রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬



গত ২২ জানুয়ারি ছিলো প্রিয় ব্যান্ড মেঘদলের এক যুগ পূর্তি। সেই দিনের বারো বছর আগে প্রতিষ্ঠা পাইছিলো এক বাংলা ব্যান্ড। যার নাম মেঘদল। তো প্রিয় ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠার যুগপূর্তিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে নিচে আইসা সাইয়েদ জামিল কমেন্ট করে “‘মেঘদল-টা কী জিনিসরে কমল? আমি কোনও উত্তর দেই নাই। কারণ, আমার ধারণা জামিল খুব ভালো করেই জানে এইটা কি জিনিস। তাই হয়তো তার অন্য কোনও চিন্তা আছে প্রশ্নের পেছনে। তাই আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য একটু সময় চাইতেছিলাম। চাইতেছিলাম, একটু ডিটেইলে বলি। এই লেখা আসলে সাইয়েদ জামিলকে লেখা সেই উত্তর। যা আমি আরও বহু আগেই বলতে চাইছিলাম একা একা। নিজের জন্য, নিজের কাছে।


ফ্ল্যাশব্যাক
মেঘদল কী জিনিস এই কথা বলার জন্য আমাকে একটু পেছনে তাকাতে হয়। সেইটা ২০০৬ সালের কথা। আমি তখন পুরোদমে ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা কমিটিতে রাজনীতি করি। সেই সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ফেব্রুয়ারিতে। সেই সম্মেলনে যোগ দিতে ময়মনসিংহ থেকে সদলবলে ঢাকায় আসলাম। উদ্বোধনী দিনে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছাত্র ইউনিয়নের আমন্ত্রিত ব্যান্ড চিৎকার আর মেঘদল। দুইটা ব্যান্ডের গান আমি সেবারই প্রথম শুনি। চিৎকারের কয়েকটা চমৎকার গান শোনার পর (যার মাঝে একটা ছিলো হাট্টিমাটিম টিম লইয়া গবেষণা চালাইছে) মেঘদল মঞ্চে দাঁড়ায়। সেই আমার মেঘদলকে চেনার শুরু। যা এখনও ধারাবাহিক। সেইবার মেঘদল ঔম, ক্রুসেডসহ চার-কি পাঁচটি গান গায়।  বায়োস্কোপের নেশা আমার যেমন ছাড়ে না, তেমনি চেপে বসে মেঘদলের গানের নেশাও। সম্মেলন শেষে ময়মনসিংহে গিয়ে দেখি মেঘদলের অডিও অ্যালবাম কেউ সেখানে নেয় নাই। নিবেই কিভাবে? তারা তো আর জনপ্রিয় ব্যান্ড না। কিন্তু মেঘদলের গান এইভাবে না শুনে কেমনে দিন কাটাই? তাই ঢাকা থেকে মেঘদলের অডিও সিডি কিনে ময়মনসিংহে নেয়া হলো। বন্ধুরা যেই কয়টা কপির চেষ্টা করছিলাম, ততগুলো পাওয়া গেলো না। পাওয়া গেলো মাত্র এক কপি। আর তাই পালা করে কম্পিউটারে কপি করা। তারপর সবার মুখস্থ। ময়মনসিংহে পরিচিত না হলেও মেঘদল ঢাকায় মোটামোটি পপুলার। হুট করে একদিন দেখি অতনু (অতনু তিয়াস) তাদের নিয়া ইত্তেফাকে একটা ফিচারও লিখলো। বাহ্ চমৎকার তো! আর কই যায়। সে বছরই আমি রাজনীতি থেকে সরাসরি সরে আসি। কিন্তু মেঘদলের সাথে সম্পর্কটা ছাড়া হয় নি। বরং বেড়েছেই বলা যায়। এইবার নিজেকে প্রশ্ন করি। আসলেই কি বেড়েছে? যদি বেড়েই থাকে তবে বলো দেখি, মেঘদল কি?


এই প্রশ্নের খোঁজা কি মূখ্য বিষয় কিনা জানিনা। তবে এ জানি মেঘদল আমাদের রোদের চিঠি, অথবা বনসাই বনের মালি। কারণ, এই যে আমাদের চারপাশ ঘিরে আছে বেদনারহিত অনুভূতির দেয়াল এর সীমানা কোনটা আমরা জানি না। জানি কখনও উসাইন বোল্টের মতো, কখনো ম্যারাথনের প্রতিযোগিদের মতো দৌড়াইতেছি কেবল। এই দৌড়ের মধ্যে চুপচাপ যে হাওয়া বাতাস আসে, মনে সাহস আর অনুপ্রেরণাও যোগায় সেইটা মেঘদলের গান।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঐদিন ঐ মঞ্চে যেই লাইনআপ ছিলো এখন বোধহয় সেই লাইনআপ হুবহু নাই। সেদিন নগরের অতিথি আমি ভার্সিটির রাস্তায় নিজের জুতা পশ্চাদেশের নিচে দিয়া বসে পড়ছিলাম। গান শুনছিলাম সম্ভবত চারটা কি পাঁচটা। তার মধ্যে ঔম, চতুর্দিকে, ক্রুসেড, ব্যবচ্ছেদ গানগুলো ছিলো মনে করতে পারি।

তারপর রিপিটেশনের কালে, একই গান বারবার বারবার শুনছি ঔম। কেন শুনছি এই প্রশ্ন করলে এখনো চুপ হয়ে যাই। মনে হয়, কার কাছে দিবো এই উত্তর? সে কি গান শুনছিলো না সুর? নাকি কিছুটা হাওয়ায় ভেসে আসা একটা চড়কির মতো কথাবার্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল? আমার নিজের কাছে প্রশ্নগুলোরই উত্তর মেলে না। অন্যকে কিভাবে উত্তর দেই!!!

ঔম গানটা আমি নানান ধরনে মানুষকে শোনাইছি। একবার এক মুর্শীদি ভক্ত কবিরাজরে শুনাইছিলাম। গান  শুনে তিনি আমাকে জড়াইয়া ধরলেন। বললেন, তুমি এমন সুন্দর গান কই পাইলা? তার চোখে মানুষের মুক্তির যে আনন্দ সেই আনন্দ দেখছিলাম। সত্যি বলছি, সেই মুক্তির আনন্দ অনেক দিন কারো চোখে দেখি না। সব পরাজিত যোদ্ধা দেখি। চোখের সামনে সব ক্লান্ত বিমর্ষ আর বিদঘুটে অন্ধকারময় খিলখিল হাসি। ঐদিন, ঐ মুর্শীদি ভক্ত তার ভাবনার ধর্ম অধর্মের বিশাল লেকচার শুনাইছিলো। তর্ক হইছিলো তার সাথে, হইছিলো আলোচনা। ভাবনার বিষয় বিস্তৃত হয়ে আর গানে ছিলো না। ছিলো ধর্ম আর মানুষে। দীর্ঘ সেই সংলাপ শেষে আমরা যখন সমাপ্তির পর্দা টানি, তখন আমরা একমত হইছিলাম এই চিন্তায় যে, মানুষ যে এত ধর্ম-ধর্ম করে-ধর্মেরও উচিত কিছু মানুষ-মানুষ করা। কিন্তু ঐ ধর্মই তো বায়বিয়। আমরা কেমনে তার ছায়া মাড়াই? আমাদেও দুনিয়ার হাওয়া বাতাসে বাড়তে বাড়তে আমাদের চাইতে বড় হয়ে যায় ধর্ম। কেমন বড়? তার কোনও আকার আয়তনের কথা আমরা বলতেই পারি না। তারে না যায় ধরা, না যায় ছোঁয়া।

এবার অন্য সুরে তাকাই, অন্য কথায়-সঙ্গীতে। আসলেই ধর্ম বলে কি কিছু আছে কি না, সেই প্রশ্নের চাইতে তখন আমাদের চিন্তা খেলা করে জগৎ সংসার নিয়ে। মনে প্রশ্ন জাগে মানুষের কজন ভগবান, কজনে ভাগ্য লেখে- কজনে জীবন সামলান? এই প্রশ্ন আর উত্তরের খেলা খেলতে গিয়ে আমরা হাওয়ার মতো অদৃশ্য কিছু উত্তরও তাদের কাছ থেকে পাই। তারা বলে দিয়ে যায়, আকাশে উড়ছে বোমারু ভগবান, মানুষ ধ্বংসে যিনি গণতন্ত্র এনে দেন। কিন্তু এই উত্তরে আমাদের স্বস্তি মেলে না। আমরা অস্বস্তি নিয়ে দৌড়ে উঠে বসি নিজ নিজ গন্তব্যের লোকাল বাসে। ফেরা আর না ফেরার এক অস্পৃশ্য প্রতিবন্ধকতাও আমাদের সঙ্গে বাসে উঠে পড়ে। দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্তি পায় আমাদের, ভুলে যায় বিষাদময় রাত্রীদিনের কথা। তন্দ্রাচ্ছন্নতা ঘিরে ধরে। আধো ঘুম আধো জাগ্রত জগত থেকে অন্য এক জগতের দিকে হাঁটি আর তারাও কিনা বলে আমারই কথা, আমাদেরই কথা-
আমি হেঁটে যাই মেঘের কাছে
আমি হেঁটে যাই
হেঁটে যাই
প্রশ্বাসে ছুঁয়েছি আকাশ
দুঃখ ছুঁয়ে যায় বাতাসে বাতাসে
আমি হেঁটে যাই
আমার সকল পাপ ক্ষমা করে দিও তুমি মেঘ...
এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে ধরে আমাদের। গলা ভিজে আসে পাপবোধে। বাড়ি ফেরার পথ ভুলে যাই। মনে পরে সুদূরে প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক অবয়ব। কে সেই শান্তির দূত? যে অবয়বের চেয়ে বেশিকিছু নয়, অথবা নেই তারে ছুঁয়ে যাওয়ার কোনও ছুতো। কেবল বুকের ভেতর থেকে অস্ফুট স্বরে বলে উঠি... ভালোবাসা হইয়ো তুমি পরজনমে। কিন্তু তা হয় না। বরঙ ডানা মেলে অন্য এক ভূবনে, উড়ে যায় নিশিপাখির মতো, খুব করে ভুলে যাওয়া এক পাখির ডানার মতো উড়ে যায়। হারিয়ে যায়, বিভ্রান্ত পথিকের মতো অচেনা শহরে। সেই শহর কোথায়? কোন পথে ছুটলে সেই পথের সন্ধান মিলবে? আদৌ মিলবে কি না, তা জানা নেই। থাকবে কি করে? নাগরিক কবিয়ালকে খুঁজতে খুঁজতে নিজেকেই হারিয়েছে ফেলেছি চেনা অচেনা আলো আধারে, চলতি পথে কোনও বাসের ভীড়ে। অথচ প্রায় প্রতিরাতেই আমাদের শৈশব কান্না করে নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে। দূরে কোথাও আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়, আকাশে আলো ছায়ার খেলায় ভুলে যাই টানাপোড়েনের আলু-বেগুনের দাম আর লোকাল বাসের ভাড়া। মনে মনে খেলা করে মৃত বিপ্লবের আত্মা-কান্নার বৃষ্টি নামে শহরে আর-
আমার শহর খুব সহজে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে
কেউ জানে না কোন তীব্র শ্লোগান, মুখর হতে এই শহরে
জানি, শ্লোগান মুখর সময়ের গল্প আমাদের ভুরি-ভুরি। কিন্তু এই যে বন্ধ্যাকাল, ভেতর থেকে কোনও আওয়াজ নেই। নেই মানুষের ডাকে মানুষের সাড়া দেয়ার মতো ব্যাক্তিত্ব। একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি মানবিকতা বোধের গোপন চিঠি। এমন সময়ে যারা সমাজে সবচেয়ে বেশী দায় বোধ করে, প্রকৃত সংস্কৃতিকর্মী তারাই। যদিও সমাজে তার কর্মের প্রভাব আসে খুব ধীরে, কিন্তু স্থায়ি হয় সেইটাই। এই দায়বোধটার অনেকটাই গ্রহণ করে মেঘদল। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাষায় তাদের চেতনার প্রকাশটাই অনেক সময় হয়ে উঠে সমাজের বেদনার ভাষা। এমন পরিস্থিতির কথাও কিন্তু তারা তাদের গানেই বলে দিয়েছে আরও বহু আগে।
অস্থিরতায়, নিমগ্নতায় পুড়ছে স্বদেশ পুড়ছে সবাই
তবু রুখে দাঁড়াই আমরা!
ঘুরে দাঁড়াই আমরা!! ফিরে দাঁড়াই!!!
এই হলো শিল্পীর দায়বোধ। যা এড়িয়ে গেলে তাকে আর শিল্পী ভাবতে পারি না আমি। আসলে আমি ভাবতে চাইও না। এই বিষয় নিয়ে অনেকের সাথে অনেক তর্ক আর আলোচনা হয়-হয়েছে। কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্র বদলায়নি। হয়তো মেঘদলও আমার মতো ভাবে না, কিন্তু আমি তাদের কাজে নিজের ভাবনার ছায়া পাই। যা তাদেরকে নিজের মতো ভাবতে সহায়তা করে।

মেঘদল আসলে গোপন এক আশ্রয়ের নাম। যখন নিজের সাথে নিজের লড়াই করার প্রয়োজন, তখন অন্তর্গত অনুপ্রেরণা হিসেবে মেঘদল আসে। এই আশ্রয়ের অনুভূতি প্রকাশে বোদলেয়ারের আশ্রয় ছাড়া উপায় নেই; তাই সেই ভাষাতেই বলি-
আমি ভালোবাসি মেঘ... চলিষ্ণু মেঘ... ঐ উচুতে... ঐ উচুতে

আমি ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল!

মেঘদল আমাদের রোদের চিঠি

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৬  |  No comments



গত ২২ জানুয়ারি ছিলো প্রিয় ব্যান্ড মেঘদলের এক যুগ পূর্তি। সেই দিনের বারো বছর আগে প্রতিষ্ঠা পাইছিলো এক বাংলা ব্যান্ড। যার নাম মেঘদল। তো প্রিয় ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠার যুগপূর্তিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে নিচে আইসা সাইয়েদ জামিল কমেন্ট করে “‘মেঘদল-টা কী জিনিসরে কমল? আমি কোনও উত্তর দেই নাই। কারণ, আমার ধারণা জামিল খুব ভালো করেই জানে এইটা কি জিনিস। তাই হয়তো তার অন্য কোনও চিন্তা আছে প্রশ্নের পেছনে। তাই আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য একটু সময় চাইতেছিলাম। চাইতেছিলাম, একটু ডিটেইলে বলি। এই লেখা আসলে সাইয়েদ জামিলকে লেখা সেই উত্তর। যা আমি আরও বহু আগেই বলতে চাইছিলাম একা একা। নিজের জন্য, নিজের কাছে।


ফ্ল্যাশব্যাক
মেঘদল কী জিনিস এই কথা বলার জন্য আমাকে একটু পেছনে তাকাতে হয়। সেইটা ২০০৬ সালের কথা। আমি তখন পুরোদমে ছাত্র ইউনিয়ন ময়মনসিংহ জেলা কমিটিতে রাজনীতি করি। সেই সময় ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ফেব্রুয়ারিতে। সেই সম্মেলনে যোগ দিতে ময়মনসিংহ থেকে সদলবলে ঢাকায় আসলাম। উদ্বোধনী দিনে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছাত্র ইউনিয়নের আমন্ত্রিত ব্যান্ড চিৎকার আর মেঘদল। দুইটা ব্যান্ডের গান আমি সেবারই প্রথম শুনি। চিৎকারের কয়েকটা চমৎকার গান শোনার পর (যার মাঝে একটা ছিলো হাট্টিমাটিম টিম লইয়া গবেষণা চালাইছে) মেঘদল মঞ্চে দাঁড়ায়। সেই আমার মেঘদলকে চেনার শুরু। যা এখনও ধারাবাহিক। সেইবার মেঘদল ঔম, ক্রুসেডসহ চার-কি পাঁচটি গান গায়।  বায়োস্কোপের নেশা আমার যেমন ছাড়ে না, তেমনি চেপে বসে মেঘদলের গানের নেশাও। সম্মেলন শেষে ময়মনসিংহে গিয়ে দেখি মেঘদলের অডিও অ্যালবাম কেউ সেখানে নেয় নাই। নিবেই কিভাবে? তারা তো আর জনপ্রিয় ব্যান্ড না। কিন্তু মেঘদলের গান এইভাবে না শুনে কেমনে দিন কাটাই? তাই ঢাকা থেকে মেঘদলের অডিও সিডি কিনে ময়মনসিংহে নেয়া হলো। বন্ধুরা যেই কয়টা কপির চেষ্টা করছিলাম, ততগুলো পাওয়া গেলো না। পাওয়া গেলো মাত্র এক কপি। আর তাই পালা করে কম্পিউটারে কপি করা। তারপর সবার মুখস্থ। ময়মনসিংহে পরিচিত না হলেও মেঘদল ঢাকায় মোটামোটি পপুলার। হুট করে একদিন দেখি অতনু (অতনু তিয়াস) তাদের নিয়া ইত্তেফাকে একটা ফিচারও লিখলো। বাহ্ চমৎকার তো! আর কই যায়। সে বছরই আমি রাজনীতি থেকে সরাসরি সরে আসি। কিন্তু মেঘদলের সাথে সম্পর্কটা ছাড়া হয় নি। বরং বেড়েছেই বলা যায়। এইবার নিজেকে প্রশ্ন করি। আসলেই কি বেড়েছে? যদি বেড়েই থাকে তবে বলো দেখি, মেঘদল কি?


এই প্রশ্নের খোঁজা কি মূখ্য বিষয় কিনা জানিনা। তবে এ জানি মেঘদল আমাদের রোদের চিঠি, অথবা বনসাই বনের মালি। কারণ, এই যে আমাদের চারপাশ ঘিরে আছে বেদনারহিত অনুভূতির দেয়াল এর সীমানা কোনটা আমরা জানি না। জানি কখনও উসাইন বোল্টের মতো, কখনো ম্যারাথনের প্রতিযোগিদের মতো দৌড়াইতেছি কেবল। এই দৌড়ের মধ্যে চুপচাপ যে হাওয়া বাতাস আসে, মনে সাহস আর অনুপ্রেরণাও যোগায় সেইটা মেঘদলের গান।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঐদিন ঐ মঞ্চে যেই লাইনআপ ছিলো এখন বোধহয় সেই লাইনআপ হুবহু নাই। সেদিন নগরের অতিথি আমি ভার্সিটির রাস্তায় নিজের জুতা পশ্চাদেশের নিচে দিয়া বসে পড়ছিলাম। গান শুনছিলাম সম্ভবত চারটা কি পাঁচটা। তার মধ্যে ঔম, চতুর্দিকে, ক্রুসেড, ব্যবচ্ছেদ গানগুলো ছিলো মনে করতে পারি।

তারপর রিপিটেশনের কালে, একই গান বারবার বারবার শুনছি ঔম। কেন শুনছি এই প্রশ্ন করলে এখনো চুপ হয়ে যাই। মনে হয়, কার কাছে দিবো এই উত্তর? সে কি গান শুনছিলো না সুর? নাকি কিছুটা হাওয়ায় ভেসে আসা একটা চড়কির মতো কথাবার্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল? আমার নিজের কাছে প্রশ্নগুলোরই উত্তর মেলে না। অন্যকে কিভাবে উত্তর দেই!!!

ঔম গানটা আমি নানান ধরনে মানুষকে শোনাইছি। একবার এক মুর্শীদি ভক্ত কবিরাজরে শুনাইছিলাম। গান  শুনে তিনি আমাকে জড়াইয়া ধরলেন। বললেন, তুমি এমন সুন্দর গান কই পাইলা? তার চোখে মানুষের মুক্তির যে আনন্দ সেই আনন্দ দেখছিলাম। সত্যি বলছি, সেই মুক্তির আনন্দ অনেক দিন কারো চোখে দেখি না। সব পরাজিত যোদ্ধা দেখি। চোখের সামনে সব ক্লান্ত বিমর্ষ আর বিদঘুটে অন্ধকারময় খিলখিল হাসি। ঐদিন, ঐ মুর্শীদি ভক্ত তার ভাবনার ধর্ম অধর্মের বিশাল লেকচার শুনাইছিলো। তর্ক হইছিলো তার সাথে, হইছিলো আলোচনা। ভাবনার বিষয় বিস্তৃত হয়ে আর গানে ছিলো না। ছিলো ধর্ম আর মানুষে। দীর্ঘ সেই সংলাপ শেষে আমরা যখন সমাপ্তির পর্দা টানি, তখন আমরা একমত হইছিলাম এই চিন্তায় যে, মানুষ যে এত ধর্ম-ধর্ম করে-ধর্মেরও উচিত কিছু মানুষ-মানুষ করা। কিন্তু ঐ ধর্মই তো বায়বিয়। আমরা কেমনে তার ছায়া মাড়াই? আমাদেও দুনিয়ার হাওয়া বাতাসে বাড়তে বাড়তে আমাদের চাইতে বড় হয়ে যায় ধর্ম। কেমন বড়? তার কোনও আকার আয়তনের কথা আমরা বলতেই পারি না। তারে না যায় ধরা, না যায় ছোঁয়া।

এবার অন্য সুরে তাকাই, অন্য কথায়-সঙ্গীতে। আসলেই ধর্ম বলে কি কিছু আছে কি না, সেই প্রশ্নের চাইতে তখন আমাদের চিন্তা খেলা করে জগৎ সংসার নিয়ে। মনে প্রশ্ন জাগে মানুষের কজন ভগবান, কজনে ভাগ্য লেখে- কজনে জীবন সামলান? এই প্রশ্ন আর উত্তরের খেলা খেলতে গিয়ে আমরা হাওয়ার মতো অদৃশ্য কিছু উত্তরও তাদের কাছ থেকে পাই। তারা বলে দিয়ে যায়, আকাশে উড়ছে বোমারু ভগবান, মানুষ ধ্বংসে যিনি গণতন্ত্র এনে দেন। কিন্তু এই উত্তরে আমাদের স্বস্তি মেলে না। আমরা অস্বস্তি নিয়ে দৌড়ে উঠে বসি নিজ নিজ গন্তব্যের লোকাল বাসে। ফেরা আর না ফেরার এক অস্পৃশ্য প্রতিবন্ধকতাও আমাদের সঙ্গে বাসে উঠে পড়ে। দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্তি পায় আমাদের, ভুলে যায় বিষাদময় রাত্রীদিনের কথা। তন্দ্রাচ্ছন্নতা ঘিরে ধরে। আধো ঘুম আধো জাগ্রত জগত থেকে অন্য এক জগতের দিকে হাঁটি আর তারাও কিনা বলে আমারই কথা, আমাদেরই কথা-
আমি হেঁটে যাই মেঘের কাছে
আমি হেঁটে যাই
হেঁটে যাই
প্রশ্বাসে ছুঁয়েছি আকাশ
দুঃখ ছুঁয়ে যায় বাতাসে বাতাসে
আমি হেঁটে যাই
আমার সকল পাপ ক্ষমা করে দিও তুমি মেঘ...
এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে ধরে আমাদের। গলা ভিজে আসে পাপবোধে। বাড়ি ফেরার পথ ভুলে যাই। মনে পরে সুদূরে প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক অবয়ব। কে সেই শান্তির দূত? যে অবয়বের চেয়ে বেশিকিছু নয়, অথবা নেই তারে ছুঁয়ে যাওয়ার কোনও ছুতো। কেবল বুকের ভেতর থেকে অস্ফুট স্বরে বলে উঠি... ভালোবাসা হইয়ো তুমি পরজনমে। কিন্তু তা হয় না। বরঙ ডানা মেলে অন্য এক ভূবনে, উড়ে যায় নিশিপাখির মতো, খুব করে ভুলে যাওয়া এক পাখির ডানার মতো উড়ে যায়। হারিয়ে যায়, বিভ্রান্ত পথিকের মতো অচেনা শহরে। সেই শহর কোথায়? কোন পথে ছুটলে সেই পথের সন্ধান মিলবে? আদৌ মিলবে কি না, তা জানা নেই। থাকবে কি করে? নাগরিক কবিয়ালকে খুঁজতে খুঁজতে নিজেকেই হারিয়েছে ফেলেছি চেনা অচেনা আলো আধারে, চলতি পথে কোনও বাসের ভীড়ে। অথচ প্রায় প্রতিরাতেই আমাদের শৈশব কান্না করে নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে। দূরে কোথাও আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়, আকাশে আলো ছায়ার খেলায় ভুলে যাই টানাপোড়েনের আলু-বেগুনের দাম আর লোকাল বাসের ভাড়া। মনে মনে খেলা করে মৃত বিপ্লবের আত্মা-কান্নার বৃষ্টি নামে শহরে আর-
আমার শহর খুব সহজে একলা পাখির মতো ভিজতে থাকে
কেউ জানে না কোন তীব্র শ্লোগান, মুখর হতে এই শহরে
জানি, শ্লোগান মুখর সময়ের গল্প আমাদের ভুরি-ভুরি। কিন্তু এই যে বন্ধ্যাকাল, ভেতর থেকে কোনও আওয়াজ নেই। নেই মানুষের ডাকে মানুষের সাড়া দেয়ার মতো ব্যাক্তিত্ব। একেবারেই হারিয়ে ফেলেছি মানবিকতা বোধের গোপন চিঠি। এমন সময়ে যারা সমাজে সবচেয়ে বেশী দায় বোধ করে, প্রকৃত সংস্কৃতিকর্মী তারাই। যদিও সমাজে তার কর্মের প্রভাব আসে খুব ধীরে, কিন্তু স্থায়ি হয় সেইটাই। এই দায়বোধটার অনেকটাই গ্রহণ করে মেঘদল। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাষায় তাদের চেতনার প্রকাশটাই অনেক সময় হয়ে উঠে সমাজের বেদনার ভাষা। এমন পরিস্থিতির কথাও কিন্তু তারা তাদের গানেই বলে দিয়েছে আরও বহু আগে।
অস্থিরতায়, নিমগ্নতায় পুড়ছে স্বদেশ পুড়ছে সবাই
তবু রুখে দাঁড়াই আমরা!
ঘুরে দাঁড়াই আমরা!! ফিরে দাঁড়াই!!!
এই হলো শিল্পীর দায়বোধ। যা এড়িয়ে গেলে তাকে আর শিল্পী ভাবতে পারি না আমি। আসলে আমি ভাবতে চাইও না। এই বিষয় নিয়ে অনেকের সাথে অনেক তর্ক আর আলোচনা হয়-হয়েছে। কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্র বদলায়নি। হয়তো মেঘদলও আমার মতো ভাবে না, কিন্তু আমি তাদের কাজে নিজের ভাবনার ছায়া পাই। যা তাদেরকে নিজের মতো ভাবতে সহায়তা করে।

মেঘদল আসলে গোপন এক আশ্রয়ের নাম। যখন নিজের সাথে নিজের লড়াই করার প্রয়োজন, তখন অন্তর্গত অনুপ্রেরণা হিসেবে মেঘদল আসে। এই আশ্রয়ের অনুভূতি প্রকাশে বোদলেয়ারের আশ্রয় ছাড়া উপায় নেই; তাই সেই ভাষাতেই বলি-
আমি ভালোবাসি মেঘ... চলিষ্ণু মেঘ... ঐ উচুতে... ঐ উচুতে

আমি ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল!

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬



এরপর আর মেঘদল, মহিনের ঘোড়াগুলি, পিংক ফ্লয়েড, রবিশংকর, ইনারিতু কিছুই ভাল্লাগেনা। এমন একটা মুহূর্ত অনেকটা হ্যাংআউটের মতো। অথচ নেশা টেশা কিচ্ছু করিনাই। কেন ভাল্লাগেনা ভেবে কোনও উত্তর না পাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গেলো। মন ভালো করতে হবে। তার জন্য চাই বিশেষ কিছু। কিন্তু বিশেষ কিছুটা কী? উত্তর জানা নাই। এইসবের সাথে আবার যোগ হয় গুলশান হামলা, শোলাকিয়া ঈদের জামাত, নামাজ না পড়া খারাপ মানুষ, ব্যাচেলর বিড়ম্বনা! সবকিছু মিলে একটা হচপচ অবস্থা। এই যেমন দুপুর দুইটার সংবাদের রানডাউন (লাইনআপ), হেডলাইন, এডিটর সব রেডি কিন্তু লিড আইটেমের স্ক্রিপ্ট নাই, রিপোর্টার নাই, ফুটেজ নাই অবস্থা। এই অবস্থা থেকেও যেমন নিউজরুম সংকট থেকে উৎরায় তেমন আমিও উৎরাইলাম। খালিয়াজুরির সফল ট্যুরের পর মোটামোটি একটা দল হইছিলো আমগো। যারা বিরিশিরির মতো দুর্বল পর্যটন এলাকাতেও গেছিলাম দল বেধে। তাদের স্মরণাপন্ন হইলাম। প্রত্যেকরে ফেসবুকে নক করে বলা গেলো, চল দ্বীপান্তর হই। বলতেই এক একটা হই হই করে রাজী। আরে কি সব্বনাশ! আমিতো ভাবছিলাম তরা কেউ যাবি না, আমি একলাই দাও মেরে আসবো। এখন কি হবে? যা থাকে কপালে। কপালের নাম গোপাল, আমার কপালের নাম রাজ কপাল। এই বলে সবাইরে নিয়েই যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের মাঝের মেঘনা-বঙ্গোপসাগর চ্যানেলে এ
সেই অনুপাতে দিন তারিখ ঠিক হইলো। কিন্তু আমি চাইলেই তো হবে না, ভগবান ইচ্ছা ঠাকুরনেরও তো চাইতে হবে। এই অবস্থায় দিন যত আগায় এক একজন করে উইকেট পড়তে থাকে। এগারোজনের মধ্যে ৬ উইকেট শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত ঝড়ে যায়। কী আর করা! সিক্স-এ সাইড টুর্নামেন্টও হইলো না, অগত্যা ৫ জনই সই। একা যাওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বড় দল, তাও বিসর্জন দিয়ে ছোট দল নিয়েই একদিন বৈকালে উইঠ্যা পড়লাম হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৪ এ। বাহ্‌, সদরঘাট থেকে ইয়া বড় একটা লঞ্চ দিব্বি পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের নিয়ে চললো। যাইতে শুরু করলাম। বুড়িগঙ্গা পাড় হয়ে শীতলক্ষায় পড়ার পর নদীর পাড় ঘেষে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করলো। মালায়ালাম ছবির গ্রামগুলোর মতো শীতলক্ষার পাড় ধরে চমৎকার কিছু জায়গা দেখলাম। মনে হলো নদী থেকে নয়, একবার কেবল হাঁটার জন্য সেখানে আসা উচিত। তো এইরকম চারপাশ আমরা দ্রুত অতিক্রম করতেছিলাম। আর দ্রুতই সন্ধ্যাও নেমে এলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে চেয়ার টেনে লঞ্চের কেবিনের সামনে বসে পড়লাম আমরা। আড্ডা দিতে। আড্ডায় সবার আগে উঠে এলো এক সময় ঢাকা শহরের ভিনদেশী পর্যটকদের কোনও আয়োজন হলে সন্ধ্যাটা বুড়িগঙ্গার নৌবিহার দিয়ে শেষ হইতো। এখন হয় পানশালায়। এইভাবে বদলাইতেছে জীবন ও সমাজ। হইতেছি আধুনিক ও ডিজিটাল। 
এইটা সফরের আইকনিক ছবি। নিঝুম দ্বীপ বিচে।

 সময় গড়িয়ে আমাদের বহন করা লঞ্চ মেঘনায় গড়ায়। চাঁদপুর লঞ্চঘাট দূর থেকে দেখি। শহরে নদীর পাড় ধরে সার বদ্ধ আলোর দল। আর মাঝ নদীতে মাছ ধরা ইলিশের নৌকায়ও। মুগ্ধতা নিয়ে সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফাকে ফাকে গল্প আড্ডা তো চলেই। বলতে গেলে রাতভর। কেউ কেউ সময় সুযোগ আর ক্লান্তির দোহাই দিয়ে একটু একটু করে ঘুমিয়েও নেই। টের পাই না আসলে ঠিক কোন দিকে কোথায় যাচ্ছি। লঞ্চটাই ঠিক কোন জায়গায় আছে। আসপাশে কোন গ্রাম শহর মহকুমা! 
এইভাবে একসময় আকাশে সূর্য উঠে যায়। আমরা জানি আমাদের লঞ্চ যাত্রা শেষ হবে সকাল ৭টায়। তারও অনেক আগে সূর্য উঠে। পৃথিবী ঘুমের না, মনে করাইয়া দেয় আকাশ। ঘুম ঘুম চোখে আমরা দেখি লঞ্চ এসে একটা ভাঙাচোড়া ঘাটে এসে থামলো। এমন ভাঙাচোড়া ঘাটে এই লঞ্চ আরও আগেও যাত্রি উঠাইছে নামাইছে। তবে এই ঘাটটা বিশেষ। কারণ এইটার নাম মনপুরা। মনপুরা হচ্ছে ভোলার সবশেষ স্টেশন। এবং মেঘনার যত মাছ ঢাকায় আসে তার একটা বড় অংশ এখান থেকেই আসে। তবে নতুন কোনও যাত্রী যদি ঘাটের নাম জানতে চায় তার জন্য মহা বিপদ। কারণ অধিকাংশ ঘাটগুলোতেই ঠিক ঠিক জেটি টা লাগানো নেই। যেমন হাতিয়ার একমাত্র জেটিতে লাগানো চট্টগ্রামের একটা জেটি। মনপুরা ছেরে যখন হাতিয়ার দিকে যাচ্ছি, ততক্ষণে চারপাশে আরও আরও দ্বীপ চোখে পড়ছে। যেগুলোতে কেওড়া বনে ভর্তি। কোনও কোনও দ্বীপে তো মনে হয় বসতিও নাই। যেহেতু নদীর পাড় ঘেষে কোনও বসতি চোখে পড়লো না, মনে হইলো ভেতরেও নাই। ভাবতে ভাবতে সকাল সাতটা বেজে গেলো আর আমরা হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটে আইসা লঞ্চ থেকে নেমে গেলাম। 

হাতিয়া নামার পর ভুলে গেছি কিভাবে নিঝুম দ্বীপ যাইতে হয়। তবে একটা বিষয় মাথায় ছিলো, লোকাল লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যাওয়া যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত যা হতে পারে, সব কিছুর খরচ বেড়ে যেতে পারে দ্বীগুণ। এই চিন্তায় ঘাটে নেমেই ফোন করলাম অবকাশ নিঝুম রিসোর্টের কেয়ারটেকারের কাছে। তিনি জানাইলেন তমরুদ্দি থেকে একটা অটো নিয়ে বা মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মুক্তারিয়া ঘাট। সেখান থেকেই আসলে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ দুটি পৃথক দ্বীপ হিসেবে নিজের ঘোষণা করেছে। ভাড়া বলে দিয়েছিলো সর্বোচ্চ আটশ টাকা। কিন্তু কোনও অটোই এই ভাড়ায় রাজি হয় না। শেষ পর্যন্ত ৯শ টাকায় রফা হলো অটোর। পাঁচ জনকে ঘন্টা খানেকেরও কিছু বেশী সময় পর নিয়ে মুক্তারিয়া ঘাটে নামাইলেন। ততক্ষণে পেটের ভেতর বাঘ ঢুকে গেছে। কিন্তু ঐ ঘাটে খাবার দোকানে বলতে কেবল আটার গুলগুইল্যা আর কিছু বিস্কুট। এক প্যাকেট বিস্কুট আমরা সাবার করলাম সেইখানে। তারপর অপেক্ষা করলাম ফেরির জন্য। এইখানে নৌকা দিয়ে পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছাইতে হয়। ঐ পাড়েই নিঝুম দ্বীপ দেখা যায়। তবে থাকা খাওয়া বা ঘোরা ফেরার জন্য কেবল ঐপাড় গেলেই হয় না, যাইতে হয় দ্বীপের অন্য প্রান্তে। সেটাকে বলে নামার বাজার। এই জায়গাটাও এমনিতে চমৎকার। হো হো বাতাস বইছে। ঝলমলে রোদ। একদিকে সমুদ্র। আর একদিকে মেঘনার শেষ সীমানা। আর অন্যপাশে দ্বীপ। যেখানে অবস্থান করছি সেইটাও দ্বীপ। ভাবতেই ভালো লাগে। এইসব ভাবলে চলবে না। ঐ পাড়ে যাইতে হবে। যার জন্য আসছি। যত দ্রুত যাওয়া যায় ততই মঙ্গল ভেবে ট্রলার রিজার্ভ করে ফেললাম। ১শ টাকার ভাড়া ৩শ টাকায়! নয়তো এখানে দেড় ঘন্টাও বসাইয়া রাখতে পারে এই ভয়ে। উঠলাম ট্রলারে। দুই পাড়ের মাঝামাঝি গিয়ে আমাদের ট্রলার বন্ধ হয়ে গেলো। সমুদ্রমুখী প্রবল স্রোতে ট্রলার তখন সমুদ্রের দিকেই যাচ্ছে একটু একটু করে। যদিও মূল সমুদ্র বহু দূর। তবুও নষ্ট ট্রলারে সমুদ্রমুখী যাওয়া ভয়েরই কারণ বটে। অবশ্য যতটা ভয় আমরা পেতে পারতাম ততটা যেমন পাই নাই, ঠিক ততটা সময়ও লাগে নি ট্রলার ঠিক হইতে। নিঝুম দ্বীপে নামলাম। নেমে মনে হইলো হ্যা, এইখানেই আমরা আসতে চাইছিলাম। এইটা আদতেই একটা নিঝুম দ্বীপ। 
নিঝুম দ্বীপের হরিণ

ঘাটে নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো আমাদের নিয়ে পরোক্ষভাবে টানাটানি। আমরা কিসে করে নামার বাজার যাবো। কারণ ঐখানেই যেতে হবে। না গিয়ে উপায় নেই। ভাবছিলাম রিক্সা পেলে রিক্সায় করে ধীরে ধীরে যাইতে থাকবো চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে। রিকসা পাওয়া গেলো না। অগত্যা মোটর সাইকেলে চরে বসলাম। তিনটা মোটরসাইকেলে পাঁচজন যাত্রী। বাইক ছাড়ার পর থেকেই চারপাশে কেবল কেওড়া বন। অনেকটা সুন্দরবনের মতোই। তবে পুরোপুরি না। হয়ত শতকরা ২০ভাগ! বাইকওয়ালা বলছিলো বিকেল বেলা এই পাকা রাস্তার পাশেও হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। খুব বেশীক্ষণ লাগলো না। দশ মিনিটের মতো। আমরা চলে এলাম নামারপাড়া বাজার। মানে নিঝুম দ্বীপের মূল পয়েন্টে। এই বাজারে বসেও সমুদ্রের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। সকাল সকাল নির্জনতার সুযোগ (কখনও ভোরে) পেলে বাজারেও আসে হরিণ। এই রকম ছিলো এক সময়কার অবস্থা। আমরা বাজারে পৌঁছানোর সাথে সাথেই কেয়ারটেকার আমাদের ব্যাগপত্র নিতে এলো। দেখিয়ে নিয়ে গেলো রিসোর্টে। বর্ষাকাল বলে এখন সেখানে পর্যটক নেই। পুরো দ্বীপের মেহমান আমরা পঞ্চপাণ্ডবই। রুমে ফিরেই ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পরলাম সমুদ্র দেখবো বলে। আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। তাই রিস্ক হবে ভেবে আর ক্যামেরা নেই নি। আমরা চাইতেছিলাম সমুদ্রের পাড়ে থাকতেই একটা ঝুম বৃষ্টি নামুক। আর বৃষ্টির সময় সমুদ্রের চেহারাটা কেমন হয় একটু তার পাড়ে দাঁড়ায়ে দেখি। যেই দৃশ্য সমুদ্রপাড়ের মানুষ নিয়মিতই দেখে। 
নিঝুম দ্বীপ এর সমুদ্র সৈকত

নামারপাড়া বাজার থেকে বিচের দিকে যেতে যেতে এক দঙ্গল পুঁচকে আমাদের সাথে নাছোরবান্দার মতো লেগেছিলো। কোনওভাবেই তাদের এড়াতে পারিনি। তবে বিচ আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। নির্ঝঞ্ঝাট, ভিড় কোলাহলহীন এবং একটু অন্য রকম। বিচের সবটা তখন ঘোরা গয়নি। যেই সবটায় অন্য সবাই যায় নি, সেখানটায় আমি একা গেছি। পরের দিন ভোরে। বিচ থেকে ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছি। এক হোটেলে। এক কেজি কাকড়া ভুনা, আর সাথে নদীর তাজা পাবদা মাছ আর ডাল, সবজি।  
এই রকম কেওড়া বন আর খাল পাড় হয়ে হরিণ দেখতে যাইতে হয়
দুপুরে খাওয়ার পর টিমের সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সবাই ঘুম দেয়। আমি বের হয়ে নামার বাজারের আশপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে চেষ্টা করি। সম্প্রতি নির্মিত একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাখির চোখে নিঝুম দ্বীপ দেখি। ফিরে এসেও দেখি তাদের ঘুম ভাঙে না। ডেকে তুললাম সবাইকে। বললাম, এখন না উঠলে তোমরা হরিণ দেখতে পাবা না। এই কথা বলার সাথে সাথে সকলের ঘুম ভেঙে গেলো। একটা নৌকা ভাড়া করা হইলো। বৈঠা নৌকা। খালধরে বনের এক পাশ পার হয়ে নদীর পাড়ে যাইতে হয় এই নৌকা দিয়ে। তারপর সেখানে নদীর পাড়ে মাঠে নেমে ঢুকতে হয় কেওড়া বনে। এই বনেই হরিণ থাকে। মাঝে মাঝে যেখানে বন থেকে বাইরে বের হয়ে আসে সেই হরিণ। মাঠে গরুদের মতো এসে ঘাস খায়। তো আমরা নৌকায় উঠতে গিয়ে দেখলাম ভাটার টানে খালে পানি নাই। এই কারণে আমরা হেটে গেলাম অনেকটা। হাটু পর্যন্ত কাদায় মাখামাখি করে খালের যেখানটায় পানি একটু বেশী, সেখানে গিয়ে নৌকায় উঠলাম। নৌকায় করে আমরা বনের ভিতর দিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম হয়তো এখানেই হরিণ পেয়ে যাবো। পাইলাম না। পুরো সফরের মূল লক্ষ্য ভেস্তে যাওয়ার যোগার দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। নৌকা চালক গাইড হিসেবে আমাদেরকে বনের ভেতর নিয়ে গেলেন। বনে ঢোকার মিনিট খানেকের মাঝেই হরিণের দেখা পেলাম। একটা দুইটা না। বেশ কয়েকটা। ছবিটবি তোলা শেষ হয়ে গেলে ফিরে আসলাম। প্রথম ইনিংসে তিন জন যাওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে গেলো বাকি দুই জন। তারা আমাদের চেয়ে বেশী হরিণ দেখলো। তারা বের হওয়ার পর দেখা গেলো, কিছু হরিণ মাঠেই চলে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে হরিণ দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটামোটি এই রকম বা এরচে ভালো। এরচে খারাপ অভিজ্ঞতা হইছে এমন কারো কাছ থেকে শুনিনাই। সন্ধ্যাটা সেই খাল, বন আর মাঠ ঘিরেই কাটালো। এক কথায় একটা চমৎকার অভিজ্ঞতাও। রুমে ফিরে এসে আবারো ফ্রেস হওয়া। তারপর সন্ধ্যার নাস্তা করতে গিয়ে দেখা হলো স্থানীয় নিঝুম দ্বীপ পুলিশ ফারির ইনচার্জ সাব ইনস্পেক্টরের সাথে। ভদ্রলোক আমারকে চা খাওয়াতে চাইলেন, উল্টো আমরা উনাকে চা খাওয়ায়ে দিলাম। ;) 

রাতের খাবারের পর আর কোনও অ্যানার্জি ছিলো না। তাই যে যার মতো দ্রুত শয্যা গ্রহণ করি আমরা। কথা ছিলো পরদিন ভোরে উঠে সি বিচ এর যেই দিকটায় যাওয়া হয় নি, সেই দিকটায় যাবো। ক্লান্ত সবাই ঘুমাইলো। আর আমি একা ঘুরে আসলাম বিচের অন্য একটা প্রান্ত। অবশ্য পুরোটা দ্বীপের এক প্রান্তই তো সমুদ্র। কিন্তু বিচ নেই সব দিকে। ঐ একটা দিকেই আছে বলা যায়। নিঝুম দ্বীপে আমাদের থাকার সময় ফুরিয়ে আসছে। কারণ, হাতিয়া থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে একটিই লঞ্চ আসে। তাই এই লঞ্চ মিস করলে বিপদ। আর লঞ্চটাও ছাড়ে দুপুর সাড়ে বারোটায়। কিন্তু নিঝুম দ্বীপ থেকে হাতিয়া আসতে কমপক্ষে সময় লাগে ২ ঘন্টা। তার মানে আপনি যদি পরদিন ফিরতে চান আপনাকে ঘুম থেকে উঠেই হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। তবে হ্যা, আপনি যদি নিঝুম দ্বীপে আসার পথেই ফিরতে চান তাহলে অবশ্যই সকাল নয়টার মধ্যে মটর সাইকেলে করে রওনা দিতে হবে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। আর নয়তো নিঝুম দ্বীপ থেকে প্রতিদিন সকালে মাছ নিয়ে একটা ট্রলার আসে তমরুদ্দিন। এই ট্রলারে তমরুদ্দিন পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সাধারণত লঞ্চ ছাড়ে না। তবে ট্রলার ওয়ালারও চায় না লঞ্চ দেরি করুক। তাই এই ট্রলারে করেই সরাসরি হাতিয়া চলে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ। আমরাও সেই পথেই হাতিয়া ফিরেছি। এই জার্নিটাও আরামদায়কই ছিলো। আমাদের ট্রলার নিঝুম রিসোর্টের সামনে থেকে ছেড়েছে সাড়ে নয়টায়। আর বারোটায় এসে হাতিয়ায় লঞ্চে উঠি। সাড়ে বারোটায় লঞ্চ ছাড়ার পর, পরদিন সকাল আটটায় আমরা ঢাকার সদরঘাটে নেমেছি। দিনের সময়কার লঞ্চ জার্নিটা ছিলো দুর্দান্ত। তবে ফেরার সময় রাতে আমরা বিরক্ত বোধ করছি। যদিও এইটাই স্বাভাবিক তা কিন্তু নয়। তবে সব মিলে পুরো সফর ছিলো দুর্দান্ত। সেই কথা তো আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

নিঝুম দ্বীপের পথে

at রবিবার, আগস্ট ১৪, ২০১৬  |  No comments



এরপর আর মেঘদল, মহিনের ঘোড়াগুলি, পিংক ফ্লয়েড, রবিশংকর, ইনারিতু কিছুই ভাল্লাগেনা। এমন একটা মুহূর্ত অনেকটা হ্যাংআউটের মতো। অথচ নেশা টেশা কিচ্ছু করিনাই। কেন ভাল্লাগেনা ভেবে কোনও উত্তর না পাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গেলো। মন ভালো করতে হবে। তার জন্য চাই বিশেষ কিছু। কিন্তু বিশেষ কিছুটা কী? উত্তর জানা নাই। এইসবের সাথে আবার যোগ হয় গুলশান হামলা, শোলাকিয়া ঈদের জামাত, নামাজ না পড়া খারাপ মানুষ, ব্যাচেলর বিড়ম্বনা! সবকিছু মিলে একটা হচপচ অবস্থা। এই যেমন দুপুর দুইটার সংবাদের রানডাউন (লাইনআপ), হেডলাইন, এডিটর সব রেডি কিন্তু লিড আইটেমের স্ক্রিপ্ট নাই, রিপোর্টার নাই, ফুটেজ নাই অবস্থা। এই অবস্থা থেকেও যেমন নিউজরুম সংকট থেকে উৎরায় তেমন আমিও উৎরাইলাম। খালিয়াজুরির সফল ট্যুরের পর মোটামোটি একটা দল হইছিলো আমগো। যারা বিরিশিরির মতো দুর্বল পর্যটন এলাকাতেও গেছিলাম দল বেধে। তাদের স্মরণাপন্ন হইলাম। প্রত্যেকরে ফেসবুকে নক করে বলা গেলো, চল দ্বীপান্তর হই। বলতেই এক একটা হই হই করে রাজী। আরে কি সব্বনাশ! আমিতো ভাবছিলাম তরা কেউ যাবি না, আমি একলাই দাও মেরে আসবো। এখন কি হবে? যা থাকে কপালে। কপালের নাম গোপাল, আমার কপালের নাম রাজ কপাল। এই বলে সবাইরে নিয়েই যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের মাঝের মেঘনা-বঙ্গোপসাগর চ্যানেলে এ
সেই অনুপাতে দিন তারিখ ঠিক হইলো। কিন্তু আমি চাইলেই তো হবে না, ভগবান ইচ্ছা ঠাকুরনেরও তো চাইতে হবে। এই অবস্থায় দিন যত আগায় এক একজন করে উইকেট পড়তে থাকে। এগারোজনের মধ্যে ৬ উইকেট শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত ঝড়ে যায়। কী আর করা! সিক্স-এ সাইড টুর্নামেন্টও হইলো না, অগত্যা ৫ জনই সই। একা যাওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বড় দল, তাও বিসর্জন দিয়ে ছোট দল নিয়েই একদিন বৈকালে উইঠ্যা পড়লাম হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৪ এ। বাহ্‌, সদরঘাট থেকে ইয়া বড় একটা লঞ্চ দিব্বি পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের নিয়ে চললো। যাইতে শুরু করলাম। বুড়িগঙ্গা পাড় হয়ে শীতলক্ষায় পড়ার পর নদীর পাড় ঘেষে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করলো। মালায়ালাম ছবির গ্রামগুলোর মতো শীতলক্ষার পাড় ধরে চমৎকার কিছু জায়গা দেখলাম। মনে হলো নদী থেকে নয়, একবার কেবল হাঁটার জন্য সেখানে আসা উচিত। তো এইরকম চারপাশ আমরা দ্রুত অতিক্রম করতেছিলাম। আর দ্রুতই সন্ধ্যাও নেমে এলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে চেয়ার টেনে লঞ্চের কেবিনের সামনে বসে পড়লাম আমরা। আড্ডা দিতে। আড্ডায় সবার আগে উঠে এলো এক সময় ঢাকা শহরের ভিনদেশী পর্যটকদের কোনও আয়োজন হলে সন্ধ্যাটা বুড়িগঙ্গার নৌবিহার দিয়ে শেষ হইতো। এখন হয় পানশালায়। এইভাবে বদলাইতেছে জীবন ও সমাজ। হইতেছি আধুনিক ও ডিজিটাল। 
এইটা সফরের আইকনিক ছবি। নিঝুম দ্বীপ বিচে।

 সময় গড়িয়ে আমাদের বহন করা লঞ্চ মেঘনায় গড়ায়। চাঁদপুর লঞ্চঘাট দূর থেকে দেখি। শহরে নদীর পাড় ধরে সার বদ্ধ আলোর দল। আর মাঝ নদীতে মাছ ধরা ইলিশের নৌকায়ও। মুগ্ধতা নিয়ে সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফাকে ফাকে গল্প আড্ডা তো চলেই। বলতে গেলে রাতভর। কেউ কেউ সময় সুযোগ আর ক্লান্তির দোহাই দিয়ে একটু একটু করে ঘুমিয়েও নেই। টের পাই না আসলে ঠিক কোন দিকে কোথায় যাচ্ছি। লঞ্চটাই ঠিক কোন জায়গায় আছে। আসপাশে কোন গ্রাম শহর মহকুমা! 
এইভাবে একসময় আকাশে সূর্য উঠে যায়। আমরা জানি আমাদের লঞ্চ যাত্রা শেষ হবে সকাল ৭টায়। তারও অনেক আগে সূর্য উঠে। পৃথিবী ঘুমের না, মনে করাইয়া দেয় আকাশ। ঘুম ঘুম চোখে আমরা দেখি লঞ্চ এসে একটা ভাঙাচোড়া ঘাটে এসে থামলো। এমন ভাঙাচোড়া ঘাটে এই লঞ্চ আরও আগেও যাত্রি উঠাইছে নামাইছে। তবে এই ঘাটটা বিশেষ। কারণ এইটার নাম মনপুরা। মনপুরা হচ্ছে ভোলার সবশেষ স্টেশন। এবং মেঘনার যত মাছ ঢাকায় আসে তার একটা বড় অংশ এখান থেকেই আসে। তবে নতুন কোনও যাত্রী যদি ঘাটের নাম জানতে চায় তার জন্য মহা বিপদ। কারণ অধিকাংশ ঘাটগুলোতেই ঠিক ঠিক জেটি টা লাগানো নেই। যেমন হাতিয়ার একমাত্র জেটিতে লাগানো চট্টগ্রামের একটা জেটি। মনপুরা ছেরে যখন হাতিয়ার দিকে যাচ্ছি, ততক্ষণে চারপাশে আরও আরও দ্বীপ চোখে পড়ছে। যেগুলোতে কেওড়া বনে ভর্তি। কোনও কোনও দ্বীপে তো মনে হয় বসতিও নাই। যেহেতু নদীর পাড় ঘেষে কোনও বসতি চোখে পড়লো না, মনে হইলো ভেতরেও নাই। ভাবতে ভাবতে সকাল সাতটা বেজে গেলো আর আমরা হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটে আইসা লঞ্চ থেকে নেমে গেলাম। 

হাতিয়া নামার পর ভুলে গেছি কিভাবে নিঝুম দ্বীপ যাইতে হয়। তবে একটা বিষয় মাথায় ছিলো, লোকাল লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যাওয়া যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত যা হতে পারে, সব কিছুর খরচ বেড়ে যেতে পারে দ্বীগুণ। এই চিন্তায় ঘাটে নেমেই ফোন করলাম অবকাশ নিঝুম রিসোর্টের কেয়ারটেকারের কাছে। তিনি জানাইলেন তমরুদ্দি থেকে একটা অটো নিয়ে বা মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মুক্তারিয়া ঘাট। সেখান থেকেই আসলে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ দুটি পৃথক দ্বীপ হিসেবে নিজের ঘোষণা করেছে। ভাড়া বলে দিয়েছিলো সর্বোচ্চ আটশ টাকা। কিন্তু কোনও অটোই এই ভাড়ায় রাজি হয় না। শেষ পর্যন্ত ৯শ টাকায় রফা হলো অটোর। পাঁচ জনকে ঘন্টা খানেকেরও কিছু বেশী সময় পর নিয়ে মুক্তারিয়া ঘাটে নামাইলেন। ততক্ষণে পেটের ভেতর বাঘ ঢুকে গেছে। কিন্তু ঐ ঘাটে খাবার দোকানে বলতে কেবল আটার গুলগুইল্যা আর কিছু বিস্কুট। এক প্যাকেট বিস্কুট আমরা সাবার করলাম সেইখানে। তারপর অপেক্ষা করলাম ফেরির জন্য। এইখানে নৌকা দিয়ে পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছাইতে হয়। ঐ পাড়েই নিঝুম দ্বীপ দেখা যায়। তবে থাকা খাওয়া বা ঘোরা ফেরার জন্য কেবল ঐপাড় গেলেই হয় না, যাইতে হয় দ্বীপের অন্য প্রান্তে। সেটাকে বলে নামার বাজার। এই জায়গাটাও এমনিতে চমৎকার। হো হো বাতাস বইছে। ঝলমলে রোদ। একদিকে সমুদ্র। আর একদিকে মেঘনার শেষ সীমানা। আর অন্যপাশে দ্বীপ। যেখানে অবস্থান করছি সেইটাও দ্বীপ। ভাবতেই ভালো লাগে। এইসব ভাবলে চলবে না। ঐ পাড়ে যাইতে হবে। যার জন্য আসছি। যত দ্রুত যাওয়া যায় ততই মঙ্গল ভেবে ট্রলার রিজার্ভ করে ফেললাম। ১শ টাকার ভাড়া ৩শ টাকায়! নয়তো এখানে দেড় ঘন্টাও বসাইয়া রাখতে পারে এই ভয়ে। উঠলাম ট্রলারে। দুই পাড়ের মাঝামাঝি গিয়ে আমাদের ট্রলার বন্ধ হয়ে গেলো। সমুদ্রমুখী প্রবল স্রোতে ট্রলার তখন সমুদ্রের দিকেই যাচ্ছে একটু একটু করে। যদিও মূল সমুদ্র বহু দূর। তবুও নষ্ট ট্রলারে সমুদ্রমুখী যাওয়া ভয়েরই কারণ বটে। অবশ্য যতটা ভয় আমরা পেতে পারতাম ততটা যেমন পাই নাই, ঠিক ততটা সময়ও লাগে নি ট্রলার ঠিক হইতে। নিঝুম দ্বীপে নামলাম। নেমে মনে হইলো হ্যা, এইখানেই আমরা আসতে চাইছিলাম। এইটা আদতেই একটা নিঝুম দ্বীপ। 
নিঝুম দ্বীপের হরিণ

ঘাটে নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো আমাদের নিয়ে পরোক্ষভাবে টানাটানি। আমরা কিসে করে নামার বাজার যাবো। কারণ ঐখানেই যেতে হবে। না গিয়ে উপায় নেই। ভাবছিলাম রিক্সা পেলে রিক্সায় করে ধীরে ধীরে যাইতে থাকবো চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে। রিকসা পাওয়া গেলো না। অগত্যা মোটর সাইকেলে চরে বসলাম। তিনটা মোটরসাইকেলে পাঁচজন যাত্রী। বাইক ছাড়ার পর থেকেই চারপাশে কেবল কেওড়া বন। অনেকটা সুন্দরবনের মতোই। তবে পুরোপুরি না। হয়ত শতকরা ২০ভাগ! বাইকওয়ালা বলছিলো বিকেল বেলা এই পাকা রাস্তার পাশেও হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। খুব বেশীক্ষণ লাগলো না। দশ মিনিটের মতো। আমরা চলে এলাম নামারপাড়া বাজার। মানে নিঝুম দ্বীপের মূল পয়েন্টে। এই বাজারে বসেও সমুদ্রের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। সকাল সকাল নির্জনতার সুযোগ (কখনও ভোরে) পেলে বাজারেও আসে হরিণ। এই রকম ছিলো এক সময়কার অবস্থা। আমরা বাজারে পৌঁছানোর সাথে সাথেই কেয়ারটেকার আমাদের ব্যাগপত্র নিতে এলো। দেখিয়ে নিয়ে গেলো রিসোর্টে। বর্ষাকাল বলে এখন সেখানে পর্যটক নেই। পুরো দ্বীপের মেহমান আমরা পঞ্চপাণ্ডবই। রুমে ফিরেই ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পরলাম সমুদ্র দেখবো বলে। আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। তাই রিস্ক হবে ভেবে আর ক্যামেরা নেই নি। আমরা চাইতেছিলাম সমুদ্রের পাড়ে থাকতেই একটা ঝুম বৃষ্টি নামুক। আর বৃষ্টির সময় সমুদ্রের চেহারাটা কেমন হয় একটু তার পাড়ে দাঁড়ায়ে দেখি। যেই দৃশ্য সমুদ্রপাড়ের মানুষ নিয়মিতই দেখে। 
নিঝুম দ্বীপ এর সমুদ্র সৈকত

নামারপাড়া বাজার থেকে বিচের দিকে যেতে যেতে এক দঙ্গল পুঁচকে আমাদের সাথে নাছোরবান্দার মতো লেগেছিলো। কোনওভাবেই তাদের এড়াতে পারিনি। তবে বিচ আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। নির্ঝঞ্ঝাট, ভিড় কোলাহলহীন এবং একটু অন্য রকম। বিচের সবটা তখন ঘোরা গয়নি। যেই সবটায় অন্য সবাই যায় নি, সেখানটায় আমি একা গেছি। পরের দিন ভোরে। বিচ থেকে ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছি। এক হোটেলে। এক কেজি কাকড়া ভুনা, আর সাথে নদীর তাজা পাবদা মাছ আর ডাল, সবজি।  
এই রকম কেওড়া বন আর খাল পাড় হয়ে হরিণ দেখতে যাইতে হয়
দুপুরে খাওয়ার পর টিমের সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সবাই ঘুম দেয়। আমি বের হয়ে নামার বাজারের আশপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে চেষ্টা করি। সম্প্রতি নির্মিত একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাখির চোখে নিঝুম দ্বীপ দেখি। ফিরে এসেও দেখি তাদের ঘুম ভাঙে না। ডেকে তুললাম সবাইকে। বললাম, এখন না উঠলে তোমরা হরিণ দেখতে পাবা না। এই কথা বলার সাথে সাথে সকলের ঘুম ভেঙে গেলো। একটা নৌকা ভাড়া করা হইলো। বৈঠা নৌকা। খালধরে বনের এক পাশ পার হয়ে নদীর পাড়ে যাইতে হয় এই নৌকা দিয়ে। তারপর সেখানে নদীর পাড়ে মাঠে নেমে ঢুকতে হয় কেওড়া বনে। এই বনেই হরিণ থাকে। মাঝে মাঝে যেখানে বন থেকে বাইরে বের হয়ে আসে সেই হরিণ। মাঠে গরুদের মতো এসে ঘাস খায়। তো আমরা নৌকায় উঠতে গিয়ে দেখলাম ভাটার টানে খালে পানি নাই। এই কারণে আমরা হেটে গেলাম অনেকটা। হাটু পর্যন্ত কাদায় মাখামাখি করে খালের যেখানটায় পানি একটু বেশী, সেখানে গিয়ে নৌকায় উঠলাম। নৌকায় করে আমরা বনের ভিতর দিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম হয়তো এখানেই হরিণ পেয়ে যাবো। পাইলাম না। পুরো সফরের মূল লক্ষ্য ভেস্তে যাওয়ার যোগার দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। নৌকা চালক গাইড হিসেবে আমাদেরকে বনের ভেতর নিয়ে গেলেন। বনে ঢোকার মিনিট খানেকের মাঝেই হরিণের দেখা পেলাম। একটা দুইটা না। বেশ কয়েকটা। ছবিটবি তোলা শেষ হয়ে গেলে ফিরে আসলাম। প্রথম ইনিংসে তিন জন যাওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে গেলো বাকি দুই জন। তারা আমাদের চেয়ে বেশী হরিণ দেখলো। তারা বের হওয়ার পর দেখা গেলো, কিছু হরিণ মাঠেই চলে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে হরিণ দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটামোটি এই রকম বা এরচে ভালো। এরচে খারাপ অভিজ্ঞতা হইছে এমন কারো কাছ থেকে শুনিনাই। সন্ধ্যাটা সেই খাল, বন আর মাঠ ঘিরেই কাটালো। এক কথায় একটা চমৎকার অভিজ্ঞতাও। রুমে ফিরে এসে আবারো ফ্রেস হওয়া। তারপর সন্ধ্যার নাস্তা করতে গিয়ে দেখা হলো স্থানীয় নিঝুম দ্বীপ পুলিশ ফারির ইনচার্জ সাব ইনস্পেক্টরের সাথে। ভদ্রলোক আমারকে চা খাওয়াতে চাইলেন, উল্টো আমরা উনাকে চা খাওয়ায়ে দিলাম। ;) 

রাতের খাবারের পর আর কোনও অ্যানার্জি ছিলো না। তাই যে যার মতো দ্রুত শয্যা গ্রহণ করি আমরা। কথা ছিলো পরদিন ভোরে উঠে সি বিচ এর যেই দিকটায় যাওয়া হয় নি, সেই দিকটায় যাবো। ক্লান্ত সবাই ঘুমাইলো। আর আমি একা ঘুরে আসলাম বিচের অন্য একটা প্রান্ত। অবশ্য পুরোটা দ্বীপের এক প্রান্তই তো সমুদ্র। কিন্তু বিচ নেই সব দিকে। ঐ একটা দিকেই আছে বলা যায়। নিঝুম দ্বীপে আমাদের থাকার সময় ফুরিয়ে আসছে। কারণ, হাতিয়া থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে একটিই লঞ্চ আসে। তাই এই লঞ্চ মিস করলে বিপদ। আর লঞ্চটাও ছাড়ে দুপুর সাড়ে বারোটায়। কিন্তু নিঝুম দ্বীপ থেকে হাতিয়া আসতে কমপক্ষে সময় লাগে ২ ঘন্টা। তার মানে আপনি যদি পরদিন ফিরতে চান আপনাকে ঘুম থেকে উঠেই হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। তবে হ্যা, আপনি যদি নিঝুম দ্বীপে আসার পথেই ফিরতে চান তাহলে অবশ্যই সকাল নয়টার মধ্যে মটর সাইকেলে করে রওনা দিতে হবে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। আর নয়তো নিঝুম দ্বীপ থেকে প্রতিদিন সকালে মাছ নিয়ে একটা ট্রলার আসে তমরুদ্দিন। এই ট্রলারে তমরুদ্দিন পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সাধারণত লঞ্চ ছাড়ে না। তবে ট্রলার ওয়ালারও চায় না লঞ্চ দেরি করুক। তাই এই ট্রলারে করেই সরাসরি হাতিয়া চলে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ। আমরাও সেই পথেই হাতিয়া ফিরেছি। এই জার্নিটাও আরামদায়কই ছিলো। আমাদের ট্রলার নিঝুম রিসোর্টের সামনে থেকে ছেড়েছে সাড়ে নয়টায়। আর বারোটায় এসে হাতিয়ায় লঞ্চে উঠি। সাড়ে বারোটায় লঞ্চ ছাড়ার পর, পরদিন সকাল আটটায় আমরা ঢাকার সদরঘাটে নেমেছি। দিনের সময়কার লঞ্চ জার্নিটা ছিলো দুর্দান্ত। তবে ফেরার সময় রাতে আমরা বিরক্ত বোধ করছি। যদিও এইটাই স্বাভাবিক তা কিন্তু নয়। তবে সব মিলে পুরো সফর ছিলো দুর্দান্ত। সেই কথা তো আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০১৬

চারপাশের পরিবেশটা এমন যে সিনেমা দেখে রিভিউ লেখার মতো স্বস্তিদায়ক মুড আসলে নাই তারপরও নানা কারণে লিখতে বসছি শুরুতেই এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বলি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে এবারের ঈদ একটা টার্নিং পয়েন্ট হইতে পারে সেই টার্নিং পয়েন্টটা আমাদের নিয়মিত নির্মাতারা অনুভব করতে পারলে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রির লাভ, নিজেদেরও লাভ এইটাই ছবির রিভিউ লিখতে বসার প্রধান কারণ আর আর কারণগুলো মূখ্য নয়, গৌন তাই সেগুলো অনুল্লেখ্যই থাকলো


শিকারি ছবি দেখতে আমার বিশেষ কোনও আগ্রহ ছিলো না আর দশটা বাংলাদেশী বাণিজ্যিক ছবির মতোই আগ্রহ তবে একটা বিষয় খুব চোখে পড়েছে, এই ছবির নায়ক সাকিব খান কে নিয়ে আমাদের অনলাইন রূচিবান স্বদেশবানদের সুনামের হুরহুরি বহুদিন আগে কোনও একজন বলছিলো, আমাদের দেশের মানুষ নিজের দেশের পণ্য বিদেশ ফেরত হইলে তা বেশি দাম দিয়া কিনতে আগ্রহ দেখায় কারণ ঐটা বিদেশী পণ্য কিন্তু নিজের দেশের পণ্যটারে নিজের ব্যবহারের উপযুক্ত মনে করে না অথচ এই দেশের আলো বাতাসেই আমরা বড় হইছি বড় হওয়ার পর প্রয়োজন মনে করি বিদেশী পণ্য সাকিবকে নিয়া অতি মাতামাতির কারণে আমার এই রকম মনে হইছে আর কি তবে মাতামাতি ভালো বিশেষ করে সব ধরণের তারকাদের নিয়েই তো মাতামাতি হবে নইলে তারা তারকা কেনো? তবে যাদেরকে কখনো সাকিবের ছবি হলে গিয়ে দেখতে শুনি নাই তারাই যখন সাকিব নিয়ে মাতামাতি শুরু করলেন তখন কিছুটা প্রশ্ন জাগতেই পারে সেই কারণে শিকারি দেখার আগ্রহ তৈরি হয় এর আগে অবশ্য একটা কথা না বললেই নয় তা হইলো আমি নিয়মিত হলে গিয়া বাংলা সিনেমা দেখি এই কথা শুইন্যা অনেকের চক্ষু কপালেও উঠে আমার অবশ্য মুচকি মুচকি হাসি পায় কারণ, ঐ কপালে ওঠা চোখ দেখতে আমার ভাল্লাগে একই সাথে ছবির কয়েকটা গান দেখে মনে হইছে সাকিবের নতুন লুক, সব্যসাচী চক্রবর্তিও অভিনয় করতেছে ছবিটা দেখাই উচিত তাই ঈদের দিন অর্ধেক ঘুম বাতিল করে জয়কে ডেকে আনলাম ছবি দেখার জন্য সে আসতে আসতে ১০ মিনিট ছবি চলে গেছে
হলে ঢুকে দেখি কোনও এক ধর্মগুরু পূজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর তার সাথে তার সমর্থক ভক্তঅনুরাগিরা উৎসব করছে এমন পরিস্থিতিতে প্রফেশনাল কিলার হিরো সাকিব এবং কার্য সমাধা করার পরই মূল গল্পে ঢুকে গেলো সিনেমা ভালোই খারাপ না ফর্মুলা ছবি হিসেবে টানটান গল্প রাখার চেষ্টা একটা ঘটনা শেষ হতে না হতেই আর একটা ঘটনা যদিও সবগুলো ঘটনাই ঘটতে যাবে অনুমিত সেইসব অনুমিত ঘটনাগুলোই দেখা যাচ্ছিল অপেক্ষাকৃত ভালো নির্মাণে অপেক্ষাকৃত ভালো অর্থে বলছি এই কারণে যে, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশী বা ভারতীয় বাংলা সিনেমার যেই নির্মাণ মান তার সাথে এর একটু পার্থক্য আছে পার্থক্যটা কেমন? এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কিছুদিন আগেও আমরা দেখে এসেছি সিনেমা চারটা গানের তিনটাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দৃশ্যায়ন যার কোরিগ্রাফার হয়ত কোনও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঐ গানগুলোকে বারবার দেখিয়ে দেখিয়ে লোকজনকে হলে নেয়া হতো, আর ছবির নির্মাণহতো বাংলাদেশী গড়পড়তা টিভি নাটকের চেয়ে একটু ভালো তো ঐ রকম একটা আশঙ্কা নিয়েই ছবি দেখতে বসেছিলাম কিন্তু সেই আশঙ্কা পুরোপুরি মিলে নি তাই কিছুটা সন্দেহও ছিলো পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতারা এই রকম বাণিজ্যিক ছবি কি আসলেই বানাতে শুরু করে দিলেন? হ্যা, এই প্রশ্নটাই বাংলাদেশের সিনেমার টার্নিং পয়েন্টের একটা প্রশ্ন কারণ ফেসবুক মারফতই না, বাস্তবেও দেখলাম সিনেমা হল ভর্তি লোকজন বিকাল সাড়ে পাঁচটার টিকিট তাই অগ্রীম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দুপুর ১টায় যা বিগত কয়েক বছরে কল্পনাতীত সেই কল্পনা যদি বাস্তব হয় তবে প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলা সিনেমা কি তবে সুদিন ফিরে পাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো ধীরে বৎস, ধীরে এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে বাংলা সিনেমার টার্নিং পয়েন্টের প্রশ্নের উত্তরটাও চলে আসে কারণ, পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতারা যদি এই মানের ছবিও নিয়মিত বানায় আর তা অনায়াসে আমাদের সিনেমাহলের দর্শকরা লুফে নেবে কারণ আমাদের বাংলাদেশের নির্মাতারা এতটুকুও বানাতে পারছেন না এমনকি অনেক নামি দামি নির্মাতাদের ছবিও তাই বলে ফলে কলকাতার নির্মাতারা হলে জায়গা পাকা করে নিলে এফডিসিতে এখনো যেমন কিছু সিনেমার কাজ চলে, তখন আর কিছুই চলবে না তখন বরংচ সেইসব নির্মাতাদের দক্ষিণী কুশলীদের ভাড়া করা ছাড়া উপায় থাকবে না তাই নিজেদের মান উন্নয়ন খুব জরুরী ঘরের দর্শকদের জন্য, নিজেদের জন্য, নিজেদের সিনেমার জন্য তো বটেই  
এতক্ষণ ধান বানতে গিয়ে শীবের গীত শোনালাম কি আর করা, কখনো কখনো বৃষ্টির চেয়ে ছাতাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কি না! তোশিকারি একদম গতানুগতিক একটা ফর্মুলা ছবি যার গানগুলোতে আমাদের দেশী নায়ক সাকিবকে নতুন লুকে দেখা গেছে যা বড় পর্দায় দেখে আপনার ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে পুরো ছবির সবচে আরামদায়ক ভিজ্যুয়াল বলতে ঐ গানগুলোই তবে হ্যা, আনুপাতিক হারে ছবির যে নির্মাণ তা মন্দের ভালো অন্তত এই কোয়ালিটিই আপাতত পাতে জুটছে যে এই বেশি এই প্রসঙ্গে জেনে নেয়া যাক ছবির নির্মাতার নাম বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রসঙ্গ আসলেও বাংলাদেশী যেই পরিচালকের নাম আমরা জানলাম সেই পরিচালকের নাম জাকির হোসেন সীমান্ত আর ভারতের অংশের পরিচালক ছিলেন জয়দ্বীপ মুখার্জি আইএমডিবি সূত্র বলে জয়দ্বীপ আগে টিভি নির্মাতা ছিলেন বেশ কয়েকটি টিভি সিরিয়াল তিনি বানাইছেন তার মাঝে ব্যোমকেশ উল্লেখযোগ্য একটি তবে দুই দেশের ছবি হইলেও বাংলাদেশের কোনও অংশই ছবির ছিলো না এইটা নামকাওয়াস্তে কেবল

ছবির গল্প নিয়ে অভিযোগ করতে চাই না কারণ, গল্প নিয়ে প্রত্যাশাই ছিলো না সেই তুলনায় অনেক ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য তবে গল্প চিত্রনাট্যের চেয়ে বেশ কিছু মজার ছিলো ছবির সংলাপ এবার আসুন জানি, ছবির গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার কে বা কারা ছবির চিত্রনাট্য বিষয়ক তথ্য খুঁজতে গিয়ে দুই প্রকার তথ্য পাওয়া গেলো উইকিপিডিয়া বলছে পেলে ভট্টাচার্যই ও আব্দুল্লাহ জহির বাবু ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছে আবার আইএমডিবি বলছে জয়দ্বীপ মুখার্জি ও পেলে ভট্টাচার্য দুজন মিলে লিখেছে আসল সত্য কোনটা তারাই জানে
ছবিতে সব্যসাচী চক্রবর্তীর অভিনয় দেখার লোভ ছিলো তাতে টান পড়েছে উল্টো দুই জনের অভিনয়ে বিনোদিত হয়েছি তার একজন হিন্দী ছবির ভিলেন রাহুল দেব আর একজন কলকাতার অভিনয়শিল্পী খরাজ মুখোপাধ্যায় তবে এইসব ভালো মন্দের চেয়ে সবচে বেশী যা ভালো লেগেছে তা হলো ছবি দেখার জন্য মানুষের হলে ভীড় করা দেখে কারণ ভালো মন্দ তো পরে, আগে তো ছবিটা দেখতে হবে নইলে ছবি হবে না ভবিষ্যতে

শেষ পর্যন্ত যেই কথা বলতে চাই তা হলো এই ছবি লোকজন মজা করে দেখবে ভুলে যাবে মনপুড়া ছবি দেখে আমরা যেমন বেশ কয়েকদিন আলোচনা করেছি কেউ কেউ একাধিকবারও দেখেছি, এই ছবি তেমন নয় কিন্তু চকচকে ঝকঝকে বলে লোকজনের আগ্রহটাও চকচকেই আর এমন আগ্রহ তৈরি করতে না পারলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবি আর বানাইতে হবে না কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসা অনেক ভালো তার চেয়ে

কি শিকার করলো শিকারি?

at বৃহস্পতিবার, জুলাই ০৭, ২০১৬  |  2 comments

চারপাশের পরিবেশটা এমন যে সিনেমা দেখে রিভিউ লেখার মতো স্বস্তিদায়ক মুড আসলে নাই তারপরও নানা কারণে লিখতে বসছি শুরুতেই এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বলি বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে এবারের ঈদ একটা টার্নিং পয়েন্ট হইতে পারে সেই টার্নিং পয়েন্টটা আমাদের নিয়মিত নির্মাতারা অনুভব করতে পারলে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রির লাভ, নিজেদেরও লাভ এইটাই ছবির রিভিউ লিখতে বসার প্রধান কারণ আর আর কারণগুলো মূখ্য নয়, গৌন তাই সেগুলো অনুল্লেখ্যই থাকলো


শিকারি ছবি দেখতে আমার বিশেষ কোনও আগ্রহ ছিলো না আর দশটা বাংলাদেশী বাণিজ্যিক ছবির মতোই আগ্রহ তবে একটা বিষয় খুব চোখে পড়েছে, এই ছবির নায়ক সাকিব খান কে নিয়ে আমাদের অনলাইন রূচিবান স্বদেশবানদের সুনামের হুরহুরি বহুদিন আগে কোনও একজন বলছিলো, আমাদের দেশের মানুষ নিজের দেশের পণ্য বিদেশ ফেরত হইলে তা বেশি দাম দিয়া কিনতে আগ্রহ দেখায় কারণ ঐটা বিদেশী পণ্য কিন্তু নিজের দেশের পণ্যটারে নিজের ব্যবহারের উপযুক্ত মনে করে না অথচ এই দেশের আলো বাতাসেই আমরা বড় হইছি বড় হওয়ার পর প্রয়োজন মনে করি বিদেশী পণ্য সাকিবকে নিয়া অতি মাতামাতির কারণে আমার এই রকম মনে হইছে আর কি তবে মাতামাতি ভালো বিশেষ করে সব ধরণের তারকাদের নিয়েই তো মাতামাতি হবে নইলে তারা তারকা কেনো? তবে যাদেরকে কখনো সাকিবের ছবি হলে গিয়ে দেখতে শুনি নাই তারাই যখন সাকিব নিয়ে মাতামাতি শুরু করলেন তখন কিছুটা প্রশ্ন জাগতেই পারে সেই কারণে শিকারি দেখার আগ্রহ তৈরি হয় এর আগে অবশ্য একটা কথা না বললেই নয় তা হইলো আমি নিয়মিত হলে গিয়া বাংলা সিনেমা দেখি এই কথা শুইন্যা অনেকের চক্ষু কপালেও উঠে আমার অবশ্য মুচকি মুচকি হাসি পায় কারণ, ঐ কপালে ওঠা চোখ দেখতে আমার ভাল্লাগে একই সাথে ছবির কয়েকটা গান দেখে মনে হইছে সাকিবের নতুন লুক, সব্যসাচী চক্রবর্তিও অভিনয় করতেছে ছবিটা দেখাই উচিত তাই ঈদের দিন অর্ধেক ঘুম বাতিল করে জয়কে ডেকে আনলাম ছবি দেখার জন্য সে আসতে আসতে ১০ মিনিট ছবি চলে গেছে
হলে ঢুকে দেখি কোনও এক ধর্মগুরু পূজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর তার সাথে তার সমর্থক ভক্তঅনুরাগিরা উৎসব করছে এমন পরিস্থিতিতে প্রফেশনাল কিলার হিরো সাকিব এবং কার্য সমাধা করার পরই মূল গল্পে ঢুকে গেলো সিনেমা ভালোই খারাপ না ফর্মুলা ছবি হিসেবে টানটান গল্প রাখার চেষ্টা একটা ঘটনা শেষ হতে না হতেই আর একটা ঘটনা যদিও সবগুলো ঘটনাই ঘটতে যাবে অনুমিত সেইসব অনুমিত ঘটনাগুলোই দেখা যাচ্ছিল অপেক্ষাকৃত ভালো নির্মাণে অপেক্ষাকৃত ভালো অর্থে বলছি এই কারণে যে, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশী বা ভারতীয় বাংলা সিনেমার যেই নির্মাণ মান তার সাথে এর একটু পার্থক্য আছে পার্থক্যটা কেমন? এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন কিছুদিন আগেও আমরা দেখে এসেছি সিনেমা চারটা গানের তিনটাই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দৃশ্যায়ন যার কোরিগ্রাফার হয়ত কোনও ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ঐ গানগুলোকে বারবার দেখিয়ে দেখিয়ে লোকজনকে হলে নেয়া হতো, আর ছবির নির্মাণহতো বাংলাদেশী গড়পড়তা টিভি নাটকের চেয়ে একটু ভালো তো ঐ রকম একটা আশঙ্কা নিয়েই ছবি দেখতে বসেছিলাম কিন্তু সেই আশঙ্কা পুরোপুরি মিলে নি তাই কিছুটা সন্দেহও ছিলো পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতারা এই রকম বাণিজ্যিক ছবি কি আসলেই বানাতে শুরু করে দিলেন? হ্যা, এই প্রশ্নটাই বাংলাদেশের সিনেমার টার্নিং পয়েন্টের একটা প্রশ্ন কারণ ফেসবুক মারফতই না, বাস্তবেও দেখলাম সিনেমা হল ভর্তি লোকজন বিকাল সাড়ে পাঁচটার টিকিট তাই অগ্রীম বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দুপুর ১টায় যা বিগত কয়েক বছরে কল্পনাতীত সেই কল্পনা যদি বাস্তব হয় তবে প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলা সিনেমা কি তবে সুদিন ফিরে পাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো ধীরে বৎস, ধীরে এই প্রশ্নের উত্তরের সাথে বাংলা সিনেমার টার্নিং পয়েন্টের প্রশ্নের উত্তরটাও চলে আসে কারণ, পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতারা যদি এই মানের ছবিও নিয়মিত বানায় আর তা অনায়াসে আমাদের সিনেমাহলের দর্শকরা লুফে নেবে কারণ আমাদের বাংলাদেশের নির্মাতারা এতটুকুও বানাতে পারছেন না এমনকি অনেক নামি দামি নির্মাতাদের ছবিও তাই বলে ফলে কলকাতার নির্মাতারা হলে জায়গা পাকা করে নিলে এফডিসিতে এখনো যেমন কিছু সিনেমার কাজ চলে, তখন আর কিছুই চলবে না তখন বরংচ সেইসব নির্মাতাদের দক্ষিণী কুশলীদের ভাড়া করা ছাড়া উপায় থাকবে না তাই নিজেদের মান উন্নয়ন খুব জরুরী ঘরের দর্শকদের জন্য, নিজেদের জন্য, নিজেদের সিনেমার জন্য তো বটেই  
এতক্ষণ ধান বানতে গিয়ে শীবের গীত শোনালাম কি আর করা, কখনো কখনো বৃষ্টির চেয়ে ছাতাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে কি না! তোশিকারি একদম গতানুগতিক একটা ফর্মুলা ছবি যার গানগুলোতে আমাদের দেশী নায়ক সাকিবকে নতুন লুকে দেখা গেছে যা বড় পর্দায় দেখে আপনার ভালো লাগবে নিঃসন্দেহে পুরো ছবির সবচে আরামদায়ক ভিজ্যুয়াল বলতে ঐ গানগুলোই তবে হ্যা, আনুপাতিক হারে ছবির যে নির্মাণ তা মন্দের ভালো অন্তত এই কোয়ালিটিই আপাতত পাতে জুটছে যে এই বেশি এই প্রসঙ্গে জেনে নেয়া যাক ছবির নির্মাতার নাম বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রসঙ্গ আসলেও বাংলাদেশী যেই পরিচালকের নাম আমরা জানলাম সেই পরিচালকের নাম জাকির হোসেন সীমান্ত আর ভারতের অংশের পরিচালক ছিলেন জয়দ্বীপ মুখার্জি আইএমডিবি সূত্র বলে জয়দ্বীপ আগে টিভি নির্মাতা ছিলেন বেশ কয়েকটি টিভি সিরিয়াল তিনি বানাইছেন তার মাঝে ব্যোমকেশ উল্লেখযোগ্য একটি তবে দুই দেশের ছবি হইলেও বাংলাদেশের কোনও অংশই ছবির ছিলো না এইটা নামকাওয়াস্তে কেবল

ছবির গল্প নিয়ে অভিযোগ করতে চাই না কারণ, গল্প নিয়ে প্রত্যাশাই ছিলো না সেই তুলনায় অনেক ভালো গল্প ও চিত্রনাট্য তবে গল্প চিত্রনাট্যের চেয়ে বেশ কিছু মজার ছিলো ছবির সংলাপ এবার আসুন জানি, ছবির গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার কে বা কারা ছবির চিত্রনাট্য বিষয়ক তথ্য খুঁজতে গিয়ে দুই প্রকার তথ্য পাওয়া গেলো উইকিপিডিয়া বলছে পেলে ভট্টাচার্যই ও আব্দুল্লাহ জহির বাবু ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছে আবার আইএমডিবি বলছে জয়দ্বীপ মুখার্জি ও পেলে ভট্টাচার্য দুজন মিলে লিখেছে আসল সত্য কোনটা তারাই জানে
ছবিতে সব্যসাচী চক্রবর্তীর অভিনয় দেখার লোভ ছিলো তাতে টান পড়েছে উল্টো দুই জনের অভিনয়ে বিনোদিত হয়েছি তার একজন হিন্দী ছবির ভিলেন রাহুল দেব আর একজন কলকাতার অভিনয়শিল্পী খরাজ মুখোপাধ্যায় তবে এইসব ভালো মন্দের চেয়ে সবচে বেশী যা ভালো লেগেছে তা হলো ছবি দেখার জন্য মানুষের হলে ভীড় করা দেখে কারণ ভালো মন্দ তো পরে, আগে তো ছবিটা দেখতে হবে নইলে ছবি হবে না ভবিষ্যতে

শেষ পর্যন্ত যেই কথা বলতে চাই তা হলো এই ছবি লোকজন মজা করে দেখবে ভুলে যাবে মনপুড়া ছবি দেখে আমরা যেমন বেশ কয়েকদিন আলোচনা করেছি কেউ কেউ একাধিকবারও দেখেছি, এই ছবি তেমন নয় কিন্তু চকচকে ঝকঝকে বলে লোকজনের আগ্রহটাও চকচকেই আর এমন আগ্রহ তৈরি করতে না পারলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ছবি আর বানাইতে হবে না কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসা অনেক ভালো তার চেয়ে

Read More

2 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

যা হয় আর কি, কোনও ভালো বই পড়ার পর বা কোনও ভালো ছবি দেখার পর মাথার ভেতর গেঁথে যায়। এ সময় মগজের ভেতর ঐ বই বা সিনেমা নিয়া যা থাকে তা চিন্তার উদ্রেগ ঘটাইলেও সাথে কিছুটা চাপও তৈরি করে। তখন মাথা থেকে সেই চাপ নামানোর প্রয়োজন হয়। এই সময় দরকার প্রয়োজন গল্প করা। ছবির গল্প, বইয়ের গল্প। মন খুলে গল্প করলে পড়া বইটা বা দেখা সিনেমাটার ব্যাপ্তি বাড়ে। আর কে না জানে, চারপাশের বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি বাড়লে সাথে সাথে কিছুটা নিজেরও বাড়ে। তাই নিজের ব্যাপ্তির লোভে সিনেমা বা বইয়ের কাছাকাছি থাকা, আর সেইসব নিয়া গল্পে মাতা।
মাসটাং মূলত দক্ষিণ আমেরিকান এক প্রকার ঘোড়া। যা কিনা আকারে অন্য সব ঘোড়ার চাইতে একটু ছোট, কিন্তু তার গতি একটু বেশিই। সে তাই ছোটেও নিজের মতো, অনেকটা দুর্বার গতিময়। তুরস্কের যেই ছবিটার নাম ‘মাসটাং’ তার কেন্দ্রীয় চরিত্রটাও এমনই। অন্য সবার চেয়ে ছোট, কিন্তু গতিশীল। ছোটেও নিজের মতো। সেই ছোট ঘোড়ার গল্পই বলেছেন টার্কিস তরুণ নির্মাতা ডেনিজ এরগোভেন।
টার্কিস এই তরুণ নির্মাতার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাসটাং’। চলতি বছরের অস্কারে সেরা বিদেশী ভাষার সিনেমা ক্যাটাগরিতে অফিসিয়াল এন্ট্রি অবশ্য ফরাশি ছবি হিসেবে। কিন্তু তাতে ছবির কোনও কিছুই যায় আসে না। কারণ ছবির ভাষা, চরিত্র, প্রেক্ষাপট, গল্প সবটাই তুরস্কের।
প্রায় মাস দেড়েক পর একই দিনে তিনটা ছবি দেখার মিশন নিয়ে বসে প্রথমটা দেখেই আর কোনও ছবির কথা ভাবতে পারিনাই। ৩৭ বছর টার্কিস তরুণী ডেনিজ এর ছবি দেখে মনে হইছে ‘লালে’র জীবন সংগ্রামের বাকিটুকু কতই না বৈচিত্রময়। কারণ, যে মেয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বড় বোনের বিয়ে ভেঙে দেবার সাহস করে তার জীবনে বৈচিত্র আসবে না কি আমার জীবনে আসবে? ;)
ছবির বিকল্প শিরোনাম হইতে পারে, পঞ্চকন্যার আখ্যান। হ্যা, তুরস্কের কোনও এক সমুদ্র তীরবর্তি এক গ্রামের পাঁচ বোনের আখ্যান এই সিনেমা। একই পরিবারের পিঠাপিঠি পাঁচ বোনের জীবনের গল্প।  তাদের বন্ধুর জীবনের গল্প। মা ছাড়া পরিবারে বাবা আর দাদির কাছে বেড়ে ওঠা বোনেরা যারা কিনা সহপাঠীদের নিয়ে সমুদ্রে দল বেধে ¯œান করলে বাবার সন্দেহ হয়। আর তাদের নিয়ে যায় সতীত্ব পরীক্ষা করাতে। এই জীবন কি এখনো আছে?  বোধ করি নারী নির্মাতার শৈশবে দেখা অভিজ্ঞতা এই জায়গায় প্রভাব পড়েছে।

এই রকম একটা অভিজ্ঞতা দিয়া যেখানে ছবি শুরু তখন ছবির গল্পটা কেমন হতে পারে? আপনার আমার ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে এক এক করে অল্প কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার স্বস্তির দিকে ছুটে যাওয়ার গল্প হতে পারতো ‘মাসটাং’। কিন্তু তা না হয়ে হয়ে উঠেছে এক ভবিষ্যতের চিহ্ন। আর সেই ভবিষ্যতের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলো পাঁচ বোনের সবচে ছোট ‘লালে’। তার চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে চাইলে ছবিটা দেখতে পারেন। বলে রাখা ভালো অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার ছবিতে এখন পর্যন্ত তুরস্কের কোনও ছবি সেরা পাঁচে আসতে পারেনি। যে কয়েকবার আসছে তার একটাও তুরস্কের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। ভিন্ন কোনও দেশ থেকে। এইটাও সেই দলেরই একটা ছবি। তবে এইসব তথ্য আর প্রসংশা মাথায় না রেখেও ছবিটা দেখে ফেলতে পারেন এক বসাতেই।

মাসটাং : পঞ্চকন্যার আখ্যান

at শনিবার, মার্চ ১৯, ২০১৬  |  No comments

যা হয় আর কি, কোনও ভালো বই পড়ার পর বা কোনও ভালো ছবি দেখার পর মাথার ভেতর গেঁথে যায়। এ সময় মগজের ভেতর ঐ বই বা সিনেমা নিয়া যা থাকে তা চিন্তার উদ্রেগ ঘটাইলেও সাথে কিছুটা চাপও তৈরি করে। তখন মাথা থেকে সেই চাপ নামানোর প্রয়োজন হয়। এই সময় দরকার প্রয়োজন গল্প করা। ছবির গল্প, বইয়ের গল্প। মন খুলে গল্প করলে পড়া বইটা বা দেখা সিনেমাটার ব্যাপ্তি বাড়ে। আর কে না জানে, চারপাশের বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি বাড়লে সাথে সাথে কিছুটা নিজেরও বাড়ে। তাই নিজের ব্যাপ্তির লোভে সিনেমা বা বইয়ের কাছাকাছি থাকা, আর সেইসব নিয়া গল্পে মাতা।
মাসটাং মূলত দক্ষিণ আমেরিকান এক প্রকার ঘোড়া। যা কিনা আকারে অন্য সব ঘোড়ার চাইতে একটু ছোট, কিন্তু তার গতি একটু বেশিই। সে তাই ছোটেও নিজের মতো, অনেকটা দুর্বার গতিময়। তুরস্কের যেই ছবিটার নাম ‘মাসটাং’ তার কেন্দ্রীয় চরিত্রটাও এমনই। অন্য সবার চেয়ে ছোট, কিন্তু গতিশীল। ছোটেও নিজের মতো। সেই ছোট ঘোড়ার গল্পই বলেছেন টার্কিস তরুণ নির্মাতা ডেনিজ এরগোভেন।
টার্কিস এই তরুণ নির্মাতার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাসটাং’। চলতি বছরের অস্কারে সেরা বিদেশী ভাষার সিনেমা ক্যাটাগরিতে অফিসিয়াল এন্ট্রি অবশ্য ফরাশি ছবি হিসেবে। কিন্তু তাতে ছবির কোনও কিছুই যায় আসে না। কারণ ছবির ভাষা, চরিত্র, প্রেক্ষাপট, গল্প সবটাই তুরস্কের।
প্রায় মাস দেড়েক পর একই দিনে তিনটা ছবি দেখার মিশন নিয়ে বসে প্রথমটা দেখেই আর কোনও ছবির কথা ভাবতে পারিনাই। ৩৭ বছর টার্কিস তরুণী ডেনিজ এর ছবি দেখে মনে হইছে ‘লালে’র জীবন সংগ্রামের বাকিটুকু কতই না বৈচিত্রময়। কারণ, যে মেয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বড় বোনের বিয়ে ভেঙে দেবার সাহস করে তার জীবনে বৈচিত্র আসবে না কি আমার জীবনে আসবে? ;)
ছবির বিকল্প শিরোনাম হইতে পারে, পঞ্চকন্যার আখ্যান। হ্যা, তুরস্কের কোনও এক সমুদ্র তীরবর্তি এক গ্রামের পাঁচ বোনের আখ্যান এই সিনেমা। একই পরিবারের পিঠাপিঠি পাঁচ বোনের জীবনের গল্প।  তাদের বন্ধুর জীবনের গল্প। মা ছাড়া পরিবারে বাবা আর দাদির কাছে বেড়ে ওঠা বোনেরা যারা কিনা সহপাঠীদের নিয়ে সমুদ্রে দল বেধে ¯œান করলে বাবার সন্দেহ হয়। আর তাদের নিয়ে যায় সতীত্ব পরীক্ষা করাতে। এই জীবন কি এখনো আছে?  বোধ করি নারী নির্মাতার শৈশবে দেখা অভিজ্ঞতা এই জায়গায় প্রভাব পড়েছে।

এই রকম একটা অভিজ্ঞতা দিয়া যেখানে ছবি শুরু তখন ছবির গল্পটা কেমন হতে পারে? আপনার আমার ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে এক এক করে অল্প কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার স্বস্তির দিকে ছুটে যাওয়ার গল্প হতে পারতো ‘মাসটাং’। কিন্তু তা না হয়ে হয়ে উঠেছে এক ভবিষ্যতের চিহ্ন। আর সেই ভবিষ্যতের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলো পাঁচ বোনের সবচে ছোট ‘লালে’। তার চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে চাইলে ছবিটা দেখতে পারেন। বলে রাখা ভালো অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার ছবিতে এখন পর্যন্ত তুরস্কের কোনও ছবি সেরা পাঁচে আসতে পারেনি। যে কয়েকবার আসছে তার একটাও তুরস্কের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। ভিন্ন কোনও দেশ থেকে। এইটাও সেই দলেরই একটা ছবি। তবে এইসব তথ্য আর প্রসংশা মাথায় না রেখেও ছবিটা দেখে ফেলতে পারেন এক বসাতেই।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

পৃথিবীর কাল্পনিক প্রেমিকাদের মতো তুমি, এই কথা ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ছড়িয়ে পরে দেয়ালে দেয়ালে। অথচ এই প্রেম প্রকাশের ভাষা নেই। যাতনার নেই নির্দিষ্ট সুর, তবুও তাকেই ডাকে যেই প্রেম তা থেকেই কেবল শুভবার্তা জানাতে পারি।
হয়তো অনেকটা এরকম একটা ভাবনা বা তারও চেয়ে সহজভাবে হৃদয়ের আকুলতা প্রকাশে লেড বেলি লিখেছিলেন তার অমর গান ‌গুডনাইট আইরিন

একটা শুভ কামনার সাথে যাতনা আর অন্তর্গত কান্নার কথা লেড বেলি বলেছিলেন গানে গানে। কালে কালে এই গানই বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে গেয়েছেন। মাঝখান দিয়ে ইংরেজি ফোক গানের ভান্ডারে নিজের এক শক্তিশালি জায়গা করে নিয়েছে গুডনাইট আইরিন। এই ফোক শিল্পীর বয়স যখন বিশ তখন, খুব সম্ভবত ১৯০৮ সালে এই গানটা লেখা হয়। আর সেই প্রথম তা রেকর্ড করায় ১৯৩৪ সালে। ২৬ বছর একটানা দেশের বিভিন্নস্থানে এই গান গেয়ে বেড়ান লেড বেলি। বেলির গান রেকর্ডের পরও এই গান একাধিকবার পুর্নলিখন হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পী মূল সুর অবিকৃত রেখে নিজেদের মতো করে গেয়েছে। তবে পৃথিবীব্যাপি এই গান অনেকটাই ছড়িয়েছে এরিক ক্ল্যাপটন। ক্ল্যাপটনের গাওয়া গানে আধুনিকতার ছাপ পাওয়া যায়। আর তার নিজস্ব গায়কী ও সঙ্গীতায়োজনও এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রাখে। তবে লেড বেলি ছাড়াও গুডনাইট আইরিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা ছিলো ৪০ এর দশকের শেষ দিকে গড়ে উঠা ব্যান্ড দ্যা ওয়েভার্স। যেই ব্যান্ডে এক সময় কিনা পৃথিবী বিখ্যাত ফোক শিল্পী পিট সিগারও গান গাইতো। বেলির পর ওয়েভার্সই দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি বা ব্যন্ড যারা গুডনাইট আইরিন কোরাস করে রেকর্ড করছিলো।
মূল গানটার নামে ইউটিউবে একটা ভিডিও আছে। যাতে নাকি লেড বেলি নিজেই গানটা গাইছে এমন। কিন্তু আমার কিছুটা সন্দেহ হয় এই ভিডিওটায়। কারণ, ১৯৪৯ সালে লেড বেলি মারা যান। তার আগে এত চমৎকার ভিডিও আর রেকর্ড কিছুটা বিশ্বাসহীনতার তৈরি করেই।
এক প্রকার ভালোলাগা-ভালোবাসা থেকেই গুডনাইট আইরিন গানটার প্রথম ভার্সনটা অনুবাদ করি।
আইরিন শুভরাত্রী, আইরিন শুভ রাত্রী,
শুভ রাত্রী আইরিন, শুভরাত্রী আইরিন
তুমি আসবে স্বপ্নে ফিরে আসবে।

গেলো শনিবার আমি বিয়ে করেছিলাম
একসাথেই ছিলাম আমরা
এখন আর নেই
এবার আবার আমি ফিরে যাবো আমার শহরে।

হয়তো থাকবো এই দেশেই
কখনো এই শহরেই
কখনো হয়তো ভাববো অনেক কিছু
নদীতে কাটবো সাঁতার, ডুব দিবো অতলে

আইরিনকেই ভালোবাসি আমি, ঈশ্বর তা জানে
তারেই ভালোবাসবো, যতদিন সাগর না শুকায়
যদি আমাকে সে ফেরায়
মরে যাবো আমি বিষ পানে।

এলোমেলো হয়ো না, জুয়া খেলো না আর
রাতে করে বাড়ি ফিরো
বাড়ি যাও, স্ত্রীর কাছে পরিবারের কাছে
ফায়ারপ্লেসের মতো আরো উজ্জ্বল করো চারপাশ


লেড ভেলির গলায় গাওয়া দাবি করা ভিডিও


দ্যা ওয়েভার্স ব্যান্ডের গাওয়া ভিডিও 


এরিক ক্ল্যাপটন এর গানের লিংক দেয়া হলো। 

'গুডনাইট আইরিন' : পৃথিবীর কাল্পনিক প্রেমিকাদের মতো তুমি

at রবিবার, জানুয়ারী ১৭, ২০১৬  |  No comments

পৃথিবীর কাল্পনিক প্রেমিকাদের মতো তুমি, এই কথা ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে যাই। ঘুম ছড়িয়ে পরে দেয়ালে দেয়ালে। অথচ এই প্রেম প্রকাশের ভাষা নেই। যাতনার নেই নির্দিষ্ট সুর, তবুও তাকেই ডাকে যেই প্রেম তা থেকেই কেবল শুভবার্তা জানাতে পারি।
হয়তো অনেকটা এরকম একটা ভাবনা বা তারও চেয়ে সহজভাবে হৃদয়ের আকুলতা প্রকাশে লেড বেলি লিখেছিলেন তার অমর গান ‌গুডনাইট আইরিন

একটা শুভ কামনার সাথে যাতনা আর অন্তর্গত কান্নার কথা লেড বেলি বলেছিলেন গানে গানে। কালে কালে এই গানই বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে গেয়েছেন। মাঝখান দিয়ে ইংরেজি ফোক গানের ভান্ডারে নিজের এক শক্তিশালি জায়গা করে নিয়েছে গুডনাইট আইরিন। এই ফোক শিল্পীর বয়স যখন বিশ তখন, খুব সম্ভবত ১৯০৮ সালে এই গানটা লেখা হয়। আর সেই প্রথম তা রেকর্ড করায় ১৯৩৪ সালে। ২৬ বছর একটানা দেশের বিভিন্নস্থানে এই গান গেয়ে বেড়ান লেড বেলি। বেলির গান রেকর্ডের পরও এই গান একাধিকবার পুর্নলিখন হয়েছে। বিভিন্ন শিল্পী মূল সুর অবিকৃত রেখে নিজেদের মতো করে গেয়েছে। তবে পৃথিবীব্যাপি এই গান অনেকটাই ছড়িয়েছে এরিক ক্ল্যাপটন। ক্ল্যাপটনের গাওয়া গানে আধুনিকতার ছাপ পাওয়া যায়। আর তার নিজস্ব গায়কী ও সঙ্গীতায়োজনও এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রাখে। তবে লেড বেলি ছাড়াও গুডনাইট আইরিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা ছিলো ৪০ এর দশকের শেষ দিকে গড়ে উঠা ব্যান্ড দ্যা ওয়েভার্স। যেই ব্যান্ডে এক সময় কিনা পৃথিবী বিখ্যাত ফোক শিল্পী পিট সিগারও গান গাইতো। বেলির পর ওয়েভার্সই দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি বা ব্যন্ড যারা গুডনাইট আইরিন কোরাস করে রেকর্ড করছিলো।
মূল গানটার নামে ইউটিউবে একটা ভিডিও আছে। যাতে নাকি লেড বেলি নিজেই গানটা গাইছে এমন। কিন্তু আমার কিছুটা সন্দেহ হয় এই ভিডিওটায়। কারণ, ১৯৪৯ সালে লেড বেলি মারা যান। তার আগে এত চমৎকার ভিডিও আর রেকর্ড কিছুটা বিশ্বাসহীনতার তৈরি করেই।
এক প্রকার ভালোলাগা-ভালোবাসা থেকেই গুডনাইট আইরিন গানটার প্রথম ভার্সনটা অনুবাদ করি।
আইরিন শুভরাত্রী, আইরিন শুভ রাত্রী,
শুভ রাত্রী আইরিন, শুভরাত্রী আইরিন
তুমি আসবে স্বপ্নে ফিরে আসবে।

গেলো শনিবার আমি বিয়ে করেছিলাম
একসাথেই ছিলাম আমরা
এখন আর নেই
এবার আবার আমি ফিরে যাবো আমার শহরে।

হয়তো থাকবো এই দেশেই
কখনো এই শহরেই
কখনো হয়তো ভাববো অনেক কিছু
নদীতে কাটবো সাঁতার, ডুব দিবো অতলে

আইরিনকেই ভালোবাসি আমি, ঈশ্বর তা জানে
তারেই ভালোবাসবো, যতদিন সাগর না শুকায়
যদি আমাকে সে ফেরায়
মরে যাবো আমি বিষ পানে।

এলোমেলো হয়ো না, জুয়া খেলো না আর
রাতে করে বাড়ি ফিরো
বাড়ি যাও, স্ত্রীর কাছে পরিবারের কাছে
ফায়ারপ্লেসের মতো আরো উজ্জ্বল করো চারপাশ


লেড ভেলির গলায় গাওয়া দাবি করা ভিডিও


দ্যা ওয়েভার্স ব্যান্ডের গাওয়া ভিডিও 


এরিক ক্ল্যাপটন এর গানের লিংক দেয়া হলো। 

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম