শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১২

নাট্য পরিচালক হিসেবে পরিচালিত রেদওয়ান রনির প্রথম চলচ্চিত্র ‘চোরাবালি’। এই নির্মাতার নাটকগুলো যেমন বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে, তেমন নাটকের ট্রাডিশনাল গল্পের বাইরে কিছু ব্যতিক্রম গল্পও উপহার দিয়েছে। নাট্যনির্মাতা হিসেবে রনির পথচলাটা বেশ কয়েকবছরের। বলতে গেলে তা প্রায় ছয় সাত বছরেরও বেশী। এই দীর্ঘ সময়ের মাঝে এই নির্মাতা সিনেমা বানানোর স্বপ্নই লালন করেছেন কেবল। তার প্রথম ছবির সংলাপ ‘চোরাবালিতে পড়লে কেউ উঠতে পারে না’র মতোই এই সে ছবি বানানোর স্বপ্নে ছিলেন। সেই ছবি ‘চোরাবালি’। ভিডিও পাইরেসি বা টেলিভিশন প্রিমিয়ারের ধার না ধরে সিনেমাহলেই তিনি মুক্তি দিলেন। আমিও প্রিমিয়ারে যাওয়ার সুযোগ মিস করের গাটের টাকা খরচ করেই সেই ছবি দেখে এসেছি। ছবি দেখার পর এক কথায় যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করেন কেমন ছবি? আমি বলবো আপনার ছবিটা সিনেমা হলে দেখা উচিত। ভালো মন্দের প্রশ্ন পরে। সে আলোচনার প্রসঙ্গ আরও পরে। তার কারণ বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের মুমূর্ষু পরিস্থিতিতে বেঁচে উঠার সম্ভাবনা নিয়ে এই ছবি একটা মাইলফলক না হলেও বেশ বড় অবদান নিয়ে দাঁড়াবে বলেই ছবিটা আপনার দেখা উচিত। ছবিটা কেন দেখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আমি আগে দেই। প্রথমত ছবিটা সবার জন্য নির্মিত। দ্বিতীয়ত ছবিটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নবতর সূচনার সম্ভাবনাময় একটি ছবি। ছবিটিতে মিউজিক করেছেন আইয়ুব বাচ্চু ও অনপমের মতো শিল্পী। তাদের গান শোনার জন্য ছবি। কলকাতার অভিনেতা ইন্দ্রনীল অভিনয় করেছেন তার জন্য। সবার আগে যে কারণে এই ছবিটা দেখবেন, তা হলো যেই দেশে কলকাতার জঘন্য ছবিগুলো এসে বাজার দখল করতে চেষ্টা করছে, বলিউডের নজরকাড়া নায়ক-নায়িকার ছবি এসে সিনেমাহল দখল করতে চাইছে, সেই সময় বাংলাদেশের তরুণ পরিচালকের একটি ছবি। এসব কারণেই তো ছবিটা দেখাই উচিত আপনার। তাই ছবিটা দেখতেই বলবো আপনাকে। আপনি যদি এই ছবি দেখেন আগামী পাঁচ বছরে এর চেয়ে ভালো ছবি আপনি আপনার সিনেমাহলেই দেখতে পাবেন। আর তার জন্যও এই ছবি আপনাকে সিনেমাহলে গিয়েই দেখতে হবে।
এবার আসি ছবির ভেতরে। ছবির জার্নিটা ছিলো তিন বছরের। মানে ২০১০ এর শেষ দিকে রেদওয়ান রনির ঘোষণা আসে সে ছবি বানাবে। ২০১১ অতিক্রম করে ২০১২’র শেষ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এসে এই ছবি মুক্তি পেয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় রনি নিজে যে ছবির গল্প দাঁড় করিয়েছে তার বেশ কিছু জায়গায় আমার ঘোর আপত্তি আছে। প্রথমত এমন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টোরি নিয়ে বাংলাদেশের নিয়মিত নির্মাতারা একাধিক ছবি বানিয়েছে। কিন্তু সেসব সিনেমা সিনেমার ধারে কাছেও না যাওয়ায়, রেদওয়ান রনির কাছে এই জায়গায় প্রত্যাশা আরও বেশী ছিলো। সে প্রত্যাশা পুরোপুরি পুরণ করতে পারেন নি তিনি। তবে তিনি যে পদ্ধতিতে শুরু করেছেন, তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ। ছবির গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুমন (ইন্দ্রনীল) একজন প্রফেশনাল খুনি। যে কিনা তার গডফাদার (শহীদুজ্জামান সেলিম) এর পোশা মানুষ। খুন করা তার কাছে ডালভাত। কারণ, বারো/তেরো বছরেই সে একাধিক খুন করেছে। প্রথম খুনটা সে করে তার মা’র ধর্ষণকারী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে। দ্বিতীয় খুন করে বস্তির এক ড্রাগ ব্যবসায়ী তাঁর মাকে বেশ্যা বলায়। দ্বিতীয় খুনের পরই সে চলে আসে তাঁর গডফাদারের হাওলায়। তার ছত্রছায়ায় তার আর খুনের কোনও হিসাব থাকেনা তখন। এমন একজন খুনী কিনা পেছন থেকে একজন প্রেগনেন্ট মহিলাকে খুন করেই তার ১৩/১৪ বছরের খুনী জীবন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে? অবিশ্বাস্য হলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে এই ছবিতে। এই ইন্দ্রনীল এই খুনের পর থেকে ছবির গল্পে পরিবর্তন আসতে থাকে। গল্পে সে ভিলেন থেকে নায়ক হতে থাকে। যদিও ছবিতে কেন্দ্রীয় নায়ক চরিত্র বলে আসলে তেমন কাউকে পাওয়া যায় না। ইন্দ্রনীলের করা সুমন চরিত্র সিনেমার প্রথমভাগেও কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে দাঁড়াতে পারে না। যতটা দাঁড়ায় সেলিমের করা চরিত্র। ছবির অধিকাংশ সময়ই মনে হয় সুমন চরিত্রটি কেবল একটি ক্রীড়নক মাত্র। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে এসে সুমনের নায়ক হওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়। দেখা যায় সে আর খুনী থাকতে চায় না। ভালো মানুষ হতে চায়। ছবির নায়িকা নাবিলার (জয়া) চরত্রিটিও তেমন চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা ছিলো, ততটা চ্যালেঞ্জিং হয় নি। টেলিভিশনের নিয়মিত নিয়ম ভাঙা জয়া এখানে অনুপস্থিত। কিন্তু ছোট চরিত্র হলেও এই ছবিতে নিজের মতো শক্তি আর চমৎকারিত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন এটিএম সামসুজ্জামান। তাঁর ক্ষমতা তিনি পরিমিতই দেখিয়েছেন। পরিমিত অভিনয় ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন সব কিছু পরিমিত হওয়াই বাঞ্ছনিয়, অতিরঞ্জিত নয়। ঠিক এই কাজটিই করেছেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা পরিচিতি থাকলেও সিনেমায় অভিনয়ের যে ভিন্ন একটা আবেদন আছে, তা তার অভিনয়ে পাওয়া যায় নি। বরং তার অভিনয়ে যা পাওয়া গেছে তা হলো তার অতিঅভিনয়ের বাড়াবাড়ি। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রই বলতে গেলে তা। আর তা এই অভিনেতার বাড়াবাড়ির কারণে এক প্রকার নষ্টই হয়েছে। খুব সীমিত পরিসরে চমৎকার অভিনয় করেছে হুমায়ূন সাধু। তাঁকে সাধুবাদ। ছবির প্রথম অর্ধ যখন শেষই হচ্ছে না তখন আমার মনে হচ্ছিলো ছবির গল্প অনেক বড়। আর এই গল্প দ্বিতীয়ার্ধে এসে কিনা কেমন জানি খাপছাড়া খাপছাড়া মনে হচ্ছিলো। ইন্দ্রনিলের করা চরিত্রটির ট্রান্সপোর্টেশন খুব দুর্বল। প্রকৃত অর্থে কেবল ইন্দ্রনিলকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই এই ট্রান্সপোর্টেশন। কিন্তু এই ট্রান্সপোর্টেশনটা আরও মজবুত হলে ছবি দেখে আরও উপভোগ করা যেতো। দুইঘন্টার ছবি দেখে ছবিতে সবচেয়ে বেশী যে জিনিসগুলো আমার কাছে আকর্ষনীয় মনে হয়েছে তার মাঝে হলো ইন্দ্রনীলের ফ্লাশব্যাক। এই সময়টার কালারটোন ছিলো ভিন্ন। অতীতের গল্প বলার জন্য সেপিয়া টোন ব্যবহার করেছে পরিচালক। তারচেয়ে বড় কথা এই সময়টার নির্মাণ কৌশলেই পাওয়া গেছে চলচ্চিত্রকার রেদওয়ান রনিকে। বাকি সময়টায় রনি ছিলো ট্রাডিশনাল টিভি নাট্য পরিচালকের মতোই।
এছাড়া এই ছবির সবচে বড় দুর্বলতা ছিলো সংলাপে। সংলাপ আরও কি চমৎকারই না হতে পারতো। এই আক্ষেপের সাথে আরও একটা আক্ষেপ বড় ভুগিয়েছে তা হলো ছবির কন্টিনিটি। ইন্দ্রনীলকে যে পিস্তলটা শহীদুজ্জামান সেলিম সেই কবে উপহার দিয়েছিলো এই পিস্তলটাই তার সাথে থাকার কথা। কিন্তু এই পিস্তলটার স্থলে ভিন্ন সময় ভিন্ন পিস্তল কি চোখে পড়েছে? আমি আমার পাশের দর্শককে জিজ্ঞেস করায় সেও সায় দিলো এই স্থানে। এমন ছোটখাটো বেশকিছু ভুল আছে সেগুলোকে অতিক্রম করার জন্য ছিলো চমৎকার ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক স্কোর। অরিজিনাল স্কোরের চেয়ে গল্পের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মানিয়েছে চমৎকার। আর একটা আইটেম গান? প্রাণহীন একটা মেয়ে আর একদল ছেলের শরীর দেখালেই কি আইটেম গান হয়? তাও আর গল্পের সাথে কোনও সামঞ্জস্য না রেখে হুট করে দিলেই হলো? তাহলে এই আইটেম গানটা ছবিতে ব্যবহার না করে কেবল মার্কেটিং এ ব্যবহার করলেও ছবির দর্শক আগ্রহী হতো বলে আমার মনে হয়।
ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবচে বিরক্তিকর বিষয় হৈলো ইন্দ্রনীলের লিপে শতাব্দী ওয়াদুদের কন্ঠ আর মডেল কন্যার কণ্ঠে দীপা খন্দকারের কণ্ঠ। একদমই মানায়নাই বলে মনে হৈছে আমার।
এতকিছুর পরও আমি এই পরিচালককে নিয়ে আসাবাদী। আমি চাইবো রেদওয়ান রনি নিয়মিত ছবিই বানাক। আর নাটক না বানিয়ে এর চেয়ে ভালো ছবিই বানাক। তখন একই ছবি বারবার দেখার জন্য আমিই সিনেমাহলে যাবো। আমার মনে হয় এর চেয়ে আর একটু ভালো হলে আমার মতো দর্শক আরও তৈরি হবে। একই ছবি বারবার দেখার জন্য সিনেমাহলে যাবে। আর তা না হলে চলচ্চিত্র শিল্প যে অপারেশন টেবিলে এখন আছে, সেখান থেকে সে আর সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসতে পারবে না। আর ভালো ছবি হলে চলচ্চিত্র উঠে দাঁড়াবে, হাসবে খেলবে। যা খুব প্রয়োজন আমাদের জন্য।

‘চোরাবালি’ দর্শনের ভুল-ভাল

at শনিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০১২  |  1 comment

নাট্য পরিচালক হিসেবে পরিচালিত রেদওয়ান রনির প্রথম চলচ্চিত্র ‘চোরাবালি’। এই নির্মাতার নাটকগুলো যেমন বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে, তেমন নাটকের ট্রাডিশনাল গল্পের বাইরে কিছু ব্যতিক্রম গল্পও উপহার দিয়েছে। নাট্যনির্মাতা হিসেবে রনির পথচলাটা বেশ কয়েকবছরের। বলতে গেলে তা প্রায় ছয় সাত বছরেরও বেশী। এই দীর্ঘ সময়ের মাঝে এই নির্মাতা সিনেমা বানানোর স্বপ্নই লালন করেছেন কেবল। তার প্রথম ছবির সংলাপ ‘চোরাবালিতে পড়লে কেউ উঠতে পারে না’র মতোই এই সে ছবি বানানোর স্বপ্নে ছিলেন। সেই ছবি ‘চোরাবালি’। ভিডিও পাইরেসি বা টেলিভিশন প্রিমিয়ারের ধার না ধরে সিনেমাহলেই তিনি মুক্তি দিলেন। আমিও প্রিমিয়ারে যাওয়ার সুযোগ মিস করের গাটের টাকা খরচ করেই সেই ছবি দেখে এসেছি। ছবি দেখার পর এক কথায় যদি আমাকে কেউ প্রশ্ন করেন কেমন ছবি? আমি বলবো আপনার ছবিটা সিনেমা হলে দেখা উচিত। ভালো মন্দের প্রশ্ন পরে। সে আলোচনার প্রসঙ্গ আরও পরে। তার কারণ বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের মুমূর্ষু পরিস্থিতিতে বেঁচে উঠার সম্ভাবনা নিয়ে এই ছবি একটা মাইলফলক না হলেও বেশ বড় অবদান নিয়ে দাঁড়াবে বলেই ছবিটা আপনার দেখা উচিত। ছবিটা কেন দেখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আমি আগে দেই। প্রথমত ছবিটা সবার জন্য নির্মিত। দ্বিতীয়ত ছবিটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের নবতর সূচনার সম্ভাবনাময় একটি ছবি। ছবিটিতে মিউজিক করেছেন আইয়ুব বাচ্চু ও অনপমের মতো শিল্পী। তাদের গান শোনার জন্য ছবি। কলকাতার অভিনেতা ইন্দ্রনীল অভিনয় করেছেন তার জন্য। সবার আগে যে কারণে এই ছবিটা দেখবেন, তা হলো যেই দেশে কলকাতার জঘন্য ছবিগুলো এসে বাজার দখল করতে চেষ্টা করছে, বলিউডের নজরকাড়া নায়ক-নায়িকার ছবি এসে সিনেমাহল দখল করতে চাইছে, সেই সময় বাংলাদেশের তরুণ পরিচালকের একটি ছবি। এসব কারণেই তো ছবিটা দেখাই উচিত আপনার। তাই ছবিটা দেখতেই বলবো আপনাকে। আপনি যদি এই ছবি দেখেন আগামী পাঁচ বছরে এর চেয়ে ভালো ছবি আপনি আপনার সিনেমাহলেই দেখতে পাবেন। আর তার জন্যও এই ছবি আপনাকে সিনেমাহলে গিয়েই দেখতে হবে।
এবার আসি ছবির ভেতরে। ছবির জার্নিটা ছিলো তিন বছরের। মানে ২০১০ এর শেষ দিকে রেদওয়ান রনির ঘোষণা আসে সে ছবি বানাবে। ২০১১ অতিক্রম করে ২০১২’র শেষ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এসে এই ছবি মুক্তি পেয়েছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় রনি নিজে যে ছবির গল্প দাঁড় করিয়েছে তার বেশ কিছু জায়গায় আমার ঘোর আপত্তি আছে। প্রথমত এমন আন্ডারগ্রাউন্ড স্টোরি নিয়ে বাংলাদেশের নিয়মিত নির্মাতারা একাধিক ছবি বানিয়েছে। কিন্তু সেসব সিনেমা সিনেমার ধারে কাছেও না যাওয়ায়, রেদওয়ান রনির কাছে এই জায়গায় প্রত্যাশা আরও বেশী ছিলো। সে প্রত্যাশা পুরোপুরি পুরণ করতে পারেন নি তিনি। তবে তিনি যে পদ্ধতিতে শুরু করেছেন, তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ। ছবির গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুমন (ইন্দ্রনীল) একজন প্রফেশনাল খুনি। যে কিনা তার গডফাদার (শহীদুজ্জামান সেলিম) এর পোশা মানুষ। খুন করা তার কাছে ডালভাত। কারণ, বারো/তেরো বছরেই সে একাধিক খুন করেছে। প্রথম খুনটা সে করে তার মা’র ধর্ষণকারী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে। দ্বিতীয় খুন করে বস্তির এক ড্রাগ ব্যবসায়ী তাঁর মাকে বেশ্যা বলায়। দ্বিতীয় খুনের পরই সে চলে আসে তাঁর গডফাদারের হাওলায়। তার ছত্রছায়ায় তার আর খুনের কোনও হিসাব থাকেনা তখন। এমন একজন খুনী কিনা পেছন থেকে একজন প্রেগনেন্ট মহিলাকে খুন করেই তার ১৩/১৪ বছরের খুনী জীবন থেকে বেড়িয়ে আসতে পারবে? অবিশ্বাস্য হলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে এই ছবিতে। এই ইন্দ্রনীল এই খুনের পর থেকে ছবির গল্পে পরিবর্তন আসতে থাকে। গল্পে সে ভিলেন থেকে নায়ক হতে থাকে। যদিও ছবিতে কেন্দ্রীয় নায়ক চরিত্র বলে আসলে তেমন কাউকে পাওয়া যায় না। ইন্দ্রনীলের করা সুমন চরিত্র সিনেমার প্রথমভাগেও কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে দাঁড়াতে পারে না। যতটা দাঁড়ায় সেলিমের করা চরিত্র। ছবির অধিকাংশ সময়ই মনে হয় সুমন চরিত্রটি কেবল একটি ক্রীড়নক মাত্র। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে এসে সুমনের নায়ক হওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যায়। দেখা যায় সে আর খুনী থাকতে চায় না। ভালো মানুষ হতে চায়। ছবির নায়িকা নাবিলার (জয়া) চরত্রিটিও তেমন চ্যালেঞ্জিং হওয়ার কথা ছিলো, ততটা চ্যালেঞ্জিং হয় নি। টেলিভিশনের নিয়মিত নিয়ম ভাঙা জয়া এখানে অনুপস্থিত। কিন্তু ছোট চরিত্র হলেও এই ছবিতে নিজের মতো শক্তি আর চমৎকারিত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন এটিএম সামসুজ্জামান। তাঁর ক্ষমতা তিনি পরিমিতই দেখিয়েছেন। পরিমিত অভিনয় ক্ষমতা দেখিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন সব কিছু পরিমিত হওয়াই বাঞ্ছনিয়, অতিরঞ্জিত নয়। ঠিক এই কাজটিই করেছেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। শক্তিমান অভিনেতা হিসেবে তার প্রতিষ্ঠা পরিচিতি থাকলেও সিনেমায় অভিনয়ের যে ভিন্ন একটা আবেদন আছে, তা তার অভিনয়ে পাওয়া যায় নি। বরং তার অভিনয়ে যা পাওয়া গেছে তা হলো তার অতিঅভিনয়ের বাড়াবাড়ি। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রই বলতে গেলে তা। আর তা এই অভিনেতার বাড়াবাড়ির কারণে এক প্রকার নষ্টই হয়েছে। খুব সীমিত পরিসরে চমৎকার অভিনয় করেছে হুমায়ূন সাধু। তাঁকে সাধুবাদ। ছবির প্রথম অর্ধ যখন শেষই হচ্ছে না তখন আমার মনে হচ্ছিলো ছবির গল্প অনেক বড়। আর এই গল্প দ্বিতীয়ার্ধে এসে কিনা কেমন জানি খাপছাড়া খাপছাড়া মনে হচ্ছিলো। ইন্দ্রনিলের করা চরিত্রটির ট্রান্সপোর্টেশন খুব দুর্বল। প্রকৃত অর্থে কেবল ইন্দ্রনিলকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই এই ট্রান্সপোর্টেশন। কিন্তু এই ট্রান্সপোর্টেশনটা আরও মজবুত হলে ছবি দেখে আরও উপভোগ করা যেতো। দুইঘন্টার ছবি দেখে ছবিতে সবচেয়ে বেশী যে জিনিসগুলো আমার কাছে আকর্ষনীয় মনে হয়েছে তার মাঝে হলো ইন্দ্রনীলের ফ্লাশব্যাক। এই সময়টার কালারটোন ছিলো ভিন্ন। অতীতের গল্প বলার জন্য সেপিয়া টোন ব্যবহার করেছে পরিচালক। তারচেয়ে বড় কথা এই সময়টার নির্মাণ কৌশলেই পাওয়া গেছে চলচ্চিত্রকার রেদওয়ান রনিকে। বাকি সময়টায় রনি ছিলো ট্রাডিশনাল টিভি নাট্য পরিচালকের মতোই।
এছাড়া এই ছবির সবচে বড় দুর্বলতা ছিলো সংলাপে। সংলাপ আরও কি চমৎকারই না হতে পারতো। এই আক্ষেপের সাথে আরও একটা আক্ষেপ বড় ভুগিয়েছে তা হলো ছবির কন্টিনিটি। ইন্দ্রনীলকে যে পিস্তলটা শহীদুজ্জামান সেলিম সেই কবে উপহার দিয়েছিলো এই পিস্তলটাই তার সাথে থাকার কথা। কিন্তু এই পিস্তলটার স্থলে ভিন্ন সময় ভিন্ন পিস্তল কি চোখে পড়েছে? আমি আমার পাশের দর্শককে জিজ্ঞেস করায় সেও সায় দিলো এই স্থানে। এমন ছোটখাটো বেশকিছু ভুল আছে সেগুলোকে অতিক্রম করার জন্য ছিলো চমৎকার ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক স্কোর। অরিজিনাল স্কোরের চেয়ে গল্পের সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মানিয়েছে চমৎকার। আর একটা আইটেম গান? প্রাণহীন একটা মেয়ে আর একদল ছেলের শরীর দেখালেই কি আইটেম গান হয়? তাও আর গল্পের সাথে কোনও সামঞ্জস্য না রেখে হুট করে দিলেই হলো? তাহলে এই আইটেম গানটা ছবিতে ব্যবহার না করে কেবল মার্কেটিং এ ব্যবহার করলেও ছবির দর্শক আগ্রহী হতো বলে আমার মনে হয়।
ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবচে বিরক্তিকর বিষয় হৈলো ইন্দ্রনীলের লিপে শতাব্দী ওয়াদুদের কন্ঠ আর মডেল কন্যার কণ্ঠে দীপা খন্দকারের কণ্ঠ। একদমই মানায়নাই বলে মনে হৈছে আমার।
এতকিছুর পরও আমি এই পরিচালককে নিয়ে আসাবাদী। আমি চাইবো রেদওয়ান রনি নিয়মিত ছবিই বানাক। আর নাটক না বানিয়ে এর চেয়ে ভালো ছবিই বানাক। তখন একই ছবি বারবার দেখার জন্য আমিই সিনেমাহলে যাবো। আমার মনে হয় এর চেয়ে আর একটু ভালো হলে আমার মতো দর্শক আরও তৈরি হবে। একই ছবি বারবার দেখার জন্য সিনেমাহলে যাবে। আর তা না হলে চলচ্চিত্র শিল্প যে অপারেশন টেবিলে এখন আছে, সেখান থেকে সে আর সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসতে পারবে না। আর ভালো ছবি হলে চলচ্চিত্র উঠে দাঁড়াবে, হাসবে খেলবে। যা খুব প্রয়োজন আমাদের জন্য।

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২

একটা সন্ধ্যার কথা আমরা ভুলে যেতে পারি, কিংবা ভুলে যেতে পারি একটা মৃত্যু সম্ভাবনার কথাও- কিন্তু একটি শাদা অর্ন্তবাস অথবা তার স্বত্তাধিকারীর কথা ভুলে যেতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে পারি; কিন্তু ভাবিনা, কারণ আমরা ভেবে দেখেছি উন্মোক্ত গ্যালারীতে রাখা চিত্রকর্মের সহজলভ্যতা একটি স্বতঃস্ফুর্ত শিল্প আকাঙ্খা জন্মদিলেও ধরা দেয়না স্বতন্ত্র একটি ভাবন- তারপরও আমরা খুঁজি চারপাশে সেই অর্ন্তবাসের স্বত্তাধিকারীকে অথবা তার মতো আরো আরো কিংবদন্তীকে, যারা প্রতিদিন স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা পোষন করতে গিয়ে রাত জাগে আর আলোকিত করে ছা-পোশা শয্যা- যা আমাদের হতে পারতো আরো দীর্ঘ মৃত্যু আকাঙ্খার জাগ্রত সময়ে; কিন্তু আমরা ভুলে যাই না, এই মৃত্যু একটি সময়ের ছোটগল্প মাত্র- যা কিনা প্রতিদিন সকাল হলেই পাঠক তার ওয়েস্টপ্যাপারের বাক্সে ছুরে দিতে পারে

প্রতিদিন সকালের ঝালমুরি ওয়ালা এক বস্তা ঝালমুড়ি দিয়ে গেলে আমরা লেবুপাতার বাগানে তা শোকাতে দিই জেনেও সেখানে কোনও ঝালমুড়ির দোকান হয় না, এ খবর শুনে আপনি আনন্দিত হতে পারেন জানি; কিন্তু আপনার স্ত্রীর কি শরীর ভালো?

ওয়েস্টপ্যাপার বক্স

at বুধবার, নভেম্বর ২৮, ২০১২  |  No comments

একটা সন্ধ্যার কথা আমরা ভুলে যেতে পারি, কিংবা ভুলে যেতে পারি একটা মৃত্যু সম্ভাবনার কথাও- কিন্তু একটি শাদা অর্ন্তবাস অথবা তার স্বত্তাধিকারীর কথা ভুলে যেতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে পারি; কিন্তু ভাবিনা, কারণ আমরা ভেবে দেখেছি উন্মোক্ত গ্যালারীতে রাখা চিত্রকর্মের সহজলভ্যতা একটি স্বতঃস্ফুর্ত শিল্প আকাঙ্খা জন্মদিলেও ধরা দেয়না স্বতন্ত্র একটি ভাবন- তারপরও আমরা খুঁজি চারপাশে সেই অর্ন্তবাসের স্বত্তাধিকারীকে অথবা তার মতো আরো আরো কিংবদন্তীকে, যারা প্রতিদিন স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছা পোষন করতে গিয়ে রাত জাগে আর আলোকিত করে ছা-পোশা শয্যা- যা আমাদের হতে পারতো আরো দীর্ঘ মৃত্যু আকাঙ্খার জাগ্রত সময়ে; কিন্তু আমরা ভুলে যাই না, এই মৃত্যু একটি সময়ের ছোটগল্প মাত্র- যা কিনা প্রতিদিন সকাল হলেই পাঠক তার ওয়েস্টপ্যাপারের বাক্সে ছুরে দিতে পারে

প্রতিদিন সকালের ঝালমুরি ওয়ালা এক বস্তা ঝালমুড়ি দিয়ে গেলে আমরা লেবুপাতার বাগানে তা শোকাতে দিই জেনেও সেখানে কোনও ঝালমুড়ির দোকান হয় না, এ খবর শুনে আপনি আনন্দিত হতে পারেন জানি; কিন্তু আপনার স্ত্রীর কি শরীর ভালো?

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

যতটা পথ হেটেছে সে কিশোর বেলায়
তারচেয়ে আপন হয়েছে আজ
মরিচ বাগানের ঘ্রাণ,

বন্ধুর নামের আগে কেনো লিখে রাখে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নাম
কেনো তার ভাত ঘুমে স্বপ্নেরা হানা দেয়
তাই বুছি জোছনার গান গাওয়া রাজহাঁস-
শুষুকের ভাগ্য ফেরায়

হাতে রেখে সু-সময়ের দিন, তোমাকে তাই বন্ধু হতে ডাকি-
      কেমন আছো জলের ঈশ্বর?
তাদের মুখরে কি সুখনিদ্রা আসে?
মাঝে মাঝে তাই ঋতুর বন্ধু হয়ে যাই
রোদ বৃষ্টি ফেরি করে বেরাই নগরের জানালায়
মানুষের ভাগ্য কি সেই রোদের বন্ধু হয়-
কি থাকে তাই অস্তিত্বের বিবর্ণ ইতিহাসে,
তার কথা লিখে রাখবে রোদের ডায়রী

খুব বেশী রোদ নেই বৃক্ষের

at বুধবার, নভেম্বর ২৮, ২০১২  |  No comments

যতটা পথ হেটেছে সে কিশোর বেলায়
তারচেয়ে আপন হয়েছে আজ
মরিচ বাগানের ঘ্রাণ,

বন্ধুর নামের আগে কেনো লিখে রাখে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নাম
কেনো তার ভাত ঘুমে স্বপ্নেরা হানা দেয়
তাই বুছি জোছনার গান গাওয়া রাজহাঁস-
শুষুকের ভাগ্য ফেরায়

হাতে রেখে সু-সময়ের দিন, তোমাকে তাই বন্ধু হতে ডাকি-
      কেমন আছো জলের ঈশ্বর?
তাদের মুখরে কি সুখনিদ্রা আসে?
মাঝে মাঝে তাই ঋতুর বন্ধু হয়ে যাই
রোদ বৃষ্টি ফেরি করে বেরাই নগরের জানালায়
মানুষের ভাগ্য কি সেই রোদের বন্ধু হয়-
কি থাকে তাই অস্তিত্বের বিবর্ণ ইতিহাসে,
তার কথা লিখে রাখবে রোদের ডায়রী

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১২

২৭ নভেম্বর আমার আব্বার মৃত্যুদিন। ২০০২ সালের এই দিনে আমি আমার আব্বাকে হারিয়েছিলাম। সেই সময়কার আমি আর এই সময়কার আমি’র মাঝে আমি নিজেই অনেক পার্থক্য দেখতে পাই। দেখতে পাই, আব্বার সাথে আমার অনেক মিল, অমিল। অমিলগুলোর জন্য নিজেকে এর মালিক মনে করি। মিলগুলোর জন্য মনে করি আমার জিন কে। যা আমার আব্বা-আম্মারকাছ থেকে আমি পেয়েছে। আর এই দিকটায় পরিবারের আমার অন্য সব ভাইদের চেয়ে মনে হয় আমার বাবার সাথে আমার মিল একটু বেশী। এটা হয়তো আমি নির্মোহভাবে দেখতে পারি না। নিজেকে যতটুকু জানি বলে মনে করি, ততটুকু দিয়েই। আর তাই ভুল হবার সম্ভাবনাও থাকে।
আমার বাবাকে আমি বা আমরা কখনোই একজন স্নেহাশিষ পিতা হিসেবে পাই নি। যা আমি আমার চারপাশে দেখে এসেছি। আর তাই সেই ছোটবেলা থেকেই আব্বার প্রতি একটা বিতৃষ্ণা আমার ছিলো। আমি তাকে একটা এলোমেলো বদমেজাজি মানুষ হিসেবেই চিনে এসেছি। তবে হ্যা, এই লোকটির সংগ্রামের কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। তিনি কখনোই স্বচ্ছল থাকতে পারেন নি। সারা জীবন কাটিয়েছেন টানাপোড়েনের মধ্যে। দেখে এসেছি তার অসম্ভব পরিশ্রম করার জীবনকে। তবে আমি যা দেখেছি, তা নাকি খুবই সামান্য। তবুও তিনি আমার দেখা জীবনের মাঝে কিছুটা রয়েছেন। এই ভেবে আনন্দিতও হই।
আমার আব্বা আমাদের পূর্বজ পরিবারের প্রথম পড়ালেখা জানা (মেট্রিক পাশ) মানুষ ছিলেন। তার বাবা, মানে আমার দাদা ছিলেন আমাদের কাছে বিপ্লবী। তবে সেই বিপ্লবী মানষিকতা আমার কাছে কাপুরুষোচিত বলে মনে হয় এখন। আব্বার মুখেই তার কথা শুনেছি বেশী। কিছু শুনেছি আম্মার কাছে, কিছু নানী আর ফুপুর কাছে। আমার আব্বাকে আমি কাউকে ভয় পেতে দেখি নাই। কেবল তার বড় বোন, আমাদের একমাত্র ফুপুকে ছাড়া। ফুপুর চেয়ে দশ বছর কম ছিলো আমার আব্বার। কিন্তু আব্বাই আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফুপু অনেক বয়সে দীর্ঘ রোগে ভোগে তারপর পৃথিবী ছেরেছিলেন। কোনও এক আশ্চর্য কারণে আমার ফুপু আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি আমাদের সব ভাই বোনদের কে বা’জি আর মায়া’জি বলে ডাকতেন। কিন্তু আমাকে ডাকতেন বাজান বলে। আমাকে কাছে পেলে তার ভালোবাসা প্রকাশের মাত্রাও বেড়ে যেতো। আমি তার সেই ভালোবাসা এখন বুঝি, তখন বুঝতাম না। পরবর্তিতে মায়ের কাছে শুনেছি, আমার বাবাও ছিলেন তার অন্য ভাইদের চেয়ে বেশী আপন। আমি সেই সূত্রে হিসাব মেলাই, আমার মাঝে কি তিনি তার ছোটভাইটাকে দেখেছিলেন? হয়তো, হয়তো না। তার মুখ আমার কাছে অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখনকার মত ছবি তোলা এত হাতের নাগালে ছিলো না, তবে সুযোগ যে ছিলো না তা কিন্তু নয়। আমি তবুও ছবির চেয়ে আমার স্মৃতির ফুপুকেই মনে করতে পছন্দ করি। তিনি থাকুক আমার হৃদয়ের এ্যালবামে।
২০০২ সালে আমি ইন্টারমিডিয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আব্বা চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন ততদিনে অনেক দিন। অনেক দিন বলতে ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অবসর নেন। তার পর থেকে অফিস পাগল একটা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারির দিন কাটতো না। নানা ধরনের কাজে তিনি ব্যস্ত থাকতে চেষ্টা করতেন। এই অবসর আমাদের জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। কারণ, আমরা তার প্রচণ্ড বদমেজাজী মানুষটাকে সব সময় সামনে প্রত্যাশা করতাম না। কিন্তু এই মানুষটা বদ মেজাজী হলেও ভেতরটা ছিলো একদম স্বচ্ছ। কোনও রাখঢাক তিনি মনের ভেতর পুষে রাখতেন না। এই সভ্য সমাজে মানুষ যেভাবে ক্ষোভ বিতৃষ্ণা পুষে রেখে প্রতিষোধ পরায়ন হয়ে ওঠে, তিনি তেমন কখনই ছিলেন না। তার সরলতার জন্য তাকে আমাদের সব প্রতিবেশীই একটা ভালো মানুষ বলে জানতেন।
এই ভালো মানুষটা স্থুল অর্থে জীবনে কিছু করতে পারেন নি। করতে পারেন নি এ কথাও বলা যায় না। কারণ, আমি যখন জানতে পারি, তখন তার সমগ্র বেতন মাত্র ১০ হাজার টাকা মাত্র। এটাও বেশদিন আগের ঘটনা নয়, ১৯৯৬/৯৭ সালের ঘটনা। এ সময় আমরা ৬ ভাইয়ের মাত্র একজন রোজগার করতে পারে। একজন পৃথক থাকায় তার রোজগার আমাদের পরিবারের সাথে যোগ হয় না, বাকী চারজনই পড়াশোনা করি। এই সংসারটাকে তিনি টেনে ধরে রাখতে পেরেছিলেন। তা কি কম কিছু? এখন টের পাই, এও অনেক কিছু। যা একটা উল্লেখযোগ্য দিক বলে ভাবতে পারি আমি।
আব্বা বরাবরই আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হলেও তার কর্মদক্ষতার কারণে তিনি তার ডিপার্টম্যান্টের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে সমীহ জাগানো ব্যক্তি ছিলেন। তার সম পর্যায়ের অবস্থান থেকে আমাদের চোখের সামনেই আমরা দেখেছি বাড়ি গাড়ি করে ফেলতে। আর আমার বাবাকে দেখেছি বাজারে ২ টাকা বাঁচানোর জন্য পুরো বাজার ঘুরে, দামাদামি করে তারপর কিনতে।
এই লোকটার অতীতের কথা ভাবলে আমি আরও আশ্চর্য হই। এই লোকটাই আদমজি জুট মিলের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলো এক সময়। পুরো জুট মিল তার ভয়ে কাঁপতো। সেখানেও তার সম সাময়িকদের দুর্নীতি থেকে প্রতিষ্ঠান ও নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে যে সংগ্রাম করেছিলেন তিনি, তার কথা বলার সময় তার গলা ভারি হয়ে আসতো। আর তার চোখ ভিজে আসতো। আশ্চর্যের বিষয়, এসব আমরা টেরই পাইনি তখন। এখন টের পাই।
আব্বার স্মৃতিগুলো, চারিত্রিক ধর্মগুলো বর্ণনা করি। আর ভাবি, আমার এই অবস্থায় থাকলে তিনি কি করতেন? তিনি কি ভাবতেন? পারিনা। তার মতো করে ভাবতে পারি না। আমি আমার মতোই ভাবি। কারণ, আমি যে দলছুট হয়ে গেছি আরও অনেক আগেই। আমি যে বুঝতে শিখেছি আমার মতো করে চলে না আমার ছেলেবেলার বন্ধুরাই। তবে নিজেকে কখনোই দশজনের বাইরের ভাবিনি, ভেবেছি দশজনের সবার শেষের জন।
তাঁর মৃত্যুর একদিন আগে সন্ধ্যায় ইফতার করতে বসে হঠাৎ ইফতার করতে করতে উঠে গেলেন। বমি হলো তার। মাথায় প্রচুর পানি ঢালা হলো, কিন্তু প্রেসার বেরে যাওয়ায় কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ডাক্তার ডাকা হলো, ডাক্তার ওষুধ দিলো, সেলাইন দিলো, শরীরের অবস্থা খারাপও না ভালোও না বুঝতেই পারছিলাম না। একদিন বাড়িতেই চিকিৎসা চললো, পরদিন সন্ধ্যার আগে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে দেখাগেলো শরীরের একটা দিক তার অবশ হয়ে গেছে। মেজর স্ট্রোক। বাবার গোড়ামি আর আমাদের অজ্ঞতা ও ডাক্তারের ভুল সিদ্ধান্ত। সব মিলে আমরা একটা প্যারালাইজড বাবাকে ঘরে পরে থাকতে দেখবো এমন মানষিক প্রস্তুতি তখন আমার। এই অবস্থায় জরুরী ময়মনসিংহ মেডিকেলে নেওয়া হলো তাকে। আমার তখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলে। সকালে সেহরি খেয়ে আমার বোনের বাড়ি গিয়ে খবর দিয়ে এলাম। বোন ও দুলাভাইকে বললাম- আব্বা খুব অসুস্থ্য, ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। পারলে একবার গিয়ে দেখে আসবেন। তাদের জানিয়ে আমি পরীক্ষায় বসে যাই। আমার এই বোনটি আমার একমাত্র বোন। আমার জন্মের পর থেকে আমার মা আমার জন্য যা করেছে, সে করেছে তার চেয়েও বেশী। এতে অবশ্য আমি মাকে দোষ দেই না। কারণ, এমন কিছুত হয়ই। সেই বোনটা বাবার খুব আদরের। আমাদের ছয় ভাই ও আম্মার কথা না শুনলেও বাবা আমার বোনটির কথা শুনতেন। হয়তো একমাত্র বলেই। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে দেখি বোন বাসায় বসে আছে। আর দেরি করা হলো না। তাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয়া হলো। বাসে উঠেই মনে হচ্ছিলো গতকাল সন্ধ্যায় যে বাবাকে আমি প্রাণসহ দেখেছি, ঐ জ্যান্ত বাবাকে হয়তো আমি আর পাবো না। হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকতেই পেলাম সেজো ভাইকে তার এক বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখমুখ লাল। মনে হচ্ছে রক্ত জমে আছে। আর একটু ভেতরে ঢুকতেই হাসপাতালে ফোন ফ্যাক্সের একটা দোকানে দেখলাম মেজোভাই কে। আমি আরও সুদৃঢ় হয়ে গেলাম, আমি যা ভাবছি তাই হতে যাচ্ছে। হাসাপাতালের ছয় তলার সিড়িগুলোকে আমার বড় দীর্ঘপথ বলে মনে হচ্ছিলো। বলতে গেলে এক দৌড়েই চললাম পেয়িং ওয়ার্ডটায়। ওয়ার্ডে ঢুকতেই আর আমার ইমিডিয়েট বড় ভাইটা আপাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আমরা ওয়ার্ডের শেষ মাথায় এসে দেখলাম, সবার বড় ভাই বাবার মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। ডাক্তার বাবার মুখটাও ঢেকে দিয়েছেন একটা চাঁদর দিয়ে। তার পর থেকে আমার বাবাকে ঘিরে জমেথাকা বাস্তবগুলো অতীত হওয়া শুরু করলো। আজ তাঁর মৃত্যুর এক দশক পর এসে মনে হচ্ছে, নানা দিক থেকে সফল হওয়ার চেষ্টা করা একটা ব্যার্থ মানুষ আমার বাবা। আর আমি কি আপনার সেই সন্তান? যে কিনা এখনো সফল হওয়ার স্বপ্নই দেখে যাচ্ছি কেবল?

আমিই আমার বাবার আয়না

at মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৭, ২০১২  |  2 comments

২৭ নভেম্বর আমার আব্বার মৃত্যুদিন। ২০০২ সালের এই দিনে আমি আমার আব্বাকে হারিয়েছিলাম। সেই সময়কার আমি আর এই সময়কার আমি’র মাঝে আমি নিজেই অনেক পার্থক্য দেখতে পাই। দেখতে পাই, আব্বার সাথে আমার অনেক মিল, অমিল। অমিলগুলোর জন্য নিজেকে এর মালিক মনে করি। মিলগুলোর জন্য মনে করি আমার জিন কে। যা আমার আব্বা-আম্মারকাছ থেকে আমি পেয়েছে। আর এই দিকটায় পরিবারের আমার অন্য সব ভাইদের চেয়ে মনে হয় আমার বাবার সাথে আমার মিল একটু বেশী। এটা হয়তো আমি নির্মোহভাবে দেখতে পারি না। নিজেকে যতটুকু জানি বলে মনে করি, ততটুকু দিয়েই। আর তাই ভুল হবার সম্ভাবনাও থাকে।
আমার বাবাকে আমি বা আমরা কখনোই একজন স্নেহাশিষ পিতা হিসেবে পাই নি। যা আমি আমার চারপাশে দেখে এসেছি। আর তাই সেই ছোটবেলা থেকেই আব্বার প্রতি একটা বিতৃষ্ণা আমার ছিলো। আমি তাকে একটা এলোমেলো বদমেজাজি মানুষ হিসেবেই চিনে এসেছি। তবে হ্যা, এই লোকটির সংগ্রামের কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। তিনি কখনোই স্বচ্ছল থাকতে পারেন নি। সারা জীবন কাটিয়েছেন টানাপোড়েনের মধ্যে। দেখে এসেছি তার অসম্ভব পরিশ্রম করার জীবনকে। তবে আমি যা দেখেছি, তা নাকি খুবই সামান্য। তবুও তিনি আমার দেখা জীবনের মাঝে কিছুটা রয়েছেন। এই ভেবে আনন্দিতও হই।
আমার আব্বা আমাদের পূর্বজ পরিবারের প্রথম পড়ালেখা জানা (মেট্রিক পাশ) মানুষ ছিলেন। তার বাবা, মানে আমার দাদা ছিলেন আমাদের কাছে বিপ্লবী। তবে সেই বিপ্লবী মানষিকতা আমার কাছে কাপুরুষোচিত বলে মনে হয় এখন। আব্বার মুখেই তার কথা শুনেছি বেশী। কিছু শুনেছি আম্মার কাছে, কিছু নানী আর ফুপুর কাছে। আমার আব্বাকে আমি কাউকে ভয় পেতে দেখি নাই। কেবল তার বড় বোন, আমাদের একমাত্র ফুপুকে ছাড়া। ফুপুর চেয়ে দশ বছর কম ছিলো আমার আব্বার। কিন্তু আব্বাই আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ফুপু অনেক বয়সে দীর্ঘ রোগে ভোগে তারপর পৃথিবী ছেরেছিলেন। কোনও এক আশ্চর্য কারণে আমার ফুপু আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি আমাদের সব ভাই বোনদের কে বা’জি আর মায়া’জি বলে ডাকতেন। কিন্তু আমাকে ডাকতেন বাজান বলে। আমাকে কাছে পেলে তার ভালোবাসা প্রকাশের মাত্রাও বেড়ে যেতো। আমি তার সেই ভালোবাসা এখন বুঝি, তখন বুঝতাম না। পরবর্তিতে মায়ের কাছে শুনেছি, আমার বাবাও ছিলেন তার অন্য ভাইদের চেয়ে বেশী আপন। আমি সেই সূত্রে হিসাব মেলাই, আমার মাঝে কি তিনি তার ছোটভাইটাকে দেখেছিলেন? হয়তো, হয়তো না। তার মুখ আমার কাছে অস্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তিনি মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখনকার মত ছবি তোলা এত হাতের নাগালে ছিলো না, তবে সুযোগ যে ছিলো না তা কিন্তু নয়। আমি তবুও ছবির চেয়ে আমার স্মৃতির ফুপুকেই মনে করতে পছন্দ করি। তিনি থাকুক আমার হৃদয়ের এ্যালবামে।
২০০২ সালে আমি ইন্টারমিডিয়েটে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আব্বা চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন ততদিনে অনেক দিন। অনেক দিন বলতে ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অবসর নেন। তার পর থেকে অফিস পাগল একটা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারির দিন কাটতো না। নানা ধরনের কাজে তিনি ব্যস্ত থাকতে চেষ্টা করতেন। এই অবসর আমাদের জন্য যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। কারণ, আমরা তার প্রচণ্ড বদমেজাজী মানুষটাকে সব সময় সামনে প্রত্যাশা করতাম না। কিন্তু এই মানুষটা বদ মেজাজী হলেও ভেতরটা ছিলো একদম স্বচ্ছ। কোনও রাখঢাক তিনি মনের ভেতর পুষে রাখতেন না। এই সভ্য সমাজে মানুষ যেভাবে ক্ষোভ বিতৃষ্ণা পুষে রেখে প্রতিষোধ পরায়ন হয়ে ওঠে, তিনি তেমন কখনই ছিলেন না। তার সরলতার জন্য তাকে আমাদের সব প্রতিবেশীই একটা ভালো মানুষ বলে জানতেন।
এই ভালো মানুষটা স্থুল অর্থে জীবনে কিছু করতে পারেন নি। করতে পারেন নি এ কথাও বলা যায় না। কারণ, আমি যখন জানতে পারি, তখন তার সমগ্র বেতন মাত্র ১০ হাজার টাকা মাত্র। এটাও বেশদিন আগের ঘটনা নয়, ১৯৯৬/৯৭ সালের ঘটনা। এ সময় আমরা ৬ ভাইয়ের মাত্র একজন রোজগার করতে পারে। একজন পৃথক থাকায় তার রোজগার আমাদের পরিবারের সাথে যোগ হয় না, বাকী চারজনই পড়াশোনা করি। এই সংসারটাকে তিনি টেনে ধরে রাখতে পেরেছিলেন। তা কি কম কিছু? এখন টের পাই, এও অনেক কিছু। যা একটা উল্লেখযোগ্য দিক বলে ভাবতে পারি আমি।
আব্বা বরাবরই আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হলেও তার কর্মদক্ষতার কারণে তিনি তার ডিপার্টম্যান্টের সব শ্রেণীর মানুষের কাছে সমীহ জাগানো ব্যক্তি ছিলেন। তার সম পর্যায়ের অবস্থান থেকে আমাদের চোখের সামনেই আমরা দেখেছি বাড়ি গাড়ি করে ফেলতে। আর আমার বাবাকে দেখেছি বাজারে ২ টাকা বাঁচানোর জন্য পুরো বাজার ঘুরে, দামাদামি করে তারপর কিনতে।
এই লোকটার অতীতের কথা ভাবলে আমি আরও আশ্চর্য হই। এই লোকটাই আদমজি জুট মিলের ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলো এক সময়। পুরো জুট মিল তার ভয়ে কাঁপতো। সেখানেও তার সম সাময়িকদের দুর্নীতি থেকে প্রতিষ্ঠান ও নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে যে সংগ্রাম করেছিলেন তিনি, তার কথা বলার সময় তার গলা ভারি হয়ে আসতো। আর তার চোখ ভিজে আসতো। আশ্চর্যের বিষয়, এসব আমরা টেরই পাইনি তখন। এখন টের পাই।
আব্বার স্মৃতিগুলো, চারিত্রিক ধর্মগুলো বর্ণনা করি। আর ভাবি, আমার এই অবস্থায় থাকলে তিনি কি করতেন? তিনি কি ভাবতেন? পারিনা। তার মতো করে ভাবতে পারি না। আমি আমার মতোই ভাবি। কারণ, আমি যে দলছুট হয়ে গেছি আরও অনেক আগেই। আমি যে বুঝতে শিখেছি আমার মতো করে চলে না আমার ছেলেবেলার বন্ধুরাই। তবে নিজেকে কখনোই দশজনের বাইরের ভাবিনি, ভেবেছি দশজনের সবার শেষের জন।
তাঁর মৃত্যুর একদিন আগে সন্ধ্যায় ইফতার করতে বসে হঠাৎ ইফতার করতে করতে উঠে গেলেন। বমি হলো তার। মাথায় প্রচুর পানি ঢালা হলো, কিন্তু প্রেসার বেরে যাওয়ায় কিছুতেই কিছু হচ্ছিলো না। ডাক্তার ডাকা হলো, ডাক্তার ওষুধ দিলো, সেলাইন দিলো, শরীরের অবস্থা খারাপও না ভালোও না বুঝতেই পারছিলাম না। একদিন বাড়িতেই চিকিৎসা চললো, পরদিন সন্ধ্যার আগে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে দেখাগেলো শরীরের একটা দিক তার অবশ হয়ে গেছে। মেজর স্ট্রোক। বাবার গোড়ামি আর আমাদের অজ্ঞতা ও ডাক্তারের ভুল সিদ্ধান্ত। সব মিলে আমরা একটা প্যারালাইজড বাবাকে ঘরে পরে থাকতে দেখবো এমন মানষিক প্রস্তুতি তখন আমার। এই অবস্থায় জরুরী ময়মনসিংহ মেডিকেলে নেওয়া হলো তাকে। আমার তখন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলে। সকালে সেহরি খেয়ে আমার বোনের বাড়ি গিয়ে খবর দিয়ে এলাম। বোন ও দুলাভাইকে বললাম- আব্বা খুব অসুস্থ্য, ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। পারলে একবার গিয়ে দেখে আসবেন। তাদের জানিয়ে আমি পরীক্ষায় বসে যাই। আমার এই বোনটি আমার একমাত্র বোন। আমার জন্মের পর থেকে আমার মা আমার জন্য যা করেছে, সে করেছে তার চেয়েও বেশী। এতে অবশ্য আমি মাকে দোষ দেই না। কারণ, এমন কিছুত হয়ই। সেই বোনটা বাবার খুব আদরের। আমাদের ছয় ভাই ও আম্মার কথা না শুনলেও বাবা আমার বোনটির কথা শুনতেন। হয়তো একমাত্র বলেই। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে দেখি বোন বাসায় বসে আছে। আর দেরি করা হলো না। তাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয়া হলো। বাসে উঠেই মনে হচ্ছিলো গতকাল সন্ধ্যায় যে বাবাকে আমি প্রাণসহ দেখেছি, ঐ জ্যান্ত বাবাকে হয়তো আমি আর পাবো না। হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকতেই পেলাম সেজো ভাইকে তার এক বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখমুখ লাল। মনে হচ্ছে রক্ত জমে আছে। আর একটু ভেতরে ঢুকতেই হাসপাতালে ফোন ফ্যাক্সের একটা দোকানে দেখলাম মেজোভাই কে। আমি আরও সুদৃঢ় হয়ে গেলাম, আমি যা ভাবছি তাই হতে যাচ্ছে। হাসাপাতালের ছয় তলার সিড়িগুলোকে আমার বড় দীর্ঘপথ বলে মনে হচ্ছিলো। বলতে গেলে এক দৌড়েই চললাম পেয়িং ওয়ার্ডটায়। ওয়ার্ডে ঢুকতেই আর আমার ইমিডিয়েট বড় ভাইটা আপাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আমরা ওয়ার্ডের শেষ মাথায় এসে দেখলাম, সবার বড় ভাই বাবার মাথাটা কোলে নিয়ে বসে আছে। ডাক্তার বাবার মুখটাও ঢেকে দিয়েছেন একটা চাঁদর দিয়ে। তার পর থেকে আমার বাবাকে ঘিরে জমেথাকা বাস্তবগুলো অতীত হওয়া শুরু করলো। আজ তাঁর মৃত্যুর এক দশক পর এসে মনে হচ্ছে, নানা দিক থেকে সফল হওয়ার চেষ্টা করা একটা ব্যার্থ মানুষ আমার বাবা। আর আমি কি আপনার সেই সন্তান? যে কিনা এখনো সফল হওয়ার স্বপ্নই দেখে যাচ্ছি কেবল?

Read More

2 মন্তব্য(গুলি):

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১২

রোজকার কিচেনে নীল আলোর গাছ জন্মায়
আজও কি আকাশের চরিত্র আগের মতই
ধমকি ধামকি দিয়ে প্রেমের গান শোনায়?

সবুজের কাছে একটা চিঠি এসেছে,
প্রাপকের স্থলে লিখা আছে ময়ূরীর নাম
আমরা যেদিন চিড়িয়াখানা দেখতে যাবো সদলবলে
ঐ দিন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ছিলো সেটা

রোজকার এ্যালবামে কোন নীল আলোর গাছ জন্মালে
প্রত্যেকে প্রতিদিন তার নাম রাখার জন্য উতলা হয়ে ওঠে
অথচ তার নাম ছিলো অনামিকা-
এবার আকাশের জন্মদিনে আমরা ঠিক করেছি

কবিতা পাঠের আসর বসাবো

নীল আলোর জন্মদিন

at সোমবার, অক্টোবর ০১, ২০১২  |  No comments

রোজকার কিচেনে নীল আলোর গাছ জন্মায়
আজও কি আকাশের চরিত্র আগের মতই
ধমকি ধামকি দিয়ে প্রেমের গান শোনায়?

সবুজের কাছে একটা চিঠি এসেছে,
প্রাপকের স্থলে লিখা আছে ময়ূরীর নাম
আমরা যেদিন চিড়িয়াখানা দেখতে যাবো সদলবলে
ঐ দিন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র ছিলো সেটা

রোজকার এ্যালবামে কোন নীল আলোর গাছ জন্মালে
প্রত্যেকে প্রতিদিন তার নাম রাখার জন্য উতলা হয়ে ওঠে
অথচ তার নাম ছিলো অনামিকা-
এবার আকাশের জন্মদিনে আমরা ঠিক করেছি

কবিতা পাঠের আসর বসাবো

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

অফিস থেইক্যা বাসায় ফেরাটা দুইন্যার ঝামেলা। এই রুটে কোনও কাউন্টার সার্ভিস বাসও নাই। আচানক কথা। শহরের বেবাক রুটে আছে, এই রুটে নাই। অথচ কারও কোনও মাথা ব্যাথা নাই। আরে, মাথা থাকলে না ব্যাথা থাকবো। ১৫ মিনিটের বাসের পথ, গাড়িত উঠতেই লাগে দেড় ঘন্টা। মন চায় ঢাকা ছাইড়া পলাই। আর শালার যামু কই, ঢাকার বাইরে গেলে তো চাকরিও পামু না। পুরা সিস্টেমটাই ঢাকামুখী। আচুদা একটা সিস্টেম বানাইয়া রাখছে মান্দার পোতেরা। হেগোরে গালি দেয়া মানে নিজেরেই গালি দেয়া। পাঁচ বছর পরে পরে তাগোরে ভোট তো আমরাই দেই।
একটানা ক্ষোভের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো এক মহিলা। আমি তার পরে একই বাসে কোনওভাবে উঠে একটা দাঁড়ানোর যায়গা করে নিতে পারছি। তবে আমারও বাসে উঠতে আধাঘন্টার বেশী সময় লাগছে। যা অবস্থা রাস্তার। আর বৃহস্পতিবার তো মনে হয় সব চাকরিজীবী একবারে বাসায় যাইতে চায়। এই অবস্থায় আজকে যে আধা ঘন্টায় বাসে উঠতে পারছি, এ আমার সৌভাগ্য। মহিলার ঘ্যানর ঘ্যানর বিরক্ত লাগলেও কিছু বলার নাই। একটা কথা বলতে গেলেই আবার না কয়টা শুরু করে। আমি তাই চুপ করে আছি। সামনের বাস স্টপেজে মহিলা পেছনের ঐ মহিলা নেমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই স্টপেজ থেকে আরও এক গাদা লোক হুরমুর করে বাসে উঠে গেলো। সবারই বাড়ি যাওয়ার তারা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার যদি এই বাড়ি যাওয়ার তারা যাওয়ার তারা না থাকতো তবে কতই না ভালো হতো। অফিস থেকে বেড় হতে লেকের ধার ধরে কিছুক্ষণ একা একা হাটা যেতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে চা ওয়ালার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যেতো। পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করা যেতো, বাড়িতে কে কে আছে? সে তার বাড়ির বাকি সবার কথা বলতো, খুটিয়ে খুটিয়ে তার সাথে গল্প করা যেতো। যখন ইচ্ছা তখন বাড়ি ফেরা যেতো। কিন্তু না, তা তো সম্ভব না। এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্ম নিছো, তোমার এমন ভাবা অন্যায়। তাই তো, অন্যায়ই তো। আমার তো আর অন্যায় করা চলে না, মেয়ে হয়ে জন্মাইছি। প্রতিবন্ধকতা তো আমাদের চিরজনমের বন্ধু। তাই এগুলোকে বুকে বেধেই চলতে হচ্ছে। কিন্তু একি, আমার ইন্দ্রিয় কি ঠিক ঠিক সংকেত দিচ্ছে? যদি ঠিক ঠিক সংকেত পেয়ে থাকি, তবে আমার কি করা উচিত? আমি কি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবো, নাকি চুপচাপ মেনে নিবো? আমি যদি এখন বিষয়টা সবার সামনে বলতে যাই, কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াবে না, সবাই বলবে বাসে তো এমন একটু আধটু হয়েই থাকে। ভাবতেই আমার গা ঘেন্না ধরে এলো। সত্যি সত্যি কেউ একজন কি তবে আমার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে? নিরুপায় হয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, মনে হলো হঠাৎ একটা মুখ আমার পেছন ফেরা দেখেই তার দৃষ্টিটা মুহূর্তেই অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। বুঝতে বাকি থাকলো না ঘটনাটা। আমি তার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। কারণ আমি জানি, সে একবার হলেও এদিকে আমার অবস্থা দেখার জন্য মুখ ফেরাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তাই করলো সে। আমি শুধু ইতরটার চোখের দিকে তাকালাম, এক মুহূর্তের বেশী সময় সে তার চোখ আমার চোখে রাখতে পারলো না। সরিয়ে নিলো, আমার আর কিছু করতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই আমার গন্তব্য চলে আসায় আমি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে হচ্ছিলো ফুলসেরাত পার হচ্ছিলাম। এখন পৃথিবীতে। এইতো, পায়ের নিচে মাটি দেখতে পাচ্ছি। ভাবতেই মন কিছুটা ফুরফুরে হয়ে এলো। রাস্তা ক্রস করে বাড়ির জন্য রিকশা ঠিক করে উঠে পরলাম। রিকশা চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসে মনে হচ্ছিলো আমি পাখি হয়ে যাই।
রাত হয়ে গেছে বলা যায়। প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হুট করে সন্ধ্যাটা নেমে আসে। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গ সঙ্গে রাতও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সব নিরব হয়ে যায়। আমাদের বাড়ির এলাকা রাত আটটা বাজতেই নিরব হয়ে যায়। অথচ এইটাও ঢাকা শহর। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। বাসার কাছে দেখলাম ছোট ভাইটা হন্তদন্তের মতো কোথায় যেনো ছুটছে। আমি ডাকলাম, কই যাস? আমাকে দেখে সে মনে হয় একটু থতমত খেলো। বললো, না সামনেই। তুমি যাও আমি আইতাছি। আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়া ছোটভাই। দেখে মনে হয় খুব একটা সেয়ানা না। কিন্তু সে আসলে প্রচুর সেয়ানা। নিজেরটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তবে এমন ভাব করবে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। এই ধরনের পুরুষদের নাকি উন্নতি হয়। মা-খালারা বলে। মনে মনে বলি, সবারই উন্নতি হয়- শালার আমারই হয় না।
রিকশা বিদায় করে বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরে এত ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো। ভাবতে গেলেও আশ্চর্য হই। ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দেই বিছানায়। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির সাথে নরমাল পানি মিক্স করে মা গ্লাসে করে নিয়ে আসেন। একগ্লাস পানিকে তেমন কিছুই মনে হয় না। নিমিষেই শেষ করি। গ্লাস নিয়ে ফেরার পথে বলতে থাকেন, গোসলটা করে নে। আরাম পাবি। আর আরাম। কিছু ক্লান্তি মুছবে আর কি। আবার আগামীকালের জন্য এনার্জি সঞ্চয় করা ছাড়া কিছু নাই। কিন্তু তারপরও তাই করতে হবে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। বাসায় রাখা দৈনিক পত্রিকাটায় নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু প্রত্যাশিত নতুন কোনও চাকরি নাই। এই চাকরিটা করতে আর ভাল্লাগছে না। কিন্তু বদলাবার সুযোগ পর্যন্ত পাইতেছি না। কি যে করি।

গোসলটা না করলে মনে হয় শান্তি আসবে না। স্নানঘরটাকে আমার খুব আপন মনে হয়। মনে হয় আমার একবার একটা স্নানঘর প্রয়োজন। যেখানে আমার মনের মতো অনেক কিছুই থাকবে। একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকবে স্নানঘরে। বাথটাব তো অবশ্যই। বাথটাবে ঠান্ডা, গরম উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা। আরও ভালো হয় যদি সেখানে মিউজিকের ব্যবস্থা করা যায়। কোমল শব্দে ইন্সট্রুমেন্টাল বাজতে থাকবে আর বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে শুয়ে থাকব। ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গেলে জমিদার হৈতে হৈতো এক সময়। এখন ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী হৈলেই হয়। বাংলাদেশে তো মেয়েরা আর এত বড় কিছু করতে পারে না। এখন পর্যন্ত যেহেতু পারে নাই তাই জামাই থাকতে হয় ঐ রকম। আমার বেলায় তার কোনওটারই সম্ভাবনা নাই। তাই এই স্বপ্ন বাদ। কমন বাথরুমই ভরসা। যদিও সেই বিশাল আয়োজন নাই তবুও গোসলের সময় আমার অনন্তত একটা আয়োজন থাকেই। সারা দিনের গ্লানি আর ক্লান্তি মুছে নেওয়ার চেষ্টাও তাতে জড়িয়ে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করি উন্মুক্ত শরীরে। রোজকার মতো একই নিয়মে আজও আমার গা-ধোওয়া পর্ব শুরু হলো। শাওয়ার থেকে তীব্র বেগে শরীরে পানির বৃষ্টি পড়ছে। মনে হচ্ছে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে চামড়ার কদর্যতা। আহ, এইভাবে ভিজতে থাকলে যদি মনেরও কদর্যতা ধূয়ে খুয়ে চলে যেতো! কিন্তু যাবে না। তারপরও মনে হচ্ছে কিছু একটা ধুয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। এতক্ষণ চোখবন্ধই ছিলো। এ সময় বন্ধই থাকে। হঠাৎই চোখ খুললাম আমি। আর চোখদুটোও গেলো চট করে ভেন্টিলেটারের মত জানালাটার দিকে। আমার চোখ দুটোকেই আমি বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। সত্যিই কি ওখানে মানুষের দুটো চোখ? নাকি আমার কল্পনা? না, সত্যিই সেখানে এক জোড়া চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে গেলার চেষ্টা করছে। আমি আর কিছুই ভাবতে পারিনি। আমার আর কোনও কিছুই স্মরণেও ছিলো না। পরে জানতে পারি ঐ মুহূর্তেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি যখন নিজেকে সজ্ঞান হিসেবে আবিষ্কার করলাম, তখন আমি আমার বিছানায় ঘুমিয়ে। এই সময়কার মাঝখানের ঘটনা পরে আমি আম্মুর কাছ থেকে জেনেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার পর আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কেন আমি স্নানঘরে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সত্যি বলছি আমার কোনও কিছুই মনে ছিলো না। পরদিন সকাল থেকেই আমি আবার অফিস বাসা মিলে সেই চক্রাকারের জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার মা আমাকে বারবার ঐ দিনের ঘটনা জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু আমি কোনও উত্তর দিতে পারছিলাম না। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছিলাম। আমি কি জন্যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম তা মনে করার চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু সত্যিই ঐ দিনের ঘটনা আমি আর মনে করতে পারি নি। কিন্তু একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছিলাম স্নানঘরটা এর পর থেকে আমার কাছে আর আগের মতো এত আপন ছিলো না। কিছুটা অশ্বস্তিকর এবং শুধু প্রয়োজনেরই অংশ বলে মনে হতো আমার কাছে। আমি আর সেখানে নিজেকে উন্মোচিত করতাম না। কোথায় যেনো বাধা মনে হতো। কিন্তু সেই বাধার রহস্য আমি উন্মোচন করতে পারছিলাম না কোনও মতেই।
তারপর থেকে আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলাম। সকালে ওঠেই অফিস যাওয়ার তারা, মার সাথে নাস্তা তৈরিতে রান্না ঘরে হাত লাগানো। ছোটভাইটার ভার্সিটি যাওয়ার তারা। অফিসে যাওয়ার বাসের জন্য তারা। এইসবই চলছিলো। এর মাঝে একদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেই আম্মু হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে তো চক্ষু ছানাভড়া। বলে কি? এত ভালো চাকরি? তাও আবার সামনের মাস থেকেই জয়েনিং। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আনন্দে আটখানা হয়ে আম্মুকে একটা চুমু দিয়ে বসলাম। আম্মু শুধু মুচকি মুচকি হাসি দিলো। কারণ, আম্মু খামটা চুপিচুপি খুলে আগেই পড়ে নিয়েছে। তাই সে জানতোই ঘটনা।
ঐদিন আমি আসলে এত্ত বেশী এক্সাইটেট ছিলাম যে, নিজে এর পরিমাপ করতে পারছিলাম না। ঐ দিন আবার ঐ ঘটনাটা ঘটলো। দ্বিতীয় বারের মতো। স্নানঘরে আমি নিজেকে উন্মোচিত করেই স্নান শুরু করেছিলাম। এবং আচমকা সেই জোড়া চোখ। স্নানঘরের জানালায়। এবার আমি কিন্তু জ্ঞান হারাই নি। এবার চিৎকারও করি নি বা করতে পারিও নি। তবে আমি প্রচণ্ড শকড হয়েছিলাম। আমার রুটিন গোসল তখনও শেষ হয় নি। কিন্তু ওখানটাতে আমার দম বন্ধ হয়ে পড়ছিলো। আমি তৎক্ষণাৎ বেড় হয়ে আসি। বাইরে বের হওয়ার পর আমার শরীর আর কাজ করছিলো না। আমি শুয়ে পড়ি। সেদিন রাতেই আমার কিছুটা জ্বর এসেছিলো। ঠিক কিছুটা না, বেশ জ্বর। প্রচণ্ড গরমেও আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। কাঁথার উত্তাপ যখন গায়ে এসে লাগতে শুরু করলো, তখন সেই চোখদুটো কাঁথার ভেতর নিজেকে গেথে দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। বুঝতে পারলাম আমি একটি চিৎকার দিয়েছি। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মা ছুটে এলো। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেলাম, চোখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি চোখগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। চোখগুলো হারিয়ে গেলেও মনে হচ্ছিলো চোখগুলো আমাকে খুঁজছে বা আমি চোখগুলোকে খুঁজছি। আমি ঠিকমত কোনও কিছুতেই নিজেকে সুস্থীর করতে পারছিলাম না। ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না কি করা যায়। কোনওভাবে রাতটা আমার কেটে গেলো ঠিক। সকালে ওঠে আবার অফিসে যেতে হবে। তৈরি হওয়ার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথা গুলাতে লাগলো। মনে হতে লাগলো, দেয়ালের প্রতিটি টাইলস একজোড়া চোখ হয়ে আমাকে গিলতে চেষ্টা করছে। আর আমি প্রত্যেকজোড়া চোখ কে ধরে ধরে থেতলে দিতে চাইছি। ভেতরে আমার কি অবস্থা ছিলো তার বর্ণনা আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। আর কিছু আমার বোধে ছিলো না তখন। কিন্তু হঠাৎ আবিষ্কার করলাম স্নানঘরের দরজায় প্রচণ্ড শব্দে কেউ একজন ডাকছে। সঙ্গে মায়ের গলা শুনে দরজা খুলে দিতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকলো, কি হয়েছে মা? কি হয়েছে? কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু ঐ দেয়ালগুলোর দিকে তাকাতেই মনে হতে থাকতো আমাকে গিলে ফেলতে চাইছে একজোড়া, চোখ। একজোড়া চোখ বাড়তে বাড়তে তখন দেয়াল জোড়ে বহুজোড়া হতে লাগলো। স্নানঘর থেকে মা ধরে ধরে নিয়ে এলো আমাকে। আমার সাথে সাথে স্নানঘর থেকে চোখগুলো যেনো ফ্ল্যাটময় ছড়াতে শুরু করলো। ফ্ল্যাট থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শহর ও পৃথিবী। মনে হচ্ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত চোখগুলো আমাকে না গিলে ফেলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই। তাই আমার চারপাশে চোখজোড়া বাড়তেই থাকলো কেবল।

একজোড়া চোখ

at সোমবার, অক্টোবর ০১, ২০১২  |  No comments

অফিস থেইক্যা বাসায় ফেরাটা দুইন্যার ঝামেলা। এই রুটে কোনও কাউন্টার সার্ভিস বাসও নাই। আচানক কথা। শহরের বেবাক রুটে আছে, এই রুটে নাই। অথচ কারও কোনও মাথা ব্যাথা নাই। আরে, মাথা থাকলে না ব্যাথা থাকবো। ১৫ মিনিটের বাসের পথ, গাড়িত উঠতেই লাগে দেড় ঘন্টা। মন চায় ঢাকা ছাইড়া পলাই। আর শালার যামু কই, ঢাকার বাইরে গেলে তো চাকরিও পামু না। পুরা সিস্টেমটাই ঢাকামুখী। আচুদা একটা সিস্টেম বানাইয়া রাখছে মান্দার পোতেরা। হেগোরে গালি দেয়া মানে নিজেরেই গালি দেয়া। পাঁচ বছর পরে পরে তাগোরে ভোট তো আমরাই দেই।
একটানা ক্ষোভের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলো এক মহিলা। আমি তার পরে একই বাসে কোনওভাবে উঠে একটা দাঁড়ানোর যায়গা করে নিতে পারছি। তবে আমারও বাসে উঠতে আধাঘন্টার বেশী সময় লাগছে। যা অবস্থা রাস্তার। আর বৃহস্পতিবার তো মনে হয় সব চাকরিজীবী একবারে বাসায় যাইতে চায়। এই অবস্থায় আজকে যে আধা ঘন্টায় বাসে উঠতে পারছি, এ আমার সৌভাগ্য। মহিলার ঘ্যানর ঘ্যানর বিরক্ত লাগলেও কিছু বলার নাই। একটা কথা বলতে গেলেই আবার না কয়টা শুরু করে। আমি তাই চুপ করে আছি। সামনের বাস স্টপেজে মহিলা পেছনের ঐ মহিলা নেমে যাওয়ায় একটু স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই স্টপেজ থেকে আরও এক গাদা লোক হুরমুর করে বাসে উঠে গেলো। সবারই বাড়ি যাওয়ার তারা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার যদি এই বাড়ি যাওয়ার তারা যাওয়ার তারা না থাকতো তবে কতই না ভালো হতো। অফিস থেকে বেড় হতে লেকের ধার ধরে কিছুক্ষণ একা একা হাটা যেতো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে ফুটপাতের চায়ের দোকানে বসে চা আর টোস্ট বিস্কুট খেয়ে চা ওয়ালার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করা যেতো। পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করা যেতো, বাড়িতে কে কে আছে? সে তার বাড়ির বাকি সবার কথা বলতো, খুটিয়ে খুটিয়ে তার সাথে গল্প করা যেতো। যখন ইচ্ছা তখন বাড়ি ফেরা যেতো। কিন্তু না, তা তো সম্ভব না। এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্ম নিছো, তোমার এমন ভাবা অন্যায়। তাই তো, অন্যায়ই তো। আমার তো আর অন্যায় করা চলে না, মেয়ে হয়ে জন্মাইছি। প্রতিবন্ধকতা তো আমাদের চিরজনমের বন্ধু। তাই এগুলোকে বুকে বেধেই চলতে হচ্ছে। কিন্তু একি, আমার ইন্দ্রিয় কি ঠিক ঠিক সংকেত দিচ্ছে? যদি ঠিক ঠিক সংকেত পেয়ে থাকি, তবে আমার কি করা উচিত? আমি কি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবো, নাকি চুপচাপ মেনে নিবো? আমি যদি এখন বিষয়টা সবার সামনে বলতে যাই, কেউ আমার পক্ষে দাঁড়াবে না, সবাই বলবে বাসে তো এমন একটু আধটু হয়েই থাকে। ভাবতেই আমার গা ঘেন্না ধরে এলো। সত্যি সত্যি কেউ একজন কি তবে আমার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করছে? নিরুপায় হয়ে পেছন ফিরে তাকানোর চেষ্টা করলাম, মনে হলো হঠাৎ একটা মুখ আমার পেছন ফেরা দেখেই তার দৃষ্টিটা মুহূর্তেই অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। বুঝতে বাকি থাকলো না ঘটনাটা। আমি তার মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম। কারণ আমি জানি, সে একবার হলেও এদিকে আমার অবস্থা দেখার জন্য মুখ ফেরাবে। কিছুক্ষণের মধ্যে তাই করলো সে। আমি শুধু ইতরটার চোখের দিকে তাকালাম, এক মুহূর্তের বেশী সময় সে তার চোখ আমার চোখে রাখতে পারলো না। সরিয়ে নিলো, আমার আর কিছু করতে হবে না। অল্প সময়ের মধ্যেই আমার গন্তব্য চলে আসায় আমি কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মনে হচ্ছিলো ফুলসেরাত পার হচ্ছিলাম। এখন পৃথিবীতে। এইতো, পায়ের নিচে মাটি দেখতে পাচ্ছি। ভাবতেই মন কিছুটা ফুরফুরে হয়ে এলো। রাস্তা ক্রস করে বাড়ির জন্য রিকশা ঠিক করে উঠে পরলাম। রিকশা চলতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বাতাসে মনে হচ্ছিলো আমি পাখি হয়ে যাই।
রাত হয়ে গেছে বলা যায়। প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হুট করে সন্ধ্যাটা নেমে আসে। সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গ সঙ্গে রাতও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে সব নিরব হয়ে যায়। আমাদের বাড়ির এলাকা রাত আটটা বাজতেই নিরব হয়ে যায়। অথচ এইটাও ঢাকা শহর। ভাবতেই আশ্চর্য লাগে। বাসার কাছে দেখলাম ছোট ভাইটা হন্তদন্তের মতো কোথায় যেনো ছুটছে। আমি ডাকলাম, কই যাস? আমাকে দেখে সে মনে হয় একটু থতমত খেলো। বললো, না সামনেই। তুমি যাও আমি আইতাছি। আমার ইন্টারমিডিয়েট পড়া ছোটভাই। দেখে মনে হয় খুব একটা সেয়ানা না। কিন্তু সে আসলে প্রচুর সেয়ানা। নিজেরটা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। তবে এমন ভাব করবে যেন ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা। এই ধরনের পুরুষদের নাকি উন্নতি হয়। মা-খালারা বলে। মনে মনে বলি, সবারই উন্নতি হয়- শালার আমারই হয় না।
রিকশা বিদায় করে বাসায় ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরে এত ক্লান্ত লাগতে শুরু করলো। ভাবতে গেলেও আশ্চর্য হই। ঘরে ঢুকেই ক্লান্ত শরীর ছেড়ে দেই বিছানায়। ফ্রিজের ঠান্ডা পানির সাথে নরমাল পানি মিক্স করে মা গ্লাসে করে নিয়ে আসেন। একগ্লাস পানিকে তেমন কিছুই মনে হয় না। নিমিষেই শেষ করি। গ্লাস নিয়ে ফেরার পথে বলতে থাকেন, গোসলটা করে নে। আরাম পাবি। আর আরাম। কিছু ক্লান্তি মুছবে আর কি। আবার আগামীকালের জন্য এনার্জি সঞ্চয় করা ছাড়া কিছু নাই। কিন্তু তারপরও তাই করতে হবে। কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। বাসায় রাখা দৈনিক পত্রিকাটায় নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন খোঁজলাম কিছুক্ষণ। কিন্তু প্রত্যাশিত নতুন কোনও চাকরি নাই। এই চাকরিটা করতে আর ভাল্লাগছে না। কিন্তু বদলাবার সুযোগ পর্যন্ত পাইতেছি না। কি যে করি।

গোসলটা না করলে মনে হয় শান্তি আসবে না। স্নানঘরটাকে আমার খুব আপন মনে হয়। মনে হয় আমার একবার একটা স্নানঘর প্রয়োজন। যেখানে আমার মনের মতো অনেক কিছুই থাকবে। একটা ছোটখাটো লাইব্রেরি থাকবে স্নানঘরে। বাথটাব তো অবশ্যই। বাথটাবে ঠান্ডা, গরম উভয় প্রকার পানির ব্যবস্থা। আরও ভালো হয় যদি সেখানে মিউজিকের ব্যবস্থা করা যায়। কোমল শব্দে ইন্সট্রুমেন্টাল বাজতে থাকবে আর বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে শুয়ে থাকব। ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু এই ব্যবস্থা করতে গেলে জমিদার হৈতে হৈতো এক সময়। এখন ঋণখেলাপী ব্যবসায়ী হৈলেই হয়। বাংলাদেশে তো মেয়েরা আর এত বড় কিছু করতে পারে না। এখন পর্যন্ত যেহেতু পারে নাই তাই জামাই থাকতে হয় ঐ রকম। আমার বেলায় তার কোনওটারই সম্ভাবনা নাই। তাই এই স্বপ্ন বাদ। কমন বাথরুমই ভরসা। যদিও সেই বিশাল আয়োজন নাই তবুও গোসলের সময় আমার অনন্তত একটা আয়োজন থাকেই। সারা দিনের গ্লানি আর ক্লান্তি মুছে নেওয়ার চেষ্টাও তাতে জড়িয়ে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করি উন্মুক্ত শরীরে। রোজকার মতো একই নিয়মে আজও আমার গা-ধোওয়া পর্ব শুরু হলো। শাওয়ার থেকে তীব্র বেগে শরীরে পানির বৃষ্টি পড়ছে। মনে হচ্ছে ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে চামড়ার কদর্যতা। আহ, এইভাবে ভিজতে থাকলে যদি মনেরও কদর্যতা ধূয়ে খুয়ে চলে যেতো! কিন্তু যাবে না। তারপরও মনে হচ্ছে কিছু একটা ধুয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। এতক্ষণ চোখবন্ধই ছিলো। এ সময় বন্ধই থাকে। হঠাৎই চোখ খুললাম আমি। আর চোখদুটোও গেলো চট করে ভেন্টিলেটারের মত জানালাটার দিকে। আমার চোখ দুটোকেই আমি বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। সত্যিই কি ওখানে মানুষের দুটো চোখ? নাকি আমার কল্পনা? না, সত্যিই সেখানে এক জোড়া চোখ তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে গেলার চেষ্টা করছে। আমি আর কিছুই ভাবতে পারিনি। আমার আর কোনও কিছুই স্মরণেও ছিলো না। পরে জানতে পারি ঐ মুহূর্তেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি যখন নিজেকে সজ্ঞান হিসেবে আবিষ্কার করলাম, তখন আমি আমার বিছানায় ঘুমিয়ে। এই সময়কার মাঝখানের ঘটনা পরে আমি আম্মুর কাছ থেকে জেনেছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই ঘটনার পর আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কেন আমি স্নানঘরে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। সত্যি বলছি আমার কোনও কিছুই মনে ছিলো না। পরদিন সকাল থেকেই আমি আবার অফিস বাসা মিলে সেই চক্রাকারের জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার মা আমাকে বারবার ঐ দিনের ঘটনা জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু আমি কোনও উত্তর দিতে পারছিলাম না। আমি নিজেও আশ্চর্য হয়েছিলাম। আমি কি জন্যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম তা মনে করার চেষ্টা করেছি অনেক। কিন্তু সত্যিই ঐ দিনের ঘটনা আমি আর মনে করতে পারি নি। কিন্তু একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছিলাম স্নানঘরটা এর পর থেকে আমার কাছে আর আগের মতো এত আপন ছিলো না। কিছুটা অশ্বস্তিকর এবং শুধু প্রয়োজনেরই অংশ বলে মনে হতো আমার কাছে। আমি আর সেখানে নিজেকে উন্মোচিত করতাম না। কোথায় যেনো বাধা মনে হতো। কিন্তু সেই বাধার রহস্য আমি উন্মোচন করতে পারছিলাম না কোনও মতেই।
তারপর থেকে আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছিলাম। সকালে ওঠেই অফিস যাওয়ার তারা, মার সাথে নাস্তা তৈরিতে রান্না ঘরে হাত লাগানো। ছোটভাইটার ভার্সিটি যাওয়ার তারা। অফিসে যাওয়ার বাসের জন্য তারা। এইসবই চলছিলো। এর মাঝে একদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। এক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেই আম্মু হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিলেন। খাম খুলে তো চক্ষু ছানাভড়া। বলে কি? এত ভালো চাকরি? তাও আবার সামনের মাস থেকেই জয়েনিং। আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। আনন্দে আটখানা হয়ে আম্মুকে একটা চুমু দিয়ে বসলাম। আম্মু শুধু মুচকি মুচকি হাসি দিলো। কারণ, আম্মু খামটা চুপিচুপি খুলে আগেই পড়ে নিয়েছে। তাই সে জানতোই ঘটনা।
ঐদিন আমি আসলে এত্ত বেশী এক্সাইটেট ছিলাম যে, নিজে এর পরিমাপ করতে পারছিলাম না। ঐ দিন আবার ঐ ঘটনাটা ঘটলো। দ্বিতীয় বারের মতো। স্নানঘরে আমি নিজেকে উন্মোচিত করেই স্নান শুরু করেছিলাম। এবং আচমকা সেই জোড়া চোখ। স্নানঘরের জানালায়। এবার আমি কিন্তু জ্ঞান হারাই নি। এবার চিৎকারও করি নি বা করতে পারিও নি। তবে আমি প্রচণ্ড শকড হয়েছিলাম। আমার রুটিন গোসল তখনও শেষ হয় নি। কিন্তু ওখানটাতে আমার দম বন্ধ হয়ে পড়ছিলো। আমি তৎক্ষণাৎ বেড় হয়ে আসি। বাইরে বের হওয়ার পর আমার শরীর আর কাজ করছিলো না। আমি শুয়ে পড়ি। সেদিন রাতেই আমার কিছুটা জ্বর এসেছিলো। ঠিক কিছুটা না, বেশ জ্বর। প্রচণ্ড গরমেও আমি কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। কাঁথার উত্তাপ যখন গায়ে এসে লাগতে শুরু করলো, তখন সেই চোখদুটো কাঁথার ভেতর নিজেকে গেথে দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। বুঝতে পারলাম আমি একটি চিৎকার দিয়েছি। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে মা ছুটে এলো। কিন্তু আশ্চর্য হয়ে গেলাম, চোখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি চোখগুলোকে হারিয়ে ফেলেছি। চোখগুলো হারিয়ে গেলেও মনে হচ্ছিলো চোখগুলো আমাকে খুঁজছে বা আমি চোখগুলোকে খুঁজছি। আমি ঠিকমত কোনও কিছুতেই নিজেকে সুস্থীর করতে পারছিলাম না। ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না কি করা যায়। কোনওভাবে রাতটা আমার কেটে গেলো ঠিক। সকালে ওঠে আবার অফিসে যেতে হবে। তৈরি হওয়ার জন্য বাথরুমে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথা গুলাতে লাগলো। মনে হতে লাগলো, দেয়ালের প্রতিটি টাইলস একজোড়া চোখ হয়ে আমাকে গিলতে চেষ্টা করছে। আর আমি প্রত্যেকজোড়া চোখ কে ধরে ধরে থেতলে দিতে চাইছি। ভেতরে আমার কি অবস্থা ছিলো তার বর্ণনা আমি এর চেয়ে বেশি দিতে পারবো না। আর কিছু আমার বোধে ছিলো না তখন। কিন্তু হঠাৎ আবিষ্কার করলাম স্নানঘরের দরজায় প্রচণ্ড শব্দে কেউ একজন ডাকছে। সঙ্গে মায়ের গলা শুনে দরজা খুলে দিতেই মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকলো, কি হয়েছে মা? কি হয়েছে? কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধু ঐ দেয়ালগুলোর দিকে তাকাতেই মনে হতে থাকতো আমাকে গিলে ফেলতে চাইছে একজোড়া, চোখ। একজোড়া চোখ বাড়তে বাড়তে তখন দেয়াল জোড়ে বহুজোড়া হতে লাগলো। স্নানঘর থেকে মা ধরে ধরে নিয়ে এলো আমাকে। আমার সাথে সাথে স্নানঘর থেকে চোখগুলো যেনো ফ্ল্যাটময় ছড়াতে শুরু করলো। ফ্ল্যাট থেকে ধীরে ধীরে সমস্ত শহর ও পৃথিবী। মনে হচ্ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত চোখগুলো আমাকে না গিলে ফেলবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই। তাই আমার চারপাশে চোখজোড়া বাড়তেই থাকলো কেবল।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে

কবে মৃত্যুর পাহাড় বেয়ে চূড়ায় উঠবে রক্তিম জবা ফুল
তার শরীরে কি আজও বাতাসের গন্ধ মেখে বসে আছে
                রাতের কুসুম?
ঈশ্বরের বেগুনি ঠুঁটে চুমু খাওয়ার বদলে সে তাই বসে আছে
আর এক পৃথিবীর যৌন তৃষ্ণা মেটাতে

ছুটি পেলেই বাড়ি যাবে

ছুটি

at সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১২  |  No comments


কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে

কবে মৃত্যুর পাহাড় বেয়ে চূড়ায় উঠবে রক্তিম জবা ফুল
তার শরীরে কি আজও বাতাসের গন্ধ মেখে বসে আছে
                রাতের কুসুম?
ঈশ্বরের বেগুনি ঠুঁটে চুমু খাওয়ার বদলে সে তাই বসে আছে
আর এক পৃথিবীর যৌন তৃষ্ণা মেটাতে

ছুটি পেলেই বাড়ি যাবে

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

গতকাল থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি লাশের পুতুল; গতকাল তেমন কোনও দিন ছিলো না, একটু বৃষ্টি ছিলো কেবল। ছেলেবেলায় পুতুলের মৃত্যু হবে ভাবতে গিয়ে শত্রু হয়ে গিয়েছিলো সে, তবুও তার জানাছিলোনা সে ডাকলেই মরে যায় আমার বেলফুলের বাগান- দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়েছিলাম- জেগে দেখি আমার গায়ে মাছের স্বভাব জেগেছে; পাশ থেকে কে জানি বলে ওঠলো, শহরে নাকি মাছের আকাল? আমার গায়ে মাছের ভূমি- তোমার কাছে যদি জলাধার থাকে তবে একটু ধার দিও তো সাঁতার দিবো

সে তবু কথা বলে না, রাত হলেই চারিদিকে আঁধারের সাগর নেমে আসে, আমি ডুবলেও গা ভেজে না; তুমি কি আমার মুখ ভুলে গেছো?

মাছের জীবন

at সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১২  |  No comments

গতকাল থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি লাশের পুতুল; গতকাল তেমন কোনও দিন ছিলো না, একটু বৃষ্টি ছিলো কেবল। ছেলেবেলায় পুতুলের মৃত্যু হবে ভাবতে গিয়ে শত্রু হয়ে গিয়েছিলো সে, তবুও তার জানাছিলোনা সে ডাকলেই মরে যায় আমার বেলফুলের বাগান- দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়েছিলাম- জেগে দেখি আমার গায়ে মাছের স্বভাব জেগেছে; পাশ থেকে কে জানি বলে ওঠলো, শহরে নাকি মাছের আকাল? আমার গায়ে মাছের ভূমি- তোমার কাছে যদি জলাধার থাকে তবে একটু ধার দিও তো সাঁতার দিবো

সে তবু কথা বলে না, রাত হলেই চারিদিকে আঁধারের সাগর নেমে আসে, আমি ডুবলেও গা ভেজে না; তুমি কি আমার মুখ ভুলে গেছো?

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২


ধরে নাও এ আমার গোপন গিটার মাঝে মাঝে সুর না তুললে জং ধরে সুতায় আমি তাই মাঝে মাঝে একাকিত্বের সুর তুলি মধ্যরাতে সেই সুরে মাতাল করে অন্ধকার ডুবতে থাকি দেখি আমি আর আঁধার পরস্পর সমান শত্রু তোমার
 
এক একটি রাত এক একটি স্বপ্নের গল্প নিয়ে বসে থাকে তোমার জন্য, তুমি তো নও মোহিনীর বন্ধু, নও কোনও বৃত্তবন্দী রাজকণ্যা; যা ভাবতে ভাবতে তোমার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে

অথচ রোজ তোমার জানালায় এসে ডাক দেয় কাশবন, বাইরে জোছনার বন্ধু তার যৌবনের গল্প বলতে থাকে- বাতাসের ঘ্রাণে দুলতে থাকে তোমার শরীর; সবুজ জলপাই বনে ঢেউ খেলা জোছনা বাড়ির পাশের কাশবন হয়ে ঢুকে যায় তোমার গোপন শৈশবে; এইবার বুঝি কাশবন আমাকে চিঠি লিখবে।

কাশবনের চিঠি

at শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২  |  2 comments


ধরে নাও এ আমার গোপন গিটার মাঝে মাঝে সুর না তুললে জং ধরে সুতায় আমি তাই মাঝে মাঝে একাকিত্বের সুর তুলি মধ্যরাতে সেই সুরে মাতাল করে অন্ধকার ডুবতে থাকি দেখি আমি আর আঁধার পরস্পর সমান শত্রু তোমার
 
এক একটি রাত এক একটি স্বপ্নের গল্প নিয়ে বসে থাকে তোমার জন্য, তুমি তো নও মোহিনীর বন্ধু, নও কোনও বৃত্তবন্দী রাজকণ্যা; যা ভাবতে ভাবতে তোমার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে

অথচ রোজ তোমার জানালায় এসে ডাক দেয় কাশবন, বাইরে জোছনার বন্ধু তার যৌবনের গল্প বলতে থাকে- বাতাসের ঘ্রাণে দুলতে থাকে তোমার শরীর; সবুজ জলপাই বনে ঢেউ খেলা জোছনা বাড়ির পাশের কাশবন হয়ে ঢুকে যায় তোমার গোপন শৈশবে; এইবার বুঝি কাশবন আমাকে চিঠি লিখবে।

Read More

2 মন্তব্য(গুলি):

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২


শীতের রাতে আমরা সবে কাঁথামুরি দিয়ে বিছানায় পড়তে বসেছি। এই শীতে আমাদের পড়াশোনার ধার অনেকটা কমে যায়। শীতের অজুহাতে আমরা চেয়ার টেবিল ছেড়ে বিছানায় বসে বসে স্কুলের পড়া তৈরি করি। ফলে আমাদের মাঝে মাঝে চোখ নেবে আসে। আমরা ঘুমাতে ঘুমাতে পড়ি আর পড়তে পড়তে ঘুমাই। এমন সময় আমাদের নানুর কথা পরে। তিনি এইরকম শীতের রাতে আমাদের ভাই-বোনদের নিয়ে গল্পকরতে বসতেন।
আমরা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। নানু অনেকদিন আমাদের বাড়িতে আসেন না। নানুর একটা গল্প প্রায়ই মনে পড়ে আমার। নানু যেই দুই রাণীর গল্পটা বলতেন সেই টা। তিনি বলতেন- এক দেশে ছিলো দুই রাণী। কোনও রাজা ছিলো না। দুই রানী পালাকরে রাজ্য পরিচালনা করতো। সেই রাজ্যের মানুষগুলো ছিলো অনেক সুখি। তাদের তেমন কোনও প্রত্যাশা ছিলো না। আর তাই তারা যখন যা হাতের কাছে পেতো তাই নিয়ে সুখি থাকতো। এমনও মানুষছিলো সেই রাজ্যে যে, মানুষ দিনে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করতো। কিন্তু তারপরও সেইসব মানুষেরা রাজ্যের নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দাখিল করতো না। আর রাজ্যের নীতি নির্ধারনী ব্যক্তিরাও রাষ্ট্র সেবায় ছিলো চরম উদাসিন। তারা শুধু নিজেদের কথাই ভাবতো। নিজেদের সম্পদের ভাণ্ডার বিশাল করার জন্যই কেবল তারা ভাবতো। এইভাবে এক একজনের সম্পদের পাহাড় বাড়তে বাড়তে বিশালাকার ধারণ করে। কিন্তু তারপরও জনগন তাদের কিচ্ছু বলতো না। তারাও কেবল নিজেদের কথা ভাবতো। ভাবতো আমার কোনওভাবে চলতে পারলেই হলো। কেউ অন্য কারও কথা ভাবতো না। এইভাবেই দিন চলছিলো। একদিন রাতে হঠাৎ করে সেই দুই রানী কিভাবে কিভাবে জানি নিজ নিজ বাড়িতে মরে গেলো। রাজ্যে তখন রাষ্ট্রশাসকের বড় অভাব! কে চালাবে রাষ্ট্র? জাতীর বিবেকের কাছে তখন এই প্রশ্ন। কেউ উত্তর দিতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে কে হবেন রাজা? এই প্রশ্ন করতো নানু। আমি তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠতাম- আমি!

হঠাৎ আমার বোধোদয় হয় আমি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এতক্ষণ নানুর বলা গল্পটি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। আর ঘুম ভাঙার পর দেখি আপু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে ‘কিরে, কি করছিলি।’ আমি মুচকি হাসি দিলে সে আবার জিজ্ঞেস করে, ‘কি স্বপ্ন দেখছিলি?’ আমি বলি নানু যে প্রায়ই গল্পটা বলতো সেইটা। আপু আমাকে গল্পটি বলতে বলে। আমি বলতে চাই না। কিন্তু তার জোড়াজোড়িতে আমাকে বলতে হয়। গল্প শুরু করার আগেই আমি বলি- ‘গল্প বলতে পারবো, তবে এই গল্পের নাম কিন্তু জানিনা।’

এই গল্পের নাম কিন্তু জানিনা

at বুধবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২  |  1 comment


শীতের রাতে আমরা সবে কাঁথামুরি দিয়ে বিছানায় পড়তে বসেছি। এই শীতে আমাদের পড়াশোনার ধার অনেকটা কমে যায়। শীতের অজুহাতে আমরা চেয়ার টেবিল ছেড়ে বিছানায় বসে বসে স্কুলের পড়া তৈরি করি। ফলে আমাদের মাঝে মাঝে চোখ নেবে আসে। আমরা ঘুমাতে ঘুমাতে পড়ি আর পড়তে পড়তে ঘুমাই। এমন সময় আমাদের নানুর কথা পরে। তিনি এইরকম শীতের রাতে আমাদের ভাই-বোনদের নিয়ে গল্পকরতে বসতেন।
আমরা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। নানু অনেকদিন আমাদের বাড়িতে আসেন না। নানুর একটা গল্প প্রায়ই মনে পড়ে আমার। নানু যেই দুই রাণীর গল্পটা বলতেন সেই টা। তিনি বলতেন- এক দেশে ছিলো দুই রাণী। কোনও রাজা ছিলো না। দুই রানী পালাকরে রাজ্য পরিচালনা করতো। সেই রাজ্যের মানুষগুলো ছিলো অনেক সুখি। তাদের তেমন কোনও প্রত্যাশা ছিলো না। আর তাই তারা যখন যা হাতের কাছে পেতো তাই নিয়ে সুখি থাকতো। এমনও মানুষছিলো সেই রাজ্যে যে, মানুষ দিনে একবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করতো। কিন্তু তারপরও সেইসব মানুষেরা রাজ্যের নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দাখিল করতো না। আর রাজ্যের নীতি নির্ধারনী ব্যক্তিরাও রাষ্ট্র সেবায় ছিলো চরম উদাসিন। তারা শুধু নিজেদের কথাই ভাবতো। নিজেদের সম্পদের ভাণ্ডার বিশাল করার জন্যই কেবল তারা ভাবতো। এইভাবে এক একজনের সম্পদের পাহাড় বাড়তে বাড়তে বিশালাকার ধারণ করে। কিন্তু তারপরও জনগন তাদের কিচ্ছু বলতো না। তারাও কেবল নিজেদের কথা ভাবতো। ভাবতো আমার কোনওভাবে চলতে পারলেই হলো। কেউ অন্য কারও কথা ভাবতো না। এইভাবেই দিন চলছিলো। একদিন রাতে হঠাৎ করে সেই দুই রানী কিভাবে কিভাবে জানি নিজ নিজ বাড়িতে মরে গেলো। রাজ্যে তখন রাষ্ট্রশাসকের বড় অভাব! কে চালাবে রাষ্ট্র? জাতীর বিবেকের কাছে তখন এই প্রশ্ন। কেউ উত্তর দিতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে কে হবেন রাজা? এই প্রশ্ন করতো নানু। আমি তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠতাম- আমি!

হঠাৎ আমার বোধোদয় হয় আমি হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এতক্ষণ নানুর বলা গল্পটি আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। আর ঘুম ভাঙার পর দেখি আপু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছে ‘কিরে, কি করছিলি।’ আমি মুচকি হাসি দিলে সে আবার জিজ্ঞেস করে, ‘কি স্বপ্ন দেখছিলি?’ আমি বলি নানু যে প্রায়ই গল্পটা বলতো সেইটা। আপু আমাকে গল্পটি বলতে বলে। আমি বলতে চাই না। কিন্তু তার জোড়াজোড়িতে আমাকে বলতে হয়। গল্প শুরু করার আগেই আমি বলি- ‘গল্প বলতে পারবো, তবে এই গল্পের নাম কিন্তু জানিনা।’

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

সে- আপনি কেমন আছেন?

আমি- আমি রান্না করতে হয় বলে ভালো নেই। অন্য সব দিক দিয়ে ভালো আছি।
সে- হা হা হা!!! এক কাজ করুন। বিয়ে করে ফেলুন।

আমি- আমাকে বিয়ে করবে কে? এমন পাগল পৃথিবীতে নাই। আমার অবশ্য তত ঝামেলাও নাই। ভাইয়া থাকলে সেই রান্না করে। ভাবি থাকলে তো আরও টেনশন ফ্রি।

সে- কেন? কেন? কেন বিয়ে করবে না?

আমি- আমার ধারণা আমি অন্য সবার মতো নই। মেয়েরা যেসব বিষয়/গুণ একটা ছেলের মাঝে চায় বা পছন্দ করে তা আমার মাঝে নেই। আর মেয়েদের কাছে আমি কখনোই নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারি না। যতটা পেরেছি বন্ধুদের (ছেলে ও মেয়ে উভয় প্রকারই বন্ধু) কাছে। একজন যদি আমাকে না জানে, তবে সে কি আমাকে চাইবে?

সে- হুম। তাহলে জেনে বুঝে তারপর চাইবে।

আমি -কারও বয়ে গেছে আমাকে জানার জন্য।

সে- হা হা হা। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কারোর হয়ত বয়ে যেতেও পারে, আপনি জানেন না। সময় সব বলে দেবে।

আমি- এই সময়ের মেয়েরা (ব্যতিক্রম আছে, তবে তাকে পাচ্ছি না। যদিও খুঁজছি) নিজেদেরকে পণ্য মনে করে। মনে করে ভালো দাম যেখানে পাবে সেখানে নিজেকে বিনিয়োগ করবে। আমিতো পন্য কিনতে পারবো না। কারণ আমি ব্যবসায়ি নই। আমি মানুষ। আমি কেবল পারবো ভালোবাসতে। আর পারবো আস্থার প্রতিদান দিতে। তাই আমার জন্য কেউ নেই। তবে হ্যা, খুব বেশী দিন খুঁজবোও না কাউকে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। ৪০ বছরের বেশী বাঁচতে চাই না। এর ভেতর যদি মনে হয়, আমাকে পৃথিবীর প্রয়োজন তবে্ই এর বেশী বেঁচে থাকবো।

সে- হায়রে! ওমা! ও কি কথা? ৪০ পেরুলে কি করবেন? যদি মনে করেন যে, পৃথিবী আপনাকে চায় না?

আমি- ৪১ তম জন্মদিনে মরে যাবো।

সে- আপনার ইচ্ছা মত!!!??? জন্মমৃত্যু কি আপনার কথায়???? কি জানি?

আমি - আমি পৃথিবীটাকে আমার ভবিষ্যতের মানুষগুলোর জন্য একটা আবাস দিতে চাই। তাই মনে করি, যেই পৃথিবীতে আমার প্রয়োজন নেই। সেই পৃথিবীর সম্পদ আমি কেন নষ্ট করবো? তবে হ্যা, আমার চেষ্টা এখনো আছে, থাকবে পৃথিবীতে যেনো আমি আরও দীর্ঘ দিন থেকে থাকার মতো নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তুলতে পারি।

সে - আচ্ছা, আমি বুঝেছি, আপনার দর্শন আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। তাই, এই টপিক বাদ।

আমার নৈরাশ্যের পথচলা

at বুধবার, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২  |  No comments

সে- আপনি কেমন আছেন?

আমি- আমি রান্না করতে হয় বলে ভালো নেই। অন্য সব দিক দিয়ে ভালো আছি।
সে- হা হা হা!!! এক কাজ করুন। বিয়ে করে ফেলুন।

আমি- আমাকে বিয়ে করবে কে? এমন পাগল পৃথিবীতে নাই। আমার অবশ্য তত ঝামেলাও নাই। ভাইয়া থাকলে সেই রান্না করে। ভাবি থাকলে তো আরও টেনশন ফ্রি।

সে- কেন? কেন? কেন বিয়ে করবে না?

আমি- আমার ধারণা আমি অন্য সবার মতো নই। মেয়েরা যেসব বিষয়/গুণ একটা ছেলের মাঝে চায় বা পছন্দ করে তা আমার মাঝে নেই। আর মেয়েদের কাছে আমি কখনোই নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারি না। যতটা পেরেছি বন্ধুদের (ছেলে ও মেয়ে উভয় প্রকারই বন্ধু) কাছে। একজন যদি আমাকে না জানে, তবে সে কি আমাকে চাইবে?

সে- হুম। তাহলে জেনে বুঝে তারপর চাইবে।

আমি -কারও বয়ে গেছে আমাকে জানার জন্য।

সে- হা হা হা। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কারোর হয়ত বয়ে যেতেও পারে, আপনি জানেন না। সময় সব বলে দেবে।

আমি- এই সময়ের মেয়েরা (ব্যতিক্রম আছে, তবে তাকে পাচ্ছি না। যদিও খুঁজছি) নিজেদেরকে পণ্য মনে করে। মনে করে ভালো দাম যেখানে পাবে সেখানে নিজেকে বিনিয়োগ করবে। আমিতো পন্য কিনতে পারবো না। কারণ আমি ব্যবসায়ি নই। আমি মানুষ। আমি কেবল পারবো ভালোবাসতে। আর পারবো আস্থার প্রতিদান দিতে। তাই আমার জন্য কেউ নেই। তবে হ্যা, খুব বেশী দিন খুঁজবোও না কাউকে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। ৪০ বছরের বেশী বাঁচতে চাই না। এর ভেতর যদি মনে হয়, আমাকে পৃথিবীর প্রয়োজন তবে্ই এর বেশী বেঁচে থাকবো।

সে- হায়রে! ওমা! ও কি কথা? ৪০ পেরুলে কি করবেন? যদি মনে করেন যে, পৃথিবী আপনাকে চায় না?

আমি- ৪১ তম জন্মদিনে মরে যাবো।

সে- আপনার ইচ্ছা মত!!!??? জন্মমৃত্যু কি আপনার কথায়???? কি জানি?

আমি - আমি পৃথিবীটাকে আমার ভবিষ্যতের মানুষগুলোর জন্য একটা আবাস দিতে চাই। তাই মনে করি, যেই পৃথিবীতে আমার প্রয়োজন নেই। সেই পৃথিবীর সম্পদ আমি কেন নষ্ট করবো? তবে হ্যা, আমার চেষ্টা এখনো আছে, থাকবে পৃথিবীতে যেনো আমি আরও দীর্ঘ দিন থেকে থাকার মতো নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তুলতে পারি।

সে - আচ্ছা, আমি বুঝেছি, আপনার দর্শন আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। তাই, এই টপিক বাদ।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

গতকাল থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি লাশের পুতুল; গতকাল তেমন কোনও দিন ছিলো না, একটু বৃষ্টি ছিলো কেবল। ছেলেবেলায় পুতুলের মৃত্যু হবে ভাবতে গিয়ে শত্রু হয়ে গিয়েছিলো সে, তবুও তার জানাছিলোনা সে ডাকলেই মরে যায় আমার বেলফুলের বাগান- দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়েছিলাম- জেগে দেখি আমার গায়ে মাছের স্বভাব জেগেছে; পাশ থেকে কে জানি বলে ওঠলো, শহরে নাকি মাছের আকাল? আমার গায়ে মাছের ভূমি- তোমার কাছে যদি জলাধার থাকে তবে একটু ধার দিও তো সাঁতার দিবো

সে তবু কথা বলে না, রাত হলেই চারিদিকে আঁধারের সাগর নেমে আসে, আমি ডুবলেও গা ভেজে না; তুমি কি আমার মুখ ভুলে গেছো?

মাছের জীবন

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২  |  No comments

গতকাল থেকে বয়ে বেড়াচ্ছি লাশের পুতুল; গতকাল তেমন কোনও দিন ছিলো না, একটু বৃষ্টি ছিলো কেবল। ছেলেবেলায় পুতুলের মৃত্যু হবে ভাবতে গিয়ে শত্রু হয়ে গিয়েছিলো সে, তবুও তার জানাছিলোনা সে ডাকলেই মরে যায় আমার বেলফুলের বাগান- দুপুর বেলা একটু ঘুমিয়েছিলাম- জেগে দেখি আমার গায়ে মাছের স্বভাব জেগেছে; পাশ থেকে কে জানি বলে ওঠলো, শহরে নাকি মাছের আকাল? আমার গায়ে মাছের ভূমি- তোমার কাছে যদি জলাধার থাকে তবে একটু ধার দিও তো সাঁতার দিবো

সে তবু কথা বলে না, রাত হলেই চারিদিকে আঁধারের সাগর নেমে আসে, আমি ডুবলেও গা ভেজে না; তুমি কি আমার মুখ ভুলে গেছো?

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

সেই উদ্ধত ছুরির কথা বলে যাবো আজ
যে আমার আত্মপ্রতিকৃতির খুনি।

দিনে দিনে দুধ কলার পরিবর্তে তাই সে
                   নিজের মৃত্যুর দিন গুনেছে
আরো যে পথের গল্প সে আমায় বলে ছিলো
সেই গল্পের পাখি এবার গান শুনিয়েছে মিষ্টি

রাত বাড়তে থাকলে বেড়ে যায় সুরের আশ্রয়
অথচ প্রতিদিন ছুরি হাতে তার জন্য
দাঁড়িয়ে থাকে রূপকথার শহর, জড়িয়ে থাকে
বিকৃত জীবনের কথাকার

পাহাড়ের আড়ালে সেই রাতের মতো
প্রতিদিন তার জন্য খুনের উৎসব জমে
জমে উঠে সুরার টেবিলে আগুনের উৎসব
আর মধ্যরাতের স্যাম্পেনে ডুবে যায় তার ছুঁড়ির যৌবন

প্রিয় খুনের গল্প

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২  |  No comments

সেই উদ্ধত ছুরির কথা বলে যাবো আজ
যে আমার আত্মপ্রতিকৃতির খুনি।

দিনে দিনে দুধ কলার পরিবর্তে তাই সে
                   নিজের মৃত্যুর দিন গুনেছে
আরো যে পথের গল্প সে আমায় বলে ছিলো
সেই গল্পের পাখি এবার গান শুনিয়েছে মিষ্টি

রাত বাড়তে থাকলে বেড়ে যায় সুরের আশ্রয়
অথচ প্রতিদিন ছুরি হাতে তার জন্য
দাঁড়িয়ে থাকে রূপকথার শহর, জড়িয়ে থাকে
বিকৃত জীবনের কথাকার

পাহাড়ের আড়ালে সেই রাতের মতো
প্রতিদিন তার জন্য খুনের উৎসব জমে
জমে উঠে সুরার টেবিলে আগুনের উৎসব
আর মধ্যরাতের স্যাম্পেনে ডুবে যায় তার ছুঁড়ির যৌবন

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

আমিতো নই পূর্ব পুরুষের মৃত্যু সমন-
হাতের রেখা মুছে স্টেশনের পাগলির মতো
প্রতিদিন তাই নতুন জন্মের কথা বলি

তুমি কি পাখির বন্ধু? নাকি ছিলে
ফুল বাগানের মালি?
আমি কেউ না, ঘুমের ওষুধ খাওয়া যুবকের
অনিদ্রাকাল কেবল
জানো পাখিদের বংশ পরম্পরায়
আমার নাম লেখা আছে-
তবুও আমি ভুলে যাই নিজের নাম
শুধু মনে পরে পূর্ব পুরুষ
এক সময় পাখিদের রাজা ছিলো

আমাকে ফুলবাগানের মালি হতে বলেছিলো
                              এক জাদুকর
আমি হতে চেয়েছিলাম রাজহাসের ডানা

পূর্ব পুরুষের কথা ভেবে আমার কিছুই হওয়া হলো না
আমি শুধু তাদের মৃত্যু মুখোশ হয়েছি

মৃত্যু মুখোশ

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২  |  No comments

আমিতো নই পূর্ব পুরুষের মৃত্যু সমন-
হাতের রেখা মুছে স্টেশনের পাগলির মতো
প্রতিদিন তাই নতুন জন্মের কথা বলি

তুমি কি পাখির বন্ধু? নাকি ছিলে
ফুল বাগানের মালি?
আমি কেউ না, ঘুমের ওষুধ খাওয়া যুবকের
অনিদ্রাকাল কেবল
জানো পাখিদের বংশ পরম্পরায়
আমার নাম লেখা আছে-
তবুও আমি ভুলে যাই নিজের নাম
শুধু মনে পরে পূর্ব পুরুষ
এক সময় পাখিদের রাজা ছিলো

আমাকে ফুলবাগানের মালি হতে বলেছিলো
                              এক জাদুকর
আমি হতে চেয়েছিলাম রাজহাসের ডানা

পূর্ব পুরুষের কথা ভেবে আমার কিছুই হওয়া হলো না
আমি শুধু তাদের মৃত্যু মুখোশ হয়েছি

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

মুঠোভর্তি সোনার আলো ছড়িয়েছি ভাতের থালায়
তোমার গোলায় আজ তাই বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ

আর দুই বেলা ভাতের মৌসুমে বয়ে যাওয়া বাতাস
আমাদের গায়ে লাগেনি
তার কাছে মিঠেকড়া গল্প শুনতে গিয়ে আমরা তাই
ভুলে আছি নিজেদের পরিচয়

এবার বোধহয় তাই মুছে গেছে পাপ পূণ্যের হিসাব
ভাতের ইতিহাসে সে এক অনুজ্জ্বল অধ্যায়

        : তুমি তার নাম ঠিকানা লিখে রাখো-
          আমি মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দিবো

ভাতের ভবিষ্যৎ

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২  |  No comments

মুঠোভর্তি সোনার আলো ছড়িয়েছি ভাতের থালায়
তোমার গোলায় আজ তাই বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ

আর দুই বেলা ভাতের মৌসুমে বয়ে যাওয়া বাতাস
আমাদের গায়ে লাগেনি
তার কাছে মিঠেকড়া গল্প শুনতে গিয়ে আমরা তাই
ভুলে আছি নিজেদের পরিচয়

এবার বোধহয় তাই মুছে গেছে পাপ পূণ্যের হিসাব
ভাতের ইতিহাসে সে এক অনুজ্জ্বল অধ্যায়

        : তুমি তার নাম ঠিকানা লিখে রাখো-
          আমি মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দিবো

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

আর ডাকবোনা তিলোত্তমার আয়নাকে
সে জানে আমার গোপন গোলার খবর
তার পাটিতলে আছে আমার ধর্মগ্রন্থ
সে তাই আমার ঈশ্বরের পিতা
এইবার তাকে খুন করতে নিজেই ছুড়ি হবো
আমার ধারে কেটে যাবে তার রক্তাক্ত জিভ

আহ!

at রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২  |  No comments

আর ডাকবোনা তিলোত্তমার আয়নাকে
সে জানে আমার গোপন গোলার খবর
তার পাটিতলে আছে আমার ধর্মগ্রন্থ
সে তাই আমার ঈশ্বরের পিতা
এইবার তাকে খুন করতে নিজেই ছুড়ি হবো
আমার ধারে কেটে যাবে তার রক্তাক্ত জিভ

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২


সে আসলো সকাল বেলা। তার ডাকাডাকি সকালের ঘুমটা নষ্ট করলো। দরজা খুলতে না খুলতেই একটা থাপ্পর বসাইয়া দিলো গালে। আমি হতভম্ব। ঘটনার কথা প্রশ্ন করতেই তো তার মেজাজ চড়কগাছ। বলে কিনা আর একটা কথা বললে দ্বিতীয়টা আর হাতে মারবে না। সর্বনাশ! এইবার তো মহা ফাপড়ে পরলাম। সাত সকালে এ কোন অলক্ষুণে ঘটনার শুরু? দেইখ্যা শুইন্যা দরজা থেইক্যা সইরা দাঁড়াইলাম। সে আইসা বাসার ভিতরে ঢুকলো। সাথে তার ইয়া বড় এক ব্যাগ। ব্যাগ না, আসলে ঐটারে আধুনিক ভাষায় লাগেজ বলে। আমিতো আশ্চর্য। এত বড় লাগেজ আমার বাসা পরিবর্তন করার সময়ও প্রয়োজন পরে না। আর সে এত বড় লাগেজ নিয়া আমার এইখানে কি করে? আমার এইসব প্রশ্ন ততক্ষণে অবান্তর। সে আইসা আমার ঘর দখল করে ফেললো রীতিমত। আমার নিজস্ব জগতের রাজা হয়ে যেনো সে প্রত্যাবর্তন করলো। ভাবখানা এমনই। আমার মেজাজের পারদ ততক্ষণে ৯০ ডিগ্রি অতিক্রম করতেছে।
ঘরে ঢুকেই প্রথমেই আমাকে বললো যাও অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমাইছো, এখন ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দেখি, ফ্রিজে কি আছে গরম করি। তারপর বাকি কাজ করা যাবে। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঘড়ির দিকে তাকাইয়া দেখলাম বেলা বেশ হৈছে,  সকাল মাত্র ১০টা। মাত্র দশটা বাজে আর অনেক বেলা ঘুমাইছি? আমার তো এখনো পর্যাপ্ত ঘুমই হয় নাই। আমি যে ঘুমাইতে গেছি ভোর ৫টর সময়। আমার এই ঘুমের যে কি হবে ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসতেছে। কিন্তু এখন গা গুলিয়ে আসলে বিপদ। এখন কাজ করতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখে। যেহেতু সকাল সকাল একটা উটকো ঝামেলা এসে ঘারে চেপেছে, তার মোকাবেলা করতে হবে ঠান্ডা মাথায়ই। তাই ভাবলাম আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি বাথরুম থেকে ফিরে দেখি গতকালের বুয়ার রান্না করে রেখে যাওয়া ভাত, ডাল আর তরকারি গরম হয়ে গেছে। আমি বের হতেই সে বলে বসলো আসো, আসো আগে খেয়ে নেই। আমি বাসা থেকে খাইয়া আসি নাই। আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে। তোমারো নিশ্চয়ই ক্ষুধা লাগছে না? তাই আগে খাওয়া, পরে সব কাজ। কি বলো? আমি কোনও কিছু বলার অবকাশ পাইলাম না। ক্ষুধা যে আমারও ততক্ষণে কিঞ্চিৎ লাগে নাই, এই কথা আমি অস্বীকার করি কেমনে? সেই ছোটবেলা থাকতে, মানে আমি যখন প্রথম বাড়ি ছাড়ি। বাড়ি ছাইরা অবশ্য একলা কোথাও যাই নাই। আমারে বাড়ি ছাড়া করছিলো আমার বাপে। ক্লাস সিক্সে থাকতেই আমারে হোস্টেল ওয়ালা স্কুলে ভর্তি করাই দিছিলো। তো সেইখানে আমার ঘুম ভাঙতো কাটায় কাটায় সকাল ৮টায়। মাঝে মাঝে একটু দেরিও হৈয়া যাইতো। ঐ হোস্টেলে আবার সকাল, দুপুর আর রাত তিনবেলাই খাওয়া দিতো। সকালের নাস্তা দিতো ৮টায়। আমি তাই ঘুম থেইক্যা উঠলেই ক্ষুধা লাগতো। ঘুম থেইক্যা উইঠ্যাই আমি তাই ফ্রেশ হইয়া থালা হাতে ডাইনিং এ ছুটতাম। ঐখানে থাকতে আমার এই বদ অভ্যাসটা হৈছে। আমি যখনই ঘুম থেইক্যা উঠি, তখনই ক্ষুধা লাগে। তাই যথারীতি আইজ সকাল সকাল ঘুম থেইক্যা উঠায় ক্ষুধাটাও সকাল সকালই চাগাড় দিয়া উঠলো। আইজ আমার রাজত্বে এই গেরিলা হানায় আমার দেড় রুমের রাজত্বে কিঞ্চিৎ ভাগ বসাইলো আরেকজন।
আমার দেড় রুমের ফ্ল্যাটের সর্বসাকুল্যে একটা রুম, এই আমার রাজত্ব। আর বাকী অর্ধেকটা ডাইনিং কাম ড্রয়িং। তাও আবার ঐ রুমে যাইতে হৈলে আমার বেড রুম অতিক্রম করেই যাইতে হয়। সবশেষে আছে ছোট্ট একখান কিচেন। আর বেড রুমের সাথে এটাচড একটা বাথ। ব্যাচেলরের রাজ্য হিসেবে এ অনেক বড় সাম্রাজ্য। যেহেতু আমার রুমে বাইরের লোকজনের যাতায়াত একটু কম, বলতে গেলে মাসে এক দুইবার দুই একজন বন্ধু আসলে তাদের নিয়া কেবল ড্রিংকস পার্টির আয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এই ব্যাচেলর সাম্রাজ্য আমার এবং আমার স্বল্প সংখ্যক বন্ধুর জন্য অনেক বড় সাম্রাজ্য। রাতভর মদ খেয়ে ফ্লোরের বিছানায় হুমরি খেয়ে তিন চারজন একসাথে ঘুমাতে ভালোই লাগে। এই সাম্রাজ্যে গত মাস দুয়েক যাবৎ পার্টি হচ্ছে না। তার প্রধান কারণ, সব সময়ই পার্টির উদ্যোক্তা হঠাৎ বিনা নোটিশে বিয়ে করে ফেলায়। বেচারি হঠাৎ বিয়ে করে ফেলায় আমাদের উদ্যোগ্যে ভাটা পড়েছে। কিন্তু মন আনচান করতেছিলো। বিশেষ করে পরপর দুইটা পুর্ণিমা চলে যাওয়ার পরও আমাদের কোনও পার্টি-উর্টি নাই দেইখ্যা গেলো সপ্তাহে আমিই বাকি সবার লগে একটু আধটু উদ্যোক্তার ভূমিকা নিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমারে দিয়া যা হওয়ার না তা তো হৈলো না। এই ফাকে আমার ঘারে এই উটকো ঝামেলা। শালার মেজাজটাই বিগড়ে দিলো।
হাফ ড্রয়িং কাম হাফ ডাইনিং রুমের মাঝখানে এ আমার একটা ম্যাট বিছানো আছে। বাড়িটা ব্যাচেলর হলে কি হবে আমি এখানে থাকছি প্রায় তিন বছর। এই সুযোগে একটু সত্যিকার অর্থে নিজের সাম্রাজ্য বানায়ে নিছি আমি। সেসবের অংশ হিসেবে এই হাফ ডাইনিং রুমও কিছুটা সজ্জিত হয়েছিলো। যার ম্যাটটাতে বসে বসে আমি দুইবেলা খাবার খাই। অধিকাংশ সময়ই সকালে আমার খাওয়া হয় না। দুপুরে একবারে খাই। আর বিকাল সন্ধ্যা বাড়ির বাইরে থাকাতে এই সময় আর বাসায় থাকা হয় না। রাতে বাসায় ফিরলে আর এক প্রস্থ খাওয়া হয়। ঐ ম্যাটে বসে আজ বহুদিন পর সকালের খাবার খাইলাম। খেতে বসে ভাবতেছিলাম এখন কি করা যায়? মনে হৈলো, খাওয়া শেষে ঘটনাটা পারি, জানি কি বৃত্তান্ত।
খাওয়া শেষে আমি কিছু বলতে শুরু করার আগে সে বলে উঠলো, তোমার তো এখন কাজ আছে। বাইরে যাবা। যাও। কিন্তু রাতে দেরি কইরা ফিরতে পারবা না কৈলাম। রাত দশটার পর ঘরের দরজা কিন্তু আমি বন্ধ কইরা দিবো। পরে কিন্তু হাজার ডাকলেও শুনবো না। বুইজ্যো। আমি তো থ। পুরা অধিকার খাটাইতেছে। কোত্থেকে কে না কে আইসা আমার ওপরে উইড়া আইসা জুইড়া বইছে। তাও আবার আমার ওপরে অধিকার খাটায়। এইবার আমার মেজাজ সপ্তমে চইড়া গেলো, তারপরও মেজাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাইখ্যা তারে বললাম দেখুন, আপনি কে না কে আমি আপনারে চিনি না। আপনি কি চান আমার কাছে? আমি আপনার কেউ না। আপনি এক্ষণ এই মুহূর্তে বাড়ি থেইক্যা বাইর হৈয়া যান। আমার কথায় মনে হয় কিছুটা কাজে ধরলো। সে ততক্ষণে আমারে এডভাইস দিয়া আমার এলোমেলো বিছানার দিকে হাত বাড়াইছিলো। আর বলতেছিলো, আমি মাত্র কয়দিনের জন্য বাড়ি গেলাম আর অমনি তোমার পুরানা স্বভাব আবার জাইগ্যা উঠলো? তোমারে বদলাইতে পারলাম না। কবে যে আমারে একটু শান্তি দিবা। শুইন্যা তো আমার মাথায় সপ্তম আসমান ভাইঙ্গা পড়লো, হায় আল্লাহ! এ কি কয়? সে আবার কবে ছিলো এইখানে?
একটু আগে বলে ফেলা আমার কথাগুলো বোধহয় ঐ সময় তার কানে ঢুকছিলো, কিন্তু মাথায় ঢুকে নাই। এখন মাথায় ঢুকার সাথে সাথে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাইতে শুরু করলো। যা কিছু সে এতক্ষণে গুছানো শুরু করছিলো, সব এলোমেলো কইরা দিলো। আর আমার সামনে আইসা চক্ষু দুইটা গরম কইরা বললো, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এত মেজাজ দেখাও? আমি মেজাজ দেখাইলে কিন্তু আর রক্ষা পাইবা না।
সর্বনাশ! এ কয় কি? আমার তো দেখি মাথা আরো আওলাইয়া গেলো। আমি চিন্তা করলাম, এর মাথা ঠান্ডা হলে তারপর তার মতো করে সব ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আমি যে বাইরে যাবো এখন এই ফাকে যদি বাসার সবকিছু নিয়া ভাগে, তখন কি হৈবো? অবশ্য আমার একার সংসার থেইক্যা লইয়া ভাগার মত কিছু নাই। মানে টাকা-গয়না এইসব কিছু না। থাকার মধ্যে আমার ম্যাক পিসি আর টিভিটা। সাথে একখান ফ্রিজ। কেজি দরে বিক্রি করার মতো বেশকিছু বই। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না সে এই ধরনের কোনও মতলবে আসছে। তারপরও নিরাপত্তাই প্রথম বলে একটা কথা আছে। আর তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি তার সাথে একটু ভাব জমাইতে চেষ্টা করলাম। বললাম, আমি তো বের হবো, কথা দিচ্ছি আমি সময় মতোই আসবো। কিন্তু একটা কথা ছিলো যে! দেখলাম একটু ঠান্ডা হৈছে। বললো কি কথা? আমি বললাম, বাইরে তো আর যাবে না। তাহলে আমি তালা দিয়ে যাই? বাইরে দিয়ে তালা দিয়ে যাওয়া মানে যে তাকে আটকে রাখা, এটা চিন্তা করেই কিনা তার মুখ কিছুটা চিন্তিত মনে হলো। হঠাৎই মুখের সেই চিন্তিত ভাবটা উধাও করে বললো, তুমি ভাবছো আবার আমি যদি চলে যাই এই কারণ। ঠিক আছে। তালা দিয়েই যাও। কারণ এবার তো আর আমি যাবার জন্য আসি নাই। তোমার ভয়ের কোনও কারণ নাই। তুমি যাও। আমি এর মধ্যে দুনিয়ার অষ্টম নবম আশ্চর্য কি কি হৈতে পারে তা চিন্তা করতে করতে রীতিমত ঘামতেছি। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলতেছে, কিন্তু কোনও কাজ করতেছিলো না। কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিজেরে আবিষ্কার করলাম অস্ট্রেলিয়ার কোনও ঠান্ডা রাজ্যে। মনে হইতেছে আমি এয়ারকুলারের বিজ্ঞাপনের মডেল। আহ্‌, শান্তি। আমি আর কিছু বললাম না। তার কথার প্রতি উত্তরে তারে মোহনীয় একটা হাসি দিয়া দ্রুত রেডি হইলাম। বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে তালা দিতে আমার এইবার আর ভুল হৈলো না।
বাসা থেকে কিছুদূর হাটতে হাটতে বাস স্টেশন পর্যন্ত আসতে আসতে একটা চিন্তাই কেবল করতেছি। কি করা যায়? মাথায় কোনও কিছু আসতেছে না। বলতে গেলে এই সকালবেলা আমার কোনও কাজ নাই। গতকাল রাতে ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করতেই দেরি হওয়ায় এখন নতুন কাজের ধান্দা ছাড়া অন্য কোনও টেনশন ছিলো না। সন্ধ্যায় পাভেল ভাইয়ের কাছে একবার যাওয়ার কথা। দিনের কাজ বলতে এইটুকুই। কিন্তু সন্ধ্যার আগে তো এই সমস্যার একটা বিহীত করতে হৈবো। মাথায় কোনও কিছু যখন কাজ না করে, তখন অন্যের সহায়তা নেওয়া নিরাপদ। তাই প্রথমে ধ্রুবর কথা মনে পড়লো। তারে দেখি পাওয়া যায় কিনা। ধ্রুবরে ফোনে পাওয়া গেলো। সে বাসায়ই আছে। তার বাসা শ্যামলীতে। মুহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী খুব বেশী দূর না। সিএনজি নিতে হবে না। রিকশাই যথেষ্ঠ। টাকা কম থাকলে লেগুনা, তবে বাসের পথ নাই। আমার রিকশায় চড়তেই বেশী ভালো লাগে। আমি তাই একটা রিকশা ঠিক করলাম। শ্যামলী নাইম্যা রাস্তা পার হয়ে কাজী অফিসের গলিতে এক মিনিট হাটলেই ধ্রুবর বাসা। এগারটার মধ্যে আমি তার বাসায় গিয়া হাজির হৈলাম। গিয়া দেখি সে মাত্র ঘুম থেইক্যা উঠলো। আমি না আইলে হে এখনো ঘুমাইতো। যাই হোক, আমি যাইতেই আমারে জিজ্ঞাস করলো, চা খাবি? আমি হ্যা বলায় ধ্রুব তাদের বাড়ির কাজের মেয়েটারে ডাইক্যা দুই কাপ চা বানাইতে অর্ডার দিলো। চা আসতে আসতে ধ্রুব ফ্রেস হয়ে আসে। সে নিজেরে গুছায়া বসতে বসতে চা-ও আসে। চা হাতে নিয়া আমারে ধ্রুবর প্রশ্ন, এত্ত সকালে হঠাৎ কি মনে কইরা? ধ্রুব খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে, আমরা বন্ধুরা বড় ধরনের সমস্যায় পরলে তার কাছে পরামর্শ চাই। সে খুব বিচার বিবেচনা কৈরা একটা সমাধান দেয়। যেই সমাধানটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। তাই আমি তারে সব বিস্তারিত বলি। শোনার পর ধ্রুব খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দেয়। শব্দ করে চা খায় সে। ততক্ষণে চা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর আমার চা শেষও হয়ে গেছে। কিন্তু ধ্রুব চায়ে এমন করে চুমুক দেয় যেনো চা এখনো গরম। এইটা তার একটা বদ স্বভাব। চা শেষ করে ধ্রুব আমারে জিজ্ঞাস করে, তর এখন কি কাজ? আমি বললাম, এখন কোনও কাজ নাই। সন্ধ্যার সময় পাভেল ভাইয়ের কাছে যাওয়ার কথা। সে বললো, পাভেল ভাইরে ফোন করে বলে দে তুই আজকে যাচ্ছিস না, কালকে সন্ধ্যায় আসবি। আমি তাই করলাম। এখন আমরা দুইজনই চুপ। আমি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছি। সে কি বলে তা শোনার জন্য। ধ্রুব খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে ততক্ষণে। বললো, তর যেহেতু আজকে আর কোনও কাজ নাই, আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় সিনেমা দেইখ্যা কাটাই। একটা স্প্যানীশ ছবি আছে নতুন কাস্টিলোস দে কার্তুন নামে। ছবিটা মানুষের যৌথ দাম্পত্য জীবনের তিন বন্ধুর গল্প। আর্ন্তজাতিকভাবে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারে নাই, কিন্তু তার ভাবনাটায় একটা নতুনত্ব আছে। ধ্রুব এই রকমই। কিচ্ছু করার নাই। দেড় ঘন্টার মাত্র ছবি। ছবি শেষে দুইজনে মিলে ছবি নিয়া আলোচনা। কিন্তু আমার আলোচনায় মন বসতেছে না। তিনটার দিকে আমি আর ধ্রুব তাদের বাসায় দুপুরের খাবার খাইলাম। সে বললো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। সন্ধ্যায় একসাথে তোর বাসায় যাবো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটা ঘুম দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম ঠিক হৈয়াও হৈলো না। টেল্কি মাইরা পইরা রইলাম। বুঝতেছি সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা কিল করা ছাড়া উপায় নাই। আমি তাকায়া দেখি ধ্রুব নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছে। আমি আবারো ঘুমাইবার চেষ্টা করলাম। এইবার মনে হয় কিছুটা কাজেও দিলো। কিছুটা ঘুম আমার চোখে আসলোও। কিন্তু ফল হলো উল্টা। আমি এর মধ্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। স্বপ্নে দেখলাম সকালে বাসায় আসা মেয়েটার খুব মন খারাপ। আমি বাসার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করছে। চোখ মুছতে মুছতে তার জীবন যায় যায়। গলা ধরে আসায় কথাই বলতে পারতেছে না। আমি কিছুই বুইঝা উঠতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর যখন তার কান্না থামলো তখন বলতে শুরু করলো, আমি চলে যাওয়ায় তোমার খুব কষ্ট হৈছে। আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না। আমি আর কখনো তোমাকে না বলে বাড়ি চলে যাবো না। বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করছো কিনা? আমি কোনও ভাষা খুঁজে পাই না। এই মহিলাকে আমি কি বলবো? তাকে কেমন করে বোঝাবো তার কাঙ্খিত ঠিকানার মানুষ আমি নই। কিন্তু তার এই অবস্থায় আমি কেমনে বুঝাই আমি আপনার স্বামী না, আমি এখনো ব্যাচেলর। এই অবস্থায় তাকে শান্তনা দিতে গিয়ে নিজের ভেতর অভিভাবকসুলভ আচরণ প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় আমার ঘুম ভাইঙ্গা যায়। আমি উঠে ঘড়ির দিকে তাকায় দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে। আমি ধ্রুবরে ডাইক্যা তুলি। শালা, আরামে ঘুমাস। আর আমার জান যায়, ওঠ। ধ্রুব ওঠে। উইঠ্যা হাতমুখ ধোয়, আমিও। বাসা থেইক্যা বাইর হৈয়া ধ্রুব চায়ের দোকানে যায়, আমি বান্দা তার সফরসঙ্গী। একখান চা আর একটা গোল্ডলিফ তার জন্য বরাদ্দ। আমার জন্য বেনসন আর চা। চা শেষ কৈরা বিল মিটায়া রিকশা নিলাম। রিকশা মোহাম্মদপুরের দিকে ছুটছে। খুব বেশীক্ষণ লাগলো না বাসায় আসতে। বাজে সাতটা ২০। আমার জন্য আল্টিমেটাম ছিলো দশটা। আমি হাল্কা কিছু বাজার করলাম। নুডুলস, দুই ডজন ডিম আর একটা মুরগী। সাথে একটা দেড় লিটারের সেভেন আপ। নুডুলস আমার খুব প্রিয়। নুডুল রান্না করতে ডিম লাগে। আর মাঝে মাঝে ড্রিংকস পার্টি হওয়ার কারণে সফট ড্রিংকসটা আমার ফ্রিজেই থাকে। তাই এইসব কেনা। বাসায় উঠছি। আমার পেছন পেছন ধ্রুব। আমি একটু অশ্বস্তিতে। ধ্রুবর কোনও বিকারই নাই। শালায় কি আজব মানুষরে। তালা দেওয়া দরজা খুলতেই সে এসে মনে হয় দরজার সামনে দাড়ালো। কিছু একটা বলতে চায় হয়তো সে। কিন্তু আমার পেছনে ধ্রুবকে দেখে একটু দমে যায়। কিন্তু আবার স্বাভাবিক। আমার হাত থেকে বাজারটা নিয়ে ফ্রিজে রাখে। আমি ধ্রুবরে নিয়া আপাতত বসার রুমটায় বসি। আমি খুব স্বাভাবিক গলায় তাকে জিজ্ঞেস করি, কিছু খাওয়া হৈছে? সে মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানালো। ধ্রুব এই ফাকে তার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো। নানান কথা। মনে হয় ধ্রুবর সাথেও তার আগে পরিচয় হৈছে। আমি কিছু বুঝতেছি না। আমার মেজাজ আবারও গরম হৈয়া যাইতেছে। এই ফাকে ধ্রুব আমারে ইশারায় বুঝাইলো, তার বাড়ির কথা জিগাইতে। আমি ফট করে বললাম, বাড়ির লোকজনের সাথে কথা হৈছে তোমার? সে নিজেকে অপরাধী মনে করে মাথা নারলো। বুঝলাম কথা হয় নাই। হৈবো কেমনে, তার কাছে তো ফোন নাই। ঝট করে আমি বললাম নাম্বারটা বলো তো, একটা ফোন দেই। সে গড় গড় করে একটা ফোন নাম্বার বললো। আমিও ডায়াল করলাম। ডায়াল করে বারান্দায় চলে যাই। ওইপাশ থেইক্যা ফোন উঠায় একজন মধ্য বয়স্ক মানুষ। আমি সালাম দিয়া জিগাই, আপনাদের মেয়ে কি হারিয়ে গেছে? ভদ্রলোক জানালেন হ্যা। আমি বিস্তারিত বললাম। তিনি আমার বাসার ঠিকানা জানতে চাইলেন। নিজেকে পরিচয় দিলেন মেয়েটার বড় ভাই হিসেবে। আমি বাসার ঠিকানা বললাম। উনি বললেন আজ রাতের মধ্যেই আসবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বাড়ি? উনি জানালেন সাভার। আমি আশ্বস্ত হলাম যে, আজ রাতের মধ্যেই সমস্যার একটা সমাধান হবে আশা করি। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে ঐ ভদ্রলোক না আশা পর্যন্ত তাকে কোনওভাবেই বুঝতে না দেয়া যে তাকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর ধ্রুবকেও ততক্ষণ ছাড়া যাবে না। ধ্রুবরে সব খুইল্যা কইলাম। ধ্রুবর কোনও গতন্তর নাই। এইদিকে আমার টেনশন বাড়তেছে। তিনি কখন আসবেন। অন্যদিকে সে রান্নার কাজে লেগে পরেছে। ধ্রুব ফাকে ফাকে তার সাথে আমার সাথে গেজাইতেছে। শালায় একটা বরফি, ঠান্ডা মাথার মানুষ। পারেও।
পৌনে দশটার দিকে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি কিছুটা স্তম্ভিত। আমার চেয়েও স্তম্ভিত সে। আমার মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। একজন চল্লিশোর্ধ বয়সী লোক দরজায় দাঁড়ানো। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি পাপন? আমি বললাম জ্বি। উনি উনার পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার সাথেই আপনার কিছুক্ষণ আগে কথা হৈছে। আমি উনারে ভেতরে নিয়া আসলাম। ভদ্রলোককে দেখে তার চক্ষু ছানাভরা। সে রান্না করছিলো। ভদ্রলোক কোনও কথা বললেন না, রান্নাঘরে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি আবারও বোকা হৈয়া গেলাম। বুঝতেছিনা কি হয়। তারে হাত ধইরা নিয়া আসলেন তিনি। আমার দিকে তাকায়া তিনি বললেন, আপনারে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতেছিনা। বলেই আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন তিনি। মেয়েটি নির্বাক। যেনো ভাষা হারাইয়া ফেলছে।

ঐ দিনেই মেয়েটিকে নিয়ে তার বড় ভাই চলে যায়। যাওয়ার আগে জানাইয়া যায়, মেয়েটার স্বামী দেখতে অনেকটা আমার মতোই। মাস খানেক আগে তার স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। বছর খানেকও হয় নি তাদের বিয়ে হয়েছিলো। স্বামীর মৃত্যুর পর সে এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। ক্ষণে ক্ষণেই পাগলের মতো আচরণ শুরু করতো। বলতো তার স্বামী মরে নাই। তার কাছে যেতে হবে তাকে। বেঁচে থাকতে তারা মোহাম্মদপুরেই থাকতো। আজ সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎ টের পায় সে নেই। এর পর থেকে সম্ভাব্য সকল স্থানে তাকে সারাদিন খোঁজা হৈছে। কিন্তু সে যে ঠিকানা ভুল করে মোহাম্মদপুরে আমার বাসায় এসে উঠবে এটা কে জানতো!

সে অথবা তার ছায়ার গল্প

at শনিবার, আগস্ট ২৫, ২০১২  |  2 comments


সে আসলো সকাল বেলা। তার ডাকাডাকি সকালের ঘুমটা নষ্ট করলো। দরজা খুলতে না খুলতেই একটা থাপ্পর বসাইয়া দিলো গালে। আমি হতভম্ব। ঘটনার কথা প্রশ্ন করতেই তো তার মেজাজ চড়কগাছ। বলে কিনা আর একটা কথা বললে দ্বিতীয়টা আর হাতে মারবে না। সর্বনাশ! এইবার তো মহা ফাপড়ে পরলাম। সাত সকালে এ কোন অলক্ষুণে ঘটনার শুরু? দেইখ্যা শুইন্যা দরজা থেইক্যা সইরা দাঁড়াইলাম। সে আইসা বাসার ভিতরে ঢুকলো। সাথে তার ইয়া বড় এক ব্যাগ। ব্যাগ না, আসলে ঐটারে আধুনিক ভাষায় লাগেজ বলে। আমিতো আশ্চর্য। এত বড় লাগেজ আমার বাসা পরিবর্তন করার সময়ও প্রয়োজন পরে না। আর সে এত বড় লাগেজ নিয়া আমার এইখানে কি করে? আমার এইসব প্রশ্ন ততক্ষণে অবান্তর। সে আইসা আমার ঘর দখল করে ফেললো রীতিমত। আমার নিজস্ব জগতের রাজা হয়ে যেনো সে প্রত্যাবর্তন করলো। ভাবখানা এমনই। আমার মেজাজের পারদ ততক্ষণে ৯০ ডিগ্রি অতিক্রম করতেছে।
ঘরে ঢুকেই প্রথমেই আমাকে বললো যাও অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমাইছো, এখন ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি দেখি, ফ্রিজে কি আছে গরম করি। তারপর বাকি কাজ করা যাবে। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। ঘড়ির দিকে তাকাইয়া দেখলাম বেলা বেশ হৈছে,  সকাল মাত্র ১০টা। মাত্র দশটা বাজে আর অনেক বেলা ঘুমাইছি? আমার তো এখনো পর্যাপ্ত ঘুমই হয় নাই। আমি যে ঘুমাইতে গেছি ভোর ৫টর সময়। আমার এই ঘুমের যে কি হবে ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে আসতেছে। কিন্তু এখন গা গুলিয়ে আসলে বিপদ। এখন কাজ করতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখে। যেহেতু সকাল সকাল একটা উটকো ঝামেলা এসে ঘারে চেপেছে, তার মোকাবেলা করতে হবে ঠান্ডা মাথায়ই। তাই ভাবলাম আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। বাকিটা পরে দেখা যাবে। আমি বাথরুম থেকে ফিরে দেখি গতকালের বুয়ার রান্না করে রেখে যাওয়া ভাত, ডাল আর তরকারি গরম হয়ে গেছে। আমি বের হতেই সে বলে বসলো আসো, আসো আগে খেয়ে নেই। আমি বাসা থেকে খাইয়া আসি নাই। আমার প্রচুর ক্ষুধা লাগছে। তোমারো নিশ্চয়ই ক্ষুধা লাগছে না? তাই আগে খাওয়া, পরে সব কাজ। কি বলো? আমি কোনও কিছু বলার অবকাশ পাইলাম না। ক্ষুধা যে আমারও ততক্ষণে কিঞ্চিৎ লাগে নাই, এই কথা আমি অস্বীকার করি কেমনে? সেই ছোটবেলা থাকতে, মানে আমি যখন প্রথম বাড়ি ছাড়ি। বাড়ি ছাইরা অবশ্য একলা কোথাও যাই নাই। আমারে বাড়ি ছাড়া করছিলো আমার বাপে। ক্লাস সিক্সে থাকতেই আমারে হোস্টেল ওয়ালা স্কুলে ভর্তি করাই দিছিলো। তো সেইখানে আমার ঘুম ভাঙতো কাটায় কাটায় সকাল ৮টায়। মাঝে মাঝে একটু দেরিও হৈয়া যাইতো। ঐ হোস্টেলে আবার সকাল, দুপুর আর রাত তিনবেলাই খাওয়া দিতো। সকালের নাস্তা দিতো ৮টায়। আমি তাই ঘুম থেইক্যা উঠলেই ক্ষুধা লাগতো। ঘুম থেইক্যা উইঠ্যাই আমি তাই ফ্রেশ হইয়া থালা হাতে ডাইনিং এ ছুটতাম। ঐখানে থাকতে আমার এই বদ অভ্যাসটা হৈছে। আমি যখনই ঘুম থেইক্যা উঠি, তখনই ক্ষুধা লাগে। তাই যথারীতি আইজ সকাল সকাল ঘুম থেইক্যা উঠায় ক্ষুধাটাও সকাল সকালই চাগাড় দিয়া উঠলো। আইজ আমার রাজত্বে এই গেরিলা হানায় আমার দেড় রুমের রাজত্বে কিঞ্চিৎ ভাগ বসাইলো আরেকজন।
আমার দেড় রুমের ফ্ল্যাটের সর্বসাকুল্যে একটা রুম, এই আমার রাজত্ব। আর বাকী অর্ধেকটা ডাইনিং কাম ড্রয়িং। তাও আবার ঐ রুমে যাইতে হৈলে আমার বেড রুম অতিক্রম করেই যাইতে হয়। সবশেষে আছে ছোট্ট একখান কিচেন। আর বেড রুমের সাথে এটাচড একটা বাথ। ব্যাচেলরের রাজ্য হিসেবে এ অনেক বড় সাম্রাজ্য। যেহেতু আমার রুমে বাইরের লোকজনের যাতায়াত একটু কম, বলতে গেলে মাসে এক দুইবার দুই একজন বন্ধু আসলে তাদের নিয়া কেবল ড্রিংকস পার্টির আয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এই ব্যাচেলর সাম্রাজ্য আমার এবং আমার স্বল্প সংখ্যক বন্ধুর জন্য অনেক বড় সাম্রাজ্য। রাতভর মদ খেয়ে ফ্লোরের বিছানায় হুমরি খেয়ে তিন চারজন একসাথে ঘুমাতে ভালোই লাগে। এই সাম্রাজ্যে গত মাস দুয়েক যাবৎ পার্টি হচ্ছে না। তার প্রধান কারণ, সব সময়ই পার্টির উদ্যোক্তা হঠাৎ বিনা নোটিশে বিয়ে করে ফেলায়। বেচারি হঠাৎ বিয়ে করে ফেলায় আমাদের উদ্যোগ্যে ভাটা পড়েছে। কিন্তু মন আনচান করতেছিলো। বিশেষ করে পরপর দুইটা পুর্ণিমা চলে যাওয়ার পরও আমাদের কোনও পার্টি-উর্টি নাই দেইখ্যা গেলো সপ্তাহে আমিই বাকি সবার লগে একটু আধটু উদ্যোক্তার ভূমিকা নিতে চাইছিলাম। কিন্তু আমারে দিয়া যা হওয়ার না তা তো হৈলো না। এই ফাকে আমার ঘারে এই উটকো ঝামেলা। শালার মেজাজটাই বিগড়ে দিলো।
হাফ ড্রয়িং কাম হাফ ডাইনিং রুমের মাঝখানে এ আমার একটা ম্যাট বিছানো আছে। বাড়িটা ব্যাচেলর হলে কি হবে আমি এখানে থাকছি প্রায় তিন বছর। এই সুযোগে একটু সত্যিকার অর্থে নিজের সাম্রাজ্য বানায়ে নিছি আমি। সেসবের অংশ হিসেবে এই হাফ ডাইনিং রুমও কিছুটা সজ্জিত হয়েছিলো। যার ম্যাটটাতে বসে বসে আমি দুইবেলা খাবার খাই। অধিকাংশ সময়ই সকালে আমার খাওয়া হয় না। দুপুরে একবারে খাই। আর বিকাল সন্ধ্যা বাড়ির বাইরে থাকাতে এই সময় আর বাসায় থাকা হয় না। রাতে বাসায় ফিরলে আর এক প্রস্থ খাওয়া হয়। ঐ ম্যাটে বসে আজ বহুদিন পর সকালের খাবার খাইলাম। খেতে বসে ভাবতেছিলাম এখন কি করা যায়? মনে হৈলো, খাওয়া শেষে ঘটনাটা পারি, জানি কি বৃত্তান্ত।
খাওয়া শেষে আমি কিছু বলতে শুরু করার আগে সে বলে উঠলো, তোমার তো এখন কাজ আছে। বাইরে যাবা। যাও। কিন্তু রাতে দেরি কইরা ফিরতে পারবা না কৈলাম। রাত দশটার পর ঘরের দরজা কিন্তু আমি বন্ধ কইরা দিবো। পরে কিন্তু হাজার ডাকলেও শুনবো না। বুইজ্যো। আমি তো থ। পুরা অধিকার খাটাইতেছে। কোত্থেকে কে না কে আইসা আমার ওপরে উইড়া আইসা জুইড়া বইছে। তাও আবার আমার ওপরে অধিকার খাটায়। এইবার আমার মেজাজ সপ্তমে চইড়া গেলো, তারপরও মেজাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাইখ্যা তারে বললাম দেখুন, আপনি কে না কে আমি আপনারে চিনি না। আপনি কি চান আমার কাছে? আমি আপনার কেউ না। আপনি এক্ষণ এই মুহূর্তে বাড়ি থেইক্যা বাইর হৈয়া যান। আমার কথায় মনে হয় কিছুটা কাজে ধরলো। সে ততক্ষণে আমারে এডভাইস দিয়া আমার এলোমেলো বিছানার দিকে হাত বাড়াইছিলো। আর বলতেছিলো, আমি মাত্র কয়দিনের জন্য বাড়ি গেলাম আর অমনি তোমার পুরানা স্বভাব আবার জাইগ্যা উঠলো? তোমারে বদলাইতে পারলাম না। কবে যে আমারে একটু শান্তি দিবা। শুইন্যা তো আমার মাথায় সপ্তম আসমান ভাইঙ্গা পড়লো, হায় আল্লাহ! এ কি কয়? সে আবার কবে ছিলো এইখানে?
একটু আগে বলে ফেলা আমার কথাগুলো বোধহয় ঐ সময় তার কানে ঢুকছিলো, কিন্তু মাথায় ঢুকে নাই। এখন মাথায় ঢুকার সাথে সাথে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাইতে শুরু করলো। যা কিছু সে এতক্ষণে গুছানো শুরু করছিলো, সব এলোমেলো কইরা দিলো। আর আমার সামনে আইসা চক্ষু দুইটা গরম কইরা বললো, মাত্র এক সপ্তাহের জন্য এত মেজাজ দেখাও? আমি মেজাজ দেখাইলে কিন্তু আর রক্ষা পাইবা না।
সর্বনাশ! এ কয় কি? আমার তো দেখি মাথা আরো আওলাইয়া গেলো। আমি চিন্তা করলাম, এর মাথা ঠান্ডা হলে তারপর তার মতো করে সব ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আমি যে বাইরে যাবো এখন এই ফাকে যদি বাসার সবকিছু নিয়া ভাগে, তখন কি হৈবো? অবশ্য আমার একার সংসার থেইক্যা লইয়া ভাগার মত কিছু নাই। মানে টাকা-গয়না এইসব কিছু না। থাকার মধ্যে আমার ম্যাক পিসি আর টিভিটা। সাথে একখান ফ্রিজ। কেজি দরে বিক্রি করার মতো বেশকিছু বই। কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে না সে এই ধরনের কোনও মতলবে আসছে। তারপরও নিরাপত্তাই প্রথম বলে একটা কথা আছে। আর তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে আমি তার সাথে একটু ভাব জমাইতে চেষ্টা করলাম। বললাম, আমি তো বের হবো, কথা দিচ্ছি আমি সময় মতোই আসবো। কিন্তু একটা কথা ছিলো যে! দেখলাম একটু ঠান্ডা হৈছে। বললো কি কথা? আমি বললাম, বাইরে তো আর যাবে না। তাহলে আমি তালা দিয়ে যাই? বাইরে দিয়ে তালা দিয়ে যাওয়া মানে যে তাকে আটকে রাখা, এটা চিন্তা করেই কিনা তার মুখ কিছুটা চিন্তিত মনে হলো। হঠাৎই মুখের সেই চিন্তিত ভাবটা উধাও করে বললো, তুমি ভাবছো আবার আমি যদি চলে যাই এই কারণ। ঠিক আছে। তালা দিয়েই যাও। কারণ এবার তো আর আমি যাবার জন্য আসি নাই। তোমার ভয়ের কোনও কারণ নাই। তুমি যাও। আমি এর মধ্যে দুনিয়ার অষ্টম নবম আশ্চর্য কি কি হৈতে পারে তা চিন্তা করতে করতে রীতিমত ঘামতেছি। মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান চলতেছে, কিন্তু কোনও কাজ করতেছিলো না। কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিজেরে আবিষ্কার করলাম অস্ট্রেলিয়ার কোনও ঠান্ডা রাজ্যে। মনে হইতেছে আমি এয়ারকুলারের বিজ্ঞাপনের মডেল। আহ্‌, শান্তি। আমি আর কিছু বললাম না। তার কথার প্রতি উত্তরে তারে মোহনীয় একটা হাসি দিয়া দ্রুত রেডি হইলাম। বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে তালা দিতে আমার এইবার আর ভুল হৈলো না।
বাসা থেকে কিছুদূর হাটতে হাটতে বাস স্টেশন পর্যন্ত আসতে আসতে একটা চিন্তাই কেবল করতেছি। কি করা যায়? মাথায় কোনও কিছু আসতেছে না। বলতে গেলে এই সকালবেলা আমার কোনও কাজ নাই। গতকাল রাতে ক্লায়েন্টের কাজ শেষ করতেই দেরি হওয়ায় এখন নতুন কাজের ধান্দা ছাড়া অন্য কোনও টেনশন ছিলো না। সন্ধ্যায় পাভেল ভাইয়ের কাছে একবার যাওয়ার কথা। দিনের কাজ বলতে এইটুকুই। কিন্তু সন্ধ্যার আগে তো এই সমস্যার একটা বিহীত করতে হৈবো। মাথায় কোনও কিছু যখন কাজ না করে, তখন অন্যের সহায়তা নেওয়া নিরাপদ। তাই প্রথমে ধ্রুবর কথা মনে পড়লো। তারে দেখি পাওয়া যায় কিনা। ধ্রুবরে ফোনে পাওয়া গেলো। সে বাসায়ই আছে। তার বাসা শ্যামলীতে। মুহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী খুব বেশী দূর না। সিএনজি নিতে হবে না। রিকশাই যথেষ্ঠ। টাকা কম থাকলে লেগুনা, তবে বাসের পথ নাই। আমার রিকশায় চড়তেই বেশী ভালো লাগে। আমি তাই একটা রিকশা ঠিক করলাম। শ্যামলী নাইম্যা রাস্তা পার হয়ে কাজী অফিসের গলিতে এক মিনিট হাটলেই ধ্রুবর বাসা। এগারটার মধ্যে আমি তার বাসায় গিয়া হাজির হৈলাম। গিয়া দেখি সে মাত্র ঘুম থেইক্যা উঠলো। আমি না আইলে হে এখনো ঘুমাইতো। যাই হোক, আমি যাইতেই আমারে জিজ্ঞাস করলো, চা খাবি? আমি হ্যা বলায় ধ্রুব তাদের বাড়ির কাজের মেয়েটারে ডাইক্যা দুই কাপ চা বানাইতে অর্ডার দিলো। চা আসতে আসতে ধ্রুব ফ্রেস হয়ে আসে। সে নিজেরে গুছায়া বসতে বসতে চা-ও আসে। চা হাতে নিয়া আমারে ধ্রুবর প্রশ্ন, এত্ত সকালে হঠাৎ কি মনে কইরা? ধ্রুব খুব ঠান্ডা মাথার ছেলে, আমরা বন্ধুরা বড় ধরনের সমস্যায় পরলে তার কাছে পরামর্শ চাই। সে খুব বিচার বিবেচনা কৈরা একটা সমাধান দেয়। যেই সমাধানটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়। তাই আমি তারে সব বিস্তারিত বলি। শোনার পর ধ্রুব খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে ভাবতে চায়ে চুমুক দেয়। শব্দ করে চা খায় সে। ততক্ষণে চা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আর আমার চা শেষও হয়ে গেছে। কিন্তু ধ্রুব চায়ে এমন করে চুমুক দেয় যেনো চা এখনো গরম। এইটা তার একটা বদ স্বভাব। চা শেষ করে ধ্রুব আমারে জিজ্ঞাস করে, তর এখন কি কাজ? আমি বললাম, এখন কোনও কাজ নাই। সন্ধ্যার সময় পাভেল ভাইয়ের কাছে যাওয়ার কথা। সে বললো, পাভেল ভাইরে ফোন করে বলে দে তুই আজকে যাচ্ছিস না, কালকে সন্ধ্যায় আসবি। আমি তাই করলাম। এখন আমরা দুইজনই চুপ। আমি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছি। সে কি বলে তা শোনার জন্য। ধ্রুব খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে ততক্ষণে। বললো, তর যেহেতু আজকে আর কোনও কাজ নাই, আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত বাসায় সিনেমা দেইখ্যা কাটাই। একটা স্প্যানীশ ছবি আছে নতুন কাস্টিলোস দে কার্তুন নামে। ছবিটা মানুষের যৌথ দাম্পত্য জীবনের তিন বন্ধুর গল্প। আর্ন্তজাতিকভাবে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারে নাই, কিন্তু তার ভাবনাটায় একটা নতুনত্ব আছে। ধ্রুব এই রকমই। কিচ্ছু করার নাই। দেড় ঘন্টার মাত্র ছবি। ছবি শেষে দুইজনে মিলে ছবি নিয়া আলোচনা। কিন্তু আমার আলোচনায় মন বসতেছে না। তিনটার দিকে আমি আর ধ্রুব তাদের বাসায় দুপুরের খাবার খাইলাম। সে বললো সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। সন্ধ্যায় একসাথে তোর বাসায় যাবো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি একটা ঘুম দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম ঠিক হৈয়াও হৈলো না। টেল্কি মাইরা পইরা রইলাম। বুঝতেছি সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা কিল করা ছাড়া উপায় নাই। আমি তাকায়া দেখি ধ্রুব নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছে। আমি আবারো ঘুমাইবার চেষ্টা করলাম। এইবার মনে হয় কিছুটা কাজেও দিলো। কিছুটা ঘুম আমার চোখে আসলোও। কিন্তু ফল হলো উল্টা। আমি এর মধ্যে স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। স্বপ্নে দেখলাম সকালে বাসায় আসা মেয়েটার খুব মন খারাপ। আমি বাসার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করছে। চোখ মুছতে মুছতে তার জীবন যায় যায়। গলা ধরে আসায় কথাই বলতে পারতেছে না। আমি কিছুই বুইঝা উঠতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর যখন তার কান্না থামলো তখন বলতে শুরু করলো, আমি চলে যাওয়ায় তোমার খুব কষ্ট হৈছে। আমি এমন ভুল আর কখনো করবো না। আমি আর কখনো তোমাকে না বলে বাড়ি চলে যাবো না। বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করছো কিনা? আমি কোনও ভাষা খুঁজে পাই না। এই মহিলাকে আমি কি বলবো? তাকে কেমন করে বোঝাবো তার কাঙ্খিত ঠিকানার মানুষ আমি নই। কিন্তু তার এই অবস্থায় আমি কেমনে বুঝাই আমি আপনার স্বামী না, আমি এখনো ব্যাচেলর। এই অবস্থায় তাকে শান্তনা দিতে গিয়ে নিজের ভেতর অভিভাবকসুলভ আচরণ প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় আমার ঘুম ভাইঙ্গা যায়। আমি উঠে ঘড়ির দিকে তাকায় দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে। আমি ধ্রুবরে ডাইক্যা তুলি। শালা, আরামে ঘুমাস। আর আমার জান যায়, ওঠ। ধ্রুব ওঠে। উইঠ্যা হাতমুখ ধোয়, আমিও। বাসা থেইক্যা বাইর হৈয়া ধ্রুব চায়ের দোকানে যায়, আমি বান্দা তার সফরসঙ্গী। একখান চা আর একটা গোল্ডলিফ তার জন্য বরাদ্দ। আমার জন্য বেনসন আর চা। চা শেষ কৈরা বিল মিটায়া রিকশা নিলাম। রিকশা মোহাম্মদপুরের দিকে ছুটছে। খুব বেশীক্ষণ লাগলো না বাসায় আসতে। বাজে সাতটা ২০। আমার জন্য আল্টিমেটাম ছিলো দশটা। আমি হাল্কা কিছু বাজার করলাম। নুডুলস, দুই ডজন ডিম আর একটা মুরগী। সাথে একটা দেড় লিটারের সেভেন আপ। নুডুলস আমার খুব প্রিয়। নুডুল রান্না করতে ডিম লাগে। আর মাঝে মাঝে ড্রিংকস পার্টি হওয়ার কারণে সফট ড্রিংকসটা আমার ফ্রিজেই থাকে। তাই এইসব কেনা। বাসায় উঠছি। আমার পেছন পেছন ধ্রুব। আমি একটু অশ্বস্তিতে। ধ্রুবর কোনও বিকারই নাই। শালায় কি আজব মানুষরে। তালা দেওয়া দরজা খুলতেই সে এসে মনে হয় দরজার সামনে দাড়ালো। কিছু একটা বলতে চায় হয়তো সে। কিন্তু আমার পেছনে ধ্রুবকে দেখে একটু দমে যায়। কিন্তু আবার স্বাভাবিক। আমার হাত থেকে বাজারটা নিয়ে ফ্রিজে রাখে। আমি ধ্রুবরে নিয়া আপাতত বসার রুমটায় বসি। আমি খুব স্বাভাবিক গলায় তাকে জিজ্ঞেস করি, কিছু খাওয়া হৈছে? সে মাথা ঝাকিয়ে হ্যা জানালো। ধ্রুব এই ফাকে তার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলো। নানান কথা। মনে হয় ধ্রুবর সাথেও তার আগে পরিচয় হৈছে। আমি কিছু বুঝতেছি না। আমার মেজাজ আবারও গরম হৈয়া যাইতেছে। এই ফাকে ধ্রুব আমারে ইশারায় বুঝাইলো, তার বাড়ির কথা জিগাইতে। আমি ফট করে বললাম, বাড়ির লোকজনের সাথে কথা হৈছে তোমার? সে নিজেকে অপরাধী মনে করে মাথা নারলো। বুঝলাম কথা হয় নাই। হৈবো কেমনে, তার কাছে তো ফোন নাই। ঝট করে আমি বললাম নাম্বারটা বলো তো, একটা ফোন দেই। সে গড় গড় করে একটা ফোন নাম্বার বললো। আমিও ডায়াল করলাম। ডায়াল করে বারান্দায় চলে যাই। ওইপাশ থেইক্যা ফোন উঠায় একজন মধ্য বয়স্ক মানুষ। আমি সালাম দিয়া জিগাই, আপনাদের মেয়ে কি হারিয়ে গেছে? ভদ্রলোক জানালেন হ্যা। আমি বিস্তারিত বললাম। তিনি আমার বাসার ঠিকানা জানতে চাইলেন। নিজেকে পরিচয় দিলেন মেয়েটার বড় ভাই হিসেবে। আমি বাসার ঠিকানা বললাম। উনি বললেন আজ রাতের মধ্যেই আসবেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বাড়ি? উনি জানালেন সাভার। আমি আশ্বস্ত হলাম যে, আজ রাতের মধ্যেই সমস্যার একটা সমাধান হবে আশা করি। এখন আমার দায়িত্ব হচ্ছে ঐ ভদ্রলোক না আশা পর্যন্ত তাকে কোনওভাবেই বুঝতে না দেয়া যে তাকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আর ধ্রুবকেও ততক্ষণ ছাড়া যাবে না। ধ্রুবরে সব খুইল্যা কইলাম। ধ্রুবর কোনও গতন্তর নাই। এইদিকে আমার টেনশন বাড়তেছে। তিনি কখন আসবেন। অন্যদিকে সে রান্নার কাজে লেগে পরেছে। ধ্রুব ফাকে ফাকে তার সাথে আমার সাথে গেজাইতেছে। শালায় একটা বরফি, ঠান্ডা মাথার মানুষ। পারেও।
পৌনে দশটার দিকে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি কিছুটা স্তম্ভিত। আমার চেয়েও স্তম্ভিত সে। আমার মোহভঙ্গ হতে দেরি হয় নি। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। একজন চল্লিশোর্ধ বয়সী লোক দরজায় দাঁড়ানো। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি পাপন? আমি বললাম জ্বি। উনি উনার পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার সাথেই আপনার কিছুক্ষণ আগে কথা হৈছে। আমি উনারে ভেতরে নিয়া আসলাম। ভদ্রলোককে দেখে তার চক্ষু ছানাভরা। সে রান্না করছিলো। ভদ্রলোক কোনও কথা বললেন না, রান্নাঘরে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন। আমি আবারও বোকা হৈয়া গেলাম। বুঝতেছিনা কি হয়। তারে হাত ধইরা নিয়া আসলেন তিনি। আমার দিকে তাকায়া তিনি বললেন, আপনারে কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো বুঝতেছিনা। বলেই আবার কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন তিনি। মেয়েটি নির্বাক। যেনো ভাষা হারাইয়া ফেলছে।

ঐ দিনেই মেয়েটিকে নিয়ে তার বড় ভাই চলে যায়। যাওয়ার আগে জানাইয়া যায়, মেয়েটার স্বামী দেখতে অনেকটা আমার মতোই। মাস খানেক আগে তার স্বামী রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। বছর খানেকও হয় নি তাদের বিয়ে হয়েছিলো। স্বামীর মৃত্যুর পর সে এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। ক্ষণে ক্ষণেই পাগলের মতো আচরণ শুরু করতো। বলতো তার স্বামী মরে নাই। তার কাছে যেতে হবে তাকে। বেঁচে থাকতে তারা মোহাম্মদপুরেই থাকতো। আজ সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎ টের পায় সে নেই। এর পর থেকে সম্ভাব্য সকল স্থানে তাকে সারাদিন খোঁজা হৈছে। কিন্তু সে যে ঠিকানা ভুল করে মোহাম্মদপুরে আমার বাসায় এসে উঠবে এটা কে জানতো!

Read More

2 মন্তব্য(গুলি):

মুঠোভর্তি সোনার আলো ছড়িয়েছি ভাতের থালায়
তোমার গোলায় আজ তাই বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ

আর দুই বেলা ভাতের মৌসুমে বয়ে যাওয়া বাতাস
আমাদের গায়ে লাগেনি
তার কাছে মিঠেকড়া গল্প শুনতে গিয়ে আমরা তাই
ভুলে আছি নিজেদের পরিচয়

এবার বোধহয় তাই মুছে গেছে পাপ পূণ্যের হিসাব
ভাতের ইতিহাসে সে এক অনুজ্জ্বল অধ্যায়

        : তুমি তার নাম ঠিকানা লিখে রাখো-
          আমি মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দিবো

ভাতের ভবিষ্যৎ

at শনিবার, আগস্ট ২৫, ২০১২  |  No comments

মুঠোভর্তি সোনার আলো ছড়িয়েছি ভাতের থালায়
তোমার গোলায় আজ তাই বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ

আর দুই বেলা ভাতের মৌসুমে বয়ে যাওয়া বাতাস
আমাদের গায়ে লাগেনি
তার কাছে মিঠেকড়া গল্প শুনতে গিয়ে আমরা তাই
ভুলে আছি নিজেদের পরিচয়

এবার বোধহয় তাই মুছে গেছে পাপ পূণ্যের হিসাব
ভাতের ইতিহাসে সে এক অনুজ্জ্বল অধ্যায়

        : তুমি তার নাম ঠিকানা লিখে রাখো-
          আমি মৃত্যু পরোয়ানা পৌঁছে দিবো

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১২


আজ বন্ধু দিবসকে সামনে রেখে বন্ধুরা তাদের ওয়াল ভরে দিচ্ছে বন্ধুত্বের স্মৃতি রোমন্থন করে। স্মৃতি রোমন্থন আমি খুব একটা পছন্দ করি না। যে সকল বন্ধুদের আমি মিস করি, তাদের কাছে রাখার চেষ্টা করি। ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বলে আশে পাশে এনে রাখার চেষ্টা করি যাতে তার সাথে চাইলেই দেখা করা সম্ভব হয়। কিন্তু চাইলেই কি আর সবাইকে কাছে আনা যায়? সবাইকে যেমন কাছে এনে রাখা যায় না তেমন চাইলেও তার কাছে যাওয়া যায় না। তেমন এক বন্ধুর কথাই আজ সবচে বেশী মনে পড়ছে। তার নাম শওকত হোসেন।

শওকতের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে যখন বাড়ি ছেড়ে প্রথম বাড়ির বাইরে পড়তে বের হলাম তখন। আমি যে প্রতিষ্ঠানে (কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহে) ক্লাস নাইনে গিয়ে ভর্তি হই, সেখানে সেও এসে ভর্তি হয়েছিলো। দুই জনেই অস্থায়ী ছাত্র হওয়ায় আমরা ক্যাম্পাসের হোস্টেলে উঠেছিলাম। তার রুম নং ছিলো ২১৪। আর আমার ২১১। ক্যাম্পাসে আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই ছিলো আমার অভিভাবক। তাই আমাকে চোখে চোখে রাখতো যেনো আমি হোস্টেল জীবনের স্বাধীনতা পেয়ে বখে যাওয়া ছেলে না হই। কিন্তু শওকতের তো তেমন কেউ ছিলো না। তার গ্রামের বাড়ি ছিলো জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানায়। পরে আমি একাধিকবার তার সুত্রে ইসলামপুর গিয়েছি।

প্রকৃত অর্থে আমার সাথে ফার্স্ট ইয়ারে (ক্লাস নাইনকে সেখানে তাই বলা হতো) সখ্যতা খুব একটা জমেনি। জমেছিলো ক্লাস টেন এ এসে। ঐ সময় আমাদের উড়নচণ্ডি জীবন শুরু হয়। তার ডিপার্টমেন্ট ছিলো অটোমোবাইল। আমার ইলেকট্রিক্যাল। আমাগো সাথে ছিলো আমার ডিপার্টমেন্টের সুজন চন্দ্র দাশ। তার সাথে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। আর ছিলো তার ডিপার্টম্যান্টের মামুন। ভৈরব, কিশোরগঞ্জের। আমরা চারজন মিলে ক্যাম্পাসের হেন কোনও অপকর্ম নাই করি নাই।

হোস্টেলের পুকুর থেকে মাছ চুরি, হোস্টেলের নারিকেল গাছ থেকে ডাব চুরি আর কলার বাগান থেকে কলার ছড়ি চুরি করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। মনে আছে একবার আমরা হোস্টেলের চারপাশের প্রায় সতেরোটা নারকেল গাছ থেকে প্রায় শতাধিক ডাব পেরেছিলাম। আমরা চারজন খেয়ে শেষ করতে না পেরে শেষে এটা দিয়ে ঘর মুছেছিলাম। অবশ্য কিছু কিছু অন্য ছেলেদেরও দিয়েছিলাম। তবে কেবল যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো তাদেরকেই কেবল।

শওকত নিজেকে সৈকত বলতো।আমরা ময়মনসিংহ শহরের সব সিনেমাহলগুলোতে সিনেমা দেখতাম। সিনেমা শুরু হতো রাত ৯.৩০ মিনিটে। শেষ হৈতো বারোটা ৩০ এ। হোস্টেলে আসতে আসতে ১.৩০টা বেজে যেতো। দশটার পর হোস্টেলে ঢুকার মেইন গেইট বন্ধ করে দিতো হোস্টেল সুপার। আর বিকল্প পদ্ধতিতে হোস্টেলে ঢুকার পথ খুঁজে বের করছিলো সৈকতই। চারজন এক সাথে রিকশায় উঠতাম। সৈকত আর আমি রিকশার উপরিভাগে। ক্লাস শেষে শহরের ঐ অঞ্চলটা মানে মাসকান্দা এলাকাটা এখনকার মতো তখনও এত শহুরে হয়ে না উঠায় আমরা গ্রামে বেড় হইতাম ঘুরতে। প্রতিদিন এক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নেই ময়মনসিংহ শহরের সব রাস্তাগুলো আমরা পায়ে হেটে ঘুরবো। মূলত: চিনে নেওয়ার লক্ষ্য থেকেই এই সিদ্ধান্ত। আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ করতে পারিনি।

সৈকতের মার্শাল আর্টের খুব শখ ছিলো। তার ওয়ারড্রবে সব সময়ই একটা চেইনস্টিক থাকতো। সে সপ্তাহে দুইদিন ক্যাম্পাসে মার্শাল আর্টের ক্লাস হৈতো ঐখানে ভর্তি হইলো। কিছুদিন পরে শুনলাম তার মার্শাল আর্টের পরীক্ষা।সে ইয়েলো বেল্ট থেকে না গ্রীন, না গ্রীন থেকে ইয়েলো হয় মনে নাই তেমন একটা বেল্ট অর্জন করলো। আমার তারে ঈর্ষা হৈতো। কিন্তু কিছু কইতে পারতাম না। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম গুলোতে সিলিং ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা ছিলো না। গরম পরলে আমরা কাথা বালিশ নিয়ে তিনতলা হোস্টেলের ছাদে চলে যাইতাম। এই বুদ্ধিও সৈকতের আবিষ্কার। একদিন আমরা প্রায় সতেরো আঠারো জন অসম্ভব গরমে সিদ্ধ হয়ে ঘুমানোর জন্য চাদর আর বালিশ নিয়ে ছাদে ঘুমাইতে যাই। শেষ রাত্রীতে বৃষ্টি আমাদের অর্ধেক ভিজিয়ে দেয়। সেইসব স্মৃতি হারিয়ে যাবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথেই। তখন তা এতটা আপন করে ভাবিই নি। তারপরও একটা নোটবুকে অনেক বন্ধুরই বাড়ির ঠিকানা রাখা হয়েছিলো। সেই নোটবুক কবে যে কোথায় হারিয়েগেছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর মতো। সেই ৯৮/৯৯ সনে মোবাইল ফোন বিষয়টা আমাদের সবারকাছেই প্রায় অপরিচিত ছিলো। কারণ আমাদের আসে পাশে আমরা কারও কাছে দেখিনি বস্তুটাকে। তাই যোগাযোগটা সহজ হয়নি আমাদের।

এসএসসির পরও সৈকতের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিলো, আমার বাড়িতে টিএন্ডটি ফোনের বদৌলতে সে আমাকে ফোন করতে পারতো। আর চিঠি লিখতো সে, আমিও জবাব দিতাম। শেষবার তার বাড়ি যখন যাই তখন তুমুল বর্ষা। ইসলামপুর স্টেশনে নেমে প্লাটফরম অতিক্রম করে সোজা বাজারে ঢুকে পরা যায়। কিন্তু আমি স্টেশনের গেট দিতে বেড় হতে গিয়ে অনেক পথ ঘুরে তারপর তাদের বাড়ি হাজির হয়েছিলাম। তখন সে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। আর কি যেনো একটা রোগ তার ঠিকঠাক মতো বলেনি। হাসপাতাল পার হয়ে তাদের বাড়িতে সেবারই আমার শেষ যাত্রা। তার পর তার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয় নি। এইচএসসির রেজাল্ট ভালো করতে না পারায় আমি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। তাই অনার্স পড়তে আমাকে ভর্তি হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি পড়াশোনা, রাজনীতি, কবিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক ব্যস্ত হয়ে পরি। তার খোঁজ নিতে পারিনি। ভুল করেছি বন্ধু। পারলে এই ভুল আর কারো সাথে কারবো না। অনার্স পরীক্ষা দিয়ে আমি কাজের খোঁজে ঢাকা চলে আসি। শুরু হয় নতুন ব্যস্ততা। এক সময় মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য আবার ময়মনসিংহে যাই। তার আগে থেকেই সৈকতের ব্যাপারে কথা হৈতো। কোনও খোঁজ রাখতে পারিনি আমরা। নিজেরা কেবল দুঃখপ্রকাশই করি।

মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য যখন ময়মনসিংহ গেলাম হঠাৎ এক সপ্তাহ পরীক্ষা পিছিয়ে গেলো। আমার মনে হলো আমি এই সুযোগে বন্ধুটার খোঁজ নিয়ে আসি। একদিন সন্ধ্যায় জামালপুর বাহাদুরাবাদঘাট মুখি ট্রেনের টিকিট করে বসি।পরদিন সকাল ১০টায় ট্রেন। আমার ভেতরে উত্তেজনা। বন্ধুর খোঁজ নিতে যাচ্ছি। ট্রেন গিয়ে থামে ইসলামপুর স্টেশনে। আমি বন্ধুর বাবার হোমিওপ্যাথী ওষুধের দোকান খুঁজি। ঐখানে নতুন হোমিওপ্যাথীর দোকান খুঁজে পাই। জিজ্ঞেস করি এখানে বাহাদুর হোমিও হল ছিলো না? ঐ লোক কিছুটা বিরক্তিকর চোখে আমার দিকে তাকায়। বলে কোত্থেকে আসছেন? বলি ময়মনসিংহ। তারা তো নাই- জবাব দেয়। শোনায় অন্য কাহিনী। সে আমার বন্ধুর না। সে আমার বন্ধুর বাবার। সে গল্প এখানে না বলি। আরও বিস্তারিত খোঁজ নিতে গিয়ে তার ভাইয়ের ইলেকট্রিকের দোকান আবিষ্কার করি বাজারেই। তার ভাই শহরে নাই। চাকরি করে বাহাদুরাবাদঘাট পৌরসভায়। তার জন্য অপেক্ষা করি। তিনি আসেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তিনি এসেই ঠান্ডা পানিয় আনান, আর আনান বিস্কিট। আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্থ। কিন্তু তারচেয়ে বেশী ক্ষুধার্থ আমি বন্ধুর খবর জানার জন্য। তার কাছ থেকে জানলাম বন্ধু আমার আজ থেকে ৬ বছর পূর্বে দুটো কিডনী ড্যামেজ হয়ে মারা গেছে। কত সহজেই বলে ফেললাম। ফেরার সময় আমার চোখে জল এসেছিলো কিনা মনে নেই। তবে ট্রেনে করে আসার সময় হয়তো কিছুটা এসেছিলো। সামনের সীটের বৃদ্ধ যাত্রীটি আমার চোখের জল দেখে হয়তো আশ্চর্য হয়েছিলো। আমি শুধু মনে মনে বলেছি, বন্ধু তোকে এভাবে হারাতে চাই নি আমি। আমি চাই তুই আমার মাঝ দিয়ে বেঁচে থাক। বেঁচে থাক তুই।

বেঁচে থাক বন্ধু

at রবিবার, আগস্ট ০৫, ২০১২  |  No comments


আজ বন্ধু দিবসকে সামনে রেখে বন্ধুরা তাদের ওয়াল ভরে দিচ্ছে বন্ধুত্বের স্মৃতি রোমন্থন করে। স্মৃতি রোমন্থন আমি খুব একটা পছন্দ করি না। যে সকল বন্ধুদের আমি মিস করি, তাদের কাছে রাখার চেষ্টা করি। ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বলে আশে পাশে এনে রাখার চেষ্টা করি যাতে তার সাথে চাইলেই দেখা করা সম্ভব হয়। কিন্তু চাইলেই কি আর সবাইকে কাছে আনা যায়? সবাইকে যেমন কাছে এনে রাখা যায় না তেমন চাইলেও তার কাছে যাওয়া যায় না। তেমন এক বন্ধুর কথাই আজ সবচে বেশী মনে পড়ছে। তার নাম শওকত হোসেন।

শওকতের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে যখন বাড়ি ছেড়ে প্রথম বাড়ির বাইরে পড়তে বের হলাম তখন। আমি যে প্রতিষ্ঠানে (কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ময়মনসিংহে) ক্লাস নাইনে গিয়ে ভর্তি হই, সেখানে সেও এসে ভর্তি হয়েছিলো। দুই জনেই অস্থায়ী ছাত্র হওয়ায় আমরা ক্যাম্পাসের হোস্টেলে উঠেছিলাম। তার রুম নং ছিলো ২১৪। আর আমার ২১১। ক্যাম্পাসে আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই ছিলো আমার অভিভাবক। তাই আমাকে চোখে চোখে রাখতো যেনো আমি হোস্টেল জীবনের স্বাধীনতা পেয়ে বখে যাওয়া ছেলে না হই। কিন্তু শওকতের তো তেমন কেউ ছিলো না। তার গ্রামের বাড়ি ছিলো জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানায়। পরে আমি একাধিকবার তার সুত্রে ইসলামপুর গিয়েছি।

প্রকৃত অর্থে আমার সাথে ফার্স্ট ইয়ারে (ক্লাস নাইনকে সেখানে তাই বলা হতো) সখ্যতা খুব একটা জমেনি। জমেছিলো ক্লাস টেন এ এসে। ঐ সময় আমাদের উড়নচণ্ডি জীবন শুরু হয়। তার ডিপার্টমেন্ট ছিলো অটোমোবাইল। আমার ইলেকট্রিক্যাল। আমাগো সাথে ছিলো আমার ডিপার্টমেন্টের সুজন চন্দ্র দাশ। তার সাথে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। আর ছিলো তার ডিপার্টম্যান্টের মামুন। ভৈরব, কিশোরগঞ্জের। আমরা চারজন মিলে ক্যাম্পাসের হেন কোনও অপকর্ম নাই করি নাই।

হোস্টেলের পুকুর থেকে মাছ চুরি, হোস্টেলের নারিকেল গাছ থেকে ডাব চুরি আর কলার বাগান থেকে কলার ছড়ি চুরি করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো। মনে আছে একবার আমরা হোস্টেলের চারপাশের প্রায় সতেরোটা নারকেল গাছ থেকে প্রায় শতাধিক ডাব পেরেছিলাম। আমরা চারজন খেয়ে শেষ করতে না পেরে শেষে এটা দিয়ে ঘর মুছেছিলাম। অবশ্য কিছু কিছু অন্য ছেলেদেরও দিয়েছিলাম। তবে কেবল যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো তাদেরকেই কেবল।

শওকত নিজেকে সৈকত বলতো।আমরা ময়মনসিংহ শহরের সব সিনেমাহলগুলোতে সিনেমা দেখতাম। সিনেমা শুরু হতো রাত ৯.৩০ মিনিটে। শেষ হৈতো বারোটা ৩০ এ। হোস্টেলে আসতে আসতে ১.৩০টা বেজে যেতো। দশটার পর হোস্টেলে ঢুকার মেইন গেইট বন্ধ করে দিতো হোস্টেল সুপার। আর বিকল্প পদ্ধতিতে হোস্টেলে ঢুকার পথ খুঁজে বের করছিলো সৈকতই। চারজন এক সাথে রিকশায় উঠতাম। সৈকত আর আমি রিকশার উপরিভাগে। ক্লাস শেষে শহরের ঐ অঞ্চলটা মানে মাসকান্দা এলাকাটা এখনকার মতো তখনও এত শহুরে হয়ে না উঠায় আমরা গ্রামে বেড় হইতাম ঘুরতে। প্রতিদিন এক সময় আমরা সিদ্ধান্ত নেই ময়মনসিংহ শহরের সব রাস্তাগুলো আমরা পায়ে হেটে ঘুরবো। মূলত: চিনে নেওয়ার লক্ষ্য থেকেই এই সিদ্ধান্ত। আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু শেষ করতে পারিনি।

সৈকতের মার্শাল আর্টের খুব শখ ছিলো। তার ওয়ারড্রবে সব সময়ই একটা চেইনস্টিক থাকতো। সে সপ্তাহে দুইদিন ক্যাম্পাসে মার্শাল আর্টের ক্লাস হৈতো ঐখানে ভর্তি হইলো। কিছুদিন পরে শুনলাম তার মার্শাল আর্টের পরীক্ষা।সে ইয়েলো বেল্ট থেকে না গ্রীন, না গ্রীন থেকে ইয়েলো হয় মনে নাই তেমন একটা বেল্ট অর্জন করলো। আমার তারে ঈর্ষা হৈতো। কিন্তু কিছু কইতে পারতাম না। আমাদের হোস্টেলগুলোর রুম গুলোতে সিলিং ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা ছিলো না। গরম পরলে আমরা কাথা বালিশ নিয়ে তিনতলা হোস্টেলের ছাদে চলে যাইতাম। এই বুদ্ধিও সৈকতের আবিষ্কার। একদিন আমরা প্রায় সতেরো আঠারো জন অসম্ভব গরমে সিদ্ধ হয়ে ঘুমানোর জন্য চাদর আর বালিশ নিয়ে ছাদে ঘুমাইতে যাই। শেষ রাত্রীতে বৃষ্টি আমাদের অর্ধেক ভিজিয়ে দেয়। সেইসব স্মৃতি হারিয়ে যাবে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথেই। তখন তা এতটা আপন করে ভাবিই নি। তারপরও একটা নোটবুকে অনেক বন্ধুরই বাড়ির ঠিকানা রাখা হয়েছিলো। সেই নোটবুক কবে যে কোথায় হারিয়েগেছে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর মতো। সেই ৯৮/৯৯ সনে মোবাইল ফোন বিষয়টা আমাদের সবারকাছেই প্রায় অপরিচিত ছিলো। কারণ আমাদের আসে পাশে আমরা কারও কাছে দেখিনি বস্তুটাকে। তাই যোগাযোগটা সহজ হয়নি আমাদের।

এসএসসির পরও সৈকতের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিলো, আমার বাড়িতে টিএন্ডটি ফোনের বদৌলতে সে আমাকে ফোন করতে পারতো। আর চিঠি লিখতো সে, আমিও জবাব দিতাম। শেষবার তার বাড়ি যখন যাই তখন তুমুল বর্ষা। ইসলামপুর স্টেশনে নেমে প্লাটফরম অতিক্রম করে সোজা বাজারে ঢুকে পরা যায়। কিন্তু আমি স্টেশনের গেট দিতে বেড় হতে গিয়ে অনেক পথ ঘুরে তারপর তাদের বাড়ি হাজির হয়েছিলাম। তখন সে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। আর কি যেনো একটা রোগ তার ঠিকঠাক মতো বলেনি। হাসপাতাল পার হয়ে তাদের বাড়িতে সেবারই আমার শেষ যাত্রা। তার পর তার সাথে আমার আর যোগাযোগ হয় নি। এইচএসসির রেজাল্ট ভালো করতে না পারায় আমি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। তাই অনার্স পড়তে আমাকে ভর্তি হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি পড়াশোনা, রাজনীতি, কবিতা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক ব্যস্ত হয়ে পরি। তার খোঁজ নিতে পারিনি। ভুল করেছি বন্ধু। পারলে এই ভুল আর কারো সাথে কারবো না। অনার্স পরীক্ষা দিয়ে আমি কাজের খোঁজে ঢাকা চলে আসি। শুরু হয় নতুন ব্যস্ততা। এক সময় মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য আবার ময়মনসিংহে যাই। তার আগে থেকেই সৈকতের ব্যাপারে কথা হৈতো। কোনও খোঁজ রাখতে পারিনি আমরা। নিজেরা কেবল দুঃখপ্রকাশই করি।

মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য যখন ময়মনসিংহ গেলাম হঠাৎ এক সপ্তাহ পরীক্ষা পিছিয়ে গেলো। আমার মনে হলো আমি এই সুযোগে বন্ধুটার খোঁজ নিয়ে আসি। একদিন সন্ধ্যায় জামালপুর বাহাদুরাবাদঘাট মুখি ট্রেনের টিকিট করে বসি।পরদিন সকাল ১০টায় ট্রেন। আমার ভেতরে উত্তেজনা। বন্ধুর খোঁজ নিতে যাচ্ছি। ট্রেন গিয়ে থামে ইসলামপুর স্টেশনে। আমি বন্ধুর বাবার হোমিওপ্যাথী ওষুধের দোকান খুঁজি। ঐখানে নতুন হোমিওপ্যাথীর দোকান খুঁজে পাই। জিজ্ঞেস করি এখানে বাহাদুর হোমিও হল ছিলো না? ঐ লোক কিছুটা বিরক্তিকর চোখে আমার দিকে তাকায়। বলে কোত্থেকে আসছেন? বলি ময়মনসিংহ। তারা তো নাই- জবাব দেয়। শোনায় অন্য কাহিনী। সে আমার বন্ধুর না। সে আমার বন্ধুর বাবার। সে গল্প এখানে না বলি। আরও বিস্তারিত খোঁজ নিতে গিয়ে তার ভাইয়ের ইলেকট্রিকের দোকান আবিষ্কার করি বাজারেই। তার ভাই শহরে নাই। চাকরি করে বাহাদুরাবাদঘাট পৌরসভায়। তার জন্য অপেক্ষা করি। তিনি আসেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তিনি এসেই ঠান্ডা পানিয় আনান, আর আনান বিস্কিট। আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্থ। কিন্তু তারচেয়ে বেশী ক্ষুধার্থ আমি বন্ধুর খবর জানার জন্য। তার কাছ থেকে জানলাম বন্ধু আমার আজ থেকে ৬ বছর পূর্বে দুটো কিডনী ড্যামেজ হয়ে মারা গেছে। কত সহজেই বলে ফেললাম। ফেরার সময় আমার চোখে জল এসেছিলো কিনা মনে নেই। তবে ট্রেনে করে আসার সময় হয়তো কিছুটা এসেছিলো। সামনের সীটের বৃদ্ধ যাত্রীটি আমার চোখের জল দেখে হয়তো আশ্চর্য হয়েছিলো। আমি শুধু মনে মনে বলেছি, বন্ধু তোকে এভাবে হারাতে চাই নি আমি। আমি চাই তুই আমার মাঝ দিয়ে বেঁচে থাক। বেঁচে থাক তুই।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

রবিবার, ২২ জুলাই, ২০১২

প্রথম খন্ড.
নায়িকার স্তন কামড়ে বেঁচে খাকার ইচ্ছে তার
সে তাই প্রেম নয় কামের সুর শিখেছে
জেনেছে অক্ষরের প্রেমে বন্দি হলে
প্রাপ্তির খতিয়ান থাকে শূন্য

আমি তাকে প্রেম ও কামের স্বর্গের ঠিকানা দিয়েছি
ঘুম ভাঙলেই তার চোখে তাই রঙিন হাসির বাগান

তার গোপন অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখি মাঝে মাঝে
ডানা ভাঙা পাখির পালক ভিজে যায় তাতে
সযতনে আমি তাই এবার সানি লিওন সমগ্র
তুলে দেই তার পাতে

তৃতীয় খন্ড.

তোমার কাছে তুলে দিয়েছি তার কোমল ভাড়ারের চাবি
দরজা খুলে দেখো কেবল জ্বলজ্বল করছে
আঙুর ও আপেলের বাগান

আমিতো পথ ভুলে বসে আছি দীর্ঘদিন
সস্তার রাস্তায় আজও খুঁজছি সমাধান
তোমার কাছেই ছিলো কৃষি উপকরণের দরজা
যে ভূমি তুমি সাজিয়েছো ফুলে ও ফলের ঘ্রাণে
সে কোনও রাজপুত্রের দিঘী থেকে তুলে আনা
দুধঘ্রাণসহ পদ্মদেবীই হয়তো
সে তোমার পাতে তুলে দেওয়া মধু

অনেক তো হলো এবার,
দেখাও তোমার চাষের জাদু

সানি লিওন সমগ্র

at রবিবার, জুলাই ২২, ২০১২  |  No comments

প্রথম খন্ড.
নায়িকার স্তন কামড়ে বেঁচে খাকার ইচ্ছে তার
সে তাই প্রেম নয় কামের সুর শিখেছে
জেনেছে অক্ষরের প্রেমে বন্দি হলে
প্রাপ্তির খতিয়ান থাকে শূন্য

আমি তাকে প্রেম ও কামের স্বর্গের ঠিকানা দিয়েছি
ঘুম ভাঙলেই তার চোখে তাই রঙিন হাসির বাগান

তার গোপন অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখি মাঝে মাঝে
ডানা ভাঙা পাখির পালক ভিজে যায় তাতে
সযতনে আমি তাই এবার সানি লিওন সমগ্র
তুলে দেই তার পাতে

তৃতীয় খন্ড.

তোমার কাছে তুলে দিয়েছি তার কোমল ভাড়ারের চাবি
দরজা খুলে দেখো কেবল জ্বলজ্বল করছে
আঙুর ও আপেলের বাগান

আমিতো পথ ভুলে বসে আছি দীর্ঘদিন
সস্তার রাস্তায় আজও খুঁজছি সমাধান
তোমার কাছেই ছিলো কৃষি উপকরণের দরজা
যে ভূমি তুমি সাজিয়েছো ফুলে ও ফলের ঘ্রাণে
সে কোনও রাজপুত্রের দিঘী থেকে তুলে আনা
দুধঘ্রাণসহ পদ্মদেবীই হয়তো
সে তোমার পাতে তুলে দেওয়া মধু

অনেক তো হলো এবার,
দেখাও তোমার চাষের জাদু

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১২

‘রাফখাতা’র পোস্টার


Qwe evbv‡bvi (bvUK I Qwe) fwel¨Z †jLv wQ‡jv bv Avgvi Kcv‡j| †m Kcvj AvwgB evwb‡qwQ| KviY, Avgvi evev Avgv‡`i wcZ… es‡ki cÖ_g AÿiÁvb m¤úbœ gvbyl wQ‡jb| Zvi wkÿvi †`Šo †gwUªKz‡jk‡b wM‡q †kl n‡q‡Q| wZwb wkí-mvwnZ¨-Pjw”P‡Îi †KvbI mgS`vi †Zv wQ‡jbB bv, wb‡RI †Zgb wKQz‡K fv‡jvevm‡Zb wKbv Rvbv †bB| ej‡Z j¾v jvMv DwPZ, Zey ewj Avwg †mB es‡k ZvB †Mve‡i Rev dzj n‡q dz‡UwQ|
Avgvi `v`v wQ‡jv e„wUk we‡ivax GKRb gvbyl| ˆcwÎK m~‡Î biwms`x A‡ji evwm›`v Avgvi `v`vi eskai ¯’vbxq m¤ú`kvjx K…lK wQ‡jb| e„wUk‡`i bxj Pv‡l eva¨ Kivi cÖwZev‡` GK e„wUk Kg©KZ©v‡K Lyb K‡i Kvcyiæ‡li g‡Zv Rv‡bi f‡q mcwiev‡i cvwj‡q †bŠKv fvwl‡q wQ‡jb wZwb| †mB †bŠKv Ggb GK AR cvov Mv‡q G‡m wf‡owQ‡jv †h, GB GKwesk kZvwã‡ZI †mLv‡b we`y¨‡Zi †`Lv cvq bv gvbyl| Avwg †mB Mv‡qi mšÍvbI n‡Z cvwiwb wVKgZ| Mv‡q †g‡LwQ K‡jvwbqvj evZvm| Avgv‡`i wekvj cwievi‡K cov‡kvbv Kiv‡bvi Rb¨ Avgvi Z…Zxq †kÖYxi Kg©Pvwi evev GK gd¯^j kn‡i Avevm †M‡owQ‡jb| †mB Avev‡mB Avgvi Rb¥| wKš‘ i‡³ hvi wKQzUv n‡jI †`ªv‡ni weR †evbv, †mB Avwg cwiev‡ii mevi ag©‡K AwZµg K‡i ¯^-a‡g©i c‡_ hvÎv Ki‡ev e‡j gbw¯’i K‡iwQ|
GB ¯^‡cœi weR ey‡bwQ‡jv Avgvi wkïKv‡ji †cÖwgKv SY©v| Avwg Zv‡K †cÖwgKv ej‡evB| KviY hLb eyS‡Z wk‡LwQ ZLb †_‡KB Zvi cÖwZ Avgvi †cÖg| GB †cÖg wb‡Ri a‡g©i †h exR †m ey‡b w`‡qwQ‡jv Zvi Rb¨B wKbv, bvwK GLbKvi Rxe‡bi QbœQvov †evaUvi mv‡_ Zvi QbœQvov Rxe‡bi wgj wQ‡jv| †mB SY©v †Zgb †KD bq| Avgv‡`i evwo‡Z KvR Ki‡Zv| Avi mgq my‡hvM †c‡jB wm‡bgv n‡j Qwe †`L‡Zv| Avwg Rxe‡bi cÖ_g Zvi mv‡_ mßv‡n mvZw`b wm‡bgv n‡j wM‡q QzwUi N›Uv †`‡LwQ| dwU‡Ki g„Zy¨ Avgv‡K Kvuw`‡q‡Q hZ, Zvi †P‡q †ewk Kvuw`‡qwQ‡jv SY©v‡K| wm‡bgv †k‡l SY©v Avgvq †evSvZ, ÔAv‡i †e°j, GBWv wQbvgv| GBWv nvQv bv| wgQvwgwQ| GwW †`BK¨v Kv›`yb jv‡M? Kv‡›` bv|Õ Avwg Zvi w`‡K ZvKv‡j †`LZvg kvwoi AvuP‡j †mI †PvL gyQ‡Q|
nq‡Zv †mB †_‡K Avgvi gv_vq wm‡bgvi †cvKv Xz‡KwQ‡jv| Z‡e wm‡bgv evbv‡ev, GB fvebv †f‡ewQ A‡bK c‡i| Zvi Rb¨ Avwg evsjv‡`k †Uwjwfkb‡K ab¨ev` †`B| ZvivB Avgv‡K Qwei `k©K evwb‡qwQ‡jv| cÖ_‡g e„n¯úwZevi iv‡Z c‡I ïµevi I ZviI c‡i kwbevi `ycy‡i gywf Ae `¨v DBK G †miv †miv we‡`kx Qwe †`wL‡q| †mB Avgvi Qwei †cÖ‡gcov| K¬vm bvB‡b hLb †nv‡÷‡ji ¯^vaxb Rxeb ZLb gqgbwmsn kn‡ii wm‡bgv n‡j `yB eQ‡ii gv‡S Lye Kg QweB †`Lvi ZvwjKv †_‡K ev` †M‡Q| †mB †_‡K wm‡bgv hvÎv| evsjv‡`‡ki †mB Qwe Avi gywf Ae `¨v DB‡Ki Qwe †`‡L g‡b n‡Zv we¯Íi dvivK| GB dviv‡Ki K_v wPšÍv Ki‡Z wM‡q g~j wm‡bgv †LuvR‡Z ïiæ Kijvg| mwZ¨ ejwQ †mB g~j evsjvwm‡bgvi exR †hLv‡b Avgvi gv_vq ÕQzwUi N›UvÕ e‡m wM‡qwQ‡jv †mLv‡b bZzb K‡i nvwRi n‡qwQ‡jv ÕgvwUi gqbvÕ| wKš‘ Ggb wm‡bgv †Zv evsjv‡`‡k Kg nq| Gi gv‡S we‡`kx Qwe †Zv †`Lv n‡ZvB| wKš‘ evsjv‡`‡ki wm‡bgvi Rb¨ †h Av‡ÿc †mUv Avgvi ÕgvwUi gqbvÕB wgwU‡qwQ‡jv| ax‡i ax‡i AviI A‡bK Qwei mv‡_B cwiwPZ n‡qwQ| wKš‘ ZZw`‡b Qwei exR †fZ‡i †ivwcZ _vK‡Z _vK‡Z Zv Pviv Mv‡Qi ¯^cœ&I †`L‡Q| g‡b g‡b fvewQ Qwe †Zv evbv‡ZB n‡e| wb‡Ri Rxe‡bi g‡Zv Pvicv‡k AR¯ª Rxeb‡K gvbyl Rv‡bbv| Zv‡`i †mB Rxeb‡K wPwb‡q w`‡Z n‡e| †h Rxeb mvaviY n‡qI mvaviY bb| †mB Rxeb‡K †Pbv‡bvi `vwqZ¡ †h‡bv Kvu‡a fi K‡i †M‡jv|
wKš‘ Qwe evbv‡bvi Rb¨ wkÿv PvB| PvB †m Rb¨ UvKv| wKš‘ Ggb GK wb¤œ ga¨weË cwiev‡i R‡b¥wQ †h, GKUv GwcÖwm‡qkb †Kvm© Kivi ch©šÍ ÿgZv Avgvi GL‡bv nqwb| Avwg ZvB g~L© wbg©vZv n‡Z PvB e‡j AvmwQ eÜz‡`i| eÜziv fq †`Lvq, wKQz wkÿv †Zv jvM‡eB| Avwg ewj, †h bvwcZ †dvov KvU‡Z KvU‡Z `ÿ n‡q †M‡Q, Zvi gZ bvwcZ `kUv wb‡q Zzwg Av‡M †dvov KvUvI| Zvici bv nq Wv³vi cq`v K‡i mvR©vwi KivB‡qv| Avwg ZvB eiveiB †dvov KvUv‡bv bvwc‡Zi g‡Zv GKRb wbg©vZv n‡Z †P‡q AvmwQ| Avwg bvUK ev wm‡bgvi `k©K‡`i †dvov KvU‡Z PvB| hv‡`i †dvov KvUv‡bvB g~L¨, Bb‡dKk‡bi fq c‡i| Avwg Zv‡`i Rb¨ wb‡R‡K wbg©vY Ki‡Z PvB| Ggwb ¯^cœ wb‡q †Kej ¯^‡cœi Mí hLb e‡j †eivw”Q †Zgwb GK w`‡b VvÆv”Q‡j Avgvi eÜz& wg_yb Avgv‡K bvUK evbv‡bvi cÖ¯Íve Ki‡jv| Avwg Rvwb bvUK evbv‡bvi Rb¨ †h UvKv `iKvi †mB UvKv Zvi bvB| Avwg fvejvg Avgvi mv‡_ gRv Ki‡Q| Avwg †n‡m Dwo‡q w`jvg| wKQzw`b ci †m Avevi ej‡jv| Avwg ejjvg UvKv cv‡ev KB? †m ej‡jv e¨e¯’v n‡q hv‡e| Avwg ejjvg, UvKvi e¨e¯’v K‡i Zvici Avgv‡K ewjm| KviY Gi Av‡MI GKRb Avgv‡K Ggb GK cÖ¯Íve w`‡q †kl ch©šÍ Szwj‡q w`‡qwQ‡jv| ZvB Avwg fq cvB| wKš‘ Gevi †m UvKvi e¨e¯’vi c_ †`wL‡q Avgv‡K ej‡jv, ZzB KvR ïiæ Ki| Avgvi ZLb mwZ¨ wek¦vm nw”Q‡jv bv| Avm‡jB Avwg bvUK evbv‡ev? n¨v, Avwg‡Zv Avm‡j ZvB PvB| bvUK evbv‡Z PvB| bvU‡Ki gvS w`‡q Rxeb †`L‡Z wM‡q eo c`©vi Rxeb ˆZwi Ki‡Z PvB| †mB ïiæ n‡jv bvU‡Ki KvR| cÖ_‡g Mí wbe©vPb| Mí wbe©vPb K‡i cÖvBgvwi ev‡RU K‡i cvVv‡bv n‡jv Av‡iK eÜzi Lvqiæ‡ji Kv‡Q| KviY UvKvUv w`‡e Lvqiæj‡`i GKUv mgevq mwgwZ| n¨v, Avgvi cÖ_g bvU‡Ki cÖ‡hvRK †mB `yB nvRvi wZbk gvbyl| hv‡`i †ZBk R‡bi bvgI Avwg Rvwbbv| †mB gvbyl¸‡jvi mgevq mwgwZi UvKv w`‡q Avgvi bvUK n‡e| †mB Kvi‡Y Zv‡`i KZUvKv w`‡Z n‡e Zvi cÖv_wgK ev‡RU cvVv‡bv n‡jv| Zviv †f‡ewQ‡jv GKjvL 20 nvRv‡ii †fZi n‡q hv‡e| Avwg Zv‡`i‡K cÖvq `yB jvL UvKvi ev‡RU w`jvg| Zv‡`i aviYv wQ‡jv bv| wKš‘ Avwg cÖ_g KvR Ki‡ev, Av‡R ev‡R KvR †hb bv nq ZvB GKUz †ekxB PvBjvg| wi¯‹ bv wb‡Z| †kl ch©šÍ †hB ev‡RU Avgvi GK jÿ¨ 65 nvRvi UvKvq wM‡q `uvwo‡qwQ‡jv| Zviv G‡cÖvf Ki‡jv †kl ch©šÍ| w¯ŒÞ †iwW Kijvg gCb~j Avnmvb mv‡ei Gi Mí †_‡K| GKw`b Zvi AbygwZi Rb¨ Zvi mv‡_ †`Lv Kijvg| wZwb M‡íi Rb¨ cvwikÖwgK †P‡qwQ‡jb| wKš‘ Avwg †mB PvIqvi K_v ïwbwb| GL‡bv Zv‡K M‡íi cvwikÖwgK †`Iqv nq wb| Z‡e Aek¨B w`‡ev| Zvi ÔLmiv LvZvÕ Mí‡K Aej¤^b K‡i ÔivdLvZviÕ wPÎbvU¨ ˆZwi n‡jv| wcÖ †cÖvWvKkb wgwUs G emjvg AvU© wW‡i±i (wn‡gj) Avi wm‡bgv‡UvMÖvdvi (eiKZ †nv‡mb cjvk) Gi m‡½| Zviv `yBR‡bB Avgvi †P‡q A‡bK A‡bK AwfÁ| cjvk †Zv Aí K‡qK cvZvi w¯ŒÞ †`‡L ixwZgZ ag‡K w`‡jv| ej‡jv GB w¯Œ‡Þ 40 wgwbU n‡e bv| eo‡Rvi 25 wgwbU n‡e| Avgvi gv_v ZLb dvKv| wKQzB KvR Ki‡Q bv|  Avevi w¯ŒÞ wb‡q emjvg| 5Uv bZzb `„k¨ ˆZwi Kijvg M‡íi evB‡i| †h¸‡jv †Kej GKUv cvk¦© Pwi·K G÷vweøk K‡i| Gevi w¯ŒÞ n‡j n‡e bv n‡j bvB| wKš‘ BwZg‡a¨ wm‡bgv‡UvMÖvdvi e`‡j †M‡jv| Avgvi `yf©vM¨ cjv‡ki mv‡_ KvR Kiv n‡jv bv| n‡jv Avgvi A‡bK w`‡bi `k©b Avi Rxe‡bi mn‡hv×v myg‡bi  (Avnmvb mygb) mv‡_| mygbI w¯‹jW †Q‡j| †Kej AvwgB †evKv‡Pv`v †KvbI AwfÁZv bvB| PviwU PwiÎ cÖavb| Zvi gv‡S `ywU cÖ_g cÖavb, Avi `ywU wØZxq cÖavb| cÖ_g Kvw÷s jvBbAvc `vo Kijvg| †`k †miv cvidg©vi wPšÍv K‡i K‡i| wKš‘ bvbvR‡bi bvbv K_vq, Avi wKQz wkíxi ¯^fv‡ei Kvi‡Y Avgvi cÖ_g Kvw÷s jvBbAvc Avwg Uvb‡Z cvijvg bv| wKš‘ Avgvi LiP Kg‡jvbv Zv‡Z| GKB Li‡P Avgv‡K wØZxq cQ‡›`I Kvw÷s jvBbAvc Uvb‡Z n‡jv| †mB jvBbAv‡cB Avgvi KvR Ki‡Z n‡q‡Q| Avi Zv n‡jv cÖavb †gvnwmb Pwi‡Î knx`y¾vgvb †mwjg, cÖavb bvix wjwc Pwi‡Î bvRbxb PzgwK, wØZxq cyiæY cÖavb Pwi‡Î jyrdi ingvb RR©| wKš‘ wØZxq cÖavb bvix PwiÎ wb‡q Avwg cÖPzi Sv‡gjvq c‡owQjvg| KvD‡KB cQ›` nq bv| †`‡k GZ GZ Awfbqwkíx Avi ZviKv, Zvi gvSLvb †_‡K GKRb‡K †e‡Q wb‡Z cvwiwb Avwg| †kl ch©šÍ Avgv‡K ïwUs Gi `yB w`b Av‡M bZzb GKRb‡K wb‡Z n‡q‡Q| †KD †KD GB Kvw÷sGi Rb¨ Avgv‡K m‡›`n K‡i‡Q GB †h, Avgv‡`i †`‡ki wUwf bvU‡Ki wbg©vZv‡`i Pwi‡Îi K_v ¯§iY K‡i| †KD †KD e‡j‡Q Kvw÷sUv fzj wQ‡jv| wKš‘ ZviciI Avwg GK cÖKvi Lywk †h, eo †KvbI fzj wQ‡jv bv| ax‡i ax‡i wcÖ-‡cÖvWvKk‡bi KvR hLb P~ovšÍ Ggb mgq AvU© wW‡i±i wn‡g‡j †ev‡bi AbvKvw•LZ we‡qi ZvwiL ci‡jv ïwUs Gi wØZxq w`b| ZvI Avevi ivRkvnx‡Z| Avgvi GKUv kw³kvwj DBsm `ye©j n‡q †M‡jv| wKš‘ wKQz Kivi †bB| weKí nv‡Z bv _vK‡jI KvR †Zv Ki‡ZB n‡e| ïwUs‡qi Av‡M GKRb Gwm÷¨v›U wb‡qvM w`jvg| Av‡Mi w`b ivZ ch©šÍ Zv‡i †dv‡b cvB bv| Avwg †Ubk‡b Aw¯’i| c‡ii w`b weGbwci XvKv APj K‡i †`Iqv Kg©m~wP `yBw`b Av‡M †_‡K miKvi ev¯Íevqb Ki‡Q| GB Ae¯’vq Avgvi wPšÍvq gv_v Mig| ivZ 12Uvq Zv‡i cvIqv †M‡jv †m c‡ii w`b h_vixwZ nvwRi n‡qwQ‡jv †m‡U| wcÖ-‡cÖvWvKk‡b A‡bK NvUwZ wQ‡jv| mivmwi KvR Ki‡Z wM‡q GB cÖ_g †Ui cvw”Q| †eu‡P †MwQ †Kej w¯ŒÞUv †MvQv‡bv wQ‡jv e‡j| wKš‘ w¯Œ‡ÞI †h GKUv eo Sv‡gjv i‡q †M‡Q Zv fz‡j †MwQ ïwUs Gi wØZxq w`b| KviY GKUv wkïi PwiÎ wQ‡jv M‡í| GB PwiÎwU‡K cÖ_‡g †f‡ewQjvg Avgv‡`i bvU‡Ki eY©bvKvix ev M‡íi K_K wn‡m‡e Dc¯’vcb Ki‡ev| wKš‘ cQ›`gvwdK KvD‡K cvw”Qjvg bv| ZvB H PwiÎwU ïwUs Gi GKw`b Av‡M evwZj Ki‡Z n‡q‡Q| Gfv‡eB cÖ_gw`b I wØZxq w`‡bi ïwUs n‡”Q| Ggb mgq cÖ‡hvRbv wbe©vnx wn‡m‡e KvR Kiv wg_yb G‡m ej‡jv, Z…Zxq w`‡b ïwUs †bIqv hv‡ebv| Zvn‡j ev‡RU µm Ki‡e| Zvn‡j Avi bvUK †kl Ki‡Z cvi‡ev bv| Avgiv H Abycv‡Z wØZxq w`‡bi KvR ïiæ Kijvg| mKvj 6Uvq †m‡U wM‡q nvwRi n‡qwQjvg| ivZ 2Uvq evmvq wd‡i fvejvg, Avn&& ïwUs †kl|

Zvici †cvó †cÖvWvKk‡bi KvR| GwWU c¨v‡b‡j Avgvi wb‡Ri †KvbI Gwm÷¨v›U ev †KvbI eÜy&I GKw`b hvq wb| Pvi PviwU ivZ, KvwU‡qwQ GB GwWwUs‡q| cÖ_g `yB ivZ m¤úv`bv mnKvix wg_yb‡K wb‡q bvU‡Ki I‡K kU †Rvov w`‡q ivdKvU `uvo Kivjvg| bvUK n‡q †M‡jv 56 wgwbU| Avwg Avðh©| GZ eo nIqvi K_v bv| Zvici Avgvi Avi GwWUi ¯^iƒc `vÕi (¯^iƒc Avb›`) Awd‡mi dv‡K dv‡K AviI `yB ivZ KvR Kivi ci bvUK `vov‡jv 44 wgwb‡U| e¨vKMÖvDÛ wgDwRK hv‡K w`‡q Kiv‡ev e‡j fvewQjvg Zv‡K †÷ªP Ki‡Z cvi‡jI KvR Kiv‡bv †M‡jv bv| A_P Zvi cÖwZB Avkv wQ‡jv| G‡Kev‡i Avb‡Kviv GKUv †Q‡j (mvD` cv‡fj) †K w`‡q wgDwRK Kivjvg| wgDwRK †Kv_vI †Kv_vI fv‡jv jvM‡Q †Kv_vI †KvbI iK‡giB bv| wKQz wKQz Kv‡iKkb K‡i w`wQ‡jv gvwZm| GB bvUK †`k wUwf‡Z Rgv †`Iqvi 15 w`b c‡i WvK‡jv GKw`b| †Mjvg| Zviv GK jvL lv‡Ui †ewk w`‡e bv †KvbI g‡ZB| †mB bvUK Avmj `v‡g gv‡b hv LiP Zv‡ZB †e‡P w`jvg Zv‡`i Kv‡Q| bvUKwU MZ 6 RyjvB †`k wUwf‡Z ivZ bUv 45 wgwb‡U cÖPvwiZ n‡q‡Q| Avwg Rvwb bvUKwU wK”Qz nq wb| wKš‘ ïiæUv †Zv Kiv †M‡jv| †mB Avb‡›` eMj evRvw”Q| Rq †nv wm‡bgvi hvÎv| wK”Qz bv n‡Z n‡ZB †Zv n‡q hv‡e GKw`b| GB ¯^cœB †`LwQ GLb|

খন্ড নাটকের জীবন

at মঙ্গলবার, জুলাই ১৭, ২০১২  |  No comments

‘রাফখাতা’র পোস্টার


Qwe evbv‡bvi (bvUK I Qwe) fwel¨Z †jLv wQ‡jv bv Avgvi Kcv‡j| †m Kcvj AvwgB evwb‡qwQ| KviY, Avgvi evev Avgv‡`i wcZ… es‡ki cÖ_g AÿiÁvb m¤úbœ gvbyl wQ‡jb| Zvi wkÿvi †`Šo †gwUªKz‡jk‡b wM‡q †kl n‡q‡Q| wZwb wkí-mvwnZ¨-Pjw”P‡Îi †KvbI mgS`vi †Zv wQ‡jbB bv, wb‡RI †Zgb wKQz‡K fv‡jvevm‡Zb wKbv Rvbv †bB| ej‡Z j¾v jvMv DwPZ, Zey ewj Avwg †mB es‡k ZvB †Mve‡i Rev dzj n‡q dz‡UwQ|
Avgvi `v`v wQ‡jv e„wUk we‡ivax GKRb gvbyl| ˆcwÎK m~‡Î biwms`x A‡ji evwm›`v Avgvi `v`vi eskai ¯’vbxq m¤ú`kvjx K…lK wQ‡jb| e„wUk‡`i bxj Pv‡l eva¨ Kivi cÖwZev‡` GK e„wUk Kg©KZ©v‡K Lyb K‡i Kvcyiæ‡li g‡Zv Rv‡bi f‡q mcwiev‡i cvwj‡q †bŠKv fvwl‡q wQ‡jb wZwb| †mB †bŠKv Ggb GK AR cvov Mv‡q G‡m wf‡owQ‡jv †h, GB GKwesk kZvwã‡ZI †mLv‡b we`y¨‡Zi †`Lv cvq bv gvbyl| Avwg †mB Mv‡qi mšÍvbI n‡Z cvwiwb wVKgZ| Mv‡q †g‡LwQ K‡jvwbqvj evZvm| Avgv‡`i wekvj cwievi‡K cov‡kvbv Kiv‡bvi Rb¨ Avgvi Z…Zxq †kÖYxi Kg©Pvwi evev GK gd¯^j kn‡i Avevm †M‡owQ‡jb| †mB Avev‡mB Avgvi Rb¥| wKš‘ i‡³ hvi wKQzUv n‡jI †`ªv‡ni weR †evbv, †mB Avwg cwiev‡ii mevi ag©‡K AwZµg K‡i ¯^-a‡g©i c‡_ hvÎv Ki‡ev e‡j gbw¯’i K‡iwQ|
GB ¯^‡cœi weR ey‡bwQ‡jv Avgvi wkïKv‡ji †cÖwgKv SY©v| Avwg Zv‡K †cÖwgKv ej‡evB| KviY hLb eyS‡Z wk‡LwQ ZLb †_‡KB Zvi cÖwZ Avgvi †cÖg| GB †cÖg wb‡Ri a‡g©i †h exR †m ey‡b w`‡qwQ‡jv Zvi Rb¨B wKbv, bvwK GLbKvi Rxe‡bi QbœQvov †evaUvi mv‡_ Zvi QbœQvov Rxe‡bi wgj wQ‡jv| †mB SY©v †Zgb †KD bq| Avgv‡`i evwo‡Z KvR Ki‡Zv| Avi mgq my‡hvM †c‡jB wm‡bgv n‡j Qwe †`L‡Zv| Avwg Rxe‡bi cÖ_g Zvi mv‡_ mßv‡n mvZw`b wm‡bgv n‡j wM‡q QzwUi N›Uv †`‡LwQ| dwU‡Ki g„Zy¨ Avgv‡K Kvuw`‡q‡Q hZ, Zvi †P‡q †ewk Kvuw`‡qwQ‡jv SY©v‡K| wm‡bgv †k‡l SY©v Avgvq †evSvZ, ÔAv‡i †e°j, GBWv wQbvgv| GBWv nvQv bv| wgQvwgwQ| GwW †`BK¨v Kv›`yb jv‡M? Kv‡›` bv|Õ Avwg Zvi w`‡K ZvKv‡j †`LZvg kvwoi AvuP‡j †mI †PvL gyQ‡Q|
nq‡Zv †mB †_‡K Avgvi gv_vq wm‡bgvi †cvKv Xz‡KwQ‡jv| Z‡e wm‡bgv evbv‡ev, GB fvebv †f‡ewQ A‡bK c‡i| Zvi Rb¨ Avwg evsjv‡`k †Uwjwfkb‡K ab¨ev` †`B| ZvivB Avgv‡K Qwei `k©K evwb‡qwQ‡jv| cÖ_‡g e„n¯úwZevi iv‡Z c‡I ïµevi I ZviI c‡i kwbevi `ycy‡i gywf Ae `¨v DBK G †miv †miv we‡`kx Qwe †`wL‡q| †mB Avgvi Qwei †cÖ‡gcov| K¬vm bvB‡b hLb †nv‡÷‡ji ¯^vaxb Rxeb ZLb gqgbwmsn kn‡ii wm‡bgv n‡j `yB eQ‡ii gv‡S Lye Kg QweB †`Lvi ZvwjKv †_‡K ev` †M‡Q| †mB †_‡K wm‡bgv hvÎv| evsjv‡`‡ki †mB Qwe Avi gywf Ae `¨v DB‡Ki Qwe †`‡L g‡b n‡Zv we¯Íi dvivK| GB dviv‡Ki K_v wPšÍv Ki‡Z wM‡q g~j wm‡bgv †LuvR‡Z ïiæ Kijvg| mwZ¨ ejwQ †mB g~j evsjvwm‡bgvi exR †hLv‡b Avgvi gv_vq ÕQzwUi N›UvÕ e‡m wM‡qwQ‡jv †mLv‡b bZzb K‡i nvwRi n‡qwQ‡jv ÕgvwUi gqbvÕ| wKš‘ Ggb wm‡bgv †Zv evsjv‡`‡k Kg nq| Gi gv‡S we‡`kx Qwe †Zv †`Lv n‡ZvB| wKš‘ evsjv‡`‡ki wm‡bgvi Rb¨ †h Av‡ÿc †mUv Avgvi ÕgvwUi gqbvÕB wgwU‡qwQ‡jv| ax‡i ax‡i AviI A‡bK Qwei mv‡_B cwiwPZ n‡qwQ| wKš‘ ZZw`‡b Qwei exR †fZ‡i †ivwcZ _vK‡Z _vK‡Z Zv Pviv Mv‡Qi ¯^cœ&I †`L‡Q| g‡b g‡b fvewQ Qwe †Zv evbv‡ZB n‡e| wb‡Ri Rxe‡bi g‡Zv Pvicv‡k AR¯ª Rxeb‡K gvbyl Rv‡bbv| Zv‡`i †mB Rxeb‡K wPwb‡q w`‡Z n‡e| †h Rxeb mvaviY n‡qI mvaviY bb| †mB Rxeb‡K †Pbv‡bvi `vwqZ¡ †h‡bv Kvu‡a fi K‡i †M‡jv|
wKš‘ Qwe evbv‡bvi Rb¨ wkÿv PvB| PvB †m Rb¨ UvKv| wKš‘ Ggb GK wb¤œ ga¨weË cwiev‡i R‡b¥wQ †h, GKUv GwcÖwm‡qkb †Kvm© Kivi ch©šÍ ÿgZv Avgvi GL‡bv nqwb| Avwg ZvB g~L© wbg©vZv n‡Z PvB e‡j AvmwQ eÜz‡`i| eÜziv fq †`Lvq, wKQz wkÿv †Zv jvM‡eB| Avwg ewj, †h bvwcZ †dvov KvU‡Z KvU‡Z `ÿ n‡q †M‡Q, Zvi gZ bvwcZ `kUv wb‡q Zzwg Av‡M †dvov KvUvI| Zvici bv nq Wv³vi cq`v K‡i mvR©vwi KivB‡qv| Avwg ZvB eiveiB †dvov KvUv‡bv bvwc‡Zi g‡Zv GKRb wbg©vZv n‡Z †P‡q AvmwQ| Avwg bvUK ev wm‡bgvi `k©K‡`i †dvov KvU‡Z PvB| hv‡`i †dvov KvUv‡bvB g~L¨, Bb‡dKk‡bi fq c‡i| Avwg Zv‡`i Rb¨ wb‡R‡K wbg©vY Ki‡Z PvB| Ggwb ¯^cœ wb‡q †Kej ¯^‡cœi Mí hLb e‡j †eivw”Q †Zgwb GK w`‡b VvÆv”Q‡j Avgvi eÜz& wg_yb Avgv‡K bvUK evbv‡bvi cÖ¯Íve Ki‡jv| Avwg Rvwb bvUK evbv‡bvi Rb¨ †h UvKv `iKvi †mB UvKv Zvi bvB| Avwg fvejvg Avgvi mv‡_ gRv Ki‡Q| Avwg †n‡m Dwo‡q w`jvg| wKQzw`b ci †m Avevi ej‡jv| Avwg ejjvg UvKv cv‡ev KB? †m ej‡jv e¨e¯’v n‡q hv‡e| Avwg ejjvg, UvKvi e¨e¯’v K‡i Zvici Avgv‡K ewjm| KviY Gi Av‡MI GKRb Avgv‡K Ggb GK cÖ¯Íve w`‡q †kl ch©šÍ Szwj‡q w`‡qwQ‡jv| ZvB Avwg fq cvB| wKš‘ Gevi †m UvKvi e¨e¯’vi c_ †`wL‡q Avgv‡K ej‡jv, ZzB KvR ïiæ Ki| Avgvi ZLb mwZ¨ wek¦vm nw”Q‡jv bv| Avm‡jB Avwg bvUK evbv‡ev? n¨v, Avwg‡Zv Avm‡j ZvB PvB| bvUK evbv‡Z PvB| bvU‡Ki gvS w`‡q Rxeb †`L‡Z wM‡q eo c`©vi Rxeb ˆZwi Ki‡Z PvB| †mB ïiæ n‡jv bvU‡Ki KvR| cÖ_‡g Mí wbe©vPb| Mí wbe©vPb K‡i cÖvBgvwi ev‡RU K‡i cvVv‡bv n‡jv Av‡iK eÜzi Lvqiæ‡ji Kv‡Q| KviY UvKvUv w`‡e Lvqiæj‡`i GKUv mgevq mwgwZ| n¨v, Avgvi cÖ_g bvU‡Ki cÖ‡hvRK †mB `yB nvRvi wZbk gvbyl| hv‡`i †ZBk R‡bi bvgI Avwg Rvwbbv| †mB gvbyl¸‡jvi mgevq mwgwZi UvKv w`‡q Avgvi bvUK n‡e| †mB Kvi‡Y Zv‡`i KZUvKv w`‡Z n‡e Zvi cÖv_wgK ev‡RU cvVv‡bv n‡jv| Zviv †f‡ewQ‡jv GKjvL 20 nvRv‡ii †fZi n‡q hv‡e| Avwg Zv‡`i‡K cÖvq `yB jvL UvKvi ev‡RU w`jvg| Zv‡`i aviYv wQ‡jv bv| wKš‘ Avwg cÖ_g KvR Ki‡ev, Av‡R ev‡R KvR †hb bv nq ZvB GKUz †ekxB PvBjvg| wi¯‹ bv wb‡Z| †kl ch©šÍ †hB ev‡RU Avgvi GK jÿ¨ 65 nvRvi UvKvq wM‡q `uvwo‡qwQ‡jv| Zviv G‡cÖvf Ki‡jv †kl ch©šÍ| w¯ŒÞ †iwW Kijvg gCb~j Avnmvb mv‡ei Gi Mí †_‡K| GKw`b Zvi AbygwZi Rb¨ Zvi mv‡_ †`Lv Kijvg| wZwb M‡íi Rb¨ cvwikÖwgK †P‡qwQ‡jb| wKš‘ Avwg †mB PvIqvi K_v ïwbwb| GL‡bv Zv‡K M‡íi cvwikÖwgK †`Iqv nq wb| Z‡e Aek¨B w`‡ev| Zvi ÔLmiv LvZvÕ Mí‡K Aej¤^b K‡i ÔivdLvZviÕ wPÎbvU¨ ˆZwi n‡jv| wcÖ †cÖvWvKkb wgwUs G emjvg AvU© wW‡i±i (wn‡gj) Avi wm‡bgv‡UvMÖvdvi (eiKZ †nv‡mb cjvk) Gi m‡½| Zviv `yBR‡bB Avgvi †P‡q A‡bK A‡bK AwfÁ| cjvk †Zv Aí K‡qK cvZvi w¯ŒÞ †`‡L ixwZgZ ag‡K w`‡jv| ej‡jv GB w¯Œ‡Þ 40 wgwbU n‡e bv| eo‡Rvi 25 wgwbU n‡e| Avgvi gv_v ZLb dvKv| wKQzB KvR Ki‡Q bv|  Avevi w¯ŒÞ wb‡q emjvg| 5Uv bZzb `„k¨ ˆZwi Kijvg M‡íi evB‡i| †h¸‡jv †Kej GKUv cvk¦© Pwi·K G÷vweøk K‡i| Gevi w¯ŒÞ n‡j n‡e bv n‡j bvB| wKš‘ BwZg‡a¨ wm‡bgv‡UvMÖvdvi e`‡j †M‡jv| Avgvi `yf©vM¨ cjv‡ki mv‡_ KvR Kiv n‡jv bv| n‡jv Avgvi A‡bK w`‡bi `k©b Avi Rxe‡bi mn‡hv×v myg‡bi  (Avnmvb mygb) mv‡_| mygbI w¯‹jW †Q‡j| †Kej AvwgB †evKv‡Pv`v †KvbI AwfÁZv bvB| PviwU PwiÎ cÖavb| Zvi gv‡S `ywU cÖ_g cÖavb, Avi `ywU wØZxq cÖavb| cÖ_g Kvw÷s jvBbAvc `vo Kijvg| †`k †miv cvidg©vi wPšÍv K‡i K‡i| wKš‘ bvbvR‡bi bvbv K_vq, Avi wKQz wkíxi ¯^fv‡ei Kvi‡Y Avgvi cÖ_g Kvw÷s jvBbAvc Avwg Uvb‡Z cvijvg bv| wKš‘ Avgvi LiP Kg‡jvbv Zv‡Z| GKB Li‡P Avgv‡K wØZxq cQ‡›`I Kvw÷s jvBbAvc Uvb‡Z n‡jv| †mB jvBbAv‡cB Avgvi KvR Ki‡Z n‡q‡Q| Avi Zv n‡jv cÖavb †gvnwmb Pwi‡Î knx`y¾vgvb †mwjg, cÖavb bvix wjwc Pwi‡Î bvRbxb PzgwK, wØZxq cyiæY cÖavb Pwi‡Î jyrdi ingvb RR©| wKš‘ wØZxq cÖavb bvix PwiÎ wb‡q Avwg cÖPzi Sv‡gjvq c‡owQjvg| KvD‡KB cQ›` nq bv| †`‡k GZ GZ Awfbqwkíx Avi ZviKv, Zvi gvSLvb †_‡K GKRb‡K †e‡Q wb‡Z cvwiwb Avwg| †kl ch©šÍ Avgv‡K ïwUs Gi `yB w`b Av‡M bZzb GKRb‡K wb‡Z n‡q‡Q| †KD †KD GB Kvw÷sGi Rb¨ Avgv‡K m‡›`n K‡i‡Q GB †h, Avgv‡`i †`‡ki wUwf bvU‡Ki wbg©vZv‡`i Pwi‡Îi K_v ¯§iY K‡i| †KD †KD e‡j‡Q Kvw÷sUv fzj wQ‡jv| wKš‘ ZviciI Avwg GK cÖKvi Lywk †h, eo †KvbI fzj wQ‡jv bv| ax‡i ax‡i wcÖ-‡cÖvWvKk‡bi KvR hLb P~ovšÍ Ggb mgq AvU© wW‡i±i wn‡g‡j †ev‡bi AbvKvw•LZ we‡qi ZvwiL ci‡jv ïwUs Gi wØZxq w`b| ZvI Avevi ivRkvnx‡Z| Avgvi GKUv kw³kvwj DBsm `ye©j n‡q †M‡jv| wKš‘ wKQz Kivi †bB| weKí nv‡Z bv _vK‡jI KvR †Zv Ki‡ZB n‡e| ïwUs‡qi Av‡M GKRb Gwm÷¨v›U wb‡qvM w`jvg| Av‡Mi w`b ivZ ch©šÍ Zv‡i †dv‡b cvB bv| Avwg †Ubk‡b Aw¯’i| c‡ii w`b weGbwci XvKv APj K‡i †`Iqv Kg©m~wP `yBw`b Av‡M †_‡K miKvi ev¯Íevqb Ki‡Q| GB Ae¯’vq Avgvi wPšÍvq gv_v Mig| ivZ 12Uvq Zv‡i cvIqv †M‡jv †m c‡ii w`b h_vixwZ nvwRi n‡qwQ‡jv †m‡U| wcÖ-‡cÖvWvKk‡b A‡bK NvUwZ wQ‡jv| mivmwi KvR Ki‡Z wM‡q GB cÖ_g †Ui cvw”Q| †eu‡P †MwQ †Kej w¯ŒÞUv †MvQv‡bv wQ‡jv e‡j| wKš‘ w¯Œ‡ÞI †h GKUv eo Sv‡gjv i‡q †M‡Q Zv fz‡j †MwQ ïwUs Gi wØZxq w`b| KviY GKUv wkïi PwiÎ wQ‡jv M‡í| GB PwiÎwU‡K cÖ_‡g †f‡ewQjvg Avgv‡`i bvU‡Ki eY©bvKvix ev M‡íi K_K wn‡m‡e Dc¯’vcb Ki‡ev| wKš‘ cQ›`gvwdK KvD‡K cvw”Qjvg bv| ZvB H PwiÎwU ïwUs Gi GKw`b Av‡M evwZj Ki‡Z n‡q‡Q| Gfv‡eB cÖ_gw`b I wØZxq w`‡bi ïwUs n‡”Q| Ggb mgq cÖ‡hvRbv wbe©vnx wn‡m‡e KvR Kiv wg_yb G‡m ej‡jv, Z…Zxq w`‡b ïwUs †bIqv hv‡ebv| Zvn‡j ev‡RU µm Ki‡e| Zvn‡j Avi bvUK †kl Ki‡Z cvi‡ev bv| Avgiv H Abycv‡Z wØZxq w`‡bi KvR ïiæ Kijvg| mKvj 6Uvq †m‡U wM‡q nvwRi n‡qwQjvg| ivZ 2Uvq evmvq wd‡i fvejvg, Avn&& ïwUs †kl|

Zvici †cvó †cÖvWvKk‡bi KvR| GwWU c¨v‡b‡j Avgvi wb‡Ri †KvbI Gwm÷¨v›U ev †KvbI eÜy&I GKw`b hvq wb| Pvi PviwU ivZ, KvwU‡qwQ GB GwWwUs‡q| cÖ_g `yB ivZ m¤úv`bv mnKvix wg_yb‡K wb‡q bvU‡Ki I‡K kU †Rvov w`‡q ivdKvU `uvo Kivjvg| bvUK n‡q †M‡jv 56 wgwbU| Avwg Avðh©| GZ eo nIqvi K_v bv| Zvici Avgvi Avi GwWUi ¯^iƒc `vÕi (¯^iƒc Avb›`) Awd‡mi dv‡K dv‡K AviI `yB ivZ KvR Kivi ci bvUK `vov‡jv 44 wgwb‡U| e¨vKMÖvDÛ wgDwRK hv‡K w`‡q Kiv‡ev e‡j fvewQjvg Zv‡K †÷ªP Ki‡Z cvi‡jI KvR Kiv‡bv †M‡jv bv| A_P Zvi cÖwZB Avkv wQ‡jv| G‡Kev‡i Avb‡Kviv GKUv †Q‡j (mvD` cv‡fj) †K w`‡q wgDwRK Kivjvg| wgDwRK †Kv_vI †Kv_vI fv‡jv jvM‡Q †Kv_vI †KvbI iK‡giB bv| wKQz wKQz Kv‡iKkb K‡i w`wQ‡jv gvwZm| GB bvUK †`k wUwf‡Z Rgv †`Iqvi 15 w`b c‡i WvK‡jv GKw`b| †Mjvg| Zviv GK jvL lv‡Ui †ewk w`‡e bv †KvbI g‡ZB| †mB bvUK Avmj `v‡g gv‡b hv LiP Zv‡ZB †e‡P w`jvg Zv‡`i Kv‡Q| bvUKwU MZ 6 RyjvB †`k wUwf‡Z ivZ bUv 45 wgwb‡U cÖPvwiZ n‡q‡Q| Avwg Rvwb bvUKwU wK”Qz nq wb| wKš‘ ïiæUv †Zv Kiv †M‡jv| †mB Avb‡›` eMj evRvw”Q| Rq †nv wm‡bgvi hvÎv| wK”Qz bv n‡Z n‡ZB †Zv n‡q hv‡e GKw`b| GB ¯^cœB †`LwQ GLb|

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১২


খুব বেশী রোদ নেই বৃক্ষের
যতটা পথ হেটেছে সে কিশোর বেলায়
তারচেয়ে আপন হয়েছে আজ
মরিচ বাগানের ঘ্রাণ,

বন্ধুর নামের আগে কেনো লিখে রাখে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নাম
কেনো তার ভাত ঘুমে স্বপ্নেরা হানা দেয়
তাই বুছি জোছনার গান গাওয়া রাজহাঁস-
শুষুকের ভাগ্য ফেরায়

হাতে রেখে সু-সময়ের দিন, তোমাকে তাই বন্ধু হতে ডাকি-
      কেমন আছো জলের ঈশ্বর?
তাদের মুখরে কি সুখনিদ্রা আসে?
মাঝে মাঝে তাই ঋতুর বন্ধু হয়ে যাই
রোদ বৃষ্টি ফেরি করে বেরাই নগরের জানালায়
মানুষের ভাগ্য কি সেই রোদের বন্ধু হয়-
কি থাকে তাই অস্তিত্বের বিবর্ণ ইতিহাসে,
তার কথা লিখে রাখবে রোদের ডায়রী

রোদের সংসার

at মঙ্গলবার, মে ১৫, ২০১২  |  No comments


খুব বেশী রোদ নেই বৃক্ষের
যতটা পথ হেটেছে সে কিশোর বেলায়
তারচেয়ে আপন হয়েছে আজ
মরিচ বাগানের ঘ্রাণ,

বন্ধুর নামের আগে কেনো লিখে রাখে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নাম
কেনো তার ভাত ঘুমে স্বপ্নেরা হানা দেয়
তাই বুছি জোছনার গান গাওয়া রাজহাঁস-
শুষুকের ভাগ্য ফেরায়

হাতে রেখে সু-সময়ের দিন, তোমাকে তাই বন্ধু হতে ডাকি-
      কেমন আছো জলের ঈশ্বর?
তাদের মুখরে কি সুখনিদ্রা আসে?
মাঝে মাঝে তাই ঋতুর বন্ধু হয়ে যাই
রোদ বৃষ্টি ফেরি করে বেরাই নগরের জানালায়
মানুষের ভাগ্য কি সেই রোদের বন্ধু হয়-
কি থাকে তাই অস্তিত্বের বিবর্ণ ইতিহাসে,
তার কথা লিখে রাখবে রোদের ডায়রী

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম