পাখি আমার বরাবরই ভালো লাগে। ছেলেবেলায় বাড়িতে পাখি পোষা হতো। পাখি আমার কাছে আত্মিয়-বন্ধুর মতো। যখন খুব ছোট ছিলাম বাসায় বসেই পড়াশোনা করতে হতো, স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় নি তখন আমার বন্ধু ছিলো একটি টিয়া পাখি ও একটি ময়না পাখি। তবে তারা পৃথক সময়ে আমার বন্ধু হয়েছিলো। বনের পাখি পোষ মানে, মানুষের মন মানে না। এই বাক্য শিখেছিলাম তখনই, যখন আমাদের পোষ মানা পাখিগুলো মানুষ ধরে নিয়ে যেতো। সেই থেকে আমি একার বন্ধুকে হারিয়ে পাখি বন্ধুর নাম ভুলে যেতে চেয়ে ছিলাম। এইভাবেই দিন কাটে, বয়স বাড়ে, স্কুলে পড়ি। স্কুলের/ পাড়ার বন্ধুদের সময় ও সঙ্গ অতিক্রম করে চেষ্টা করি নিজেকে অতিক্রম করতে। কিন্তু পারি না। কোথায় যেনো একটা শূন্যতা। সেই শূন্যতার বাস এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু আমার পাখি প্রেম কমে নি। বলতে পারি, ইনাম আল হকের মতো পাখি প্রেমিক আমি নই। আমার প্রেমটা গোপনে আরও গোপনে। আমি ভালোবাসি একজোড়া পাখি। একটা নই। আর এজন্য ভালোবাসি মানুষ। সেই পাখির মতো, পাখির গল্পের মতো। কিন্তু সেই জোড়া পাখির দেখা তো নেই চারপাশে।
হ্যা, সেই একজোড়া পাখির স্বপ্ন আমি দেখি। স্বপ্ন দেখি একজোড়া মুনিয়ার জনক আমি। যে মুনিয়াগুলো খাঁচায় নয় খোলা বাতাসেই বসবাস করে। উড়ে বেড়ায়। একদিন একজনকে বলেছিলাম, আমার একজোড়া মুনিয়ার জননী হবি? সে পাখিগুলোর জননী হতে রাজি ছিলো, কিন্তু পাখিগুলো তখন তার হয়ে যাবে, আমার কিছুই থাকবে না বলে শর্ত দিয়েছিলো। আমি সেই শর্তে তাঁকে পাখিগুলোর জননীর অধিকার দিতে পারি নি। তাই এখনো পাখিগুলো আমার হতে পারলো না, আমাদের হতে পারলো না। এই আক্ষেপ প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা আমার বারান্দাজুড়ে এসে হানা দেয়। বারান্দার যন্ত্রণায় আমি কাতর হই।
সেই পাখি... হ্যা, পাখিদের নিয়ে এবার খেলা। নাম এ্যাংরি বার্ডস। খেলাটির পেছনে পাখিগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানলাম, অস্তিত্বের সংকটটা সেখানে বড় তীব্র। নিজেদের বাঁচিয়ে শত্রুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে তারা প্রতিবার ঝাপিয়ে পড়ে। ভাবে, আমি ধ্বংস হয়ে যাই তাতে আপত্তি নেই। আমার মাধ্যমে যদি শত্রুও ধ্বংস হয় তবে হয়তো আমার ভাই-বন্ধুরা বেঁচে যাবে। এই নিজেকে বিসর্জনের সাহস আর মানসিকতার কারণে তোমার নাম “এ্যাংরি বার্ডস”।
‘এ্যাংরি বার্ডস’ কেমন আছো?
আজ তোমাকে যে কবিতাটা পাঠিয়েছি, এই কবিতাটা তোমাকে নিয়ে ভাবতে বসে লিখা। সত্যি বলছি, তোমাকে যখন মাঝে মাঝে টেক্সট পাঠাই। উত্তর পেলে মনে হয় এ আমার বহু পরিচিত এক বন্ধু। মনে হয় তার হাত ধরে বহুদিন আমি অচেনা রাস্তায় হেঁটে গেছি গন্তব্য না জেনেই। আর তাই মাঝে মাঝে তোমাকে বলতে ইচ্ছে করে গোপন সব পাপ ও ব্যার্থতার হিসেব। অথচ তোমার ব্যস্ততার পরিসীমা নেই। এ নিয়ে অভিযোগ নেই। যতটুকু অনুভূতি প্রকাশে তুমি প্রশ্রয় দিয়েছো এতটুকুও যে এখন বন্ধুরা দেয় না। তারা তো ‘দূরের মানুষ’ হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। নাকি আমিই সেই পাখি প্রেমিকটি আর নেই? ঠিক বলতে পারবো না। তবে একটি কথা আমি ঠিকই বলতে পারবো, তোমার প্রশ্রয় দক্ষিণের বারান্দা আর জোড়া মুনিয়ার জন্য হাকার করবে না।
0 মন্তব্য(গুলি):