মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৩

বন্ধুর লাল গোলাপ

at মঙ্গলবার, জুলাই ২৩, ২০১৩  |  1 comment



.
হৃদয়ের ভূত মাথায় চড়ে বসলে জানালা ভর্তি শাপ কিলবিল করে। যেটুকু বাতাস বুকে ধরে রাখতে পারতাম, সেটুকুও ফুরিয়ে যায় দ্রুত। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। চারপাশে তাকিয়ে একটা মুখ খুঁজি, তালপাখা হাতে নিয়ে বসে আছে এমন নয়। কেবল একটা স্বস্তির মুখ। সেই মুখ হারিয়ে যায়, দেখি একটি সবুজ টিয়া পাখি বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তাকায় আমার চোখে। তার চোখে চোখ রেখে পাঠ করি আত্মসমালোচনা-
পাশের বাড়ির জানালা প্রতিদিন গিলে খাচ্ছে লোভগুলো।
আমি তো সকাল সকাল ঘুমিয়ে যাই,
ঘুম ভাঙে আর একটা লোভের জগতে।
এইসব জাদুবাস্তবতার কলরব আমি প্রতিদিনই শুনি। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে অথবা ঘুমের ঘোরে সে এসে চেপে ধরে কণ্ঠনালি। কি যেন বলতে চেয়ে ভুলে যাই। মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ আসতে চায়। আর মনে হয় এই সেই অব্যক্ত কথা, যা কিনা তোতা পাখিটা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলো। তোতার চোখে ঘুমের আহ্বান। আমি তার কাছে সকালের ঘুমের গল্প শুনতে চাই। সে বলে পাখিপুরাণ একটি সংসারের গল্প। অথচ আমার তেমন কোনও কথাই হয় নি তার সাথে।
মগজে যে ধরে আছি ভুতের উসিলা, তার সাথে কি আর দোনামোনা চলে? সে তো ভাবের দুনিয়ায় নাও ভাসাইয়া কই যে হারায়, তার কোনও ইয়ত্তা নাই।
 

.
বন্ধু তার লাল গোলাপের বাগানে প্রতিদিন তিন বেলা পানি দেয়। বিনিময়ে ঘ্রাণ নেয় বেলি ফুলের। তার কি একবারও মনে হয় না, যেই জীবন আসলে একটা ইলিশের তার চেয়ে মহিমান্বিত জীবনের সময় সে অতিক্রম করতে পারে? তারও তো একটা পাখির জীবন আছে। যা কিনা টিয়া পাখির মতো সবুজ না হলেও বাঁকা ধনুর চেয়েও কোনও অংশে কম জীবন্ত না। তার কাছে ঘাস ফড়িঙ এর মতো প্রতিদিন শৈশব উড়ে বেড়ায়। আমি বলি, ধরো না? সে উত্তর দেয়, এইসব শৈশবের কাছে আরো কিছু জীবন গেঁথে সে হেঁটে হেঁটে চাঁদে যাবে। আমি তার মুখের দিকে তাকায় থাকি। বিষন্ন সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া আলোর মৃত্যুর মতো সেও হেঁটে যায় নদী তীর ঘেঁষে।


.
পাসপোর্টের কথা আমি মনে রাখি না। মনে রাখি মৌ মৌ করা গন্ধের শরীর। এই কথা বলে বারান্দার বৃক্ষগুলো দারুণ দুলে ওঠল। তাদের সাথে বুঝি বাতাসের সন্ধি? তাই কি সংবাদপত্রের ভাজে লুকিয়ে রেখেছো গোপন প্রেমের সব গল্প? আমি আর এইসব গল্পের ভেতর মৃত্যু খুঁজতে যাবো না। কেবল জেনে রেখো, আমার বাতাসের সংসারে প্রতিদিনই একই হাওয়া এসে দোলা দেয় না। কিছুটা রহস্যও ভেসে ওঠে বেলা অবেলা কালবেলায়। অথচ তুমিতো মুগ্ধ করে রেখেছো প্রতিটি লগ্ন আর তার ইশারা। কোথায় যেন সে সময় পেলেই ডুব দিতে যায়। এই ক্রান্তিলগ্ন মুখ সে দেখে না, দেখে একটা অসম্পূর্ণ ভাস্কর্যের মুখ। কি করে যে বুঝাই, তোমার দেখা এই মুখ শিল্পকে অতিক্রম করার লোভে একটা প্রস্তুরখণ্ড মাত্র। পরিবর্তে তুমি চাইলেই দেখতে পারো জীবন্ত এক জোড়া চোখ, যে তাকিয়ে থাকবে তোমার দিকেই। আর অন্তিম নিঃশ্বাসের পরিবর্তে তোমার সলজ্জ জীবনের দায় বয়ে বেড়াবে।

.
এইতো সেদিন একটা বেড়াল জন্মেছিলো আমার মস্তিষ্কে। দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিলো তার লোভের পরিসীমা। অথচ কি আশ্চর্য দেখো, তাকেও ভুল পথে পা বাড়াবার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলো ঘর ভর্তি নৈশব্দের কাফনে জড়ানো বিমূঢ় ঘুমের দেশ। বলতে পারো কোথায় সেই আশ্চর্য প্রদীপের জীবন? যেখানে সন্ধ্যার কফিনের সাথে কোনও স্বপ্নের মৃত্যুসংবাদ নেই। একটা ঘুমহীন রাত্রী আর একটি উজ্জ্বল সকালের চোখে তখন লেগে থাকবে এক কাপ চায়ের লোভ। আহা, বাউল জীবন। তুমি বড়ো ইলিশের মতো ছটফটিয়ে মরে যাও। ওদিকে যে গোপনে ভালোবেসে হরিণ তার কৌমার্য্য হারাতে বসেছে এই গল্প কি ভুলে যেতে বসেছো?

.
মনে করো এই যে সকাল বেলা, যেখানে ভুলের বিনিয়ে প্রণম্য একটি জীবন হারিয়ে যেতে পারে হেঁসেলে। এই সকালেরও তো কিছু দায় থাকে? কেবল বাতাস তাকে বলে দিবে ভাবনার ভবিষ্যৎ তা কি করে হয়? বরংচ তুমি জেগে জেগে ঘুমাও, আমি তদারকি করি সব অন্ধ শয়তানের মৃত্যুযাত্রা।

Share
About the Author

Write admin description here..

1 টি মন্তব্য:

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম