বৃহস্পতিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ফিল্মম্যাকারের গল্প

at বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ০৭, ২০১৩  |  No comments

সৌদি আরবের প্রথম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা হাইফা আল-মানসুর এর ছবি ‘ওয়াজদা’ ২০১২ তে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছে ভেনিস আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানে তিনটি পুরস্কার পাবার পর দুবাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-১২ তে চারটি শাখায় পুরস্কার জিতে নেয় ‘ওয়াজদা’। সব মিলে এই সৌদি নির্মাতার প্রথম ছবি তার ঝোলায় পুড়েছে ১০টি পুরস্কার ও দুটি নমিনেশন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম শো হয়েছে। এই উপলক্ষে ফ্রান্সের ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ফ্রান্স ২৪ এই নারী নির্মাতার এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। এই সাক্ষাৎকারটির ভাবানুবাদ প্রকাশ করা হলো।


ফ্রান্স ২৪ : আপনি বেড়ে উঠেছেন এমন একটি দেশে, যে দেশে সিনেমা হল নেই। তো এমন একটি দেশ থেকে আপনি সিনেমা বানানোর চিন্তাটা কি করে করলেন?

হাইফা আল মনসুর : আমি একটি ছোট শহরে বড় হয়েছি। যে শহরটিতে কোনও সিনেমা হল নেই, কিন্তু প্রচুর ভিডিও ক্যাসেট ভাড়ায় পাওয়া যেত। বাচ্চারাসহ আমাদের পরিবারে বার জন সদস্য। আমার বাবা (সৌদি আরবের কবি আব্দুল রহমান মনসুর) একদিন আমাদেরকে সিনেমা দেখার জন্য এনে দিলেন। এর মাধ্যমে যেন আমরা বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে জানতে পারি। তখন আমি আমরা প্রচুর ছবি দেখেছি। যার মধ্যে রয়েছে হলিউডের মেইনস্ট্রিম ছবি যেমন ব্রুস লি, জ্যাকি চ্যান ছিলো। ছিলো প্রচুর পরিমাণে অন্য আমেরিকান ছবি, ভারতীয় ছবি ও মিশরীয় ছবিও। এর মাধ্যমে আমি বুঝতে পারি আমাদের বাইরের পৃথিবীটা কেমন। এবং এর মাধ্যমে দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরণের ভাবনার বহুরৈখিক রূপ। তখন থেকেই সিনেমা আমার অনুভূতির সাথে মিশে গিয়েছে। আমার মনে পরে আমি প্রথম ‘স্নো হোয়াইট’ নামের ওয়াল্ট ডিজনীর একটি ছবিটি দেখেছিলাম। আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম তা দেখে। তারও বছর খানেক পরে, আরও অনেক ছবি আমার ‘ওয়াজদা’র অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার মাঝে রয়েছে ভিক্টোরিও ডি সিকা’র ‘বাইসাইকেল থিফ’ এবং চলচ্চিত্রের নব্য বাস্তববাদ আন্দোলন ও আমাকে আমার গন্তব্যের দিকে যেতে সহযোগীতা করেছে ইরানের পরিচালক জাফর পানাহির ‘অফসাইড’। যাকে আমার মনে হয়েছিলো জীবনের রঙিন ও আনন্দের মধ্য দিয়ে জীবনের গল্পটা বলা যায়। সবকিছুর পরও দারদেনে ব্রাদার্সের ‘রোসেটা’ ছবিটা আমাকে দেখিয়েছে একজন মহিলা গল্পকার কিভাবে গল্পকে নিজের মতো করে বলতে পারে। আমি এসব থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।


ফ্রান্স ২৪ : আপনি যখন সিনেমা বানানোর চিন্তা করলেন, তখন কোন দর্শকদের কথা ভেবেছিলেন? আপনি কি ইউরোপের দর্শকদের সৌদি আরবের নারীদের জীবন যাপন দেখাতে চেয়েছেন? নাকি অন্য নারীদের দেখাতে চেয়েছেন সৌদি আরবের মতো একটা দেশে নারীরা কিভাবে জীবন যাপন করে?

হাইফা আল মনসুর : দুটোই। আসলে আমি চেয়েছিলাম, সব শ্রেণীর দর্শকরা আনন্দের সাথে ছবিটি দেখুক। পাশাপাশি আমি সৌদি আরবের জীবনের একটি চিত্রও যোগ করতে চেয়েছি, কিন্তু সব সময় সব করা যায় না এটা সৌদি আরবের, মিশরের বা অন্য আরব দেশগুলোর লোকজন জানে। তারপরও এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি আরবের লোকজন এটা তাদের নিয়ে ও তাদেরই সিনেমা হিসেবে মনে করে এবং এর জন্য তারা গর্ববোধ করে। এই ছবিটিকে লক্ষ্য এবং উৎসর্গের জায়গা থেকে দেখতে হবে, কারণ এটা সৌদি আরবেরই জীবন থেকে উঠে আসা। একই সাথে আমি মনে করি এই ছবি সৌদি আরবের সিনেমাকে উৎসাহী করবে।

ফ্রান্স ২৪ : এই মুহূর্তে সৌদি আরবের সিনেমার জন্য কি সবচেয়ে ভালো হয় বলে আপনি মনে করেন?

হাইফা আল মনসুর : সৌদি আরবের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেমা নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ নেই। সৌদি আরবের অনেক মানুষ তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সাথে আপোষ করে, যা বাধ্যতামূলক নয়। সেই জায়গায় মানুষ সিনেমা বানাতে চাইছে, তাই সেখানে তার ব্যবস্থা করা উচিত। যদিও এখনো অনেকেই সেখানে সিনেমা নিয়ে বিতর্ক করে, তবুও অনেক মানুষ এখন সিনেমাকে গ্রহণ করছে। তাই সরকারের উচিত সৌদিতে সিনেমাকে উন্মুক্ত করে দেয়া।

ফ্রান্স ২৪ : আপনি একজন নির্মাতা হিসেবে সৌদি আরবে কেমন মনে করছেন?

হাইফা আল মনসুর : আমি রাজনীতি সচেতন ব্যাক্তি। আমার সাথে কিছু মানুষ রয়েছে, আরও বেশী নারীরা স্বাভাবিক জনজীবনের সাথে সম্পৃক্ত হউক এমনটা তারা দেখতে চায়। এমনকি আমার প্রতিপক্ষের মানুষ রয়েছে। মূলত সৌদি আরব একটি রক্ষণশীল দেশ, দেশের বুদ্ধিজীবী ও সমালোচকরা তাদের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে বাইরের কোনও কিছুকে স্বাগতমত জানাতে চায় না। আমি এমন এক সীমাবদ্ধ পরিবেশে কাজ করি, তার পরও আমি বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে আমার মতামত তুলে ধরি। সাধারণভাবে আক্রমনাত্মক অবস্থান থেকেই আমি আমার কথাগুলো বলি এবং আমি বরাবরই সৌদি আরবের নারীদের স্বাধীনতার পক্ষেই কথা বলে এসেছি। তারমানে আমি মুখের উপর কথা বলছি না। ‘ওয়াজদা’য় আমি যেমন একটি নারীর গল্প বলেছি, কিন্তু আমি দেখিয়েছি একটি শিশুকে। আমি সংলাপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি, এবং আমার ধারণা মানুষ এটিকে সমর্থন জানাচ্ছে।

ফ্রান্স ২৪ : ‘ওয়াজদা’ যখন টিভিতে বা ডিভিডিতে সৌদি আরবে মুক্তি পাবে তখন কেমন প্রতিক্রিয়া আশা করছেন?

হাইফা আল মনসুর : দুবাই ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে যখন ছবিটি দেখায়, তখন আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। ছবিটি ভেনিসে প্রদর্শণের পর তখন অনেক সৌদি আরবের অনেকেই দুবাইয়ে ছবিটি দেখতে এসেছিলো। তারা কিন্তু ছবিটি পছন্দ করেছে। কেউ কেউ বলেছে তারা ছবির কিছু কিছু স্থানে প্রাণ খুলে হেসেছে। এটা নিশ্চিত যে, চলচ্চিত্র উৎসবে যারা গিয়েছে তারা সবাই উচ্চবিত্তের এবং শিক্ষিত। এখন আমারা দেখতে অপেক্ষা করছি ছবিটি সৌদি আরবের সাধারণ মানুষ কিভাবে গ্রহণ করবে। আমার ধারণা তারা আমার চিন্তার জায়গাটা ধরতে পারবে। এটি একটি কিশোরীর গল্প, যে কিনা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। যদি কোন বাবা এ ছবি দেখে তার মেয়ের জন্য কিছু করার চেষ্টা করে সেটাই আমার জন্য অনেক কিছু হয়ে দাঁড়াবে।

Share
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম