রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১১

এখান থেকে শিমুলপুর রোড অল্পক্ষণের পথ
সেখানে ঘুমের দেশ বাস করে
রাতের আকাশে তারা জ্বললে সেখানে
ঘরের অন্ধকার থাকে না

এই গল্প শুনেছিলো আমার পিতা,
তার বাবার বাবার কাছ থেকে
তিনি জানতেন দুধ মহালের সমস্ত কিংবদন্তী
তার কাছ থেকে মহামানবের সংজ্ঞা শিখেছিলাম আমরা
আমাদের ঘরে ঘরে আজলা ভর্তি জলের বিস্তার
আমাদের আসে পাশেই শিমুলপুর রোড
অল্পক্ষণের পথ।

শিমুলপুর রোড

at রবিবার, জুলাই ৩১, ২০১১  |  No comments

এখান থেকে শিমুলপুর রোড অল্পক্ষণের পথ
সেখানে ঘুমের দেশ বাস করে
রাতের আকাশে তারা জ্বললে সেখানে
ঘরের অন্ধকার থাকে না

এই গল্প শুনেছিলো আমার পিতা,
তার বাবার বাবার কাছ থেকে
তিনি জানতেন দুধ মহালের সমস্ত কিংবদন্তী
তার কাছ থেকে মহামানবের সংজ্ঞা শিখেছিলাম আমরা
আমাদের ঘরে ঘরে আজলা ভর্তি জলের বিস্তার
আমাদের আসে পাশেই শিমুলপুর রোড
অল্পক্ষণের পথ।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

সকালে প্রত্যেকদিনের মতো ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভাঙলো একটু পর...। ততক্ষণে জানালায় সূর্য আরো একটু তেজী হলো। ইথারে ভেসে আসা ডাকে স্তম্ভিত ফিরে এলে জেগে উঠি। দেখি আলো ঝলমল একটি দিন। আরো একটু উত্তপ্ত। কিন্তু উষ্ণতা নেই কোথাও।  ধীরে ধীরে আরো বেরে উঠে তেজ! মনের ভেতর কেমন জানি একটু আউলা বাতাস ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যায়।
জানি একটু পরই দে ছুট দে ছুট..
আমিও ছুটলাম, ৩০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিয়া আসলাম অফিসে।
কম্পিউটার অন করে চোখ বোলাতেই চোখ জুড়ে ঝরঝর করে জল গরিয়ে আসলো। বুঝতে পারলাম এ্যালার্জির আক্রমনে এখন চোখের ‍উপর। মনের ভেতর তবুও একটি প্রশ্ন, এত জল কোথা থেকে আসে চোখে? তবে কি চোখে কোনও সাগর আছে?  যদি থাকতো সেখানে ডুবে মরতে সাধ আমার। হয়তো ভাসতে ভাসতে মাছ হয়ে যেতাম কোনও এক সময়।

*
সকালের বাজারে গিয়ে এত্তগুলো মাছ কিনে আনতো বাবা। সে জানতো বা এই মাছ কুটতে কুটতে মেজাজ দেখাবে। আর বাবা চলে যাবে বাসার বাইরে কোথাও। মায়ের দেখানো মেজাজ তার দেখার সময় কই?
এক সময়  আমি মাছ হয়ে যাবো মা। আমার রক্তে ভিজে উঠবে সদ্য বিবাহিত বউ এর দা’এর চারপাশ।
আমার গায়ে কি মাছের গন্ধ আছে এখনো?

আমার গায়েও মাছের গন্ধ

at রবিবার, জুলাই ৩১, ২০১১  |  No comments

সকালে প্রত্যেকদিনের মতো ঘুম ভাঙেনি। ঘুম ভাঙলো একটু পর...। ততক্ষণে জানালায় সূর্য আরো একটু তেজী হলো। ইথারে ভেসে আসা ডাকে স্তম্ভিত ফিরে এলে জেগে উঠি। দেখি আলো ঝলমল একটি দিন। আরো একটু উত্তপ্ত। কিন্তু উষ্ণতা নেই কোথাও।  ধীরে ধীরে আরো বেরে উঠে তেজ! মনের ভেতর কেমন জানি একটু আউলা বাতাস ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যায়।
জানি একটু পরই দে ছুট দে ছুট..
আমিও ছুটলাম, ৩০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিয়া আসলাম অফিসে।
কম্পিউটার অন করে চোখ বোলাতেই চোখ জুড়ে ঝরঝর করে জল গরিয়ে আসলো। বুঝতে পারলাম এ্যালার্জির আক্রমনে এখন চোখের ‍উপর। মনের ভেতর তবুও একটি প্রশ্ন, এত জল কোথা থেকে আসে চোখে? তবে কি চোখে কোনও সাগর আছে?  যদি থাকতো সেখানে ডুবে মরতে সাধ আমার। হয়তো ভাসতে ভাসতে মাছ হয়ে যেতাম কোনও এক সময়।

*
সকালের বাজারে গিয়ে এত্তগুলো মাছ কিনে আনতো বাবা। সে জানতো বা এই মাছ কুটতে কুটতে মেজাজ দেখাবে। আর বাবা চলে যাবে বাসার বাইরে কোথাও। মায়ের দেখানো মেজাজ তার দেখার সময় কই?
এক সময়  আমি মাছ হয়ে যাবো মা। আমার রক্তে ভিজে উঠবে সদ্য বিবাহিত বউ এর দা’এর চারপাশ।
আমার গায়ে কি মাছের গন্ধ আছে এখনো?

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১১

পুরুষ পর্ব
বিছানার নীল চাদরে হলুদ পাপড়ির আস্তরণ পড়লে
কি রকম জানি চিত্রকল্পের আবহ তৈরি হয় জানিনা;
যদিও জানি প্রত্যেকটি ফুলশয্যার রাত এখানেই
শুরু ও শেষ হয়

নির্মোহ আনন্দের আশায় আমি চালাই অগ্নুপাতের ঘোড়া
নিমগ্ন দর্শকের ত্বকে তবুও কোন উষ্ণতার ছোয়া নেই
তথাপি যেচে তৈরি করি রসালো সঙ্গমের তৃপ্তি

ভূমিহীন বালক তুমি- ওড়াও কল্পলোকের ঘুড়ি
নেশার চাদড়ে ঢাকি যদি আকাশ তমশাবর্ণরূপ
সেজে ওঠলে উত্তপ্ত আরো কিছু উপাদান আমি
ঢেলে রাখার অবকাশ খুঁজি শুধু নিমগ্ন জলে
যেখানে প্রতিদিন আমার প্রতিপই কেবল আমি

নারী পর্ব

কিবা প্রয়োজন ছিলো উষ্ণতার ফেরি করা!
আমিতো সরিয়ে রাখি সরু আঁচল নিত্য বাহানায়

শখের তালপাখাও যদি কোন শীতের রাতে ঘুরে
কি দোষ তবে পাখার? ভেজা রক্তের স্বাদ লেগে
থাকে তবুও হলুদ আস্তরণে

তোমাকে দিইনি শর আকাশ- তুলে রাখি মেঘে
ভেজামাটির গন্ধ খুঁজে খুঁজে

 

মৈথুন

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

পুরুষ পর্ব
বিছানার নীল চাদরে হলুদ পাপড়ির আস্তরণ পড়লে
কি রকম জানি চিত্রকল্পের আবহ তৈরি হয় জানিনা;
যদিও জানি প্রত্যেকটি ফুলশয্যার রাত এখানেই
শুরু ও শেষ হয়

নির্মোহ আনন্দের আশায় আমি চালাই অগ্নুপাতের ঘোড়া
নিমগ্ন দর্শকের ত্বকে তবুও কোন উষ্ণতার ছোয়া নেই
তথাপি যেচে তৈরি করি রসালো সঙ্গমের তৃপ্তি

ভূমিহীন বালক তুমি- ওড়াও কল্পলোকের ঘুড়ি
নেশার চাদড়ে ঢাকি যদি আকাশ তমশাবর্ণরূপ
সেজে ওঠলে উত্তপ্ত আরো কিছু উপাদান আমি
ঢেলে রাখার অবকাশ খুঁজি শুধু নিমগ্ন জলে
যেখানে প্রতিদিন আমার প্রতিপই কেবল আমি

নারী পর্ব

কিবা প্রয়োজন ছিলো উষ্ণতার ফেরি করা!
আমিতো সরিয়ে রাখি সরু আঁচল নিত্য বাহানায়

শখের তালপাখাও যদি কোন শীতের রাতে ঘুরে
কি দোষ তবে পাখার? ভেজা রক্তের স্বাদ লেগে
থাকে তবুও হলুদ আস্তরণে

তোমাকে দিইনি শর আকাশ- তুলে রাখি মেঘে
ভেজামাটির গন্ধ খুঁজে খুঁজে

 

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):


আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে হাইরাইজ বিল্ডিং উঠে উঠে আমাদের মতো নীচুতলার মানুষদের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানালায় সকালের সূর্যও ইদানিং দেখতে পাই না। সকালের সূর্যও অন্য কারো জানালায় ঊঁকি দিয়ে আমাদের বাসি মুখ দেখায়। অথচ কত রাত পার করেছি সকালের সূর্যদয় দেখার জন্য তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রায়শই আমাদের রাত শুরু থেকে শেষ হইতো স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে। একটার পর একটা, একজনের পর আরেকজনের ছোট বড় সকল স্বপ্নের বৃত্তান্ত আমরা ধীরে ধীরে বর্ণনা করতে করতে নিশি রাত কাটিয়ে আলোর ভোরের জন্য অপো করতাম। হ্যা, ব্রহ্মপুত্র সাক্ষ্মী, সাক্ষ্মী তার বয়ে যাওয়া জল আর নদীর কলকল। এক বর্ণ মিথ্যে আমাদের তখন ছিলো না। কেবল এক অমোঘ সত্যের পাশাপাশি আমি আর সে নিশ্চুপ হাঁটতাম। পড়ন্ত বিকেলে হলুদ রোদের ঘ্রাণ নিতে আমরা দিগন্ত রেখা বরাবর ছুটতাম। ছুটতে ছুটতে কখনো আমাদের কান্তি আসে নি। ঈশ্বর জানে, জানে পেরিয়ে যাওয়া ঘড়ির কাটা; আর কেবল জেনেছিলো সবুজ বিছানার সুতি চাঁদর। আমার ঘুসঘুসে স্যাতস্যাতে ঘরে প্রতিদিন সন্ধ্যা রাত্রী’র পর যখন তার ছায়া পড়তো নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ শুকে শুকেই চিনে ফেলতাম আমরা পরস্পর। অথচ আমরা পরস্পর জীবনের রং ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম মানুষের মাঝে। দেখেছিলাম কোন এক নদীর পাশে কলার ভেলার পেছনে ছুটছে ছোট্ট বালক। যার এক হাতে একটি ছোট্ট লাঠি। যদিবা বাগে পাওয়া যায় ভেলা; তবে তাই হয়ে উঠবে বৈঠা। আমরা এরকম দীবসের রাত্রীদিনের গল্প বলতে পারি অজস্র। আমাদের তাই বাউন্ডুলের বৃত্তান্ত দিন চলেছিলো অসম্পূর্ণ রকম সমাপ্তির দিকে। যেখানের কোন নির্দিষ্ট সীমা রেখা ছিলো না। অথবা ছিলো হয়তো। আমরা ধরতে পারি নি। আর আমাদের না ধরার মাঝে সেই সীমারেখা অতিথি পাখির মত হঠাৎই চলে গেছে সোনালী নদীর জলের মতো। আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরও আকাশে একদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। একদিন আমাদের পৃথিবীতে আসবে তুমুল বন্যা; নিয়ে আসবে পলির আস্তরণ। সেখানে আমাদের শব্দশিল্পের চাষ হবে এক আনন্দের মহোৎসব নিয়ে। নবান্নের উৎসবে চারপাশের দুঃখী মানুষের মুখে অন্নের নিশ্চয়তা। এভাবেই ভবিষ্যতের চারা রোপনের স্বপ্ন দেখতাম আমরা। ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্নের টেবিলে ধূলোর স্তর জমতে থাকে। একদিন আমরা ভুলে যেতে থাকি আমাদেরও কিছু স্বপ্ন ছিলো। ছিলো এক একটি নিজস্ব আকাশ।

বন্ধু আমার, আমার পৃথিবীর আকাশও আজ অনেকটা ঘুটঘুটে। কিছু কিছু রোদের ঝিলিক থাকলেও আছে অনেক দেয়াল। সে দেয়ালের ওপারে আমাদের গন্তব্যের রঙিন আকাশ। কিছু কিছু সময়ে সেই আকাশের রং দেখার জন্য আজও মাঝে মাঝে ছুটে যাই বিভিন্ন প্রান্তে। দেখি সাদা, লাল, নীল, ধূসর, বাদামী নানান রঙের নানান মনের মানুষ। আমার একার তৃষ্ণা মেটে না। মেটে না মনের আশা। সাধ তবুও অতৃপ্ত আত্মার মত কেবলই ধূলো পড়া টেবিলের পুস্তকের মতো বসে থাকে স্মৃতির জানালায়। আমাদের জন্য বসে থাকে সোমেশ্বরীর জল, ব্রহ্মপুত্রের পূর্ণিমা, গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা। আর বসে থাকে টিটকারী দিতে অবাধ্য সময়। তুমি জানো একদিন সময়ের ঘড়িতে টান পড়লে কেবল স্মৃতির ঝাঁপি খুলে নিয়ে বসে থাকতে হবে। আর সে সময় তোমার আর আমার নীরব পাথর কোন এক বেহুলার বিষে বিষাক্রান্ত হয়ে নীল হয়ে হয়ে লীন হয়ে যাবে কালের অতল গহীনে। অথচ আমরা আমাদের একখন্ড আকাশ দিয়ে যে ধূসর মেঘের রং দেখি তা থেকে ঝড়াতে পারি তুমুল বৃষ্টি। মনে পড়ে, একদিন হেমন্তের সন্ধ্যায় আমরা বাউন্ডুলে ডানা মেলে দিয়েছিলাম বাউলের কাছাকাছি? তোমার সেলুলয়েডের ফিতায় ধীরে ধীরে কেবল অস্পৃশ্যতার ডানা ভর করছে। শুনতে পাচ্ছ হেমিলনের বাঁশির সুর? আমি বন্ধু এখনও মাঠের বুকে সবুজ বালকের সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির ন্যায় উড়ে চলেছি। তোমার তো ইদানিং দারুণ আকাল। চারপাশের অন্ধকারে নিজেরই মুখ তুমি চিনতে পারছো না। কেন এমন হলো বলতে পার? তোমার কাছে এর উত্তর আছে কি না জানা নেই। তবে আমি জানি সত্ত্বার গভীরে প্রবেশ করলে হৃদয়ের কার্পণ্য কোনদিন এক অদ্ভুত বিমূর্ততা এসে গ্রাস করে। ণে ণে সে বিমূর্ত প্রেত হয়ে উঠে রাসের প্রতিমূর্তি। তুমি কি সেই রাসের কোন চিহ্ন দেখতে পাও চারপাশে? আমার চারপাশে ইদানিং বরফ জমে, জানো? না, তেমন কিছু না। তবুও বরফের স্বেত শুভ্রতার মাঝেও একধরণের উষ্ণতা আছে সে আমি বুঝতে পারছি ইদানিং। আমি তো মানুষ নই। আপাদমস্তক এক ঘোড়া। যে কিনা দৌড়াতে পারে বটে। রেসে হেরে গেলেই কতল! জান, একদিন আমাকে এক পরি জিজ্ঞেস করেছিলো- পরাজয়ের স্বাদ কেমন? আমি বলেছিলাম- আমিতো আজন্ম পরাজিত, জয়ের স্বাদই জানিনা। পরাজয়ের তাই আলাদা কোন অনুভূতি নেই।

সেইসব সুখানুভূতির পুরনো কাসুন্দি আর না ঘাঁটি। এসো আমরা বিদিত প্রান্তরে কোন এক সরিষােেতর সৌন্দর্যের কথা বলি। আমিতো ধীরে ধীরে একটি নিজস্ব আবাস গড়ে তুলছি। সেখানে কোন ভবন নেই। কেবল বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে আছে শশ্য ভান্ডার। যাকে আমরা তে বলি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্তে সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষ হবে। আমরা খোলা আকাশের নীচেই অতিবাহীত করবো সমস্ত জীবন। কোন ভুল আর ভ্রান্তির যুগ মুছে কেবল নিজস্ব সৃষ্টির ল্েয আমাদের ছুটে চলা হবে সমস্ত পাপের উর্ধে। সত্যি বলতে কি আমার সেই নিজস্ব পৃথিবীর একটা চমৎকার চোখ জুড়ানো আকাশ রয়েছে। সেই আকাশের না নানান সময়ে নানান রং। আমাদের প্রেমের কালে সে না একদিন বাসন্তি রঙে সেজেছিলো। তার সাথে প্রায়ই আমার কথা হয়। তার আঁচলে মুখ ঢাকতে আজ আর আমার কোন দ্বিধা কাজ করে না। তখন মনে হয় কেবল আকাশের নীচেই পৃথিবী নয় আকাশের মাঝেও রয়েছে আরো এক অপার আকাশ। অথচ তেমন একটা আকাশ তোমারও থাকার কথা ছিলো। কোন এক পূর্ণিমা রাতে সে আকাশের জোছনায় গা ভেজানোর কথা ছিলো আমাদের সকলের। সকলেই এখন কেমন আছে? কি করেই বা তারা আকাশের এক একটি রংয়ের কথা ভুলে গেল? আমার কাছে এর কোন হিসেব মেলে না। সে হিসাবের টালি খাতা খুলে বসলে স্বয়ং রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরও আমাদের কাছে অনেক পাওনা দেখা দেবে। সে কথা থাক। আমাদের নিজস্ব ভূবনের আকাশ তোমাকে মাঝে মাঝে নিমন্ত্রণ জানায়। ইচ্ছে হলে তুমি যে কোন সময় চলে আসতে পারো। আমার কাছে তোমার কোন বাঁধা নেই। এ কথা মনে রেখ। তবে তুমি যে একদিন ‘দিগন্তের উপারে’ নিশ্চয়ই দাঁড়াবে। আর তখন সকল শঙ্কার রং হৃদয় হতে মুছে একদিন আকাশ দেখতে ইচ্ছে হইলে চলে এসো আমার এখানে। আমার সবুজ ছাদের নীচে।

একদিন আকাশ দেখতে ইচ্ছে হইলে

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments


আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে হাইরাইজ বিল্ডিং উঠে উঠে আমাদের মতো নীচুতলার মানুষদের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের জানালায় সকালের সূর্যও ইদানিং দেখতে পাই না। সকালের সূর্যও অন্য কারো জানালায় ঊঁকি দিয়ে আমাদের বাসি মুখ দেখায়। অথচ কত রাত পার করেছি সকালের সূর্যদয় দেখার জন্য তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রায়শই আমাদের রাত শুরু থেকে শেষ হইতো স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে। একটার পর একটা, একজনের পর আরেকজনের ছোট বড় সকল স্বপ্নের বৃত্তান্ত আমরা ধীরে ধীরে বর্ণনা করতে করতে নিশি রাত কাটিয়ে আলোর ভোরের জন্য অপো করতাম। হ্যা, ব্রহ্মপুত্র সাক্ষ্মী, সাক্ষ্মী তার বয়ে যাওয়া জল আর নদীর কলকল। এক বর্ণ মিথ্যে আমাদের তখন ছিলো না। কেবল এক অমোঘ সত্যের পাশাপাশি আমি আর সে নিশ্চুপ হাঁটতাম। পড়ন্ত বিকেলে হলুদ রোদের ঘ্রাণ নিতে আমরা দিগন্ত রেখা বরাবর ছুটতাম। ছুটতে ছুটতে কখনো আমাদের কান্তি আসে নি। ঈশ্বর জানে, জানে পেরিয়ে যাওয়া ঘড়ির কাটা; আর কেবল জেনেছিলো সবুজ বিছানার সুতি চাঁদর। আমার ঘুসঘুসে স্যাতস্যাতে ঘরে প্রতিদিন সন্ধ্যা রাত্রী’র পর যখন তার ছায়া পড়তো নিঃশ্বাসের ঘ্রাণ শুকে শুকেই চিনে ফেলতাম আমরা পরস্পর। অথচ আমরা পরস্পর জীবনের রং ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম মানুষের মাঝে। দেখেছিলাম কোন এক নদীর পাশে কলার ভেলার পেছনে ছুটছে ছোট্ট বালক। যার এক হাতে একটি ছোট্ট লাঠি। যদিবা বাগে পাওয়া যায় ভেলা; তবে তাই হয়ে উঠবে বৈঠা। আমরা এরকম দীবসের রাত্রীদিনের গল্প বলতে পারি অজস্র। আমাদের তাই বাউন্ডুলের বৃত্তান্ত দিন চলেছিলো অসম্পূর্ণ রকম সমাপ্তির দিকে। যেখানের কোন নির্দিষ্ট সীমা রেখা ছিলো না। অথবা ছিলো হয়তো। আমরা ধরতে পারি নি। আর আমাদের না ধরার মাঝে সেই সীমারেখা অতিথি পাখির মত হঠাৎই চলে গেছে সোনালী নদীর জলের মতো। আমরা ভেবেছিলাম আমাদেরও আকাশে একদিন পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। একদিন আমাদের পৃথিবীতে আসবে তুমুল বন্যা; নিয়ে আসবে পলির আস্তরণ। সেখানে আমাদের শব্দশিল্পের চাষ হবে এক আনন্দের মহোৎসব নিয়ে। নবান্নের উৎসবে চারপাশের দুঃখী মানুষের মুখে অন্নের নিশ্চয়তা। এভাবেই ভবিষ্যতের চারা রোপনের স্বপ্ন দেখতাম আমরা। ধীরে ধীরে আমাদের স্বপ্নের টেবিলে ধূলোর স্তর জমতে থাকে। একদিন আমরা ভুলে যেতে থাকি আমাদেরও কিছু স্বপ্ন ছিলো। ছিলো এক একটি নিজস্ব আকাশ।

বন্ধু আমার, আমার পৃথিবীর আকাশও আজ অনেকটা ঘুটঘুটে। কিছু কিছু রোদের ঝিলিক থাকলেও আছে অনেক দেয়াল। সে দেয়ালের ওপারে আমাদের গন্তব্যের রঙিন আকাশ। কিছু কিছু সময়ে সেই আকাশের রং দেখার জন্য আজও মাঝে মাঝে ছুটে যাই বিভিন্ন প্রান্তে। দেখি সাদা, লাল, নীল, ধূসর, বাদামী নানান রঙের নানান মনের মানুষ। আমার একার তৃষ্ণা মেটে না। মেটে না মনের আশা। সাধ তবুও অতৃপ্ত আত্মার মত কেবলই ধূলো পড়া টেবিলের পুস্তকের মতো বসে থাকে স্মৃতির জানালায়। আমাদের জন্য বসে থাকে সোমেশ্বরীর জল, ব্রহ্মপুত্রের পূর্ণিমা, গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা। আর বসে থাকে টিটকারী দিতে অবাধ্য সময়। তুমি জানো একদিন সময়ের ঘড়িতে টান পড়লে কেবল স্মৃতির ঝাঁপি খুলে নিয়ে বসে থাকতে হবে। আর সে সময় তোমার আর আমার নীরব পাথর কোন এক বেহুলার বিষে বিষাক্রান্ত হয়ে নীল হয়ে হয়ে লীন হয়ে যাবে কালের অতল গহীনে। অথচ আমরা আমাদের একখন্ড আকাশ দিয়ে যে ধূসর মেঘের রং দেখি তা থেকে ঝড়াতে পারি তুমুল বৃষ্টি। মনে পড়ে, একদিন হেমন্তের সন্ধ্যায় আমরা বাউন্ডুলে ডানা মেলে দিয়েছিলাম বাউলের কাছাকাছি? তোমার সেলুলয়েডের ফিতায় ধীরে ধীরে কেবল অস্পৃশ্যতার ডানা ভর করছে। শুনতে পাচ্ছ হেমিলনের বাঁশির সুর? আমি বন্ধু এখনও মাঠের বুকে সবুজ বালকের সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির ন্যায় উড়ে চলেছি। তোমার তো ইদানিং দারুণ আকাল। চারপাশের অন্ধকারে নিজেরই মুখ তুমি চিনতে পারছো না। কেন এমন হলো বলতে পার? তোমার কাছে এর উত্তর আছে কি না জানা নেই। তবে আমি জানি সত্ত্বার গভীরে প্রবেশ করলে হৃদয়ের কার্পণ্য কোনদিন এক অদ্ভুত বিমূর্ততা এসে গ্রাস করে। ণে ণে সে বিমূর্ত প্রেত হয়ে উঠে রাসের প্রতিমূর্তি। তুমি কি সেই রাসের কোন চিহ্ন দেখতে পাও চারপাশে? আমার চারপাশে ইদানিং বরফ জমে, জানো? না, তেমন কিছু না। তবুও বরফের স্বেত শুভ্রতার মাঝেও একধরণের উষ্ণতা আছে সে আমি বুঝতে পারছি ইদানিং। আমি তো মানুষ নই। আপাদমস্তক এক ঘোড়া। যে কিনা দৌড়াতে পারে বটে। রেসে হেরে গেলেই কতল! জান, একদিন আমাকে এক পরি জিজ্ঞেস করেছিলো- পরাজয়ের স্বাদ কেমন? আমি বলেছিলাম- আমিতো আজন্ম পরাজিত, জয়ের স্বাদই জানিনা। পরাজয়ের তাই আলাদা কোন অনুভূতি নেই।

সেইসব সুখানুভূতির পুরনো কাসুন্দি আর না ঘাঁটি। এসো আমরা বিদিত প্রান্তরে কোন এক সরিষােেতর সৌন্দর্যের কথা বলি। আমিতো ধীরে ধীরে একটি নিজস্ব আবাস গড়ে তুলছি। সেখানে কোন ভবন নেই। কেবল বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে আছে শশ্য ভান্ডার। যাকে আমরা তে বলি। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্তে সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ফসলের চাষ হবে। আমরা খোলা আকাশের নীচেই অতিবাহীত করবো সমস্ত জীবন। কোন ভুল আর ভ্রান্তির যুগ মুছে কেবল নিজস্ব সৃষ্টির ল্েয আমাদের ছুটে চলা হবে সমস্ত পাপের উর্ধে। সত্যি বলতে কি আমার সেই নিজস্ব পৃথিবীর একটা চমৎকার চোখ জুড়ানো আকাশ রয়েছে। সেই আকাশের না নানান সময়ে নানান রং। আমাদের প্রেমের কালে সে না একদিন বাসন্তি রঙে সেজেছিলো। তার সাথে প্রায়ই আমার কথা হয়। তার আঁচলে মুখ ঢাকতে আজ আর আমার কোন দ্বিধা কাজ করে না। তখন মনে হয় কেবল আকাশের নীচেই পৃথিবী নয় আকাশের মাঝেও রয়েছে আরো এক অপার আকাশ। অথচ তেমন একটা আকাশ তোমারও থাকার কথা ছিলো। কোন এক পূর্ণিমা রাতে সে আকাশের জোছনায় গা ভেজানোর কথা ছিলো আমাদের সকলের। সকলেই এখন কেমন আছে? কি করেই বা তারা আকাশের এক একটি রংয়ের কথা ভুলে গেল? আমার কাছে এর কোন হিসেব মেলে না। সে হিসাবের টালি খাতা খুলে বসলে স্বয়ং রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নরও আমাদের কাছে অনেক পাওনা দেখা দেবে। সে কথা থাক। আমাদের নিজস্ব ভূবনের আকাশ তোমাকে মাঝে মাঝে নিমন্ত্রণ জানায়। ইচ্ছে হলে তুমি যে কোন সময় চলে আসতে পারো। আমার কাছে তোমার কোন বাঁধা নেই। এ কথা মনে রেখ। তবে তুমি যে একদিন ‘দিগন্তের উপারে’ নিশ্চয়ই দাঁড়াবে। আর তখন সকল শঙ্কার রং হৃদয় হতে মুছে একদিন আকাশ দেখতে ইচ্ছে হইলে চলে এসো আমার এখানে। আমার সবুজ ছাদের নীচে।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

একটা সময় ছিলো, যখন ঘুম আসতো না চোখে। ক্লান্তি কাকে বলে বুঝতাম না। ক্লান্তির মাসি চিরকাল পেছন পেছন ছুটতো। সময়ের বালুঘড়ির সাথে সাথে আমি ও আমরা পরস্পর নাম না জানা রাস্তায় চষে বেড়াতাম হলুদ বিকাল আর চর্যাপদের ভাষার মতো সন্ধ্যার সময়ে। তবুও আমরা কোনও ক্লান্তির সুর দেখি নি। দেখি নি বিকেলের সূর্য ডুবে গেলে আমার আর সন্ধ্যার সুর একই হয়। সময়- সে তো পাগলা ঘোড়ার চেয়েও আরো বেশি কিছু। ধরতে চাইলেই তার মনে পড়ে সে পাগল! ছুটে বেড়ায় তখন দিগ¦ীদিক। তাকে আর লাগাম দেয়া যায় না। লাগাম দিতে চাইলে সে আরো ছুটে...। আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থেইক্যা কই লইয়া যাস... আমার অবস্থা তখন এই হয় আর কি!
আসলেই কি সময় আমাদের নিয়ে খেলে? না আমরা সময়ের খেলোয়ার হয়ে গেলাম? এই প্রশ্ন প্রায় সন্ধ্যায় আমার মনের ছোট্ট জানালায় উঁকি দেয়; প্রতিবার ঘুমুতে যাওয়ার আগে এর একটা উত্তর প্রস্তুত করি। সকালে উঠে আবার ভুলে যাই সে উত্তর! উত্তর কি তবে আমার হাতে নেই? নাকি ছিলোনা কখনো? আছে হয়তো; কিন্তু উত্তরের প্রতিক্ষায় না থেকে আমরা আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আমরাই কি সেই সুযোগটি দিচ্ছি না সময়কে পাগল হওয়ার?
বন্ধু, এসব প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তর থাকনা ভালো ছাত্রের পরীক্ষায় খাতায় লিখার জন্য। আমরা তো সব সময়ই লাস্টবেঞ্চি ছিলাম! আমাদের মুখোমুখি হতো তাই অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। কেউ কখনো আগুনের মতো জ্বলে উঠত! কেউ বা সাগরের ফেনার মতো মিশে যেতো জলের সাথে পর মুহূর্তেই। আমরা তো সময়ের সারথী ছিলাম। ছিলাম আগামীর কোনও স্বপ্নের পালের হাউয়া। সব কি গুলে খেয়েছে সদ্দ নিমজ্জনের অতীত অ্যালবাম?
জানি কখনো মুছে যাবেনা কিছু কালের নাম। কিছু সম্ভ্রান্ত অক্ষর আর তাদের কীর্তিকলাপ। তবুও আমি তুই আমরা বা আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কেউ কি এখনো প্রতিকূলে দাঁড় বাইছে না? আমার তো চারপাশের দারুণ তোফান! ক্ষণে ক্ষণে ভেসে চলি আবারো ডুবে যাই অস্থির মোহনায় এসে।
তুই... তুই কেমন আছিস দোস্ত?
আমার চারপাশ মাঝে মাঝে তোদের চারপাশের মতো জ্বলে যায়। নেভাতে গেলে আগুন আরো বেড়ে উঠে। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না। কথা ছিলো একটি ডানা ভাঙা শালিকের চিকিৎসা শেষে আমরা অন্য একটি শালিক খোঁজে নিবো। কোথায় সেই শালিক, আর কোথায় আমরা? কোনও প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
যাগ গে... বাদ দে...। শেষ পর্যন্ত এগুলো কেউ মনে রাখবেই না। এসব হতাশার বাক্য আর নাই মনে করলাম। এবার একটু আশার বাণী শোনাই। আশার কথা হলো এই... আসলে এখনো আশার কোনও কথা নেই। শুধুই ফাঁপা কথা। যাকে বলে মিঠে কথায় চিড়ে ভেজানো। আমি এ কাজটিতে বড়াবড়ই দূর্বল! কি বলিস? না হলে আমারও চারপাশে আজ দালানের পরিবর্তে ঘুরতো নীল আকাশ। সে আকাশে মাঝে মাঝে উঁকি দিত তারা, পূর্ণিমার বা অমবশ্যার চাঁদ। প্রায় পূর্ণিমার রাতে বাড়ির ছাদে বসে আমরা তারাদের কীর্তিকলাপে মাতাল হতাম! আসলেই মাতাল হতাম।
প্রতি পূর্ণিমার রাত আমাদের কাছে মাতালের উৎসব হয়ে আসতো! আর আমরা সেই রাতে নিজেদের অতিক্রম করার চেষ্টা করতাম অন্যের মতো করে...। অন্যের মতো করে মানে আমাদের সামনে যারা উদাহরণ হয়ে এসেছিলো বা আজো আছে চে, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, মাদার তেরেসা, সত্যজিৎ ও আরো অনেকে। আমি এখনো কারো কারো মাঝে তাদের ছায়া খুঁজি। কিন্তু ছায়া তো দূরের কথা ছায়ার আশে পার্শের কিছ্ওু পাই না। কারণ এখানে আলোই নেই, ছায়া আসবে কোত্থেকে! আমাকে তাই বার বার হতাশ হতে হয়। তারপর আবারও আশার বাণি শোনাই নিজেকে। এভাবে নয়, ভেঙে পড়লে চলবে না। এইসব সাধারণ আশার বাণি আর কি! ধীরে ধীরে নিজেকেই তাদের ছায়া ভাবতে চেষ্টা করি, আয়নায় দেখি কেমন দেখায়। কোনও মুখ দেখতে পাই না, ছায়া তো আরও না। কিন্তু আমার চারপাশে সেই ছায়াগুলোর ছায়াও দেখি না, কেবল দেখি কিছু অন্ধ বেড়ালের মুখ। মাঝে মাঝে নিজেকেও সেই অন্ধবেড়ালের কথা মনে হয়। মনে হয় আমিও বুঝি সেই তাদেরই একজন!
আসলেই কি আমি তাদেরই একজন বন্ধু? তুই তো উত্তর দিবি না, তোর তো পরীক্ষার খাতাই এলোমেলো হয়ে গেছে। উত্তর কোথায় লিখবি? দেখ আমার একটা বিশাল কপাল আছে... হা হা হা একটু মজা করলাম। আমার কপালে তোর উত্তর লিখতে হবে না। এই কপাল খালিই থাক। কপালে তো আমি আস্থাশীল নই। তোর কি কপালে আস্থা আছে? থাকলে কপালে খারাবি আছে।
ভুইল্যা যা। আমার কথাও ভুইল্যা যা। আমি পচে যাচ্ছি না যদিও... তবে একসময় পঁচে যাওয়ার মিছিলে আমিও শামিল হবো। তখন লোকজন আমাকে ভালো বলবে মনে হয়। এখন তো কিছুই বলে না। আমি অবশ্য এখন কিছু নইও। তোরা, তোর মতো যারা ভালো থাকার চেষ্টা করছিস, ভুলে থাকার চেষ্টা করছিস চাপাশের আনন্দময় যাত্রা তারা অবশ্য তখন আমাকে মনে রাখবিনা। আমিও সেটাই চাই কি? জানি না, হতে পারে তোর বা তোর আমার মতো কয়েকজনের কাছে আমি বা আমার মতো কেউ অস্পষ্ট! থাকলাম না হয় এইভাবেই। ভালো থাকিস।

একটা সময় ছিলো, যখন ঘুম আসতো না চোখে। ক্লান্তি কাকে বলে বুঝতাম না। ক্লান্তির মাসি চিরকাল পেছন পেছন ছুটতো। সময়ের বালুঘড়ির সাথে সাথে আমি ও আমরা পরস্পর নাম না জানা রাস্তায় চষে বেড়াতাম হলুদ বিকাল আর চর্যাপদের ভাষার মতো সন্ধ্যার সময়ে। তবুও আমরা কোনও ক্লান্তির সুর দেখি নি। দেখি নি বিকেলের সূর্য ডুবে গেলে আমার আর সন্ধ্যার সুর একই হয়। সময়- সে তো পাগলা ঘোড়ার চেয়েও আরো বেশি কিছু। ধরতে চাইলেই তার মনে পড়ে সে পাগল! ছুটে বেড়ায় তখন দিগ¦ীদিক। তাকে আর লাগাম দেয়া যায় না। লাগাম দিতে চাইলে সে আরো ছুটে...। আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থেইক্যা কই লইয়া যাস... আমার অবস্থা তখন এই হয় আর কি!
আসলেই কি সময় আমাদের নিয়ে খেলে? না আমরা সময়ের খেলোয়ার হয়ে গেলাম? এই প্রশ্ন প্রায় সন্ধ্যায় আমার মনের ছোট্ট জানালায় উঁকি দেয়; প্রতিবার ঘুমুতে যাওয়ার আগে এর একটা উত্তর প্রস্তুত করি। সকালে উঠে আবার ভুলে যাই সে উত্তর! উত্তর কি তবে আমার হাতে নেই? নাকি ছিলোনা কখনো? আছে হয়তো; কিন্তু উত্তরের প্রতিক্ষায় না থেকে আমরা আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আমরাই কি সেই সুযোগটি দিচ্ছি না সময়কে পাগল হওয়ার?
বন্ধু, এসব প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তর থাকনা ভালো ছাত্রের পরীক্ষায় খাতায় লিখার জন্য। আমরা তো সব সময়ই লাস্টবেঞ্চি ছিলাম! আমাদের মুখোমুখি হতো তাই অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। কেউ কখনো আগুনের মতো জ্বলে উঠত! কেউ বা সাগরের ফেনার মতো মিশে যেতো জলের সাথে পর মুহূর্তেই। আমরা তো সময়ের সারথী ছিলাম। ছিলাম আগামীর কোনও স্বপ্নের পালের হাউয়া। সব কি গুলে খেয়েছে সদ্দ নিমজ্জনের অতীত অ্যালবাম?
জানি কখনো মুছে যাবেনা কিছু কালের নাম। কিছু সম্ভ্রান্ত অক্ষর আর তাদের কীর্তিকলাপ। তবুও আমি তুই আমরা বা আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কেউ কি এখনো প্রতিকূলে দাঁড় বাইছে না? আমার তো চারপাশের দারুণ তোফান! ক্ষণে ক্ষণে ভেসে চলি আবারো ডুবে যাই অস্থির মোহনায় এসে।
তুই... তুই কেমন আছিস দোস্ত?
আমার চারপাশ মাঝে মাঝে তোদের চারপাশের মতো জ্বলে যায়। নেভাতে গেলে আগুন আরো বেড়ে উঠে। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না। কথা ছিলো একটি ডানা ভাঙা শালিকের চিকিৎসা শেষে আমরা অন্য একটি শালিক খোঁজে নিবো। কোথায় সেই শালিক, আর কোথায় আমরা? কোনও প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
যাগ গে... বাদ দে...। শেষ পর্যন্ত এগুলো কেউ মনে রাখবেই না। এসব হতাশার বাক্য আর নাই মনে করলাম। এবার একটু আশার বাণী শোনাই। আশার কথা হলো এই... আসলে এখনো আশার কোনও কথা নেই। শুধুই ফাঁপা কথা। যাকে বলে মিঠে কথায় চিড়ে ভেজানো। আমি এ কাজটিতে বড়াবড়ই দূর্বল! কি বলিস? না হলে আমারও চারপাশে আজ দালানের পরিবর্তে ঘুরতো নীল আকাশ। সে আকাশে মাঝে মাঝে উঁকি দিত তারা, পূর্ণিমার বা অমবশ্যার চাঁদ। প্রায় পূর্ণিমার রাতে বাড়ির ছাদে বসে আমরা তারাদের কীর্তিকলাপে মাতাল হতাম! আসলেই মাতাল হতাম।
প্রতি পূর্ণিমার রাত আমাদের কাছে মাতালের উৎসব হয়ে আসতো! আর আমরা সেই রাতে নিজেদের অতিক্রম করার চেষ্টা করতাম অন্যের মতো করে...। অন্যের মতো করে মানে আমাদের সামনে যারা উদাহরণ হয়ে এসেছিলো বা আজো আছে চে, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, মাদার তেরেসা, সত্যজিৎ ও আরো অনেকে। আমি এখনো কারো কারো মাঝে তাদের ছায়া খুঁজি। কিন্তু ছায়া তো দূরের কথা ছায়ার আশে পার্শের কিছ্ওু পাই না। কারণ এখানে আলোই নেই, ছায়া আসবে কোত্থেকে! আমাকে তাই বার বার হতাশ হতে হয়। তারপর আবারও আশার বাণি শোনাই নিজেকে। এভাবে নয়, ভেঙে পড়লে চলবে না। এইসব সাধারণ আশার বাণি আর কি! ধীরে ধীরে নিজেকেই তাদের ছায়া ভাবতে চেষ্টা করি, আয়নায় দেখি কেমন দেখায়। কোনও মুখ দেখতে পাই না, ছায়া তো আরও না। কিন্তু আমার চারপাশে সেই ছায়াগুলোর ছায়াও দেখি না, কেবল দেখি কিছু অন্ধ বেড়ালের মুখ। মাঝে মাঝে নিজেকেও সেই অন্ধবেড়ালের কথা মনে হয়। মনে হয় আমিও বুঝি সেই তাদেরই একজন!
আসলেই কি আমি তাদেরই একজন বন্ধু? তুই তো উত্তর দিবি না, তোর তো পরীক্ষার খাতাই এলোমেলো হয়ে গেছে। উত্তর কোথায় লিখবি? দেখ আমার একটা বিশাল কপাল আছে... হা হা হা একটু মজা করলাম। আমার কপালে তোর উত্তর লিখতে হবে না। এই কপাল খালিই থাক। কপালে তো আমি আস্থাশীল নই। তোর কি কপালে আস্থা আছে? থাকলে কপালে খারাবি আছে।
ভুইল্যা যা। আমার কথাও ভুইল্যা যা। আমি পচে যাচ্ছি না যদিও... তবে একসময় পঁচে যাওয়ার মিছিলে আমিও শামিল হবো। তখন লোকজন আমাকে ভালো বলবে মনে হয়। এখন তো কিছুই বলে না। আমি অবশ্য এখন কিছু নইও। তোরা, তোর মতো যারা ভালো থাকার চেষ্টা করছিস, ভুলে থাকার চেষ্টা করছিস চাপাশের আনন্দময় যাত্রা তারা অবশ্য তখন আমাকে মনে রাখবিনা। আমিও সেটাই চাই কি? জানি না, হতে পারে তোর বা তোর আমার মতো কয়েকজনের কাছে আমি বা আমার মতো কেউ অস্পষ্ট! থাকলাম না হয় এইভাবেই। ভালো থাকিস।

আমরা তো যুগল সংসার চাইনি... চেয়েছিলাম কেবল ক্লান্তিহীন সন্ধ্যা

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

একটা সময় ছিলো, যখন ঘুম আসতো না চোখে। ক্লান্তি কাকে বলে বুঝতাম না। ক্লান্তির মাসি চিরকাল পেছন পেছন ছুটতো। সময়ের বালুঘড়ির সাথে সাথে আমি ও আমরা পরস্পর নাম না জানা রাস্তায় চষে বেড়াতাম হলুদ বিকাল আর চর্যাপদের ভাষার মতো সন্ধ্যার সময়ে। তবুও আমরা কোনও ক্লান্তির সুর দেখি নি। দেখি নি বিকেলের সূর্য ডুবে গেলে আমার আর সন্ধ্যার সুর একই হয়। সময়- সে তো পাগলা ঘোড়ার চেয়েও আরো বেশি কিছু। ধরতে চাইলেই তার মনে পড়ে সে পাগল! ছুটে বেড়ায় তখন দিগ¦ীদিক। তাকে আর লাগাম দেয়া যায় না। লাগাম দিতে চাইলে সে আরো ছুটে...। আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থেইক্যা কই লইয়া যাস... আমার অবস্থা তখন এই হয় আর কি!
আসলেই কি সময় আমাদের নিয়ে খেলে? না আমরা সময়ের খেলোয়ার হয়ে গেলাম? এই প্রশ্ন প্রায় সন্ধ্যায় আমার মনের ছোট্ট জানালায় উঁকি দেয়; প্রতিবার ঘুমুতে যাওয়ার আগে এর একটা উত্তর প্রস্তুত করি। সকালে উঠে আবার ভুলে যাই সে উত্তর! উত্তর কি তবে আমার হাতে নেই? নাকি ছিলোনা কখনো? আছে হয়তো; কিন্তু উত্তরের প্রতিক্ষায় না থেকে আমরা আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আমরাই কি সেই সুযোগটি দিচ্ছি না সময়কে পাগল হওয়ার?
বন্ধু, এসব প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তর থাকনা ভালো ছাত্রের পরীক্ষায় খাতায় লিখার জন্য। আমরা তো সব সময়ই লাস্টবেঞ্চি ছিলাম! আমাদের মুখোমুখি হতো তাই অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। কেউ কখনো আগুনের মতো জ্বলে উঠত! কেউ বা সাগরের ফেনার মতো মিশে যেতো জলের সাথে পর মুহূর্তেই। আমরা তো সময়ের সারথী ছিলাম। ছিলাম আগামীর কোনও স্বপ্নের পালের হাউয়া। সব কি গুলে খেয়েছে সদ্দ নিমজ্জনের অতীত অ্যালবাম?
জানি কখনো মুছে যাবেনা কিছু কালের নাম। কিছু সম্ভ্রান্ত অক্ষর আর তাদের কীর্তিকলাপ। তবুও আমি তুই আমরা বা আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কেউ কি এখনো প্রতিকূলে দাঁড় বাইছে না? আমার তো চারপাশের দারুণ তোফান! ক্ষণে ক্ষণে ভেসে চলি আবারো ডুবে যাই অস্থির মোহনায় এসে।
তুই... তুই কেমন আছিস দোস্ত?
আমার চারপাশ মাঝে মাঝে তোদের চারপাশের মতো জ্বলে যায়। নেভাতে গেলে আগুন আরো বেড়ে উঠে। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না। কথা ছিলো একটি ডানা ভাঙা শালিকের চিকিৎসা শেষে আমরা অন্য একটি শালিক খোঁজে নিবো। কোথায় সেই শালিক, আর কোথায় আমরা? কোনও প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
যাগ গে... বাদ দে...। শেষ পর্যন্ত এগুলো কেউ মনে রাখবেই না। এসব হতাশার বাক্য আর নাই মনে করলাম। এবার একটু আশার বাণী শোনাই। আশার কথা হলো এই... আসলে এখনো আশার কোনও কথা নেই। শুধুই ফাঁপা কথা। যাকে বলে মিঠে কথায় চিড়ে ভেজানো। আমি এ কাজটিতে বড়াবড়ই দূর্বল! কি বলিস? না হলে আমারও চারপাশে আজ দালানের পরিবর্তে ঘুরতো নীল আকাশ। সে আকাশে মাঝে মাঝে উঁকি দিত তারা, পূর্ণিমার বা অমবশ্যার চাঁদ। প্রায় পূর্ণিমার রাতে বাড়ির ছাদে বসে আমরা তারাদের কীর্তিকলাপে মাতাল হতাম! আসলেই মাতাল হতাম।
প্রতি পূর্ণিমার রাত আমাদের কাছে মাতালের উৎসব হয়ে আসতো! আর আমরা সেই রাতে নিজেদের অতিক্রম করার চেষ্টা করতাম অন্যের মতো করে...। অন্যের মতো করে মানে আমাদের সামনে যারা উদাহরণ হয়ে এসেছিলো বা আজো আছে চে, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, মাদার তেরেসা, সত্যজিৎ ও আরো অনেকে। আমি এখনো কারো কারো মাঝে তাদের ছায়া খুঁজি। কিন্তু ছায়া তো দূরের কথা ছায়ার আশে পার্শের কিছ্ওু পাই না। কারণ এখানে আলোই নেই, ছায়া আসবে কোত্থেকে! আমাকে তাই বার বার হতাশ হতে হয়। তারপর আবারও আশার বাণি শোনাই নিজেকে। এভাবে নয়, ভেঙে পড়লে চলবে না। এইসব সাধারণ আশার বাণি আর কি! ধীরে ধীরে নিজেকেই তাদের ছায়া ভাবতে চেষ্টা করি, আয়নায় দেখি কেমন দেখায়। কোনও মুখ দেখতে পাই না, ছায়া তো আরও না। কিন্তু আমার চারপাশে সেই ছায়াগুলোর ছায়াও দেখি না, কেবল দেখি কিছু অন্ধ বেড়ালের মুখ। মাঝে মাঝে নিজেকেও সেই অন্ধবেড়ালের কথা মনে হয়। মনে হয় আমিও বুঝি সেই তাদেরই একজন!
আসলেই কি আমি তাদেরই একজন বন্ধু? তুই তো উত্তর দিবি না, তোর তো পরীক্ষার খাতাই এলোমেলো হয়ে গেছে। উত্তর কোথায় লিখবি? দেখ আমার একটা বিশাল কপাল আছে... হা হা হা একটু মজা করলাম। আমার কপালে তোর উত্তর লিখতে হবে না। এই কপাল খালিই থাক। কপালে তো আমি আস্থাশীল নই। তোর কি কপালে আস্থা আছে? থাকলে কপালে খারাবি আছে।
ভুইল্যা যা। আমার কথাও ভুইল্যা যা। আমি পচে যাচ্ছি না যদিও... তবে একসময় পঁচে যাওয়ার মিছিলে আমিও শামিল হবো। তখন লোকজন আমাকে ভালো বলবে মনে হয়। এখন তো কিছুই বলে না। আমি অবশ্য এখন কিছু নইও। তোরা, তোর মতো যারা ভালো থাকার চেষ্টা করছিস, ভুলে থাকার চেষ্টা করছিস চাপাশের আনন্দময় যাত্রা তারা অবশ্য তখন আমাকে মনে রাখবিনা। আমিও সেটাই চাই কি? জানি না, হতে পারে তোর বা তোর আমার মতো কয়েকজনের কাছে আমি বা আমার মতো কেউ অস্পষ্ট! থাকলাম না হয় এইভাবেই। ভালো থাকিস।

একটা সময় ছিলো, যখন ঘুম আসতো না চোখে। ক্লান্তি কাকে বলে বুঝতাম না। ক্লান্তির মাসি চিরকাল পেছন পেছন ছুটতো। সময়ের বালুঘড়ির সাথে সাথে আমি ও আমরা পরস্পর নাম না জানা রাস্তায় চষে বেড়াতাম হলুদ বিকাল আর চর্যাপদের ভাষার মতো সন্ধ্যার সময়ে। তবুও আমরা কোনও ক্লান্তির সুর দেখি নি। দেখি নি বিকেলের সূর্য ডুবে গেলে আমার আর সন্ধ্যার সুর একই হয়। সময়- সে তো পাগলা ঘোড়ার চেয়েও আরো বেশি কিছু। ধরতে চাইলেই তার মনে পড়ে সে পাগল! ছুটে বেড়ায় তখন দিগ¦ীদিক। তাকে আর লাগাম দেয়া যায় না। লাগাম দিতে চাইলে সে আরো ছুটে...। আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থেইক্যা কই লইয়া যাস... আমার অবস্থা তখন এই হয় আর কি!
আসলেই কি সময় আমাদের নিয়ে খেলে? না আমরা সময়ের খেলোয়ার হয়ে গেলাম? এই প্রশ্ন প্রায় সন্ধ্যায় আমার মনের ছোট্ট জানালায় উঁকি দেয়; প্রতিবার ঘুমুতে যাওয়ার আগে এর একটা উত্তর প্রস্তুত করি। সকালে উঠে আবার ভুলে যাই সে উত্তর! উত্তর কি তবে আমার হাতে নেই? নাকি ছিলোনা কখনো? আছে হয়তো; কিন্তু উত্তরের প্রতিক্ষায় না থেকে আমরা আরও একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আমরাই কি সেই সুযোগটি দিচ্ছি না সময়কে পাগল হওয়ার?
বন্ধু, এসব প্রশ্ন আর প্রশ্নের উত্তর থাকনা ভালো ছাত্রের পরীক্ষায় খাতায় লিখার জন্য। আমরা তো সব সময়ই লাস্টবেঞ্চি ছিলাম! আমাদের মুখোমুখি হতো তাই অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। কেউ কখনো আগুনের মতো জ্বলে উঠত! কেউ বা সাগরের ফেনার মতো মিশে যেতো জলের সাথে পর মুহূর্তেই। আমরা তো সময়ের সারথী ছিলাম। ছিলাম আগামীর কোনও স্বপ্নের পালের হাউয়া। সব কি গুলে খেয়েছে সদ্দ নিমজ্জনের অতীত অ্যালবাম?
জানি কখনো মুছে যাবেনা কিছু কালের নাম। কিছু সম্ভ্রান্ত অক্ষর আর তাদের কীর্তিকলাপ। তবুও আমি তুই আমরা বা আমাদের চারপাশের মানুষগুলো কেউ কি এখনো প্রতিকূলে দাঁড় বাইছে না? আমার তো চারপাশের দারুণ তোফান! ক্ষণে ক্ষণে ভেসে চলি আবারো ডুবে যাই অস্থির মোহনায় এসে।
তুই... তুই কেমন আছিস দোস্ত?
আমার চারপাশ মাঝে মাঝে তোদের চারপাশের মতো জ্বলে যায়। নেভাতে গেলে আগুন আরো বেড়ে উঠে। অথচ এরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না। কথা ছিলো একটি ডানা ভাঙা শালিকের চিকিৎসা শেষে আমরা অন্য একটি শালিক খোঁজে নিবো। কোথায় সেই শালিক, আর কোথায় আমরা? কোনও প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
যাগ গে... বাদ দে...। শেষ পর্যন্ত এগুলো কেউ মনে রাখবেই না। এসব হতাশার বাক্য আর নাই মনে করলাম। এবার একটু আশার বাণী শোনাই। আশার কথা হলো এই... আসলে এখনো আশার কোনও কথা নেই। শুধুই ফাঁপা কথা। যাকে বলে মিঠে কথায় চিড়ে ভেজানো। আমি এ কাজটিতে বড়াবড়ই দূর্বল! কি বলিস? না হলে আমারও চারপাশে আজ দালানের পরিবর্তে ঘুরতো নীল আকাশ। সে আকাশে মাঝে মাঝে উঁকি দিত তারা, পূর্ণিমার বা অমবশ্যার চাঁদ। প্রায় পূর্ণিমার রাতে বাড়ির ছাদে বসে আমরা তারাদের কীর্তিকলাপে মাতাল হতাম! আসলেই মাতাল হতাম।
প্রতি পূর্ণিমার রাত আমাদের কাছে মাতালের উৎসব হয়ে আসতো! আর আমরা সেই রাতে নিজেদের অতিক্রম করার চেষ্টা করতাম অন্যের মতো করে...। অন্যের মতো করে মানে আমাদের সামনে যারা উদাহরণ হয়ে এসেছিলো বা আজো আছে চে, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, মাদার তেরেসা, সত্যজিৎ ও আরো অনেকে। আমি এখনো কারো কারো মাঝে তাদের ছায়া খুঁজি। কিন্তু ছায়া তো দূরের কথা ছায়ার আশে পার্শের কিছ্ওু পাই না। কারণ এখানে আলোই নেই, ছায়া আসবে কোত্থেকে! আমাকে তাই বার বার হতাশ হতে হয়। তারপর আবারও আশার বাণি শোনাই নিজেকে। এভাবে নয়, ভেঙে পড়লে চলবে না। এইসব সাধারণ আশার বাণি আর কি! ধীরে ধীরে নিজেকেই তাদের ছায়া ভাবতে চেষ্টা করি, আয়নায় দেখি কেমন দেখায়। কোনও মুখ দেখতে পাই না, ছায়া তো আরও না। কিন্তু আমার চারপাশে সেই ছায়াগুলোর ছায়াও দেখি না, কেবল দেখি কিছু অন্ধ বেড়ালের মুখ। মাঝে মাঝে নিজেকেও সেই অন্ধবেড়ালের কথা মনে হয়। মনে হয় আমিও বুঝি সেই তাদেরই একজন!
আসলেই কি আমি তাদেরই একজন বন্ধু? তুই তো উত্তর দিবি না, তোর তো পরীক্ষার খাতাই এলোমেলো হয়ে গেছে। উত্তর কোথায় লিখবি? দেখ আমার একটা বিশাল কপাল আছে... হা হা হা একটু মজা করলাম। আমার কপালে তোর উত্তর লিখতে হবে না। এই কপাল খালিই থাক। কপালে তো আমি আস্থাশীল নই। তোর কি কপালে আস্থা আছে? থাকলে কপালে খারাবি আছে।
ভুইল্যা যা। আমার কথাও ভুইল্যা যা। আমি পচে যাচ্ছি না যদিও... তবে একসময় পঁচে যাওয়ার মিছিলে আমিও শামিল হবো। তখন লোকজন আমাকে ভালো বলবে মনে হয়। এখন তো কিছুই বলে না। আমি অবশ্য এখন কিছু নইও। তোরা, তোর মতো যারা ভালো থাকার চেষ্টা করছিস, ভুলে থাকার চেষ্টা করছিস চাপাশের আনন্দময় যাত্রা তারা অবশ্য তখন আমাকে মনে রাখবিনা। আমিও সেটাই চাই কি? জানি না, হতে পারে তোর বা তোর আমার মতো কয়েকজনের কাছে আমি বা আমার মতো কেউ অস্পষ্ট! থাকলাম না হয় এইভাবেই। ভালো থাকিস।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

ক.
হঠাৎই আদালত চত্ত্বরে একটি শোরগোল শুরু হলো। অথচ তেমন কোন বিষয় না বিষয়টা। মাত্র দুই বছর কারাবাসের হুকুম হয়েছে এক আসামীর। আর এই আদেশেই তার স্বজনদের এই আহাজারী। অথচ লোকজন এই ঘটনার আকস্মিকতায় আশ্চর্য হয়ে গেছে। আসামীদ্বয় জেলখানার দিকে চলে যাওয়ার পর পেছন থেকে লোকজন নানা কথা বলা শুরু করছিলো। তার মাঝে একজন বলছিলো, দশ বছর হলে তো না জানি কি হইতো? পেছন থেকে আরও একজন বলে উঠল, মনে হয় মরে গেলেও এরকম আহাজারী শোনা যেত কি না সন্দেহ! এরকম বিচিত্রতার মাঝেই জীবন যাপন করছে রফিক। মাঝে মাঝে তার এই কাজ মনে হয় বিরক্তির চরমতম এক উদাহরণ, মাঝে মাঝে খুব উৎসাহ ব্যঞ্জক। এই আশা নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় তার রুটি-রোজগারের একমাত্র উৎসটি। অথচ এরকম নাও হতে পারতো। হতে পারতো আরও চমৎকার একটি যাপনীয় জীবন। অথবা তার চেয়ে খারাপও তো হতে পারতো। যে কোন রকমই হতে পারতো। এই কাজটি সে হঠাৎই পেয়ে যায়। কাজটিতে টাকা কম। তারপরও ঢাকা শহরে বেঁচে বর্তে থাকতে হলে ন্যূনতম এরকম একটি কাজ না হলে কিন্তু চলে না। যদিও এরচেয়ে অনেক কম টাকায় এরচেয়ে কম খরচের জীবন রয়েছে। কিন্তু রফিকের যাপিত জীবনের যে ধারাবাহিকতা তার জন্য ন্যূনতম এই যথেষ্ঠ। প্রকৃত অর্থে তার সম সাময়িকেরা তার মত কেউ নেই। এই জায়গাটাতেই তার যত তৃপ্তি। অন্যরা হয় তারচেয়ে এক বা দুই ধাপ এগিয়ে; নয়তো আরো একধাপ নিচে। তার ধাপে কেউ নেই বলেই কিনা সে হয়তো এই কাজটি করতে তৃপ্তি পায়। কাজটিও তেমন কিছু না। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সচিবের মতই। কিন্তু ব্যক্তিগত সচিব নয়। যেমন ব্যক্তিগত সচিব তার কর্মকান্ডের হিসাব নিকাশ সামলান সে সামলান তার স্বপ্নের হিসাব নিকাশ। বলতে গেলে রাজনৈতিক ব্যক্তিটির কোন প্রকার সৃজনভাবনার অধিকারী না হলেও বর্তমানে তার নির্বাচিত এলাকায় সে যথেষ্ঠ সৃজনশীল বলে পরিচিতি পাচ্ছে। তার কারণ রফিকের এই কাজ। রফিকের সাথে তার প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার সময় একটা সিটিং হয়। এই সিটিং এর মাঝে সারাদিনের কাজের বিশ্লেষণ এবং আগামীতে এই কাজকর্মের ভেতর কিভাবে সৃজন মানসিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় তাই নিয়ে এই বৈঠক। বৈঠক চলে সপ্তাহে সাত দিনই। ছয় দিনের কর্মচাঞ্চল্যের একটি কাঠামোবদ্ধ সিটিং। এবং মাস শেষে কি কি কর্ম চাঞ্চল্য জনসাধারণের মাঝে তাকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলবে এই বিষয়গুলোও আলোচনা হতো রফিকের সাথে। রফিকের আলাদা একটি কবি সত্ত্বা রয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে হর হামেশাই এই কবির কবিতা ছাপা হয়। তার কবি নামখানাও চোস্ত। ফলে এই নামের কবি সত্ত্বার আড়ালে কোন প্রকার রোজগার না থাকায় পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছিলো রফিক। আর শেষ পর্যন্ত এই বোঝা থেকে সে সরে দাঁড়াতে পেরেছে সেটাই বা কম কিসে? নিজেকে চালাতে পারার এই আনন্দ তার কম নয়। তার সম সাময়িক বন্ধুরা যারা কবিতা লেখে, যারা পড়াশোনা করে সকলেই এই মুহূর্তে বেকার। অথচ রফিক কিন্তু নিজেকে চালাতে পারছে।
নেতার একটা বিশেষ প্রোগ্রাম ছিলো আদালত পাড়ায়। আর তার চলে যাওয়ার পর রফিক আদালত চত্ত্বরে এসেছে পূর্ব সফরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। বিভিন্ন পরিচিত এডভোকেটের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কেমন আছেন? কি খবর? এই সব। বেশ কিছুণ যেখানে বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই প্রসঙ্গান্তরে তিনি নেতার প্রসঙ্গ তুলেন। লোকজন বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখান। কেউ কেউ বলেন, আমাদের নেতা তার বিগত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনও আদালত চত্ত্বরে আসেন নাই, কিন্তু এবার আসছেন তাতে এখানকার যে তার সমর্থক সমাজ রয়েছে তারা খুব খুশি হয়েছে। তবে এই আসা যাওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তাতে এই সমর্থকেরা আরও বেশি খুশি হবেন। অথচ তার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়াও সে পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, এটা একটা স্যানসেটিভ জায়গা। জনসাধারনের নিরপে বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্যই একজন জনপ্রতিনিধির আদালত চত্ত্বরে আসা একদম ঠিক হয় নি। এতে বিচারকরা ও এক শ্রেণীর আইনজীবীরা প্রভাবিত হতে পারে। যা ন্যায় বিচারের জন্য প্রতিবন্ধক। আরও আশ্চর্য হয়েছে রফিক বিরোধী দলীয় আইনজীবীদের কথায়। তারা বলছে, আরে বুঝেন না, কোন কাজ নাই তো আসছে মতা দেখাতে! আমরা কিছু বুঝিনা মনে করেন, সব লোক দেখানো। এত কিছুর উপর নির্ভর করে রফিকের সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। এক দিক থেকে বিষয়টা তার ভালোই লাগে। যে মানুষটিকে কিছুদিন পূর্বে দূরে থেকে দেখতে হতো; একমাত্র নির্বাচনের সময় অথবা জনসভায়ই কেবল তাকে কাছ থেকে পাওয়া যেত সেই মানুষটিকেই এখন সে পরামর্শ দেয়; ভাবতেই রফিক মাঝে মাঝে শিহরিত হয়। অথচ এই কাজটা পাওয়ার আগে তাকে সে একবারই দেখতে পেরেছিলো। সেই একবার আবার নির্বাচনী জনসভায়, অনেক দূরের দেখা। এখন এই লোকটির সাথে তার নিত্য দেখা হয়, কথা হয়, আলাপ পরামর্শ হয়। রফিকের ুদ্র জীবনে এ এক আশ্চর্য ঘটনা। তাকে কেন্দ্র করে মূল কাজটি করতে হয় মাসের শেষে বা প্রথম সপ্তাহে। তখনই সারা মাসের কর্ম পরিকল্পনার ভুল বা দূর্বলতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানায় রফিক। এখন পর্যন্ত যে সকল সিদ্ধান্ত সে জানিয়েছে তার সব কটিই দারুণ কাজে লেগেছে বলে সে নিজেও তার সাফল্যে কিছুটা আনন্দিত। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে বলে মোটেই ভাবিত নয় সে। চলছে তো... এই বেশ।


খ.
ইদানীং তার এই কাজটিকে ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু ভাবাচ্ছে। অতিরিক্ত মানে একটু নিজের মত বেশ কিছু। প্রথমত তার কবি সত্ত্বা একটু ঝিমিয়ে পড়ছে এতে। এই কাজটি শুরু করার আগে প্রায় প্রত্যেক মাসে একটি না পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হতো। বেশ কিছুদিন পর পর একটা আধটা গল্প বা গদ্য। আরো নিত্য নতুন আইডিয়া প্রকাশ হতো মাথা থেকে। চমক দেওয়ার মত বেশ কিছু আইডিয়া তার চারপাশে চাউর হলেই বন্ধু মহলে বিশেষ একটা সুনাম ক্ুঁড়িয়েছে রফিক। কেউ কেউ তাকে মজা করে ডাকতো পরিকল্পণা প্রতিমন্ত্রী। এই সুনামের সুবাদেই জুটে গিয়েছিলো তার প্রাণের মানুষ। ধীরে ধীরে তার প্রাণের মানুষ এই সময়ে আরও কাছে এসেছিলো। যাকে নিয়েই ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখা শুরু করেছিলো রফিক। কিন্তু এই সময়ে রফিকের এই কাজটিই যত গন্ডগোল বাধিয়েছে। এই কাজটি পাওয়ায় সে অন্য দিকে কোনও চেষ্টাও করছে না। অথচ একটি স্থায়ী চাকরী হলে সংসার বাঁধার চিন্তাটা করতে পারতো। এখন একপাশে নতুন ধরনের একটি কাজ। কাজটিতে একটি মাসিক পরিকল্পণা সফল হলেই কেবল তার টাকা পয়সা মিলে। পাশাপাশি নেতার প্রাপ্য জনগনের অভিনন্দনের একটা বড় অংশও মেলে তার। এ নিয়ে তার গর্বও কম নয়। এ পথে আর কিছু পয়সা হলে সে এই পেশাতেই স্থায়ী হতে চেষ্টা করতো। অবশ্য এর জন্য কষ্টও কম নয়, এই জন্য তাকে জনগনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে হয় অনেক। মনস্তত্ত্বের তাত্ত্বিক জ্ঞান আর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর মাথা খাটাতে হয়। আর এর ফলে তার সাহিত্য চর্চা ব্যহত হয়। কিছুদিন পূর্বে একটা পত্রিকার বিশেষ একটা এসাইনমেন্ট তাকে দিয়ে লেখাতে চেয়েছিলো সাহিত্য পাতার সম্পাদক, তার সময় ছিলো না বলে সে রাজি হয় নি। অথচ সেই সাহিত্য সম্পাদক তাকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো সেই পত্রিকা অফিসে একটা কাজ যোগার করে দেবে। কাজটি পেলে সে একটু থিতু হতে পারতো। কিন্তু কি এক দুর্বোধ্য ভালোবাসায় সে এই ফ্রি-ল্যান্স কাজটি করছে। অথচ তা কিন্তু কখনোই পারমানেন্ট নয়। এদিকে তার প্রেমিকার বাড়িতে প্রতিনিয়ত বিয়ের তাড়া। এই বুঝি হয় হয়। এখন কোনও রকমে আটকে আছে কিন্তু যে কোন মুহূর্তে বিয়েটা হয়ে যেতে পারে। আর তার বিয়ে হয়ে গেলে তার অবস্থা কি হবে সে কিছু ভাবতেই পারছে না। ইদানিং মেয়েটি তার একটা বড় অবলম্বন হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করে এই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে রফিক সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বে। মাঝে মাঝে যে এই ভাবনা তাকে পেয়ে বসে। তখন তার গবেষনা শিকেয় ওঠে। জাহান্নামে যায় তার এ্যাডভাইজিং জব। মনে হয় পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট দোজখে বসবাস করছে সে। এই সময় অন্য কোন ভাবানাও তার মাথায় আসে না। কি থেকে কি করবে ভেবে পায় না। তবে সা¤প্রতিক কালে অবশ্য তার একটা বড় পরিকল্পণা সফল হয়েছে। যার ফলশ্র“তিতে একটা বড় অঙ্কের টাকাও পেয়েছে। বস কে বলেছিলো এক সপ্তাহের ছুটি দিতে। এতে মানসিক মুক্তি মিললে পরবর্তিতে আরও বেশি ক্রিয়েটিভ আইডিয়া মাথা থেকে আসতে পারে। কিন্তু বস বললো সামনে বাজেট। তাই বাজেটের জন্য অনেক কাজ। এই সময় তোমার এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং তুমি সকাল সন্ধ্যা একটা ট্যুর কাটিয়ে আস। এতে আপাতত বাজেটের পূর্বে তুমি কিছুদিন ফ্রেশ থাকতেও পারবে, বাজেটটাও শেষ হয়ে যাবে। পরে না হয় আরেকবার এক সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে এসো। বসের হুকুম শিরোধার্য মনে করে রফিক একদিনের ছুটি নিয়েই আপাতত শান্ত। তবে এই ছুটিটা সে কাটিয়েছে তার প্রেমিকাকে নিয়েই। সারা দিনের ছুটি কাটাতে তারা চলে গিয়েছিলো তাদের শহর যমুনার চর দেখতে। বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুরে বালু আর বালুর চর। এই চরের মাঝে অল্প অল্প করে ধান বোনা। মাঝে মাঝে অন্য শস্যও চোখে পড়ে। তরমুজ, বাঙ্গি’র মত বালু মাটিতে হওয়া শস্যগুলো দেখিয়ে রফিক রূপাকে বলেছিলো আমি হলাম এই নদীর মতো। বর্ষায় প্লাবন আর খরায় চর। আর তুমি হলে এই শস্যের তে। মাঝে মাঝে ফসলের আনাগোনায় আমাকে সতেজ রাখার চেষ্টা করা। তার কথায় মৃদু মৃদু হেসেছিলো রূপা। তার চোখে দেখা দিয়েছিলো এক আনন্দের ঝিলিক। এই আনন্দই রফিকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসার পর রফিক সব কিছু নিজের করে ভাবতে পেরেছিলো বলতে গেলে রূপার একক কৃতিত্বে। রূপা এই সময় তাকে প্রচুর সহায়তা করেছে। রূপার নিজেরও তখন পরিবারে চলছিলো টানা পোড়েন। কিন্তু সেই টানা-পোড়েন কে দু পায়ে পিষে এগিয়ে এসেছিলো রফিকের জীবনকে সুস্থির করতে। দুজনেরই সামনে তখন মাস্টার্স পরীা। অথচ রফিকের একমাত্র বড় ভাই তাকে যখন আর টাকা পয়সা দিতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়ে দিলো তখন রফিক সম্পূর্ণ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলো। কারণ, টিউশনির মতো শিা বাণিজ্য করে সে কখনোই টাকা পয়সা কামানোর কথা ভাবতেই পারে না। এটা তার কাছে অশিার ফল বলে মনে হয়। মনে হয় যারা প্রকৃত শিায় শিতি হতে পারে নি তারাই কেবল এই পেশায় যেতে পারে। যার ফলে অল্পতেই অতলে চলে যাওয়ার এক বিরাট বিপদ থেকে রফিক মুক্তি পেয়েছে সেই সময়। অথচ এই সময় বিশেষ করে এই পরীা শেষের পর রূপার বিয়েটা কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। একমাত্র উপায় হলো একটা চাকরী যোগার করা। কিন্তু রফিকের কোন গত্যন্তর না দেখে রূপা বলে উঠল আমার পে আর একদিনও এভাবে চলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আর পরিবার কে দমিয়ে রাখতে পারছি না। তুমি একটা কিছু কর। না হলে আর কিভাবে? এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এই কথা শোনার পর রফিক তার নেতা’র সাথে এক বৈঠকে বসলো। তার বস তাকে বললো তুমি আর কটা দিন অপো কর। বাজেটের প্রথম অধিবেশন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাজেট ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু আমি আমার এলাকার জন্য কতটুকু বরাদ্দ পাব আগামী এক অর্থ বছরে তা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরই আমি তোমার কাজের একটা পরিপূর্ণ চাহিদা আমি তোমাকে জানাতে পারব। আর মাত্র কটা দিন। এত সাবলীল ভাষায় এবং ধীরস্থীর ভাবে তিনি বললেন যে, তার মুখের উপর অন্য কোন কথা বলা গেল না। অথচ তিনি তার স্ত্রীর কাছেও একই রকম ভাবে কথা বলেন কি না রফিকের যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। পর মুহূর্তেই সে ভাবলো সা¤প্রতিক কালের নেতারা তো এই রকমই হয়। মুখের কথা দিয়েই তো জনগণকে ভুলিয়ে রাখে। কাজে আর কতণ। হয়তো তার আগামী পরিকল্পণার পর তাকে আশা দিয়েই রাখবে, কোনও ফলাফল পাবে না। তাই ভবিষ্যতের কথা তাকে ভাবতেই হচ্ছে। কি করবে সে? কী’ই বা করতে পারে।

গ.
শুরু হয়ে গেল নতুন চাকরি খোঁজাখোঁজি। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে একটু আগে ভাগে উঠে হকারকে বলে দিল একটা করে চাকরির পত্রিকা দেওয়ার জন্য। আজ থেকে চাকরি খোঁজা শুরু করে দিয়েছে এই কথা জানিয়ে দিলো রূপাকে। জানানো হল আর মাত্র পনেরটা দিন বাসাকে ম্যানেজ করো। এই পনের দিনের ভেতর একটা কাজ যোগার ঠিকই করে নিব। তারপর তো আর কোনও চিন্তা থাকবে না। কিন্তু রফিকের কথায় রূপা পুরোপুরি আশ্বস্থ হতে পারে না। বলে এই ভাবে বললেই তো হবে না। কিছু একটা করে দেখাতে হবে। আমি না হয় এই পনের দিন কোনও মতে পরিবারকে বোঝালাম। কিন্তু তারপর কি হবে আমি আর বলতে পারছি না। আমার পরিবার ুধার্ত বাঘের মত হয়ে হয়ে গেছে। কোনও ভাবে আমাকে একটা বিয়ে দিতে পারলেই তাদের হলো। বুঝতে পারছো? হুম, এই বলে রফিক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। সপ্তাহান্তে চাকরীর বিজ্ঞাপনের পত্রিকাটা এলে খুব মনোযোগ সহকারে পত্রিকাটির প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। একটা বিজ্ঞাপন তার পছন্দ হয়ে গেল। তারা একটি মাত্র লোক নিয়োগ করবে। স্নাতকোত্তর চেয়েছে। তার স্নাতকোত্তর না হলেও যে অভিজ্ঞতা তার বিগত ছয় মাসে সে অর্জন করেছে তাতে এই চাকরিটা সে পেয়েও যেতে পারে। ওয়াক ইন ইন্টারভিউ সার্কুলারে আগামী সপ্তাহেই তাকে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। আজ থেকে আর মাত্র আট দিন সময়। এদিকে রূপাকে দেয়া দিন কয়েকের সময় শেষ হয়ে আসছে। পাঁচদিন ইতিমধ্যে চলে গেছে। আর মাত্র দশ দিন। এই শেষ ক’দিনে একটা কবিতাও লিখতে পারে নি রফিক। প্রচণ্ড মানসিক চাপে কোনও প্রকার কবিতার কথা মাথায়ই আনতে পারে নি। কবিতা লিখতে বসলেই শুধু পরামর্শ মাথায় আসে। কবিতার খসড়াগুলো একে একে পরামর্শের খসড়া হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই চিন্তায় সে আরও বেশি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ভাবে কবিতা কি আর লিখতে পারবো না? তাহলে বাঁচবো কিভাবে? কবিতা আর রূপাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না বলে নিজেকে মনে করে। পরামর্শ দেয়ার এই কাজটি সে এতই ভালোবেসে ফেলেছে যে এই ধরনের কাজই সে এখন খুঁজতেছিলো। ভাগ্যে থাকলে পেয়েও যেতে পারে এই কাজটি। অবশেষে এই করে করেই তার চাকরির ইন্টারভিউ এর দিন চলে এলো। আগের দিন বিকালেই তার বস জন নন্দিত নেতার কাছ থেকে একটা বিশেষ সুপারিশ তার জীবন-বৃত্তান্তে নিয়ে নিলো। ঠিক সুপারিশ বলা যায় না, তবে তা সুপারিশের মতই একরকম। তার অধীনে তার জন্য যে উপদেশক হিসেবে তিনি কাজ করেছে তার একটি সনদপত্র বলতে গেলে। তবে এই সনদপত্রের মূল ল্য হলো কাজটি যেন হয়ে যায়। কাজটি হলেই আপাতত রূপাকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ভেবেই সে রওনা হলো ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্যে।

ঘ.
রূপার বাড়িতে দীর্ঘ দিনের চাপ আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না। সেই দিন, যে দিন রফিক ঢাকা রওনা হলো। সেই দিন সন্ধ্যায় কোন প্রকার বিনা নোটিশে রূপার বিয়ে হয়ে গেল। এর মাঝ দিয়ে রফিকের বেঁচে থাকার একটি প্রধান অমলম্বন হারালো তার অজান্তেই। ঢাকা থেকে যখন চাকরির সংবাদটা নিয়ে ফিরে আসলো রফিক দেখলো প্রথমতম নির্ভরতার স্থান আর তার নেই। আগামী সপ্তাহেই তার চাকরির জয়েনিং। সেলারি প্রাথমিক অবস্থায় পঁচিশ হাজার টাকা। পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে আরও বাড়বে। আর না পারলে চাকরি থাকবে না। এই শর্তে পাওয়া চাকরিটা পেয়েছিলো রফিক। ভেবে পাচ্ছিলো না তখন সে কি করবে? রফিক আহাম্মেদ নামের কবি সত্ত্বা আর রফিকুল ইসলাম নামের যে বেসরকারি কোম্পানীর চীফ এ্যাডভাইজারের পদটি তার এখন রয়েছে কোনটিকে সে বেছে নেবে? আস্থার কোনও প্রতিদান সে দিতে পারে নি রূপার কাছে। কবিতাও তার কাছে রাখছে না আস্থা। এই কান্তিলগ্নের শেষে আগামীকাল ভোরে বাড়িওয়ালা আসবে এই মাসের ভাড়া নিতে আর আগামী মাসে সে থাকবে কি না জানতে। এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাক। সকালে যা বলার তাই তো বলা যাবে। 

পদের নাম চীফ এ্যাডভাইজার

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

ক.
হঠাৎই আদালত চত্ত্বরে একটি শোরগোল শুরু হলো। অথচ তেমন কোন বিষয় না বিষয়টা। মাত্র দুই বছর কারাবাসের হুকুম হয়েছে এক আসামীর। আর এই আদেশেই তার স্বজনদের এই আহাজারী। অথচ লোকজন এই ঘটনার আকস্মিকতায় আশ্চর্য হয়ে গেছে। আসামীদ্বয় জেলখানার দিকে চলে যাওয়ার পর পেছন থেকে লোকজন নানা কথা বলা শুরু করছিলো। তার মাঝে একজন বলছিলো, দশ বছর হলে তো না জানি কি হইতো? পেছন থেকে আরও একজন বলে উঠল, মনে হয় মরে গেলেও এরকম আহাজারী শোনা যেত কি না সন্দেহ! এরকম বিচিত্রতার মাঝেই জীবন যাপন করছে রফিক। মাঝে মাঝে তার এই কাজ মনে হয় বিরক্তির চরমতম এক উদাহরণ, মাঝে মাঝে খুব উৎসাহ ব্যঞ্জক। এই আশা নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় তার রুটি-রোজগারের একমাত্র উৎসটি। অথচ এরকম নাও হতে পারতো। হতে পারতো আরও চমৎকার একটি যাপনীয় জীবন। অথবা তার চেয়ে খারাপও তো হতে পারতো। যে কোন রকমই হতে পারতো। এই কাজটি সে হঠাৎই পেয়ে যায়। কাজটিতে টাকা কম। তারপরও ঢাকা শহরে বেঁচে বর্তে থাকতে হলে ন্যূনতম এরকম একটি কাজ না হলে কিন্তু চলে না। যদিও এরচেয়ে অনেক কম টাকায় এরচেয়ে কম খরচের জীবন রয়েছে। কিন্তু রফিকের যাপিত জীবনের যে ধারাবাহিকতা তার জন্য ন্যূনতম এই যথেষ্ঠ। প্রকৃত অর্থে তার সম সাময়িকেরা তার মত কেউ নেই। এই জায়গাটাতেই তার যত তৃপ্তি। অন্যরা হয় তারচেয়ে এক বা দুই ধাপ এগিয়ে; নয়তো আরো একধাপ নিচে। তার ধাপে কেউ নেই বলেই কিনা সে হয়তো এই কাজটি করতে তৃপ্তি পায়। কাজটিও তেমন কিছু না। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সচিবের মতই। কিন্তু ব্যক্তিগত সচিব নয়। যেমন ব্যক্তিগত সচিব তার কর্মকান্ডের হিসাব নিকাশ সামলান সে সামলান তার স্বপ্নের হিসাব নিকাশ। বলতে গেলে রাজনৈতিক ব্যক্তিটির কোন প্রকার সৃজনভাবনার অধিকারী না হলেও বর্তমানে তার নির্বাচিত এলাকায় সে যথেষ্ঠ সৃজনশীল বলে পরিচিতি পাচ্ছে। তার কারণ রফিকের এই কাজ। রফিকের সাথে তার প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার সময় একটা সিটিং হয়। এই সিটিং এর মাঝে সারাদিনের কাজের বিশ্লেষণ এবং আগামীতে এই কাজকর্মের ভেতর কিভাবে সৃজন মানসিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় তাই নিয়ে এই বৈঠক। বৈঠক চলে সপ্তাহে সাত দিনই। ছয় দিনের কর্মচাঞ্চল্যের একটি কাঠামোবদ্ধ সিটিং। এবং মাস শেষে কি কি কর্ম চাঞ্চল্য জনসাধারণের মাঝে তাকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলবে এই বিষয়গুলোও আলোচনা হতো রফিকের সাথে। রফিকের আলাদা একটি কবি সত্ত্বা রয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে হর হামেশাই এই কবির কবিতা ছাপা হয়। তার কবি নামখানাও চোস্ত। ফলে এই নামের কবি সত্ত্বার আড়ালে কোন প্রকার রোজগার না থাকায় পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছিলো রফিক। আর শেষ পর্যন্ত এই বোঝা থেকে সে সরে দাঁড়াতে পেরেছে সেটাই বা কম কিসে? নিজেকে চালাতে পারার এই আনন্দ তার কম নয়। তার সম সাময়িক বন্ধুরা যারা কবিতা লেখে, যারা পড়াশোনা করে সকলেই এই মুহূর্তে বেকার। অথচ রফিক কিন্তু নিজেকে চালাতে পারছে।
নেতার একটা বিশেষ প্রোগ্রাম ছিলো আদালত পাড়ায়। আর তার চলে যাওয়ার পর রফিক আদালত চত্ত্বরে এসেছে পূর্ব সফরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। বিভিন্ন পরিচিত এডভোকেটের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কেমন আছেন? কি খবর? এই সব। বেশ কিছুণ যেখানে বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই প্রসঙ্গান্তরে তিনি নেতার প্রসঙ্গ তুলেন। লোকজন বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখান। কেউ কেউ বলেন, আমাদের নেতা তার বিগত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনও আদালত চত্ত্বরে আসেন নাই, কিন্তু এবার আসছেন তাতে এখানকার যে তার সমর্থক সমাজ রয়েছে তারা খুব খুশি হয়েছে। তবে এই আসা যাওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তাতে এই সমর্থকেরা আরও বেশি খুশি হবেন। অথচ তার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়াও সে পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, এটা একটা স্যানসেটিভ জায়গা। জনসাধারনের নিরপে বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্যই একজন জনপ্রতিনিধির আদালত চত্ত্বরে আসা একদম ঠিক হয় নি। এতে বিচারকরা ও এক শ্রেণীর আইনজীবীরা প্রভাবিত হতে পারে। যা ন্যায় বিচারের জন্য প্রতিবন্ধক। আরও আশ্চর্য হয়েছে রফিক বিরোধী দলীয় আইনজীবীদের কথায়। তারা বলছে, আরে বুঝেন না, কোন কাজ নাই তো আসছে মতা দেখাতে! আমরা কিছু বুঝিনা মনে করেন, সব লোক দেখানো। এত কিছুর উপর নির্ভর করে রফিকের সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। এক দিক থেকে বিষয়টা তার ভালোই লাগে। যে মানুষটিকে কিছুদিন পূর্বে দূরে থেকে দেখতে হতো; একমাত্র নির্বাচনের সময় অথবা জনসভায়ই কেবল তাকে কাছ থেকে পাওয়া যেত সেই মানুষটিকেই এখন সে পরামর্শ দেয়; ভাবতেই রফিক মাঝে মাঝে শিহরিত হয়। অথচ এই কাজটা পাওয়ার আগে তাকে সে একবারই দেখতে পেরেছিলো। সেই একবার আবার নির্বাচনী জনসভায়, অনেক দূরের দেখা। এখন এই লোকটির সাথে তার নিত্য দেখা হয়, কথা হয়, আলাপ পরামর্শ হয়। রফিকের ুদ্র জীবনে এ এক আশ্চর্য ঘটনা। তাকে কেন্দ্র করে মূল কাজটি করতে হয় মাসের শেষে বা প্রথম সপ্তাহে। তখনই সারা মাসের কর্ম পরিকল্পনার ভুল বা দূর্বলতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানায় রফিক। এখন পর্যন্ত যে সকল সিদ্ধান্ত সে জানিয়েছে তার সব কটিই দারুণ কাজে লেগেছে বলে সে নিজেও তার সাফল্যে কিছুটা আনন্দিত। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে বলে মোটেই ভাবিত নয় সে। চলছে তো... এই বেশ।


খ.
ইদানীং তার এই কাজটিকে ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু ভাবাচ্ছে। অতিরিক্ত মানে একটু নিজের মত বেশ কিছু। প্রথমত তার কবি সত্ত্বা একটু ঝিমিয়ে পড়ছে এতে। এই কাজটি শুরু করার আগে প্রায় প্রত্যেক মাসে একটি না পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হতো। বেশ কিছুদিন পর পর একটা আধটা গল্প বা গদ্য। আরো নিত্য নতুন আইডিয়া প্রকাশ হতো মাথা থেকে। চমক দেওয়ার মত বেশ কিছু আইডিয়া তার চারপাশে চাউর হলেই বন্ধু মহলে বিশেষ একটা সুনাম ক্ুঁড়িয়েছে রফিক। কেউ কেউ তাকে মজা করে ডাকতো পরিকল্পণা প্রতিমন্ত্রী। এই সুনামের সুবাদেই জুটে গিয়েছিলো তার প্রাণের মানুষ। ধীরে ধীরে তার প্রাণের মানুষ এই সময়ে আরও কাছে এসেছিলো। যাকে নিয়েই ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখা শুরু করেছিলো রফিক। কিন্তু এই সময়ে রফিকের এই কাজটিই যত গন্ডগোল বাধিয়েছে। এই কাজটি পাওয়ায় সে অন্য দিকে কোনও চেষ্টাও করছে না। অথচ একটি স্থায়ী চাকরী হলে সংসার বাঁধার চিন্তাটা করতে পারতো। এখন একপাশে নতুন ধরনের একটি কাজ। কাজটিতে একটি মাসিক পরিকল্পণা সফল হলেই কেবল তার টাকা পয়সা মিলে। পাশাপাশি নেতার প্রাপ্য জনগনের অভিনন্দনের একটা বড় অংশও মেলে তার। এ নিয়ে তার গর্বও কম নয়। এ পথে আর কিছু পয়সা হলে সে এই পেশাতেই স্থায়ী হতে চেষ্টা করতো। অবশ্য এর জন্য কষ্টও কম নয়, এই জন্য তাকে জনগনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে হয় অনেক। মনস্তত্ত্বের তাত্ত্বিক জ্ঞান আর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর মাথা খাটাতে হয়। আর এর ফলে তার সাহিত্য চর্চা ব্যহত হয়। কিছুদিন পূর্বে একটা পত্রিকার বিশেষ একটা এসাইনমেন্ট তাকে দিয়ে লেখাতে চেয়েছিলো সাহিত্য পাতার সম্পাদক, তার সময় ছিলো না বলে সে রাজি হয় নি। অথচ সেই সাহিত্য সম্পাদক তাকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো সেই পত্রিকা অফিসে একটা কাজ যোগার করে দেবে। কাজটি পেলে সে একটু থিতু হতে পারতো। কিন্তু কি এক দুর্বোধ্য ভালোবাসায় সে এই ফ্রি-ল্যান্স কাজটি করছে। অথচ তা কিন্তু কখনোই পারমানেন্ট নয়। এদিকে তার প্রেমিকার বাড়িতে প্রতিনিয়ত বিয়ের তাড়া। এই বুঝি হয় হয়। এখন কোনও রকমে আটকে আছে কিন্তু যে কোন মুহূর্তে বিয়েটা হয়ে যেতে পারে। আর তার বিয়ে হয়ে গেলে তার অবস্থা কি হবে সে কিছু ভাবতেই পারছে না। ইদানিং মেয়েটি তার একটা বড় অবলম্বন হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করে এই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে রফিক সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বে। মাঝে মাঝে যে এই ভাবনা তাকে পেয়ে বসে। তখন তার গবেষনা শিকেয় ওঠে। জাহান্নামে যায় তার এ্যাডভাইজিং জব। মনে হয় পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট দোজখে বসবাস করছে সে। এই সময় অন্য কোন ভাবানাও তার মাথায় আসে না। কি থেকে কি করবে ভেবে পায় না। তবে সা¤প্রতিক কালে অবশ্য তার একটা বড় পরিকল্পণা সফল হয়েছে। যার ফলশ্র“তিতে একটা বড় অঙ্কের টাকাও পেয়েছে। বস কে বলেছিলো এক সপ্তাহের ছুটি দিতে। এতে মানসিক মুক্তি মিললে পরবর্তিতে আরও বেশি ক্রিয়েটিভ আইডিয়া মাথা থেকে আসতে পারে। কিন্তু বস বললো সামনে বাজেট। তাই বাজেটের জন্য অনেক কাজ। এই সময় তোমার এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং তুমি সকাল সন্ধ্যা একটা ট্যুর কাটিয়ে আস। এতে আপাতত বাজেটের পূর্বে তুমি কিছুদিন ফ্রেশ থাকতেও পারবে, বাজেটটাও শেষ হয়ে যাবে। পরে না হয় আরেকবার এক সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে এসো। বসের হুকুম শিরোধার্য মনে করে রফিক একদিনের ছুটি নিয়েই আপাতত শান্ত। তবে এই ছুটিটা সে কাটিয়েছে তার প্রেমিকাকে নিয়েই। সারা দিনের ছুটি কাটাতে তারা চলে গিয়েছিলো তাদের শহর যমুনার চর দেখতে। বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুরে বালু আর বালুর চর। এই চরের মাঝে অল্প অল্প করে ধান বোনা। মাঝে মাঝে অন্য শস্যও চোখে পড়ে। তরমুজ, বাঙ্গি’র মত বালু মাটিতে হওয়া শস্যগুলো দেখিয়ে রফিক রূপাকে বলেছিলো আমি হলাম এই নদীর মতো। বর্ষায় প্লাবন আর খরায় চর। আর তুমি হলে এই শস্যের তে। মাঝে মাঝে ফসলের আনাগোনায় আমাকে সতেজ রাখার চেষ্টা করা। তার কথায় মৃদু মৃদু হেসেছিলো রূপা। তার চোখে দেখা দিয়েছিলো এক আনন্দের ঝিলিক। এই আনন্দই রফিকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসার পর রফিক সব কিছু নিজের করে ভাবতে পেরেছিলো বলতে গেলে রূপার একক কৃতিত্বে। রূপা এই সময় তাকে প্রচুর সহায়তা করেছে। রূপার নিজেরও তখন পরিবারে চলছিলো টানা পোড়েন। কিন্তু সেই টানা-পোড়েন কে দু পায়ে পিষে এগিয়ে এসেছিলো রফিকের জীবনকে সুস্থির করতে। দুজনেরই সামনে তখন মাস্টার্স পরীা। অথচ রফিকের একমাত্র বড় ভাই তাকে যখন আর টাকা পয়সা দিতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়ে দিলো তখন রফিক সম্পূর্ণ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলো। কারণ, টিউশনির মতো শিা বাণিজ্য করে সে কখনোই টাকা পয়সা কামানোর কথা ভাবতেই পারে না। এটা তার কাছে অশিার ফল বলে মনে হয়। মনে হয় যারা প্রকৃত শিায় শিতি হতে পারে নি তারাই কেবল এই পেশায় যেতে পারে। যার ফলে অল্পতেই অতলে চলে যাওয়ার এক বিরাট বিপদ থেকে রফিক মুক্তি পেয়েছে সেই সময়। অথচ এই সময় বিশেষ করে এই পরীা শেষের পর রূপার বিয়েটা কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। একমাত্র উপায় হলো একটা চাকরী যোগার করা। কিন্তু রফিকের কোন গত্যন্তর না দেখে রূপা বলে উঠল আমার পে আর একদিনও এভাবে চলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আর পরিবার কে দমিয়ে রাখতে পারছি না। তুমি একটা কিছু কর। না হলে আর কিভাবে? এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এই কথা শোনার পর রফিক তার নেতা’র সাথে এক বৈঠকে বসলো। তার বস তাকে বললো তুমি আর কটা দিন অপো কর। বাজেটের প্রথম অধিবেশন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাজেট ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু আমি আমার এলাকার জন্য কতটুকু বরাদ্দ পাব আগামী এক অর্থ বছরে তা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরই আমি তোমার কাজের একটা পরিপূর্ণ চাহিদা আমি তোমাকে জানাতে পারব। আর মাত্র কটা দিন। এত সাবলীল ভাষায় এবং ধীরস্থীর ভাবে তিনি বললেন যে, তার মুখের উপর অন্য কোন কথা বলা গেল না। অথচ তিনি তার স্ত্রীর কাছেও একই রকম ভাবে কথা বলেন কি না রফিকের যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। পর মুহূর্তেই সে ভাবলো সা¤প্রতিক কালের নেতারা তো এই রকমই হয়। মুখের কথা দিয়েই তো জনগণকে ভুলিয়ে রাখে। কাজে আর কতণ। হয়তো তার আগামী পরিকল্পণার পর তাকে আশা দিয়েই রাখবে, কোনও ফলাফল পাবে না। তাই ভবিষ্যতের কথা তাকে ভাবতেই হচ্ছে। কি করবে সে? কী’ই বা করতে পারে।

গ.
শুরু হয়ে গেল নতুন চাকরি খোঁজাখোঁজি। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে একটু আগে ভাগে উঠে হকারকে বলে দিল একটা করে চাকরির পত্রিকা দেওয়ার জন্য। আজ থেকে চাকরি খোঁজা শুরু করে দিয়েছে এই কথা জানিয়ে দিলো রূপাকে। জানানো হল আর মাত্র পনেরটা দিন বাসাকে ম্যানেজ করো। এই পনের দিনের ভেতর একটা কাজ যোগার ঠিকই করে নিব। তারপর তো আর কোনও চিন্তা থাকবে না। কিন্তু রফিকের কথায় রূপা পুরোপুরি আশ্বস্থ হতে পারে না। বলে এই ভাবে বললেই তো হবে না। কিছু একটা করে দেখাতে হবে। আমি না হয় এই পনের দিন কোনও মতে পরিবারকে বোঝালাম। কিন্তু তারপর কি হবে আমি আর বলতে পারছি না। আমার পরিবার ুধার্ত বাঘের মত হয়ে হয়ে গেছে। কোনও ভাবে আমাকে একটা বিয়ে দিতে পারলেই তাদের হলো। বুঝতে পারছো? হুম, এই বলে রফিক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। সপ্তাহান্তে চাকরীর বিজ্ঞাপনের পত্রিকাটা এলে খুব মনোযোগ সহকারে পত্রিকাটির প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। একটা বিজ্ঞাপন তার পছন্দ হয়ে গেল। তারা একটি মাত্র লোক নিয়োগ করবে। স্নাতকোত্তর চেয়েছে। তার স্নাতকোত্তর না হলেও যে অভিজ্ঞতা তার বিগত ছয় মাসে সে অর্জন করেছে তাতে এই চাকরিটা সে পেয়েও যেতে পারে। ওয়াক ইন ইন্টারভিউ সার্কুলারে আগামী সপ্তাহেই তাকে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। আজ থেকে আর মাত্র আট দিন সময়। এদিকে রূপাকে দেয়া দিন কয়েকের সময় শেষ হয়ে আসছে। পাঁচদিন ইতিমধ্যে চলে গেছে। আর মাত্র দশ দিন। এই শেষ ক’দিনে একটা কবিতাও লিখতে পারে নি রফিক। প্রচণ্ড মানসিক চাপে কোনও প্রকার কবিতার কথা মাথায়ই আনতে পারে নি। কবিতা লিখতে বসলেই শুধু পরামর্শ মাথায় আসে। কবিতার খসড়াগুলো একে একে পরামর্শের খসড়া হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই চিন্তায় সে আরও বেশি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ভাবে কবিতা কি আর লিখতে পারবো না? তাহলে বাঁচবো কিভাবে? কবিতা আর রূপাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না বলে নিজেকে মনে করে। পরামর্শ দেয়ার এই কাজটি সে এতই ভালোবেসে ফেলেছে যে এই ধরনের কাজই সে এখন খুঁজতেছিলো। ভাগ্যে থাকলে পেয়েও যেতে পারে এই কাজটি। অবশেষে এই করে করেই তার চাকরির ইন্টারভিউ এর দিন চলে এলো। আগের দিন বিকালেই তার বস জন নন্দিত নেতার কাছ থেকে একটা বিশেষ সুপারিশ তার জীবন-বৃত্তান্তে নিয়ে নিলো। ঠিক সুপারিশ বলা যায় না, তবে তা সুপারিশের মতই একরকম। তার অধীনে তার জন্য যে উপদেশক হিসেবে তিনি কাজ করেছে তার একটি সনদপত্র বলতে গেলে। তবে এই সনদপত্রের মূল ল্য হলো কাজটি যেন হয়ে যায়। কাজটি হলেই আপাতত রূপাকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ভেবেই সে রওনা হলো ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্যে।

ঘ.
রূপার বাড়িতে দীর্ঘ দিনের চাপ আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না। সেই দিন, যে দিন রফিক ঢাকা রওনা হলো। সেই দিন সন্ধ্যায় কোন প্রকার বিনা নোটিশে রূপার বিয়ে হয়ে গেল। এর মাঝ দিয়ে রফিকের বেঁচে থাকার একটি প্রধান অমলম্বন হারালো তার অজান্তেই। ঢাকা থেকে যখন চাকরির সংবাদটা নিয়ে ফিরে আসলো রফিক দেখলো প্রথমতম নির্ভরতার স্থান আর তার নেই। আগামী সপ্তাহেই তার চাকরির জয়েনিং। সেলারি প্রাথমিক অবস্থায় পঁচিশ হাজার টাকা। পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে আরও বাড়বে। আর না পারলে চাকরি থাকবে না। এই শর্তে পাওয়া চাকরিটা পেয়েছিলো রফিক। ভেবে পাচ্ছিলো না তখন সে কি করবে? রফিক আহাম্মেদ নামের কবি সত্ত্বা আর রফিকুল ইসলাম নামের যে বেসরকারি কোম্পানীর চীফ এ্যাডভাইজারের পদটি তার এখন রয়েছে কোনটিকে সে বেছে নেবে? আস্থার কোনও প্রতিদান সে দিতে পারে নি রূপার কাছে। কবিতাও তার কাছে রাখছে না আস্থা। এই কান্তিলগ্নের শেষে আগামীকাল ভোরে বাড়িওয়ালা আসবে এই মাসের ভাড়া নিতে আর আগামী মাসে সে থাকবে কি না জানতে। এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাক। সকালে যা বলার তাই তো বলা যাবে। 

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

আমার চারপাশ আমি নির্মাণ করতে চাই। আমার সত্তার চারপাশ আমাকে তাড়িত করে। আমি এক অনুভবনিয় পৃথিবীর গল্প দেখি। দেখি ভোর বেলা মানুষের আনন্দিত মুখ।সন্ধ্যার ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকেও তার মুখ এক উদ্ভাসিত আলোয় ভরে যাবে। সেই মুখগুলো আমি আমার চারপাশে নির্মাণ করতে চাই। আমি চাই সেই মুখগুলো আমাকে তাদের নিজের আয়না হিসেবে দেখুক। দেখুক অন্যের ‍মুখে নিজের মুখের হাসিটা কেমন দেখায়!


....

আমার অক্ষর আমার কথাই বলে

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

আমার চারপাশ আমি নির্মাণ করতে চাই। আমার সত্তার চারপাশ আমাকে তাড়িত করে। আমি এক অনুভবনিয় পৃথিবীর গল্প দেখি। দেখি ভোর বেলা মানুষের আনন্দিত মুখ।সন্ধ্যার ট্রাফিক জ্যামে আটকে থেকেও তার মুখ এক উদ্ভাসিত আলোয় ভরে যাবে। সেই মুখগুলো আমি আমার চারপাশে নির্মাণ করতে চাই। আমি চাই সেই মুখগুলো আমাকে তাদের নিজের আয়না হিসেবে দেখুক। দেখুক অন্যের ‍মুখে নিজের মুখের হাসিটা কেমন দেখায়!


....

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

তোমাকে জানি বিষণ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া একটি প্রহরের মতো
তোমার দ্বীপে তাই একলা মানুষ আগুন জ্বালে

আমাকে ভালোবেসে একগুচ্ছ লাল গোলাপ
                         মৃত পরীর আত্মা হতে চেয়েছিলো।
চেয়েছিলো বনে বনে ঘুরে পাখিদের ভাষা জেনে নিতে।
পাখি তো                  কোনও মানুষের জীবনে
উৎসব উদযাপনের লক্ষ্য ছিলো না।
তাই রোজ প্রভাতে নিয়ম করে শুকনো বাগানের প্রজাপতিগণ
দলবেঁধে এসে হাওয়া দিতোÑ
ডানাহীন প্রজাপতি তবুও নীরব হয়ে এসেছিলো
গোপনে মৃত্যুর বার্তা নিয়ে

রাস্তায় সারি সারি বৃক্ষের পিতা দাঁড়িয়ে থেকে
পাড়বাধা জীবনের মোহ নিয়ে
                   সে এক বন্দী জীবনের কিচ্ছা

ঘরের পাশেই ছিলো হারিয়ে যাওয়া দিঘী
মাছেদের শৈশব ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সেও হারিয়েছিলো
তার শ্যাওলাবাহী জলের আড়ালে, তাইতো-
গতকাল হরতালের দিনেও আমি অচিনপুরের ট্রেনে উঠে বসি
আমাকে নামিয়ে দেয় একটি দ্বীপে;
সেখানে জল ছিলো- আর ছিলো মৃত একজোড়া মুনিয়া
তবুও তাই সকল বৃক্ষের শাখে শাখে প্রজাপতি খোঁজতাম
দেখি প্রজাপতিগুলো এক একটা গোলাপ হয়ে যাচ্ছে

আমাকে ভালোবেসে তাই একগুচ্ছ লাল গোলাপ
                       মৃত পরীর আত্মা হতে চেয়েছিলো

মায়াবী জোছনার বিষণ্য ভ্রমণ

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

তোমাকে জানি বিষণ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়া একটি প্রহরের মতো
তোমার দ্বীপে তাই একলা মানুষ আগুন জ্বালে

আমাকে ভালোবেসে একগুচ্ছ লাল গোলাপ
                         মৃত পরীর আত্মা হতে চেয়েছিলো।
চেয়েছিলো বনে বনে ঘুরে পাখিদের ভাষা জেনে নিতে।
পাখি তো                  কোনও মানুষের জীবনে
উৎসব উদযাপনের লক্ষ্য ছিলো না।
তাই রোজ প্রভাতে নিয়ম করে শুকনো বাগানের প্রজাপতিগণ
দলবেঁধে এসে হাওয়া দিতোÑ
ডানাহীন প্রজাপতি তবুও নীরব হয়ে এসেছিলো
গোপনে মৃত্যুর বার্তা নিয়ে

রাস্তায় সারি সারি বৃক্ষের পিতা দাঁড়িয়ে থেকে
পাড়বাধা জীবনের মোহ নিয়ে
                   সে এক বন্দী জীবনের কিচ্ছা

ঘরের পাশেই ছিলো হারিয়ে যাওয়া দিঘী
মাছেদের শৈশব ফিরিয়ে আনতে গিয়ে সেও হারিয়েছিলো
তার শ্যাওলাবাহী জলের আড়ালে, তাইতো-
গতকাল হরতালের দিনেও আমি অচিনপুরের ট্রেনে উঠে বসি
আমাকে নামিয়ে দেয় একটি দ্বীপে;
সেখানে জল ছিলো- আর ছিলো মৃত একজোড়া মুনিয়া
তবুও তাই সকল বৃক্ষের শাখে শাখে প্রজাপতি খোঁজতাম
দেখি প্রজাপতিগুলো এক একটা গোলাপ হয়ে যাচ্ছে

আমাকে ভালোবেসে তাই একগুচ্ছ লাল গোলাপ
                       মৃত পরীর আত্মা হতে চেয়েছিলো

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১১

মাহবুব মোর্শেদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো বেশ পূর্বে থেকেই। তবে সেটা ব্যক্তিগত নয়। তার দু-একটা লেখা পড়ে আর আর তার সম সাময়িক অন্য গল্পকারদের কাছে তাঁর নাম শুনে। তিনি ভালো গল্প লিখেন, এই কথা আমি তাঁদের কাছে বিভিন্ন সময় কথার ফাঁকে ফাঁকে কেউ হয়তো অন্যমনস্কভাবে বলে ফেলেছেন তাঁর নাম। আমার সেটা মনে ছিলো। তার কিছু কারণ হলো তার লেখার সাথে লোকজন তার ব্যক্তির মেলাতে চাওয়ায় সেটা মেলে না। সেটা নানান কারণেই। সে প্রসঙ্গ বলতে গেলে কথার দিক উল্টো ঘুরতে শুরু করবে। আমার এই চেনা-জানার জগতে একদিন হঠাৎ করে আড্ডার ফাঁকে উপস্থাপন করলো একটা মলাটহীন বই। গল্পগ্রন্থ। মাহবুব মোর্শেদ এর ব্যক্তিগত বসন্তদিনে। ঐ রাতেই চোখ মেলে দেখলাম আমাদের কালের এক সাহসী গল্পকারের ভাব ও ভাষার খেলোয়ারকে। আমি মাহবুব মোর্শেদকে ভাব ও ভাষার সাহসী খেলোয়ারই বলবো। কারণ, আমি ব্যক্তিগত বসন্তদিনের যেই মাহবুব মোর্শেদকে চিনি সেই মাহবুব মোর্শেদের গল্প বলার ভাষা সাবলিল। এই সাবলিল ভাষায় অনেকেই লিখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা আর ভাষার সাবলিলতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পেড়ে আত্মহত্যা করে বর্ণে গাঁথা বাক্যমালায়। আমার কাছে মাহবুব মোর্শেদ মূলত সাহসী তাঁর জিসম গল্পের জন্যে। আমার মনে পড়ে জিসম গল্পের প্রসঙ্গে কোনও এক আড্ডা বা বৈঠকিতে আহমাদ মোস্তফা কামাল স্মৃতিচারণ করেছিলেন (যদি আমার স্মৃতি আমার সাথে প্রতারণা না করে) এই রকম যে, ‘একদিন মাহবুবের সাথে আজিজে দেখা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি লিখলে? সে তখন একটা গল্প শোনালো। গল্পটার নাম জিসম। আমাদের হাতের কাছেই তখন পাওয়া যায় বলিউডের সাম্প্রতিক মুক্তিপাওয়া ছবি জিসম এর ডিভিডি কপি। জন আব্রাহাম আর মল্লিকা শেরাওয়াত এর ছবিটি একটা হটকেক এর মতো ছবি। অনেক শরীরী। গল্প শোনার পর আমি মাহবুব কে বললাম, তোমার গল্প পড়ার পর তো মনে হতে পারে যে তুমি হয়তো এই জগৎটার সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত। অথবা খুব বেশি পরিচিত। যাতে তোমার ব্যক্তিত্বের উপর অনেকের ভুল ধারণাও হতে পারে। এই কথা বলার পর মাহবুব মোর্শেদ শুধু হাসলেন। আর বললেন যে, যদি লোকে কিছু ভাবে তো আমার কি কিছু করার নাই। এই হৈলো মাহবুব মোর্শেদ এর লেখার খুব সাধারণ একটা প্রতিক্রিয়া। কিন্তু আমি ফেস বাই ফেস এর মাহবুব মোর্শেদ কে সেই জিসম এর কারণেও সাহসীই বলবো। জিসম এর মতো যৌনগন্ধি বা মানুষের অবদমিত আকাঙ্খার অপ্রাতিষ্ঠানিক রূপটি একটা গল্পের মাঝ দিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে বাঙলাদেশের মানুষ কাছাকাছি জীবনের যৌনতার রূপ তটুকু জেনেছে তা আমার জানা নেই। তবে মাহবুব মোর্শেদ তা ঠিকই দেখাতে পেরেছেন।
তাকে একই কারণে সাহসী বলছি এই কারণে যে, যেই দেশে একটা মানুষ তার অনাকাঙ্খিত যৌণ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলেই তা কাঠমোল্লা আর লোক দেখানো প্রগতিশীলদের কু-নজরে পরে যায় সেখানে মাহবুব মোর্শেদ তার জিসম গল্পের মতই সাহসী তার প্রথম উপন্যাস ফেস বাই ফেস এ-ও।
ফেস বাই ফেস সম্পূর্ণ নাগরিক একটি উপন্যাস। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটি সমান্তরাল জীবনের কথ্য ভিজ্যুয়াল। প্রকৃত অর্থে আমার এটাকে ভিজ্যুয়ালই মনে হয়েছে। এই ভিজ্যুয়ালের মূল চরিত্র শুভ। যে কিনা একটা বায়িং হাউজে কাজ করে। আর এই সময়টায় আমাদের চারপাশের জীবন যেহেতু ধীরে ধীরে ছোট হয়ে হয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে মাহবুব মোর্শেদের এই কেন্দ্রীয় চরিত্রটিও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য একটা জীবন তৈরি করে। যা বাংলাদেশের নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক একটা অংশে এখন রূপান্তরিত। পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে এসেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু তিন্নি। নওরোজ ভাই, রওনক ভাবি ও অন্যান্য আরো কয়েকজন। যারা প্রত্যেকেই আমাদের ভার্চুয়াল জগতের লুক্কায়িত বা প্রকাশিত নানামুখি সাহসী ও ভিরু মানুষ। মাহবুব মোর্শেদ এর এই কথ্য ভিজ্যুয়েল এক কথায় আমার কাছে মনে হয়েছে আধুনিক। এবং পরিচ্ছন্ন। যদিও গল্পের কিছু ফারাক থেকে যায় একজন মনযোগী পাঠক স্পষ্ট ধরতে পারেন সেই ফারাকগুলি। কিন্তু তারপরও এইগুলো সাধারণ বিষয়। শুভ’র চরিত্রের ভিতর অস্তিমাংশময় মিশে আছে বিভ্রান্তী। সে তার কাঙ্খিত মানবী তিন্নিকে কে চিনতে পারে না। বুঝতে পারে না সে গল্পের শেষ পর্যন্ত। অস্তিত্বের প্রশ্ন যখন আসে তখন তিন্নি নিজেই উন্মোচন করে সেই রহস্য। তিন্নির বান্ধবী সূপর্ণা ও তিন্নি। মাঝামাঝি শুভ দ্বান্দ্বিক পৃথিবী ক্ষণে ক্ষণে দূরে চলে যায় আবার কাছে আসে তা বর্তমান সময়ের মধ্যবিত্ত সমাজের একটি মূল্যবোধকে ধরে রাখে বলেই হয়তো এরকম করে। কিন্তু জীবনের এই সময়ে এসে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডের মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত জীবন এই মূল্যবোধগুলো অনেক আগেই বিষর্জন দিয়েছে তা ধরা পড়ে না। তাই শুভ তার প্রেম বা যৌন জীবনের কোনও নিশ্চয়তা সে কারও কাছ থেকে পায় না। না তিন্নি না সূপর্ণা। কিন্তু তিন্নি আর সূপর্ণার মাঝ থেকে শুভকে অতিক্রম করে সেই সত্যকে তুলে আনেন নওরোজ ভাই। যার স্ত্রী (রওনক ভাবি)র সাথে শুভ অদৃশ্য প্রেম তৈরি হতে সময় প্রয়োজন হয় না। যা রূপান্তরিত হয় সেই মনো শাং-রি-লা’য়। সেখানেই শুভ আরো একটি চারিত্রিক দিক উন্মোচিত হয়। ক্ষুধা। যৌণক্ষুধা। যা ফ্রয়েডিয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি পুরুষ শিশুও সাথে করে জন্মায়। এবং তাকে পরিচালিত করে সেই যৌন চেতনাই। তিন্নি আর সূপর্ণার সর্ম্পকটাও আমাদের সাহিত্যে নতুন। এই ধরণের চরিত্র নির্মাণের জন্যই আমি মাহবুব মোর্শেদকে সাহসী বলি। যা তিনি পূর্বেও দেখিয়েছন এবং আশাকরি ভবিষ্যতে আরও ভালো করবেন। যেই কথা বলছিলাম। মাহবুব মোর্শেদের এই কথ্য ভিজ্যুয়্যালের শুভকেও সেই যৌণবোধই চালিত করে। যা প্রাগৈতিহাসিকে ভিখুকে পরিচালিত করেছিলো পাঁচিকে নিয়ে পালিয়ে যাবার। যার পরিণতি দেখি তিন্নি দিকে জ্বরাক্রান্ত শুভর বাড়িয়ে দেয়া ঠোঁটের জন্যই। মনে হয় শুভ তো ফেসবুক, সাবিহা মেহনাজ সুপ্তি, তিন্নি, রওনক, সুপর্ণা আর আরো যে সকল বিষয়ের সাথে শুভ সম্পৃক্ত সবগুলোরই একটা যৌনজীবনের পরিণতির কথা ভেবেই। তবে এই কথ্য ভিজ্যুয়্যাল কোনও যৌণ সুরসুরিমূলক ভিজ্যুয়াল নয়। সর্বোপরি যাপিত জীবনের সরল আখ্যান।

(মাহবুব মোর্শেদ এর প্রথম উপন্যাস ফেস বাই ফেস উপন্যাস নিয়ে শূন্যপুরাণ এ প্রকাশিত গদ্য)

ফেস বাই ফেস : নাগরিক প্রতিরূপের ভিজ্যুয়্যাল

at শুক্রবার, জুলাই ২৯, ২০১১  |  No comments

মাহবুব মোর্শেদের সাথে আমার পরিচয় ছিলো বেশ পূর্বে থেকেই। তবে সেটা ব্যক্তিগত নয়। তার দু-একটা লেখা পড়ে আর আর তার সম সাময়িক অন্য গল্পকারদের কাছে তাঁর নাম শুনে। তিনি ভালো গল্প লিখেন, এই কথা আমি তাঁদের কাছে বিভিন্ন সময় কথার ফাঁকে ফাঁকে কেউ হয়তো অন্যমনস্কভাবে বলে ফেলেছেন তাঁর নাম। আমার সেটা মনে ছিলো। তার কিছু কারণ হলো তার লেখার সাথে লোকজন তার ব্যক্তির মেলাতে চাওয়ায় সেটা মেলে না। সেটা নানান কারণেই। সে প্রসঙ্গ বলতে গেলে কথার দিক উল্টো ঘুরতে শুরু করবে। আমার এই চেনা-জানার জগতে একদিন হঠাৎ করে আড্ডার ফাঁকে উপস্থাপন করলো একটা মলাটহীন বই। গল্পগ্রন্থ। মাহবুব মোর্শেদ এর ব্যক্তিগত বসন্তদিনে। ঐ রাতেই চোখ মেলে দেখলাম আমাদের কালের এক সাহসী গল্পকারের ভাব ও ভাষার খেলোয়ারকে। আমি মাহবুব মোর্শেদকে ভাব ও ভাষার সাহসী খেলোয়ারই বলবো। কারণ, আমি ব্যক্তিগত বসন্তদিনের যেই মাহবুব মোর্শেদকে চিনি সেই মাহবুব মোর্শেদের গল্প বলার ভাষা সাবলিল। এই সাবলিল ভাষায় অনেকেই লিখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা আর ভাষার সাবলিলতা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে না পেড়ে আত্মহত্যা করে বর্ণে গাঁথা বাক্যমালায়। আমার কাছে মাহবুব মোর্শেদ মূলত সাহসী তাঁর জিসম গল্পের জন্যে। আমার মনে পড়ে জিসম গল্পের প্রসঙ্গে কোনও এক আড্ডা বা বৈঠকিতে আহমাদ মোস্তফা কামাল স্মৃতিচারণ করেছিলেন (যদি আমার স্মৃতি আমার সাথে প্রতারণা না করে) এই রকম যে, ‘একদিন মাহবুবের সাথে আজিজে দেখা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি লিখলে? সে তখন একটা গল্প শোনালো। গল্পটার নাম জিসম। আমাদের হাতের কাছেই তখন পাওয়া যায় বলিউডের সাম্প্রতিক মুক্তিপাওয়া ছবি জিসম এর ডিভিডি কপি। জন আব্রাহাম আর মল্লিকা শেরাওয়াত এর ছবিটি একটা হটকেক এর মতো ছবি। অনেক শরীরী। গল্প শোনার পর আমি মাহবুব কে বললাম, তোমার গল্প পড়ার পর তো মনে হতে পারে যে তুমি হয়তো এই জগৎটার সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত। অথবা খুব বেশি পরিচিত। যাতে তোমার ব্যক্তিত্বের উপর অনেকের ভুল ধারণাও হতে পারে। এই কথা বলার পর মাহবুব মোর্শেদ শুধু হাসলেন। আর বললেন যে, যদি লোকে কিছু ভাবে তো আমার কি কিছু করার নাই। এই হৈলো মাহবুব মোর্শেদ এর লেখার খুব সাধারণ একটা প্রতিক্রিয়া। কিন্তু আমি ফেস বাই ফেস এর মাহবুব মোর্শেদ কে সেই জিসম এর কারণেও সাহসীই বলবো। জিসম এর মতো যৌনগন্ধি বা মানুষের অবদমিত আকাঙ্খার অপ্রাতিষ্ঠানিক রূপটি একটা গল্পের মাঝ দিয়ে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে বাঙলাদেশের মানুষ কাছাকাছি জীবনের যৌনতার রূপ তটুকু জেনেছে তা আমার জানা নেই। তবে মাহবুব মোর্শেদ তা ঠিকই দেখাতে পেরেছেন।
তাকে একই কারণে সাহসী বলছি এই কারণে যে, যেই দেশে একটা মানুষ তার অনাকাঙ্খিত যৌণ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলেই তা কাঠমোল্লা আর লোক দেখানো প্রগতিশীলদের কু-নজরে পরে যায় সেখানে মাহবুব মোর্শেদ তার জিসম গল্পের মতই সাহসী তার প্রথম উপন্যাস ফেস বাই ফেস এ-ও।
ফেস বাই ফেস সম্পূর্ণ নাগরিক একটি উপন্যাস। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটি সমান্তরাল জীবনের কথ্য ভিজ্যুয়াল। প্রকৃত অর্থে আমার এটাকে ভিজ্যুয়ালই মনে হয়েছে। এই ভিজ্যুয়ালের মূল চরিত্র শুভ। যে কিনা একটা বায়িং হাউজে কাজ করে। আর এই সময়টায় আমাদের চারপাশের জীবন যেহেতু ধীরে ধীরে ছোট হয়ে হয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছে, সেখানে মাহবুব মোর্শেদের এই কেন্দ্রীয় চরিত্রটিও সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য একটা জীবন তৈরি করে। যা বাংলাদেশের নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক একটা অংশে এখন রূপান্তরিত। পার্শ্ব চরিত্র হিসেবে এসেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু তিন্নি। নওরোজ ভাই, রওনক ভাবি ও অন্যান্য আরো কয়েকজন। যারা প্রত্যেকেই আমাদের ভার্চুয়াল জগতের লুক্কায়িত বা প্রকাশিত নানামুখি সাহসী ও ভিরু মানুষ। মাহবুব মোর্শেদ এর এই কথ্য ভিজ্যুয়েল এক কথায় আমার কাছে মনে হয়েছে আধুনিক। এবং পরিচ্ছন্ন। যদিও গল্পের কিছু ফারাক থেকে যায় একজন মনযোগী পাঠক স্পষ্ট ধরতে পারেন সেই ফারাকগুলি। কিন্তু তারপরও এইগুলো সাধারণ বিষয়। শুভ’র চরিত্রের ভিতর অস্তিমাংশময় মিশে আছে বিভ্রান্তী। সে তার কাঙ্খিত মানবী তিন্নিকে কে চিনতে পারে না। বুঝতে পারে না সে গল্পের শেষ পর্যন্ত। অস্তিত্বের প্রশ্ন যখন আসে তখন তিন্নি নিজেই উন্মোচন করে সেই রহস্য। তিন্নির বান্ধবী সূপর্ণা ও তিন্নি। মাঝামাঝি শুভ দ্বান্দ্বিক পৃথিবী ক্ষণে ক্ষণে দূরে চলে যায় আবার কাছে আসে তা বর্তমান সময়ের মধ্যবিত্ত সমাজের একটি মূল্যবোধকে ধরে রাখে বলেই হয়তো এরকম করে। কিন্তু জীবনের এই সময়ে এসে বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডের মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্ত জীবন এই মূল্যবোধগুলো অনেক আগেই বিষর্জন দিয়েছে তা ধরা পড়ে না। তাই শুভ তার প্রেম বা যৌন জীবনের কোনও নিশ্চয়তা সে কারও কাছ থেকে পায় না। না তিন্নি না সূপর্ণা। কিন্তু তিন্নি আর সূপর্ণার মাঝ থেকে শুভকে অতিক্রম করে সেই সত্যকে তুলে আনেন নওরোজ ভাই। যার স্ত্রী (রওনক ভাবি)র সাথে শুভ অদৃশ্য প্রেম তৈরি হতে সময় প্রয়োজন হয় না। যা রূপান্তরিত হয় সেই মনো শাং-রি-লা’য়। সেখানেই শুভ আরো একটি চারিত্রিক দিক উন্মোচিত হয়। ক্ষুধা। যৌণক্ষুধা। যা ফ্রয়েডিয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একটি পুরুষ শিশুও সাথে করে জন্মায়। এবং তাকে পরিচালিত করে সেই যৌন চেতনাই। তিন্নি আর সূপর্ণার সর্ম্পকটাও আমাদের সাহিত্যে নতুন। এই ধরণের চরিত্র নির্মাণের জন্যই আমি মাহবুব মোর্শেদকে সাহসী বলি। যা তিনি পূর্বেও দেখিয়েছন এবং আশাকরি ভবিষ্যতে আরও ভালো করবেন। যেই কথা বলছিলাম। মাহবুব মোর্শেদের এই কথ্য ভিজ্যুয়্যালের শুভকেও সেই যৌণবোধই চালিত করে। যা প্রাগৈতিহাসিকে ভিখুকে পরিচালিত করেছিলো পাঁচিকে নিয়ে পালিয়ে যাবার। যার পরিণতি দেখি তিন্নি দিকে জ্বরাক্রান্ত শুভর বাড়িয়ে দেয়া ঠোঁটের জন্যই। মনে হয় শুভ তো ফেসবুক, সাবিহা মেহনাজ সুপ্তি, তিন্নি, রওনক, সুপর্ণা আর আরো যে সকল বিষয়ের সাথে শুভ সম্পৃক্ত সবগুলোরই একটা যৌনজীবনের পরিণতির কথা ভেবেই। তবে এই কথ্য ভিজ্যুয়্যাল কোনও যৌণ সুরসুরিমূলক ভিজ্যুয়াল নয়। সর্বোপরি যাপিত জীবনের সরল আখ্যান।

(মাহবুব মোর্শেদ এর প্রথম উপন্যাস ফেস বাই ফেস উপন্যাস নিয়ে শূন্যপুরাণ এ প্রকাশিত গদ্য)

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

গল্পটা কোথা হতে শুরু করা যায় এই নিয়ে একটা ধন্দ মনে কাজ করে। প্রথমত গল্পটা শুরু করা যেতে পারে অর্ণবের গান দিয়ে। অর্ণবের গান আসলে প্রথম উপাদান নয়। এটা হতে পারে সর্বশেষ পথ। তারপরও আমরা শেষ দিক দিয়েই না হয় শুরু করলাম। তাই আমাদের গল্প শুরু হয়ে গেলো।
গত কয়েকদিন ধরে মনের ভেতর বাহিরে ‘আমায় ধরে রাখো, আমায় বেঁধে রাখো’ গানটি বাজতে ছিলো। ফলশ্র“তিতে এই স্বপ্নের অবতারণা। স্বপ্নটিকে তাই আমরা অবচেতন মনের একটা অবস্থাই ধরে নিতে পারি। ধরে নিতে পারি অবচেতনে এই ভাবনাটাই কাজ করছে তীব্রভাবে। এই ভাবনা আরো গভীর থেকে গভীরতর হয় যখন চারপাশের বন্ধুরা বিয়ে করে একে একে সন্তান-সন্ততির জনক-জননী হতে শুরু করলো, তখন তারও হয়তো বিয়ে করে সংসার কর্ম করার বা জনক হওয়ার আকাঙ্খা তৈরি হতে শুরু করে। যদিও সে জানে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করা তার পক্ষে রীতিমত অসম্ভব। সে অর্থে ‘বিয়ে’ করা যায় কেবল একটা যৌন জীবনের নিশ্চয়তার জন্য। তাই বিয়ের ভাবনা তার মাথায় জেঁকে বসতে পারে। বস্তুত এই ভাবনা তার বাস্তবে রূপ দেয়া এই মুহূর্তে হয়তো স্বপ্নেরও অবান্তরের মতো। অথবা অবান্তরই হয়তো। কিন্তু কল্পনাতো আসলে বাস্তবেরই এক মোহময় পৃথিবী। এই কথা তার অজানা নয়। সে খুব ভালো করেই জানে মানুষ যা স্বপ্নে দেখে তার অনেকটাই তার বাস্তব উপাদান থেকে নিয়ে কল্পনায় শুধু সে একটা রঙ মাখায় মাত্র। আর সেও সেই একই গল্পের অবতারণা করেছে, আর কিছু নয়। তার স্বপ্নটাও তার ভাবনারই একটা প্রতিফলিত রূপ হিসেবে দেখা দেয়। যখন স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তখন তার মনে হতে থাকে আর কিছুক্ষণ দেখতে পারলেই তো হতো। ফলাফলটা হাতে-নাতে জেনে যাওয়া যেতো। কিন্তু ফলাফলটা অধরাই থেকে গেলো তার। এই স্বপ্নের কোনও ফলাফল সে শেষ পর্যন্ত পাবেনা বলেই ধরে নিচ্ছি। তারপরও আমরা ধারণা করতে পারি এই স্বপ্নের বিস্তারিত বৃত্তান্ত নিয়ে কোনও স্বপ্ন বিশারদের কাছে হাজির হলেও এই সমস্যার সমাধান আসতে পারে। কিন্তু স্বপ্ন বিশারদদের সে বিশ্বাস করে না। তার মনে হয় স্বপ্ন বিশারদরা মানুষের স্বপ্ন নিয়ে খেলা করে। যারা স্বপ্ন নিয়ে খেলা করে তারা আর যাই হোক মানুষ হিসেবে সৎ অবশ্যই নয়। এই রকম নানান ধন্দের ভেতর আর তার স্বপ্নের গন্তব্য নিয়ে সে বিচলিত হয়। কিন্তু আস্থা হারায় না, মনে করে এর অবশ্যই একটা সুদূর প্রসারী কারণ রয়েছে। যার দরুণ আজ হোক কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে। সেজন্য প্রস্তুতিও নেয়া প্রয়োজন। ফলে একটি চাকরির জন্য সে হন্যে হয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে, একটা চাকরি এবার যোগার না করলেই নয়। সামনেই তো সুদিন। একটা চাকরি মানে কিছুদিনের অভিজ্ঞতা, কয়দিন পর নতুন চাকরি। আর এভাবে বেশকিছু অভিজ্ঞতার ঝাপি ভারি করে বড় কোনও কিছু করতে না পারলে বিয়ে করা জুটবে না। অন্তত স্বপ্নের বিয়েতো নয়ই। অথচ স্বপ্নের মানুষইতো তার নেই! ভেবেই হাসতে হাসতে খুন। গাছে কাঁঠাল গোফে তেল দেয়ার মতো স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেলো তাহলে। স্বপ্নই তো বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্ন আছে বলেইতো সেও বেঁচে আছে।
দুইদিন এই স্বপ্ন নিয়ে কোনও ভাবনা সে ভাবেনি। যতটা ভেবেছে সে একটা চাকরি নিয়ে। আসলে তাকে চাকরি দিবে কে? কেন দিবে? এই ভাবনাগুলোই গত দুইদিন বেশি মাথায় এসেছে। এখন কেবল একটা চাকরির চিন্তাই মাথায় ঘুরঘুর করছে তার। তবে এই স্বপ্নকে সে অতিক্রম করতে পারছেনা তারপরও। সারাদিন শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নেংটা কালের বন্ধু রাশেদ ফোন করলো।
এই রাশেদ তার মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেয়। নেয় আর জ্বালা বাড়ায়। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করতে না করতেই রাশেদ বিয়ে করেফেলেছিলো। অথচ তখন তার কোনও রোজগার নেই। রোজগারের পথও নেই। আসলে দীর্ঘদিনের প্রেম, দুইজন দুই মেরুতে বসবাস করলে যদি এই প্রেম আর কোনও গন্তব্য না পায় তবে তো বিপদ হয়ে যাবে। এ¤িœতেই মেয়েটার প্রতি রাশেদ কিছুটা দূর্বলও ছিলো। এই দূর্বলতাই রাশেদের বিয়ের ব্যাপারে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিলো। যখন মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে যেদিন সবাই যার যার বাড়ি ফেরার জন্য বাক্স পেটরা গোছাচ্ছিলো তখন রাশেদ গো ধরে, তোরা বাড়ি যাবি যা কিন্তু আমি একলা বাড়ি যাবো না।
- একলা বাড়ি যাবি না মানে?
- নীলুরে সাথে নিয়া যামু।
- এইটার কোনও মানে হয়?
- মানে হয় না? প্রয়োজন বোধে বিয়ে করে বউ বানিয়ে তারপর নিয়ে যাবো। তবু একলা যাবো না।
কি আর করা যাবে তখন। বাকী আরও যারা বাড়ি যাওয়ার জন্য বাক্স পেটরা গুছিয়েছিলো তাদের ডেকে এনে, কাজী’র বাড়ি গিয়ে একজনকে উকিল বাবা করে আর দুইজনকে সাক্ষী করে এক কেজি কমদামী মিষ্টি খেয়ে বিয়ের কবুল বললো রাশেদ আর নীলু। ক্যাম্পাস জীবনের ইতি ঘটিয়ে এখন সংসার জীবনের শুরু।
সেই রাশেদের ফোন পেয়ে তার স্বপ্ন বৃত্তান্ত আবার মনে পড়ে গেলো। বন্ধুকে গড়গড় করে বলেদিলো গত দুইদিন আগে দেখা স্বপ্নের সকল কথা। বন্ধুতো শুনে মহাখুশি। বলে- দোস্ত, তোমার এহন তো বিয়া করা ছাড়া উপায় নাই। আমরাতো সবাই এডভান্স ছিলাম বইলা এই স্বাদ আরো আগেই নিয়া নিলাম। কেবল তুমিই এহন বাকী রইলা। এটুকু বলেই ক্ষান্ত দেয়নি তার বন্ধু। বরঙ আর এক হাত এগিয়ে এসে মোক্ষম জায়গায় খোঁচা দিয়ে বসে। আর কয়দিন চলবো এইভাবে? কিন্তু কোনও কিছু বলার নাই তার। কারন সে জানে, স্বপ্নের ঘটনা বাস্তবে ঘটেনা। তাকে কোনও মেয়ে বিয়ে করতে রাজিই হবেনা। কারন একাধারে বেশ কিছু। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরের মতো আমরা দেখি কি কি কারণে তাকে কোনও মেয়ে বিয়ে করবে না। এক. সে এখনও পুরোদস্তর ক্যাম্পাস ছাড়েনি। আজ এই ছোট ভাই এর রূমে তো কাল ঐ ছোট ভাই এর রুমে। দুই. পরিবারেরও তেমন কোনও অর্থনৈতিক অবস্থা নেই যে চাকরি না করলেও চলবে। তিন. তদুপরি এখনো কোনও প্রকার সে কোনও রোজগার করে না। চার. এখনো কোনও কিছুর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে সেই কাজ সফলভাবে সমাপ্ত করার উদাহরণ নেই তার। পাঁচ. এখন পর্যন্ত যে কোনও দায়িত্বই নিয়ে সফল হতে পারেনি সে সংসারের দায়িত্ব যে নিতে পারবেনা তা চারপাশের সকল মানুষেরই জানা। এমন পুরুষের সাথে সংসার করার অর্থে কোনও মেয়েই রাজি হবেনা। সুতরাং তার সাথে বিয়ের পিড়িতে একসাথে কাউকে বসাতে হলে বড় কিছু করে দেখাতে হবে। তাহলে স্বপ্নের কি হবে?
আপাতত আবার স্বপ্নের কথা বাদ। এবার আবার আমাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বড় কিছু করা। কি বড় কিছু, কোন দিকে বড় কিছু বা কিভাবে বড় কিছু এই বিষয়ে চাঁপা পড়ে যায় আমাদের গল্পের নায়কের স্বপ্নের কথা। সেই সাথে স্বপ্নে পাওয়া রাজকন্যার আবছা মুখশ্রীর কথাও। যেই মুখশ্রী তার সামনে আনন্দ আর এক ঝলক স্বস্তির দেখা দিতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বড় কিছু...
কিন্তু বড় কিছুর দেখা আর সে পায় না। এইভাবে দিন যায় সপ্তাহ যায়; সে ভূলে যায় তার বড় কিছু করার কথা। যা দিয়ে হয়তো ফিরে পাবে সেই আধো আলোতে অতি চেনা অথচ চেনা নয় সেই প্রিয়মুখ। একদিন সে সত্যি সত্যি ভুলে যায় তার স্বপ্নের কথা। ভুলে যায় সে একটি মুখ খোঁজছিলো যা কিনা তার প্রশান্তির ছায়া হিসেবে আবির্ভূত হবে। ভুলে যায় তার বড় কিছু করার কথা। ভুলে যায় একটি চাকরির খুব দরকার সে কথা। ভুলে যায় একটি নতুন জীবনের স্বপ্নের কথা।
কিন্তু জীবন কি থেমে থাকে? অথচ তার তো থামা আর চলার কোনও কিছুরই লক্ষণ ছিলো না। সে শুধু চাইতো চলুক না...
কিন্তু একদিন আর চলে না। তার মা আর ছোট বোন এসে তাকে ক্যাম্পাস থেকে রীতিমত অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় তার সেই পুরনো প্রেম অপ্রেমের ভূবনে। যেখানে সে কাটিয়েছে জীবনের একটি রঙিন অংশ। তার ঘরে নিয়ে যখন তাকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন হঠাৎ আবিষ্কার করে তার সেই স্কুলের গিটার এখনো দেয়ালের হুকে ঝুলে আছে। এই প্রেমকে যে ব্রতি করতে চেয়েছিলো সে, আজ তা হারিয়েছে জীবনের অতল গহ্বরে। সারা বিকেল ঘরে বসে কাটিয়ে দিয়ে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে আসে তার স্কুল আর কলেজের স্মৃতিতাড়িত শৈশব।
ইদানিং কিসের যেনো শূণ্যতা অনুভব করছিলো সে। বুঝতে পারছিলো না। আর এই মায়া আর মোহের ঘোর তার পরিবার অনুভব করে। সন্ধ্যার পর যখন বাড়ি ফিরে তখন মা-বাবাকে তাকে দেখে চুপ করে যেতে দেখে। পরে খবর পায় তার জন্য বিয়ের পাত্রি দেখা হচ্ছে। বিয়ে বোধহয় এবার হয়েই যাবে। দেখতে দেখতে তার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেলো। কিন্তু বেকে বসলো সে। বললো- এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। আমি বিয়ে করবো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তার বিয়ে তার অমতেই চূড়ান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু তার প্রতিবাদ ধোপে টিকলো না। এক প্রকার নজরবন্দী করে রাখা হলো তাকে। এইভাবেই বিয়ের দিনটাও চলে এলো। কিন্তু এখনো মন সায় দিচ্ছে না তার। কিন্তু কোনও উপায়ও বের না হওয়ায় সে বিয়ের পিড়িতে বসলো। বিয়ের দিন রাতে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে গিয়েও সে করলো না। হঠাৎ মন বেঁকে বসলো। ভাবলো একটা মেয়ের সর্বনাশ তো এমনিতেই করলাম। আরো কেন? ভেতরে যাওয়ার আকাঙ্খাটা তাই মরে গেলো। বাইরে বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণের ভেতরই আবার ঘরে প্রবেশ করলো। টেবিলে চিঠিটা একটা পানির গ্লাস দিয়ে চাপা দিয়ে বের হয়ে গেলো। তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী হা করে শুধু দেখলো, কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।
কিছুক্ষণ পরই খবর বেরোল বাপ্পীকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাপ্পী কোথায় কেউ বলতে পারছে না। ছোটবোন আবিষ্কার করলো টেবিলে রাখা চিঠি টা। যাতে লিখা ছিলো-
আমি বলেছিলাম আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করার মতো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। তোমরা আমার কথা শুনলে না। বলেছিলাম কিছুদিন অপেক্ষা করতে। তাও পারলে না। তাই আমি চলে যাচ্ছি। হয়তো আবার কোনওদিন ফিরবো। তবে সংসারের দায়-দায়িত্ব নিতে বললে কখনোই নয়। আমি সংসার বুঝি না। তাই আমাকে শুধু শুধু সাংসারিক বানানোর চেষ্টা করলে তোমরা ভুল করবে। যদি তোমাদের মনে হয় আমার এমনিতেই সংসারে ফিরে আসাটা প্রয়োজন। তবে অপেক্ষা কর, আমি অবশ্যই ফিরবো। ভালো থেকো।

ইতি
বাপ্পী

আমরা এই পর্যন্ত তার স্বপ্ন আর বাস্তবের গল্পটা জানতাম। পরে এক সময় শুনেছিলাম বাপ্পী সংসারে ফিরে গিয়েছে। একটা ভালো চাকরিও জুটিয়েছে। সংসারই করছে ঠিক সাংসারিক মানুষের মতো।
আর সেই স্বপ্নটার কথা এখন হয়তো ভুলেই গিয়েছে। কারণ স্বপ্নটাই তো শেষঅব্দি বাস্তবে রূপ নিয়েছিলো তার জীবনে।

স্বপ্নে পাওয়া গল্প

at শুক্রবার, জুলাই ২৯, ২০১১  |  No comments

গল্পটা কোথা হতে শুরু করা যায় এই নিয়ে একটা ধন্দ মনে কাজ করে। প্রথমত গল্পটা শুরু করা যেতে পারে অর্ণবের গান দিয়ে। অর্ণবের গান আসলে প্রথম উপাদান নয়। এটা হতে পারে সর্বশেষ পথ। তারপরও আমরা শেষ দিক দিয়েই না হয় শুরু করলাম। তাই আমাদের গল্প শুরু হয়ে গেলো।
গত কয়েকদিন ধরে মনের ভেতর বাহিরে ‘আমায় ধরে রাখো, আমায় বেঁধে রাখো’ গানটি বাজতে ছিলো। ফলশ্র“তিতে এই স্বপ্নের অবতারণা। স্বপ্নটিকে তাই আমরা অবচেতন মনের একটা অবস্থাই ধরে নিতে পারি। ধরে নিতে পারি অবচেতনে এই ভাবনাটাই কাজ করছে তীব্রভাবে। এই ভাবনা আরো গভীর থেকে গভীরতর হয় যখন চারপাশের বন্ধুরা বিয়ে করে একে একে সন্তান-সন্ততির জনক-জননী হতে শুরু করলো, তখন তারও হয়তো বিয়ে করে সংসার কর্ম করার বা জনক হওয়ার আকাঙ্খা তৈরি হতে শুরু করে। যদিও সে জানে বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করা তার পক্ষে রীতিমত অসম্ভব। সে অর্থে ‘বিয়ে’ করা যায় কেবল একটা যৌন জীবনের নিশ্চয়তার জন্য। তাই বিয়ের ভাবনা তার মাথায় জেঁকে বসতে পারে। বস্তুত এই ভাবনা তার বাস্তবে রূপ দেয়া এই মুহূর্তে হয়তো স্বপ্নেরও অবান্তরের মতো। অথবা অবান্তরই হয়তো। কিন্তু কল্পনাতো আসলে বাস্তবেরই এক মোহময় পৃথিবী। এই কথা তার অজানা নয়। সে খুব ভালো করেই জানে মানুষ যা স্বপ্নে দেখে তার অনেকটাই তার বাস্তব উপাদান থেকে নিয়ে কল্পনায় শুধু সে একটা রঙ মাখায় মাত্র। আর সেও সেই একই গল্পের অবতারণা করেছে, আর কিছু নয়। তার স্বপ্নটাও তার ভাবনারই একটা প্রতিফলিত রূপ হিসেবে দেখা দেয়। যখন স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তখন তার মনে হতে থাকে আর কিছুক্ষণ দেখতে পারলেই তো হতো। ফলাফলটা হাতে-নাতে জেনে যাওয়া যেতো। কিন্তু ফলাফলটা অধরাই থেকে গেলো তার। এই স্বপ্নের কোনও ফলাফল সে শেষ পর্যন্ত পাবেনা বলেই ধরে নিচ্ছি। তারপরও আমরা ধারণা করতে পারি এই স্বপ্নের বিস্তারিত বৃত্তান্ত নিয়ে কোনও স্বপ্ন বিশারদের কাছে হাজির হলেও এই সমস্যার সমাধান আসতে পারে। কিন্তু স্বপ্ন বিশারদদের সে বিশ্বাস করে না। তার মনে হয় স্বপ্ন বিশারদরা মানুষের স্বপ্ন নিয়ে খেলা করে। যারা স্বপ্ন নিয়ে খেলা করে তারা আর যাই হোক মানুষ হিসেবে সৎ অবশ্যই নয়। এই রকম নানান ধন্দের ভেতর আর তার স্বপ্নের গন্তব্য নিয়ে সে বিচলিত হয়। কিন্তু আস্থা হারায় না, মনে করে এর অবশ্যই একটা সুদূর প্রসারী কারণ রয়েছে। যার দরুণ আজ হোক কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে। সেজন্য প্রস্তুতিও নেয়া প্রয়োজন। ফলে একটি চাকরির জন্য সে হন্যে হয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে, একটা চাকরি এবার যোগার না করলেই নয়। সামনেই তো সুদিন। একটা চাকরি মানে কিছুদিনের অভিজ্ঞতা, কয়দিন পর নতুন চাকরি। আর এভাবে বেশকিছু অভিজ্ঞতার ঝাপি ভারি করে বড় কোনও কিছু করতে না পারলে বিয়ে করা জুটবে না। অন্তত স্বপ্নের বিয়েতো নয়ই। অথচ স্বপ্নের মানুষইতো তার নেই! ভেবেই হাসতে হাসতে খুন। গাছে কাঁঠাল গোফে তেল দেয়ার মতো স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেলো তাহলে। স্বপ্নই তো বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্ন আছে বলেইতো সেও বেঁচে আছে।
দুইদিন এই স্বপ্ন নিয়ে কোনও ভাবনা সে ভাবেনি। যতটা ভেবেছে সে একটা চাকরি নিয়ে। আসলে তাকে চাকরি দিবে কে? কেন দিবে? এই ভাবনাগুলোই গত দুইদিন বেশি মাথায় এসেছে। এখন কেবল একটা চাকরির চিন্তাই মাথায় ঘুরঘুর করছে তার। তবে এই স্বপ্নকে সে অতিক্রম করতে পারছেনা তারপরও। সারাদিন শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নেংটা কালের বন্ধু রাশেদ ফোন করলো।
এই রাশেদ তার মাঝে মাঝে খোঁজ খবর নেয়। নেয় আর জ্বালা বাড়ায়। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করতে না করতেই রাশেদ বিয়ে করেফেলেছিলো। অথচ তখন তার কোনও রোজগার নেই। রোজগারের পথও নেই। আসলে দীর্ঘদিনের প্রেম, দুইজন দুই মেরুতে বসবাস করলে যদি এই প্রেম আর কোনও গন্তব্য না পায় তবে তো বিপদ হয়ে যাবে। এ¤িœতেই মেয়েটার প্রতি রাশেদ কিছুটা দূর্বলও ছিলো। এই দূর্বলতাই রাশেদের বিয়ের ব্যাপারে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিলো। যখন মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে যেদিন সবাই যার যার বাড়ি ফেরার জন্য বাক্স পেটরা গোছাচ্ছিলো তখন রাশেদ গো ধরে, তোরা বাড়ি যাবি যা কিন্তু আমি একলা বাড়ি যাবো না।
- একলা বাড়ি যাবি না মানে?
- নীলুরে সাথে নিয়া যামু।
- এইটার কোনও মানে হয়?
- মানে হয় না? প্রয়োজন বোধে বিয়ে করে বউ বানিয়ে তারপর নিয়ে যাবো। তবু একলা যাবো না।
কি আর করা যাবে তখন। বাকী আরও যারা বাড়ি যাওয়ার জন্য বাক্স পেটরা গুছিয়েছিলো তাদের ডেকে এনে, কাজী’র বাড়ি গিয়ে একজনকে উকিল বাবা করে আর দুইজনকে সাক্ষী করে এক কেজি কমদামী মিষ্টি খেয়ে বিয়ের কবুল বললো রাশেদ আর নীলু। ক্যাম্পাস জীবনের ইতি ঘটিয়ে এখন সংসার জীবনের শুরু।
সেই রাশেদের ফোন পেয়ে তার স্বপ্ন বৃত্তান্ত আবার মনে পড়ে গেলো। বন্ধুকে গড়গড় করে বলেদিলো গত দুইদিন আগে দেখা স্বপ্নের সকল কথা। বন্ধুতো শুনে মহাখুশি। বলে- দোস্ত, তোমার এহন তো বিয়া করা ছাড়া উপায় নাই। আমরাতো সবাই এডভান্স ছিলাম বইলা এই স্বাদ আরো আগেই নিয়া নিলাম। কেবল তুমিই এহন বাকী রইলা। এটুকু বলেই ক্ষান্ত দেয়নি তার বন্ধু। বরঙ আর এক হাত এগিয়ে এসে মোক্ষম জায়গায় খোঁচা দিয়ে বসে। আর কয়দিন চলবো এইভাবে? কিন্তু কোনও কিছু বলার নাই তার। কারন সে জানে, স্বপ্নের ঘটনা বাস্তবে ঘটেনা। তাকে কোনও মেয়ে বিয়ে করতে রাজিই হবেনা। কারন একাধারে বেশ কিছু। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরের মতো আমরা দেখি কি কি কারণে তাকে কোনও মেয়ে বিয়ে করবে না। এক. সে এখনও পুরোদস্তর ক্যাম্পাস ছাড়েনি। আজ এই ছোট ভাই এর রূমে তো কাল ঐ ছোট ভাই এর রুমে। দুই. পরিবারেরও তেমন কোনও অর্থনৈতিক অবস্থা নেই যে চাকরি না করলেও চলবে। তিন. তদুপরি এখনো কোনও প্রকার সে কোনও রোজগার করে না। চার. এখনো কোনও কিছুর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে সেই কাজ সফলভাবে সমাপ্ত করার উদাহরণ নেই তার। পাঁচ. এখন পর্যন্ত যে কোনও দায়িত্বই নিয়ে সফল হতে পারেনি সে সংসারের দায়িত্ব যে নিতে পারবেনা তা চারপাশের সকল মানুষেরই জানা। এমন পুরুষের সাথে সংসার করার অর্থে কোনও মেয়েই রাজি হবেনা। সুতরাং তার সাথে বিয়ের পিড়িতে একসাথে কাউকে বসাতে হলে বড় কিছু করে দেখাতে হবে। তাহলে স্বপ্নের কি হবে?
আপাতত আবার স্বপ্নের কথা বাদ। এবার আবার আমাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বড় কিছু করা। কি বড় কিছু, কোন দিকে বড় কিছু বা কিভাবে বড় কিছু এই বিষয়ে চাঁপা পড়ে যায় আমাদের গল্পের নায়কের স্বপ্নের কথা। সেই সাথে স্বপ্নে পাওয়া রাজকন্যার আবছা মুখশ্রীর কথাও। যেই মুখশ্রী তার সামনে আনন্দ আর এক ঝলক স্বস্তির দেখা দিতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে বড় কিছু...
কিন্তু বড় কিছুর দেখা আর সে পায় না। এইভাবে দিন যায় সপ্তাহ যায়; সে ভূলে যায় তার বড় কিছু করার কথা। যা দিয়ে হয়তো ফিরে পাবে সেই আধো আলোতে অতি চেনা অথচ চেনা নয় সেই প্রিয়মুখ। একদিন সে সত্যি সত্যি ভুলে যায় তার স্বপ্নের কথা। ভুলে যায় সে একটি মুখ খোঁজছিলো যা কিনা তার প্রশান্তির ছায়া হিসেবে আবির্ভূত হবে। ভুলে যায় তার বড় কিছু করার কথা। ভুলে যায় একটি চাকরির খুব দরকার সে কথা। ভুলে যায় একটি নতুন জীবনের স্বপ্নের কথা।
কিন্তু জীবন কি থেমে থাকে? অথচ তার তো থামা আর চলার কোনও কিছুরই লক্ষণ ছিলো না। সে শুধু চাইতো চলুক না...
কিন্তু একদিন আর চলে না। তার মা আর ছোট বোন এসে তাকে ক্যাম্পাস থেকে রীতিমত অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে যায়। নিয়ে যায় তার সেই পুরনো প্রেম অপ্রেমের ভূবনে। যেখানে সে কাটিয়েছে জীবনের একটি রঙিন অংশ। তার ঘরে নিয়ে যখন তাকে ছেড়ে দেয়া হয় তখন হঠাৎ আবিষ্কার করে তার সেই স্কুলের গিটার এখনো দেয়ালের হুকে ঝুলে আছে। এই প্রেমকে যে ব্রতি করতে চেয়েছিলো সে, আজ তা হারিয়েছে জীবনের অতল গহ্বরে। সারা বিকেল ঘরে বসে কাটিয়ে দিয়ে সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরে আসে তার স্কুল আর কলেজের স্মৃতিতাড়িত শৈশব।
ইদানিং কিসের যেনো শূণ্যতা অনুভব করছিলো সে। বুঝতে পারছিলো না। আর এই মায়া আর মোহের ঘোর তার পরিবার অনুভব করে। সন্ধ্যার পর যখন বাড়ি ফিরে তখন মা-বাবাকে তাকে দেখে চুপ করে যেতে দেখে। পরে খবর পায় তার জন্য বিয়ের পাত্রি দেখা হচ্ছে। বিয়ে বোধহয় এবার হয়েই যাবে। দেখতে দেখতে তার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেলো। কিন্তু বেকে বসলো সে। বললো- এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। আমি বিয়ে করবো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তার বিয়ে তার অমতেই চূড়ান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু তার প্রতিবাদ ধোপে টিকলো না। এক প্রকার নজরবন্দী করে রাখা হলো তাকে। এইভাবেই বিয়ের দিনটাও চলে এলো। কিন্তু এখনো মন সায় দিচ্ছে না তার। কিন্তু কোনও উপায়ও বের না হওয়ায় সে বিয়ের পিড়িতে বসলো। বিয়ের দিন রাতে বাসর ঘরে প্রবেশ করতে গিয়েও সে করলো না। হঠাৎ মন বেঁকে বসলো। ভাবলো একটা মেয়ের সর্বনাশ তো এমনিতেই করলাম। আরো কেন? ভেতরে যাওয়ার আকাঙ্খাটা তাই মরে গেলো। বাইরে বেরিয়ে এলো। কিছুক্ষণের ভেতরই আবার ঘরে প্রবেশ করলো। টেবিলে চিঠিটা একটা পানির গ্লাস দিয়ে চাপা দিয়ে বের হয়ে গেলো। তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী হা করে শুধু দেখলো, কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।
কিছুক্ষণ পরই খবর বেরোল বাপ্পীকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাপ্পী কোথায় কেউ বলতে পারছে না। ছোটবোন আবিষ্কার করলো টেবিলে রাখা চিঠি টা। যাতে লিখা ছিলো-
আমি বলেছিলাম আমি এই মুহূর্তে বিয়ে করার মতো মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই। তোমরা আমার কথা শুনলে না। বলেছিলাম কিছুদিন অপেক্ষা করতে। তাও পারলে না। তাই আমি চলে যাচ্ছি। হয়তো আবার কোনওদিন ফিরবো। তবে সংসারের দায়-দায়িত্ব নিতে বললে কখনোই নয়। আমি সংসার বুঝি না। তাই আমাকে শুধু শুধু সাংসারিক বানানোর চেষ্টা করলে তোমরা ভুল করবে। যদি তোমাদের মনে হয় আমার এমনিতেই সংসারে ফিরে আসাটা প্রয়োজন। তবে অপেক্ষা কর, আমি অবশ্যই ফিরবো। ভালো থেকো।

ইতি
বাপ্পী

আমরা এই পর্যন্ত তার স্বপ্ন আর বাস্তবের গল্পটা জানতাম। পরে এক সময় শুনেছিলাম বাপ্পী সংসারে ফিরে গিয়েছে। একটা ভালো চাকরিও জুটিয়েছে। সংসারই করছে ঠিক সাংসারিক মানুষের মতো।
আর সেই স্বপ্নটার কথা এখন হয়তো ভুলেই গিয়েছে। কারণ স্বপ্নটাই তো শেষঅব্দি বাস্তবে রূপ নিয়েছিলো তার জীবনে।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

আজ এই আনন্দধানে কেবল উষ্ণ রঙের ফুলঝুরি
তার গোপন দুয়ারের চাবির গোছা হারিয়ে ফেলেছি
তবুও পাথর ও তাম্রলীপিতে দেখি কেবল মুক্তির ইশারা
অথচ, এই বসন্তের পূর্বেও তোমার জন্য রইল তৃষ্ণার্ত ঠোঁট
আমি তবুও সেই লক্ষণ তীর চিহ্ণ খুঁজে বেড়াই
কোথায় তুমি আমার মুঠোভর্তি প্রেমের পেয়ালা?
আগামী বসন্তে তোমার জন্য তাই তুলে রাখলাম সকল অন্ধকার

অনন্ত বসন্ত

at শুক্রবার, জুলাই ২৯, ২০১১  |  No comments

আজ এই আনন্দধানে কেবল উষ্ণ রঙের ফুলঝুরি
তার গোপন দুয়ারের চাবির গোছা হারিয়ে ফেলেছি
তবুও পাথর ও তাম্রলীপিতে দেখি কেবল মুক্তির ইশারা
অথচ, এই বসন্তের পূর্বেও তোমার জন্য রইল তৃষ্ণার্ত ঠোঁট
আমি তবুও সেই লক্ষণ তীর চিহ্ণ খুঁজে বেড়াই
কোথায় তুমি আমার মুঠোভর্তি প্রেমের পেয়ালা?
আগামী বসন্তে তোমার জন্য তাই তুলে রাখলাম সকল অন্ধকার

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম