শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

মাসটাং : পঞ্চকন্যার আখ্যান

at শনিবার, মার্চ ১৯, ২০১৬  |  No comments

যা হয় আর কি, কোনও ভালো বই পড়ার পর বা কোনও ভালো ছবি দেখার পর মাথার ভেতর গেঁথে যায়। এ সময় মগজের ভেতর ঐ বই বা সিনেমা নিয়া যা থাকে তা চিন্তার উদ্রেগ ঘটাইলেও সাথে কিছুটা চাপও তৈরি করে। তখন মাথা থেকে সেই চাপ নামানোর প্রয়োজন হয়। এই সময় দরকার প্রয়োজন গল্প করা। ছবির গল্প, বইয়ের গল্প। মন খুলে গল্প করলে পড়া বইটা বা দেখা সিনেমাটার ব্যাপ্তি বাড়ে। আর কে না জানে, চারপাশের বিষয়গুলোর ব্যাপ্তি বাড়লে সাথে সাথে কিছুটা নিজেরও বাড়ে। তাই নিজের ব্যাপ্তির লোভে সিনেমা বা বইয়ের কাছাকাছি থাকা, আর সেইসব নিয়া গল্পে মাতা।
মাসটাং মূলত দক্ষিণ আমেরিকান এক প্রকার ঘোড়া। যা কিনা আকারে অন্য সব ঘোড়ার চাইতে একটু ছোট, কিন্তু তার গতি একটু বেশিই। সে তাই ছোটেও নিজের মতো, অনেকটা দুর্বার গতিময়। তুরস্কের যেই ছবিটার নাম ‘মাসটাং’ তার কেন্দ্রীয় চরিত্রটাও এমনই। অন্য সবার চেয়ে ছোট, কিন্তু গতিশীল। ছোটেও নিজের মতো। সেই ছোট ঘোড়ার গল্পই বলেছেন টার্কিস তরুণ নির্মাতা ডেনিজ এরগোভেন।
টার্কিস এই তরুণ নির্মাতার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাসটাং’। চলতি বছরের অস্কারে সেরা বিদেশী ভাষার সিনেমা ক্যাটাগরিতে অফিসিয়াল এন্ট্রি অবশ্য ফরাশি ছবি হিসেবে। কিন্তু তাতে ছবির কোনও কিছুই যায় আসে না। কারণ ছবির ভাষা, চরিত্র, প্রেক্ষাপট, গল্প সবটাই তুরস্কের।
প্রায় মাস দেড়েক পর একই দিনে তিনটা ছবি দেখার মিশন নিয়ে বসে প্রথমটা দেখেই আর কোনও ছবির কথা ভাবতে পারিনাই। ৩৭ বছর টার্কিস তরুণী ডেনিজ এর ছবি দেখে মনে হইছে ‘লালে’র জীবন সংগ্রামের বাকিটুকু কতই না বৈচিত্রময়। কারণ, যে মেয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বড় বোনের বিয়ে ভেঙে দেবার সাহস করে তার জীবনে বৈচিত্র আসবে না কি আমার জীবনে আসবে? ;)
ছবির বিকল্প শিরোনাম হইতে পারে, পঞ্চকন্যার আখ্যান। হ্যা, তুরস্কের কোনও এক সমুদ্র তীরবর্তি এক গ্রামের পাঁচ বোনের আখ্যান এই সিনেমা। একই পরিবারের পিঠাপিঠি পাঁচ বোনের জীবনের গল্প।  তাদের বন্ধুর জীবনের গল্প। মা ছাড়া পরিবারে বাবা আর দাদির কাছে বেড়ে ওঠা বোনেরা যারা কিনা সহপাঠীদের নিয়ে সমুদ্রে দল বেধে ¯œান করলে বাবার সন্দেহ হয়। আর তাদের নিয়ে যায় সতীত্ব পরীক্ষা করাতে। এই জীবন কি এখনো আছে?  বোধ করি নারী নির্মাতার শৈশবে দেখা অভিজ্ঞতা এই জায়গায় প্রভাব পড়েছে।

এই রকম একটা অভিজ্ঞতা দিয়া যেখানে ছবি শুরু তখন ছবির গল্পটা কেমন হতে পারে? আপনার আমার ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে এক এক করে অল্প কন্যা দায়গ্রস্থ পিতার স্বস্তির দিকে ছুটে যাওয়ার গল্প হতে পারতো ‘মাসটাং’। কিন্তু তা না হয়ে হয়ে উঠেছে এক ভবিষ্যতের চিহ্ন। আর সেই ভবিষ্যতের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলো পাঁচ বোনের সবচে ছোট ‘লালে’। তার চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে চাইলে ছবিটা দেখতে পারেন। বলে রাখা ভালো অস্কারের সেরা বিদেশী ভাষার ছবিতে এখন পর্যন্ত তুরস্কের কোনও ছবি সেরা পাঁচে আসতে পারেনি। যে কয়েকবার আসছে তার একটাও তুরস্কের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। ভিন্ন কোনও দেশ থেকে। এইটাও সেই দলেরই একটা ছবি। তবে এইসব তথ্য আর প্রসংশা মাথায় না রেখেও ছবিটা দেখে ফেলতে পারেন এক বসাতেই।

Share
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম