মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বন্ধু জয় আমারে অপছন্দের খেলায় ডাইক্যা নিয়া বিপদে ফালাইয়া দিলো। আমি সাধারণত এইসব খেলায় খেলার মতো স্কিল রাখি না। কারণ আমি ভুলে যাই। ভুলে যেতে আমি খুব ওস্তাদ। তবে এত্তসব ভুলে যাওয়া মুখ,ঘটনা, ইতিহাস, কবিতা আর সিনেমার মাঝ দিয়েও কিছু সিনেমা আমার অনিচ্ছায়ও মনে থাইক্যা যায়। আজকে তারই কথা বলবো।



০১. পথের পাঁচালি, (১৯৫৫) অপুর সংসার (১৯৬০), পরিচালক- সত্যজিত রায়
বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পথের পাঁচালি উপন্যাস থার্ড ইয়ারে পাঠ্য ছিলোকিন্তু সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আমি বারবার চেষ্টার পরও এই উপন্যাস পড়ে শেষ করতে পারি নিএইটা আমারই অযোগ্যতাকিন্তু পথের পাঁচালি ছবি দেখতে গিয়া আমি অন্য কোথাও মনযোগ দিতে পারিনিএই সফলতা ছবির ও ছবির পরিচালকেরএকই রকম কথা আমাকে বলতে হয় অপুর সংসারের ক্ষেত্রেওআমার বরং পথের পাঁচালির চেয়ে অপুর সংসারকে বেশী আনন্দ ও বেদনাময় মুগ্ধতার আশ্রয় বলে মনে হয়
০২. দ্যা ব্রিজ অন দ্যা রিভার কাওয়াই (১৯৫৭), পরিচালক- ডেভিড লিন
তসলিমা নাসরিন তার বাবার কাছে এক খোলা চিঠিতে এই ছবির শেষ দৃশ্যে কাওয়াই নদীর ওপর যখন ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ছে আর যাত্রী বোঝাই ট্রেনটি যখন ঐ ভাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে তখনকার বর্ণনা দিয়েছিলেনবর্ণনা শুনে গায়ের লোম দাড়িয়ে পরেআমার মনে আছে, ঐ হোস্টেলে বিটিভিতে দেখা এই ছবি শেষে একা একা কেঁদে কেঁদে টিভিরুম ছেড়েছিলাম





০৩. দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি (১৯৫৮) পরিচালক- জন স্টারজিস, হেনরি কিং, ফ্রেড জিন্নেমান
একটা সময় ছিলো বিটিভিতে মুভি অব দ্যা উইক নামে প্রত্যেক শুক্রবার কি শনিবারে দুপুর বেলা বিদেশী ছবি দেখাইতোআমার শৈশবের স্মৃতির সাথে মিশে থাকা মুভি অব দ্যা উইকপড়াশোনার জন্য বাড়ি ছাড়ার পর হোস্টেলের টিভি রুমে একা একা বসে থেকে দেখা মুভিগুলোর একটাকারণ ঐ বয়সে ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সির মতো ছবি দেখার মানুষ সহপাঠিদের ছিলো না বলে একই দেখতে হইতোমাসকান্দা টিটিসি হোস্টেলের টিভি রুমে এমন আরে বেশ কিছু ছবি আমার ঐ হোস্টেলেই দেখাতাই এইসব ছবির সাথে ঐ হোস্টেলটাও উল্লেখযোগ্য;)

০৪. ছুটির ঘন্টা (১৯৮০), পরিচালক- আজিজুর রহমান
সিনেমার প্রসঙ্গ আসলে পৃথিবীর সব সিনেমার কথা আমি ভুলে যাইতে পারিকিন্তু ছুটির ঘন্টার কথা আমি কখনোই ভুলবো নাহইতে পারে এইটা আমার সিনেমা হলে গিয়া দেখা প্রথম ছবিতবে এই ছবির জন্যই হয়তো অদ্ভুতভাবে সিনেমার সাথে কিছুটা স্বপ্নের সম্পর্কও স্থাপিত হইছেতাই এই ছবির কথা আমি কখনোই ভুলবোনাভোলার মতো নয়

০৫. দহন (১৯৮৬), পরিচালক-শেখ নিয়ামত আলী
ব্যক্তিগত প্রেমের চেয়ে সমষ্টিগত প্রেমই গল্পে প্রাধান্য পেয়েছেগল্পে আরো অনেক গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে বাজেট, মানুষ, রাজনীতি, প্রেম নিয়ে ছবিতে পৃথব বক্তব্য আছেএইসব এখন আর আমাদের ছবিতে থাকে নাছবির সবচে উল্লেখযোগ্য যে বিষয় তা এই সমাজের পুরানো পদ্ধতি ভাঙার সংগ্রামের কথা খোঁজা হইছে মুক্তির পথফ্যাক্টস, ফিকশন, সিম্বল, হিওমার ব্যবহার করে কাহিনীতে সৃষ্টি করেছে একটি দলিলচিত্রআর ছবিতে আনোয়ার হোসেনের সিনেমাটোগ্রাফিও ছিলো দুর্দান্তমেকিংও ভালো লাগার মতো


০৬. ড্রিমস (১৯৯০), পরিচালক- আকিরা কুরোশাওয়া ও ইশিরো হোন্ডা
হ্যা, এই ছবি দেখার পর আমি তব্দা খাইয়া গেছিলামকুরোশাওয়ার কিছু ছবি দেখে তাকে বড় ডিরেক্টর হিসেবে স্বীকৃতি মানতে আমার দ্বিধা ছিলো নাকিন্তু ড্রিমস দেখার পর মনে হইছিলো কুরোশাওয়া পৃথিবীর সেরা পরিচালকদের একজনএমনকি সে কেবল ডিরেক্টরই না, সিনেমার কবিওবিশেষ করে ভ্যান ঘগ নিয়া পার্টটা দেখার পর আমি কোনও ভাষাই পাইতেছিলাম না, কি দেখলামঅদ্ভুতএই মুগ্ধতা প্রকাশ করার আমি কোনও যৌক্তিক ভাষা পাই নাই 


০৭. জুড (১৯৯৬), পরিচালক- মাইকেল উইন্টারবটম
থমাস হার্ডির উপন্যাস জুড দ্যা অবসকিউর অবলম্বনে মাইকেল উইন্টারবটমের সিনেমা জুডপ্রিয় নায়িকা কেট উইনসেøট এর ছবি খুঁজতে গিয়া এই ছবি আমার হাতে পড়ছিলোছবির শুরুটা দেখলে যে কোনও সিনেমা প্রিয় ব্যক্তি মুগ্ধ হবেএকদম কবিতার মতোসিনেমার পর্দাজুড়ে একটা বিষাদ মাখা আহব নিয়ে শুরু হয় যেমন, তেমন শেষও হয় একটা বিষাদ ছুঁয়ে দিয়েসর্বোপরি সিনেমার নায়ক জুড আমার প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠছিলো ছবি দেখার পরতার চরিত্রের বেখেয়াল আমার ভালো লাগেতাই তাকে ভালোবাসি

০৮. চরাচর (১৯৯৩), পরিচালক- বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত
মাথার ভেতর পাখিগাছ নিয়ে ঘুমায়েছে নেতাই (নিতাই)- এই এক সংলাপ আমাকে এলোমেলো করে দিছে বুদ্ধদেব এর এই ছবি দেখার পরবুদ্ধদেব এর ছবি আদতে ভিস্যুয়াল কবিতা তাই কবিতা নিয়া বেশী কিছু বলা উচিত হবে নাবলতে হয়, বুদ্ধদেব এর ছবি না দেখলে বাংলা সিনেমা দেখাই অসম্পূর্ণ থাকবে আপনার

০৯. কালার অব প্যারাডাইস (১৯৯৯), পরিচালক- মাজিদ মাজিদী
একটা অন্ধ শিশুর পৃথিবী কতটুকুই বা রঙিন হতে পারে বা তার জগৎ কতটুকু বড় এই প্রশ্ন অবান্তরকিন্তু আমার কথা সম্পূর্ণই ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে মাজিদ মাজিদীর এই ছবিযারা দেখেছে তারা কেউই এই কথা অস্বীকার করতে পারবে না বলেই আমার মনে হয়এই ছবি ইরানের সিনেমায়ই নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রেরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ততাই ছবি প্রসঙ্গে আর কিছু না বললেও চলে

১০. নো ম্যানস ল্যান্ড (২০০১), পরিচালক- ডেনিস টানোভিচ
সাবেক যোগেস্লাভিয়ার ও বর্তমান বসনিয়ান পরিচালক ডেনিস টানোভিচ যুদ্ধ নিয়ে দুর্ধর্ষ যে ছবিটা বানাইছে তার নাম নো ম্যানস ল্যান্ডনো ম্যানস ল্যান্ড শব্দটা শুনলেই যুদ্ধের যে প্রসঙ্গটা আসে এইটা এমনই প্রসঙ্গের ছবিআর দুই দেশের শত্রুপক্ষের দুইজন এই নো ম্যানস ল্যান্ডে এসে নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বন্ধু হয়ে যাওয়ার গল্পই এই ছবিকে উপভোগ্য করেছেঅথচ যুদ্ধই ছবির প্রধান বিষয়বলতে গেলে আধুনিক সময়ের বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এক সর্বোচ্চ সিনেমাটিক দলিল নো ম্যানস ল্যান্ড

১১. মাটির ময়না (২০০২), পরিচালক- তারেক মাসুদ
আমি বাংলা ছবি দেখতে সবচে বেশী ভালোবাসিআর বাংলা ছবি যদি তুলনামূলক একটু ভালো হয়, এতেই মুগ্ধ হয়ে যাই আমিএই ছবি একটু ভালো ছবি না, এই কথা আর আমাকে বলার প্রয়োজন নাইতবে হ্যা, দীর্ঘ সময় (১৯৯৮ থেকে ২০০২) সিনেমা হলে গিয়া এলোমেলো বাংলা সিনেমা দেখতে দেখতে যখন বিরক্তির মাত্রা ছাড়িয়ে যাইতেছিলো তখনই মাটির ময়না দেখার সুযোগ আসেআর দেখার পর মনে ১৯৯৮ এ দেখা রিভার কাওয়াই ও ওল্ড ম্যান এন্ড সি দেখার পর মনে হইছিলো আবার সিনেমার আশ্চর্য জগতের কাছাকাছি ফিরতে পারছিএইটা বিরাট পাওয়া ছিলো আমার কাছে

১২. সিটি অব গড (২০০২), ফার্নান্দো মিরাল্যাস ও কাতিয়া ল্যুনড
বিশ্ব সিনেমায় ব্রাজিলের সিনেমার আলাদা ইতিহাস তৈরি করছে সিটি অব গডনতুন সিনেমা দেখবো আর সিটি অব গড দেখবো না এমন বোকা হওয়ার যোগ্যতা আমার নাই ফুটবলের দেশ বলে পরিচিত ব্রাজিলের যে অন্য রূপ তা আমাদের কাছে তো এই সিনেমাই চিনাইয়া দিছেমজার বিষয় এই সিনেমা কিন্তু সত্য ঘটনা অবলম্বনেই বানানোতাই শুধুমাত্র একটি সিনেমা না সিটি অব গডএই ছবির পর থেকে ফার্নান্দো মিরাল্যাস প্রিয় পরিচালকদেরও একজন

১৩. স্প্রিং সামার ফল উইন্টার এন্ড স্প্রিং (২০০৩), পরিচালক- কিম কি দুক
কোনও কিছুই যে বাস্তবতার ঊর্ধ্বে না, সেটা ধর্মই হোক আর প্রেম অথবা কমিটমেন্টই হোক তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কিম কি দুক এর এই অসামান্য ছবিএক ছবি দেখার পর কিমের বাকি সব ছবি দেখার জন্য কেবল অপেক্ষাই করি নাইপাওয়া মাত্রই হুমড়ি খেয়ে দেখছিতার জন্য অনন্ত-রে একটা ধন্যবাদ দেয়াই উচিতসে যদি বাসায় এই ডিভিডিটা না রেখে যেতো তাহলে হয়তো কিম কে আবিষ্কার করতে আরোও সময় লাগতো

১৪. টার্টলেস ক্যান ফ্লাই (২০০৪), পরিচালক- বাগমান গোবাদি
আবারো যুদ্ধ প্রসঙ্গএবারো মানবিকতবে এবার যুদ্ধে শিশুদের অবস্থান আর তাদের সংগ্রামের গল্প এই গোবাদির এই ছবিদেখার আগে ভাবিনি এতটা ভালো লাগবেতবে দেখার পর মুগ্ধ হয়েছিলামকালে কালে পৃথিবীর সব যুদ্ধে শিশুরাই যে সবচে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা আর বলতে হয় নাতবে শিশুদেরও জীবনেও যে এঁকে দেয়া হয় আর এই যন্ত্রণা যে তারা বয়ে বেড়ায় বাকি জীবন তা নিঃসন্দেহে বেদনার

১৫. বর্ন ইন ব্রোথেল : ক্যালকাট্টাস রেড লাইট কিডস (২০০৪), পরিচালক- জানা ব্রিসকি ও রস কৌফমান
বলা হয় ভারত-বাংলাদেশসহ সাউথ এশিয়া ডকুমেন্টারির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট স্থানতাই এখানেই নির্মিত এই সিনেমাকলকাতার পতিতালয়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিশুদের নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারিডকুমেন্টারি শাখায় অস্কার পাইছিলোআর কোনও কিছু বলার নাই এই ছবি নিয়া

১৬. ভিভা কুবা (২০০৫), পরিচালক- জোয়ান কার্লোস ক্রিমাতা ও ইরাইদা মেলবার্তি
কিউবার জীবনযাপনের কিছুই বলতে আমাদের জানা নাইকারণ আমরা ইন্টারনেটের যে জগৎটায় বাস করি তা পশ্চিমা বিশ্বের হাত দিয়া পরিচালিত আর তারা কিউবারে পছন্দ করে নাদেশটাকে যতটা খারাপ ভাবে দেখানো যায় ততটাই তারা দেখায়তবে কিউবার সিনেমার অসাধারণ একটা ঐতিহ্য আছেসেই ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করেই খুঁজে খুঁজে কিউবার কিছু ছবি দেখতে শুরু করছিলামতার মাঝে ভিভা কুবাই সেরা প্রতিবেশী দুই শিশুর গল্প, দুই বন্ধুর গল্পওনা দেখলে মিস

১৭. ওয়াটার  (২০০৫), পরিচালক- দীপা মেহতা
সতিদাহ প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পরও সনাতন ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের সমাজে যে কোনও গুরুত্বই ছিলো না, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দীপা মেহতার ছবি ওয়াটারছবি দেখে ঐ সময়কার হিন্দু বিধবাদের জন্য মায়া হয় নি, ঐ সময়কার সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা তৈরি হইছিলোছবিতে শ্রীলংকান শিশু অভিনয় শিল্পী সরলার অভিনয় মুগ্ধ করছিলো আমারে

১৮. বাবেল (২০০৬), পরিচালক- আলেজান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু
ইনারিতু যখন বিজ্ঞাপন বানানো বাদ দিয়া সিনেমা বানাইতে আসে, শুরুতেই সে বিশ্ববাসীকে চমক দেখায় তার এ্যামোরেস পেরোস দিয়াকিন্তু আমি এ্যামোরেস পেরোসের চেয়ে বাবেল কে এগিয়ে রাখবোকারণ, বাবল কেবল একটা সিনেমা না আমার কাছেআমার কাছে এইটা একটা বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতির অবস্থার বিপক্ষে তীব্র আন্দোলনেরও নামএই ছবি ভালো না লেগে উপায় আছে!

১৯. দ্যা ফল (২০০৬), পরিচালক- টারসেম সিং
ইনারিতুর মতো টারসেমও বিজ্ঞাপন নির্মাতাফলে তার সিনেমায় বিজ্ঞাপনী একটা ভাষা থাকেকিন্তু কল্পনার যে রংধনু সাত রঙের না, সেটা শত কোটি রঙেরও হতে পারে তা অসাধারণ ভাবে দেখাইছে টারসেম সিংইন্ডিয়ান বংশদ্ভুত কোনও পরিচালক হলিউড বা বলিউড কোথাও এত দুর্দান্ত কাজ করতে পারে নি বলে মনে হয়

২০. ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড (২০০৭), পরিচালক- শন পেন
ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলস এর বায়োগ্রাফি অবলম্বন করে জন ক্রাকোয়ের বই ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড থেকে ছবি বানাইছে ইনটু দ্যা ওয়াইল্ডবিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাংলা উপন্যাস চাঁদের পাহাড়ের কথা যদি আমাদের মনে থাকে তবে তার শঙ্কর চরিত্রটার ইউরোপিয়ান ভার্সন এই ছবির চরিত্র ক্রিস্টোফারউপন্যাস বলেই শঙ্কর আফ্রিকা থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলো, কিন্তু ক্রিস্টোফার নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে মনের স্বাধীনতাই আসলআর সেই স্বাধীনতাটাই আমাদের নেইবলতে গেলে আমরা পরাধিনতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ক্রিস্টোফার আর শন পেন

২১. লেমন ট্রি (২০০৮), পরিচালক- ইরান রিকিলিস
ইসরাইলি পরিচালকরা ভালো সিনেমা বানায়এবং নিঃসন্দেহে তাদের সিনেমার সিংহভাগই যায় প্যালেস্টাইনিদের পক্ষেপ্যালেস্টাইনিদের জীবন সংগ্রাম ইসরাইলিদের ছবির বিষয় হয়ে বারবার রূপালী পর্দায়এই রকম জীবনচিত্রের মাঝে লেমন ট্রি যুদ্ধের বাইরে আর এক যুদ্ধের গল্পএই গল্প বারবার আমাদের মতো ছেলেদের যারা মাকে ছেড়ে নিজের মতো থাকে তাদের ব্যার্থতার কথাও খুবই দৃঢ়ভাবে বলছে ইরান রিকিলিস

২২. মিডনাইট ইন প্যারিস (২০১১), পরিচালক- উডি অ্যালেন
পৃথিবীর সমস্ত শিল্পীদের নাকি দুইটা মাতৃভূমি একটা তার জন্ম দেশ আর একটা প্যারিস শিল্পের শহর প্যারিসে ব্রিটিশ এক গল্পকারের ভ্রমণটা তাই অনেকটা ইতিহাস আর কল্পনায় মাখামাখিবাস্তব আর কল্পনার মাঝে বিস্তর ফারাক থাকলেও এই ছবিতে কিন্তু ইতিহাসকে বাস্তবে টেনে আনতে মোটেও কষ্ট পায় নি অ্যালেনএই কারণেই সে বিশ্বসেরা পরিচালকদের একজন


কয়েকটা প্রিয় সিনেমার উঠানে

at মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪  |  No comments

বন্ধু জয় আমারে অপছন্দের খেলায় ডাইক্যা নিয়া বিপদে ফালাইয়া দিলো। আমি সাধারণত এইসব খেলায় খেলার মতো স্কিল রাখি না। কারণ আমি ভুলে যাই। ভুলে যেতে আমি খুব ওস্তাদ। তবে এত্তসব ভুলে যাওয়া মুখ,ঘটনা, ইতিহাস, কবিতা আর সিনেমার মাঝ দিয়েও কিছু সিনেমা আমার অনিচ্ছায়ও মনে থাইক্যা যায়। আজকে তারই কথা বলবো।



০১. পথের পাঁচালি, (১৯৫৫) অপুর সংসার (১৯৬০), পরিচালক- সত্যজিত রায়
বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পথের পাঁচালি উপন্যাস থার্ড ইয়ারে পাঠ্য ছিলোকিন্তু সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আমি বারবার চেষ্টার পরও এই উপন্যাস পড়ে শেষ করতে পারি নিএইটা আমারই অযোগ্যতাকিন্তু পথের পাঁচালি ছবি দেখতে গিয়া আমি অন্য কোথাও মনযোগ দিতে পারিনিএই সফলতা ছবির ও ছবির পরিচালকেরএকই রকম কথা আমাকে বলতে হয় অপুর সংসারের ক্ষেত্রেওআমার বরং পথের পাঁচালির চেয়ে অপুর সংসারকে বেশী আনন্দ ও বেদনাময় মুগ্ধতার আশ্রয় বলে মনে হয়
০২. দ্যা ব্রিজ অন দ্যা রিভার কাওয়াই (১৯৫৭), পরিচালক- ডেভিড লিন
তসলিমা নাসরিন তার বাবার কাছে এক খোলা চিঠিতে এই ছবির শেষ দৃশ্যে কাওয়াই নদীর ওপর যখন ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ছে আর যাত্রী বোঝাই ট্রেনটি যখন ঐ ভাঙ্গা ব্রিজ দিয়ে নদীতে ভেঙ্গে পড়ছে তখনকার বর্ণনা দিয়েছিলেনবর্ণনা শুনে গায়ের লোম দাড়িয়ে পরেআমার মনে আছে, ঐ হোস্টেলে বিটিভিতে দেখা এই ছবি শেষে একা একা কেঁদে কেঁদে টিভিরুম ছেড়েছিলাম





০৩. দ্যা ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সি (১৯৫৮) পরিচালক- জন স্টারজিস, হেনরি কিং, ফ্রেড জিন্নেমান
একটা সময় ছিলো বিটিভিতে মুভি অব দ্যা উইক নামে প্রত্যেক শুক্রবার কি শনিবারে দুপুর বেলা বিদেশী ছবি দেখাইতোআমার শৈশবের স্মৃতির সাথে মিশে থাকা মুভি অব দ্যা উইকপড়াশোনার জন্য বাড়ি ছাড়ার পর হোস্টেলের টিভি রুমে একা একা বসে থেকে দেখা মুভিগুলোর একটাকারণ ঐ বয়সে ওল্ড ম্যান এন্ড দ্যা সির মতো ছবি দেখার মানুষ সহপাঠিদের ছিলো না বলে একই দেখতে হইতোমাসকান্দা টিটিসি হোস্টেলের টিভি রুমে এমন আরে বেশ কিছু ছবি আমার ঐ হোস্টেলেই দেখাতাই এইসব ছবির সাথে ঐ হোস্টেলটাও উল্লেখযোগ্য;)

০৪. ছুটির ঘন্টা (১৯৮০), পরিচালক- আজিজুর রহমান
সিনেমার প্রসঙ্গ আসলে পৃথিবীর সব সিনেমার কথা আমি ভুলে যাইতে পারিকিন্তু ছুটির ঘন্টার কথা আমি কখনোই ভুলবো নাহইতে পারে এইটা আমার সিনেমা হলে গিয়া দেখা প্রথম ছবিতবে এই ছবির জন্যই হয়তো অদ্ভুতভাবে সিনেমার সাথে কিছুটা স্বপ্নের সম্পর্কও স্থাপিত হইছেতাই এই ছবির কথা আমি কখনোই ভুলবোনাভোলার মতো নয়

০৫. দহন (১৯৮৬), পরিচালক-শেখ নিয়ামত আলী
ব্যক্তিগত প্রেমের চেয়ে সমষ্টিগত প্রেমই গল্পে প্রাধান্য পেয়েছেগল্পে আরো অনেক গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় স্থান পেয়েছে বাজেট, মানুষ, রাজনীতি, প্রেম নিয়ে ছবিতে পৃথব বক্তব্য আছেএইসব এখন আর আমাদের ছবিতে থাকে নাছবির সবচে উল্লেখযোগ্য যে বিষয় তা এই সমাজের পুরানো পদ্ধতি ভাঙার সংগ্রামের কথা খোঁজা হইছে মুক্তির পথফ্যাক্টস, ফিকশন, সিম্বল, হিওমার ব্যবহার করে কাহিনীতে সৃষ্টি করেছে একটি দলিলচিত্রআর ছবিতে আনোয়ার হোসেনের সিনেমাটোগ্রাফিও ছিলো দুর্দান্তমেকিংও ভালো লাগার মতো


০৬. ড্রিমস (১৯৯০), পরিচালক- আকিরা কুরোশাওয়া ও ইশিরো হোন্ডা
হ্যা, এই ছবি দেখার পর আমি তব্দা খাইয়া গেছিলামকুরোশাওয়ার কিছু ছবি দেখে তাকে বড় ডিরেক্টর হিসেবে স্বীকৃতি মানতে আমার দ্বিধা ছিলো নাকিন্তু ড্রিমস দেখার পর মনে হইছিলো কুরোশাওয়া পৃথিবীর সেরা পরিচালকদের একজনএমনকি সে কেবল ডিরেক্টরই না, সিনেমার কবিওবিশেষ করে ভ্যান ঘগ নিয়া পার্টটা দেখার পর আমি কোনও ভাষাই পাইতেছিলাম না, কি দেখলামঅদ্ভুতএই মুগ্ধতা প্রকাশ করার আমি কোনও যৌক্তিক ভাষা পাই নাই 


০৭. জুড (১৯৯৬), পরিচালক- মাইকেল উইন্টারবটম
থমাস হার্ডির উপন্যাস জুড দ্যা অবসকিউর অবলম্বনে মাইকেল উইন্টারবটমের সিনেমা জুডপ্রিয় নায়িকা কেট উইনসেøট এর ছবি খুঁজতে গিয়া এই ছবি আমার হাতে পড়ছিলোছবির শুরুটা দেখলে যে কোনও সিনেমা প্রিয় ব্যক্তি মুগ্ধ হবেএকদম কবিতার মতোসিনেমার পর্দাজুড়ে একটা বিষাদ মাখা আহব নিয়ে শুরু হয় যেমন, তেমন শেষও হয় একটা বিষাদ ছুঁয়ে দিয়েসর্বোপরি সিনেমার নায়ক জুড আমার প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠছিলো ছবি দেখার পরতার চরিত্রের বেখেয়াল আমার ভালো লাগেতাই তাকে ভালোবাসি

০৮. চরাচর (১৯৯৩), পরিচালক- বুদ্ধদেব দাসগুপ্ত
মাথার ভেতর পাখিগাছ নিয়ে ঘুমায়েছে নেতাই (নিতাই)- এই এক সংলাপ আমাকে এলোমেলো করে দিছে বুদ্ধদেব এর এই ছবি দেখার পরবুদ্ধদেব এর ছবি আদতে ভিস্যুয়াল কবিতা তাই কবিতা নিয়া বেশী কিছু বলা উচিত হবে নাবলতে হয়, বুদ্ধদেব এর ছবি না দেখলে বাংলা সিনেমা দেখাই অসম্পূর্ণ থাকবে আপনার

০৯. কালার অব প্যারাডাইস (১৯৯৯), পরিচালক- মাজিদ মাজিদী
একটা অন্ধ শিশুর পৃথিবী কতটুকুই বা রঙিন হতে পারে বা তার জগৎ কতটুকু বড় এই প্রশ্ন অবান্তরকিন্তু আমার কথা সম্পূর্ণই ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে মাজিদ মাজিদীর এই ছবিযারা দেখেছে তারা কেউই এই কথা অস্বীকার করতে পারবে না বলেই আমার মনে হয়এই ছবি ইরানের সিনেমায়ই নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রেরও এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ততাই ছবি প্রসঙ্গে আর কিছু না বললেও চলে

১০. নো ম্যানস ল্যান্ড (২০০১), পরিচালক- ডেনিস টানোভিচ
সাবেক যোগেস্লাভিয়ার ও বর্তমান বসনিয়ান পরিচালক ডেনিস টানোভিচ যুদ্ধ নিয়ে দুর্ধর্ষ যে ছবিটা বানাইছে তার নাম নো ম্যানস ল্যান্ডনো ম্যানস ল্যান্ড শব্দটা শুনলেই যুদ্ধের যে প্রসঙ্গটা আসে এইটা এমনই প্রসঙ্গের ছবিআর দুই দেশের শত্রুপক্ষের দুইজন এই নো ম্যানস ল্যান্ডে এসে নিজেদের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে বন্ধু হয়ে যাওয়ার গল্পই এই ছবিকে উপভোগ্য করেছেঅথচ যুদ্ধই ছবির প্রধান বিষয়বলতে গেলে আধুনিক সময়ের বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের এক সর্বোচ্চ সিনেমাটিক দলিল নো ম্যানস ল্যান্ড

১১. মাটির ময়না (২০০২), পরিচালক- তারেক মাসুদ
আমি বাংলা ছবি দেখতে সবচে বেশী ভালোবাসিআর বাংলা ছবি যদি তুলনামূলক একটু ভালো হয়, এতেই মুগ্ধ হয়ে যাই আমিএই ছবি একটু ভালো ছবি না, এই কথা আর আমাকে বলার প্রয়োজন নাইতবে হ্যা, দীর্ঘ সময় (১৯৯৮ থেকে ২০০২) সিনেমা হলে গিয়া এলোমেলো বাংলা সিনেমা দেখতে দেখতে যখন বিরক্তির মাত্রা ছাড়িয়ে যাইতেছিলো তখনই মাটির ময়না দেখার সুযোগ আসেআর দেখার পর মনে ১৯৯৮ এ দেখা রিভার কাওয়াই ও ওল্ড ম্যান এন্ড সি দেখার পর মনে হইছিলো আবার সিনেমার আশ্চর্য জগতের কাছাকাছি ফিরতে পারছিএইটা বিরাট পাওয়া ছিলো আমার কাছে

১২. সিটি অব গড (২০০২), ফার্নান্দো মিরাল্যাস ও কাতিয়া ল্যুনড
বিশ্ব সিনেমায় ব্রাজিলের সিনেমার আলাদা ইতিহাস তৈরি করছে সিটি অব গডনতুন সিনেমা দেখবো আর সিটি অব গড দেখবো না এমন বোকা হওয়ার যোগ্যতা আমার নাই ফুটবলের দেশ বলে পরিচিত ব্রাজিলের যে অন্য রূপ তা আমাদের কাছে তো এই সিনেমাই চিনাইয়া দিছেমজার বিষয় এই সিনেমা কিন্তু সত্য ঘটনা অবলম্বনেই বানানোতাই শুধুমাত্র একটি সিনেমা না সিটি অব গডএই ছবির পর থেকে ফার্নান্দো মিরাল্যাস প্রিয় পরিচালকদেরও একজন

১৩. স্প্রিং সামার ফল উইন্টার এন্ড স্প্রিং (২০০৩), পরিচালক- কিম কি দুক
কোনও কিছুই যে বাস্তবতার ঊর্ধ্বে না, সেটা ধর্মই হোক আর প্রেম অথবা কমিটমেন্টই হোক তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কিম কি দুক এর এই অসামান্য ছবিএক ছবি দেখার পর কিমের বাকি সব ছবি দেখার জন্য কেবল অপেক্ষাই করি নাইপাওয়া মাত্রই হুমড়ি খেয়ে দেখছিতার জন্য অনন্ত-রে একটা ধন্যবাদ দেয়াই উচিতসে যদি বাসায় এই ডিভিডিটা না রেখে যেতো তাহলে হয়তো কিম কে আবিষ্কার করতে আরোও সময় লাগতো

১৪. টার্টলেস ক্যান ফ্লাই (২০০৪), পরিচালক- বাগমান গোবাদি
আবারো যুদ্ধ প্রসঙ্গএবারো মানবিকতবে এবার যুদ্ধে শিশুদের অবস্থান আর তাদের সংগ্রামের গল্প এই গোবাদির এই ছবিদেখার আগে ভাবিনি এতটা ভালো লাগবেতবে দেখার পর মুগ্ধ হয়েছিলামকালে কালে পৃথিবীর সব যুদ্ধে শিশুরাই যে সবচে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তা আর বলতে হয় নাতবে শিশুদেরও জীবনেও যে এঁকে দেয়া হয় আর এই যন্ত্রণা যে তারা বয়ে বেড়ায় বাকি জীবন তা নিঃসন্দেহে বেদনার

১৫. বর্ন ইন ব্রোথেল : ক্যালকাট্টাস রেড লাইট কিডস (২০০৪), পরিচালক- জানা ব্রিসকি ও রস কৌফমান
বলা হয় ভারত-বাংলাদেশসহ সাউথ এশিয়া ডকুমেন্টারির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট স্থানতাই এখানেই নির্মিত এই সিনেমাকলকাতার পতিতালয়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা শিশুদের নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারিডকুমেন্টারি শাখায় অস্কার পাইছিলোআর কোনও কিছু বলার নাই এই ছবি নিয়া

১৬. ভিভা কুবা (২০০৫), পরিচালক- জোয়ান কার্লোস ক্রিমাতা ও ইরাইদা মেলবার্তি
কিউবার জীবনযাপনের কিছুই বলতে আমাদের জানা নাইকারণ আমরা ইন্টারনেটের যে জগৎটায় বাস করি তা পশ্চিমা বিশ্বের হাত দিয়া পরিচালিত আর তারা কিউবারে পছন্দ করে নাদেশটাকে যতটা খারাপ ভাবে দেখানো যায় ততটাই তারা দেখায়তবে কিউবার সিনেমার অসাধারণ একটা ঐতিহ্য আছেসেই ঐতিহ্যের কথা চিন্তা করেই খুঁজে খুঁজে কিউবার কিছু ছবি দেখতে শুরু করছিলামতার মাঝে ভিভা কুবাই সেরা প্রতিবেশী দুই শিশুর গল্প, দুই বন্ধুর গল্পওনা দেখলে মিস

১৭. ওয়াটার  (২০০৫), পরিচালক- দীপা মেহতা
সতিদাহ প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পরও সনাতন ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের সমাজে যে কোনও গুরুত্বই ছিলো না, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দীপা মেহতার ছবি ওয়াটারছবি দেখে ঐ সময়কার হিন্দু বিধবাদের জন্য মায়া হয় নি, ঐ সময়কার সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা তৈরি হইছিলোছবিতে শ্রীলংকান শিশু অভিনয় শিল্পী সরলার অভিনয় মুগ্ধ করছিলো আমারে

১৮. বাবেল (২০০৬), পরিচালক- আলেজান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু
ইনারিতু যখন বিজ্ঞাপন বানানো বাদ দিয়া সিনেমা বানাইতে আসে, শুরুতেই সে বিশ্ববাসীকে চমক দেখায় তার এ্যামোরেস পেরোস দিয়াকিন্তু আমি এ্যামোরেস পেরোসের চেয়ে বাবেল কে এগিয়ে রাখবোকারণ, বাবল কেবল একটা সিনেমা না আমার কাছেআমার কাছে এইটা একটা বিশ্ব রাজনীতি অর্থনীতির অবস্থার বিপক্ষে তীব্র আন্দোলনেরও নামএই ছবি ভালো না লেগে উপায় আছে!

১৯. দ্যা ফল (২০০৬), পরিচালক- টারসেম সিং
ইনারিতুর মতো টারসেমও বিজ্ঞাপন নির্মাতাফলে তার সিনেমায় বিজ্ঞাপনী একটা ভাষা থাকেকিন্তু কল্পনার যে রংধনু সাত রঙের না, সেটা শত কোটি রঙেরও হতে পারে তা অসাধারণ ভাবে দেখাইছে টারসেম সিংইন্ডিয়ান বংশদ্ভুত কোনও পরিচালক হলিউড বা বলিউড কোথাও এত দুর্দান্ত কাজ করতে পারে নি বলে মনে হয়

২০. ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড (২০০৭), পরিচালক- শন পেন
ক্রিস্টোফার ম্যাকেন্ডলস এর বায়োগ্রাফি অবলম্বন করে জন ক্রাকোয়ের বই ইনটু দ্যা ওয়াইল্ড থেকে ছবি বানাইছে ইনটু দ্যা ওয়াইল্ডবিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বাংলা উপন্যাস চাঁদের পাহাড়ের কথা যদি আমাদের মনে থাকে তবে তার শঙ্কর চরিত্রটার ইউরোপিয়ান ভার্সন এই ছবির চরিত্র ক্রিস্টোফারউপন্যাস বলেই শঙ্কর আফ্রিকা থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলো, কিন্তু ক্রিস্টোফার নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে মনের স্বাধীনতাই আসলআর সেই স্বাধীনতাটাই আমাদের নেইবলতে গেলে আমরা পরাধিনতাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে ক্রিস্টোফার আর শন পেন

২১. লেমন ট্রি (২০০৮), পরিচালক- ইরান রিকিলিস
ইসরাইলি পরিচালকরা ভালো সিনেমা বানায়এবং নিঃসন্দেহে তাদের সিনেমার সিংহভাগই যায় প্যালেস্টাইনিদের পক্ষেপ্যালেস্টাইনিদের জীবন সংগ্রাম ইসরাইলিদের ছবির বিষয় হয়ে বারবার রূপালী পর্দায়এই রকম জীবনচিত্রের মাঝে লেমন ট্রি যুদ্ধের বাইরে আর এক যুদ্ধের গল্পএই গল্প বারবার আমাদের মতো ছেলেদের যারা মাকে ছেড়ে নিজের মতো থাকে তাদের ব্যার্থতার কথাও খুবই দৃঢ়ভাবে বলছে ইরান রিকিলিস

২২. মিডনাইট ইন প্যারিস (২০১১), পরিচালক- উডি অ্যালেন
পৃথিবীর সমস্ত শিল্পীদের নাকি দুইটা মাতৃভূমি একটা তার জন্ম দেশ আর একটা প্যারিস শিল্পের শহর প্যারিসে ব্রিটিশ এক গল্পকারের ভ্রমণটা তাই অনেকটা ইতিহাস আর কল্পনায় মাখামাখিবাস্তব আর কল্পনার মাঝে বিস্তর ফারাক থাকলেও এই ছবিতে কিন্তু ইতিহাসকে বাস্তবে টেনে আনতে মোটেও কষ্ট পায় নি অ্যালেনএই কারণেই সে বিশ্বসেরা পরিচালকদের একজন


Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম