শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫

 

ধরেন মগবাজারের জ্যামে বইসা আছেন। তখন নিজেরে নিশ্চয়ই আপনে গালি দিবেন, তিরস্কার করবেন। বলবেন, ঢাকা শহরের মানুষ না হইলে কত্ত আরাম। মগবাজারের জ্যাম-এ পরতে হয় না। আবার একই রকম মনে হইবো আপ্নের রামপুরা ব্রীজ, মালিবাগ, বনানী সিগনাল, পুরান ঢাকার সর্বত্র। আর রাতের বেলা যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে তখন? উত্তরা থেকে পলাশির মোড় যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। অন্য সময়ে আপনার হয়তো এইটুক রাস্তা যাইতে দুই ঘন্টা বা তার বেশী লাগে। কিন্তু আপনার যেই গতিতে চলার কথা, সেই গতিতে চলতেছেন। রাস্তায়ও কোনও জ্যাম নাই। কিন্তু ত্রিশ মিনিট আগে যেইখানে ছিলেন এখনো সেইখানেই তখন আপনার কেমন লাগবে? আপনার কেমন লাগবে আমি জানি না। তবে আমি এই রকমই বিভ্রান্ত হইছিলাম দুই দিন আগে।

হাওড়ের জীবনটা নদী থেকে দেখার ইচ্ছায়, ট্রলারে করে ফিরতেছি। দূরে একটা গ্রাম দেখাইয়া পাশের মুরুব্বীরে জিগাইলাম, মুরব্বী এইটা কোন গ্রাম? মুরুব্বী জানাইলেন, গ্রামের নাম জগন্নাথপুর। আচ্ছা। আধঘন্টা পর আবারো আরেকটা গ্রাম দেখাইয়া জিগাইলাম। ট্রলারের ছাদের বিকেলের রোদে বসা মুরুব্বী একবার তাকাইলেন গ্রামের দিকে। উত্তর দিলেন, জগন্নাথপুর! মানে? আধাঘন্টা ধইরা কি তবে আগাইতেছি না? আমার প্রশ্নে মুরুব্বী স্মিত হেসে উত্তর দিলেন। নদী পথ তো, এই রকমই। আমরা এতক্ষণ পূবে ছিলাম, এখন উত্তরে। তার মানে নদী যেদিক দিয়া গেছে আমরাও এইদিক দিয়াই যাইতেছি। অ আচ্ছা।

এইটা হৈলো খালিয়াজুড়ি থেকে ট্রলারে করে নাওটানা ফেরার অভিজ্ঞতা। কুয়াশা না থাকলে নাওটানা থেকে ট্রলারের ছাদে উঠলে খালিয়াজুড়ি দেখা যায়। উপজেলা সদরটা এত ছোট যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাইতে পাঁচ-দশ মিনিট হাঁটলেই চলে। শুকনা মৌসুমে তবুও নৌকা ছাড়া যাতায়াত করার উপায় আছে। মানে দুই ধরনের ট্রান্সপোর্ট আছে। এক হইলো ভটভটি, আর এক হইলো ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে? নৌকা ছাড়া কোনও উপায় নাই। চারপাশে তাকালে কেবল মনে হয় ঢেউ ছাড়া সমুদ্র। আর গ্রামগুলো হঠাৎ হঠাৎ একটা দ্বীপের মতোন।

বলা যায় বাংলাদেশের অন্যতম দুর্গম উপজেলাগুলোর একটা হইলো এই খালিয়াজুড়ি। ঢাকা থেকে সবচে সহজ পথেও যাইতে হইলে আপনাকে চারবার ট্রান্সপোর্ট বদল করতে হবে। এর মাঝে স্থলপথ ও নদীপথের একাধিক মাধ্যম আপনাকে গ্রহণ করতে হবেই। এক কথায় খালিয়াজুড়ির এই হৈলো বিশেষত্য। এখানকার মানুষ খুব বেশী কিছু চায় না। তাদের প্রয়োজনীয় যা যা দরকার তারা কেবল তাই চায়। যেমন? তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। যা আছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তবে যেই বিষয়টা এখানকার মানুষদের কথা চিন্তা করলে সবচে বেশী যন্ত্রণা দেয় তা হইলো এখানকার অর্থনৈতিক জীবন কাঠামো খুবই দুর্বল। বছরে ছয় মাস তাদের কোনও রোজগার থাকে না। কেবলমাত্র মাছ ধরা ছাড়া। কেউ কেউ এই সময় অর্থের অভাবে এলাকা ছেড়ে ডাঙ্গায় কাজের উদ্দেশ্যে পারি জমায়। অথচ আপাত দৃষ্টিতে খুব স্বাধারণ একটা জায়গা হইলেও শীতের সকালে এইসব গ্রামগুলো কি যে সুন্দর হয়ে উঠে। আর কি যে অপার্থিব নীরবতা সেইসব গ্রামে। আমার ব্যার্থতা সেই নীরবতাকে আমি ধারণ করতে পারিনি। উল্টো আরো মুখর হয়ে ফিরে এসেছি। আসা যাওয়ার পথে বয়ে বেড়িয়েছি অন্য যাতনা। অথচ যা স্বাভাবিক ছিলো না কিছুতেই।
খালিয়াজুড়ির খুব ধীর গতির। যেহেতু ছোট মফস্বল। তাই সেখানকার অধিকাংশ মানুষের মন ছোট, এমনটা সেইখানে যারা কাজ করতে যায় তারা বলে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখতে পাই।

তবে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হইলেও বাংলাদেশের আদী ও অকৃত্রিম যে রূপ তার অনেকটাই কিন্তু সেই খালিয়াজুড়িতে পাওয়া যায়। শীত মৌসুমে যখন হাওর অঞ্চল শুকনো থাকে তখন সেখানে শীত যাপনের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয়দের অর্থের সংকটটা কমতো। আমার এমনই ভাবনা। তাই শীত থাকতে থাকতে আমি মনে হয় আবারো যাবো খালিয়াজুড়ি।



কীভাবে যেতে পারেন খালিয়াজুড়ি
দুই পথে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। তবে সবচে সহজ ও দ্রুততর পথ হলো মোহনগঞ্জ হয়ে। ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস এ চড়ে সোজা মোহনগঞ্জ। ভাড়া চেয়ার কোচে ২১০ টাকা। শোভন ১৫০। মোহনগঞ্জ স্টেশনের কাছ থেকেই সিএনজি চলে বোয়ালিয়া পর্যন্ত। প্রতিটা সিএনজিতে ৫জন করে তোলে। জন প্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। বোয়ালিয়া গিয়ে একটা নদী পার হইতে হবে। ব্রীজ আছে। এইখান থেকেই মূলত: হাওর অঞ্চল শুরু। বর্ষায় এইখান থেকেই সরাসরি খালিয়াজুড়ি বা হাওরের যে কোনও থানা, গ্রামের ট্রলার যায়। ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেলে করে সরাসরি খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। এতে সময় কম লাগে। আর মূল পাকা রাস্তাটাও চেনা হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকে। তবে খরচ একটু বেশী। দুইজন যাত্রী তোলে। ভাড়া ৩শ টাকা। সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর এখান থেকে মোটরসাইকেলে নাওটানা গিয়ে সেখান থেকে সকাল ৮টার ট্রলারে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। নদীপথে, ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা। তবে নদীপথে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। তারপর নাওটানা পর্যন্ত তো যেতেই মোটরসাইকেলে ১৫ মিনিটের বেশী লাগে না। দুইজনে ভাড়া নেয় ১শ টাকা।

একে তো দুর্গম পথ তারওপর, জনপ্রিয় কোনও ট্যুরিস্ট স্পট না। তবুও আপনার ভালো লাগবে। যদিও মন্দ লাগার মতোও অনেক কিছু আছে সেখানে, আপনি তো আর সেগুলোর জন্য যাচ্ছেন না। 

সবগুলো ছবি তুলেছেন তানভীর আশিক

যেইখানে একই নিয়মে সূর্য উঠে ও ডুবে

at শুক্রবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৫  |  No comments

 

ধরেন মগবাজারের জ্যামে বইসা আছেন। তখন নিজেরে নিশ্চয়ই আপনে গালি দিবেন, তিরস্কার করবেন। বলবেন, ঢাকা শহরের মানুষ না হইলে কত্ত আরাম। মগবাজারের জ্যাম-এ পরতে হয় না। আবার একই রকম মনে হইবো আপ্নের রামপুরা ব্রীজ, মালিবাগ, বনানী সিগনাল, পুরান ঢাকার সর্বত্র। আর রাতের বেলা যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে তখন? উত্তরা থেকে পলাশির মোড় যাইতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। অন্য সময়ে আপনার হয়তো এইটুক রাস্তা যাইতে দুই ঘন্টা বা তার বেশী লাগে। কিন্তু আপনার যেই গতিতে চলার কথা, সেই গতিতে চলতেছেন। রাস্তায়ও কোনও জ্যাম নাই। কিন্তু ত্রিশ মিনিট আগে যেইখানে ছিলেন এখনো সেইখানেই তখন আপনার কেমন লাগবে? আপনার কেমন লাগবে আমি জানি না। তবে আমি এই রকমই বিভ্রান্ত হইছিলাম দুই দিন আগে।

হাওড়ের জীবনটা নদী থেকে দেখার ইচ্ছায়, ট্রলারে করে ফিরতেছি। দূরে একটা গ্রাম দেখাইয়া পাশের মুরুব্বীরে জিগাইলাম, মুরব্বী এইটা কোন গ্রাম? মুরুব্বী জানাইলেন, গ্রামের নাম জগন্নাথপুর। আচ্ছা। আধঘন্টা পর আবারো আরেকটা গ্রাম দেখাইয়া জিগাইলাম। ট্রলারের ছাদের বিকেলের রোদে বসা মুরুব্বী একবার তাকাইলেন গ্রামের দিকে। উত্তর দিলেন, জগন্নাথপুর! মানে? আধাঘন্টা ধইরা কি তবে আগাইতেছি না? আমার প্রশ্নে মুরুব্বী স্মিত হেসে উত্তর দিলেন। নদী পথ তো, এই রকমই। আমরা এতক্ষণ পূবে ছিলাম, এখন উত্তরে। তার মানে নদী যেদিক দিয়া গেছে আমরাও এইদিক দিয়াই যাইতেছি। অ আচ্ছা।

এইটা হৈলো খালিয়াজুড়ি থেকে ট্রলারে করে নাওটানা ফেরার অভিজ্ঞতা। কুয়াশা না থাকলে নাওটানা থেকে ট্রলারের ছাদে উঠলে খালিয়াজুড়ি দেখা যায়। উপজেলা সদরটা এত ছোট যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাইতে পাঁচ-দশ মিনিট হাঁটলেই চলে। শুকনা মৌসুমে তবুও নৌকা ছাড়া যাতায়াত করার উপায় আছে। মানে দুই ধরনের ট্রান্সপোর্ট আছে। এক হইলো ভটভটি, আর এক হইলো ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে? নৌকা ছাড়া কোনও উপায় নাই। চারপাশে তাকালে কেবল মনে হয় ঢেউ ছাড়া সমুদ্র। আর গ্রামগুলো হঠাৎ হঠাৎ একটা দ্বীপের মতোন।

বলা যায় বাংলাদেশের অন্যতম দুর্গম উপজেলাগুলোর একটা হইলো এই খালিয়াজুড়ি। ঢাকা থেকে সবচে সহজ পথেও যাইতে হইলে আপনাকে চারবার ট্রান্সপোর্ট বদল করতে হবে। এর মাঝে স্থলপথ ও নদীপথের একাধিক মাধ্যম আপনাকে গ্রহণ করতে হবেই। এক কথায় খালিয়াজুড়ির এই হৈলো বিশেষত্য। এখানকার মানুষ খুব বেশী কিছু চায় না। তাদের প্রয়োজনীয় যা যা দরকার তারা কেবল তাই চায়। যেমন? তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। যা আছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট। তবে যেই বিষয়টা এখানকার মানুষদের কথা চিন্তা করলে সবচে বেশী যন্ত্রণা দেয় তা হইলো এখানকার অর্থনৈতিক জীবন কাঠামো খুবই দুর্বল। বছরে ছয় মাস তাদের কোনও রোজগার থাকে না। কেবলমাত্র মাছ ধরা ছাড়া। কেউ কেউ এই সময় অর্থের অভাবে এলাকা ছেড়ে ডাঙ্গায় কাজের উদ্দেশ্যে পারি জমায়। অথচ আপাত দৃষ্টিতে খুব স্বাধারণ একটা জায়গা হইলেও শীতের সকালে এইসব গ্রামগুলো কি যে সুন্দর হয়ে উঠে। আর কি যে অপার্থিব নীরবতা সেইসব গ্রামে। আমার ব্যার্থতা সেই নীরবতাকে আমি ধারণ করতে পারিনি। উল্টো আরো মুখর হয়ে ফিরে এসেছি। আসা যাওয়ার পথে বয়ে বেড়িয়েছি অন্য যাতনা। অথচ যা স্বাভাবিক ছিলো না কিছুতেই।
খালিয়াজুড়ির খুব ধীর গতির। যেহেতু ছোট মফস্বল। তাই সেখানকার অধিকাংশ মানুষের মন ছোট, এমনটা সেইখানে যারা কাজ করতে যায় তারা বলে। তবে এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখতে পাই।

তবে অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল হইলেও বাংলাদেশের আদী ও অকৃত্রিম যে রূপ তার অনেকটাই কিন্তু সেই খালিয়াজুড়িতে পাওয়া যায়। শীত মৌসুমে যখন হাওর অঞ্চল শুকনো থাকে তখন সেখানে শীত যাপনের জন্য পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে স্থানীয়দের অর্থের সংকটটা কমতো। আমার এমনই ভাবনা। তাই শীত থাকতে থাকতে আমি মনে হয় আবারো যাবো খালিয়াজুড়ি।



কীভাবে যেতে পারেন খালিয়াজুড়ি
দুই পথে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। তবে সবচে সহজ ও দ্রুততর পথ হলো মোহনগঞ্জ হয়ে। ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস এ চড়ে সোজা মোহনগঞ্জ। ভাড়া চেয়ার কোচে ২১০ টাকা। শোভন ১৫০। মোহনগঞ্জ স্টেশনের কাছ থেকেই সিএনজি চলে বোয়ালিয়া পর্যন্ত। প্রতিটা সিএনজিতে ৫জন করে তোলে। জন প্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। বোয়ালিয়া গিয়ে একটা নদী পার হইতে হবে। ব্রীজ আছে। এইখান থেকেই মূলত: হাওর অঞ্চল শুরু। বর্ষায় এইখান থেকেই সরাসরি খালিয়াজুড়ি বা হাওরের যে কোনও থানা, গ্রামের ট্রলার যায়। ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেলে করে সরাসরি খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। এতে সময় কম লাগে। আর মূল পাকা রাস্তাটাও চেনা হয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকে। তবে খরচ একটু বেশী। দুইজন যাত্রী তোলে। ভাড়া ৩শ টাকা। সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। আর এখান থেকে মোটরসাইকেলে নাওটানা গিয়ে সেখান থেকে সকাল ৮টার ট্রলারে খালিয়াজুড়ি যাওয়া যায়। নদীপথে, ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা। তবে নদীপথে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। তারপর নাওটানা পর্যন্ত তো যেতেই মোটরসাইকেলে ১৫ মিনিটের বেশী লাগে না। দুইজনে ভাড়া নেয় ১শ টাকা।

একে তো দুর্গম পথ তারওপর, জনপ্রিয় কোনও ট্যুরিস্ট স্পট না। তবুও আপনার ভালো লাগবে। যদিও মন্দ লাগার মতোও অনেক কিছু আছে সেখানে, আপনি তো আর সেগুলোর জন্য যাচ্ছেন না। 

সবগুলো ছবি তুলেছেন তানভীর আশিক

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

'এমন না যে রমিজের জীবনে এ ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। তবুও যেদিন বিষ্যুদবার, কুলুকুলু হাওয়া বয়। রমিজ গাছে উঠে, ভোরে। শালিখ পাখির বাসা পার হয়ে বিমান ধরে।'

বাস্তব নয়, তবে ভিস্যুয়াল বা ভার্চুয়াল যাই বলি না কেন রমিজের সাথে আমার পরিচয় প্রায় দশ বছর আগে। ময়মনসিংহের তিন কোনা পুকুর পাড়ের মেস বাড়িতে আমাদের কয়েকজনের মধ্যরাতের বিনোদন ছিলো দুটি টিভি ধারাবাহিক। যার একটা ছিলো রঙের মানুষ আর একটা রমিজের আয়নাসেইটা ছিলো আমাদের অনেকের দেখা সবশেষ টিভি ধারাবাহিক। তারপর আর টিভি ধারাবাহিক দেখার সময়-সুযোগ ও আগ্রহ কোনওটাই হয় নি। যদিও বিদেশী টিভি সিরিজ দেখা হয় কিছু। তবে এর মাঝে হালের জনপ্রিয় গেইম অব থ্রোনস এর মতো সিরিজও আমি মিস করছি। আগ্রহই তৈরি হয় নি। আমার এরকম হয়। আবার শার্লকের মতো সিরিজ আমি নিয়মিত দেখি। আগ্রহ তৈরি হয় বলেই আমি দেখি। যাই হোক, টিভি ধারাবাহিক নিয়ে বকর বকর মুখ্য বিষয় না।  মুখ্য হলো রমিজ। যেই রমিজের আয়নায় আমার ভার্চুয়াল/পর্দার রমিজের সাথে পরিচয়। যেই রমিজ কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে এক অদ্ভুত জটিলতার মুখোমুখি হয়। সেই রমিজ যাপিত জীবনের তাগিদে ধীরে ধীরে এক পঙ্কিল পৃথিবীতে ঢুকে যায়। যেমন আমরাও ঢুকে আছি। কেউ হয়তো স্বীকার করবেন, কেউ করবেন না। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই নাটুকে রমিজের মতো পঙ্কিলতা আছে। তবে নাটকের রমিজও কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় নয়। আমার আলোচনার বিষয় অন্য রমিজ। সেই রমিজও নাটকের রমিজের মতো জ্যামে বসে থাকে। গরমে ঘেমে একাকার হয়। বিরক্তিতে মুখ বাকানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তবে সেই রমিজও স্বপ্ন দেখে এইসব পঙ্কিলতা, যন্ত্রণাকে এড়িয়ে একটা সুন্দর পৃথিবীর। সেই সুন্দর পৃথিবীটা কি হইতে পারে সেই আলোচনা অন্য কোনও দিন করা যাইতে পারে। যেহেতু আমাদের ‌এই দিন দিন না, আরও দিন আছে
রমিজের প্রসঙ্গটা আসছে সে আসলে আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে দাঁড়াইছে বলে। কারণ আমাদের রমিজের বাড়িও আছে। শেষবার আমি রমিজের সেই বাড়ি গেছিলাম তখন শুক্রবার। তার আগেও গেছিলাম। সেইটাও শুক্রবার ছিলো। শুক্রবারে রমিজের বাড়িতে মনে হয় গেস্ট একটু বেশী থাকে। যাই হোক, রমিজের বাড়িটা বেশিদিন টিকবে না। সেখানে অন্য কেউ বাড়ি করবে। কারণ রমিজ বাড়ি করছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আর্টস গ্যালারি কলা কেন্দ্রতে। তার বাড়ির মেয়াদ ডিসেম্বরের দশ তারিখ পর্যন্ত। এই কয়দিন পর্যন্ত রমিজের বাড়িটার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইনএইটা কবি ও শিল্পী রাজীব দত্তর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
রাজীবের সেই পৃথিবীকে রাজীব বলে অর্থহীন। আসলেই তো অর্থহীন। কিন্তু বললেই কি অর্থহীনতা দাঁড়ায়। বিষয়টা আসলে কি? পরীক্ষার প্রশ্নের মতো যদি উত্তর খুঁজি, অর্থহীনতা বলতে কি বুঝি? কীভাবে অর্থহীনতা বাস্তবতায় রূপ নেয়? এইসব জটিল প্রশ্নের আপাত: সহজ উত্তর আসলে ঐ প্রদর্শনীটা। এক ধরনের প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়ার মতো। তবে এই প্রশ্ন আর এই উত্তর হাতে পেলেও আপনি রমিজ সম্পর্কে ঠিক উত্তরটি লিখতে পারবেন না। রাজীবের জগৎটা এমনই। কেমন? এক টিভি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আপনার প্রদর্শনীর নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইন কেনো? ছোটখাটো মানুষটার উত্তরটাও ছোট। বলে কী না, আমার যদি একটা প্লেইন থাকতো তাইলে তো জ্যামের মধ্যে গরমের মধ্যে বসে কষ্ট করতে হইতো না। তো রমিজেরও এই রকম ইচ্ছা করে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা করে রমিজ আছেআরে বলে কি! প্রত্যেকের মধ্যে রমিজ আছে? এই কথাই তো শুরুতে বলতে চাইছিলাম।
হ্যা, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে রমিজ আছে। আর সেই রমিজ যে বিভিন্ন সময় এলোমেলো ভাবনাগুলো ভাবে সেগুলোই অনেকাংশে এই প্রদর্শনীর দেয়াল জুড়ে। যেমন রমিজকে আমরা পলাশীর আম বাগানে দেখতে পাই। সেইখানে গিয়া রমিজ কি করে? রাজীবের ভাষ্যে যদি উত্তর খুঁজি তবে পাই, পলাশীর আম্র কাননে রমিজ। এই রমিজকে ১৭৫৭ সালের আগে দেখা যায় নাই। সিরাজ ও রমিজ লর্ড ক্লাইভের হাতে মরিচ আর নুন জিম্মা রাখছে। পলাশীর আম বাগানে যদি বাংলার স্বাধীনতার প্রথম পতন হিসেবে দেখি, তাহলে ভাবতেই পারি এই যে আমরা যারা ইতিহাসের কিছু সংখ্যা আর তাদের ভাব সম্প্রসারণ জানি, তারা সবাই তো রমিজই। কারণ সিরাজ তো আমাদের নিয়া সেই সময় ক্লাইভের কাছেই সব কিছু সমর্পণ করছিলো। ইতিহাস তো তাই বলে। এইভাবে রমিজের আপাত: অর্থহীন ভাষ্য আমাদের একটা নয়া দুইন্যার সামনে দাঁড় করাইয়া দেয়। আমরা অর্থহীনতার মাঝেও অর্থ পাইছি।

রাজীবের এই জগতের সাথে পরিচিত হইতে পারা দারুন। যারা ভার্চুয়াল জীবন কিছুটা হৈলেও যাপন করেন, তাদের কাছে তার এই জগৎ পুরোপুরি নতুন না হইলেও একেবারে পুরাতনও না। কিন্তু যেই বিষয়টা না বললেই নয়, তা হইলো দৈত্য (রাজীব দত্ত কে আমি দৈত্যই ডাকি, হয়তো আরও কেউ কেউ ডাকে) তার শিল্পকলার মধ্য দিয়ে একটা অর্থহীন গল্প বলছেন। এই গল্পেরও একটা খন্ড খন্ড অর্থ যেহেতু আমাদের কাছে দাঁড়ায়া যায়, তাই একটা সামগ্রিক অর্থও দাঁড়াইতে পারে। যেমন দৈত্যর ছবিতে যখন লেখা থাকে পাখিরা কখনো রান্না করা মাছ খেয়ে দেখে নি। তাই তার পোষা রাখির জন্য রমিজ রান্না মাছ নিয়ে যায়। রমিজ গাছে উঠে পাখিকে পাখির মতো ডাকে- আসো খাই, মাছ খাই। (পাখিদের একটা পায়ে লোম থাকে)তখন কি মনে হয় আপনার? মনে হয় না একটা ভিন্ন কল্পনার জগতের কথা? যেই জগতের কথা আমরা ভাবি না। ভাবতে গেলে অস্পষ্ট একটা পৃথিবীর ছবি আমরা দেখতে পাই। চিত্রকলার ভাষায় তারে কি কয়? আমি চিত্রকলা বুঝি না। আমি বুঝি একটা অধিবাস্তব পৃথিবী, যা আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে সেই ছবি এঁকেছেন রাজীব। আর সাথে বলেছেন সেই পৃথিবীর গল্প।
এমন না যে রমিজ ইতিহাসের হাস্যকর কল্পনা আর চলমান পৃথিবীর অধিবাস্তব গল্পেই জীবন যাপন করে। সে অধিকতর বাস্তবেও বসবাস করে। যেমন রমিজ বলে, হাতিরঝিল হাতিদের কাছে কেমন, তা রমিজ জানে নাআপনি জানেন? আপনার কি একটা লেজ আছে?  যেইটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখেন? নাই তো! দেখুন তো আছে কি না। আপনার সহপাঠি, সহকর্মী বা বন্ধুর প্রশংসাই তো করেন তার সামনে। আর আড়ালে? তাকে যে ঈর্ষা বা ঘৃণাটা করেন সেইটা কি আপনার একটা লেজ না? আমার এই যুক্তি আপনার পছন্দ নাও হৈতে পারে। আদতে পছন্দ হইতেই হবে এমন কোনও কথাও না। কিন্তু দেখেন এইভাবে আপনার ভেতর যে মানবিকতাবোধ আছে, তার আড়ালে তো একটা পশুত্বও আছে। সেই পশুত্বকে যদি একটা হাতি ভাবতে চাই তবে খুব বেশী কি অপরাধ হবে? আপনার পশুটার চাওয়াগুলোও তো পশুটার মতো বিশাল! তাই বলে এই ছবি দৈত্য এঁকে ফেলছে। বুঝলেন মশাই! সেই ছবিটা কেমন? রমিজ যেভাবে হাতি ভাবে। এমন না যে সে প্রতিদিন হাতি ভাবে। তবে ভাবা হাতির ২টা লেজ থাকবে, ২টা শুঁড়। ১টা লেজ এবং ১টা শুঁড় রমিজের নিজের। এগুলো সে বালিশের নিচে রাখে ছবিটা এমন।


‘পাখিদের ছায়া ভিজে গেলে এরোপ্লেন তৈরি হয়’

at শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫  |  1 comment

'এমন না যে রমিজের জীবনে এ ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। তবুও যেদিন বিষ্যুদবার, কুলুকুলু হাওয়া বয়। রমিজ গাছে উঠে, ভোরে। শালিখ পাখির বাসা পার হয়ে বিমান ধরে।'

বাস্তব নয়, তবে ভিস্যুয়াল বা ভার্চুয়াল যাই বলি না কেন রমিজের সাথে আমার পরিচয় প্রায় দশ বছর আগে। ময়মনসিংহের তিন কোনা পুকুর পাড়ের মেস বাড়িতে আমাদের কয়েকজনের মধ্যরাতের বিনোদন ছিলো দুটি টিভি ধারাবাহিক। যার একটা ছিলো রঙের মানুষ আর একটা রমিজের আয়নাসেইটা ছিলো আমাদের অনেকের দেখা সবশেষ টিভি ধারাবাহিক। তারপর আর টিভি ধারাবাহিক দেখার সময়-সুযোগ ও আগ্রহ কোনওটাই হয় নি। যদিও বিদেশী টিভি সিরিজ দেখা হয় কিছু। তবে এর মাঝে হালের জনপ্রিয় গেইম অব থ্রোনস এর মতো সিরিজও আমি মিস করছি। আগ্রহই তৈরি হয় নি। আমার এরকম হয়। আবার শার্লকের মতো সিরিজ আমি নিয়মিত দেখি। আগ্রহ তৈরি হয় বলেই আমি দেখি। যাই হোক, টিভি ধারাবাহিক নিয়ে বকর বকর মুখ্য বিষয় না।  মুখ্য হলো রমিজ। যেই রমিজের আয়নায় আমার ভার্চুয়াল/পর্দার রমিজের সাথে পরিচয়। যেই রমিজ কাজের খোঁজে ঢাকায় এসে এক অদ্ভুত জটিলতার মুখোমুখি হয়। সেই রমিজ যাপিত জীবনের তাগিদে ধীরে ধীরে এক পঙ্কিল পৃথিবীতে ঢুকে যায়। যেমন আমরাও ঢুকে আছি। কেউ হয়তো স্বীকার করবেন, কেউ করবেন না। কিন্তু প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই নাটুকে রমিজের মতো পঙ্কিলতা আছে। তবে নাটকের রমিজও কিন্তু আমার আলোচনার বিষয় নয়। আমার আলোচনার বিষয় অন্য রমিজ। সেই রমিজও নাটকের রমিজের মতো জ্যামে বসে থাকে। গরমে ঘেমে একাকার হয়। বিরক্তিতে মুখ বাকানো ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। তবে সেই রমিজও স্বপ্ন দেখে এইসব পঙ্কিলতা, যন্ত্রণাকে এড়িয়ে একটা সুন্দর পৃথিবীর। সেই সুন্দর পৃথিবীটা কি হইতে পারে সেই আলোচনা অন্য কোনও দিন করা যাইতে পারে। যেহেতু আমাদের ‌এই দিন দিন না, আরও দিন আছে
রমিজের প্রসঙ্গটা আসছে সে আসলে আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে দাঁড়াইছে বলে। কারণ আমাদের রমিজের বাড়িও আছে। শেষবার আমি রমিজের সেই বাড়ি গেছিলাম তখন শুক্রবার। তার আগেও গেছিলাম। সেইটাও শুক্রবার ছিলো। শুক্রবারে রমিজের বাড়িতে মনে হয় গেস্ট একটু বেশী থাকে। যাই হোক, রমিজের বাড়িটা বেশিদিন টিকবে না। সেখানে অন্য কেউ বাড়ি করবে। কারণ রমিজ বাড়ি করছে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আর্টস গ্যালারি কলা কেন্দ্রতে। তার বাড়ির মেয়াদ ডিসেম্বরের দশ তারিখ পর্যন্ত। এই কয়দিন পর্যন্ত রমিজের বাড়িটার প্রাতিষ্ঠানিক নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইনএইটা কবি ও শিল্পী রাজীব দত্তর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।
রাজীবের সেই পৃথিবীকে রাজীব বলে অর্থহীন। আসলেই তো অর্থহীন। কিন্তু বললেই কি অর্থহীনতা দাঁড়ায়। বিষয়টা আসলে কি? পরীক্ষার প্রশ্নের মতো যদি উত্তর খুঁজি, অর্থহীনতা বলতে কি বুঝি? কীভাবে অর্থহীনতা বাস্তবতায় রূপ নেয়? এইসব জটিল প্রশ্নের আপাত: সহজ উত্তর আসলে ঐ প্রদর্শনীটা। এক ধরনের প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়ার মতো। তবে এই প্রশ্ন আর এই উত্তর হাতে পেলেও আপনি রমিজ সম্পর্কে ঠিক উত্তরটি লিখতে পারবেন না। রাজীবের জগৎটা এমনই। কেমন? এক টিভি সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা আপনার প্রদর্শনীর নাম হাউ ডু আই রেন্ট এ প্লেইন কেনো? ছোটখাটো মানুষটার উত্তরটাও ছোট। বলে কী না, আমার যদি একটা প্লেইন থাকতো তাইলে তো জ্যামের মধ্যে গরমের মধ্যে বসে কষ্ট করতে হইতো না। তো রমিজেরও এই রকম ইচ্ছা করে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা করে রমিজ আছেআরে বলে কি! প্রত্যেকের মধ্যে রমিজ আছে? এই কথাই তো শুরুতে বলতে চাইছিলাম।
হ্যা, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে রমিজ আছে। আর সেই রমিজ যে বিভিন্ন সময় এলোমেলো ভাবনাগুলো ভাবে সেগুলোই অনেকাংশে এই প্রদর্শনীর দেয়াল জুড়ে। যেমন রমিজকে আমরা পলাশীর আম বাগানে দেখতে পাই। সেইখানে গিয়া রমিজ কি করে? রাজীবের ভাষ্যে যদি উত্তর খুঁজি তবে পাই, পলাশীর আম্র কাননে রমিজ। এই রমিজকে ১৭৫৭ সালের আগে দেখা যায় নাই। সিরাজ ও রমিজ লর্ড ক্লাইভের হাতে মরিচ আর নুন জিম্মা রাখছে। পলাশীর আম বাগানে যদি বাংলার স্বাধীনতার প্রথম পতন হিসেবে দেখি, তাহলে ভাবতেই পারি এই যে আমরা যারা ইতিহাসের কিছু সংখ্যা আর তাদের ভাব সম্প্রসারণ জানি, তারা সবাই তো রমিজই। কারণ সিরাজ তো আমাদের নিয়া সেই সময় ক্লাইভের কাছেই সব কিছু সমর্পণ করছিলো। ইতিহাস তো তাই বলে। এইভাবে রমিজের আপাত: অর্থহীন ভাষ্য আমাদের একটা নয়া দুইন্যার সামনে দাঁড় করাইয়া দেয়। আমরা অর্থহীনতার মাঝেও অর্থ পাইছি।

রাজীবের এই জগতের সাথে পরিচিত হইতে পারা দারুন। যারা ভার্চুয়াল জীবন কিছুটা হৈলেও যাপন করেন, তাদের কাছে তার এই জগৎ পুরোপুরি নতুন না হইলেও একেবারে পুরাতনও না। কিন্তু যেই বিষয়টা না বললেই নয়, তা হইলো দৈত্য (রাজীব দত্ত কে আমি দৈত্যই ডাকি, হয়তো আরও কেউ কেউ ডাকে) তার শিল্পকলার মধ্য দিয়ে একটা অর্থহীন গল্প বলছেন। এই গল্পেরও একটা খন্ড খন্ড অর্থ যেহেতু আমাদের কাছে দাঁড়ায়া যায়, তাই একটা সামগ্রিক অর্থও দাঁড়াইতে পারে। যেমন দৈত্যর ছবিতে যখন লেখা থাকে পাখিরা কখনো রান্না করা মাছ খেয়ে দেখে নি। তাই তার পোষা রাখির জন্য রমিজ রান্না মাছ নিয়ে যায়। রমিজ গাছে উঠে পাখিকে পাখির মতো ডাকে- আসো খাই, মাছ খাই। (পাখিদের একটা পায়ে লোম থাকে)তখন কি মনে হয় আপনার? মনে হয় না একটা ভিন্ন কল্পনার জগতের কথা? যেই জগতের কথা আমরা ভাবি না। ভাবতে গেলে অস্পষ্ট একটা পৃথিবীর ছবি আমরা দেখতে পাই। চিত্রকলার ভাষায় তারে কি কয়? আমি চিত্রকলা বুঝি না। আমি বুঝি একটা অধিবাস্তব পৃথিবী, যা আমাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে সেই ছবি এঁকেছেন রাজীব। আর সাথে বলেছেন সেই পৃথিবীর গল্প।
এমন না যে রমিজ ইতিহাসের হাস্যকর কল্পনা আর চলমান পৃথিবীর অধিবাস্তব গল্পেই জীবন যাপন করে। সে অধিকতর বাস্তবেও বসবাস করে। যেমন রমিজ বলে, হাতিরঝিল হাতিদের কাছে কেমন, তা রমিজ জানে নাআপনি জানেন? আপনার কি একটা লেজ আছে?  যেইটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখেন? নাই তো! দেখুন তো আছে কি না। আপনার সহপাঠি, সহকর্মী বা বন্ধুর প্রশংসাই তো করেন তার সামনে। আর আড়ালে? তাকে যে ঈর্ষা বা ঘৃণাটা করেন সেইটা কি আপনার একটা লেজ না? আমার এই যুক্তি আপনার পছন্দ নাও হৈতে পারে। আদতে পছন্দ হইতেই হবে এমন কোনও কথাও না। কিন্তু দেখেন এইভাবে আপনার ভেতর যে মানবিকতাবোধ আছে, তার আড়ালে তো একটা পশুত্বও আছে। সেই পশুত্বকে যদি একটা হাতি ভাবতে চাই তবে খুব বেশী কি অপরাধ হবে? আপনার পশুটার চাওয়াগুলোও তো পশুটার মতো বিশাল! তাই বলে এই ছবি দৈত্য এঁকে ফেলছে। বুঝলেন মশাই! সেই ছবিটা কেমন? রমিজ যেভাবে হাতি ভাবে। এমন না যে সে প্রতিদিন হাতি ভাবে। তবে ভাবা হাতির ২টা লেজ থাকবে, ২টা শুঁড়। ১টা লেজ এবং ১টা শুঁড় রমিজের নিজের। এগুলো সে বালিশের নিচে রাখে ছবিটা এমন।


Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম