তেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি যখন নিজেকে সজ্ঞান হিসেবে আবিষ্কার করলাম, তখন আমি আমার বিছানায় ঘুমিয়ে। এই সময়কার মাঝখানের ঘটনা পরে আমি আম্মুর কাছ থেকে জেনেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার পর আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কেন আমি স্নানঘরে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সত্যি বলছি আমার কোনও কিছুই মনে ছিলো না। পরদিন সকাল থেকেই আমি আবার অফিস বাসা মিলে সেই চক্রাকারের জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার মা আমাকে বারবার ঐ দিনের ঘটনা জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু আমি কোনও উত্তর দিতে পারছিলাম না। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছিলাম। আমি কি জন্যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম তা মনে করার চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু সত্যিই ঐ দিনের ঘটনা আমি আর মনে করতে পারি নি। কিন্তু একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছিলাম স্নানঘরটা এর পর থেকে আমার কাছে আর আগের মতো এত আপন ছিলো না। কিছুটা অশ্বস্তিকর এবং শুধু প্রয়োজনেরই অংশ বলে মনে হতো আমার কাছে। আমি আর সেখানে নিজেকে উন্মোচিত করতাম না। কোথায় যেনো বাধা মনে হতো। কিন্তু সেই বাধার রহস্য আমি উন্মোচন করতে পারছিলাম না কোনও মতেই।
তারপর থেকে আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলাম। সকালে ওঠেই অফিস যাওয়ার তারা, মার সাথে নাস্তা তৈরিতে রান্না ঘরে হাত লাগানো। ছোটভাইটার ভার্সিটি যাওয়ার তারা। অফিসে যাওয়ার বাসের জন্য তারা। এইসবই চলছিলো। এর মাঝে একদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেই আম্মু হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে তো চক্ষু ছানাভড়া। বলে কি? এত ভালো চাকরি? তাও আবার সামনের মাস থেকেই জয়েনিং। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আনন্দে আটখানা হয়ে আম্মুকে একটা চুমু দিয়ে বসলাম। আম্মু শুধু মুচকি মুচকি হাসি দিলো। কারণ, আম্মু খামটা চুপিচুপি খুলে আগেই পড়ে নিয়েছে। তাই সে জানতোই ঘটনা।
ঐদিন আমি আসলে এত্ত বেশী এক্সাইটেট ছিলাম যে, নিজে এর পরিমাপ করতে পারছিলাম না। ঐ দিন আবার ঐ ঘটনাটা ঘটলো। দ্বিতীয় বারের মতো। স্নানঘরে আমি নিজেকে উন্মোচিত করেই স্নান শুরু করেছিলাম। এবং আচমকা সেই জোড়া চোখ। স্নানঘরের জানালায়। এবার আমি কিন্তু জ্ঞান হারাই নি। এবার চিৎকারও করি নি বা করতে পারিও নি। তবে আমি প্রচণ্ড শকড হয়েছিলাম। আমার রুটিন গোসল তখনও শেষ হয় নি। কিন্তু ওখানটাতে আমার দম বন্ধ হয়ে পড়ছিলো। আমি তৎক্ষণাৎ বেড় হয়ে আসি। বাইরে বের হওয়ার পর আমার শরীর আর কাজ করছিলো না। আমি শুয়ে পড়ি। সেদিন রাতেই আমার কিছুটা জ্বর এসেছিলো। ঠিক কিছুটা না, বেশ জ্বর। প্রচণ্ড গরমেও আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। কাঁথার উত্তাপ যখন গায়ে এসে লাগতে শুরু করলো, তখন সেই চোখদুটো কাঁথার ভেতর নিজেকে গেথে দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। বুঝতে পারলাম আমি একটি চিৎকার দিয়েছি। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মা ছুটে এলো। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেলাম, চোখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি চোখগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। চোখগুলো হারিয়ে গেলেও মনে হচ্ছিলো চোখগুলো আমাকে খুঁজছে বা আমি চোখগুলোকে খুঁজছি। আমি ঠিকমত কোনও কিছুতেই নিজেকে সুস্থীর করতে পারছিলাম না। ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না কি করা যায়। কোনওভাবে রাতটা আমার কেটে গেলো ঠিক। সকালে ওঠে আবার অফিসে যেতে হবে। তৈরি হওয়ার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথা গুলাতে লাগলো। মনে হতে লাগলো, দেয়ালের প্রতিটি টাইলস একজোড়া চোখ হয়ে আমাকে গিলতে চেষ্টা করছে। আর আমি প্রত্যেকজোড়া চোখ কে ধরে ধরে থেতলে দিতে চাইছি। ভেতরে আমার কি অবস্থা ছিলো তার বর্ণনা আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। আর কিছু আমার বোধে ছিলো না তখন। কিন্তু হঠাৎ আবিষ্কার করলাম স্নানঘরের দরজায় প্রচণ্ড শব্দে কেউ একজন ডাকছে। সঙ্গে মায়ের গলা শুনে দরজা খুলে দিতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকলো, কি হয়েছে মা? কি হয়েছে? কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু ঐ দেয়ালগুলোর দিকে তাকাতেই মনে হতে থাকতো আমাকে গিলে ফেলতে চাইছে একজোড়া, চোখ। একজোড়া চোখ বাড়তে বাড়তে তখন দেয়াল জোড়ে বহুজোড়া হতে লাগলো। স্নানঘর থেকে মা ধরে ধরে নিয়ে এলো আমাকে। আমার সাথে সাথে স্নানঘর থেকে চোখগুলো যেনো ফ্ল্যাটময় ছড়াতে শুরু করলো। ফ্ল্যাট থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শহর ও পৃথিবী। মনে হচ্ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত চোখগুলো আমাকে না গিলে ফেলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই। তাই আমার চারপাশে চোখজোড়া বাড়তেই থাকলো কেবল।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম