বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫



বিনয় মজুমদার
এক আশ্চর্য প্রদীপযে প্রদীপ নিজে জ্বলে-পুড়ে শুধু আলোই দেয় না মনের ভেতর জ্বালায় শিখার বুদবুদযেখান থেকে তরল আগুন এক সময় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে দেহের ভেতর, মনের ভেতর জ্বলে উঠে বিনয়কিন্তু মোটেও বিনয় তৈরি হয় না বিপরীতে আগ্রাসন তৈরি হয়এই আগ্রাসনে বিনয় পাঠের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অন্য সকল পাঠ্য তালিকা স্থগিত হয়ে যায়কদাচিৎ যদিও অন্য কোনও পাঠ্যপুস্তক (যে বই পড়ার প্রয়োজন) হাতের কাছে চলে আসে তাও টেকে নাযদিও নিজের মনের মতো করে ভাবলে বিনয়ের কবিতা ও তার ব্যক্তি জীবনে তুমুল বৈপরিত্য চোখে পরেহতে পারে তা আমার সাময়িক ভাবনার পরিণতিকিন্তু বৈপরিত্য তার জীবনে ও কবিতার রয়েছেইতা জীবন ও কবিতা একই সমান্তরালে দেখলেই বেড়িয়ে আসেসেই বিনয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব অল্প দিনেরঅবশ্য এর চেয়ে অল্পদিনের পরিচয়েও আমার বন্ধু হওয়া সহজ

বিনয়কে নিয়ে সম্ভবত প্রথম যে বাক্যটি শুনেছিলাম তা হলো- অসম্ভব অভিমানী কবিতখন বিনয়ের দ্বার খুলে দেয়ার ভূমিকাকারী বিনয়কে দেখাত বোদলেয়ারের মতো করেতখন পর্যন্ত বিনয়ের দুটো কবিতাই মাত্র পড়া হয়েছেআর বিনয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা-সমালোচনাএই আলোচনা-সমালোচনা পড়ার পর কেবল তাঁর কবিতায় জীবন খুঁজেছি, জীবনে কবিতা খুঁজেছিযখন মিল খুঁজে পেয়েছি তখন ভালো লেগেছেযখন অমিল খুঁজে পেয়েছি তখন মন্দ লেগেছেজীবন ও বাস্তবতার সাথে কবিতার খোজা-খোঁজিতে যত বৈপরিত্য দেখেছি তখনই তাকে তাঁর কবিতার দূর্বলতা হিসেবে চোখে লেগেছেবাস্তব জীবনে যে কবির ভগ্নদশার পরিচালক গায়ত্রী চক্রবর্তিসেই চক্রবর্তিকে নিয়ে কেন কবিতা লেখা হলো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - কাউকে নিয়ে তো লিখতে হয়- আমগাছ, কাঠালগাছ, রজনীগন্ধ্যা নিয়ে কি চিরকাল লেখা যায়?’ বিনয় মূলত এই ধাঁচেরই একজন কবিনির্মাণ বিনির্মাণের মাঝে তিনি স্বতন্ত্র

তাঁর কবিতার ভেতরকার গুপ্ততা ধীরে ধীরে আবার হঠাৎই ঔজ্জ্বল্যতা ছড়ায়ব্যক্তির জীবন বৈপরিত্য পেয়ে কবিতায় এসেছেকবিতা এই বৈপরিত্য পেয়ে রূপসীও হয়েছে মাঝে মাঝেকিন্তু কিছু কিছু বৈপরিত্য তীব্র আকারে ধরা পড়ে চোখেবিনয়ের কবিতায় বিনয় কিছু আপ্তবাক্য বা দর্শন তৈরি করেছেনএই দর্শনের মাঝে একটা হলো-
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়
       এই আপ্তবাক্য বা দর্শনটির কথা আমাদের জানাই আছেতা জানতে গিয়েই আমারা তার কবিতার শুরুটা নিশ্চয়ই পড়ে থাকিশুরুর ভাবনায় একটা বৈপরিত্য বসবাস করছে যেমন শুরুতেই রয়েছে-
মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে
এই বাক্য দিয়ে শুরু করে যখন পূর্বোক্ত বাক্যে শেষ হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য যদি শেষ বাক্যটি না হয়ে যদি সম্পূর্ণ কবিতাটি হয় তাহলে মনে করতে পারি একই ভাবনার প্রকাশ তিনি সম্পূর্ণ কবিতাটিতে দেখান নিএই ক্ষেত্রে খুব সহজেই আরা ভেবে নিতে পারি দুইটি সমাধান- এক. বিনয়ের কবিতার স্টাইল বা ফর্মই এটা, একই কথা ঘুরিয়ে বলা; দুই. বিনয় হয়তো প্রথম বাক্যটি ভেবেই লিখতে বসেছিলেন, সর্বশেষ বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে এসেছেযদি তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই চলে আসে তবে তা এটা রূপান্তরের ধারাপাতে বন্দি হয়ে যায় ফলে শুরুর কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়েই সকল কথার অবতারণ নয়আর কবিতার শেষটাও অন্য কোথাওযা একই কবিতায় বৈপরিত্য উপস্থাপন করেঅন্ততঃপক্ষে আমি মনে করি কবি ও কবিতার ভেতর বৈপরিত্য থাকা সম্ভবকিন্তু একই কবিতার ভাবে বক্তব্যে তা কাম্য নয়তবে যদি তাই বিনয়-এর নিজস্ব ঢং এর হয়ে থাকে তবে তাই হোক!

বিনয়কে নিয়ে অনুভূতির কথামালা

at বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫  |  No comments



বিনয় মজুমদার
এক আশ্চর্য প্রদীপযে প্রদীপ নিজে জ্বলে-পুড়ে শুধু আলোই দেয় না মনের ভেতর জ্বালায় শিখার বুদবুদযেখান থেকে তরল আগুন এক সময় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে দেহের ভেতর, মনের ভেতর জ্বলে উঠে বিনয়কিন্তু মোটেও বিনয় তৈরি হয় না বিপরীতে আগ্রাসন তৈরি হয়এই আগ্রাসনে বিনয় পাঠের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অন্য সকল পাঠ্য তালিকা স্থগিত হয়ে যায়কদাচিৎ যদিও অন্য কোনও পাঠ্যপুস্তক (যে বই পড়ার প্রয়োজন) হাতের কাছে চলে আসে তাও টেকে নাযদিও নিজের মনের মতো করে ভাবলে বিনয়ের কবিতা ও তার ব্যক্তি জীবনে তুমুল বৈপরিত্য চোখে পরেহতে পারে তা আমার সাময়িক ভাবনার পরিণতিকিন্তু বৈপরিত্য তার জীবনে ও কবিতার রয়েছেইতা জীবন ও কবিতা একই সমান্তরালে দেখলেই বেড়িয়ে আসেসেই বিনয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব অল্প দিনেরঅবশ্য এর চেয়ে অল্পদিনের পরিচয়েও আমার বন্ধু হওয়া সহজ

বিনয়কে নিয়ে সম্ভবত প্রথম যে বাক্যটি শুনেছিলাম তা হলো- অসম্ভব অভিমানী কবিতখন বিনয়ের দ্বার খুলে দেয়ার ভূমিকাকারী বিনয়কে দেখাত বোদলেয়ারের মতো করেতখন পর্যন্ত বিনয়ের দুটো কবিতাই মাত্র পড়া হয়েছেআর বিনয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা-সমালোচনাএই আলোচনা-সমালোচনা পড়ার পর কেবল তাঁর কবিতায় জীবন খুঁজেছি, জীবনে কবিতা খুঁজেছিযখন মিল খুঁজে পেয়েছি তখন ভালো লেগেছেযখন অমিল খুঁজে পেয়েছি তখন মন্দ লেগেছেজীবন ও বাস্তবতার সাথে কবিতার খোজা-খোঁজিতে যত বৈপরিত্য দেখেছি তখনই তাকে তাঁর কবিতার দূর্বলতা হিসেবে চোখে লেগেছেবাস্তব জীবনে যে কবির ভগ্নদশার পরিচালক গায়ত্রী চক্রবর্তিসেই চক্রবর্তিকে নিয়ে কেন কবিতা লেখা হলো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - কাউকে নিয়ে তো লিখতে হয়- আমগাছ, কাঠালগাছ, রজনীগন্ধ্যা নিয়ে কি চিরকাল লেখা যায়?’ বিনয় মূলত এই ধাঁচেরই একজন কবিনির্মাণ বিনির্মাণের মাঝে তিনি স্বতন্ত্র

তাঁর কবিতার ভেতরকার গুপ্ততা ধীরে ধীরে আবার হঠাৎই ঔজ্জ্বল্যতা ছড়ায়ব্যক্তির জীবন বৈপরিত্য পেয়ে কবিতায় এসেছেকবিতা এই বৈপরিত্য পেয়ে রূপসীও হয়েছে মাঝে মাঝেকিন্তু কিছু কিছু বৈপরিত্য তীব্র আকারে ধরা পড়ে চোখেবিনয়ের কবিতায় বিনয় কিছু আপ্তবাক্য বা দর্শন তৈরি করেছেনএই দর্শনের মাঝে একটা হলো-
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়
       এই আপ্তবাক্য বা দর্শনটির কথা আমাদের জানাই আছেতা জানতে গিয়েই আমারা তার কবিতার শুরুটা নিশ্চয়ই পড়ে থাকিশুরুর ভাবনায় একটা বৈপরিত্য বসবাস করছে যেমন শুরুতেই রয়েছে-
মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে
এই বাক্য দিয়ে শুরু করে যখন পূর্বোক্ত বাক্যে শেষ হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য যদি শেষ বাক্যটি না হয়ে যদি সম্পূর্ণ কবিতাটি হয় তাহলে মনে করতে পারি একই ভাবনার প্রকাশ তিনি সম্পূর্ণ কবিতাটিতে দেখান নিএই ক্ষেত্রে খুব সহজেই আরা ভেবে নিতে পারি দুইটি সমাধান- এক. বিনয়ের কবিতার স্টাইল বা ফর্মই এটা, একই কথা ঘুরিয়ে বলা; দুই. বিনয় হয়তো প্রথম বাক্যটি ভেবেই লিখতে বসেছিলেন, সর্বশেষ বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে এসেছেযদি তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই চলে আসে তবে তা এটা রূপান্তরের ধারাপাতে বন্দি হয়ে যায় ফলে শুরুর কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়েই সকল কথার অবতারণ নয়আর কবিতার শেষটাও অন্য কোথাওযা একই কবিতায় বৈপরিত্য উপস্থাপন করেঅন্ততঃপক্ষে আমি মনে করি কবি ও কবিতার ভেতর বৈপরিত্য থাকা সম্ভবকিন্তু একই কবিতার ভাবে বক্তব্যে তা কাম্য নয়তবে যদি তাই বিনয়-এর নিজস্ব ঢং এর হয়ে থাকে তবে তাই হোক!

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

 দীর্ঘদিন কোথাও যাই না। যাই না মানে কেবল বাড়ি যাই, আর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরি। অথচ গত দেড় বছরে ছোট বড় হাফ ডজন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ। কারণ আমার সময় হইলে বন্ধুদের হয় না, বন্ধুদের হলে আমার হয় না। যা শালা! এই সংকট যদি না কাটে তবে তো মহা বিপদ। এই বিপদ কাটানোর জন্য আর কারো সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসে ছুটি চাইলাম। পাওনা ছুটি, সে-ও পাইতে বহুত পথ পারি দিতে হইলো। কী আর করা! নিজের শিডিউলই দুই বার পিছাইয়া শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের টিকিট করে তূর্ণা এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। তবে মূল গন্তব্য চট্টগ্রাম নয়। শিল্প নগরী কেবল ভায়া। মূল লক্ষ্য পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনামূলক কম পরিচিত ও পরিচিত জায়গাগুলো।

২৩ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নেমে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়িতে একটা গ্রামের নাম আছে ‘খাগুয্যাছড়ি’। এই নাম থেকেই কি খাগড়াছড়ি নামকরণ হইছে? হতে পারে। চট্টগ্রাম পাড় হয়ে যখন খাগড়াছড়ির বাসে উঠি, তখন মনে হলো এখানেই আমার ছোট চাচা আজ প্রায় ২০/২২ বছর ধরে থাকছেন অথচ কখনো যাওয়া হয় নি। এবার গেলেও সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। যাচ্ছি অন্য কোনও খানে। যাচ্ছি সাজেক। যেই জায়গাটা আসলে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলায়। কিন্তু একমাত্র পথ খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া। খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার আগে একাধিক বড় বড় পাহাড় পার হতে হয়, এই পথে আমি মোটেও অভ্যস্থ নই বিধায় আমার মুগ্ধতা বাড়েই কেবল। শহরটা এমনই। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা শহর। আসলেই ছোট্ট। ব্যাটারি চালিত অটো দিয়ে দশ মিনিট রাইড করলেই শহরের এক মাথা দিয়ে ঢুকে অন্য মাথা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে এই ছোট্ট শহরটিতে আসতেই হবে। যদি না সরাসরি হেলিকপ্টারে যেতে চান। আমার যেহেতু হেলিকপ্টারে করে সাজেক যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। আর তাতে করে সবচে ভালো এবং সাশ্রয়ি বাহন হলো চান্দের গাড়ি। সেই লক্ষ্যে আমি যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাইম তখন দুপুর ২টা। এই সময় তো দূরের কথা সকাল ১০টার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে সাজেক যাওয়া যায় যে কোনও সময়। আমার ভরসা ছিলো ওইটাই। তাই প্রাইভেটে মোটর সাইকেলই ভরসা হইলো আমার। বিকাল ৩টায় রওনা দিয়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তার মাথায় ১৮শ উচ্চতার পাহাড়ে পৌছাইতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা। তবে চান্দের গাড়িতে গেলে ঠিক কতক্ষণ লাগবে এই বিষয়ে আমার ধারণা নাই। যতটুকু শুনেছি, এর কাছাকাছি সময়ই লাগবে। তবে যাওয়ার সময়ই ফেরার ব্যবস্থা করে তারপর যাওয়া উচিত। যদি না আপনি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ বা নিজের গাড়িতে না যান তবে ফেরার জন্য এমনও হতে পারে আপনাকে সেখানে অপেক্ষাই করতে হবে যতক্ষণ না আপনি অন্য কোনও ব্যবস্থা পাচ্ছেন।

আমি যখন যাই রাস্তায় সেনা বাহিনী চেকপোস্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কোনও বুকিং আছে কি না। আমার ছিলো না। কিন্তু তারপরও আমি গিয়ে থাকার ব্যবস্থা পেয়ে গেছি। সাজেকে প্রতি উইকেন্ডে প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়। তাই বুকিং ছাড়া যাওয়া অনেকটা রিস্কি। তবে সোমবার-বুধবার, এই তিনদিনের মধ্যে গেলে সাধারণ ট্যুরিস্টদের জন্য একদমই নয়। কারণ এর সর্বনি¤œ ভাড়া দশ হাজার টাকা নাইট। অন্য দিকে সাজেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত প্রথম রিসোর্ট (আলো রিসোর্ট) এর রুম ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা। অবশ্য সেবাও দুইটার সম্পূর্ণ পৃথক। তবে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলো রিসোর্টে আরও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা আছে। একটা কমন রুম আছে। যেখানে সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া মাত্র সাড়ে তিনশ টাকা। তবে ভুল করে যদি বুকিং ছাড়া উইকএন্ডে চলে আসেন। তাহলে আপনার জন্য একমাত্র অবলম্বন হতে পারে লোকাল আদিবাসীদের বাড়ি। এখানে আদিবাসীরা খুব নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্টদের থাকতে দেয়। যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। সেখানে পানির সংকট সব সময়ই। তাই শীতে উইকএন্ডে গেলে সম্ভব হলে সাথে মিনিমাম খাবার পানি নিয়ে যাওয়া নীরাপদ।

আমিতো বর্ষায় গেলাম। ফলে এই সময়ে এই সংকটটা নেই। কেনার মতো পানি সেখানে না থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি ঠিকই পাওয়া গিয়েছিলো।
সাজেকে যাওয়াটা সবচে কঠিন। কঠিন বলতে সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় পরছে, কিন্তু যাইতে হয় খাগড়াছরি হয়ে। কোনও বিকল্প নাই। সেখানে দুইটা হ্যালিপ্যাড আছে। ইচ্ছা করলে যাইতে পারেন। ;) এছাড়া বাসে করে দিঘীনালা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দিঘীনালা থেকে সাজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাইতে হলে রেগুলার চান্দের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশ দেরি করে আসে। ফলে খাগড়াছরি থেকে রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সবচে দ্রুততর এবং নিরাপদ। তবে হ্যা বিকল্প আরও ব্যবস্থা আছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি। সিএনজি কখনোই কাসালং বাজার পাড় হয় না। কাসালং থেকে সাজেক প্রায় ১৮ কিলোমিটার বা তারও একটু বেশি হবে। ঐটুক রাস্তাই সবচে বেশি থ্রিলিং এবং উঁচু নিচু। তাই চান্দেরগাড়ি ইজ বেস্ট। চান্দের গাড়ি সাজেক পর্যন্ত প্রতিদিন যায় না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার তিন দিন সকালে যায়। এই তিনদিনে চান্দের গাড়িতে জনপ্রতি সাজেকের ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ২শ থেকে আড়াই শ। অন্যদিন চান্দের গাড়ি রিজার্ভ (নিয়ে যাবে, প্রয়োজনে রাতে থেকে সকালে নিয়ে আসবে) করতে খরচ পড়ে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা! ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাগড়াছরি যাওয়াই ভালো। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির সরাসরি একাধিক বাস (সেইন্ট মার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি) আছে। নয় ঘন্টা লাগবে মিনিমাম।

সাজেকের পথে

at শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫  |  No comments

 দীর্ঘদিন কোথাও যাই না। যাই না মানে কেবল বাড়ি যাই, আর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরি। অথচ গত দেড় বছরে ছোট বড় হাফ ডজন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ। কারণ আমার সময় হইলে বন্ধুদের হয় না, বন্ধুদের হলে আমার হয় না। যা শালা! এই সংকট যদি না কাটে তবে তো মহা বিপদ। এই বিপদ কাটানোর জন্য আর কারো সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসে ছুটি চাইলাম। পাওনা ছুটি, সে-ও পাইতে বহুত পথ পারি দিতে হইলো। কী আর করা! নিজের শিডিউলই দুই বার পিছাইয়া শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের টিকিট করে তূর্ণা এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। তবে মূল গন্তব্য চট্টগ্রাম নয়। শিল্প নগরী কেবল ভায়া। মূল লক্ষ্য পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনামূলক কম পরিচিত ও পরিচিত জায়গাগুলো।

২৩ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নেমে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়িতে একটা গ্রামের নাম আছে ‘খাগুয্যাছড়ি’। এই নাম থেকেই কি খাগড়াছড়ি নামকরণ হইছে? হতে পারে। চট্টগ্রাম পাড় হয়ে যখন খাগড়াছড়ির বাসে উঠি, তখন মনে হলো এখানেই আমার ছোট চাচা আজ প্রায় ২০/২২ বছর ধরে থাকছেন অথচ কখনো যাওয়া হয় নি। এবার গেলেও সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। যাচ্ছি অন্য কোনও খানে। যাচ্ছি সাজেক। যেই জায়গাটা আসলে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলায়। কিন্তু একমাত্র পথ খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া। খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার আগে একাধিক বড় বড় পাহাড় পার হতে হয়, এই পথে আমি মোটেও অভ্যস্থ নই বিধায় আমার মুগ্ধতা বাড়েই কেবল। শহরটা এমনই। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা শহর। আসলেই ছোট্ট। ব্যাটারি চালিত অটো দিয়ে দশ মিনিট রাইড করলেই শহরের এক মাথা দিয়ে ঢুকে অন্য মাথা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে এই ছোট্ট শহরটিতে আসতেই হবে। যদি না সরাসরি হেলিকপ্টারে যেতে চান। আমার যেহেতু হেলিকপ্টারে করে সাজেক যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। আর তাতে করে সবচে ভালো এবং সাশ্রয়ি বাহন হলো চান্দের গাড়ি। সেই লক্ষ্যে আমি যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাইম তখন দুপুর ২টা। এই সময় তো দূরের কথা সকাল ১০টার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে সাজেক যাওয়া যায় যে কোনও সময়। আমার ভরসা ছিলো ওইটাই। তাই প্রাইভেটে মোটর সাইকেলই ভরসা হইলো আমার। বিকাল ৩টায় রওনা দিয়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তার মাথায় ১৮শ উচ্চতার পাহাড়ে পৌছাইতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা। তবে চান্দের গাড়িতে গেলে ঠিক কতক্ষণ লাগবে এই বিষয়ে আমার ধারণা নাই। যতটুকু শুনেছি, এর কাছাকাছি সময়ই লাগবে। তবে যাওয়ার সময়ই ফেরার ব্যবস্থা করে তারপর যাওয়া উচিত। যদি না আপনি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ বা নিজের গাড়িতে না যান তবে ফেরার জন্য এমনও হতে পারে আপনাকে সেখানে অপেক্ষাই করতে হবে যতক্ষণ না আপনি অন্য কোনও ব্যবস্থা পাচ্ছেন।

আমি যখন যাই রাস্তায় সেনা বাহিনী চেকপোস্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কোনও বুকিং আছে কি না। আমার ছিলো না। কিন্তু তারপরও আমি গিয়ে থাকার ব্যবস্থা পেয়ে গেছি। সাজেকে প্রতি উইকেন্ডে প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়। তাই বুকিং ছাড়া যাওয়া অনেকটা রিস্কি। তবে সোমবার-বুধবার, এই তিনদিনের মধ্যে গেলে সাধারণ ট্যুরিস্টদের জন্য একদমই নয়। কারণ এর সর্বনি¤œ ভাড়া দশ হাজার টাকা নাইট। অন্য দিকে সাজেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত প্রথম রিসোর্ট (আলো রিসোর্ট) এর রুম ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা। অবশ্য সেবাও দুইটার সম্পূর্ণ পৃথক। তবে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলো রিসোর্টে আরও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা আছে। একটা কমন রুম আছে। যেখানে সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া মাত্র সাড়ে তিনশ টাকা। তবে ভুল করে যদি বুকিং ছাড়া উইকএন্ডে চলে আসেন। তাহলে আপনার জন্য একমাত্র অবলম্বন হতে পারে লোকাল আদিবাসীদের বাড়ি। এখানে আদিবাসীরা খুব নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্টদের থাকতে দেয়। যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। সেখানে পানির সংকট সব সময়ই। তাই শীতে উইকএন্ডে গেলে সম্ভব হলে সাথে মিনিমাম খাবার পানি নিয়ে যাওয়া নীরাপদ।

আমিতো বর্ষায় গেলাম। ফলে এই সময়ে এই সংকটটা নেই। কেনার মতো পানি সেখানে না থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি ঠিকই পাওয়া গিয়েছিলো।
সাজেকে যাওয়াটা সবচে কঠিন। কঠিন বলতে সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় পরছে, কিন্তু যাইতে হয় খাগড়াছরি হয়ে। কোনও বিকল্প নাই। সেখানে দুইটা হ্যালিপ্যাড আছে। ইচ্ছা করলে যাইতে পারেন। ;) এছাড়া বাসে করে দিঘীনালা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দিঘীনালা থেকে সাজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাইতে হলে রেগুলার চান্দের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশ দেরি করে আসে। ফলে খাগড়াছরি থেকে রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সবচে দ্রুততর এবং নিরাপদ। তবে হ্যা বিকল্প আরও ব্যবস্থা আছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি। সিএনজি কখনোই কাসালং বাজার পাড় হয় না। কাসালং থেকে সাজেক প্রায় ১৮ কিলোমিটার বা তারও একটু বেশি হবে। ঐটুক রাস্তাই সবচে বেশি থ্রিলিং এবং উঁচু নিচু। তাই চান্দেরগাড়ি ইজ বেস্ট। চান্দের গাড়ি সাজেক পর্যন্ত প্রতিদিন যায় না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার তিন দিন সকালে যায়। এই তিনদিনে চান্দের গাড়িতে জনপ্রতি সাজেকের ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ২শ থেকে আড়াই শ। অন্যদিন চান্দের গাড়ি রিজার্ভ (নিয়ে যাবে, প্রয়োজনে রাতে থেকে সকালে নিয়ে আসবে) করতে খরচ পড়ে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা! ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাগড়াছরি যাওয়াই ভালো। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির সরাসরি একাধিক বাস (সেইন্ট মার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি) আছে। নয় ঘন্টা লাগবে মিনিমাম।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫


 
গত কয়েকদিন আগে কাজের ফাঁকে হঠাৎ ফ্রান্সের একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি সৌদি নারী চলচ্চিত্রকারের একটি সাক্ষাৎকার চোখে পড়লইন্টারভিউটি পড়ার পর জানা গেলো, তিনিই সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। এবং তার ছবি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক ও দুবাই চলচ্চিত্র উৎসবেও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ইসলামী রক্ষণশীল আইনে জীবন পরিচালিত একটি দেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মানে সত্যিই একটি বিরাট বিপ্লব। এই বিপ্লবে অনুপ্রেরণা দিতেই অনেকাংশে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত বা উন্নত হলেও সাংস্কৃতিক ভাবে বিশ্বে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারা জাতি বা দেশগুলোর চলচ্চিত্র অনেক বড় বড় উৎসব কমিটি একটি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এটাকে একদিক থেকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যদিক থেকে সংস্কৃতির উদার নৈতিকতার প্রমাণ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরস্কৃত বা আলোচিত চলচ্চিত্রগুলো সেইভাবেই আলোচনায় আসে, যেগুলো ইউরোপিয় দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ‘প্রেজেন্টেড প্রডাক্ট’টির ভাবনা বা রূপ মিলে থাকে। আর এই কথার প্রমাণ আমরা একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাই। আমার চারপাশে এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। তার ভেতরে আমি সবার আগে রাখবো ২০১০ এর অস্কার পুরস্কারকে। সে বছর ভারতীয় প্রেক্ষাপটের একটি গল্প নিয়ে হলিউড ভিত্তিক নির্মাতা ড্যানি বয়েল বানিয়েছিলো স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিটি। ছবির নামটি যদি আপনি বাংলা করেন, তাহলে দেখবেন সেখানে বস্তির একটি শিশুকে কুকুর হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তারা আদতে মানুষই নয়। আর এর মিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প যদি উৎকৃষ্ট রূপে ইউরোপিয়দের সামনে প্রেজেন্টেশন করা যায়, তবে তা যে লুফে নিবেই তার প্রমাণ তো আপনার হাতের কাছেই। তেমনি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও আমরা ব্যতিক্রম দেখি না। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ছবি বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে সেগুলো যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ঠ যুক্তিযুক্ত, তবুও সেগুলোতে বাংলাদেশকে ইউরোপিয়রা যেমন দেখতে চায় তেমনই দেখানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই প্রত্যাশা করবো এমন কোনও গল্পের ছবি ইউরোপিয়দের কাছ থেকে সেরার স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনুক, যে ছবিটি কিনা আমরা যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে পছন্দ করি সেভাবেই বা তেমন গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে।
এতক্ষণ যে কাসুন্দি ঘাটলাম এর একটা বড় কারণ হলো আমাদেরো এক ধরণের ইউরোপিয় নাক সিটকানো ভাবটা রয়েছে। আমরাও অনেক সময় তাদের (ইউরোপিয়) চোখে দেখতে চাই বা দেখে থাকি। আর তাই আমরা প্রায়ই আমাদের কর্মকে সবার আগে তুলনা করি তাদেরই সাথে। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় অনেক বিভ্রান্তির তৈরি হয়। এতে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।  এই কথাগুলো বলার প্রধান কারণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন’ নিয়ে গল্প নকলের অভিযোগের প্রেক্ষাপটকে নিয়ে। আমি মূলত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র টেলিভিশন আর তুর্কী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইলমাজ ইর্দোগান এর ভিজনটেলে ’র তূলনামূলক আলোচনার পথ তৈরি করতে চাই। তাই শুরুতেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে অযথা কথাগুলো বলে নিলাম।
‘টেলিভিশন’ ছবির পোস্টার
বাংলা টেলিভিশন সিনেমার গল্প বর্তমান সমসাময়িক কালের এক জন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের। যে দ্বীপের মানুষ ঠিক আধুনিক কালের হয়েও অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোয়া পায় না।  আর ভিজনটেলে’র গল্পের প্রেক্ষাপট ৭০ এর দশকের তুরস্কের এক অতিদূর্গম অঞ্চলের। কিন্তু তা নির্মাণ হয়েছে ২০০১ সালে। বাংলাদেশে নতুন কোনও কিছু হলেই তার জেনে না জেনে দুইটা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়। আর বিপক্ষ দল সব সময়ই বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে মাঝখানে থাকা মানুষদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে পক্ষ দল নিজেদের ঢোল এত জোড়ে বাজাতে যায়, যে তা হয় ফেটে যায় নয়তো ফাটার উপক্রম হয়। এই অবস্থায় মাঝখানে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে থাকতে হলেও প্রয়োজন পড়ে কিছুটা আস্থা ও যুক্তির। যেখান থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়, তেমন স্থান ছাড়া আর এর বিকল্প থাকে না।
টেলিভিশন ছবি মুক্তির পরপরই যে অভিযোগটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়, তা হলো এটি তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো। কিন্তু আদতে তা তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো হয় নি। টেলিভিশন ছবির গল্প সম্পূর্ণ মৌলিক। বলতে গেলে পরিচালকের বাবার ও তার নিজের জীবনের সাথে কিছুটা আত্ম জৈবনিকও । অপরদিকে তুর্কী ছবির গল্প তেমন আত্ম জৈবনিক কি না তা জানা যায় নি। তবে দুইটা ছবিতেই কম বেশী হাস্যরস, ট্রাজেডি, প্রেম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্লাইমেক্স সবই রয়েছে। তবে প্রত্যেকটাই নিজস্ব ঢংয়ে। এক্ষেত্রে ভিজনটেলেসাথে টেলিভিশনএর ফর্মুলাগত মিল পাওয়া যায়। যদিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক ছবিই প্রায় কাছাকাছি ফর্মূলা মেইনটেইন করে।
তুরস্ক অর্ধেক এশিয় আর অর্ধেক ইউরোপিয়। তবে তার সংস্কৃতি ও জীবন ধারার সাথে ইউরোপের জীবনের মিল রয়েছে বেশী। অর্থনৈতিকভাবে এশিয় সাধারণ দেশগুলোর চেয়ে একটু এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় তারা কর্মে ও জাতেও বেশীরভাগ ইউরোপিয়ই। তার প্রমাণ তাদের সিনেমাতেও পাওয়া যায়। এই ভিজনটেলের নির্মাণশৈলি ও গল্প বলার ধরণ (স্টোরি টেলিং) কিন্তু বেশ আরামদায়ক। টেলিভিশন  ছবিতে গল্প বলাটা পুরোপুরি আরামদায়ক না হলেও পিড়াদায়ক নয়। তুর্কী ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু পুরস্কার পেলেও খুব উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও পুরস্কার তার ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু পুরো ছবিটা চমৎকার উপভোগ্য বলেই কিনা, ছবিটি যথেষ্ঠ ব্যবসাসফল হয়েছিলো দেশে ও দেশের বাইরেও। এর অনুপ্রেরণায় পরিচালক এই ছবির সিক্যুয়েল করেছিলেন। 
টার্কিস ‘ভিজনটেলে’ ছবির পোস্টার
ভিজনটেলে দেখার সময় মনে হচ্ছিল ইউরোপেরই কোনো পরিচালক ইচ্ছাপূর্বক একটু পুরনো আমেজে পুরনো একটি গল্প বলছেন। আর তাই কিছু কিছু অনুভূতির ব্যবহার তিনি করেছেন দুর্দান্ত। ঠিক একই ধরণের হিসেব খাটানোর চেষ্টা আমরা দেখি টেলিভিশন  এ। এ ছবিতে কেবল প্রেমিকার অপমানের পরই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে উঠা যুবকটি পিতার আশ্রয়েই প্রতিপক্ষ হয়ে গেলো। এটা সম্ভব মনে হলেও মেনে নিতে কষ্ট হয় এই কারণে যে, যে সন্তান পিতার অবাধ্য হয়ে যায়, পিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে সেই সন্তানকে বর্জন করে এর ঠিক উল্টো রূপও রয়েছে। যার ফলে দেখা যায় পিতা ও সন্তানের যে ট্রাডিশনাল বৈপরীত্য অনেক সময় প্রগতিশীল পিতা মেনে নেয়। কিন্তু টেলিভিশন র পিতা কিন্তু সেই প্রগতিশীল ব্যক্তি নয়। ফলে এই বিরোধটা টিকে থাকার কথা থাকলেও উভয়েই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এখানে সরে এসেছে। যার দরুন, পিতা পুত্রের এই আঁচরণকে কিছুটা গরমিল মনে হয়েছে।
ভিজনটেলে মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির সুবিধা অনেক সময় হৃদয়ের বিপরীতে ধাবিত করতে পারে। একই সাথে যদি সেই প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা না জানা থাকে তবে তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ভাবনাটা দারুণ ভাবে মিলে। তার প্রমাণ, স্বাধীনভাবে কথা বলার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত ইন্টারনেট ও ব্লগে প্রকাশিত কথা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করা।
বিপরীতে টেলিভিশন ছবির মূল প্রতিপাদ্য আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির কাছে পরাজিত গোড়ামি বা সংস্কার ভাবনা। যা এক দিক দিয়ে প্রযুক্তির বিশাল গ্রহণযোগ্যতাকে উপস্থাপন করে, পাশাপাশি ধর্মের রক্ষণশীল জায়গা থেকে সড়ে আসার যে আহ্বান তাও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এইসব বিষয় তুচ্ছ হয়ে যায় ছবির বিপনন পদ্ধতি বা চিন্তার কারণে। শুরুতে যে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম, যে ইউরোপিয়রা কেন তৃতীয় বিশ্বসহ শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে তাদের চেয়ে একটু কম পারঙ্গমদের কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। সে প্রসঙ্গ চলে আসে কারণ টেলিভিশন ছবির পরিচালকের বক্তব্য। ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের দুই একজন পরিচালক ও তাদের ছবির কথা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের কিছু পরিচালক পশ্চিমাদের পছন্দের ছবি বানায়। কিন্তু তাদের সেই ছবি পশ্চিমের দেশগুলোতে আর বিক্রি হচ্ছে না। যার কারণে আর পশ্চিমাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে ছবি বানালে চলবে না।  নিঃসন্দেহে এ আশার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেকর্ড বলে টেলিভিশন ছবিতেও কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করি। নয়তো টেলিভিশন শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় কারণে একটা গ্রামের মানুষদের নিষিদ্ধ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আবার সেই টেলিভিশনের কাছেই পরাজয় স্বীকার করতে হয় না।
সব কিছুর পরেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকির টেলিভিশন আর ভিজনটেলে পৃথক দুটো ছবি। পৃথক অনুভূতির গল্প বলে বিধায়ই কেবল ছবিগুলো পৃথক নয়, বরং আমি ভিটনটেলে কে এগিয়ে রাখবো  তার নির্মাণশৈলি বা তার গল্প বলার ধরণের কারণেই। সর্বোপরি দুটোই টেলিভিশন সংক্রান্ত সিনেমা।  
 (গদ্যটি লেখা হয়েছিলো ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারিতে। ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়াটাই নিরাপদ হবে।)

আমাদের ও তাদের ‘টেলিভিশন’

at বুধবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫  |  1 comment


 
গত কয়েকদিন আগে কাজের ফাঁকে হঠাৎ ফ্রান্সের একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি সৌদি নারী চলচ্চিত্রকারের একটি সাক্ষাৎকার চোখে পড়লইন্টারভিউটি পড়ার পর জানা গেলো, তিনিই সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। এবং তার ছবি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক ও দুবাই চলচ্চিত্র উৎসবেও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ইসলামী রক্ষণশীল আইনে জীবন পরিচালিত একটি দেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মানে সত্যিই একটি বিরাট বিপ্লব। এই বিপ্লবে অনুপ্রেরণা দিতেই অনেকাংশে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত বা উন্নত হলেও সাংস্কৃতিক ভাবে বিশ্বে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারা জাতি বা দেশগুলোর চলচ্চিত্র অনেক বড় বড় উৎসব কমিটি একটি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এটাকে একদিক থেকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যদিক থেকে সংস্কৃতির উদার নৈতিকতার প্রমাণ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরস্কৃত বা আলোচিত চলচ্চিত্রগুলো সেইভাবেই আলোচনায় আসে, যেগুলো ইউরোপিয় দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ‘প্রেজেন্টেড প্রডাক্ট’টির ভাবনা বা রূপ মিলে থাকে। আর এই কথার প্রমাণ আমরা একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাই। আমার চারপাশে এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। তার ভেতরে আমি সবার আগে রাখবো ২০১০ এর অস্কার পুরস্কারকে। সে বছর ভারতীয় প্রেক্ষাপটের একটি গল্প নিয়ে হলিউড ভিত্তিক নির্মাতা ড্যানি বয়েল বানিয়েছিলো স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিটি। ছবির নামটি যদি আপনি বাংলা করেন, তাহলে দেখবেন সেখানে বস্তির একটি শিশুকে কুকুর হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তারা আদতে মানুষই নয়। আর এর মিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প যদি উৎকৃষ্ট রূপে ইউরোপিয়দের সামনে প্রেজেন্টেশন করা যায়, তবে তা যে লুফে নিবেই তার প্রমাণ তো আপনার হাতের কাছেই। তেমনি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও আমরা ব্যতিক্রম দেখি না। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ছবি বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে সেগুলো যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ঠ যুক্তিযুক্ত, তবুও সেগুলোতে বাংলাদেশকে ইউরোপিয়রা যেমন দেখতে চায় তেমনই দেখানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই প্রত্যাশা করবো এমন কোনও গল্পের ছবি ইউরোপিয়দের কাছ থেকে সেরার স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনুক, যে ছবিটি কিনা আমরা যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে পছন্দ করি সেভাবেই বা তেমন গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে।
এতক্ষণ যে কাসুন্দি ঘাটলাম এর একটা বড় কারণ হলো আমাদেরো এক ধরণের ইউরোপিয় নাক সিটকানো ভাবটা রয়েছে। আমরাও অনেক সময় তাদের (ইউরোপিয়) চোখে দেখতে চাই বা দেখে থাকি। আর তাই আমরা প্রায়ই আমাদের কর্মকে সবার আগে তুলনা করি তাদেরই সাথে। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় অনেক বিভ্রান্তির তৈরি হয়। এতে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।  এই কথাগুলো বলার প্রধান কারণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন’ নিয়ে গল্প নকলের অভিযোগের প্রেক্ষাপটকে নিয়ে। আমি মূলত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র টেলিভিশন আর তুর্কী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইলমাজ ইর্দোগান এর ভিজনটেলে ’র তূলনামূলক আলোচনার পথ তৈরি করতে চাই। তাই শুরুতেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে অযথা কথাগুলো বলে নিলাম।
‘টেলিভিশন’ ছবির পোস্টার
বাংলা টেলিভিশন সিনেমার গল্প বর্তমান সমসাময়িক কালের এক জন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের। যে দ্বীপের মানুষ ঠিক আধুনিক কালের হয়েও অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোয়া পায় না।  আর ভিজনটেলে’র গল্পের প্রেক্ষাপট ৭০ এর দশকের তুরস্কের এক অতিদূর্গম অঞ্চলের। কিন্তু তা নির্মাণ হয়েছে ২০০১ সালে। বাংলাদেশে নতুন কোনও কিছু হলেই তার জেনে না জেনে দুইটা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়। আর বিপক্ষ দল সব সময়ই বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে মাঝখানে থাকা মানুষদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে পক্ষ দল নিজেদের ঢোল এত জোড়ে বাজাতে যায়, যে তা হয় ফেটে যায় নয়তো ফাটার উপক্রম হয়। এই অবস্থায় মাঝখানে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে থাকতে হলেও প্রয়োজন পড়ে কিছুটা আস্থা ও যুক্তির। যেখান থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়, তেমন স্থান ছাড়া আর এর বিকল্প থাকে না।
টেলিভিশন ছবি মুক্তির পরপরই যে অভিযোগটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়, তা হলো এটি তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো। কিন্তু আদতে তা তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো হয় নি। টেলিভিশন ছবির গল্প সম্পূর্ণ মৌলিক। বলতে গেলে পরিচালকের বাবার ও তার নিজের জীবনের সাথে কিছুটা আত্ম জৈবনিকও । অপরদিকে তুর্কী ছবির গল্প তেমন আত্ম জৈবনিক কি না তা জানা যায় নি। তবে দুইটা ছবিতেই কম বেশী হাস্যরস, ট্রাজেডি, প্রেম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্লাইমেক্স সবই রয়েছে। তবে প্রত্যেকটাই নিজস্ব ঢংয়ে। এক্ষেত্রে ভিজনটেলেসাথে টেলিভিশনএর ফর্মুলাগত মিল পাওয়া যায়। যদিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক ছবিই প্রায় কাছাকাছি ফর্মূলা মেইনটেইন করে।
তুরস্ক অর্ধেক এশিয় আর অর্ধেক ইউরোপিয়। তবে তার সংস্কৃতি ও জীবন ধারার সাথে ইউরোপের জীবনের মিল রয়েছে বেশী। অর্থনৈতিকভাবে এশিয় সাধারণ দেশগুলোর চেয়ে একটু এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় তারা কর্মে ও জাতেও বেশীরভাগ ইউরোপিয়ই। তার প্রমাণ তাদের সিনেমাতেও পাওয়া যায়। এই ভিজনটেলের নির্মাণশৈলি ও গল্প বলার ধরণ (স্টোরি টেলিং) কিন্তু বেশ আরামদায়ক। টেলিভিশন  ছবিতে গল্প বলাটা পুরোপুরি আরামদায়ক না হলেও পিড়াদায়ক নয়। তুর্কী ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু পুরস্কার পেলেও খুব উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও পুরস্কার তার ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু পুরো ছবিটা চমৎকার উপভোগ্য বলেই কিনা, ছবিটি যথেষ্ঠ ব্যবসাসফল হয়েছিলো দেশে ও দেশের বাইরেও। এর অনুপ্রেরণায় পরিচালক এই ছবির সিক্যুয়েল করেছিলেন। 
টার্কিস ‘ভিজনটেলে’ ছবির পোস্টার
ভিজনটেলে দেখার সময় মনে হচ্ছিল ইউরোপেরই কোনো পরিচালক ইচ্ছাপূর্বক একটু পুরনো আমেজে পুরনো একটি গল্প বলছেন। আর তাই কিছু কিছু অনুভূতির ব্যবহার তিনি করেছেন দুর্দান্ত। ঠিক একই ধরণের হিসেব খাটানোর চেষ্টা আমরা দেখি টেলিভিশন  এ। এ ছবিতে কেবল প্রেমিকার অপমানের পরই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে উঠা যুবকটি পিতার আশ্রয়েই প্রতিপক্ষ হয়ে গেলো। এটা সম্ভব মনে হলেও মেনে নিতে কষ্ট হয় এই কারণে যে, যে সন্তান পিতার অবাধ্য হয়ে যায়, পিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে সেই সন্তানকে বর্জন করে এর ঠিক উল্টো রূপও রয়েছে। যার ফলে দেখা যায় পিতা ও সন্তানের যে ট্রাডিশনাল বৈপরীত্য অনেক সময় প্রগতিশীল পিতা মেনে নেয়। কিন্তু টেলিভিশন র পিতা কিন্তু সেই প্রগতিশীল ব্যক্তি নয়। ফলে এই বিরোধটা টিকে থাকার কথা থাকলেও উভয়েই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এখানে সরে এসেছে। যার দরুন, পিতা পুত্রের এই আঁচরণকে কিছুটা গরমিল মনে হয়েছে।
ভিজনটেলে মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির সুবিধা অনেক সময় হৃদয়ের বিপরীতে ধাবিত করতে পারে। একই সাথে যদি সেই প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা না জানা থাকে তবে তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ভাবনাটা দারুণ ভাবে মিলে। তার প্রমাণ, স্বাধীনভাবে কথা বলার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত ইন্টারনেট ও ব্লগে প্রকাশিত কথা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করা।
বিপরীতে টেলিভিশন ছবির মূল প্রতিপাদ্য আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির কাছে পরাজিত গোড়ামি বা সংস্কার ভাবনা। যা এক দিক দিয়ে প্রযুক্তির বিশাল গ্রহণযোগ্যতাকে উপস্থাপন করে, পাশাপাশি ধর্মের রক্ষণশীল জায়গা থেকে সড়ে আসার যে আহ্বান তাও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এইসব বিষয় তুচ্ছ হয়ে যায় ছবির বিপনন পদ্ধতি বা চিন্তার কারণে। শুরুতে যে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম, যে ইউরোপিয়রা কেন তৃতীয় বিশ্বসহ শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে তাদের চেয়ে একটু কম পারঙ্গমদের কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। সে প্রসঙ্গ চলে আসে কারণ টেলিভিশন ছবির পরিচালকের বক্তব্য। ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের দুই একজন পরিচালক ও তাদের ছবির কথা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের কিছু পরিচালক পশ্চিমাদের পছন্দের ছবি বানায়। কিন্তু তাদের সেই ছবি পশ্চিমের দেশগুলোতে আর বিক্রি হচ্ছে না। যার কারণে আর পশ্চিমাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে ছবি বানালে চলবে না।  নিঃসন্দেহে এ আশার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেকর্ড বলে টেলিভিশন ছবিতেও কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করি। নয়তো টেলিভিশন শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় কারণে একটা গ্রামের মানুষদের নিষিদ্ধ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আবার সেই টেলিভিশনের কাছেই পরাজয় স্বীকার করতে হয় না।
সব কিছুর পরেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকির টেলিভিশন আর ভিজনটেলে পৃথক দুটো ছবি। পৃথক অনুভূতির গল্প বলে বিধায়ই কেবল ছবিগুলো পৃথক নয়, বরং আমি ভিটনটেলে কে এগিয়ে রাখবো  তার নির্মাণশৈলি বা তার গল্প বলার ধরণের কারণেই। সর্বোপরি দুটোই টেলিভিশন সংক্রান্ত সিনেমা।  
 (গদ্যটি লেখা হয়েছিলো ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারিতে। ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়াটাই নিরাপদ হবে।)

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম