রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬

নিঝুম দ্বীপের পথে

at রবিবার, আগস্ট ১৪, ২০১৬  |  No comments



এরপর আর মেঘদল, মহিনের ঘোড়াগুলি, পিংক ফ্লয়েড, রবিশংকর, ইনারিতু কিছুই ভাল্লাগেনা। এমন একটা মুহূর্ত অনেকটা হ্যাংআউটের মতো। অথচ নেশা টেশা কিচ্ছু করিনাই। কেন ভাল্লাগেনা ভেবে কোনও উত্তর না পাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গেলো। মন ভালো করতে হবে। তার জন্য চাই বিশেষ কিছু। কিন্তু বিশেষ কিছুটা কী? উত্তর জানা নাই। এইসবের সাথে আবার যোগ হয় গুলশান হামলা, শোলাকিয়া ঈদের জামাত, নামাজ না পড়া খারাপ মানুষ, ব্যাচেলর বিড়ম্বনা! সবকিছু মিলে একটা হচপচ অবস্থা। এই যেমন দুপুর দুইটার সংবাদের রানডাউন (লাইনআপ), হেডলাইন, এডিটর সব রেডি কিন্তু লিড আইটেমের স্ক্রিপ্ট নাই, রিপোর্টার নাই, ফুটেজ নাই অবস্থা। এই অবস্থা থেকেও যেমন নিউজরুম সংকট থেকে উৎরায় তেমন আমিও উৎরাইলাম। খালিয়াজুরির সফল ট্যুরের পর মোটামোটি একটা দল হইছিলো আমগো। যারা বিরিশিরির মতো দুর্বল পর্যটন এলাকাতেও গেছিলাম দল বেধে। তাদের স্মরণাপন্ন হইলাম। প্রত্যেকরে ফেসবুকে নক করে বলা গেলো, চল দ্বীপান্তর হই। বলতেই এক একটা হই হই করে রাজী। আরে কি সব্বনাশ! আমিতো ভাবছিলাম তরা কেউ যাবি না, আমি একলাই দাও মেরে আসবো। এখন কি হবে? যা থাকে কপালে। কপালের নাম গোপাল, আমার কপালের নাম রাজ কপাল। এই বলে সবাইরে নিয়েই যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।
হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের মাঝের মেঘনা-বঙ্গোপসাগর চ্যানেলে এ
সেই অনুপাতে দিন তারিখ ঠিক হইলো। কিন্তু আমি চাইলেই তো হবে না, ভগবান ইচ্ছা ঠাকুরনেরও তো চাইতে হবে। এই অবস্থায় দিন যত আগায় এক একজন করে উইকেট পড়তে থাকে। এগারোজনের মধ্যে ৬ উইকেট শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত ঝড়ে যায়। কী আর করা! সিক্স-এ সাইড টুর্নামেন্টও হইলো না, অগত্যা ৫ জনই সই। একা যাওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে বড় দল, তাও বিসর্জন দিয়ে ছোট দল নিয়েই একদিন বৈকালে উইঠ্যা পড়লাম হাতিয়াগামী এমভি ফারহান-৪ এ। বাহ্‌, সদরঘাট থেকে ইয়া বড় একটা লঞ্চ দিব্বি পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের নিয়ে চললো। যাইতে শুরু করলাম। বুড়িগঙ্গা পাড় হয়ে শীতলক্ষায় পড়ার পর নদীর পাড় ঘেষে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করলো। মালায়ালাম ছবির গ্রামগুলোর মতো শীতলক্ষার পাড় ধরে চমৎকার কিছু জায়গা দেখলাম। মনে হলো নদী থেকে নয়, একবার কেবল হাঁটার জন্য সেখানে আসা উচিত। তো এইরকম চারপাশ আমরা দ্রুত অতিক্রম করতেছিলাম। আর দ্রুতই সন্ধ্যাও নেমে এলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে চেয়ার টেনে লঞ্চের কেবিনের সামনে বসে পড়লাম আমরা। আড্ডা দিতে। আড্ডায় সবার আগে উঠে এলো এক সময় ঢাকা শহরের ভিনদেশী পর্যটকদের কোনও আয়োজন হলে সন্ধ্যাটা বুড়িগঙ্গার নৌবিহার দিয়ে শেষ হইতো। এখন হয় পানশালায়। এইভাবে বদলাইতেছে জীবন ও সমাজ। হইতেছি আধুনিক ও ডিজিটাল। 
এইটা সফরের আইকনিক ছবি। নিঝুম দ্বীপ বিচে।

 সময় গড়িয়ে আমাদের বহন করা লঞ্চ মেঘনায় গড়ায়। চাঁদপুর লঞ্চঘাট দূর থেকে দেখি। শহরে নদীর পাড় ধরে সার বদ্ধ আলোর দল। আর মাঝ নদীতে মাছ ধরা ইলিশের নৌকায়ও। মুগ্ধতা নিয়ে সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকি। ফাকে ফাকে গল্প আড্ডা তো চলেই। বলতে গেলে রাতভর। কেউ কেউ সময় সুযোগ আর ক্লান্তির দোহাই দিয়ে একটু একটু করে ঘুমিয়েও নেই। টের পাই না আসলে ঠিক কোন দিকে কোথায় যাচ্ছি। লঞ্চটাই ঠিক কোন জায়গায় আছে। আসপাশে কোন গ্রাম শহর মহকুমা! 
এইভাবে একসময় আকাশে সূর্য উঠে যায়। আমরা জানি আমাদের লঞ্চ যাত্রা শেষ হবে সকাল ৭টায়। তারও অনেক আগে সূর্য উঠে। পৃথিবী ঘুমের না, মনে করাইয়া দেয় আকাশ। ঘুম ঘুম চোখে আমরা দেখি লঞ্চ এসে একটা ভাঙাচোড়া ঘাটে এসে থামলো। এমন ভাঙাচোড়া ঘাটে এই লঞ্চ আরও আগেও যাত্রি উঠাইছে নামাইছে। তবে এই ঘাটটা বিশেষ। কারণ এইটার নাম মনপুরা। মনপুরা হচ্ছে ভোলার সবশেষ স্টেশন। এবং মেঘনার যত মাছ ঢাকায় আসে তার একটা বড় অংশ এখান থেকেই আসে। তবে নতুন কোনও যাত্রী যদি ঘাটের নাম জানতে চায় তার জন্য মহা বিপদ। কারণ অধিকাংশ ঘাটগুলোতেই ঠিক ঠিক জেটি টা লাগানো নেই। যেমন হাতিয়ার একমাত্র জেটিতে লাগানো চট্টগ্রামের একটা জেটি। মনপুরা ছেরে যখন হাতিয়ার দিকে যাচ্ছি, ততক্ষণে চারপাশে আরও আরও দ্বীপ চোখে পড়ছে। যেগুলোতে কেওড়া বনে ভর্তি। কোনও কোনও দ্বীপে তো মনে হয় বসতিও নাই। যেহেতু নদীর পাড় ঘেষে কোনও বসতি চোখে পড়লো না, মনে হইলো ভেতরেও নাই। ভাবতে ভাবতে সকাল সাতটা বেজে গেলো আর আমরা হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটে আইসা লঞ্চ থেকে নেমে গেলাম। 

হাতিয়া নামার পর ভুলে গেছি কিভাবে নিঝুম দ্বীপ যাইতে হয়। তবে একটা বিষয় মাথায় ছিলো, লোকাল লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যাওয়া যাবে না। তাতে হিতে বিপরীত যা হতে পারে, সব কিছুর খরচ বেড়ে যেতে পারে দ্বীগুণ। এই চিন্তায় ঘাটে নেমেই ফোন করলাম অবকাশ নিঝুম রিসোর্টের কেয়ারটেকারের কাছে। তিনি জানাইলেন তমরুদ্দি থেকে একটা অটো নিয়ে বা মোটরসাইকেলে করে যেতে হবে মুক্তারিয়া ঘাট। সেখান থেকেই আসলে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ দুটি পৃথক দ্বীপ হিসেবে নিজের ঘোষণা করেছে। ভাড়া বলে দিয়েছিলো সর্বোচ্চ আটশ টাকা। কিন্তু কোনও অটোই এই ভাড়ায় রাজি হয় না। শেষ পর্যন্ত ৯শ টাকায় রফা হলো অটোর। পাঁচ জনকে ঘন্টা খানেকেরও কিছু বেশী সময় পর নিয়ে মুক্তারিয়া ঘাটে নামাইলেন। ততক্ষণে পেটের ভেতর বাঘ ঢুকে গেছে। কিন্তু ঐ ঘাটে খাবার দোকানে বলতে কেবল আটার গুলগুইল্যা আর কিছু বিস্কুট। এক প্যাকেট বিস্কুট আমরা সাবার করলাম সেইখানে। তারপর অপেক্ষা করলাম ফেরির জন্য। এইখানে নৌকা দিয়ে পার হয়ে নিঝুম দ্বীপ পৌঁছাইতে হয়। ঐ পাড়েই নিঝুম দ্বীপ দেখা যায়। তবে থাকা খাওয়া বা ঘোরা ফেরার জন্য কেবল ঐপাড় গেলেই হয় না, যাইতে হয় দ্বীপের অন্য প্রান্তে। সেটাকে বলে নামার বাজার। এই জায়গাটাও এমনিতে চমৎকার। হো হো বাতাস বইছে। ঝলমলে রোদ। একদিকে সমুদ্র। আর একদিকে মেঘনার শেষ সীমানা। আর অন্যপাশে দ্বীপ। যেখানে অবস্থান করছি সেইটাও দ্বীপ। ভাবতেই ভালো লাগে। এইসব ভাবলে চলবে না। ঐ পাড়ে যাইতে হবে। যার জন্য আসছি। যত দ্রুত যাওয়া যায় ততই মঙ্গল ভেবে ট্রলার রিজার্ভ করে ফেললাম। ১শ টাকার ভাড়া ৩শ টাকায়! নয়তো এখানে দেড় ঘন্টাও বসাইয়া রাখতে পারে এই ভয়ে। উঠলাম ট্রলারে। দুই পাড়ের মাঝামাঝি গিয়ে আমাদের ট্রলার বন্ধ হয়ে গেলো। সমুদ্রমুখী প্রবল স্রোতে ট্রলার তখন সমুদ্রের দিকেই যাচ্ছে একটু একটু করে। যদিও মূল সমুদ্র বহু দূর। তবুও নষ্ট ট্রলারে সমুদ্রমুখী যাওয়া ভয়েরই কারণ বটে। অবশ্য যতটা ভয় আমরা পেতে পারতাম ততটা যেমন পাই নাই, ঠিক ততটা সময়ও লাগে নি ট্রলার ঠিক হইতে। নিঝুম দ্বীপে নামলাম। নেমে মনে হইলো হ্যা, এইখানেই আমরা আসতে চাইছিলাম। এইটা আদতেই একটা নিঝুম দ্বীপ। 
নিঝুম দ্বীপের হরিণ

ঘাটে নামার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো আমাদের নিয়ে পরোক্ষভাবে টানাটানি। আমরা কিসে করে নামার বাজার যাবো। কারণ ঐখানেই যেতে হবে। না গিয়ে উপায় নেই। ভাবছিলাম রিক্সা পেলে রিক্সায় করে ধীরে ধীরে যাইতে থাকবো চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে। রিকসা পাওয়া গেলো না। অগত্যা মোটর সাইকেলে চরে বসলাম। তিনটা মোটরসাইকেলে পাঁচজন যাত্রী। বাইক ছাড়ার পর থেকেই চারপাশে কেবল কেওড়া বন। অনেকটা সুন্দরবনের মতোই। তবে পুরোপুরি না। হয়ত শতকরা ২০ভাগ! বাইকওয়ালা বলছিলো বিকেল বেলা এই পাকা রাস্তার পাশেও হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। খুব বেশীক্ষণ লাগলো না। দশ মিনিটের মতো। আমরা চলে এলাম নামারপাড়া বাজার। মানে নিঝুম দ্বীপের মূল পয়েন্টে। এই বাজারে বসেও সমুদ্রের ডাক শুনতে পাওয়া যায়। সকাল সকাল নির্জনতার সুযোগ (কখনও ভোরে) পেলে বাজারেও আসে হরিণ। এই রকম ছিলো এক সময়কার অবস্থা। আমরা বাজারে পৌঁছানোর সাথে সাথেই কেয়ারটেকার আমাদের ব্যাগপত্র নিতে এলো। দেখিয়ে নিয়ে গেলো রিসোর্টে। বর্ষাকাল বলে এখন সেখানে পর্যটক নেই। পুরো দ্বীপের মেহমান আমরা পঞ্চপাণ্ডবই। রুমে ফিরেই ফ্রেস হয়ে বের হয়ে পরলাম সমুদ্র দেখবো বলে। আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। তাই রিস্ক হবে ভেবে আর ক্যামেরা নেই নি। আমরা চাইতেছিলাম সমুদ্রের পাড়ে থাকতেই একটা ঝুম বৃষ্টি নামুক। আর বৃষ্টির সময় সমুদ্রের চেহারাটা কেমন হয় একটু তার পাড়ে দাঁড়ায়ে দেখি। যেই দৃশ্য সমুদ্রপাড়ের মানুষ নিয়মিতই দেখে। 
নিঝুম দ্বীপ এর সমুদ্র সৈকত

নামারপাড়া বাজার থেকে বিচের দিকে যেতে যেতে এক দঙ্গল পুঁচকে আমাদের সাথে নাছোরবান্দার মতো লেগেছিলো। কোনওভাবেই তাদের এড়াতে পারিনি। তবে বিচ আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। নির্ঝঞ্ঝাট, ভিড় কোলাহলহীন এবং একটু অন্য রকম। বিচের সবটা তখন ঘোরা গয়নি। যেই সবটায় অন্য সবাই যায় নি, সেখানটায় আমি একা গেছি। পরের দিন ভোরে। বিচ থেকে ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেয়েছি। এক হোটেলে। এক কেজি কাকড়া ভুনা, আর সাথে নদীর তাজা পাবদা মাছ আর ডাল, সবজি।  
এই রকম কেওড়া বন আর খাল পাড় হয়ে হরিণ দেখতে যাইতে হয়
দুপুরে খাওয়ার পর টিমের সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সবাই ঘুম দেয়। আমি বের হয়ে নামার বাজারের আশপাশের কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে চেষ্টা করি। সম্প্রতি নির্মিত একটা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাখির চোখে নিঝুম দ্বীপ দেখি। ফিরে এসেও দেখি তাদের ঘুম ভাঙে না। ডেকে তুললাম সবাইকে। বললাম, এখন না উঠলে তোমরা হরিণ দেখতে পাবা না। এই কথা বলার সাথে সাথে সকলের ঘুম ভেঙে গেলো। একটা নৌকা ভাড়া করা হইলো। বৈঠা নৌকা। খালধরে বনের এক পাশ পার হয়ে নদীর পাড়ে যাইতে হয় এই নৌকা দিয়ে। তারপর সেখানে নদীর পাড়ে মাঠে নেমে ঢুকতে হয় কেওড়া বনে। এই বনেই হরিণ থাকে। মাঝে মাঝে যেখানে বন থেকে বাইরে বের হয়ে আসে সেই হরিণ। মাঠে গরুদের মতো এসে ঘাস খায়। তো আমরা নৌকায় উঠতে গিয়ে দেখলাম ভাটার টানে খালে পানি নাই। এই কারণে আমরা হেটে গেলাম অনেকটা। হাটু পর্যন্ত কাদায় মাখামাখি করে খালের যেখানটায় পানি একটু বেশী, সেখানে গিয়ে নৌকায় উঠলাম। নৌকায় করে আমরা বনের ভিতর দিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম হয়তো এখানেই হরিণ পেয়ে যাবো। পাইলাম না। পুরো সফরের মূল লক্ষ্য ভেস্তে যাওয়ার যোগার দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। নৌকা চালক গাইড হিসেবে আমাদেরকে বনের ভেতর নিয়ে গেলেন। বনে ঢোকার মিনিট খানেকের মাঝেই হরিণের দেখা পেলাম। একটা দুইটা না। বেশ কয়েকটা। ছবিটবি তোলা শেষ হয়ে গেলে ফিরে আসলাম। প্রথম ইনিংসে তিন জন যাওয়ার পর, দ্বিতীয় ইনিংসে গেলো বাকি দুই জন। তারা আমাদের চেয়ে বেশী হরিণ দেখলো। তারা বের হওয়ার পর দেখা গেলো, কিছু হরিণ মাঠেই চলে এসেছে। নিঝুম দ্বীপে হরিণ দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটামোটি এই রকম বা এরচে ভালো। এরচে খারাপ অভিজ্ঞতা হইছে এমন কারো কাছ থেকে শুনিনাই। সন্ধ্যাটা সেই খাল, বন আর মাঠ ঘিরেই কাটালো। এক কথায় একটা চমৎকার অভিজ্ঞতাও। রুমে ফিরে এসে আবারো ফ্রেস হওয়া। তারপর সন্ধ্যার নাস্তা করতে গিয়ে দেখা হলো স্থানীয় নিঝুম দ্বীপ পুলিশ ফারির ইনচার্জ সাব ইনস্পেক্টরের সাথে। ভদ্রলোক আমারকে চা খাওয়াতে চাইলেন, উল্টো আমরা উনাকে চা খাওয়ায়ে দিলাম। ;) 

রাতের খাবারের পর আর কোনও অ্যানার্জি ছিলো না। তাই যে যার মতো দ্রুত শয্যা গ্রহণ করি আমরা। কথা ছিলো পরদিন ভোরে উঠে সি বিচ এর যেই দিকটায় যাওয়া হয় নি, সেই দিকটায় যাবো। ক্লান্ত সবাই ঘুমাইলো। আর আমি একা ঘুরে আসলাম বিচের অন্য একটা প্রান্ত। অবশ্য পুরোটা দ্বীপের এক প্রান্তই তো সমুদ্র। কিন্তু বিচ নেই সব দিকে। ঐ একটা দিকেই আছে বলা যায়। নিঝুম দ্বীপে আমাদের থাকার সময় ফুরিয়ে আসছে। কারণ, হাতিয়া থেকে ঢাকার উদ্যেশ্যে একটিই লঞ্চ আসে। তাই এই লঞ্চ মিস করলে বিপদ। আর লঞ্চটাও ছাড়ে দুপুর সাড়ে বারোটায়। কিন্তু নিঝুম দ্বীপ থেকে হাতিয়া আসতে কমপক্ষে সময় লাগে ২ ঘন্টা। তার মানে আপনি যদি পরদিন ফিরতে চান আপনাকে ঘুম থেকে উঠেই হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। তবে হ্যা, আপনি যদি নিঝুম দ্বীপে আসার পথেই ফিরতে চান তাহলে অবশ্যই সকাল নয়টার মধ্যে মটর সাইকেলে করে রওনা দিতে হবে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। আর নয়তো নিঝুম দ্বীপ থেকে প্রতিদিন সকালে মাছ নিয়ে একটা ট্রলার আসে তমরুদ্দিন। এই ট্রলারে তমরুদ্দিন পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত সাধারণত লঞ্চ ছাড়ে না। তবে ট্রলার ওয়ালারও চায় না লঞ্চ দেরি করুক। তাই এই ট্রলারে করেই সরাসরি হাতিয়া চলে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ। আমরাও সেই পথেই হাতিয়া ফিরেছি। এই জার্নিটাও আরামদায়কই ছিলো। আমাদের ট্রলার নিঝুম রিসোর্টের সামনে থেকে ছেড়েছে সাড়ে নয়টায়। আর বারোটায় এসে হাতিয়ায় লঞ্চে উঠি। সাড়ে বারোটায় লঞ্চ ছাড়ার পর, পরদিন সকাল আটটায় আমরা ঢাকার সদরঘাটে নেমেছি। দিনের সময়কার লঞ্চ জার্নিটা ছিলো দুর্দান্ত। তবে ফেরার সময় রাতে আমরা বিরক্ত বোধ করছি। যদিও এইটাই স্বাভাবিক তা কিন্তু নয়। তবে সব মিলে পুরো সফর ছিলো দুর্দান্ত। সেই কথা তো আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।

Share
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম