সোমবার, ২০ মে, ২০১৩



 ০১.

গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ একটা গল্প ভাবছিলাম। গল্প লিখবো বলে না, একটা ছোট সিনেমা বানাবো বলে। কিন্তু সেই গল্পটা আমার লেখা হয়ে উঠতেছে না। আমার বন্ধ্যাকাল চলতেছে কিনা জানিনা। আমি কিছুই লিখতে পারতেছিনা। আর এই না পারার দরুন সেই গল্পটাও একটা সম্ভাবনা হয়ে আমার দরজার কাছ  দিয়ে কেবল ঘুরঘুর করতেছে। তবে গল্পটা আমি লিখবোই এই বিষয়ে নিশ্চিত হই নিজের কাছে। তার আগে ভাবি, এই গল্পের চিত্রনাট্য লেখার আগে এর ভিজ্যুয়ালের মতো কিছু পাই কিনা। হ্যা, এই রকম খুঁজতে গিয়াই হঠাৎ ‘ট্রাইজ’ ছবিটা পাইয়া গেলাম। ছবিটা আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কোনও প্রশংসিত ছবি না। আমি যুদ্ধ নিয়া কি কি ছবি আছে এমন ছবির রেফারেন্স ঘাটতে গিয়া এই ছবির খোঁজ পাই। এই ছবি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। এইখানে অন্য কথা বলার ইচ্ছা আমার।

ছোট ছবি মানে শর্ট ফিল্মের কথা বলতেছিলাম। দীর্ঘদিন আমি ভিজ্যুয়ালে কোনও কাজ করতেছিও না, কোনও কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তও না। আর এই কাজ না করার ফলে আমি নিজেরে বহু দূরের মনে করতেছি। মনে হইতেছে, আমার ভেতরকার আমিটা কই জানি হারায়া গেছে। এই হারায়া যাওয়া আমিকেই খুঁজতে এই ছোট সিনেমার চিন্তা। কারণ ছোট সিনেমাই বানাইতে হইবো এইটা এখন নিশ্চিত। যেহেতু বড় মানে ফুল লেংথের সিনেমাবা বানারো সক্ষমতা ও সুযোগ কোনওটাই আমার এখনো আসে নাই। তাই ছোট সিনেমাই বানাইতে হইবো। তবে ছোট সিনেমার যেহেতু কোনও বাজার নাই, তাই ছোট সিনেমার জন্য প্রযোজকও নাই। আর তাই নো-বাজেটে কিভাবে ছোট সিনেমা বানানো যায়, তার চিন্তা করা দরকার। বলতে পারেন, ছোট সিনেমা না বানাইয়া আপনি নাটক বানান না কেন? নাটক বানাইলে তো অন্তত ভিজ্যুয়াল প্র্যাক্টিসটা হৈতো। আপনারে বলি, ভাই কেন যে নাটক বানাইনা এই কথাই কইতে আইছি। একটু সবুর করেন।

 ০২.

একদিন ছবির হাটে বইসা ছিলাম। মহিম জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ভাই এই সময়টাতে তো ছবি বানানোর হিড়িক পড়ছে। আপনি তো হিড়িকে গা ভাসানোর মানুষ না। আপনি কেন ছবি বানাবেন বইলা সিদ্ধান্ত নিছেন? আমি তারে নানান্ কথা বুঝাইলাম। কিন্তু সে বুঝবার চায় না। বলে, এইটা না আপনার আরো কোনও কথা আছে সেইটা বলেন। তখন আমি বলছিলাম, হিড়িকে গা ভাসানোর জন্য তো না’ই। বরং আমার মনে হয় সিনেমাটা আমার বানানো উচিত। অন্তত দেশের সিনেমার জার্নি আর বড় হওয়ার পর বিদেশী সিনেমা দেইখ্যা যেইভাবে বড় হইতেছি, তাতে মনে হইছিলো সিনেমারে আমার কিছুটা অন্তত দেয়ার আছে। সে আর কথা না বাড়াইয়া বলছিলো, এইবার মনে হয় আপনে ভেতরকার কথাটা কইছেন। হ্যা, এই সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে এই সিনেমা বানানোর প্রবণতাটা প্রচুর বাড়ছে। কেবল বাড়ছে বললে ভুল হবে, বলতে হবে এইটা একটা ক্রেজি রূপ নিছে। গত দশকে মানে শূন্য দশকে তেমনই কবিতা লেখার অবস্থা ছিলো। এই শূন্য দশকে কবিতর সংখ্যা ছিলো শত শত। এই এত এত কবির মধ্য থেইক্যা এখন গুনতে গেলে দশজন উল্লেখযোগ্য কবিকে খুইজ্যা বের করা মুশকিল হইয়া যায়। তার পরিবর্তে শাহবাগ, ছবির হাট, টিএসসিতে বসলেই এখন ডিরেক্টর। আর শুধু ডিরেক্টরই না। ঐখানে তিনটা ঢিল মারলেও আড়াইটাই মনে হয় কোনও না কোনও ডিরেক্টরের গায়ে গিয়া পরবো এমন অবস্থা। সবাই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখে বা কেউ কেউ বানায়। তো এই অবস্থায় সিনেমার একটা সম্ভাবনা চোখে পড়ে না? শূন্য দশকে তেমন কবিতারও সম্ভাবনা ছিলো। এই সম্ভাবনায় যারা সাতরাইতে সাতরাইতে কুলের দিকে আসতেছেন তারা হয়ত পাড় দেখতে পারতেছেন। এর চেয়ে ভালো কথা, পরবর্তী দশকে এর দারুণ প্রভাবে কবিতা লেখকের সংখ্যা কইম্যা গেছে। আর এর ফলে যারা লিখতেছে অধিকাংশই যথেষ্ট সম্ভাবনাময় লেখাই লিখতেছে। এইটাও বিগত দশকের একটা ফল হিসাবে ধরলে ভবিষ্যতে সিনেমার এই সময়টা সত্যিই সম্ভাবনায়। তবে এত বিপুল নির্মাতা শ্রেণী কি আসলে তৈরি হৈতেছে? এইটা একটা প্রশ্ন বটে। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আশপাশে তাকালে দেখি, তেমন একটা তৈরি হইতেছে না। কেমনে হবে? সেই সুযোগই তো তারা পাইতেছে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই সুযোগটা আসলে কি? সুযোগটা নানান্ ভাবেই হইতে পারে। প্রথমত, ছোট ছোট সিনেমা বানাইয়া তারা প্রস্তুতিটা নিতে পারে বড় সিনেমার জন্য। এই ছোট সিনেমাই সবচে ভালো প্রস্তুতির ব্যবস্থা হৈতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশে ছোট সিনেমার কোনও ভাবেই কোনও বেইল করা করা গেলো না। আমাদের পূর্ব পুরুষ চলচ্চিত্র নির্মাতারাও তেমন একটা পারলেন না, আমারাও পারতেছিনা। অবশ্য সারা পৃথিবীতেই এইটা মানে এই ছোট সিনেমার বাজার তৈরি করাটা একটা মহা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জিততে পারলে পৃথিবীর সিনেমা আরও বহু আগেই যে বদলাইয়া যাইতো তা আর বলতে হয় না। তো এই ছোট সিনেমার বাজার যেহেতু নাই, সেহেতু আর যেই বিকল্প মাধ্যমটা আমাদের হাতে আছে, সেইটাতেই চিন্তা করতেছিলো এই তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় নির্মাতারা। অন্তত গল্প বলার প্র্যাক্টিসটা এইখানে করতে পারে। কিন্তু এই জায়গাটাও আর সেই আগের মতো নাই। সেই জায়গাটা কি? সেই জায়গাটা টিভির এক খন্ডের নাটক। এইখানে একজন স্বপ্নবাজ তরুণ নির্মাতা তার পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের রূপায়্নের আগে, নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারতো। আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার এক জাদুকর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলো, পৃথিবীর অন্য সব দেশের টেলিভিশন সিনেমার ধ্বংস করে, আর আমাদের দেশের টেলিভিশন সিনেমা নির্মাতা বানায়।  এই কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে বেশ কিছুটা সত্য। তিনি যখন এই কথা বলছিলেন, তখন ফারুকীর মতো আরো অনেক তরুণ নির্মাতা টিভিতে এই খন্ড নাটক বানাইয়া নিজেদের ডিরেক্টর হিসেবে এস্টাব্লিশমেন্ট করে ফেলছে। আর তাই টিভিতে এমন সব কাজও হৈছে, যেগুলো নিয়া আমরা আক্ষেপও করতে পারি এই কারণে যে, এইসব প্রডাকশন টিভিতে না হইলে থার্টি ফাইভে হইলে বা টিভিতে না দেখাইয়া যদি আন্তর্জাতিক ফ্যাস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হইয়া যাইতো, তাইলে তা নতুন সিনামায় রূপ পাইতো। কিন্তু সরয়ার ভাইয়ের এই কথা এখন তাই পুরোপুরি সত্য নয়। তার কারণে এই দেশে যেসব তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা টিভিতে নাটক বানিয়ে সিনেমার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর তাদের মতো সেই ক্ষেত্রটা পাচ্ছে না বলে। তাদের মতো তো দূরের কথা কোনও ক্ষেত্রই পাচ্ছে না বলা যায়। কারণ, একটা সময় টিভি স্টেশন মানেই নতুন নতুন আইডিয়া আর নতুন নতুন প্রোগ্রাম পাওয়া যাইতো। নতুন নতুন গল্প বলার চেষ্টা থাকতো। নতুন নতুন টিভিগুলো সেইসব নতুন গল্পের পেছনে ছুটতোও। কিন্তু একটা টিভি স্টেশন হওয়ার আগে চিন্তা করে ঐ চ্যানেলের এই অনুষ্ঠানটা জনপ্রিয়। সুতরাং আমারো এমন একটা বানাইতে হইবো। আর এমন করতে গিয়া তার অনুষ্ঠানে নতুনত্ব থাকে না। আর ঐ এক পর্বের খন্ড নাটক, যা পৃথিবীর বিরলতম একটা টিভি অনুষ্ঠান। এই নাটকে সবচে তীব্র ভাবে ঢুকে গেছে স্থুলতা। আর তাই এই স্থুল নাটকগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আমাদের টিভি স্ট্যাশনগুলো। কারণ, ঐটাতে তার ব্যবসা হয় বিশেষ। এই স্থুল অনুষ্ঠান নির্মাণ আর স্থুল গল্পের নাটক নির্মাণের কারণে তার টিভির দর্শক যে হারিয়ে যাচ্ছে, সেই দিকে তার কোনও ভ্রুক্ষেপ নাই। তার কেবল দরকার ব্যবসা। আরে ভাই তোমার ব্যবসা টিকাইয়া রাখার জন্যও তো তোমার ভালো কিছু করতে হইবো, নাকি? আর টিভি স্ট্যাশনগুলোর এই ব্যবসার জন্যই তরুণ প্রজন্মের সিনেমার স্বপ্নটা ধূসর হয়ে যাচ্ছে।

 ০৩.

টিভিতে নাটক বানানোর মাধ্যমে সিনেমার প্রস্তুতি নেয়া যায় কারণ, টিভিতে নাটক বানানোর যে পদ্ধতিটা, এই পদ্ধতিটা সিনেমা বানানোর পদ্ধতিরই একটা প্রাথমিক সংস্করণ। আর এই মাধ্যমটাতে কাজ করে তাই আমাদের প্রজন্মের তরুণরা সিনেমার কথা ভাবতেছিলো। এখন এই নাটকের সাথে সিনেমার সম্পর্কটা কোন জায়গায় আর পার্থক্যটা কোন জায়গায় এইটাতে চোখ বুলাইলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথমত সিনেমা বড় ক্যানভাসের একটা শিল্প। আর এই শিল্পটাকে পূর্ণাঙ্গ শিল্প বলা হয়। এই প্রসঙ্গে শুরুতে যে ‘ট্রাইজ’ ছবির কথা বললাম তার পরিচালকের একটু কথা উদ্ধৃতি করি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘আমি মনে করি সিনেমা বানানো পৃথিবীর সবচে পূর্ণাঙ্গ কাজের একটা। এইখানে তোমাকে লেখক হইতে হইবো, রাজনীতিবিদ হইতে হইবো, ব্যবসায়ী হইতে হইবো, জীবনের রং দেখার ক্ষমতা থাকতে হইবো, তোমার জানতে হইবো কেমনে সিনামা হয়, কিভাবে কাটতে হয় তা জানতে হইবো, অভিনয়টা কি তাও জানতে হৈবো, মিউজিক তো বটেই। তারপরে না তুমি সিনেমা বানাইবা।’ এখন সিনেমার এইসব বিষয়ের অধিকাংশ বিষয়ই নাটকের সাথে জড়িত। সেই হিসেবে টিভি নাটক বলতে গেলে সিনেমার ড্রেস রিহার্সাল। কিন্তু সিনেমার পর্দা, দর্শক থেকে শুরু করে বিস্তৃতির জায়গা পর্যন্ত বিশাল হওয়ায় এর বাজেটটা ও আয়োজনেও বিশালত্ত্বটা থাকে। কিন্তু নাটকটা ড্রয়িং রুম মাধ্যম বলে তার সেই অনুপাতিক বাজেট থাকে না। কিন্তু তারপরও তুলনামূলক কম বাজেটে সেই প্রস্তুতিটা নেওয়ার চিন্তা কিন্তু করাই যায়। কিন্তু তার বিপরীতে কি হয়? একটু বাস্তব চিত্রটা দেখি।

 ০৪.

আমাদের দেশে অনুষ্ঠান প্রচার হয় এমন চ্যানেল আছে প্রায় এক ডজনেরো বেশী। প্রত্যেকটা চ্যানেলে যদি সপ্তাহে দুইটা করেও নতুন একটা করে খন্ড নাটক চালায় তাহলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০টা নতুন নাটক নির্মাণ করতে হয়।  এখন এই নাটকের অধিকাংশই যদি প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতারা নির্মাণ করতো, তাহলেও মাসে কমপক্ষে ১০টা নতুন নাটক নির্মাণের সুযোগ পাইতো একজন তরুণ নাট্য নির্মাতা। এই সুযোগটা তারা পায় না। আর এর বাইরে তার একটা নাটক নির্মাণ করতে গেলে যে ধকলটা পোহাইতে হয়, তাও রীতিমত কম না। সবচে বড় যে বিষয়টা তার প্রথমেই ফেইস করতে হয় তা হৈলো টাকা বা প্রডিউসার যোগার করা। বাংলাদেশে ট্রাডিশনাল ওয়েতে টিভি নাটকের প্রডিউসার যোগার করা রীতিমত এলাহি কাণ্ড। পুরনো যারা প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা, তারা শুরুতে এইসব ঝামেলা পোহাইছে বইলা এখন তারা নিজেরাই নিজেদের প্রোডাকশন হাউজগুলোর অধীনে কাজ করে। তারা আর কেবলমাত্র নির্মাতা থাকে না। তাই এক প্রকার প্রযোজক হওয়ার চিন্তা নিয়াই পরিচালনার কথা চিন্তা করতে হয় সিনেমার স্বপ্ন দেখা তরুণের। আর যদি কোনও ভাবে একজন প্রযোজক যোগার হয়েই যায়, তবে কি? কাজ শেষ? মোটেও না। এইখানে আছে অনেক কিন্তু। প্রযোজক তো বাণিজ্য করার জন্য টাকা দিচ্ছে। এখন একজন তরুণ নির্মাতার প্রোডাকশনে যখন একজন প্রযোজক টাকা লগ্নি করেন, তখন তার ব্যবসা ছাড়াও একাধিক দিকে সুবিধা আদায় করার চিন্তা থাকে। তার অন্যতম কারণ তার লগ্নিকৃত টাকা কবে ফেরৎ আসবে তার অনিশ্চয়তা। কারণ একটা নাটক যখন নির্মাণ হয় প্রযোজকের পকেট থেকে টাকাটা ব্যায় হয়ে যায় তখনই। বিপরীত দিকে এই টাকা ফেরৎ আনার প্রসেসটা কেবল দীর্ঘই নয়, অনেক ক্ষেত্রে তা অনির্দিষ্টকালের হয়ে যায়। যেমন, একটা নাটক যদি টিভি চ্যানেলের এ্যাসাইন করা না থাকে (তরুণ নির্মাতাদের নাটক কখনোই এ্যাসাইন করা থাকে না) তাহলে এই নাটক বিক্রির জন্য কম পক্ষে ১০টা টিভি চ্যানেলে প্রিভিউ এর জন্য জমা দিতে হয়। তাদের অনেকে নতুন পরিচালকের নাটক দেখেই না। অনেক চ্যানেলের তো প্রিভিউ কমিটিই নাই। কোনওটার থাকলেও তা কাজ করে না। এইসব উজিয়ে নাটকটা লাভ আর লস যাই হোক কোনও একটা জায়গায় গিয়ে যখন বিক্রি হয়, তার কিছুদিনের মাঝে তা প্রচারও হয়ে যায়। আর প্রচারের সময় দেখা যায় প্রতি বিরতিতে বিজ্ঞাপনের অভাব নেই। এত এত বিজ্ঞাপন নিয়ে নাটক প্রচার করলেও এই নাটকের মূল্য কিন্তু পরিশোধ কবে করবে তার নিশ্চয়তা নেই। হাতে গোনা দুই একটা টিভি চ্যানেল এই জায়গায় ব্যতিক্রম। তাই নাটকের পেছনে লগ্নিকারী প্রযোজক নাট্য নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায়ের চিন্তা প্রায়ই করে থাকে।  তার জন্য এক দিক দিয়ে অবশ্য দায়ি আমাদের টিভি স্ট্যাশনগুলো। টিভি স্ট্যাশনগুলো একটা নাটক প্রচারের পর আর কোনও কিছুর চিন্তা করতে চায় না। দেশের টিভি স্টেশনগুলো যদি ন্যুনতম প্রফেশনাল চরিত্রটা ধরে রাখতো, তাহলে তরুণ নির্মাতাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাটা এই তুমুল চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। অথচ দেড়-দুই লাখ টাকা দিয়ে যখন একটা নাটক টিভি চ্যানেল কিনে, তার মাঝে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন তারা চালায় তার শতকরা ১০% ভাগও যদি প্রডাকশন কোম্পানী পায় তাহলে প্রযোজনা ব্যবসাটাই একটা বিশাল শিল্পে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারতো। টিভি স্টেশনগুলো বুঝতেই চায়না একটা তরুণ নির্মাতা কতটা কষ্ট কইরা এই দেড়-দুই লাখ টাকায় একটা নাটক দাঁড় করায়। কারণ সিনিয়ার নির্মাতারা যেখানে প্রতি নাটকে চার থেকে-আট লাখ টাকা পায়, সেখানে তার একটা নাটকের দেড় লাখ টাকা বাজেটে তার নিজের জন্য কিছুই থাকে না। অথচ তরুণদের প্রতিটা প্রডাকশনের প্রতিটা ভাজে লুকানো থাকে তার শ্রম। কারণ সে ভাল লেখকের চিত্রনাট্য কিনতে পারে না টাকার অভাবে। নিজেরই গল্প, চিত্রনাট্য লিখতে হয়। ভালো এসিস্ট্যান্ট নিতে গেলেও যে টাকা দেয়া লাগে তাও দেয়ার ক্ষমতা থাকে না। ভালো সিনেমাটোগ্রাফারের তো আর বড় বাজেট থাকে। আর তরুণদের জন্য ভালো অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে শিডিউল নিতে নিতে যে ফোন বিল হয় সেইটাই তো বিশাল অংকে রূপ নেয়। আর তাদের আচরণ তো কারো অজানা না। এই হবে না, এই করবো না, এই করি না। কত যে বাহানা! এইসব বাহানার মাঝ দিয়েও তার উপর চাপ থাকে প্রডিউসারের, তিনদিনের শিডিউল দুই দিনে শেষ করেন। নইলে টাকায় কুলাইতে পারবো না। এই ভাবনা নিয়া তারা কাজ করে। আর বিক্রির পর এই টাকা চ্যানেল থেকে তুলতে গেলে স্যান্ডেল ক্ষয় হয় কয়েক জোড়া। এইসব প্রতিবন্ধকতার কারণে টিভি স্টেশন থেকে তরুণরা মুখ ফিরায়ে নিতেছে। ভিড়তেছে এনজিও বা বিজ্ঞাপনের দিকে। কিন্তু এনজিও বা বিজ্ঞাপন তো সবার কাছে ধরা দেয় না। তাই বলে কি সিনেমার স্বপ্ন তারা বাস্তবায়ন করার চেষ্ট করবে না? তারা সেই সংগ্রামটা করতেছে সমাজ ব্যবস্থা আর নিজেদের সাথেই। অথচ টিভি স্টেশনগুলো একটু দায়িত্ব নিলেই আগামী ৫ বছরেই আমুল বদলে যেতে পারতো বাংলাদেশের সিনেমার চেহারা। যেহেতু এত সহজে হচ্ছে না, তারপরও তো হচ্ছে। ধীরে ধীরে, সেই ধীরে ধীরে হওয়ার চিন্তাই করি। কি আর করা!

কোন পথে সিনেমার স্বপ্ন?

at সোমবার, মে ২০, ২০১৩  |  No comments



 ০১.

গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ একটা গল্প ভাবছিলাম। গল্প লিখবো বলে না, একটা ছোট সিনেমা বানাবো বলে। কিন্তু সেই গল্পটা আমার লেখা হয়ে উঠতেছে না। আমার বন্ধ্যাকাল চলতেছে কিনা জানিনা। আমি কিছুই লিখতে পারতেছিনা। আর এই না পারার দরুন সেই গল্পটাও একটা সম্ভাবনা হয়ে আমার দরজার কাছ  দিয়ে কেবল ঘুরঘুর করতেছে। তবে গল্পটা আমি লিখবোই এই বিষয়ে নিশ্চিত হই নিজের কাছে। তার আগে ভাবি, এই গল্পের চিত্রনাট্য লেখার আগে এর ভিজ্যুয়ালের মতো কিছু পাই কিনা। হ্যা, এই রকম খুঁজতে গিয়াই হঠাৎ ‘ট্রাইজ’ ছবিটা পাইয়া গেলাম। ছবিটা আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কোনও প্রশংসিত ছবি না। আমি যুদ্ধ নিয়া কি কি ছবি আছে এমন ছবির রেফারেন্স ঘাটতে গিয়া এই ছবির খোঁজ পাই। এই ছবি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। এইখানে অন্য কথা বলার ইচ্ছা আমার।

ছোট ছবি মানে শর্ট ফিল্মের কথা বলতেছিলাম। দীর্ঘদিন আমি ভিজ্যুয়ালে কোনও কাজ করতেছিও না, কোনও কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্তও না। আর এই কাজ না করার ফলে আমি নিজেরে বহু দূরের মনে করতেছি। মনে হইতেছে, আমার ভেতরকার আমিটা কই জানি হারায়া গেছে। এই হারায়া যাওয়া আমিকেই খুঁজতে এই ছোট সিনেমার চিন্তা। কারণ ছোট সিনেমাই বানাইতে হইবো এইটা এখন নিশ্চিত। যেহেতু বড় মানে ফুল লেংথের সিনেমাবা বানারো সক্ষমতা ও সুযোগ কোনওটাই আমার এখনো আসে নাই। তাই ছোট সিনেমাই বানাইতে হইবো। তবে ছোট সিনেমার যেহেতু কোনও বাজার নাই, তাই ছোট সিনেমার জন্য প্রযোজকও নাই। আর তাই নো-বাজেটে কিভাবে ছোট সিনেমা বানানো যায়, তার চিন্তা করা দরকার। বলতে পারেন, ছোট সিনেমা না বানাইয়া আপনি নাটক বানান না কেন? নাটক বানাইলে তো অন্তত ভিজ্যুয়াল প্র্যাক্টিসটা হৈতো। আপনারে বলি, ভাই কেন যে নাটক বানাইনা এই কথাই কইতে আইছি। একটু সবুর করেন।

 ০২.

একদিন ছবির হাটে বইসা ছিলাম। মহিম জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ভাই এই সময়টাতে তো ছবি বানানোর হিড়িক পড়ছে। আপনি তো হিড়িকে গা ভাসানোর মানুষ না। আপনি কেন ছবি বানাবেন বইলা সিদ্ধান্ত নিছেন? আমি তারে নানান্ কথা বুঝাইলাম। কিন্তু সে বুঝবার চায় না। বলে, এইটা না আপনার আরো কোনও কথা আছে সেইটা বলেন। তখন আমি বলছিলাম, হিড়িকে গা ভাসানোর জন্য তো না’ই। বরং আমার মনে হয় সিনেমাটা আমার বানানো উচিত। অন্তত দেশের সিনেমার জার্নি আর বড় হওয়ার পর বিদেশী সিনেমা দেইখ্যা যেইভাবে বড় হইতেছি, তাতে মনে হইছিলো সিনেমারে আমার কিছুটা অন্তত দেয়ার আছে। সে আর কথা না বাড়াইয়া বলছিলো, এইবার মনে হয় আপনে ভেতরকার কথাটা কইছেন। হ্যা, এই সময়ে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে এই সিনেমা বানানোর প্রবণতাটা প্রচুর বাড়ছে। কেবল বাড়ছে বললে ভুল হবে, বলতে হবে এইটা একটা ক্রেজি রূপ নিছে। গত দশকে মানে শূন্য দশকে তেমনই কবিতা লেখার অবস্থা ছিলো। এই শূন্য দশকে কবিতর সংখ্যা ছিলো শত শত। এই এত এত কবির মধ্য থেইক্যা এখন গুনতে গেলে দশজন উল্লেখযোগ্য কবিকে খুইজ্যা বের করা মুশকিল হইয়া যায়। তার পরিবর্তে শাহবাগ, ছবির হাট, টিএসসিতে বসলেই এখন ডিরেক্টর। আর শুধু ডিরেক্টরই না। ঐখানে তিনটা ঢিল মারলেও আড়াইটাই মনে হয় কোনও না কোনও ডিরেক্টরের গায়ে গিয়া পরবো এমন অবস্থা। সবাই সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখে বা কেউ কেউ বানায়। তো এই অবস্থায় সিনেমার একটা সম্ভাবনা চোখে পড়ে না? শূন্য দশকে তেমন কবিতারও সম্ভাবনা ছিলো। এই সম্ভাবনায় যারা সাতরাইতে সাতরাইতে কুলের দিকে আসতেছেন তারা হয়ত পাড় দেখতে পারতেছেন। এর চেয়ে ভালো কথা, পরবর্তী দশকে এর দারুণ প্রভাবে কবিতা লেখকের সংখ্যা কইম্যা গেছে। আর এর ফলে যারা লিখতেছে অধিকাংশই যথেষ্ট সম্ভাবনাময় লেখাই লিখতেছে। এইটাও বিগত দশকের একটা ফল হিসাবে ধরলে ভবিষ্যতে সিনেমার এই সময়টা সত্যিই সম্ভাবনায়। তবে এত বিপুল নির্মাতা শ্রেণী কি আসলে তৈরি হৈতেছে? এইটা একটা প্রশ্ন বটে। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আশপাশে তাকালে দেখি, তেমন একটা তৈরি হইতেছে না। কেমনে হবে? সেই সুযোগই তো তারা পাইতেছে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই সুযোগটা আসলে কি? সুযোগটা নানান্ ভাবেই হইতে পারে। প্রথমত, ছোট ছোট সিনেমা বানাইয়া তারা প্রস্তুতিটা নিতে পারে বড় সিনেমার জন্য। এই ছোট সিনেমাই সবচে ভালো প্রস্তুতির ব্যবস্থা হৈতে পারতো। কিন্তু বাংলাদেশে ছোট সিনেমার কোনও ভাবেই কোনও বেইল করা করা গেলো না। আমাদের পূর্ব পুরুষ চলচ্চিত্র নির্মাতারাও তেমন একটা পারলেন না, আমারাও পারতেছিনা। অবশ্য সারা পৃথিবীতেই এইটা মানে এই ছোট সিনেমার বাজার তৈরি করাটা একটা মহা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে জিততে পারলে পৃথিবীর সিনেমা আরও বহু আগেই যে বদলাইয়া যাইতো তা আর বলতে হয় না। তো এই ছোট সিনেমার বাজার যেহেতু নাই, সেহেতু আর যেই বিকল্প মাধ্যমটা আমাদের হাতে আছে, সেইটাতেই চিন্তা করতেছিলো এই তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় নির্মাতারা। অন্তত গল্প বলার প্র্যাক্টিসটা এইখানে করতে পারে। কিন্তু এই জায়গাটাও আর সেই আগের মতো নাই। সেই জায়গাটা কি? সেই জায়গাটা টিভির এক খন্ডের নাটক। এইখানে একজন স্বপ্নবাজ তরুণ নির্মাতা তার পূর্ণাঙ্গ স্বপ্নের রূপায়্নের আগে, নানা ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারতো। আমাদের টেলিভিশন মিডিয়ার এক জাদুকর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছিলো, পৃথিবীর অন্য সব দেশের টেলিভিশন সিনেমার ধ্বংস করে, আর আমাদের দেশের টেলিভিশন সিনেমা নির্মাতা বানায়।  এই কথা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে বেশ কিছুটা সত্য। তিনি যখন এই কথা বলছিলেন, তখন ফারুকীর মতো আরো অনেক তরুণ নির্মাতা টিভিতে এই খন্ড নাটক বানাইয়া নিজেদের ডিরেক্টর হিসেবে এস্টাব্লিশমেন্ট করে ফেলছে। আর তাই টিভিতে এমন সব কাজও হৈছে, যেগুলো নিয়া আমরা আক্ষেপও করতে পারি এই কারণে যে, এইসব প্রডাকশন টিভিতে না হইলে থার্টি ফাইভে হইলে বা টিভিতে না দেখাইয়া যদি আন্তর্জাতিক ফ্যাস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হইয়া যাইতো, তাইলে তা নতুন সিনামায় রূপ পাইতো। কিন্তু সরয়ার ভাইয়ের এই কথা এখন তাই পুরোপুরি সত্য নয়। তার কারণে এই দেশে যেসব তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা টিভিতে নাটক বানিয়ে সিনেমার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর তাদের মতো সেই ক্ষেত্রটা পাচ্ছে না বলে। তাদের মতো তো দূরের কথা কোনও ক্ষেত্রই পাচ্ছে না বলা যায়। কারণ, একটা সময় টিভি স্টেশন মানেই নতুন নতুন আইডিয়া আর নতুন নতুন প্রোগ্রাম পাওয়া যাইতো। নতুন নতুন গল্প বলার চেষ্টা থাকতো। নতুন নতুন টিভিগুলো সেইসব নতুন গল্পের পেছনে ছুটতোও। কিন্তু একটা টিভি স্টেশন হওয়ার আগে চিন্তা করে ঐ চ্যানেলের এই অনুষ্ঠানটা জনপ্রিয়। সুতরাং আমারো এমন একটা বানাইতে হইবো। আর এমন করতে গিয়া তার অনুষ্ঠানে নতুনত্ব থাকে না। আর ঐ এক পর্বের খন্ড নাটক, যা পৃথিবীর বিরলতম একটা টিভি অনুষ্ঠান। এই নাটকে সবচে তীব্র ভাবে ঢুকে গেছে স্থুলতা। আর তাই এই স্থুল নাটকগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আমাদের টিভি স্ট্যাশনগুলো। কারণ, ঐটাতে তার ব্যবসা হয় বিশেষ। এই স্থুল অনুষ্ঠান নির্মাণ আর স্থুল গল্পের নাটক নির্মাণের কারণে তার টিভির দর্শক যে হারিয়ে যাচ্ছে, সেই দিকে তার কোনও ভ্রুক্ষেপ নাই। তার কেবল দরকার ব্যবসা। আরে ভাই তোমার ব্যবসা টিকাইয়া রাখার জন্যও তো তোমার ভালো কিছু করতে হইবো, নাকি? আর টিভি স্ট্যাশনগুলোর এই ব্যবসার জন্যই তরুণ প্রজন্মের সিনেমার স্বপ্নটা ধূসর হয়ে যাচ্ছে।

 ০৩.

টিভিতে নাটক বানানোর মাধ্যমে সিনেমার প্রস্তুতি নেয়া যায় কারণ, টিভিতে নাটক বানানোর যে পদ্ধতিটা, এই পদ্ধতিটা সিনেমা বানানোর পদ্ধতিরই একটা প্রাথমিক সংস্করণ। আর এই মাধ্যমটাতে কাজ করে তাই আমাদের প্রজন্মের তরুণরা সিনেমার কথা ভাবতেছিলো। এখন এই নাটকের সাথে সিনেমার সম্পর্কটা কোন জায়গায় আর পার্থক্যটা কোন জায়গায় এইটাতে চোখ বুলাইলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথমত সিনেমা বড় ক্যানভাসের একটা শিল্প। আর এই শিল্পটাকে পূর্ণাঙ্গ শিল্প বলা হয়। এই প্রসঙ্গে শুরুতে যে ‘ট্রাইজ’ ছবির কথা বললাম তার পরিচালকের একটু কথা উদ্ধৃতি করি। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ‘আমি মনে করি সিনেমা বানানো পৃথিবীর সবচে পূর্ণাঙ্গ কাজের একটা। এইখানে তোমাকে লেখক হইতে হইবো, রাজনীতিবিদ হইতে হইবো, ব্যবসায়ী হইতে হইবো, জীবনের রং দেখার ক্ষমতা থাকতে হইবো, তোমার জানতে হইবো কেমনে সিনামা হয়, কিভাবে কাটতে হয় তা জানতে হইবো, অভিনয়টা কি তাও জানতে হৈবো, মিউজিক তো বটেই। তারপরে না তুমি সিনেমা বানাইবা।’ এখন সিনেমার এইসব বিষয়ের অধিকাংশ বিষয়ই নাটকের সাথে জড়িত। সেই হিসেবে টিভি নাটক বলতে গেলে সিনেমার ড্রেস রিহার্সাল। কিন্তু সিনেমার পর্দা, দর্শক থেকে শুরু করে বিস্তৃতির জায়গা পর্যন্ত বিশাল হওয়ায় এর বাজেটটা ও আয়োজনেও বিশালত্ত্বটা থাকে। কিন্তু নাটকটা ড্রয়িং রুম মাধ্যম বলে তার সেই অনুপাতিক বাজেট থাকে না। কিন্তু তারপরও তুলনামূলক কম বাজেটে সেই প্রস্তুতিটা নেওয়ার চিন্তা কিন্তু করাই যায়। কিন্তু তার বিপরীতে কি হয়? একটু বাস্তব চিত্রটা দেখি।

 ০৪.

আমাদের দেশে অনুষ্ঠান প্রচার হয় এমন চ্যানেল আছে প্রায় এক ডজনেরো বেশী। প্রত্যেকটা চ্যানেলে যদি সপ্তাহে দুইটা করেও নতুন একটা করে খন্ড নাটক চালায় তাহলে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০টা নতুন নাটক নির্মাণ করতে হয়।  এখন এই নাটকের অধিকাংশই যদি প্রতিষ্ঠিত নাট্য নির্মাতারা নির্মাণ করতো, তাহলেও মাসে কমপক্ষে ১০টা নতুন নাটক নির্মাণের সুযোগ পাইতো একজন তরুণ নাট্য নির্মাতা। এই সুযোগটা তারা পায় না। আর এর বাইরে তার একটা নাটক নির্মাণ করতে গেলে যে ধকলটা পোহাইতে হয়, তাও রীতিমত কম না। সবচে বড় যে বিষয়টা তার প্রথমেই ফেইস করতে হয় তা হৈলো টাকা বা প্রডিউসার যোগার করা। বাংলাদেশে ট্রাডিশনাল ওয়েতে টিভি নাটকের প্রডিউসার যোগার করা রীতিমত এলাহি কাণ্ড। পুরনো যারা প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা, তারা শুরুতে এইসব ঝামেলা পোহাইছে বইলা এখন তারা নিজেরাই নিজেদের প্রোডাকশন হাউজগুলোর অধীনে কাজ করে। তারা আর কেবলমাত্র নির্মাতা থাকে না। তাই এক প্রকার প্রযোজক হওয়ার চিন্তা নিয়াই পরিচালনার কথা চিন্তা করতে হয় সিনেমার স্বপ্ন দেখা তরুণের। আর যদি কোনও ভাবে একজন প্রযোজক যোগার হয়েই যায়, তবে কি? কাজ শেষ? মোটেও না। এইখানে আছে অনেক কিন্তু। প্রযোজক তো বাণিজ্য করার জন্য টাকা দিচ্ছে। এখন একজন তরুণ নির্মাতার প্রোডাকশনে যখন একজন প্রযোজক টাকা লগ্নি করেন, তখন তার ব্যবসা ছাড়াও একাধিক দিকে সুবিধা আদায় করার চিন্তা থাকে। তার অন্যতম কারণ তার লগ্নিকৃত টাকা কবে ফেরৎ আসবে তার অনিশ্চয়তা। কারণ একটা নাটক যখন নির্মাণ হয় প্রযোজকের পকেট থেকে টাকাটা ব্যায় হয়ে যায় তখনই। বিপরীত দিকে এই টাকা ফেরৎ আনার প্রসেসটা কেবল দীর্ঘই নয়, অনেক ক্ষেত্রে তা অনির্দিষ্টকালের হয়ে যায়। যেমন, একটা নাটক যদি টিভি চ্যানেলের এ্যাসাইন করা না থাকে (তরুণ নির্মাতাদের নাটক কখনোই এ্যাসাইন করা থাকে না) তাহলে এই নাটক বিক্রির জন্য কম পক্ষে ১০টা টিভি চ্যানেলে প্রিভিউ এর জন্য জমা দিতে হয়। তাদের অনেকে নতুন পরিচালকের নাটক দেখেই না। অনেক চ্যানেলের তো প্রিভিউ কমিটিই নাই। কোনওটার থাকলেও তা কাজ করে না। এইসব উজিয়ে নাটকটা লাভ আর লস যাই হোক কোনও একটা জায়গায় গিয়ে যখন বিক্রি হয়, তার কিছুদিনের মাঝে তা প্রচারও হয়ে যায়। আর প্রচারের সময় দেখা যায় প্রতি বিরতিতে বিজ্ঞাপনের অভাব নেই। এত এত বিজ্ঞাপন নিয়ে নাটক প্রচার করলেও এই নাটকের মূল্য কিন্তু পরিশোধ কবে করবে তার নিশ্চয়তা নেই। হাতে গোনা দুই একটা টিভি চ্যানেল এই জায়গায় ব্যতিক্রম। তাই নাটকের পেছনে লগ্নিকারী প্রযোজক নাট্য নির্মাতা, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায়ের চিন্তা প্রায়ই করে থাকে।  তার জন্য এক দিক দিয়ে অবশ্য দায়ি আমাদের টিভি স্ট্যাশনগুলো। টিভি স্ট্যাশনগুলো একটা নাটক প্রচারের পর আর কোনও কিছুর চিন্তা করতে চায় না। দেশের টিভি স্টেশনগুলো যদি ন্যুনতম প্রফেশনাল চরিত্রটা ধরে রাখতো, তাহলে তরুণ নির্মাতাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাটা এই তুমুল চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। অথচ দেড়-দুই লাখ টাকা দিয়ে যখন একটা নাটক টিভি চ্যানেল কিনে, তার মাঝে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন তারা চালায় তার শতকরা ১০% ভাগও যদি প্রডাকশন কোম্পানী পায় তাহলে প্রযোজনা ব্যবসাটাই একটা বিশাল শিল্পে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারতো। টিভি স্টেশনগুলো বুঝতেই চায়না একটা তরুণ নির্মাতা কতটা কষ্ট কইরা এই দেড়-দুই লাখ টাকায় একটা নাটক দাঁড় করায়। কারণ সিনিয়ার নির্মাতারা যেখানে প্রতি নাটকে চার থেকে-আট লাখ টাকা পায়, সেখানে তার একটা নাটকের দেড় লাখ টাকা বাজেটে তার নিজের জন্য কিছুই থাকে না। অথচ তরুণদের প্রতিটা প্রডাকশনের প্রতিটা ভাজে লুকানো থাকে তার শ্রম। কারণ সে ভাল লেখকের চিত্রনাট্য কিনতে পারে না টাকার অভাবে। নিজেরই গল্প, চিত্রনাট্য লিখতে হয়। ভালো এসিস্ট্যান্ট নিতে গেলেও যে টাকা দেয়া লাগে তাও দেয়ার ক্ষমতা থাকে না। ভালো সিনেমাটোগ্রাফারের তো আর বড় বাজেট থাকে। আর তরুণদের জন্য ভালো অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে শিডিউল নিতে নিতে যে ফোন বিল হয় সেইটাই তো বিশাল অংকে রূপ নেয়। আর তাদের আচরণ তো কারো অজানা না। এই হবে না, এই করবো না, এই করি না। কত যে বাহানা! এইসব বাহানার মাঝ দিয়েও তার উপর চাপ থাকে প্রডিউসারের, তিনদিনের শিডিউল দুই দিনে শেষ করেন। নইলে টাকায় কুলাইতে পারবো না। এই ভাবনা নিয়া তারা কাজ করে। আর বিক্রির পর এই টাকা চ্যানেল থেকে তুলতে গেলে স্যান্ডেল ক্ষয় হয় কয়েক জোড়া। এইসব প্রতিবন্ধকতার কারণে টিভি স্টেশন থেকে তরুণরা মুখ ফিরায়ে নিতেছে। ভিড়তেছে এনজিও বা বিজ্ঞাপনের দিকে। কিন্তু এনজিও বা বিজ্ঞাপন তো সবার কাছে ধরা দেয় না। তাই বলে কি সিনেমার স্বপ্ন তারা বাস্তবায়ন করার চেষ্ট করবে না? তারা সেই সংগ্রামটা করতেছে সমাজ ব্যবস্থা আর নিজেদের সাথেই। অথচ টিভি স্টেশনগুলো একটু দায়িত্ব নিলেই আগামী ৫ বছরেই আমুল বদলে যেতে পারতো বাংলাদেশের সিনেমার চেহারা। যেহেতু এত সহজে হচ্ছে না, তারপরও তো হচ্ছে। ধীরে ধীরে, সেই ধীরে ধীরে হওয়ার চিন্তাই করি। কি আর করা!

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ১৫ মে, ২০১৩



১৯৬৯ সালে জন্ম নেয়া ডেনিস টানোভিচ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একই সাথে সে পড়াশোনা করছে মিউজিক স্কুলেও। এর আগেও সে তোমার প্রেমিকা তোমারে ডাকে নামে ছোট সিনামা বানাইছে। জীবন কাটায় পুরাই ডকুমেন্টারি সিনামার পরিচালক হিসেবে। গেল বছর (২০০১) সে এই ছবি বানানোর পর কানে গোল্ডেন পাম, গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ডও সে পাইছে। ব্যক্তিজীবনে কিছুটা রগচটে হলেও বসনিয়ান চলচ্চিত্রকার ডেনিস টানোভিচ যুদ্ধ নিয়াও মজা করতে ভালোবাসে। সিনামারে সে টাকা কামানোর মেশিন মনে করে না। তার প্রথম ফিচার ফিল্ম নো ম্যানস ল্যান্ড কেবল অস্কারই জিতছে না বিশ্বজুড়েই পাইছে তুমুল প্রশংসা। অস্কার নমিনেশন পাওয়ার পর পল ফিশ্চার তার লগে এইসব কথাবার্তা কইছে। 

প্রশ্ন : তোমার ছবি খুবই মজার, এত কঠিন ও অপ্রত্যাশিত বিষয় তুমি কইত্থে পাও?
উত্তর : আমরা বসনিয়ানরা হইতাছি অরিজিনাল মজা করার মানুস। আমগো জন্মই মজা করার জায়গায়। আমার মনে হয় আমি এইটা দিয়াই কিছু করবার পারমু। কিন্তু হিউমার কিন্তু তোমারে অনেক দূর থেকে বিষয়টা বইলা দেয়। আর তাই এইসব যুদ্ধের সিনেমার মধ্যেও তুমি কিছু হাসতে পারতেছো। এইটারে আমগো গোপন অস্ত্র কইতে পারো। তাই আমি মনে করি কেন আমি সিরিয়াস বিষয় নিয়া একটু মজা করবো না? এই ভাবনাটাই আমারে অনেক কিছু সহজ করে দেয়। আর তুমি যদি যুদ্ধ নিয়া সিনেমা বানাইতে যাও, তাইলে যেহেতু এইটা অনেকে দেখতেই যাইবো না তাইলে এইটাই কি ভালো না?
প্রশ্ন :আচ্ছা, এইডা বানাইতে কি তোমার খুব পরিশ্রম হইছিলো?
উত্তর : না। এইটা খুব আন্তরিক জায়গা থেইক্যা আমরা বানাইছিলাম। শুটিং এর ৩৬ দিনের মধ্যে দশ দিনই প্রচুর বৃষ্টি ছিলো। কোনও কোনও দিন আমরা স্যুটিংই করতে পারিনাই।
প্রশ্ন : আমরা দেখলাম যে এই ছবিতে প্রচুর প্রোডাকশন হাউজ আছে। যারা সবতে মিইল্যা এই সিনামা বানাইছে।
উত্তর : তারা প্রত্যেকেই সিনামাটা পছন্দ করছে। মজার বিষয় এইটা কিন্তু খুব দীর্ঘ কোনও প্রসেস ছিলো না। ছয় মাসের মধ্যে সব কিছু হইয়া গেছে। এইটা অকল্পনীয়। আমি স্ক্রিপ্ট লেইখ্যা, প্রডাকশন হাউজরে কইলাম এইটা একটা ভালো স্ক্রিপ্ট, তোমরা দেখতে পারো। তিনদিন পরে তারা আমারে ডাকলো, আর কইলো তাগো এই স্ক্রিপ্ট পছন্দ হইছে। তারা এইটা নিয়া একটা চুক্তিও করতে চাইলো। সবাই একই প্রসেসের মধ্যে দিয় গেলো। দেখলাম সবাই স্ক্রিপ্টটা পছন্দ করতেছে। (স্ক্রিপ্ট যখন লেখা হয় তখন তানোভিচ প্যারিসে থাকে। সে তখন মূল বিষয় থেইক্যা বহু দূরে। তার তো জন্ম আগের যোগোস্লাভিয়ায়। কিন্তু সারাজেভো থেইক্যা সে যখন ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামে সিনামা নিয়া পড়তে যায়, তখন তার বয়স ২৪
প্রশ্ন : তুমি যখন শুরু করছিলা, তখন তুমি ডকুমেন্টারির মতো কইরা শুরু করছিলা। কি মনে কইরা তুমি এইটা করছিলা? তোমার কখন মনে হইলো যে, যুদ্ধের বিষয় তোমার ফিচার ফিল্মের জন্য একটা ভালো সাবজেক্ট?
উত্তর : যুদ্ধ আসলে কখনোই ফিচার ফিল্মের জন্য ভালো বিষয় না। আমি পরিস্কার কইরা কইতেছি, আমার কখনোই মনে হইতো না বিষয় একটা বড় কথা, আমার মনে হইতো তুমি সাবজেক্টটারে কেমনে ট্রিট করতেছো তাই বড়। আমি এইখানে গতকালই এক সাংবাদিকের লগে কথা কইতেছিলাম। তারে কইলাম, এই সুইমিং পুলটারে দেখো। একজন ভালো সিনামাওয়ালা এই সুইমিং পুল লইয়াও এক থেকে দেড় ঘন্টার একটা সিনামা বানাইয়া ফেলতে পারে। যদি সে জানে যে, কেমনে কি করতে হইবো। আমি আবারো কইতেছি, এইটা কোনও বিষয়ই ছিলো না। শত শত ছবি যুদ্ধ আর প্রেম লইয়া, কিন্তু আমরা কয়টারে মনে রাখি? আমরা মনে রাখি অল্প কায়টারেই।  তাই কই, যু্দ্ধও ভালো বিষয় হইতে পারে যদি তুমি এইটারে ঠিকমতো দেখাইতে পারো আর তোমার নতুন কিছু কওয়ার থাকে। আমি আর এমন কোনো সিনামা বানামুনা, যেইখানে প্রথম বিশ মিনিটের মধ্যে ২০০ তরুণ সৈন্য মইরা যায়।

“সাংবাদিকতা, একটা ব্যবসার জায়গা হৈলেও এইটা আদতে কোনও ব্যবসা না।”

at বুধবার, মে ১৫, ২০১৩  |  No comments



১৯৬৯ সালে জন্ম নেয়া ডেনিস টানোভিচ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একই সাথে সে পড়াশোনা করছে মিউজিক স্কুলেও। এর আগেও সে তোমার প্রেমিকা তোমারে ডাকে নামে ছোট সিনামা বানাইছে। জীবন কাটায় পুরাই ডকুমেন্টারি সিনামার পরিচালক হিসেবে। গেল বছর (২০০১) সে এই ছবি বানানোর পর কানে গোল্ডেন পাম, গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ডও সে পাইছে। ব্যক্তিজীবনে কিছুটা রগচটে হলেও বসনিয়ান চলচ্চিত্রকার ডেনিস টানোভিচ যুদ্ধ নিয়াও মজা করতে ভালোবাসে। সিনামারে সে টাকা কামানোর মেশিন মনে করে না। তার প্রথম ফিচার ফিল্ম নো ম্যানস ল্যান্ড কেবল অস্কারই জিতছে না বিশ্বজুড়েই পাইছে তুমুল প্রশংসা। অস্কার নমিনেশন পাওয়ার পর পল ফিশ্চার তার লগে এইসব কথাবার্তা কইছে। 

প্রশ্ন : তোমার ছবি খুবই মজার, এত কঠিন ও অপ্রত্যাশিত বিষয় তুমি কইত্থে পাও?
উত্তর : আমরা বসনিয়ানরা হইতাছি অরিজিনাল মজা করার মানুস। আমগো জন্মই মজা করার জায়গায়। আমার মনে হয় আমি এইটা দিয়াই কিছু করবার পারমু। কিন্তু হিউমার কিন্তু তোমারে অনেক দূর থেকে বিষয়টা বইলা দেয়। আর তাই এইসব যুদ্ধের সিনেমার মধ্যেও তুমি কিছু হাসতে পারতেছো। এইটারে আমগো গোপন অস্ত্র কইতে পারো। তাই আমি মনে করি কেন আমি সিরিয়াস বিষয় নিয়া একটু মজা করবো না? এই ভাবনাটাই আমারে অনেক কিছু সহজ করে দেয়। আর তুমি যদি যুদ্ধ নিয়া সিনেমা বানাইতে যাও, তাইলে যেহেতু এইটা অনেকে দেখতেই যাইবো না তাইলে এইটাই কি ভালো না?
প্রশ্ন :আচ্ছা, এইডা বানাইতে কি তোমার খুব পরিশ্রম হইছিলো?
উত্তর : না। এইটা খুব আন্তরিক জায়গা থেইক্যা আমরা বানাইছিলাম। শুটিং এর ৩৬ দিনের মধ্যে দশ দিনই প্রচুর বৃষ্টি ছিলো। কোনও কোনও দিন আমরা স্যুটিংই করতে পারিনাই।
প্রশ্ন : আমরা দেখলাম যে এই ছবিতে প্রচুর প্রোডাকশন হাউজ আছে। যারা সবতে মিইল্যা এই সিনামা বানাইছে।
উত্তর : তারা প্রত্যেকেই সিনামাটা পছন্দ করছে। মজার বিষয় এইটা কিন্তু খুব দীর্ঘ কোনও প্রসেস ছিলো না। ছয় মাসের মধ্যে সব কিছু হইয়া গেছে। এইটা অকল্পনীয়। আমি স্ক্রিপ্ট লেইখ্যা, প্রডাকশন হাউজরে কইলাম এইটা একটা ভালো স্ক্রিপ্ট, তোমরা দেখতে পারো। তিনদিন পরে তারা আমারে ডাকলো, আর কইলো তাগো এই স্ক্রিপ্ট পছন্দ হইছে। তারা এইটা নিয়া একটা চুক্তিও করতে চাইলো। সবাই একই প্রসেসের মধ্যে দিয় গেলো। দেখলাম সবাই স্ক্রিপ্টটা পছন্দ করতেছে। (স্ক্রিপ্ট যখন লেখা হয় তখন তানোভিচ প্যারিসে থাকে। সে তখন মূল বিষয় থেইক্যা বহু দূরে। তার তো জন্ম আগের যোগোস্লাভিয়ায়। কিন্তু সারাজেভো থেইক্যা সে যখন ১৯৯৪ সালে বেলজিয়ামে সিনামা নিয়া পড়তে যায়, তখন তার বয়স ২৪
প্রশ্ন : তুমি যখন শুরু করছিলা, তখন তুমি ডকুমেন্টারির মতো কইরা শুরু করছিলা। কি মনে কইরা তুমি এইটা করছিলা? তোমার কখন মনে হইলো যে, যুদ্ধের বিষয় তোমার ফিচার ফিল্মের জন্য একটা ভালো সাবজেক্ট?
উত্তর : যুদ্ধ আসলে কখনোই ফিচার ফিল্মের জন্য ভালো বিষয় না। আমি পরিস্কার কইরা কইতেছি, আমার কখনোই মনে হইতো না বিষয় একটা বড় কথা, আমার মনে হইতো তুমি সাবজেক্টটারে কেমনে ট্রিট করতেছো তাই বড়। আমি এইখানে গতকালই এক সাংবাদিকের লগে কথা কইতেছিলাম। তারে কইলাম, এই সুইমিং পুলটারে দেখো। একজন ভালো সিনামাওয়ালা এই সুইমিং পুল লইয়াও এক থেকে দেড় ঘন্টার একটা সিনামা বানাইয়া ফেলতে পারে। যদি সে জানে যে, কেমনে কি করতে হইবো। আমি আবারো কইতেছি, এইটা কোনও বিষয়ই ছিলো না। শত শত ছবি যুদ্ধ আর প্রেম লইয়া, কিন্তু আমরা কয়টারে মনে রাখি? আমরা মনে রাখি অল্প কায়টারেই।  তাই কই, যু্দ্ধও ভালো বিষয় হইতে পারে যদি তুমি এইটারে ঠিকমতো দেখাইতে পারো আর তোমার নতুন কিছু কওয়ার থাকে। আমি আর এমন কোনো সিনামা বানামুনা, যেইখানে প্রথম বিশ মিনিটের মধ্যে ২০০ তরুণ সৈন্য মইরা যায়।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ১ মে, ২০১৩


০১.
এই যে আমি, কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠিতে এই যুগে এসে জন্মিয়েছি।
হ্যা। অবশেষে এই পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছি যে আমি আসলে আমি নই, পূর্বে জন্মে কালিদাস আমাকে চিঠি হিসেবে পাঠিয়েছিলো। আকশ পথ ভুলে চলে এসেছি এই জমানায়। দেখি জমানার লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আকাশ। আর ভেবে পাই না আমি কে, কি বা আমার পরিচয়। মিথ্যে নয়, আমি কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠি। তোমার পরিচয় বলো।

নবজন্মের কাছাকাছি

at বুধবার, মে ০১, ২০১৩  |  1 comment


০১.
এই যে আমি, কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠিতে এই যুগে এসে জন্মিয়েছি।
হ্যা। অবশেষে এই পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছি যে আমি আসলে আমি নই, পূর্বে জন্মে কালিদাস আমাকে চিঠি হিসেবে পাঠিয়েছিলো। আকশ পথ ভুলে চলে এসেছি এই জমানায়। দেখি জমানার লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আকাশ। আর ভেবে পাই না আমি কে, কি বা আমার পরিচয়। মিথ্যে নয়, আমি কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠি। তোমার পরিচয় বলো।

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম