বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০১৭

'কুন্ডেরার উপন্যাস আমার কাছে সিনেমারে একটা শিল্প হিসেবে অন্যরকমভাবে ভাবতে শেখাইছে'

at বৃহস্পতিবার, জুন ০১, ২০১৭  |  No comments


আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ। ১৯৮৫ সালে জন্ম। সিনেমায় নামার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীতিশাস্ত্র নিয়া পড়াশোনা করছেন। তারপর নিজের প্রোডাকশন হাউস থেইক্যা বানাইছে শর্টফিল্ম, টিভি বিজ্ঞাপন। ২০১৬ সালে তার প্রথম ফিচার ফিল্ম লাইভ ফ্রম ঢাকা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টে প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২৭ তম সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা নির্মাতা হিসেবে সিলভার স্ক্রিন ও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পায় মোস্তফা মনোয়ার। এশিয়ান ফিল্ম ভল্ট এর পক্ষ থেকে কথা বলা হয় সাদ এর লগে। এইটা এইখানে নিজের ভাষায় তর্জমা করা গেলো। 


প্রশ্ন: সিনেমা বানাইতে আসার আগে তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছ, পড়াশোনা শেষে সিনেমা বানানোর দিকে আসার ভুত কোইত্থ্যাইক্যা আইলো?
সাদ: সত্যি কইতে কি আমি জানিনা। আমি একটুও মনে করতে পারতেছি না কেন আমি আমার পয়লা স্ক্রিপ্ট লিখছিলাম বা ঠিক কোনটা আমারে উৎসাহ দিছিলো কি না। তবে আমি ছবি দেখতে পছন্দ করতাম। কিন্তু তার মানে এই না, যে আমি ডিটারমাইন্ড ছিলাম যে আমি সিনেমায় কাজ করবো। আমার মনে হয়, সিনেমা আমারে কিছু দিতে পারে, মনে হইলো এইটা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশও হইতে পারে। এইটা ঠিক যেই রকম উত্তর আশা করছেন এই রকম না, অনেক হতাশা থাকলেও সিনেমা নির্মাণ আমাকে জীবন যাপনের একটা পথ বাৎলে দিছে।

প্রশ্ন: তোমার অলরেডি একটা প্রোডাকশন হাউজ আছে। যেখান থেইকা শর্ট ফিল্ম, টিভি বিজ্ঞাপন বানাও। এইটা সম্পর্কে কি বলবা? মানে তুমি কি এইটা দিয়েই সিনেমার জন্য টাকা যোগার করলা?
সাদ: আমার মনে হইতেছিলো যে সিনেমা বানাইতে হইলে আগে আমা একটা প্রোডাকশন টিম দাড় করানো দরকার। এইটাও বুঝতেছিলাম যে, বাংলাদেশের চাইলেই একজন স্বাধীন সিনেমা নির্মাতারে কেউ প্রডিউস করতে চাইবে না। কারণ, তার টাকার কোনও নিশ্চয়তা নাই। এইদিক থেইক্যা আমি ভাগ্যবান। আমার কিছু বন্ধু সব সময়ই আমার ওপর আস্থা রাখছে। এইসব চিন্তা ভাবনা কইরা বন্ধুদের লইয়া নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাই ও টিভি বিজ্ঞাপন বানাইতে থাকি। ঐখান থেকে জমানো কিছু টাকা দিয়াই আমরা লাইভ ফ্রম ঢাকার কাজ শুরু করি।

প্রশ্ন: আইএমডিবি সূত্র বলতেছে তোমার ছবির বাজেট মাত্র ৮ লাখ টাকা (১০ হাজার ডলার)। এত কম বাজেটে একটা ছবি কীভাবে সম্ভব?
সাদ: আমি ঠিক তটা কঠিন মনে করি না। আমরা জানি আমাদের ছবির বাজেট কম, সে অনুপাতেই প্রোডাকশন ডিজাইন করছি। এইটা করতে আমাদের কারো কারো বেশ ছাড় দেয়াও লাগছে। মনও হইছে আমি কোনও লোকেশনে স্যুটিং এর অনুমতি পাইনাই, এই সময় কঠিন হইলেও বিকল্প খুঁজে বের করছি। তা হয়ত আগেরটার চাইতে একবারেই অন্যরকম। এর মধ্যেই আমি চাইছি ছবির জন্য সেরা ফ্রেমটা দাঁড় করাইতে ও অভিনেতাদের কাছ থেকে সেরা অভিনয়টা বের করে আনতে। এর পরও আমি স্বীকার করি যে আমার আরও কিছুদিন স্যুটিং করা দরকার ছিলো।

প্রশ্ন: ছবির শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাজ্জাদের প্রচুর সমস্যা ছিলো, শেষ পর্যন্তও তার জীবন ভালো কিছু হইলো না। তার জীবনে এত ট্রাজেডি কেন?
সাদ: আমি একটা জটিল জীবনওয়ালা চরিত্র বানাইছি। তারপর চেষ্টা করছি চরিত্রটারে বুঝতেভাবছি, সে কীভাবে এইসব জটিলতা মোকাবেলা করে। আমি বিশ্বাস করি, বিপদে না পরলে সে তা কীভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। ঐখান থেকেই শিখতে হয়।

প্রশ্ন: ছবিতে কিছু সংঘর্ষের ছবি সত্যি, এইগুলো কোত্থেকে পাইলা?
সাদ: এইগুলো টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আর্কাইভ থেকে নেয়া।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা কি? প্রচুর মানুষ অন্য কোথাও চলে যেতে চায়, কেনো? তোমার ছবিতে যে দুর্নীতি দেখাইলা, এরচেয়ে বেশী দুর্নীতিই কি কারণ?
সাদ : আমার মনে হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে কথা বলার মানুষ আমি না। এইটা একটা চিরন্তন চিন্তা। একটা ভালো কিছুর আশায় মানুষ নিজের দেশ ছাড়তেছে। ব্যাতিক্রমও আছে। আমরা আসলে আশা খুঁজতে গিয়া মাঝে মাঝে নিজে আশা থেইক্যা দূরে সরে যাই। দুর্নীতি বিষয়ে আমার মনে হয় বিশেষজ্ঞরা বললেই ভালো। তবে আমি কেবল আমার ছবির জন্যে যে দুর্নীতিটা ছিলো তার দিকেই মনযোগ দিয়েছি, এইটা সামগ্রিক দুর্নীতির রূপ না। 

প্রশ্ন: কী ভেবে ছবিটারে ট্রাজিক বানাইলা?
সাদ: এইটারে ঠিক ট্রাজিক সিনেমা বলতে চাই না। সত্যি বলতে কি, আমি ঐ রকম চিন্তা করেও কিছু করিনাই। আমি কেবল সাজ্জাদের নৈতিক অবস্থাটার সাথে তার জীনবরক্ষার পদ্ধতিটা কি তা দেখাইতে চাইতেছিলাম। সাজ্জাদের জীবনের ঘটনাগুলো দেখে দর্শকরা কি করে তাও আমি দেখতে চাই।

প্রশ্ন: মোস্তফা মনোয়ার ছবিতে দুর্দান্ত। তারে এই ছবিতে এই চরিত্রে কেন নিলেন, তার কাছ থেকে অভিনয়টা আদায় করলা কীভাবে? সাধারণত তোমরা শিল্পী কিভাবে নির্বাচন করো?
সাদ: প্রথমত মোস্তফা মনোয়ারের শরীর কাঠামো এমন, আমি যা মনে মনে খুঁজতেছিলাম। তারপর দেখলাম তার মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশ করার মতো ইউনিক কিছু ধরণ আছে। এই এক্সপ্রেশনগুলো তার অন্যরকম। স্যুটিং শুরুর আগে আমরা চরিত্র নিয়া প্রচুর কথা বলছি। আমাদের যা কথা হইতো বা কোনও পরিকল্পনার সবটা তারে নিয়মিত পাঠাইতাম। এই রকম একটা সময়ে আমরা স্যুট শুরু করলাম। এবং সে নিজেই সাজ্জাদ হয়ে উঠলো। আমার তাকে প্রতি মুহূর্তে নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। আমি কেবল দেখছি দৃশ্যের তীব্রতা ঠিক থাকতেছে কী না।



প্রশ্ন: গাড়ির দৃশ্যের স্যুট করলেন কেম্নে? সিনেমায় প্রচুর ছোট ছোট ডিটেল সিন, এইটাতো এক্সপেন্সিভ ধরণ!
সাদ: গাড়ির দৃশ্যটা আমাদের স্যুট করা সবচে কঠিন দৃশ্যগুলোর একটা, বিশেষ করে মোস্তফা মনোয়ারের জন্যও। সে সত্যিকার রাস্তায় গাড়ি চালানোর মতো চালাইছে ও অভিনয়ও করছে। তুমি যদি কখনো ঢাকায় যাও, তাহলে বুঝবা ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক কতটা আনপ্রেডিক্টেবল। আমি আর আমাদের সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন সব সময়ই গাড়ির ব্যাকসিটে বসে দৃশ্য ধারণ করা ও নিয়মিত যেসব ঘটনা ঘটতেছে সেগুলো স্যুট করতে চাইছিলাম।
আসলে আমি শুরু থেকে ছবির স্যুটিং করিনি। আমি এডিটিং স্টাইল থেকে স্যুট করছি। সাজ্জাদ যা করতেছে তার সবকিছু দেখাতে চাই নি আমি। বা কোনও ইমোশনাল ড্রামাও করতে চাই নাই। এ কারণে ছবিটার গতি ঠিক রাখতে শেষ দিকে প্রচুর পরিমাণে বর্ণনা ও আবেগি বিষয় বাদ দিছি। আমি সাজ্জাদের ধরণটা যেরকম চাইছিলাম ওইটাই ঠিক মনে হইতেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমার এই মুহূর্তের অবস্থা কি তবে?
সাদ: এই মুহূর্তের অবস্থা সম্ভাবনাময়ী। গত কয়েক বছরে আমাদেও কিছু ভালো সিনেমা ছিলো। সামনেও আরও কিছু ভালো ছবি আসতেছে।

প্রশ্ন: নির্মাতা হওয়ার পেছনে সবচে বেশি প্রভাব কিসের?
সাদ: মিলান কুন্ডেরার প্রভাব সবচে বেশি। তার উপন্যাস আমারে সিনেমারে একটা শিল্প হিসেবে অন্যরকমভাবে ভাবতে শেখাইছে।

প্রশ্ন: সামনে কি করবেন ভাবতেছেন?

সাদ: নতুন সিনেমার কাজ করতেছি। আশা করি শীঘ্রই শুরু করতে পারবো।

Share
Posted by eliuskomol
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম