শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১১


এইবার মৃত্যুর পিছে ছুটে বড় টান অনুভব করছি
দেখেছি নিয়ন আলোয় স্বপ্নের রঙও বদলে যায়-
ট্রাফিক পুলিশের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা জীবন
মাঝে মাঝে ডুবে গেলে হাতের মুঠোয়
সন্ধ্যার রঙ হয়ে উঠে নিবিরতম৷

এই ভুল করা সময়ের কথা মনে করে প্রতিদিন
একটা চিঠি লিখে পোস্ট মাস্টার, যার
প্রাপক হওয়ার কথা ছিলো নিজেরই- তবুও
চিঠি পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে- মৃত্যুকে ঈর্ষা করে
সেই বার্তা পৌঁছায়- তার প্রেরিত বার্তা জানে কেবল
জন্মান্ধ পাগল; যার ঘরে রাত নেমে এলে
প্রতিদিন জোনাক জ্বলে
             সেখানে মৃত্যু আলোর ফোয়ারা
                        একই রঙের দেখতে৷

ইলিয়াস কমল এর কবিতা

at শুক্রবার, আগস্ট ১২, ২০১১  |  No comments


এইবার মৃত্যুর পিছে ছুটে বড় টান অনুভব করছি
দেখেছি নিয়ন আলোয় স্বপ্নের রঙও বদলে যায়-
ট্রাফিক পুলিশের মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা জীবন
মাঝে মাঝে ডুবে গেলে হাতের মুঠোয়
সন্ধ্যার রঙ হয়ে উঠে নিবিরতম৷

এই ভুল করা সময়ের কথা মনে করে প্রতিদিন
একটা চিঠি লিখে পোস্ট মাস্টার, যার
প্রাপক হওয়ার কথা ছিলো নিজেরই- তবুও
চিঠি পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে- মৃত্যুকে ঈর্ষা করে
সেই বার্তা পৌঁছায়- তার প্রেরিত বার্তা জানে কেবল
জন্মান্ধ পাগল; যার ঘরে রাত নেমে এলে
প্রতিদিন জোনাক জ্বলে
             সেখানে মৃত্যু আলোর ফোয়ারা
                        একই রঙের দেখতে৷

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১১


বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে তরুণতম শাখা এই ছোটগল্প। ছোটগল্পের উদ্ভবের পরপরই তুলনামূলক দ্রুততার চর্চার সাথে সাথে বাড়তে থাকে উৎকৃষ্টের মান। এ শাখায় উৎকৃষ্টের পর্যায়ে চলে আসার পেছনে বাংলা গল্পের যে সূবর্ণ দিন গেছে তার মাঝে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিশারীর মত নাম। এই নাম তার ব্যক্তি সত্ত্বার বাইরে এসে আমাদের উপহার দিয়েছেন আশ্চর্য কিছু গল্প। এই গল্পগুলো শুধুমাত্র আঙ্গিক, পোপটের উপর নির্ভর করেই নয়, বিষয়ের দিক দিয়ে এনেছে সার্বজনিন ও সর্বকালিক এক অভিজোযনা।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই শ্রেষ্ঠগল্পের একটা বড় অংশ রচনা করেছেন বিংশ শতকের ত্রিশের দশকে। ছোটগল্পের এই বেড়ে উঠার কালের সময়টা শুধু মাত্র ছোটগল্পের নয়। এই সময়েই আমাদের সাহিত্যে এসেছে আমাদের বাংলা কাব্যের সর্বাধুনিক চেহারা বা নতুন রূপময়তা। কাব্যের এই রূপময়তার সাথে আমরা ছোটগল্পের এই রূপময়তার দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাই সারা পৃথিবীতে যখন বিভীন্ন দর্শনের প্রভাবে তরুণ-যুবা সমাজ বিভক্ত হওয়া শুরু করছে তখনই এই বাংলাতেও আমাদের প্রভাবিত করেছে বেশ কিছু দর্শন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠগল্পগুলোর মাঝেও এরকম একাধীক দর্শণের প্রভাব আমরা দেখতে পাই। মূলত মানিকের শেষ্ঠগল্পের একটা বড় অংশ তাঁর ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থে অবস্থিত।

এই গ্রন্থের অধিকাংশ গল্পের মাঝে দর্শনের প্রভাবের চাইতে বেশী পরীলতি হয় মানিকের সৃষ্ট চরিত্রের নৈসঙ্গিক ভাবনা। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থের নয়টি গল্প হতে আমরা ৭ (সাত) টি গল্পের ভেতর গল্পের চরিত্রগুলোর মাঝে এই উপস্থাপনগত নৈসঙ্গিক চিন্তার প্রভাব দেখতে পারি। ব্যক্তিগত ভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন ধরনের নৈসঙ্গিক ভাবনা থেকেই হয়তবা তার অবতার। তবে তিনি নিঃসঙ্গতায় ভুগেছেন তা আমি বলতে চাই না।

আমাদের আলোচনার বিষয়টা মানিক সৃষ্ট চরিত্রের নিঃসঙ্গতার দিকেই নিবদ্ধ রাখতে চাই। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থের সেরা বা আমরা যদি মানিকের সৃষ্ট গল্পগুলোর মাঝে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ কে শ্রেষ্ঠ বলি তা নিয়ে কোন তর্ক হবে না আশাকরি। তারপরই যে কথাটা সর্বাংশে সত্য তা হলো আমাদের বাঙালি মণিষায় যে দর্শনগুলো সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলেছে তার মাঝে মার্ক্সবাদ ও ফ্রয়েডবাদ অন্যতম। মানিক তাঁর ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পে এই দুইটি দর্শনেরই সমান প্রয়োগ করেছেন বলে আমি মনে করি। যদিও এখানে মার্ক্স ও ফ্রয়েডের এই দ্বিরুক্তবাচক দুই দর্শন নিয়ে সমান বিতর্কও আছে। কিন্তু প্রাগৈতিহাসিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিখু-যে প্রকৃত একজন নিসঙ্গ মানুষ তা দেখার জন্য আমাদের অর্ন্তদৃষ্টির প্রয়োজন পরে না। প্রয়োজন পরে একটু বুঝে উঠার। সামাজিক ভাবে ভিখৃু ছিলো সমাজের আদিমতম মানুষের একজন প্রতিনিধি। এই প্রতিনিধি আধুনিক সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে এই বিভৎস রূপ ধারণ করে টিকে থাকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। জীবনকে সর্বোতভাবে উপভোগের তীব্রতর বাসনা চরিতার্থ করার জন্য ভিখু যে কোন কাজ করতে দ্বিধা করে না। ড. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘ভিখুর বলিষ্ঠ বীভৎস আদিম মানব-রূপটি লেখক অসামান্য দতায় চিত্রিত করেছেন ও ভিখুর পরিণাম নির্ভুলভাবে দেখিয়েছেন। ভিখুর জীবনে সভ্যতার আলো পড়েনি। প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে তার উত্থান ও বিলয়।’  এই ভিখু যখন বৈকুন্ঠ সাহার গদি থেতে জান নিয়ে পালিয়ে এসে পেহাদের কাছে আশ্রয় চায়, পেহাদ তাকে আশ্রয় দেয় নি। পেহাদ কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল, ‘ঘাও খান সহজ লয় স্যাঙ্গাৎ। উটি পাকবো। গা ফুলবো। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু? খুনটো যদি না করতিসÑ’’ এইভাবে পেহাদ ভিখুকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভিখুর ভয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে বনে রেখে আসার ব্যবস্থা করেই আপাতত ান্ত। যদি কিনা ভিখু পেহাদকে এই আদিম চরিত্রের ভয়টা না দেখাত তবে পেহাদ মূলত ভিখুকে এই সুবিধাটাও করে দিতে রাজি হতো না। তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই পেহাদ অন্যগ্রামে বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে গেলেই। “কুটুম-বাড়ির বিবাহোৎসবে তাড়ি টানিয়া বেহুঁস হইয়া পড়িয়া রহিল। বনের মধ্যে ভিখু কি ভাবে দিন-রাত্রি কাটাইতেছে তিন দিনের মধ্যে সেকথা একবার তাহার মনেও পড়িল না।”  শুধুমাত্র এইটুকুই একাকীত্ত্বের মাঝ দিয়েই তার নৈসঙ্গিকতা যথেষ্ট নয়। ফ্রয়েডের মতে, মানুষের জীবনপ্রবৃত্তির অন্তর্নিহিত মূল চালিকা শক্তির নাম লিবিডো। সকল তেজ ও উদ্যমের মৌলপ্রেরণা এই লিবিডো প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ যৌনধমী। তবে ফ্রয়েড যৌনতাকে প্রচলিত সংর্কীর্ণ অর্থে গ্রহণ করেন নি। সকল প্রকার আসক্তি বা সুখ-অন্বেষার সর্ববিধ প্রচেষ্টাকেই তিনি যৌনতা বলে অভিহিত করেছেন। ফ্রয়েড মানবমনের উদ্দেশ্যসমষ্টির উৎসকে ইদম, অহম ও অধিসত্তা এই তিন স্তরে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে এই ইদমই প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ নীতিহীন এবং কেবল সুখভোগই যার উদ্দেশ্য। ইদম তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য লিবিডো দ্বারা বর্হিবস্তুকে আকর্ষণ করেÑ যার নাম বিষয়াকর্ষণ, কেবল প্রবৃত্তিগত তাগিদেই এই বিষয়াকর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই লিবিডো তাড়িত হয়েই সে তার কামনা বাসনার জন্য হাহাকার করে। একহাত নষ্ট হয়ে গেলেও তার ব্যক্তি মানষের কামনা-বাসনার ভাব তার মনের ভেতর থেকে বিনষ্ট হয় নি। যার দরুন সে ‘‘রাত্রে স্বরচিত শয্যায় সে ছটফট করে। নারী-সঙ্গহীন এই নিরুৎসব জীবন আর তাহার ভাল লাগে না। অতীতের উদ্দাম ঘটনাবহুল জীবনটির জন্য তাহার মন হাহাকার করে উঠে।’’ এই নারী-সঙ্গের অভাবই মূলত তার চিন্তার গতি ফেরায় পাঁচির দিকে। অথচ এক সময় এই ভিখুর কাছে নারী সঙ্গ সামান্য ব্যাপার মাত্র। সেই ভিখুর পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে গেলেও তার মাঝে যে সেই উদ্দাম ভিখুর অভাব সে বোধ করে তার জন্যই সে মাঝে মাঝে মনে করে ‘‘পৃথিবীর সমস্ত পুরুষকে হত্যা করিয়া পৃথিবীর যত খাদ্য ও যত নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।” এই নারী সঙ্গের অভাব আর চারপাশের অসহযোগীতার দরুন মানুষের আদিম প্রবৃত্তির যে দিক বেড়িয়ে আসে তার যে সঙ্গা সিগমুন্ড ফ্রয়েড দিয়েছেন তা পুরোপুরি আস্থা রাখার মত নয় যদি মার্ক্সের অর্থনৈতিক রূপান্তরে আস্থা থাকে। মানিক যদি এখানে পাচিকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রয়েডকে প্রতিষ্ঠা করে তবে ভিখু এখানে প্রত্যভাবে প্রতিষ্ঠা করে মার্ক্সকে। কারণ ভিখুর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এবং সামাজিক স্বীকৃতি থাকলে ভিখুর ভেতর হতে এই প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার দূরিভত হতো।

নিমগ্নতার ও নৈসঙ্গ্যিকতার পরবর্তি উদাহরণ তিনি দিয়েছেন ‘চোর’ গল্পের মধু’র মাঝে। যে মধু তার নিজের জীবনে একটি সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে যে ‘‘জগতে চোর নয় কে? সবাই চুরি করে। কেউ করে আইন বাঁচাইয়া, কেউ আইন ভাঙে। স্বাধীনতার মূলধন লইয়া ও ব্যবসায় নামিতে যাদের সাহস নাই চুরিকে পাপ বলে তাহারাই।’’ মধু ঘোষের নৈসঙ্গ্যতা এক অর্থে আরো করুন। মধু ঘোষের ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে ব্যক্তিগত নৈঃসঙ্গ্যবোধ, অসহায়ত্ববোধ কিংবা অস্তিত্বজিজ্ঞাসার পীড়নে যরাগ্রস্থ। বৃষ্টি বিঘিœত রাতে শরীরে জ্বর নিয়েও সে চুরি করতে বের হয় কিন্তু তার মন বলে অন্য কথা। মন বলে তার স্ত্রী তার পারে ধরিয়া, গলা জড়াইয়া ধরে বলুক অসুখ শরীরে তোমার আজ আর চুরি করতে যাওয়ার দরকার নাই। এই আকাংখ্যা তার শূন্য হয়ে পড়ে থাকে। আর তাই বৃষ্টির রাতে জ্বর শরীরে নিয়েও মধু বেড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মধুর দ্বিধা ও দ্বন্দ্বমুক্তির কোন উল্লেখ দেখা যায় না। বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা না মেটার দরুন রাখাল মিত্রের গৃহে প্রবেশের পর তার নিদ্রিত তরুণী-কন্যার রূপসৌন্দর্য দর্শন মধূ ঘোষকে পুনরায় দ্বন্দ্বাক্রান্ত করে তোলে। প্রকৃত সত্য এখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই লিখেছেন। “চোরেরা জীবনে বড় একা। ওদের আপন কেহ নাই। কবির মতো, ভাবুকের মতো নিজের মনের মধ্যে ওরা লুকাইয়া বাস করে।” এই নৈঃসঙ্গ্যতার সত্যতা পাই গল্পের শেষ পর্যায়ে মধূর স্ত্রী’র পলায়নের মাধ্যমে। রাখাল মিত্রের ছেলে পান্নালাল মিত্রের কাছে চুরি হয়ে যায় কাদু।

একজন মানুষ সমাজ সংসারে আপাদমস্তক নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করে। এই জীবন-যাপনের মাঝে শুধু থাকে একটা অদৃশ্য বাঁধন। মাঝে মাঝে এই অদৃশ্য বাঁধন কেবল যন্ত্রনার কাটা গায়ে বিধায়। তাছাড়া মানুষের সম্পূর্ণ সত্ত্বার নৈঃসঙ্গিক অবস্থান তা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। এই রকম নৈঃসঙ্গতার এক অকাট্য প্রমাণ ‘যাত্রা’ গল্প। ‘যাত্রা’ গল্পের দুই চরিত্র বিয়ের কনে ইন্দু আর কনের পিতা ইন্দুর বাবা। “বিদায় সত্যই সমারোহের ব্যাপার।” মানিক এই সমারোহের মাঝ দিয়ে ইন্দুর বাবাকে ইন্দু থেকে ইন্দুকে ইন্দুর বাবা থেকে সেই অদৃশ্য বাঁধনের কাটা বিধিয়ে বিদায় করে দিলেন। এই সমারোহিত ব্যাপারে ইন্দুর জন্য আরিক অর্থে ইন্দুর বাবার কোন কিছু বা ইন্দুর বাবার জন্য ইন্দুরও কিছু করার নেই। পর্যাপ্ত ভূমিকার শেষে এক একজন পলায়ন পর চরিত্র ইন্দুকে বিদায় দিয়ে ইন্দুর বাবাও নিজে নৈঃসঙ্গিকতার উদাহরণ হলেন। যদিও মাঝে আমরা ইন্দুর মনোবাসনার দ্বারা বুঝতে পারি ইন্দু এই বিদায়ের ভূমিকা গ্রহণ করতে চায় না। তবুও সাময়িক এই ভাবনাও কিন্তু আমাদের দৃষ্টি কাড়তে ভূলে না।

“সংসারে এমন অনেক মানুষ থাকে, জীবন যাহাদের এমন শিাই দেয় যে প্রত্যাশা করিতে তারা ভুলিয়া যায়।” মানিকের প্রকৃতি গল্পের মূল চরিত্র  অমৃতের মূল প্রকৃতি আসলে তাই। কিন্তু, লেখক এখানে সচতুর ভাবে মেধা ও মননের যে তিব্র স্ফুরণ দেখিয়েছেন তার কারণে অমৃত এই স্ট্রাকচার থেকে বেড়িয়ে এসে উল্টো স্ট্রাকচার তৈরি করেছেন। যার দরুন এখন “প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা যাদের আছে তাদের সে মনে প্রাণে ঘৃণা করে। প্রয়োজনের উপযুক্ত টাকা যাদের নাই তাদেরও তো সে সহিতে পারে না।” এই অসম সংস্কারের ভেতর এখন অমৃতের বসবাস। সমাজ বা প্রকৃতিতে অমৃতের কেউ নাই। কেউ নাই বলতে তার মুখাপেি যে পরিবারটা ছিলো দেশে সেই পরিবারটাকে সে নিজে আপন করার চেষ্টা করা করলেও অর্থ বিত্ত মাঝে এসে দাড়িয়ে অমৃতের কাছ থেকে তার স্বপ্নের শৈশব ও পিতার সমতূল্য প্রমথ বাবুকে কেড়ে নিয়ে বানিয়েছে একজন প্রমথ বাবু। একজন অমৃতের জীবন কেমন নিঃসঙ্গ তা মানিক বন্দ্যোপধ্যায় জানিয়েছে তার ‘প্রকৃতি’ গল্পের শেষ অনুচ্ছেদে অমৃতের সাথে রাখাল হালদারের দেখা করার পূর্বের সময়টা বর্ণনা কালেÑ “কতকাল নিঃসঙ্গ কাটিয়াছে। মানুষের সাহচর্য ছাড়া কি মানুষ বাঁচে, ঘৃণা করিয়া, ভাল না বাসিয়া? অন্তত তার একটা খুব বাস্তব অভিনয় বিনা? হোক মিথ্যা, হোক ফাঁকি, মানুষের এই রকম প্রকৃতি।” এই অমৃত যে প্রকৃতই একা তার প্রমাণ তার আগামী দিনের অভিনয়ের মাধ্যমে।

মানিক গবেষক সৈয়দ আজিজুল হক বলেছেন- ‘‘ হত্যার অভিযোগে স্বামীর মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা ও তা থেকে মুক্তিলাভ প্রভৃতি ঘটনার সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বর্হিবিষয়ক চাপ একজন গৃহবধুর জন্য কী তীব্র মনোবেদনার কারণ হতে পারেÑ তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে ফাঁসি (প্রাগৈতিহাসিক) গল্পে)।” নির্দোষ গণপতির ফাঁসির আদেশ হওয়ায় কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে গণপতি তার জীবন-মৃত্যুর কথাই কেবল ভেবেছে। কারাগারের চারদেয়ালের বাইরের যে জীবন তাকে আবর্তন করে পরিবর্তিত হচ্ছে তা গণপতির ধারণাতে ছিলো না। যার দরুন গণপতির প্রত্যাবর্তনের পরও গণপতির স্ত্রী রমার মনে তার প্রত্যাগমনের চেয়ে তার আত্ম-স্বীকৃতিই মূখ্য হয়ে উঠেছে। গণপতির আগমনের পর তাকে ঘিরে যে উৎসাহের রোল বাড়িতে পড়ে সেই মিছিলে রমা সামিল হয় না। দীর্ঘদিন ‘খুনির স্ত্রী’ এই বঞ্ছনা কাঁধে নিয়ে সে ধিরে ধিরে পরিবারের সকলের মাঝে একা হয়ে উঠে। “স্বামীর জন্য শুধু ভাবিয়াই রমা রেহাই পায় নাই, নিজের অন্ধকার ভবিষ্যৎটার পীড়র সহিয়াই তার মহাশক্তির পরীা শেষ হয় নাই, আরও অনেক কিছু জুটিয়াছে। বাহিরের জগৎ নরঘাতকের স্ত্রীকে যা দেয়! সেসবে যে কি এবং সেসব সহ্য করিতে একটি নিরুপায় ভীরু বধুর যে কতখানি কষ্ট হইতে পারেÑ ধারণা করিবার মতো কল্পনাশক্তি গণপতির ছিল না। যেটুকু সে অনুমান করিতে পারিল- তাতেই বুকের ভিতরটা তাহার তোলপাড় করিতে লাগিল।” এই বর্হিজগতের চাপ রমাকে অর্ন্তমুখি করতে করতে একদম তলানিতে এনে ফেলে। ফলে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই রমাকে এখানে বিকল্প পথ তৈরি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণনা এখানে প্রয়োজন- “গণপতি পুরুষ-চারদিকের সমস্ত সংশয়, বিষ আর বিদ্রুপের মধ্য দিয়েও আবার হয়তো সে সহজ জীবনে ফিরে যেতে পারবে, কিন্তু রমার মনে যে জটিলতার গ্রন্থি পড়েছে- তার মোচন সে করবে কী উপায়ে? এই দৈনন্দিন আত্মদ্বন্দ্বের মধ্যে বাইরের জগৎ প্রতিদিন ইন্ধন দেবেÑ মনের দিক থেকে রমা কখনো স্বামীকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারবে না- এই অসহ্য দ্বিমুখী পীড়নের হাত থেকে তার নি®কৃতি নেই।” ফলে একান্ত যন্ত্রনার বিষ বইতে বইতে আরো কোনঠাসা জীবন রমা চাইতে পারে না। এর পরিণতিই তাকে উদ্বুদ্ধ করে গণপতিকে প্রত্যাবর্তনের পরদিনই এই অঞ্চল, এই মানুষ-সমাজ ছেড়ে অজানা জনপদে আত্মগোপন করার। কিন্তু এই আত্মগোপনে গণপতিকে রাজি করতে না পারার কারণেই পরদিন সকালে শোনা যায় বাড়ির মেজবৌ গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করেছে। যা গণপতির প্রত্যাবর্তনের পরও রমার যন্ত্রনাবিদ্ধ নিঃসঙ্গ জীবন থেকে উৎরানোর উপায়।

মানিক বন্দ্যোপধ্যায় ব্যক্তি জীবনের এই নিঃসঙ্গতাকে কীভাবে পাঠ করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের মানিকের ব্যক্তি জীবনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যদিও ব্যক্তির সাথে তার সৃষ্টির একটা মিল বা সাদৃশ থাকে বলে আমরা ধারনা করি। কিন্তু, সে কথা অন্যদিন।

প্রাগৈতিহাসিকের নৈসঙ্গিক উপস্থাপনা

at শনিবার, আগস্ট ০৬, ২০১১  |  No comments


বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে তরুণতম শাখা এই ছোটগল্প। ছোটগল্পের উদ্ভবের পরপরই তুলনামূলক দ্রুততার চর্চার সাথে সাথে বাড়তে থাকে উৎকৃষ্টের মান। এ শাখায় উৎকৃষ্টের পর্যায়ে চলে আসার পেছনে বাংলা গল্পের যে সূবর্ণ দিন গেছে তার মাঝে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক দিশারীর মত নাম। এই নাম তার ব্যক্তি সত্ত্বার বাইরে এসে আমাদের উপহার দিয়েছেন আশ্চর্য কিছু গল্প। এই গল্পগুলো শুধুমাত্র আঙ্গিক, পোপটের উপর নির্ভর করেই নয়, বিষয়ের দিক দিয়ে এনেছে সার্বজনিন ও সর্বকালিক এক অভিজোযনা।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এই শ্রেষ্ঠগল্পের একটা বড় অংশ রচনা করেছেন বিংশ শতকের ত্রিশের দশকে। ছোটগল্পের এই বেড়ে উঠার কালের সময়টা শুধু মাত্র ছোটগল্পের নয়। এই সময়েই আমাদের সাহিত্যে এসেছে আমাদের বাংলা কাব্যের সর্বাধুনিক চেহারা বা নতুন রূপময়তা। কাব্যের এই রূপময়তার সাথে আমরা ছোটগল্পের এই রূপময়তার দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাই সারা পৃথিবীতে যখন বিভীন্ন দর্শনের প্রভাবে তরুণ-যুবা সমাজ বিভক্ত হওয়া শুরু করছে তখনই এই বাংলাতেও আমাদের প্রভাবিত করেছে বেশ কিছু দর্শন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠগল্পগুলোর মাঝেও এরকম একাধীক দর্শণের প্রভাব আমরা দেখতে পাই। মূলত মানিকের শেষ্ঠগল্পের একটা বড় অংশ তাঁর ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থে অবস্থিত।

এই গ্রন্থের অধিকাংশ গল্পের মাঝে দর্শনের প্রভাবের চাইতে বেশী পরীলতি হয় মানিকের সৃষ্ট চরিত্রের নৈসঙ্গিক ভাবনা। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থের নয়টি গল্প হতে আমরা ৭ (সাত) টি গল্পের ভেতর গল্পের চরিত্রগুলোর মাঝে এই উপস্থাপনগত নৈসঙ্গিক চিন্তার প্রভাব দেখতে পারি। ব্যক্তিগত ভাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন ধরনের নৈসঙ্গিক ভাবনা থেকেই হয়তবা তার অবতার। তবে তিনি নিঃসঙ্গতায় ভুগেছেন তা আমি বলতে চাই না।

আমাদের আলোচনার বিষয়টা মানিক সৃষ্ট চরিত্রের নিঃসঙ্গতার দিকেই নিবদ্ধ রাখতে চাই। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পগ্রন্থের সেরা বা আমরা যদি মানিকের সৃষ্ট গল্পগুলোর মাঝে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ কে শ্রেষ্ঠ বলি তা নিয়ে কোন তর্ক হবে না আশাকরি। তারপরই যে কথাটা সর্বাংশে সত্য তা হলো আমাদের বাঙালি মণিষায় যে দর্শনগুলো সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলেছে তার মাঝে মার্ক্সবাদ ও ফ্রয়েডবাদ অন্যতম। মানিক তাঁর ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পে এই দুইটি দর্শনেরই সমান প্রয়োগ করেছেন বলে আমি মনে করি। যদিও এখানে মার্ক্স ও ফ্রয়েডের এই দ্বিরুক্তবাচক দুই দর্শন নিয়ে সমান বিতর্কও আছে। কিন্তু প্রাগৈতিহাসিকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিখু-যে প্রকৃত একজন নিসঙ্গ মানুষ তা দেখার জন্য আমাদের অর্ন্তদৃষ্টির প্রয়োজন পরে না। প্রয়োজন পরে একটু বুঝে উঠার। সামাজিক ভাবে ভিখৃু ছিলো সমাজের আদিমতম মানুষের একজন প্রতিনিধি। এই প্রতিনিধি আধুনিক সমাজের বিবর্তনের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে এই বিভৎস রূপ ধারণ করে টিকে থাকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। জীবনকে সর্বোতভাবে উপভোগের তীব্রতর বাসনা চরিতার্থ করার জন্য ভিখু যে কোন কাজ করতে দ্বিধা করে না। ড. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন ‘ভিখুর বলিষ্ঠ বীভৎস আদিম মানব-রূপটি লেখক অসামান্য দতায় চিত্রিত করেছেন ও ভিখুর পরিণাম নির্ভুলভাবে দেখিয়েছেন। ভিখুর জীবনে সভ্যতার আলো পড়েনি। প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকারে তার উত্থান ও বিলয়।’  এই ভিখু যখন বৈকুন্ঠ সাহার গদি থেতে জান নিয়ে পালিয়ে এসে পেহাদের কাছে আশ্রয় চায়, পেহাদ তাকে আশ্রয় দেয় নি। পেহাদ কাঁধটা দেখাইয়া বলিয়াছিল, ‘ঘাও খান সহজ লয় স্যাঙ্গাৎ। উটি পাকবো। গা ফুলবো। জানাজানি হইয়া গেলে আমি কনে যামু? খুনটো যদি না করতিসÑ’’ এইভাবে পেহাদ ভিখুকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভিখুর ভয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে বনে রেখে আসার ব্যবস্থা করেই আপাতত ান্ত। যদি কিনা ভিখু পেহাদকে এই আদিম চরিত্রের ভয়টা না দেখাত তবে পেহাদ মূলত ভিখুকে এই সুবিধাটাও করে দিতে রাজি হতো না। তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই পেহাদ অন্যগ্রামে বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে গেলেই। “কুটুম-বাড়ির বিবাহোৎসবে তাড়ি টানিয়া বেহুঁস হইয়া পড়িয়া রহিল। বনের মধ্যে ভিখু কি ভাবে দিন-রাত্রি কাটাইতেছে তিন দিনের মধ্যে সেকথা একবার তাহার মনেও পড়িল না।”  শুধুমাত্র এইটুকুই একাকীত্ত্বের মাঝ দিয়েই তার নৈসঙ্গিকতা যথেষ্ট নয়। ফ্রয়েডের মতে, মানুষের জীবনপ্রবৃত্তির অন্তর্নিহিত মূল চালিকা শক্তির নাম লিবিডো। সকল তেজ ও উদ্যমের মৌলপ্রেরণা এই লিবিডো প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ যৌনধমী। তবে ফ্রয়েড যৌনতাকে প্রচলিত সংর্কীর্ণ অর্থে গ্রহণ করেন নি। সকল প্রকার আসক্তি বা সুখ-অন্বেষার সর্ববিধ প্রচেষ্টাকেই তিনি যৌনতা বলে অভিহিত করেছেন। ফ্রয়েড মানবমনের উদ্দেশ্যসমষ্টির উৎসকে ইদম, অহম ও অধিসত্তা এই তিন স্তরে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে এই ইদমই প্রকৃতিতে সম্পূর্ণ নীতিহীন এবং কেবল সুখভোগই যার উদ্দেশ্য। ইদম তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য লিবিডো দ্বারা বর্হিবস্তুকে আকর্ষণ করেÑ যার নাম বিষয়াকর্ষণ, কেবল প্রবৃত্তিগত তাগিদেই এই বিষয়াকর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই লিবিডো তাড়িত হয়েই সে তার কামনা বাসনার জন্য হাহাকার করে। একহাত নষ্ট হয়ে গেলেও তার ব্যক্তি মানষের কামনা-বাসনার ভাব তার মনের ভেতর থেকে বিনষ্ট হয় নি। যার দরুন সে ‘‘রাত্রে স্বরচিত শয্যায় সে ছটফট করে। নারী-সঙ্গহীন এই নিরুৎসব জীবন আর তাহার ভাল লাগে না। অতীতের উদ্দাম ঘটনাবহুল জীবনটির জন্য তাহার মন হাহাকার করে উঠে।’’ এই নারী-সঙ্গের অভাবই মূলত তার চিন্তার গতি ফেরায় পাঁচির দিকে। অথচ এক সময় এই ভিখুর কাছে নারী সঙ্গ সামান্য ব্যাপার মাত্র। সেই ভিখুর পরিবর্তনের মাঝ দিয়ে গেলেও তার মাঝে যে সেই উদ্দাম ভিখুর অভাব সে বোধ করে তার জন্যই সে মাঝে মাঝে মনে করে ‘‘পৃথিবীর সমস্ত পুরুষকে হত্যা করিয়া পৃথিবীর যত খাদ্য ও যত নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।” এই নারী সঙ্গের অভাব আর চারপাশের অসহযোগীতার দরুন মানুষের আদিম প্রবৃত্তির যে দিক বেড়িয়ে আসে তার যে সঙ্গা সিগমুন্ড ফ্রয়েড দিয়েছেন তা পুরোপুরি আস্থা রাখার মত নয় যদি মার্ক্সের অর্থনৈতিক রূপান্তরে আস্থা থাকে। মানিক যদি এখানে পাচিকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রয়েডকে প্রতিষ্ঠা করে তবে ভিখু এখানে প্রত্যভাবে প্রতিষ্ঠা করে মার্ক্সকে। কারণ ভিখুর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এবং সামাজিক স্বীকৃতি থাকলে ভিখুর ভেতর হতে এই প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার দূরিভত হতো।

নিমগ্নতার ও নৈসঙ্গ্যিকতার পরবর্তি উদাহরণ তিনি দিয়েছেন ‘চোর’ গল্পের মধু’র মাঝে। যে মধু তার নিজের জীবনে একটি সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে যে ‘‘জগতে চোর নয় কে? সবাই চুরি করে। কেউ করে আইন বাঁচাইয়া, কেউ আইন ভাঙে। স্বাধীনতার মূলধন লইয়া ও ব্যবসায় নামিতে যাদের সাহস নাই চুরিকে পাপ বলে তাহারাই।’’ মধু ঘোষের নৈসঙ্গ্যতা এক অর্থে আরো করুন। মধু ঘোষের ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে ব্যক্তিগত নৈঃসঙ্গ্যবোধ, অসহায়ত্ববোধ কিংবা অস্তিত্বজিজ্ঞাসার পীড়নে যরাগ্রস্থ। বৃষ্টি বিঘিœত রাতে শরীরে জ্বর নিয়েও সে চুরি করতে বের হয় কিন্তু তার মন বলে অন্য কথা। মন বলে তার স্ত্রী তার পারে ধরিয়া, গলা জড়াইয়া ধরে বলুক অসুখ শরীরে তোমার আজ আর চুরি করতে যাওয়ার দরকার নাই। এই আকাংখ্যা তার শূন্য হয়ে পড়ে থাকে। আর তাই বৃষ্টির রাতে জ্বর শরীরে নিয়েও মধু বেড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মধুর দ্বিধা ও দ্বন্দ্বমুক্তির কোন উল্লেখ দেখা যায় না। বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা না মেটার দরুন রাখাল মিত্রের গৃহে প্রবেশের পর তার নিদ্রিত তরুণী-কন্যার রূপসৌন্দর্য দর্শন মধূ ঘোষকে পুনরায় দ্বন্দ্বাক্রান্ত করে তোলে। প্রকৃত সত্য এখানে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই লিখেছেন। “চোরেরা জীবনে বড় একা। ওদের আপন কেহ নাই। কবির মতো, ভাবুকের মতো নিজের মনের মধ্যে ওরা লুকাইয়া বাস করে।” এই নৈঃসঙ্গ্যতার সত্যতা পাই গল্পের শেষ পর্যায়ে মধূর স্ত্রী’র পলায়নের মাধ্যমে। রাখাল মিত্রের ছেলে পান্নালাল মিত্রের কাছে চুরি হয়ে যায় কাদু।

একজন মানুষ সমাজ সংসারে আপাদমস্তক নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করে। এই জীবন-যাপনের মাঝে শুধু থাকে একটা অদৃশ্য বাঁধন। মাঝে মাঝে এই অদৃশ্য বাঁধন কেবল যন্ত্রনার কাটা গায়ে বিধায়। তাছাড়া মানুষের সম্পূর্ণ সত্ত্বার নৈঃসঙ্গিক অবস্থান তা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না। এই রকম নৈঃসঙ্গতার এক অকাট্য প্রমাণ ‘যাত্রা’ গল্প। ‘যাত্রা’ গল্পের দুই চরিত্র বিয়ের কনে ইন্দু আর কনের পিতা ইন্দুর বাবা। “বিদায় সত্যই সমারোহের ব্যাপার।” মানিক এই সমারোহের মাঝ দিয়ে ইন্দুর বাবাকে ইন্দু থেকে ইন্দুকে ইন্দুর বাবা থেকে সেই অদৃশ্য বাঁধনের কাটা বিধিয়ে বিদায় করে দিলেন। এই সমারোহিত ব্যাপারে ইন্দুর জন্য আরিক অর্থে ইন্দুর বাবার কোন কিছু বা ইন্দুর বাবার জন্য ইন্দুরও কিছু করার নেই। পর্যাপ্ত ভূমিকার শেষে এক একজন পলায়ন পর চরিত্র ইন্দুকে বিদায় দিয়ে ইন্দুর বাবাও নিজে নৈঃসঙ্গিকতার উদাহরণ হলেন। যদিও মাঝে আমরা ইন্দুর মনোবাসনার দ্বারা বুঝতে পারি ইন্দু এই বিদায়ের ভূমিকা গ্রহণ করতে চায় না। তবুও সাময়িক এই ভাবনাও কিন্তু আমাদের দৃষ্টি কাড়তে ভূলে না।

“সংসারে এমন অনেক মানুষ থাকে, জীবন যাহাদের এমন শিাই দেয় যে প্রত্যাশা করিতে তারা ভুলিয়া যায়।” মানিকের প্রকৃতি গল্পের মূল চরিত্র  অমৃতের মূল প্রকৃতি আসলে তাই। কিন্তু, লেখক এখানে সচতুর ভাবে মেধা ও মননের যে তিব্র স্ফুরণ দেখিয়েছেন তার কারণে অমৃত এই স্ট্রাকচার থেকে বেড়িয়ে এসে উল্টো স্ট্রাকচার তৈরি করেছেন। যার দরুন এখন “প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা যাদের আছে তাদের সে মনে প্রাণে ঘৃণা করে। প্রয়োজনের উপযুক্ত টাকা যাদের নাই তাদেরও তো সে সহিতে পারে না।” এই অসম সংস্কারের ভেতর এখন অমৃতের বসবাস। সমাজ বা প্রকৃতিতে অমৃতের কেউ নাই। কেউ নাই বলতে তার মুখাপেি যে পরিবারটা ছিলো দেশে সেই পরিবারটাকে সে নিজে আপন করার চেষ্টা করা করলেও অর্থ বিত্ত মাঝে এসে দাড়িয়ে অমৃতের কাছ থেকে তার স্বপ্নের শৈশব ও পিতার সমতূল্য প্রমথ বাবুকে কেড়ে নিয়ে বানিয়েছে একজন প্রমথ বাবু। একজন অমৃতের জীবন কেমন নিঃসঙ্গ তা মানিক বন্দ্যোপধ্যায় জানিয়েছে তার ‘প্রকৃতি’ গল্পের শেষ অনুচ্ছেদে অমৃতের সাথে রাখাল হালদারের দেখা করার পূর্বের সময়টা বর্ণনা কালেÑ “কতকাল নিঃসঙ্গ কাটিয়াছে। মানুষের সাহচর্য ছাড়া কি মানুষ বাঁচে, ঘৃণা করিয়া, ভাল না বাসিয়া? অন্তত তার একটা খুব বাস্তব অভিনয় বিনা? হোক মিথ্যা, হোক ফাঁকি, মানুষের এই রকম প্রকৃতি।” এই অমৃত যে প্রকৃতই একা তার প্রমাণ তার আগামী দিনের অভিনয়ের মাধ্যমে।

মানিক গবেষক সৈয়দ আজিজুল হক বলেছেন- ‘‘ হত্যার অভিযোগে স্বামীর মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা ও তা থেকে মুক্তিলাভ প্রভৃতি ঘটনার সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বর্হিবিষয়ক চাপ একজন গৃহবধুর জন্য কী তীব্র মনোবেদনার কারণ হতে পারেÑ তার স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে ফাঁসি (প্রাগৈতিহাসিক) গল্পে)।” নির্দোষ গণপতির ফাঁসির আদেশ হওয়ায় কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে গণপতি তার জীবন-মৃত্যুর কথাই কেবল ভেবেছে। কারাগারের চারদেয়ালের বাইরের যে জীবন তাকে আবর্তন করে পরিবর্তিত হচ্ছে তা গণপতির ধারণাতে ছিলো না। যার দরুন গণপতির প্রত্যাবর্তনের পরও গণপতির স্ত্রী রমার মনে তার প্রত্যাগমনের চেয়ে তার আত্ম-স্বীকৃতিই মূখ্য হয়ে উঠেছে। গণপতির আগমনের পর তাকে ঘিরে যে উৎসাহের রোল বাড়িতে পড়ে সেই মিছিলে রমা সামিল হয় না। দীর্ঘদিন ‘খুনির স্ত্রী’ এই বঞ্ছনা কাঁধে নিয়ে সে ধিরে ধিরে পরিবারের সকলের মাঝে একা হয়ে উঠে। “স্বামীর জন্য শুধু ভাবিয়াই রমা রেহাই পায় নাই, নিজের অন্ধকার ভবিষ্যৎটার পীড়র সহিয়াই তার মহাশক্তির পরীা শেষ হয় নাই, আরও অনেক কিছু জুটিয়াছে। বাহিরের জগৎ নরঘাতকের স্ত্রীকে যা দেয়! সেসবে যে কি এবং সেসব সহ্য করিতে একটি নিরুপায় ভীরু বধুর যে কতখানি কষ্ট হইতে পারেÑ ধারণা করিবার মতো কল্পনাশক্তি গণপতির ছিল না। যেটুকু সে অনুমান করিতে পারিল- তাতেই বুকের ভিতরটা তাহার তোলপাড় করিতে লাগিল।” এই বর্হিজগতের চাপ রমাকে অর্ন্তমুখি করতে করতে একদম তলানিতে এনে ফেলে। ফলে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই রমাকে এখানে বিকল্প পথ তৈরি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের বর্ণনা এখানে প্রয়োজন- “গণপতি পুরুষ-চারদিকের সমস্ত সংশয়, বিষ আর বিদ্রুপের মধ্য দিয়েও আবার হয়তো সে সহজ জীবনে ফিরে যেতে পারবে, কিন্তু রমার মনে যে জটিলতার গ্রন্থি পড়েছে- তার মোচন সে করবে কী উপায়ে? এই দৈনন্দিন আত্মদ্বন্দ্বের মধ্যে বাইরের জগৎ প্রতিদিন ইন্ধন দেবেÑ মনের দিক থেকে রমা কখনো স্বামীকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারবে না- এই অসহ্য দ্বিমুখী পীড়নের হাত থেকে তার নি®কৃতি নেই।” ফলে একান্ত যন্ত্রনার বিষ বইতে বইতে আরো কোনঠাসা জীবন রমা চাইতে পারে না। এর পরিণতিই তাকে উদ্বুদ্ধ করে গণপতিকে প্রত্যাবর্তনের পরদিনই এই অঞ্চল, এই মানুষ-সমাজ ছেড়ে অজানা জনপদে আত্মগোপন করার। কিন্তু এই আত্মগোপনে গণপতিকে রাজি করতে না পারার কারণেই পরদিন সকালে শোনা যায় বাড়ির মেজবৌ গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করেছে। যা গণপতির প্রত্যাবর্তনের পরও রমার যন্ত্রনাবিদ্ধ নিঃসঙ্গ জীবন থেকে উৎরানোর উপায়।

মানিক বন্দ্যোপধ্যায় ব্যক্তি জীবনের এই নিঃসঙ্গতাকে কীভাবে পাঠ করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের মানিকের ব্যক্তি জীবনের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যদিও ব্যক্তির সাথে তার সৃষ্টির একটা মিল বা সাদৃশ থাকে বলে আমরা ধারনা করি। কিন্তু, সে কথা অন্যদিন।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১১

এইতো সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ- যা দিয়ে তুমি
টেনে আনতে পারো এই অদ্ভুত জীবনানন্দ;
তারচেয়ে সেইসব মেডিটেশনগুলো বেশ ভালো
যা লুকালে হবু প্রেমিকার সাাৎ অথবা আকাঙ্খার
দলিত অভিজ্ঞতা তরতাজা পাওয়া যায়,
আমি তাই দ্বিতীয়টিই বেছে নেব।
তোমার জন্য রইলো প্রথম প্রস্ফুটিত গোলাপ।

চিবিয়ে চিবিয়ে বিরলপ্রজ হয়ে উঠো তুমি; আমি হই
এক একটি জীবন্ত আর্তচিৎকার-
কোন ভণিতা যদি সরাসরি হয়ে যায়
তবে যেমন ভণিতার প্রয়োজন হয় না
আমি তাই পুরোনো সংযমের মতো মেতে উঠবো
নতুন কোন তত্ত্বানুসন্ধানে।

আমাদের মেডিটেশন অথবা তোমাদের পুরোনো সংযম
সবকিছু খসে পড়বে স্খলনের অন্তিম মুহূর্তের মতো এবং
এই আমি একসময় কিংবদন্তী হয়ে উঠবো
কেবল নিজেরই প্রতিদ্বন্দীতায়। কেবল
তোমাদের অসম্পূর্ণতার অনুভূতি আমার সফলতার সিঁড়ি হয়ে
বেজে যাবে আশ্চর্য আনন্দ সংগীত।

এই রকম ভূয়োদর্শী স্বপ্ন ও তার বৃত্তান্ত কেবলই আমার
তোমাদের জন্য রইলো মাঠভরা প্রাপ্তির ঢেঁকুর।

সম্মোহিত পাখিগন তোমাদের সুর নিজেরা শুনে দেখ
বেজে উঠছে কি? কি রকম ভাবে বাজছে আমার
বিঠোফেন- আমি তাই বেহুলার বাসরে দেখি
চর্বিত আনন্দের জ্বলজ্বলে উদাহরণ- যা
ঢেকে দিতে চেয়েছিলো স্ববিরোধীর মহাপাপ।

মঞ্চের প্রতি লাখো মানুষের দিকে চেয়ে থাকাদের বলি
দেখে যাও সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ- এক অদ্ভূত জীবনানন্দ।

মেডিটেশন

at শুক্রবার, আগস্ট ০৫, ২০১১  |  No comments

এইতো সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ- যা দিয়ে তুমি
টেনে আনতে পারো এই অদ্ভুত জীবনানন্দ;
তারচেয়ে সেইসব মেডিটেশনগুলো বেশ ভালো
যা লুকালে হবু প্রেমিকার সাাৎ অথবা আকাঙ্খার
দলিত অভিজ্ঞতা তরতাজা পাওয়া যায়,
আমি তাই দ্বিতীয়টিই বেছে নেব।
তোমার জন্য রইলো প্রথম প্রস্ফুটিত গোলাপ।

চিবিয়ে চিবিয়ে বিরলপ্রজ হয়ে উঠো তুমি; আমি হই
এক একটি জীবন্ত আর্তচিৎকার-
কোন ভণিতা যদি সরাসরি হয়ে যায়
তবে যেমন ভণিতার প্রয়োজন হয় না
আমি তাই পুরোনো সংযমের মতো মেতে উঠবো
নতুন কোন তত্ত্বানুসন্ধানে।

আমাদের মেডিটেশন অথবা তোমাদের পুরোনো সংযম
সবকিছু খসে পড়বে স্খলনের অন্তিম মুহূর্তের মতো এবং
এই আমি একসময় কিংবদন্তী হয়ে উঠবো
কেবল নিজেরই প্রতিদ্বন্দীতায়। কেবল
তোমাদের অসম্পূর্ণতার অনুভূতি আমার সফলতার সিঁড়ি হয়ে
বেজে যাবে আশ্চর্য আনন্দ সংগীত।

এই রকম ভূয়োদর্শী স্বপ্ন ও তার বৃত্তান্ত কেবলই আমার
তোমাদের জন্য রইলো মাঠভরা প্রাপ্তির ঢেঁকুর।

সম্মোহিত পাখিগন তোমাদের সুর নিজেরা শুনে দেখ
বেজে উঠছে কি? কি রকম ভাবে বাজছে আমার
বিঠোফেন- আমি তাই বেহুলার বাসরে দেখি
চর্বিত আনন্দের জ্বলজ্বলে উদাহরণ- যা
ঢেকে দিতে চেয়েছিলো স্ববিরোধীর মহাপাপ।

মঞ্চের প্রতি লাখো মানুষের দিকে চেয়ে থাকাদের বলি
দেখে যাও সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ- এক অদ্ভূত জীবনানন্দ।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১১

প্রত্যেকদিন মানুষ কি করে যে এই দিনে করে না? এই মাসে করে না? এই মাস কেন সংযমের মাস? সংযম কি এই একবেলা না খেয়ে থাকার মাঝে? নাকি বিকাল পরজন্ত খাবারের জন্য অপেক্ষা? প্রকৃত সংযম যে মনে তাতো মনেই থাকে না মানুষের। তবে কিসের সংযম করে তারা? এতগুলো প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? উত্তর জানা নাই।
গতকাল সাড়ে ১০টায় বাসায় ঢুকেই দেখি আমার ভাই জায়নামাজে বসে ভাবির সাথে গল্প করছে। লোডশেডিং চলছিলো তখন। কিছুক্ষণ পর বিদ্যু‍ৎ চলে এলো। আবার তিনি নামাজে পড়কে বসে গেলেন। আমি বুঝলাম যে রমজান মাস উপলক্ষে এই বিশেষ নামাজ এর ব্যবস্থা। আমার হাসি পেলো। আমি বললাম শুক্রবার জুমার নামাজ পড়েন না, এখন আবার তারাবির নামাজ? আমি বরাবরই নামাজ রোজা করি না। সকালে উঠে একবেলা খেয়ে নিয়েছি আজ। দুপুরে বের হবার সময় দুপুরটাও খেতে ভুল করিনি। কিন্তু অফিসে এসেই গোল বেঁধে গেলো। পিয়নকে চা বানানোর অর্ডার দিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। পরে মনে হলো আজ তো রমজান শুরু!
অফিস থেকে নিচে নেমে দেখলাম একটাও চায়ের দোকান খোলা নাই। সব ইফতারের দোকান হয়ে গেছে। ফিরে এলাম নিউজরূমে ফিরে এলে শুনলাম অফিসে ইফতারের আয়োজন চলছে। সময়মত ইফতার হাতে পেয়ে তো চক্ষু ছানাবড়া। এত্ত খাবার খাওয়ার পর সংযম কাকে বলে?

সংযম কাকে বলে?

at মঙ্গলবার, আগস্ট ০২, ২০১১  |  1 comment

প্রত্যেকদিন মানুষ কি করে যে এই দিনে করে না? এই মাসে করে না? এই মাস কেন সংযমের মাস? সংযম কি এই একবেলা না খেয়ে থাকার মাঝে? নাকি বিকাল পরজন্ত খাবারের জন্য অপেক্ষা? প্রকৃত সংযম যে মনে তাতো মনেই থাকে না মানুষের। তবে কিসের সংযম করে তারা? এতগুলো প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? উত্তর জানা নাই।
গতকাল সাড়ে ১০টায় বাসায় ঢুকেই দেখি আমার ভাই জায়নামাজে বসে ভাবির সাথে গল্প করছে। লোডশেডিং চলছিলো তখন। কিছুক্ষণ পর বিদ্যু‍ৎ চলে এলো। আবার তিনি নামাজে পড়কে বসে গেলেন। আমি বুঝলাম যে রমজান মাস উপলক্ষে এই বিশেষ নামাজ এর ব্যবস্থা। আমার হাসি পেলো। আমি বললাম শুক্রবার জুমার নামাজ পড়েন না, এখন আবার তারাবির নামাজ? আমি বরাবরই নামাজ রোজা করি না। সকালে উঠে একবেলা খেয়ে নিয়েছি আজ। দুপুরে বের হবার সময় দুপুরটাও খেতে ভুল করিনি। কিন্তু অফিসে এসেই গোল বেঁধে গেলো। পিয়নকে চা বানানোর অর্ডার দিয়ে দেখি হা করে তাকিয়ে আছে। পরে মনে হলো আজ তো রমজান শুরু!
অফিস থেকে নিচে নেমে দেখলাম একটাও চায়ের দোকান খোলা নাই। সব ইফতারের দোকান হয়ে গেছে। ফিরে এলাম নিউজরূমে ফিরে এলে শুনলাম অফিসে ইফতারের আয়োজন চলছে। সময়মত ইফতার হাতে পেয়ে তো চক্ষু ছানাবড়া। এত্ত খাবার খাওয়ার পর সংযম কাকে বলে?

Read More

1 মন্তব্য(গুলি):

সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১১

কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন ‘আগস্ট মাস শোকের মাস, কাঁদো বাঙালী কাঁদো’। আমরা প্রকৃত অর্থেই এই মাসে অনেক শোকের সাগর পার হয়ে এসেছি। আমরা এই মাসেই হারিয়েছি বাঙালীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তান রবীন্দ্রনাথ কে। তিনি আমাদের চেতনার রং রাঙিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের প্রত্যেকের নিজের মতো করে। তাঁকে সম্মান জানাই। বাঙালীর আরেক আবেগের কবি নজরুল কে আমরা হারিয়েছি এই মাসেই। রবীন্দ্রনাথ যতটা আমাদের চেতনার, ততটাই বাঙালীর আবেগের মানুষ হলো নজরুল। আমরা আরো একজন মানুষকে তাঁর সপরিবারে হারিয়েছি এই মাসে। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে আমরা তাঁর অবদানকে কখনোই অস্বীকার করার মতো অবস্থা নেই। তাকেও স্মরণ করি এই মাসে।
শুধু কি এইসব বিখ্যাত মানুষগুলোই হারিয়েছি আমি বা আমরা? আমরাতো প্রত্যহই নিজেদেরই হারাই। নিজেদের ঘামে আর নিজেদের রক্তে লেখা নিজের মুখের প্রতিচ্ছবি হারাই। দেখি প্রত্যেকটা স্বতন্ত্র মুুখ এক হয়ে যাচ্ছে। একই রকম হয়ে ছুটতে কান্তির পিঠের দিকে। অথচ তারই জয় করার কথা ছিলো কান্তি।
আমরা কি তাই দিনে দিনে নিজেদের শোকের কথাই লিখছি ধীরে ধীরে?
‘প্রিয় মৃত্যুময় ঘুম, আমরা কেন গলা জড়ায়ে শুয়ে থাকি?’ গলা জড়িয়ে তাই আমরাকি আবারো শুয়ে থাকবো মৃত্যুর মতো মৃত্যুকে বন্ধু বানিয়ে।

আমরা কেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারি না?

at সোমবার, আগস্ট ০১, ২০১১  |  No comments

কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন ‘আগস্ট মাস শোকের মাস, কাঁদো বাঙালী কাঁদো’। আমরা প্রকৃত অর্থেই এই মাসে অনেক শোকের সাগর পার হয়ে এসেছি। আমরা এই মাসেই হারিয়েছি বাঙালীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তান রবীন্দ্রনাথ কে। তিনি আমাদের চেতনার রং রাঙিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের প্রত্যেকের নিজের মতো করে। তাঁকে সম্মান জানাই। বাঙালীর আরেক আবেগের কবি নজরুল কে আমরা হারিয়েছি এই মাসেই। রবীন্দ্রনাথ যতটা আমাদের চেতনার, ততটাই বাঙালীর আবেগের মানুষ হলো নজরুল। আমরা আরো একজন মানুষকে তাঁর সপরিবারে হারিয়েছি এই মাসে। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে আমরা তাঁর অবদানকে কখনোই অস্বীকার করার মতো অবস্থা নেই। তাকেও স্মরণ করি এই মাসে।
শুধু কি এইসব বিখ্যাত মানুষগুলোই হারিয়েছি আমি বা আমরা? আমরাতো প্রত্যহই নিজেদেরই হারাই। নিজেদের ঘামে আর নিজেদের রক্তে লেখা নিজের মুখের প্রতিচ্ছবি হারাই। দেখি প্রত্যেকটা স্বতন্ত্র মুুখ এক হয়ে যাচ্ছে। একই রকম হয়ে ছুটতে কান্তির পিঠের দিকে। অথচ তারই জয় করার কথা ছিলো কান্তি।
আমরা কি তাই দিনে দিনে নিজেদের শোকের কথাই লিখছি ধীরে ধীরে?
‘প্রিয় মৃত্যুময় ঘুম, আমরা কেন গলা জড়ায়ে শুয়ে থাকি?’ গলা জড়িয়ে তাই আমরাকি আবারো শুয়ে থাকবো মৃত্যুর মতো মৃত্যুকে বন্ধু বানিয়ে।

Read More

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম