শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

 

ধরেন মগবাজারের জ্যামে বইসা আছেন। তখন নিজেরে নিশ্চয়ই আপনে গালি দিবেন, তিরস্কার করবেন। বলবেন, ঢাকা শহরের মানুষ না হইলে কত্ত আরাম। মগবাজারের জ্যাম-এ পরতে হয় না। আবার একই রকম মনে হইবো আপ্নের রামপুরা ব্রীজ, মালিবাগ, বনানী সিগনাল, পুরান ঢাকার সর্বত্র। আর রাতের বেলা যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে তখন? উত্তরা থেকে পলাশির মোড় যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। অন্য সময়ে আপনার হয়তো এইটুক রাস্তা যাইতে দুই ঘন্টা বা তার বেশী লাগে। কিন্তু আপনার যেই গতিতে চলার কথা, সেই গতিতে চলতেছেন। রাস্তায়ও কোনও জ্যাম নাই। কিন্তু ত্রিশ মিনিট আগে যেইখানে ছিলেন এখনো সেইখানেই তখন আপনার কেমন লাগবে? আপনার কেমন লাগবে আমি জানি না। তবে আমি এই রকমই বিভ্রান্ত হইছিলাম দুই দিন আগে।

হাওড়ের জীবনটা নদী থেকে দেখার ইচ্ছায়, ট্রলারে করে ফিরতেছি। দূরে একটা গ্রাম দেখাইয়া পাশের মুরুব্বীরে জিগাইলাম, মুরব্বী এইটা কোন গ্রাম? মুরুব্বী জানাইলেন, গ্রামের নাম জগন্নাথপুর। আচ্ছা। আধঘন্টা পর আবারো আরেকটা গ্রাম দেখাইয়া জিগাইলাম। ট্রলারের ছাদের বিকেলের রোদে বসা মুরুব্বী একবার তাকাইলেন গ্রামের দিকে। উত্তর দিলেন, জগন্নাথপুর! মানে? আধাঘন্টা ধইরা কি তবে আগাইতেছি না? আমার প্রশ্নে মুরুব্বী স্মিত হেসে উত্তর দিলেন। নদী পথ তো, এই রকমই। আমরা এতক্ষণ পূবে ছিলাম, এখন উত্তরে। তার মানে নদী যেদিক দিয়া গেছে আমরাও এইদিক দিয়াই যাইতেছি। অ আচ্ছা।

এইটা হৈলো খালিয়াজুড়ি থেকে ট্রলারে করে নাওটানা ফেরার অভিজ্ঞতা। কুয়াশা না থাকলে নাওটানা থেকে ট্রলারের ছাদে উঠলে খালিয়াজুড়ি দেখা যায়। উপজেলা সদরটা এত ছোট যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাইতে পাঁচ-দশ মিনিট হাঁটলেই চলে। শুকনা মৌসুমে তবুও নৌকা ছাড়া যাতায়াত করার উপায় আছে। মানে দুই ধরনের ট্রান্সপোর্ট আছে। এক হইলো ভটভটি, আর এক হইলো ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে? নৌকা ছাড়া কোনও উপায় নাই। চারপাশে তাকালে কেবল মনে হয় ঢেউ ছাড়া সমুদ্র। আর গ্রামগুলো হঠাৎ হঠাৎ একটা দ্বীপের মতোন।

বলা যায় বাংলাদেশের অন্যতম দুর্গম উপজেলাগুলোর একটা হইলো এই খালিয়াজুড়ি। ঢাকা থেকে সবচে সহজ পথেও যাইতে হইলে আপনাকে চারবার ট্রান্সপোর্ট বদল করতে হবে। এর মাঝে স্থলপথ ও নদীপথের একাধিক মাধ্যম আপনাকে গ্রহণ করতে হবেই। এক কথায় খালিয়াজুড়ির এই হৈলো বিশেষত্য। এখানকার মানুষ খুব বেশী কিছু চায় না। তাদের প্রয়োজনীয় যা যা দরকার তারা কেবল তাই চায়। যেমন? তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। যা আছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তবে যেই বিষয়টা এখানকার মানুষদের কথা চিন্তা করলে সবচে বেশী যন্ত্রণা দেয় তা হইলো এখানকার অর্থনৈতিক জীবন কাঠামো খুবই দুর্বল। বছরে ছয় মাস তাদের কোনও রোজগার থাকে না। কেবলমাত্র মাছ ধরা ছাড়া। কেউ কেউ এই সময় অর্থের অভাবে এলাকা ছেড়ে ডাঙ্গায় কাজের উদ্দেশ্যে পারি জমায়। অথচ আপাত দৃষ্টিতে খুব স্বাধারণ একটা জায়গা হইলেও শীতের সকালে এইসব গ্রামগুলো কি যে সুন্দর হয়ে উঠে। আর কি যে অপার্থিব নীরবতা সেইসব গ্রামে। আমার ব্যার্থতা সেই নীরবতাকে আমি ধারণ করতে পারিনি। উল্টো আরো মুখর হয়ে ফিরে এসেছি। আসা যাওয়ার পথে বয়ে বেড়িয়েছি অন্য যাতনা। অথচ যা স্বাভাবিক ছিলো না কিছুতেই।
খালিয়াজুড়ির খুব ধীর গতির। যেহেতু ছোট মফস্বল। তাই সেখানকার অধিকাংশ মানুষের মন ছোট, এমনটা সেইখানে যারা কাজ করতে যায় তারা বলে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখতে পাই।

তবে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হইলেও বাংলাদেশের আদী ও অকৃত্রিম যে রূপ তার অনেকটাই কিন্তু সেই খালিয়াজুড়িতে পাওয়া যায়। শীত মৌসুমে যখন হাওর অঞ্চল শুকনো থাকে তখন সেখানে শীত যাপনের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয়দের অর্থের সংকটটা কমতো। আমার এমনই ভাবনা। তাই শীত থাকতে থাকতে আমি মনে হয় আবারো যাবো খালিয়াজুড়ি।



কীভাবে যেতে পারেন খালিয়াজুড়ি
দুই পথে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। তবে সবচে সহজ ও দ্রুততর পথ হলো মোহনগঞ্জ হয়ে। ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস এ চড়ে সোজা মোহনগঞ্জ। ভাড়া চেয়ার কোচে ২১০ টাকা। শোভন ১৫০। মোহনগঞ্জ স্টেশনের কাছ থেকেই সিএনজি চলে বোয়ালিয়া পর্যন্ত। প্রতিটা সিএনজিতে ৫জন করে তোলে। জন প্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। বোয়ালিয়া গিয়ে একটা নদী পার হইতে হবে। ব্রীজ আছে। এইখান থেকেই মূলত: হাওর অঞ্চল শুরু। বর্ষায় এইখান থেকেই সরাসরি খালিয়াজুড়ি বা হাওরের যে কোনও থানা, গ্রামের ট্রলার যায়। ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেলে করে সরাসরি খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। এতে সময় কম লাগে। আর মূল পাকা রাস্তাটাও চেনা হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকে। তবে খরচ একটু বেশী। দুইজন যাত্রী তোলে। ভাড়া ৩শ টাকা। সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর এখান থেকে মোটরসাইকেলে নাওটানা গিয়ে সেখান থেকে সকাল ৮টার ট্রলারে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। নদীপথে, ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা। তবে নদীপথে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। তারপর নাওটানা পর্যন্ত তো যেতেই মোটরসাইকেলে ১৫ মিনিটের বেশী লাগে না। দুইজনে ভাড়া নেয় ১শ টাকা।

একে তো দুর্গম পথ তারওপর, জনপ্রিয় কোনও ট্যুরিস্ট স্পট না। তবুও আপনার ভালো লাগবে। যদিও মন্দ লাগার মতোও অনেক কিছু আছে সেখানে, আপনি তো আর সেগুলোর জন্য যাচ্ছেন না। 

সবগুলো ছবি তুলেছেন তানভীর আশিক

যেইখানে একই নিয়মে সূর্য উঠে ও ডুবে

at শুক্রবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫  |  No comments

 

ধরেন মগবাজারের জ্যামে বইসা আছেন। তখন নিজেরে নিশ্চয়ই আপনে গালি দিবেন, তিরস্কার করবেন। বলবেন, ঢাকা শহরের মানুষ না হইলে কত্ত আরাম। মগবাজারের জ্যাম-এ পরতে হয় না। আবার একই রকম মনে হইবো আপ্নের রামপুরা ব্রীজ, মালিবাগ, বনানী সিগনাল, পুরান ঢাকার সর্বত্র। আর রাতের বেলা যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে তখন? উত্তরা থেকে পলাশির মোড় যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। অন্য সময়ে আপনার হয়তো এইটুক রাস্তা যাইতে দুই ঘন্টা বা তার বেশী লাগে। কিন্তু আপনার যেই গতিতে চলার কথা, সেই গতিতে চলতেছেন। রাস্তায়ও কোনও জ্যাম নাই। কিন্তু ত্রিশ মিনিট আগে যেইখানে ছিলেন এখনো সেইখানেই তখন আপনার কেমন লাগবে? আপনার কেমন লাগবে আমি জানি না। তবে আমি এই রকমই বিভ্রান্ত হইছিলাম দুই দিন আগে।

হাওড়ের জীবনটা নদী থেকে দেখার ইচ্ছায়, ট্রলারে করে ফিরতেছি। দূরে একটা গ্রাম দেখাইয়া পাশের মুরুব্বীরে জিগাইলাম, মুরব্বী এইটা কোন গ্রাম? মুরুব্বী জানাইলেন, গ্রামের নাম জগন্নাথপুর। আচ্ছা। আধঘন্টা পর আবারো আরেকটা গ্রাম দেখাইয়া জিগাইলাম। ট্রলারের ছাদের বিকেলের রোদে বসা মুরুব্বী একবার তাকাইলেন গ্রামের দিকে। উত্তর দিলেন, জগন্নাথপুর! মানে? আধাঘন্টা ধইরা কি তবে আগাইতেছি না? আমার প্রশ্নে মুরুব্বী স্মিত হেসে উত্তর দিলেন। নদী পথ তো, এই রকমই। আমরা এতক্ষণ পূবে ছিলাম, এখন উত্তরে। তার মানে নদী যেদিক দিয়া গেছে আমরাও এইদিক দিয়াই যাইতেছি। অ আচ্ছা।

এইটা হৈলো খালিয়াজুড়ি থেকে ট্রলারে করে নাওটানা ফেরার অভিজ্ঞতা। কুয়াশা না থাকলে নাওটানা থেকে ট্রলারের ছাদে উঠলে খালিয়াজুড়ি দেখা যায়। উপজেলা সদরটা এত ছোট যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাইতে পাঁচ-দশ মিনিট হাঁটলেই চলে। শুকনা মৌসুমে তবুও নৌকা ছাড়া যাতায়াত করার উপায় আছে। মানে দুই ধরনের ট্রান্সপোর্ট আছে। এক হইলো ভটভটি, আর এক হইলো ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে? নৌকা ছাড়া কোনও উপায় নাই। চারপাশে তাকালে কেবল মনে হয় ঢেউ ছাড়া সমুদ্র। আর গ্রামগুলো হঠাৎ হঠাৎ একটা দ্বীপের মতোন।

বলা যায় বাংলাদেশের অন্যতম দুর্গম উপজেলাগুলোর একটা হইলো এই খালিয়াজুড়ি। ঢাকা থেকে সবচে সহজ পথেও যাইতে হইলে আপনাকে চারবার ট্রান্সপোর্ট বদল করতে হবে। এর মাঝে স্থলপথ ও নদীপথের একাধিক মাধ্যম আপনাকে গ্রহণ করতে হবেই। এক কথায় খালিয়াজুড়ির এই হৈলো বিশেষত্য। এখানকার মানুষ খুব বেশী কিছু চায় না। তাদের প্রয়োজনীয় যা যা দরকার তারা কেবল তাই চায়। যেমন? তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। যা আছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তবে যেই বিষয়টা এখানকার মানুষদের কথা চিন্তা করলে সবচে বেশী যন্ত্রণা দেয় তা হইলো এখানকার অর্থনৈতিক জীবন কাঠামো খুবই দুর্বল। বছরে ছয় মাস তাদের কোনও রোজগার থাকে না। কেবলমাত্র মাছ ধরা ছাড়া। কেউ কেউ এই সময় অর্থের অভাবে এলাকা ছেড়ে ডাঙ্গায় কাজের উদ্দেশ্যে পারি জমায়। অথচ আপাত দৃষ্টিতে খুব স্বাধারণ একটা জায়গা হইলেও শীতের সকালে এইসব গ্রামগুলো কি যে সুন্দর হয়ে উঠে। আর কি যে অপার্থিব নীরবতা সেইসব গ্রামে। আমার ব্যার্থতা সেই নীরবতাকে আমি ধারণ করতে পারিনি। উল্টো আরো মুখর হয়ে ফিরে এসেছি। আসা যাওয়ার পথে বয়ে বেড়িয়েছি অন্য যাতনা। অথচ যা স্বাভাবিক ছিলো না কিছুতেই।
খালিয়াজুড়ির খুব ধীর গতির। যেহেতু ছোট মফস্বল। তাই সেখানকার অধিকাংশ মানুষের মন ছোট, এমনটা সেইখানে যারা কাজ করতে যায় তারা বলে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখতে পাই।

তবে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হইলেও বাংলাদেশের আদী ও অকৃত্রিম যে রূপ তার অনেকটাই কিন্তু সেই খালিয়াজুড়িতে পাওয়া যায়। শীত মৌসুমে যখন হাওর অঞ্চল শুকনো থাকে তখন সেখানে শীত যাপনের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয়দের অর্থের সংকটটা কমতো। আমার এমনই ভাবনা। তাই শীত থাকতে থাকতে আমি মনে হয় আবারো যাবো খালিয়াজুড়ি।



কীভাবে যেতে পারেন খালিয়াজুড়ি
দুই পথে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। তবে সবচে সহজ ও দ্রুততর পথ হলো মোহনগঞ্জ হয়ে। ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস এ চড়ে সোজা মোহনগঞ্জ। ভাড়া চেয়ার কোচে ২১০ টাকা। শোভন ১৫০। মোহনগঞ্জ স্টেশনের কাছ থেকেই সিএনজি চলে বোয়ালিয়া পর্যন্ত। প্রতিটা সিএনজিতে ৫জন করে তোলে। জন প্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। বোয়ালিয়া গিয়ে একটা নদী পার হইতে হবে। ব্রীজ আছে। এইখান থেকেই মূলত: হাওর অঞ্চল শুরু। বর্ষায় এইখান থেকেই সরাসরি খালিয়াজুড়ি বা হাওরের যে কোনও থানা, গ্রামের ট্রলার যায়। ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেলে করে সরাসরি খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। এতে সময় কম লাগে। আর মূল পাকা রাস্তাটাও চেনা হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকে। তবে খরচ একটু বেশী। দুইজন যাত্রী তোলে। ভাড়া ৩শ টাকা। সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর এখান থেকে মোটরসাইকেলে নাওটানা গিয়ে সেখান থেকে সকাল ৮টার ট্রলারে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। নদীপথে, ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা। তবে নদীপথে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। তারপর নাওটানা পর্যন্ত তো যেতেই মোটরসাইকেলে ১৫ মিনিটের বেশী লাগে না। দুইজনে ভাড়া নেয় ১শ টাকা।

একে তো দুর্গম পথ তারওপর, জনপ্রিয় কোনও ট্যুরিস্ট স্পট না। তবুও আপনার ভালো লাগবে। যদিও মন্দ লাগার মতোও অনেক কিছু আছে সেখানে, আপনি তো আর সেগুলোর জন্য যাচ্ছেন না। 

সবগুলো ছবি তুলেছেন তানভীর আশিক

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

'এমন না যে রমিজের জীবনে এ ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। তবুও যেদিন বিষ্যুদবার, কুলুকুলু হাওয়া বয়। রমিজ গাছে উঠে, ভোরে। শালিখ পাখির বাসা পার হয়ে বিমান ধরে।'

বাস্তব নয়, তবে ভিস্যুয়াল বা ভার্চুয়াল যাই বলি না কেন রমিজের সাথে আমার পরিচয় প্রায় দশ বছর আগে। ময়মনসিংহের তিন কোনা পুকুর পাড়ের মেস বাড়িতে আমাদের কয়েকজনের মধ্যরাতের বিনোদন ছিলো দুটি টিভি ধারাবাহিক। যার একটা ছিলো রঙের মানুষ আর একটা রমিজের আয়নাসেইটা ছিলো আমাদের অনেকের দেখা সবশেষ টিভি ধারাবাহিক। তারপর আর টিভি ধারাবাহিক দেখার সময়-সুযোগ ও আগ্রহ কোনওটাই হয় নি। যদিও বিদেশী টিভি সিরিজ দেখা হয় কিছু। তবে এর মাঝে হালের জনপ্রিয় গেইম অব থ্রোনস এর মতো সিরিজও আমি মিস করছি। আগ্রহই তৈরি হয় নি। আমার এরকম হয়। আবার শার্লকের মতো সিরিজ আমি নিয়মিত দেখি। আগ্রহ তৈরি হয় বলেই আমি দেখি। যাই হোক, টিভি ধারাবাহিক নিয়ে বকর বকর মুখ্য বিষয় না।  মুখ্য হলো রমিজ। যেই রমিজের আয়নায় আমার ভার্চুয়াল/পর্দার রমিজের সাথে পরিচয়। যেই রমিজ কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে এক অদ্ভুত জটিলতার মুখোমুখি হয়। সেই রমিজ যাপিত জীবনের তাগিদে ধীরে ধীরে এক পঙ্কিল পৃথিবীতে ঢুকে যায়। যেমন আমরাও ঢুকে আছি। কেউ হয়তো স্বীকার করবেন, কেউ করবেন না। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই নাটুকে রমিজের মতো পঙ্কিলতা আছে। তবে নাটকের রমিজও কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় নয়। আমার আলোচনার বিষয় অন্য রমিজ। সেই রমিজও নাটকের রমিজের মতো জ্যামে বসে থাকে। গরমে ঘেমে একাকার হয়। বিরক্তিতে মুখ বাকানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তবে সেই রমিজও স্বপ্ন দেখে এইসব পঙ্কিলতা, যন্ত্রণাকে এড়িয়ে একটা সুন্দর পৃথিবীর। সেই সুন্দর পৃথিবীটা কি হইতে পারে সেই আলোচনা অন্য কোনও দিন করা যাইতে পারে। যেহেতু আমাদের ‌এই দিন দিন না, আরও দিন আছে
রমিজের প্রসঙ্গটা আসছে সে আসলে আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে দাঁড়াইছে বলে। কারণ আমাদের রমিজের বাড়িও আছে। শেষবার আমি রমিজের সেই বাড়ি গেছিলাম তখন শুক্রবার। তার আগেও গেছিলাম। সেইটাও শুক্রবার ছিলো। শুক্রবারে রমিজের বাড়িতে মনে হয় গেস্ট একটু বেশী থাকে। যাই হোক, রমিজের বাড়িটা বেশিদিন টিকবে না। সেখানে অন্য কেউ বাড়ি করবে। কারণ রমিজ বাড়ি করছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আর্টস গ্যালারি কলা কেন্দ্রতে। তার বাড়ির মেয়াদ ডিসেম্বরের দশ তারিখ পর্যন্ত। এই কয়দিন পর্যন্ত রমিজের বাড়িটার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইনএইটা কবি ও শিল্পী রাজীব দত্তর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
রাজীবের সেই পৃথিবীকে রাজীব বলে অর্থহীন। আসলেই তো অর্থহীন। কিন্তু বললেই কি অর্থহীনতা দাঁড়ায়। বিষয়টা আসলে কি? পরীক্ষার প্রশ্নের মতো যদি উত্তর খুঁজি, অর্থহীনতা বলতে কি বুঝি? কীভাবে অর্থহীনতা বাস্তবতায় রূপ নেয়? এইসব জটিল প্রশ্নের আপাত: সহজ উত্তর আসলে ঐ প্রদর্শনীটা। এক ধরনের প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়ার মতো। তবে এই প্রশ্ন আর এই উত্তর হাতে পেলেও আপনি রমিজ সম্পর্কে ঠিক উত্তরটি লিখতে পারবেন না। রাজীবের জগৎটা এমনই। কেমন? এক টিভি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আপনার প্রদর্শনীর নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইন কেনো? ছোটখাটো মানুষটার উত্তরটাও ছোট। বলে কী না, আমার যদি একটা প্লেইন থাকতো তাইলে তো জ্যামের মধ্যে গরমের মধ্যে বসে কষ্ট করতে হইতো না। তো রমিজেরও এই রকম ইচ্ছা করে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা করে রমিজ আছেআরে বলে কি! প্রত্যেকের মধ্যে রমিজ আছে? এই কথাই তো শুরুতে বলতে চাইছিলাম।
হ্যা, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে রমিজ আছে। আর সেই রমিজ যে বিভিন্ন সময় এলোমেলো ভাবনাগুলো ভাবে সেগুলোই অনেকাংশে এই প্রদর্শনীর দেয়াল জুড়ে। যেমন রমিজকে আমরা পলাশীর আম বাগানে দেখতে পাই। সেইখানে গিয়া রমিজ কি করে? রাজীবের ভাষ্যে যদি উত্তর খুঁজি তবে পাই, পলাশীর আম্র কাননে রমিজ। এই রমিজকে ১৭৫৭ সালের আগে দেখা যায় নাই। সিরাজ ও রমিজ লর্ড ক্লাইভের হাতে মরিচ আর নুন জিম্মা রাখছে। পলাশীর আম বাগানে যদি বাংলার স্বাধীনতার প্রথম পতন হিসেবে দেখি, তাহলে ভাবতেই পারি এই যে আমরা যারা ইতিহাসের কিছু সংখ্যা আর তাদের ভাব সম্প্রসারণ জানি, তারা সবাই তো রমিজই। কারণ সিরাজ তো আমাদের নিয়া সেই সময় ক্লাইভের কাছেই সব কিছু সমর্পণ করছিলো। ইতিহাস তো তাই বলে। এইভাবে রমিজের আপাত: অর্থহীন ভাষ্য আমাদের একটা নয়া দুইন্যার সামনে দাঁড় করাইয়া দেয়। আমরা অর্থহীনতার মাঝেও অর্থ পাইছি।

রাজীবের এই জগতের সাথে পরিচিত হইতে পারা দারুন। যারা ভার্চুয়াল জীবন কিছুটা হৈলেও যাপন করেন, তাদের কাছে তার এই জগৎ পুরোপুরি নতুন না হইলেও একেবারে পুরাতনও না। কিন্তু যেই বিষয়টা না বললেই নয়, তা হইলো দৈত্য (রাজীব দত্ত কে আমি দৈত্যই ডাকি, হয়তো আরও কেউ কেউ ডাকে) তার শিল্পকলার মধ্য দিয়ে একটা অর্থহীন গল্প বলছেন। এই গল্পেরও একটা খন্ড খন্ড অর্থ যেহেতু আমাদের কাছে দাঁড়ায়া যায়, তাই একটা সামগ্রিক অর্থও দাঁড়াইতে পারে। যেমন দৈত্যর ছবিতে যখন লেখা থাকে পাখিরা কখনো রান্না করা মাছ খেয়ে দেখে নি। তাই তার পোষা রাখির জন্য রমিজ রান্না মাছ নিয়ে যায়। রমিজ গাছে উঠে পাখিকে পাখির মতো ডাকে- আসো খাই, মাছ খাই। (পাখিদের একটা পায়ে লোম থাকে)তখন কি মনে হয় আপনার? মনে হয় না একটা ভিন্ন কল্পনার জগতের কথা? যেই জগতের কথা আমরা ভাবি না। ভাবতে গেলে অস্পষ্ট একটা পৃথিবীর ছবি আমরা দেখতে পাই। চিত্রকলার ভাষায় তারে কি কয়? আমি চিত্রকলা বুঝি না। আমি বুঝি একটা অধিবাস্তব পৃথিবী, যা আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে সেই ছবি এঁকেছেন রাজীব। আর সাথে বলেছেন সেই পৃথিবীর গল্প।
এমন না যে রমিজ ইতিহাসের হাস্যকর কল্পনা আর চলমান পৃথিবীর অধিবাস্তব গল্পেই জীবন যাপন করে। সে অধিকতর বাস্তবেও বসবাস করে। যেমন রমিজ বলে, হাতিরঝিল হাতিদের কাছে কেমন, তা রমিজ জানে নাআপনি জানেন? আপনার কি একটা লেজ আছে?  যেইটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখেন? নাই তো! দেখুন তো আছে কি না। আপনার সহপাঠি, সহকর্মী বা বন্ধুর প্রশংসাই তো করেন তার সামনে। আর আড়ালে? তাকে যে ঈর্ষা বা ঘৃণাটা করেন সেইটা কি আপনার একটা লেজ না? আমার এই যুক্তি আপনার পছন্দ নাও হৈতে পারে। আদতে পছন্দ হইতেই হবে এমন কোনও কথাও না। কিন্তু দেখেন এইভাবে আপনার ভেতর যে মানবিকতাবোধ আছে, তার আড়ালে তো একটা পশুত্বও আছে। সেই পশুত্বকে যদি একটা হাতি ভাবতে চাই তবে খুব বেশী কি অপরাধ হবে? আপনার পশুটার চাওয়াগুলোও তো পশুটার মতো বিশাল! তাই বলে এই ছবি দৈত্য এঁকে ফেলছে। বুঝলেন মশাই! সেই ছবিটা কেমন? রমিজ যেভাবে হাতি ভাবে। এমন না যে সে প্রতিদিন হাতি ভাবে। তবে ভাবা হাতির ২টা লেজ থাকবে, ২টা শুঁড়। ১টা লেজ এবং ১টা শুঁড় রমিজের নিজের। এগুলো সে বালিশের নিচে রাখে ছবিটা এমন।


‘পাখিদের ছায়া ভিজে গেলে এরোপ্লেন তৈরি হয়’

at শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫  |  1 comment

'এমন না যে রমিজের জীবনে এ ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। তবুও যেদিন বিষ্যুদবার, কুলুকুলু হাওয়া বয়। রমিজ গাছে উঠে, ভোরে। শালিখ পাখির বাসা পার হয়ে বিমান ধরে।'

বাস্তব নয়, তবে ভিস্যুয়াল বা ভার্চুয়াল যাই বলি না কেন রমিজের সাথে আমার পরিচয় প্রায় দশ বছর আগে। ময়মনসিংহের তিন কোনা পুকুর পাড়ের মেস বাড়িতে আমাদের কয়েকজনের মধ্যরাতের বিনোদন ছিলো দুটি টিভি ধারাবাহিক। যার একটা ছিলো রঙের মানুষ আর একটা রমিজের আয়নাসেইটা ছিলো আমাদের অনেকের দেখা সবশেষ টিভি ধারাবাহিক। তারপর আর টিভি ধারাবাহিক দেখার সময়-সুযোগ ও আগ্রহ কোনওটাই হয় নি। যদিও বিদেশী টিভি সিরিজ দেখা হয় কিছু। তবে এর মাঝে হালের জনপ্রিয় গেইম অব থ্রোনস এর মতো সিরিজও আমি মিস করছি। আগ্রহই তৈরি হয় নি। আমার এরকম হয়। আবার শার্লকের মতো সিরিজ আমি নিয়মিত দেখি। আগ্রহ তৈরি হয় বলেই আমি দেখি। যাই হোক, টিভি ধারাবাহিক নিয়ে বকর বকর মুখ্য বিষয় না।  মুখ্য হলো রমিজ। যেই রমিজের আয়নায় আমার ভার্চুয়াল/পর্দার রমিজের সাথে পরিচয়। যেই রমিজ কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে এক অদ্ভুত জটিলতার মুখোমুখি হয়। সেই রমিজ যাপিত জীবনের তাগিদে ধীরে ধীরে এক পঙ্কিল পৃথিবীতে ঢুকে যায়। যেমন আমরাও ঢুকে আছি। কেউ হয়তো স্বীকার করবেন, কেউ করবেন না। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই নাটুকে রমিজের মতো পঙ্কিলতা আছে। তবে নাটকের রমিজও কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় নয়। আমার আলোচনার বিষয় অন্য রমিজ। সেই রমিজও নাটকের রমিজের মতো জ্যামে বসে থাকে। গরমে ঘেমে একাকার হয়। বিরক্তিতে মুখ বাকানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তবে সেই রমিজও স্বপ্ন দেখে এইসব পঙ্কিলতা, যন্ত্রণাকে এড়িয়ে একটা সুন্দর পৃথিবীর। সেই সুন্দর পৃথিবীটা কি হইতে পারে সেই আলোচনা অন্য কোনও দিন করা যাইতে পারে। যেহেতু আমাদের ‌এই দিন দিন না, আরও দিন আছে
রমিজের প্রসঙ্গটা আসছে সে আসলে আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে দাঁড়াইছে বলে। কারণ আমাদের রমিজের বাড়িও আছে। শেষবার আমি রমিজের সেই বাড়ি গেছিলাম তখন শুক্রবার। তার আগেও গেছিলাম। সেইটাও শুক্রবার ছিলো। শুক্রবারে রমিজের বাড়িতে মনে হয় গেস্ট একটু বেশী থাকে। যাই হোক, রমিজের বাড়িটা বেশিদিন টিকবে না। সেখানে অন্য কেউ বাড়ি করবে। কারণ রমিজ বাড়ি করছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আর্টস গ্যালারি কলা কেন্দ্রতে। তার বাড়ির মেয়াদ ডিসেম্বরের দশ তারিখ পর্যন্ত। এই কয়দিন পর্যন্ত রমিজের বাড়িটার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইনএইটা কবি ও শিল্পী রাজীব দত্তর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
রাজীবের সেই পৃথিবীকে রাজীব বলে অর্থহীন। আসলেই তো অর্থহীন। কিন্তু বললেই কি অর্থহীনতা দাঁড়ায়। বিষয়টা আসলে কি? পরীক্ষার প্রশ্নের মতো যদি উত্তর খুঁজি, অর্থহীনতা বলতে কি বুঝি? কীভাবে অর্থহীনতা বাস্তবতায় রূপ নেয়? এইসব জটিল প্রশ্নের আপাত: সহজ উত্তর আসলে ঐ প্রদর্শনীটা। এক ধরনের প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়ার মতো। তবে এই প্রশ্ন আর এই উত্তর হাতে পেলেও আপনি রমিজ সম্পর্কে ঠিক উত্তরটি লিখতে পারবেন না। রাজীবের জগৎটা এমনই। কেমন? এক টিভি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আপনার প্রদর্শনীর নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইন কেনো? ছোটখাটো মানুষটার উত্তরটাও ছোট। বলে কী না, আমার যদি একটা প্লেইন থাকতো তাইলে তো জ্যামের মধ্যে গরমের মধ্যে বসে কষ্ট করতে হইতো না। তো রমিজেরও এই রকম ইচ্ছা করে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা করে রমিজ আছেআরে বলে কি! প্রত্যেকের মধ্যে রমিজ আছে? এই কথাই তো শুরুতে বলতে চাইছিলাম।
হ্যা, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে রমিজ আছে। আর সেই রমিজ যে বিভিন্ন সময় এলোমেলো ভাবনাগুলো ভাবে সেগুলোই অনেকাংশে এই প্রদর্শনীর দেয়াল জুড়ে। যেমন রমিজকে আমরা পলাশীর আম বাগানে দেখতে পাই। সেইখানে গিয়া রমিজ কি করে? রাজীবের ভাষ্যে যদি উত্তর খুঁজি তবে পাই, পলাশীর আম্র কাননে রমিজ। এই রমিজকে ১৭৫৭ সালের আগে দেখা যায় নাই। সিরাজ ও রমিজ লর্ড ক্লাইভের হাতে মরিচ আর নুন জিম্মা রাখছে। পলাশীর আম বাগানে যদি বাংলার স্বাধীনতার প্রথম পতন হিসেবে দেখি, তাহলে ভাবতেই পারি এই যে আমরা যারা ইতিহাসের কিছু সংখ্যা আর তাদের ভাব সম্প্রসারণ জানি, তারা সবাই তো রমিজই। কারণ সিরাজ তো আমাদের নিয়া সেই সময় ক্লাইভের কাছেই সব কিছু সমর্পণ করছিলো। ইতিহাস তো তাই বলে। এইভাবে রমিজের আপাত: অর্থহীন ভাষ্য আমাদের একটা নয়া দুইন্যার সামনে দাঁড় করাইয়া দেয়। আমরা অর্থহীনতার মাঝেও অর্থ পাইছি।

রাজীবের এই জগতের সাথে পরিচিত হইতে পারা দারুন। যারা ভার্চুয়াল জীবন কিছুটা হৈলেও যাপন করেন, তাদের কাছে তার এই জগৎ পুরোপুরি নতুন না হইলেও একেবারে পুরাতনও না। কিন্তু যেই বিষয়টা না বললেই নয়, তা হইলো দৈত্য (রাজীব দত্ত কে আমি দৈত্যই ডাকি, হয়তো আরও কেউ কেউ ডাকে) তার শিল্পকলার মধ্য দিয়ে একটা অর্থহীন গল্প বলছেন। এই গল্পেরও একটা খন্ড খন্ড অর্থ যেহেতু আমাদের কাছে দাঁড়ায়া যায়, তাই একটা সামগ্রিক অর্থও দাঁড়াইতে পারে। যেমন দৈত্যর ছবিতে যখন লেখা থাকে পাখিরা কখনো রান্না করা মাছ খেয়ে দেখে নি। তাই তার পোষা রাখির জন্য রমিজ রান্না মাছ নিয়ে যায়। রমিজ গাছে উঠে পাখিকে পাখির মতো ডাকে- আসো খাই, মাছ খাই। (পাখিদের একটা পায়ে লোম থাকে)তখন কি মনে হয় আপনার? মনে হয় না একটা ভিন্ন কল্পনার জগতের কথা? যেই জগতের কথা আমরা ভাবি না। ভাবতে গেলে অস্পষ্ট একটা পৃথিবীর ছবি আমরা দেখতে পাই। চিত্রকলার ভাষায় তারে কি কয়? আমি চিত্রকলা বুঝি না। আমি বুঝি একটা অধিবাস্তব পৃথিবী, যা আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে সেই ছবি এঁকেছেন রাজীব। আর সাথে বলেছেন সেই পৃথিবীর গল্প।
এমন না যে রমিজ ইতিহাসের হাস্যকর কল্পনা আর চলমান পৃথিবীর অধিবাস্তব গল্পেই জীবন যাপন করে। সে অধিকতর বাস্তবেও বসবাস করে। যেমন রমিজ বলে, হাতিরঝিল হাতিদের কাছে কেমন, তা রমিজ জানে নাআপনি জানেন? আপনার কি একটা লেজ আছে?  যেইটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখেন? নাই তো! দেখুন তো আছে কি না। আপনার সহপাঠি, সহকর্মী বা বন্ধুর প্রশংসাই তো করেন তার সামনে। আর আড়ালে? তাকে যে ঈর্ষা বা ঘৃণাটা করেন সেইটা কি আপনার একটা লেজ না? আমার এই যুক্তি আপনার পছন্দ নাও হৈতে পারে। আদতে পছন্দ হইতেই হবে এমন কোনও কথাও না। কিন্তু দেখেন এইভাবে আপনার ভেতর যে মানবিকতাবোধ আছে, তার আড়ালে তো একটা পশুত্বও আছে। সেই পশুত্বকে যদি একটা হাতি ভাবতে চাই তবে খুব বেশী কি অপরাধ হবে? আপনার পশুটার চাওয়াগুলোও তো পশুটার মতো বিশাল! তাই বলে এই ছবি দৈত্য এঁকে ফেলছে। বুঝলেন মশাই! সেই ছবিটা কেমন? রমিজ যেভাবে হাতি ভাবে। এমন না যে সে প্রতিদিন হাতি ভাবে। তবে ভাবা হাতির ২টা লেজ থাকবে, ২টা শুঁড়। ১টা লেজ এবং ১টা শুঁড় রমিজের নিজের। এগুলো সে বালিশের নিচে রাখে ছবিটা এমন।


Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫



বিনয় মজুমদার
এক আশ্চর্য প্রদীপযে প্রদীপ নিজে জ্বলে-পুড়ে শুধু আলোই দেয় না মনের ভেতর জ্বালায় শিখার বুদবুদযেখান থেকে তরল আগুন এক সময় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে দেহের ভেতর, মনের ভেতর জ্বলে উঠে বিনয়কিন্তু মোটেও বিনয় তৈরি হয় না বিপরীতে আগ্রাসন তৈরি হয়এই আগ্রাসনে বিনয় পাঠের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অন্য সকল পাঠ্য তালিকা স্থগিত হয়ে যায়কদাচিৎ যদিও অন্য কোনও পাঠ্যপুস্তক (যে বই পড়ার প্রয়োজন) হাতের কাছে চলে আসে তাও টেকে নাযদিও নিজের মনের মতো করে ভাবলে বিনয়ের কবিতা ও তার ব্যক্তি জীবনে তুমুল বৈপরিত্য চোখে পরেহতে পারে তা আমার সাময়িক ভাবনার পরিণতিকিন্তু বৈপরিত্য তার জীবনে ও কবিতার রয়েছেইতা জীবন ও কবিতা একই সমান্তরালে দেখলেই বেড়িয়ে আসেসেই বিনয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব অল্প দিনেরঅবশ্য এর চেয়ে অল্পদিনের পরিচয়েও আমার বন্ধু হওয়া সহজ

বিনয়কে নিয়ে সম্ভবত প্রথম যে বাক্যটি শুনেছিলাম তা হলো- অসম্ভব অভিমানী কবিতখন বিনয়ের দ্বার খুলে দেয়ার ভূমিকাকারী বিনয়কে দেখাত বোদলেয়ারের মতো করেতখন পর্যন্ত বিনয়ের দুটো কবিতাই মাত্র পড়া হয়েছেআর বিনয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা-সমালোচনাএই আলোচনা-সমালোচনা পড়ার পর কেবল তাঁর কবিতায় জীবন খুঁজেছি, জীবনে কবিতা খুঁজেছিযখন মিল খুঁজে পেয়েছি তখন ভালো লেগেছেযখন অমিল খুঁজে পেয়েছি তখন মন্দ লেগেছেজীবন ও বাস্তবতার সাথে কবিতার খোজা-খোঁজিতে যত বৈপরিত্য দেখেছি তখনই তাকে তাঁর কবিতার দূর্বলতা হিসেবে চোখে লেগেছেবাস্তব জীবনে যে কবির ভগ্নদশার পরিচালক গায়ত্রী চক্রবর্তিসেই চক্রবর্তিকে নিয়ে কেন কবিতা লেখা হলো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - কাউকে নিয়ে তো লিখতে হয়- আমগাছ, কাঠালগাছ, রজনীগন্ধ্যা নিয়ে কি চিরকাল লেখা যায়?’ বিনয় মূলত এই ধাঁচেরই একজন কবিনির্মাণ বিনির্মাণের মাঝে তিনি স্বতন্ত্র

তাঁর কবিতার ভেতরকার গুপ্ততা ধীরে ধীরে আবার হঠাৎই ঔজ্জ্বল্যতা ছড়ায়ব্যক্তির জীবন বৈপরিত্য পেয়ে কবিতায় এসেছেকবিতা এই বৈপরিত্য পেয়ে রূপসীও হয়েছে মাঝে মাঝেকিন্তু কিছু কিছু বৈপরিত্য তীব্র আকারে ধরা পড়ে চোখেবিনয়ের কবিতায় বিনয় কিছু আপ্তবাক্য বা দর্শন তৈরি করেছেনএই দর্শনের মাঝে একটা হলো-
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়
       এই আপ্তবাক্য বা দর্শনটির কথা আমাদের জানাই আছেতা জানতে গিয়েই আমারা তার কবিতার শুরুটা নিশ্চয়ই পড়ে থাকিশুরুর ভাবনায় একটা বৈপরিত্য বসবাস করছে যেমন শুরুতেই রয়েছে-
মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে
এই বাক্য দিয়ে শুরু করে যখন পূর্বোক্ত বাক্যে শেষ হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য যদি শেষ বাক্যটি না হয়ে যদি সম্পূর্ণ কবিতাটি হয় তাহলে মনে করতে পারি একই ভাবনার প্রকাশ তিনি সম্পূর্ণ কবিতাটিতে দেখান নিএই ক্ষেত্রে খুব সহজেই আরা ভেবে নিতে পারি দুইটি সমাধান- এক. বিনয়ের কবিতার স্টাইল বা ফর্মই এটা, একই কথা ঘুরিয়ে বলা; দুই. বিনয় হয়তো প্রথম বাক্যটি ভেবেই লিখতে বসেছিলেন, সর্বশেষ বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে এসেছেযদি তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই চলে আসে তবে তা এটা রূপান্তরের ধারাপাতে বন্দি হয়ে যায় ফলে শুরুর কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়েই সকল কথার অবতারণ নয়আর কবিতার শেষটাও অন্য কোথাওযা একই কবিতায় বৈপরিত্য উপস্থাপন করেঅন্ততঃপক্ষে আমি মনে করি কবি ও কবিতার ভেতর বৈপরিত্য থাকা সম্ভবকিন্তু একই কবিতার ভাবে বক্তব্যে তা কাম্য নয়তবে যদি তাই বিনয়-এর নিজস্ব ঢং এর হয়ে থাকে তবে তাই হোক!

বিনয়কে নিয়ে অনুভূতির কথামালা

at বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫  |  No comments



বিনয় মজুমদার
এক আশ্চর্য প্রদীপযে প্রদীপ নিজে জ্বলে-পুড়ে শুধু আলোই দেয় না মনের ভেতর জ্বালায় শিখার বুদবুদযেখান থেকে তরল আগুন এক সময় দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়ে দেহের ভেতর, মনের ভেতর জ্বলে উঠে বিনয়কিন্তু মোটেও বিনয় তৈরি হয় না বিপরীতে আগ্রাসন তৈরি হয়এই আগ্রাসনে বিনয় পাঠের ইচ্ছা-আকাঙ্খার অন্য সকল পাঠ্য তালিকা স্থগিত হয়ে যায়কদাচিৎ যদিও অন্য কোনও পাঠ্যপুস্তক (যে বই পড়ার প্রয়োজন) হাতের কাছে চলে আসে তাও টেকে নাযদিও নিজের মনের মতো করে ভাবলে বিনয়ের কবিতা ও তার ব্যক্তি জীবনে তুমুল বৈপরিত্য চোখে পরেহতে পারে তা আমার সাময়িক ভাবনার পরিণতিকিন্তু বৈপরিত্য তার জীবনে ও কবিতার রয়েছেইতা জীবন ও কবিতা একই সমান্তরালে দেখলেই বেড়িয়ে আসেসেই বিনয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব অল্প দিনেরঅবশ্য এর চেয়ে অল্পদিনের পরিচয়েও আমার বন্ধু হওয়া সহজ

বিনয়কে নিয়ে সম্ভবত প্রথম যে বাক্যটি শুনেছিলাম তা হলো- অসম্ভব অভিমানী কবিতখন বিনয়ের দ্বার খুলে দেয়ার ভূমিকাকারী বিনয়কে দেখাত বোদলেয়ারের মতো করেতখন পর্যন্ত বিনয়ের দুটো কবিতাই মাত্র পড়া হয়েছেআর বিনয় সম্পর্কে কিছু আলোচনা-সমালোচনাএই আলোচনা-সমালোচনা পড়ার পর কেবল তাঁর কবিতায় জীবন খুঁজেছি, জীবনে কবিতা খুঁজেছিযখন মিল খুঁজে পেয়েছি তখন ভালো লেগেছেযখন অমিল খুঁজে পেয়েছি তখন মন্দ লেগেছেজীবন ও বাস্তবতার সাথে কবিতার খোজা-খোঁজিতে যত বৈপরিত্য দেখেছি তখনই তাকে তাঁর কবিতার দূর্বলতা হিসেবে চোখে লেগেছেবাস্তব জীবনে যে কবির ভগ্নদশার পরিচালক গায়ত্রী চক্রবর্তিসেই চক্রবর্তিকে নিয়ে কেন কবিতা লেখা হলো প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - কাউকে নিয়ে তো লিখতে হয়- আমগাছ, কাঠালগাছ, রজনীগন্ধ্যা নিয়ে কি চিরকাল লেখা যায়?’ বিনয় মূলত এই ধাঁচেরই একজন কবিনির্মাণ বিনির্মাণের মাঝে তিনি স্বতন্ত্র

তাঁর কবিতার ভেতরকার গুপ্ততা ধীরে ধীরে আবার হঠাৎই ঔজ্জ্বল্যতা ছড়ায়ব্যক্তির জীবন বৈপরিত্য পেয়ে কবিতায় এসেছেকবিতা এই বৈপরিত্য পেয়ে রূপসীও হয়েছে মাঝে মাঝেকিন্তু কিছু কিছু বৈপরিত্য তীব্র আকারে ধরা পড়ে চোখেবিনয়ের কবিতায় বিনয় কিছু আপ্তবাক্য বা দর্শন তৈরি করেছেনএই দর্শনের মাঝে একটা হলো-
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়
       এই আপ্তবাক্য বা দর্শনটির কথা আমাদের জানাই আছেতা জানতে গিয়েই আমারা তার কবিতার শুরুটা নিশ্চয়ই পড়ে থাকিশুরুর ভাবনায় একটা বৈপরিত্য বসবাস করছে যেমন শুরুতেই রয়েছে-
মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে
এই বাক্য দিয়ে শুরু করে যখন পূর্বোক্ত বাক্যে শেষ হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য যদি শেষ বাক্যটি না হয়ে যদি সম্পূর্ণ কবিতাটি হয় তাহলে মনে করতে পারি একই ভাবনার প্রকাশ তিনি সম্পূর্ণ কবিতাটিতে দেখান নিএই ক্ষেত্রে খুব সহজেই আরা ভেবে নিতে পারি দুইটি সমাধান- এক. বিনয়ের কবিতার স্টাইল বা ফর্মই এটা, একই কথা ঘুরিয়ে বলা; দুই. বিনয় হয়তো প্রথম বাক্যটি ভেবেই লিখতে বসেছিলেন, সর্বশেষ বাক্যটি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে এসেছেযদি তা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই চলে আসে তবে তা এটা রূপান্তরের ধারাপাতে বন্দি হয়ে যায় ফলে শুরুর কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়েই সকল কথার অবতারণ নয়আর কবিতার শেষটাও অন্য কোথাওযা একই কবিতায় বৈপরিত্য উপস্থাপন করেঅন্ততঃপক্ষে আমি মনে করি কবি ও কবিতার ভেতর বৈপরিত্য থাকা সম্ভবকিন্তু একই কবিতার ভাবে বক্তব্যে তা কাম্য নয়তবে যদি তাই বিনয়-এর নিজস্ব ঢং এর হয়ে থাকে তবে তাই হোক!

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

 দীর্ঘদিন কোথাও যাই না। যাই না মানে কেবল বাড়ি যাই, আর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরি। অথচ গত দেড় বছরে ছোট বড় হাফ ডজন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ। কারণ আমার সময় হইলে বন্ধুদের হয় না, বন্ধুদের হলে আমার হয় না। যা শালা! এই সংকট যদি না কাটে তবে তো মহা বিপদ। এই বিপদ কাটানোর জন্য আর কারো সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসে ছুটি চাইলাম। পাওনা ছুটি, সে-ও পাইতে বহুত পথ পারি দিতে হইলো। কী আর করা! নিজের শিডিউলই দুই বার পিছাইয়া শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের টিকিট করে তূর্ণা এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। তবে মূল গন্তব্য চট্টগ্রাম নয়। শিল্প নগরী কেবল ভায়া। মূল লক্ষ্য পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনামূলক কম পরিচিত ও পরিচিত জায়গাগুলো।

২৩ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নেমে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়িতে একটা গ্রামের নাম আছে ‘খাগুয্যাছড়ি’। এই নাম থেকেই কি খাগড়াছড়ি নামকরণ হইছে? হতে পারে। চট্টগ্রাম পাড় হয়ে যখন খাগড়াছড়ির বাসে উঠি, তখন মনে হলো এখানেই আমার ছোট চাচা আজ প্রায় ২০/২২ বছর ধরে থাকছেন অথচ কখনো যাওয়া হয় নি। এবার গেলেও সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। যাচ্ছি অন্য কোনও খানে। যাচ্ছি সাজেক। যেই জায়গাটা আসলে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলায়। কিন্তু একমাত্র পথ খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া। খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার আগে একাধিক বড় বড় পাহাড় পার হতে হয়, এই পথে আমি মোটেও অভ্যস্থ নই বিধায় আমার মুগ্ধতা বাড়েই কেবল। শহরটা এমনই। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা শহর। আসলেই ছোট্ট। ব্যাটারি চালিত অটো দিয়ে দশ মিনিট রাইড করলেই শহরের এক মাথা দিয়ে ঢুকে অন্য মাথা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে এই ছোট্ট শহরটিতে আসতেই হবে। যদি না সরাসরি হেলিকপ্টারে যেতে চান। আমার যেহেতু হেলিকপ্টারে করে সাজেক যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। আর তাতে করে সবচে ভালো এবং সাশ্রয়ি বাহন হলো চান্দের গাড়ি। সেই লক্ষ্যে আমি যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাইম তখন দুপুর ২টা। এই সময় তো দূরের কথা সকাল ১০টার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে সাজেক যাওয়া যায় যে কোনও সময়। আমার ভরসা ছিলো ওইটাই। তাই প্রাইভেটে মোটর সাইকেলই ভরসা হইলো আমার। বিকাল ৩টায় রওনা দিয়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তার মাথায় ১৮শ উচ্চতার পাহাড়ে পৌছাইতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা। তবে চান্দের গাড়িতে গেলে ঠিক কতক্ষণ লাগবে এই বিষয়ে আমার ধারণা নাই। যতটুকু শুনেছি, এর কাছাকাছি সময়ই লাগবে। তবে যাওয়ার সময়ই ফেরার ব্যবস্থা করে তারপর যাওয়া উচিত। যদি না আপনি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ বা নিজের গাড়িতে না যান তবে ফেরার জন্য এমনও হতে পারে আপনাকে সেখানে অপেক্ষাই করতে হবে যতক্ষণ না আপনি অন্য কোনও ব্যবস্থা পাচ্ছেন।

আমি যখন যাই রাস্তায় সেনা বাহিনী চেকপোস্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কোনও বুকিং আছে কি না। আমার ছিলো না। কিন্তু তারপরও আমি গিয়ে থাকার ব্যবস্থা পেয়ে গেছি। সাজেকে প্রতি উইকেন্ডে প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়। তাই বুকিং ছাড়া যাওয়া অনেকটা রিস্কি। তবে সোমবার-বুধবার, এই তিনদিনের মধ্যে গেলে সাধারণ ট্যুরিস্টদের জন্য একদমই নয়। কারণ এর সর্বনি¤œ ভাড়া দশ হাজার টাকা নাইট। অন্য দিকে সাজেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত প্রথম রিসোর্ট (আলো রিসোর্ট) এর রুম ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা। অবশ্য সেবাও দুইটার সম্পূর্ণ পৃথক। তবে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলো রিসোর্টে আরও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা আছে। একটা কমন রুম আছে। যেখানে সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া মাত্র সাড়ে তিনশ টাকা। তবে ভুল করে যদি বুকিং ছাড়া উইকএন্ডে চলে আসেন। তাহলে আপনার জন্য একমাত্র অবলম্বন হতে পারে লোকাল আদিবাসীদের বাড়ি। এখানে আদিবাসীরা খুব নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্টদের থাকতে দেয়। যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। সেখানে পানির সংকট সব সময়ই। তাই শীতে উইকএন্ডে গেলে সম্ভব হলে সাথে মিনিমাম খাবার পানি নিয়ে যাওয়া নীরাপদ।

আমিতো বর্ষায় গেলাম। ফলে এই সময়ে এই সংকটটা নেই। কেনার মতো পানি সেখানে না থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি ঠিকই পাওয়া গিয়েছিলো।
সাজেকে যাওয়াটা সবচে কঠিন। কঠিন বলতে সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় পরছে, কিন্তু যাইতে হয় খাগড়াছরি হয়ে। কোনও বিকল্প নাই। সেখানে দুইটা হ্যালিপ্যাড আছে। ইচ্ছা করলে যাইতে পারেন। ;) এছাড়া বাসে করে দিঘীনালা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দিঘীনালা থেকে সাজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাইতে হলে রেগুলার চান্দের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশ দেরি করে আসে। ফলে খাগড়াছরি থেকে রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সবচে দ্রুততর এবং নিরাপদ। তবে হ্যা বিকল্প আরও ব্যবস্থা আছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি। সিএনজি কখনোই কাসালং বাজার পাড় হয় না। কাসালং থেকে সাজেক প্রায় ১৮ কিলোমিটার বা তারও একটু বেশি হবে। ঐটুক রাস্তাই সবচে বেশি থ্রিলিং এবং উঁচু নিচু। তাই চান্দেরগাড়ি ইজ বেস্ট। চান্দের গাড়ি সাজেক পর্যন্ত প্রতিদিন যায় না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার তিন দিন সকালে যায়। এই তিনদিনে চান্দের গাড়িতে জনপ্রতি সাজেকের ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ২শ থেকে আড়াই শ। অন্যদিন চান্দের গাড়ি রিজার্ভ (নিয়ে যাবে, প্রয়োজনে রাতে থেকে সকালে নিয়ে আসবে) করতে খরচ পড়ে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা! ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাগড়াছরি যাওয়াই ভালো। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির সরাসরি একাধিক বাস (সেইন্ট মার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি) আছে। নয় ঘন্টা লাগবে মিনিমাম।

সাজেকের পথে

at শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫  |  No comments

 দীর্ঘদিন কোথাও যাই না। যাই না মানে কেবল বাড়ি যাই, আর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরি। অথচ গত দেড় বছরে ছোট বড় হাফ ডজন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ। কারণ আমার সময় হইলে বন্ধুদের হয় না, বন্ধুদের হলে আমার হয় না। যা শালা! এই সংকট যদি না কাটে তবে তো মহা বিপদ। এই বিপদ কাটানোর জন্য আর কারো সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসে ছুটি চাইলাম। পাওনা ছুটি, সে-ও পাইতে বহুত পথ পারি দিতে হইলো। কী আর করা! নিজের শিডিউলই দুই বার পিছাইয়া শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের টিকিট করে তূর্ণা এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। তবে মূল গন্তব্য চট্টগ্রাম নয়। শিল্প নগরী কেবল ভায়া। মূল লক্ষ্য পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনামূলক কম পরিচিত ও পরিচিত জায়গাগুলো।

২৩ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নেমে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়িতে একটা গ্রামের নাম আছে ‘খাগুয্যাছড়ি’। এই নাম থেকেই কি খাগড়াছড়ি নামকরণ হইছে? হতে পারে। চট্টগ্রাম পাড় হয়ে যখন খাগড়াছড়ির বাসে উঠি, তখন মনে হলো এখানেই আমার ছোট চাচা আজ প্রায় ২০/২২ বছর ধরে থাকছেন অথচ কখনো যাওয়া হয় নি। এবার গেলেও সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। যাচ্ছি অন্য কোনও খানে। যাচ্ছি সাজেক। যেই জায়গাটা আসলে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলায়। কিন্তু একমাত্র পথ খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া। খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার আগে একাধিক বড় বড় পাহাড় পার হতে হয়, এই পথে আমি মোটেও অভ্যস্থ নই বিধায় আমার মুগ্ধতা বাড়েই কেবল। শহরটা এমনই। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা শহর। আসলেই ছোট্ট। ব্যাটারি চালিত অটো দিয়ে দশ মিনিট রাইড করলেই শহরের এক মাথা দিয়ে ঢুকে অন্য মাথা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে এই ছোট্ট শহরটিতে আসতেই হবে। যদি না সরাসরি হেলিকপ্টারে যেতে চান। আমার যেহেতু হেলিকপ্টারে করে সাজেক যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। আর তাতে করে সবচে ভালো এবং সাশ্রয়ি বাহন হলো চান্দের গাড়ি। সেই লক্ষ্যে আমি যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাইম তখন দুপুর ২টা। এই সময় তো দূরের কথা সকাল ১০টার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে সাজেক যাওয়া যায় যে কোনও সময়। আমার ভরসা ছিলো ওইটাই। তাই প্রাইভেটে মোটর সাইকেলই ভরসা হইলো আমার। বিকাল ৩টায় রওনা দিয়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তার মাথায় ১৮শ উচ্চতার পাহাড়ে পৌছাইতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা। তবে চান্দের গাড়িতে গেলে ঠিক কতক্ষণ লাগবে এই বিষয়ে আমার ধারণা নাই। যতটুকু শুনেছি, এর কাছাকাছি সময়ই লাগবে। তবে যাওয়ার সময়ই ফেরার ব্যবস্থা করে তারপর যাওয়া উচিত। যদি না আপনি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ বা নিজের গাড়িতে না যান তবে ফেরার জন্য এমনও হতে পারে আপনাকে সেখানে অপেক্ষাই করতে হবে যতক্ষণ না আপনি অন্য কোনও ব্যবস্থা পাচ্ছেন।

আমি যখন যাই রাস্তায় সেনা বাহিনী চেকপোস্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কোনও বুকিং আছে কি না। আমার ছিলো না। কিন্তু তারপরও আমি গিয়ে থাকার ব্যবস্থা পেয়ে গেছি। সাজেকে প্রতি উইকেন্ডে প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়। তাই বুকিং ছাড়া যাওয়া অনেকটা রিস্কি। তবে সোমবার-বুধবার, এই তিনদিনের মধ্যে গেলে সাধারণ ট্যুরিস্টদের জন্য একদমই নয়। কারণ এর সর্বনি¤œ ভাড়া দশ হাজার টাকা নাইট। অন্য দিকে সাজেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত প্রথম রিসোর্ট (আলো রিসোর্ট) এর রুম ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা। অবশ্য সেবাও দুইটার সম্পূর্ণ পৃথক। তবে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলো রিসোর্টে আরও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা আছে। একটা কমন রুম আছে। যেখানে সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া মাত্র সাড়ে তিনশ টাকা। তবে ভুল করে যদি বুকিং ছাড়া উইকএন্ডে চলে আসেন। তাহলে আপনার জন্য একমাত্র অবলম্বন হতে পারে লোকাল আদিবাসীদের বাড়ি। এখানে আদিবাসীরা খুব নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্টদের থাকতে দেয়। যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। সেখানে পানির সংকট সব সময়ই। তাই শীতে উইকএন্ডে গেলে সম্ভব হলে সাথে মিনিমাম খাবার পানি নিয়ে যাওয়া নীরাপদ।

আমিতো বর্ষায় গেলাম। ফলে এই সময়ে এই সংকটটা নেই। কেনার মতো পানি সেখানে না থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি ঠিকই পাওয়া গিয়েছিলো।
সাজেকে যাওয়াটা সবচে কঠিন। কঠিন বলতে সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় পরছে, কিন্তু যাইতে হয় খাগড়াছরি হয়ে। কোনও বিকল্প নাই। সেখানে দুইটা হ্যালিপ্যাড আছে। ইচ্ছা করলে যাইতে পারেন। ;) এছাড়া বাসে করে দিঘীনালা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দিঘীনালা থেকে সাজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাইতে হলে রেগুলার চান্দের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশ দেরি করে আসে। ফলে খাগড়াছরি থেকে রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সবচে দ্রুততর এবং নিরাপদ। তবে হ্যা বিকল্প আরও ব্যবস্থা আছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি। সিএনজি কখনোই কাসালং বাজার পাড় হয় না। কাসালং থেকে সাজেক প্রায় ১৮ কিলোমিটার বা তারও একটু বেশি হবে। ঐটুক রাস্তাই সবচে বেশি থ্রিলিং এবং উঁচু নিচু। তাই চান্দেরগাড়ি ইজ বেস্ট। চান্দের গাড়ি সাজেক পর্যন্ত প্রতিদিন যায় না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার তিন দিন সকালে যায়। এই তিনদিনে চান্দের গাড়িতে জনপ্রতি সাজেকের ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ২শ থেকে আড়াই শ। অন্যদিন চান্দের গাড়ি রিজার্ভ (নিয়ে যাবে, প্রয়োজনে রাতে থেকে সকালে নিয়ে আসবে) করতে খরচ পড়ে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা! ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাগড়াছরি যাওয়াই ভালো। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির সরাসরি একাধিক বাস (সেইন্ট মার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি) আছে। নয় ঘন্টা লাগবে মিনিমাম।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫


 
গত কয়েকদিন আগে কাজের ফাঁকে হঠাৎ ফ্রান্সের একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি সৌদি নারী চলচ্চিত্রকারের একটি সাক্ষাৎকার চোখে পড়লইন্টারভিউটি পড়ার পর জানা গেলো, তিনিই সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। এবং তার ছবি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক ও দুবাই চলচ্চিত্র উৎসবেও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ইসলামী রক্ষণশীল আইনে জীবন পরিচালিত একটি দেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মানে সত্যিই একটি বিরাট বিপ্লব। এই বিপ্লবে অনুপ্রেরণা দিতেই অনেকাংশে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত বা উন্নত হলেও সাংস্কৃতিক ভাবে বিশ্বে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারা জাতি বা দেশগুলোর চলচ্চিত্র অনেক বড় বড় উৎসব কমিটি একটি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এটাকে একদিক থেকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যদিক থেকে সংস্কৃতির উদার নৈতিকতার প্রমাণ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরস্কৃত বা আলোচিত চলচ্চিত্রগুলো সেইভাবেই আলোচনায় আসে, যেগুলো ইউরোপিয় দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ‘প্রেজেন্টেড প্রডাক্ট’টির ভাবনা বা রূপ মিলে থাকে। আর এই কথার প্রমাণ আমরা একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাই। আমার চারপাশে এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। তার ভেতরে আমি সবার আগে রাখবো ২০১০ এর অস্কার পুরস্কারকে। সে বছর ভারতীয় প্রেক্ষাপটের একটি গল্প নিয়ে হলিউড ভিত্তিক নির্মাতা ড্যানি বয়েল বানিয়েছিলো স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিটি। ছবির নামটি যদি আপনি বাংলা করেন, তাহলে দেখবেন সেখানে বস্তির একটি শিশুকে কুকুর হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তারা আদতে মানুষই নয়। আর এর মিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প যদি উৎকৃষ্ট রূপে ইউরোপিয়দের সামনে প্রেজেন্টেশন করা যায়, তবে তা যে লুফে নিবেই তার প্রমাণ তো আপনার হাতের কাছেই। তেমনি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও আমরা ব্যতিক্রম দেখি না। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ছবি বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে সেগুলো যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ঠ যুক্তিযুক্ত, তবুও সেগুলোতে বাংলাদেশকে ইউরোপিয়রা যেমন দেখতে চায় তেমনই দেখানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই প্রত্যাশা করবো এমন কোনও গল্পের ছবি ইউরোপিয়দের কাছ থেকে সেরার স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনুক, যে ছবিটি কিনা আমরা যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে পছন্দ করি সেভাবেই বা তেমন গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে।
এতক্ষণ যে কাসুন্দি ঘাটলাম এর একটা বড় কারণ হলো আমাদেরো এক ধরণের ইউরোপিয় নাক সিটকানো ভাবটা রয়েছে। আমরাও অনেক সময় তাদের (ইউরোপিয়) চোখে দেখতে চাই বা দেখে থাকি। আর তাই আমরা প্রায়ই আমাদের কর্মকে সবার আগে তুলনা করি তাদেরই সাথে। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় অনেক বিভ্রান্তির তৈরি হয়। এতে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।  এই কথাগুলো বলার প্রধান কারণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন’ নিয়ে গল্প নকলের অভিযোগের প্রেক্ষাপটকে নিয়ে। আমি মূলত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র টেলিভিশন আর তুর্কী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইলমাজ ইর্দোগান এর ভিজনটেলে ’র তূলনামূলক আলোচনার পথ তৈরি করতে চাই। তাই শুরুতেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে অযথা কথাগুলো বলে নিলাম।
‘টেলিভিশন’ ছবির পোস্টার
বাংলা টেলিভিশন সিনেমার গল্প বর্তমান সমসাময়িক কালের এক জন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের। যে দ্বীপের মানুষ ঠিক আধুনিক কালের হয়েও অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোয়া পায় না।  আর ভিজনটেলে’র গল্পের প্রেক্ষাপট ৭০ এর দশকের তুরস্কের এক অতিদূর্গম অঞ্চলের। কিন্তু তা নির্মাণ হয়েছে ২০০১ সালে। বাংলাদেশে নতুন কোনও কিছু হলেই তার জেনে না জেনে দুইটা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়। আর বিপক্ষ দল সব সময়ই বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে মাঝখানে থাকা মানুষদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে পক্ষ দল নিজেদের ঢোল এত জোড়ে বাজাতে যায়, যে তা হয় ফেটে যায় নয়তো ফাটার উপক্রম হয়। এই অবস্থায় মাঝখানে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে থাকতে হলেও প্রয়োজন পড়ে কিছুটা আস্থা ও যুক্তির। যেখান থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়, তেমন স্থান ছাড়া আর এর বিকল্প থাকে না।
টেলিভিশন ছবি মুক্তির পরপরই যে অভিযোগটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়, তা হলো এটি তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো। কিন্তু আদতে তা তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো হয় নি। টেলিভিশন ছবির গল্প সম্পূর্ণ মৌলিক। বলতে গেলে পরিচালকের বাবার ও তার নিজের জীবনের সাথে কিছুটা আত্ম জৈবনিকও । অপরদিকে তুর্কী ছবির গল্প তেমন আত্ম জৈবনিক কি না তা জানা যায় নি। তবে দুইটা ছবিতেই কম বেশী হাস্যরস, ট্রাজেডি, প্রেম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্লাইমেক্স সবই রয়েছে। তবে প্রত্যেকটাই নিজস্ব ঢংয়ে। এক্ষেত্রে ভিজনটেলেসাথে টেলিভিশনএর ফর্মুলাগত মিল পাওয়া যায়। যদিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক ছবিই প্রায় কাছাকাছি ফর্মূলা মেইনটেইন করে।
তুরস্ক অর্ধেক এশিয় আর অর্ধেক ইউরোপিয়। তবে তার সংস্কৃতি ও জীবন ধারার সাথে ইউরোপের জীবনের মিল রয়েছে বেশী। অর্থনৈতিকভাবে এশিয় সাধারণ দেশগুলোর চেয়ে একটু এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় তারা কর্মে ও জাতেও বেশীরভাগ ইউরোপিয়ই। তার প্রমাণ তাদের সিনেমাতেও পাওয়া যায়। এই ভিজনটেলের নির্মাণশৈলি ও গল্প বলার ধরণ (স্টোরি টেলিং) কিন্তু বেশ আরামদায়ক। টেলিভিশন  ছবিতে গল্প বলাটা পুরোপুরি আরামদায়ক না হলেও পিড়াদায়ক নয়। তুর্কী ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু পুরস্কার পেলেও খুব উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও পুরস্কার তার ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু পুরো ছবিটা চমৎকার উপভোগ্য বলেই কিনা, ছবিটি যথেষ্ঠ ব্যবসাসফল হয়েছিলো দেশে ও দেশের বাইরেও। এর অনুপ্রেরণায় পরিচালক এই ছবির সিক্যুয়েল করেছিলেন। 
টার্কিস ‘ভিজনটেলে’ ছবির পোস্টার
ভিজনটেলে দেখার সময় মনে হচ্ছিল ইউরোপেরই কোনো পরিচালক ইচ্ছাপূর্বক একটু পুরনো আমেজে পুরনো একটি গল্প বলছেন। আর তাই কিছু কিছু অনুভূতির ব্যবহার তিনি করেছেন দুর্দান্ত। ঠিক একই ধরণের হিসেব খাটানোর চেষ্টা আমরা দেখি টেলিভিশন  এ। এ ছবিতে কেবল প্রেমিকার অপমানের পরই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে উঠা যুবকটি পিতার আশ্রয়েই প্রতিপক্ষ হয়ে গেলো। এটা সম্ভব মনে হলেও মেনে নিতে কষ্ট হয় এই কারণে যে, যে সন্তান পিতার অবাধ্য হয়ে যায়, পিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে সেই সন্তানকে বর্জন করে এর ঠিক উল্টো রূপও রয়েছে। যার ফলে দেখা যায় পিতা ও সন্তানের যে ট্রাডিশনাল বৈপরীত্য অনেক সময় প্রগতিশীল পিতা মেনে নেয়। কিন্তু টেলিভিশন র পিতা কিন্তু সেই প্রগতিশীল ব্যক্তি নয়। ফলে এই বিরোধটা টিকে থাকার কথা থাকলেও উভয়েই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এখানে সরে এসেছে। যার দরুন, পিতা পুত্রের এই আঁচরণকে কিছুটা গরমিল মনে হয়েছে।
ভিজনটেলে মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির সুবিধা অনেক সময় হৃদয়ের বিপরীতে ধাবিত করতে পারে। একই সাথে যদি সেই প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা না জানা থাকে তবে তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ভাবনাটা দারুণ ভাবে মিলে। তার প্রমাণ, স্বাধীনভাবে কথা বলার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত ইন্টারনেট ও ব্লগে প্রকাশিত কথা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করা।
বিপরীতে টেলিভিশন ছবির মূল প্রতিপাদ্য আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির কাছে পরাজিত গোড়ামি বা সংস্কার ভাবনা। যা এক দিক দিয়ে প্রযুক্তির বিশাল গ্রহণযোগ্যতাকে উপস্থাপন করে, পাশাপাশি ধর্মের রক্ষণশীল জায়গা থেকে সড়ে আসার যে আহ্বান তাও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এইসব বিষয় তুচ্ছ হয়ে যায় ছবির বিপনন পদ্ধতি বা চিন্তার কারণে। শুরুতে যে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম, যে ইউরোপিয়রা কেন তৃতীয় বিশ্বসহ শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে তাদের চেয়ে একটু কম পারঙ্গমদের কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। সে প্রসঙ্গ চলে আসে কারণ টেলিভিশন ছবির পরিচালকের বক্তব্য। ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের দুই একজন পরিচালক ও তাদের ছবির কথা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের কিছু পরিচালক পশ্চিমাদের পছন্দের ছবি বানায়। কিন্তু তাদের সেই ছবি পশ্চিমের দেশগুলোতে আর বিক্রি হচ্ছে না। যার কারণে আর পশ্চিমাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে ছবি বানালে চলবে না।  নিঃসন্দেহে এ আশার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেকর্ড বলে টেলিভিশন ছবিতেও কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করি। নয়তো টেলিভিশন শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় কারণে একটা গ্রামের মানুষদের নিষিদ্ধ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আবার সেই টেলিভিশনের কাছেই পরাজয় স্বীকার করতে হয় না।
সব কিছুর পরেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকির টেলিভিশন আর ভিজনটেলে পৃথক দুটো ছবি। পৃথক অনুভূতির গল্প বলে বিধায়ই কেবল ছবিগুলো পৃথক নয়, বরং আমি ভিটনটেলে কে এগিয়ে রাখবো  তার নির্মাণশৈলি বা তার গল্প বলার ধরণের কারণেই। সর্বোপরি দুটোই টেলিভিশন সংক্রান্ত সিনেমা।  
 (গদ্যটি লেখা হয়েছিলো ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারিতে। ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়াটাই নিরাপদ হবে।)

আমাদের ও তাদের ‘টেলিভিশন’

at বুধবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫  |  1 comment


 
গত কয়েকদিন আগে কাজের ফাঁকে হঠাৎ ফ্রান্সের একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি সৌদি নারী চলচ্চিত্রকারের একটি সাক্ষাৎকার চোখে পড়লইন্টারভিউটি পড়ার পর জানা গেলো, তিনিই সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা। এবং তার ছবি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে একাধিক ও দুবাই চলচ্চিত্র উৎসবেও একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, ইসলামী রক্ষণশীল আইনে জীবন পরিচালিত একটি দেশে নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা মানে সত্যিই একটি বিরাট বিপ্লব। এই বিপ্লবে অনুপ্রেরণা দিতেই অনেকাংশে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত বা উন্নত হলেও সাংস্কৃতিক ভাবে বিশ্বে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারা জাতি বা দেশগুলোর চলচ্চিত্র অনেক বড় বড় উৎসব কমিটি একটি বিশেষ দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এটাকে একদিক থেকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যদিক থেকে সংস্কৃতির উদার নৈতিকতার প্রমাণ হিসেবেই দেখা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরস্কৃত বা আলোচিত চলচ্চিত্রগুলো সেইভাবেই আলোচনায় আসে, যেগুলো ইউরোপিয় দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে ‘প্রেজেন্টেড প্রডাক্ট’টির ভাবনা বা রূপ মিলে থাকে। আর এই কথার প্রমাণ আমরা একটু চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাই। আমার চারপাশে এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। তার ভেতরে আমি সবার আগে রাখবো ২০১০ এর অস্কার পুরস্কারকে। সে বছর ভারতীয় প্রেক্ষাপটের একটি গল্প নিয়ে হলিউড ভিত্তিক নির্মাতা ড্যানি বয়েল বানিয়েছিলো স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবিটি। ছবির নামটি যদি আপনি বাংলা করেন, তাহলে দেখবেন সেখানে বস্তির একটি শিশুকে কুকুর হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। তারা আদতে মানুষই নয়। আর এর মিলিয়নিয়ার হওয়ার গল্প যদি উৎকৃষ্ট রূপে ইউরোপিয়দের সামনে প্রেজেন্টেশন করা যায়, তবে তা যে লুফে নিবেই তার প্রমাণ তো আপনার হাতের কাছেই। তেমনি বাংলাদেশের দিকে তাকালেও আমরা ব্যতিক্রম দেখি না। বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ছবি বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে সেগুলো যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ঠ যুক্তিযুক্ত, তবুও সেগুলোতে বাংলাদেশকে ইউরোপিয়রা যেমন দেখতে চায় তেমনই দেখানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমি সব সময়ই প্রত্যাশা করবো এমন কোনও গল্পের ছবি ইউরোপিয়দের কাছ থেকে সেরার স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনুক, যে ছবিটি কিনা আমরা যেভাবে বাংলাদেশকে দেখতে পছন্দ করি সেভাবেই বা তেমন গল্প নিয়েই নির্মিত হয়েছে।
এতক্ষণ যে কাসুন্দি ঘাটলাম এর একটা বড় কারণ হলো আমাদেরো এক ধরণের ইউরোপিয় নাক সিটকানো ভাবটা রয়েছে। আমরাও অনেক সময় তাদের (ইউরোপিয়) চোখে দেখতে চাই বা দেখে থাকি। আর তাই আমরা প্রায়ই আমাদের কর্মকে সবার আগে তুলনা করি তাদেরই সাথে। ফলশ্রুতিতে অনেক সময় অনেক বিভ্রান্তির তৈরি হয়। এতে শেষ পর্যন্ত আমাদেরই ক্ষতি হয়। যা কখনোই কাম্য নয়।  এই কথাগুলো বলার প্রধান কারণ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘টেলিভিশন’ নিয়ে গল্প নকলের অভিযোগের প্রেক্ষাপটকে নিয়ে। আমি মূলত মোস্তফা সরয়ার ফারুকী’র টেলিভিশন আর তুর্কী চলচ্চিত্র নির্মাতা ইলমাজ ইর্দোগান এর ভিজনটেলে ’র তূলনামূলক আলোচনার পথ তৈরি করতে চাই। তাই শুরুতেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে অযথা কথাগুলো বলে নিলাম।
‘টেলিভিশন’ ছবির পোস্টার
বাংলা টেলিভিশন সিনেমার গল্প বর্তমান সমসাময়িক কালের এক জন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের। যে দ্বীপের মানুষ ঠিক আধুনিক কালের হয়েও অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোয়া পায় না।  আর ভিজনটেলে’র গল্পের প্রেক্ষাপট ৭০ এর দশকের তুরস্কের এক অতিদূর্গম অঞ্চলের। কিন্তু তা নির্মাণ হয়েছে ২০০১ সালে। বাংলাদেশে নতুন কোনও কিছু হলেই তার জেনে না জেনে দুইটা পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়ে যায়। আর বিপক্ষ দল সব সময়ই বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে মাঝখানে থাকা মানুষদের বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে। অপরদিকে পক্ষ দল নিজেদের ঢোল এত জোড়ে বাজাতে যায়, যে তা হয় ফেটে যায় নয়তো ফাটার উপক্রম হয়। এই অবস্থায় মাঝখানে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে থাকতে হলেও প্রয়োজন পড়ে কিছুটা আস্থা ও যুক্তির। যেখান থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়, তেমন স্থান ছাড়া আর এর বিকল্প থাকে না।
টেলিভিশন ছবি মুক্তির পরপরই যে অভিযোগটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়, তা হলো এটি তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো। কিন্তু আদতে তা তুর্কী সিনেমার গল্প নকল করে বানানো হয় নি। টেলিভিশন ছবির গল্প সম্পূর্ণ মৌলিক। বলতে গেলে পরিচালকের বাবার ও তার নিজের জীবনের সাথে কিছুটা আত্ম জৈবনিকও । অপরদিকে তুর্কী ছবির গল্প তেমন আত্ম জৈবনিক কি না তা জানা যায় নি। তবে দুইটা ছবিতেই কম বেশী হাস্যরস, ট্রাজেডি, প্রেম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্লাইমেক্স সবই রয়েছে। তবে প্রত্যেকটাই নিজস্ব ঢংয়ে। এক্ষেত্রে ভিজনটেলেসাথে টেলিভিশনএর ফর্মুলাগত মিল পাওয়া যায়। যদিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ সংখ্যক ছবিই প্রায় কাছাকাছি ফর্মূলা মেইনটেইন করে।
তুরস্ক অর্ধেক এশিয় আর অর্ধেক ইউরোপিয়। তবে তার সংস্কৃতি ও জীবন ধারার সাথে ইউরোপের জীবনের মিল রয়েছে বেশী। অর্থনৈতিকভাবে এশিয় সাধারণ দেশগুলোর চেয়ে একটু এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ইউরোপের সাথে সম্পর্ক ভালো থাকায় তারা কর্মে ও জাতেও বেশীরভাগ ইউরোপিয়ই। তার প্রমাণ তাদের সিনেমাতেও পাওয়া যায়। এই ভিজনটেলের নির্মাণশৈলি ও গল্প বলার ধরণ (স্টোরি টেলিং) কিন্তু বেশ আরামদায়ক। টেলিভিশন  ছবিতে গল্প বলাটা পুরোপুরি আরামদায়ক না হলেও পিড়াদায়ক নয়। তুর্কী ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু পুরস্কার পেলেও খুব উল্লেখযোগ্য তেমন কোনও পুরস্কার তার ভাগ্যে জোটেনি। কিন্তু পুরো ছবিটা চমৎকার উপভোগ্য বলেই কিনা, ছবিটি যথেষ্ঠ ব্যবসাসফল হয়েছিলো দেশে ও দেশের বাইরেও। এর অনুপ্রেরণায় পরিচালক এই ছবির সিক্যুয়েল করেছিলেন। 
টার্কিস ‘ভিজনটেলে’ ছবির পোস্টার
ভিজনটেলে দেখার সময় মনে হচ্ছিল ইউরোপেরই কোনো পরিচালক ইচ্ছাপূর্বক একটু পুরনো আমেজে পুরনো একটি গল্প বলছেন। আর তাই কিছু কিছু অনুভূতির ব্যবহার তিনি করেছেন দুর্দান্ত। ঠিক একই ধরণের হিসেব খাটানোর চেষ্টা আমরা দেখি টেলিভিশন  এ। এ ছবিতে কেবল প্রেমিকার অপমানের পরই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে উঠা যুবকটি পিতার আশ্রয়েই প্রতিপক্ষ হয়ে গেলো। এটা সম্ভব মনে হলেও মেনে নিতে কষ্ট হয় এই কারণে যে, যে সন্তান পিতার অবাধ্য হয়ে যায়, পিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশে সেই সন্তানকে বর্জন করে এর ঠিক উল্টো রূপও রয়েছে। যার ফলে দেখা যায় পিতা ও সন্তানের যে ট্রাডিশনাল বৈপরীত্য অনেক সময় প্রগতিশীল পিতা মেনে নেয়। কিন্তু টেলিভিশন র পিতা কিন্তু সেই প্রগতিশীল ব্যক্তি নয়। ফলে এই বিরোধটা টিকে থাকার কথা থাকলেও উভয়েই স্ব স্ব অবস্থান থেকে এখানে সরে এসেছে। যার দরুন, পিতা পুত্রের এই আঁচরণকে কিছুটা গরমিল মনে হয়েছে।
ভিজনটেলে মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির সুবিধা অনেক সময় হৃদয়ের বিপরীতে ধাবিত করতে পারে। একই সাথে যদি সেই প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা না জানা থাকে তবে তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ভাবনাটা দারুণ ভাবে মিলে। তার প্রমাণ, স্বাধীনভাবে কথা বলার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত ইন্টারনেট ও ব্লগে প্রকাশিত কথা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করা।
বিপরীতে টেলিভিশন ছবির মূল প্রতিপাদ্য আমরা পেয়েছি প্রযুক্তির কাছে পরাজিত গোড়ামি বা সংস্কার ভাবনা। যা এক দিক দিয়ে প্রযুক্তির বিশাল গ্রহণযোগ্যতাকে উপস্থাপন করে, পাশাপাশি ধর্মের রক্ষণশীল জায়গা থেকে সড়ে আসার যে আহ্বান তাও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এইসব বিষয় তুচ্ছ হয়ে যায় ছবির বিপনন পদ্ধতি বা চিন্তার কারণে। শুরুতে যে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম, যে ইউরোপিয়রা কেন তৃতীয় বিশ্বসহ শিল্প সাহিত্যের দিক থেকে তাদের চেয়ে একটু কম পারঙ্গমদের কিভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। সে প্রসঙ্গ চলে আসে কারণ টেলিভিশন ছবির পরিচালকের বক্তব্য। ছবির পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের দুই একজন পরিচালক ও তাদের ছবির কথা। নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের কিছু পরিচালক পশ্চিমাদের পছন্দের ছবি বানায়। কিন্তু তাদের সেই ছবি পশ্চিমের দেশগুলোতে আর বিক্রি হচ্ছে না। যার কারণে আর পশ্চিমাদের পছন্দের কথা চিন্তা করে ছবি বানালে চলবে না।  নিঃসন্দেহে এ আশার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রেকর্ড বলে টেলিভিশন ছবিতেও কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করি। নয়তো টেলিভিশন শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় কারণে একটা গ্রামের মানুষদের নিষিদ্ধ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আবার সেই টেলিভিশনের কাছেই পরাজয় স্বীকার করতে হয় না।
সব কিছুর পরেও মোস্তফা সরয়ার ফারুকির টেলিভিশন আর ভিজনটেলে পৃথক দুটো ছবি। পৃথক অনুভূতির গল্প বলে বিধায়ই কেবল ছবিগুলো পৃথক নয়, বরং আমি ভিটনটেলে কে এগিয়ে রাখবো  তার নির্মাণশৈলি বা তার গল্প বলার ধরণের কারণেই। সর্বোপরি দুটোই টেলিভিশন সংক্রান্ত সিনেমা।  
 (গদ্যটি লেখা হয়েছিলো ২০১৪ এর ফেব্রুয়ারিতে। ঐ সময়ের প্রেক্ষাপটে পড়াটাই নিরাপদ হবে।)

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ১৩ জুন, ২০১৫

বন্ধুর খোলা জানালায় কতকাল আর দেখবো আকাশ?
প্রশ্ন করি নিজের কাছে। উত্তর মেলে না। দেখি গোধূলির লাল একটা আকাশের বাতাস আমার ঘরের চারপাশ দিয়া ঘুইরা যায়। ধরা দেয় না। কী করে যে ঐ সোনালি বাতাসটারে কুরিয়ার করি, পাই না তারও দিশা। ঝিম ধরানো একটা গানের কথা বারবার কানে কানে এসে বলে যায় বিকেল বেলা যে লাল শাড়িটা পড়ছো তার গায়ে লেপ্টে আছে সমস্ত প্রেম আর কামের বাতাস। তবুও ভুলপথে কেন আমার জানালার দিকে ফিরে ফিরে আসে একটা লু হাওয়া? পাখিদের কাছে এর চেয়েও বড় কোনও অতীতের কথা লিখে রেখে আমিতো ভুল পথের জাদুকর, অন্ধকারেই আঁকি বাতাসের নীরবতার ছবি। জানি এইসব মায়া বিভ্রাট রাজ্যের রানী তুমি নও, অতিথি মাত্র।
দেয়ালে দেয়ালে লিখি প্রেমের চিঠি, 
তোমার আমার সন্তানের নাম তাই অর্থনীতি
হাওয়ার কানে কানে গেরো দিচ্ছে আশ্চর্য সময়, প্রিয় আহ্বানের নাম ভুলে গিয়ে মনে রাখি অর্থনীতির সূত্র আর সূত্রের ব্যাখ্যা। অথচ আমার জানালাভর্তি ছিলো নিঝুম বনের ঘ্রাণ। প্রতিদিন যে ঘামের গন্ধে জেগে ওঠো, আয়নায়ও কি তোমারই ছায়া নাকি অন্য কোনও কুমির দখলে আছে সুদৃশ্য কাচারিঘর। জানালা-দরজার কথা ভুলে যাও। তাকাও নিজেরই দেয়ালে দেখো সেখানের আয়নায় আমার মুখ দেখতে পাও কি না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি শিউলির ঘ্রাণ পাও, বুঝবে তোমার শীতল রক্তে এখন আমার উত্তেজনার চোরা স্রোত।
গোপন ঘ্রাণের শৈশব তোমার কাছে ছুটি চেয়েছে কানামাছি খেলা
আমি আর বাবু একটা বৃষ্টিনগর বানিয়েছি। মন চাইলেই আমরা বৃষ্টি নামাই। প্রথম যেদিন অন্তর্গত সেই নগর আবিষ্কার করলাম, আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে গেলো শীতসন্ধ্যার পরিযায়ী বৃষ্টি। চুপে চুপে কাশের বনে ভিজে আমরা একটি ঘুমের স্বপ্ন দেখছিলাম। নিশ্চিন্ত ঘুম। ভেসে আসছিলো একটা বর্ণনাময় জীবনের ছবি, যে জীবনের সাতে ও পাঁচে জড়িয়ে থাকবে অজস্র মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প। আমাদের মুখোমুখি ছিলো একটা হিংস্র জানোয়ার। সেও ঘুমিয়ে ছিলো রাতদিন হিশেব না করে, জেগে ছিলো তার পশুত্ব।
আমাদের দেয়ালে লেখা প্রাচীন অক্ষরের পাণ্ডুলিপি
আমাদের চেতনার ঘুড়ি দেয়ালে দেয়ালে উড়ে
শেয়ারবাজারে ধস, সর্বস্বান্ত হয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আত্মহত্যা; ভাইয়ের লাশের উপর দাঁড়িয়ে আমরা গড়ছি দালান। বন্ধু তুমি কি ভুলে গেছো বিশ্বজিতের রক্তের রঙ? আমাদের দেয়ালে তো কেবল খবরই থাকে না, থাকে কিছুটা অনুভূতিও। অথচ অনুভূতির রঙ কেমন তা কি আমরা জানি? আমাদের অনুভূতির সঙ্গে কি তাজরিনে পুড়ে যাওয়া মানুষের আত্মার ভাষা মিলে? মিলে কি রানাপ্লাজায় অঙ্গ হারানো মানুষের অনুভূতি? আমাদের অনুভূতির সঙ্গে কি মিলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিবিদদের অনুভূতি? এই জন্যেই কি কাদের মোল্লার রায় মেনে নিতে পারি না। পারি না আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের কান্না মেনে নিতে। রাষ্ট্রযন্ত্র কী করে পারে?
রাষ্ট্রযন্ত্র একটা ভূতে খাওয়া বাড়ি
তার সঙ্গে কথা নেই আর, জন্মের আড়ি
রাষ্ট্রের অসুখ হলে তুমি আমি এক সুরে কাঁদি। জানি তার দুঃখের ভাষা। প্রতিদিন যমের কাছ থেকে ফিরে আসুক একগুচ্ছ শিউলির তাজা ঘ্রাণ নিয়ে– এই স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যাও তুমি। অথচ তোমার সকাল জুড়ে মানুষের মাংস পোড়া ঘ্রাণ,আর পোড়া রক্তের সুস্বাদু জেলি। আমি কতকাল ঘুমাতে পারি না। রাত ভর জেগে থাকি,অপেক্ষা করি গভীর ঘুমের। প্রিয় ঘুমের রাত্রি তুমি কবে আসবে?

প্রিয় ঘুমের রাত্রি তুমি কবে আসবে

at শনিবার, জুন ১৩, ২০১৫  |  No comments

বন্ধুর খোলা জানালায় কতকাল আর দেখবো আকাশ?
প্রশ্ন করি নিজের কাছে। উত্তর মেলে না। দেখি গোধূলির লাল একটা আকাশের বাতাস আমার ঘরের চারপাশ দিয়া ঘুইরা যায়। ধরা দেয় না। কী করে যে ঐ সোনালি বাতাসটারে কুরিয়ার করি, পাই না তারও দিশা। ঝিম ধরানো একটা গানের কথা বারবার কানে কানে এসে বলে যায় বিকেল বেলা যে লাল শাড়িটা পড়ছো তার গায়ে লেপ্টে আছে সমস্ত প্রেম আর কামের বাতাস। তবুও ভুলপথে কেন আমার জানালার দিকে ফিরে ফিরে আসে একটা লু হাওয়া? পাখিদের কাছে এর চেয়েও বড় কোনও অতীতের কথা লিখে রেখে আমিতো ভুল পথের জাদুকর, অন্ধকারেই আঁকি বাতাসের নীরবতার ছবি। জানি এইসব মায়া বিভ্রাট রাজ্যের রানী তুমি নও, অতিথি মাত্র।
দেয়ালে দেয়ালে লিখি প্রেমের চিঠি, 
তোমার আমার সন্তানের নাম তাই অর্থনীতি
হাওয়ার কানে কানে গেরো দিচ্ছে আশ্চর্য সময়, প্রিয় আহ্বানের নাম ভুলে গিয়ে মনে রাখি অর্থনীতির সূত্র আর সূত্রের ব্যাখ্যা। অথচ আমার জানালাভর্তি ছিলো নিঝুম বনের ঘ্রাণ। প্রতিদিন যে ঘামের গন্ধে জেগে ওঠো, আয়নায়ও কি তোমারই ছায়া নাকি অন্য কোনও কুমির দখলে আছে সুদৃশ্য কাচারিঘর। জানালা-দরজার কথা ভুলে যাও। তাকাও নিজেরই দেয়ালে দেখো সেখানের আয়নায় আমার মুখ দেখতে পাও কি না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি শিউলির ঘ্রাণ পাও, বুঝবে তোমার শীতল রক্তে এখন আমার উত্তেজনার চোরা স্রোত।
গোপন ঘ্রাণের শৈশব তোমার কাছে ছুটি চেয়েছে কানামাছি খেলা
আমি আর বাবু একটা বৃষ্টিনগর বানিয়েছি। মন চাইলেই আমরা বৃষ্টি নামাই। প্রথম যেদিন অন্তর্গত সেই নগর আবিষ্কার করলাম, আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে গেলো শীতসন্ধ্যার পরিযায়ী বৃষ্টি। চুপে চুপে কাশের বনে ভিজে আমরা একটি ঘুমের স্বপ্ন দেখছিলাম। নিশ্চিন্ত ঘুম। ভেসে আসছিলো একটা বর্ণনাময় জীবনের ছবি, যে জীবনের সাতে ও পাঁচে জড়িয়ে থাকবে অজস্র মানুষের সুখ-দুঃখের গল্প। আমাদের মুখোমুখি ছিলো একটা হিংস্র জানোয়ার। সেও ঘুমিয়ে ছিলো রাতদিন হিশেব না করে, জেগে ছিলো তার পশুত্ব।
আমাদের দেয়ালে লেখা প্রাচীন অক্ষরের পাণ্ডুলিপি
আমাদের চেতনার ঘুড়ি দেয়ালে দেয়ালে উড়ে
শেয়ারবাজারে ধস, সর্বস্বান্ত হয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির আত্মহত্যা; ভাইয়ের লাশের উপর দাঁড়িয়ে আমরা গড়ছি দালান। বন্ধু তুমি কি ভুলে গেছো বিশ্বজিতের রক্তের রঙ? আমাদের দেয়ালে তো কেবল খবরই থাকে না, থাকে কিছুটা অনুভূতিও। অথচ অনুভূতির রঙ কেমন তা কি আমরা জানি? আমাদের অনুভূতির সঙ্গে কি তাজরিনে পুড়ে যাওয়া মানুষের আত্মার ভাষা মিলে? মিলে কি রানাপ্লাজায় অঙ্গ হারানো মানুষের অনুভূতি? আমাদের অনুভূতির সঙ্গে কি মিলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিবিদদের অনুভূতি? এই জন্যেই কি কাদের মোল্লার রায় মেনে নিতে পারি না। পারি না আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের কান্না মেনে নিতে। রাষ্ট্রযন্ত্র কী করে পারে?
রাষ্ট্রযন্ত্র একটা ভূতে খাওয়া বাড়ি
তার সঙ্গে কথা নেই আর, জন্মের আড়ি
রাষ্ট্রের অসুখ হলে তুমি আমি এক সুরে কাঁদি। জানি তার দুঃখের ভাষা। প্রতিদিন যমের কাছ থেকে ফিরে আসুক একগুচ্ছ শিউলির তাজা ঘ্রাণ নিয়ে– এই স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যাও তুমি। অথচ তোমার সকাল জুড়ে মানুষের মাংস পোড়া ঘ্রাণ,আর পোড়া রক্তের সুস্বাদু জেলি। আমি কতকাল ঘুমাতে পারি না। রাত ভর জেগে থাকি,অপেক্ষা করি গভীর ঘুমের। প্রিয় ঘুমের রাত্রি তুমি কবে আসবে?

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম