সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৩

হুমায়ূন আহমেদ ও ফুচকা ভালোবাসা মেয়েটির জন্য

at সোমবার, মার্চ ১১, ২০১৩  |  No comments

কাশবনের চিঠি
ধরে নাও এ আমার গোপন গিটার। মাঝে মাঝে সুর না তুললে জং ধরে সুতায়। আমি তাই মাঝে মাঝে একাকিত্বের সুর তুলি। মধ্যরাতে সেই সুরে মাতাল করে অন্ধকার। ডুবতে থাকি। দেখি আমি আর আঁধার পরস্পর সমান শত্রু তোমার।
এক একটি রাত এক একটি স্বপ্নের গল্প নিয়ে বসে থাকে তোমার জন্য, তুমি তো নও মোহিনীর বন্ধু, নও কোনও বৃত্তবন্দী রাজকণ্যা; যা ভাবতে ভাবতে তোমার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে।
অথচ রোজ তোমার জানালায় এসে ডাক দেয় কাশবন, বাইরে জোছনার বন্ধু তার যৌবনের গল্প বলতে থাকে- বাতাসের ঘ্রাণে দুলতে থাকে তোমার শরীর; সবুজ জলপাই বনে ঢেউ খেলা জোছনা বাড়ির পাশের কাশবন হয়ে ঢুকে যায় তোমার গোপন শৈশবে; এইবার বুঝি কাশবন আমাকে চিঠি লিখবে।

আমি কি সত্যিই তোমার শত্র“? এ ভাবতে পারলে বেশ লাগতো। জানো, হোমিও ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে। বলেছে, দুইবেলা আপিস আপিস করে কাটিয়ে দিতে। আমি তাই করার চেষ্টা করছি। আর খোঁজে দেখছি, কোথায় ভালো ফুচকা পাওয়া যায়। তবে সমস্যা হয়েছে কি, ঐ আপিস আপিস বোধহয় আমার রক্তে নেই। রক্তে যে কোন হিমোগ্লোবিন মেশানো এটা মাঝে মাঝে আমি নিজেও বুঝি না। বুঝবো কিভাবে বলো, ঠিকঠাক মতো তো কোনও কিছুই করতে পারলাম না। তবে কোনও কিছু না করতে পারলেও যা চাই তা কেবল তোমার জন্য হয়তো নয়। হয়তো তোমাকে অতিক্রম করে আরও বৃহত্তর জীবনের জন্য একটা স্বপ্ন খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি কিনা এ সংশয় মাঝে মাঝে কাজ করে। আমার শংসয়গুলোই কি আমার অস্তিত্বের কথা জানান দেয়, তুমি কিছু জানো এ ব্যাপারে? থাক, তোমার এত জেনে কাজ নেই। চলো আমরা তাস খেলে আজ রাত্রীটা পার করে দিই।
অথচ যদি গিটার বাজাতে পারতাম, তবে ঠিকই সুরে সুরে কেটে যেতো নির্বাক রাতগুলো। পড়শির ঘুম ভাঙা চোখে সুখের মরিচগুড়া ভেঙে দিয়ে বলতাম- দেখ ধামরা, জীবন কাকে বলে? কাকে বলে ছাই রঙা বাতাসের ডানা? তবুও দেখো আমার যে গিটারটার কথা বলছিলাম, তাতে সুর তোলা আমি শিখিনি। তবে শব্দ করা শিখেছিলাম। আমি গিটারটিকে কথা দিতে পারিনি, তাই তার সুর আমার হাতে আসেনি। তবে হ্যা, সেই হাওয়ার গিটার আবার আমার হাতে এসেছে। তার সুতায় মরচে পড়েছে। অথচ এবার কেমন বাজতে চাইছে তীব্রভাবে।অথচ কি তীব্রভাবে না এখন সেই গিটার রাতের অন্ধকারে তার প্রতি অবহেলার অভিযোগ তুলছে। মাইরি বলছি, আমি অবহেলা হয়ে যাবে ভয়ে তাকে আমি সুপাত্রে দান করতে চেয়েছিলাম। অথচ সেখানেও যে একটা মৃত্যুদূত তার জন্য খাড়া হয়ে বসে আছে সে আমি জানতাম না।
গিটারের সাথে তো গানের সম্পর্ক, তাই না? কিন্তু তোমার তো গানের চেয়েও বেশী সম্পর্ক কথার সাথে। তুমি হয়তো জানো না, আমি নিজেই একটা কথা। তোমাকে তো কথার জাদুকর প্রতি সন্ধ্যায় এসে গল্প শুনিয়ে যায়। আমি তো তেমন কোনও গল্প কথক নই। আমি কেবল তোমার চোখের ভাষা পড়তে চাই। চাই কাষবনের ভাষা তোমারও আয়ত্ত হোক।
আমারও একটা নাম রয়েছে তোমার দেয়া। আমার সেই নাম কিনা আমি ভুলেই যেতে বসেছিলাম। অথচ কি আকুল নয়নে চেয়েছিলাম এই শব্দটিকে। হয়তো সে সময় তোমাকে চাওয়ার চেয়ে আরও তীব্র আরও কামনা জর্জরিত কণ্ঠে সাজিয়েছিলাম একটি নামের বাসর।
ছেলেবেলা থেকে জেনে এসেছি, যাকে তুমি সবচে বেশী ভালোবাসো সেই তোমাকে ভোগাবে সবচে বেশী। আমাকে তুমি এত ভালোবাসো তা তো কখনো বলো নি। আসলে তুমিও জানো এ প্রচণ্ড রকম মিথ্যে শব্দের এক জাল মাত্র। তারচে’ মুক্তবাজারের সুত্রে বলতে পারি একটা কিছুর লেনদেন। সেটা সর্বোচ্চ সতর্কতার স্থানে গিয়ে বলতে পারি সেই ‘কিছু’টা হলো আস্থা।
থাক, এসব কচকচানি ভাল্লাগে না। একটু লু হাওয়া গায়ে মেখে আসি। চলো, আজ খালি পায়ে হাটি অনেকটাপথ। পূর্ণিমার আলো খেয়ে খেয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারণ করি। এমন নিমন্ত্রণ করায় তুমি নিশ্চয় রেগে আছো। বাহ! চমৎকার কপট তো তুমি। হুমায়ূন আহমেদের গল্পগুলো সেখানেই কেবল ভালোবাসো, বাস্তবে এত রূঢ় তবে কেন? আমি ভালো ছেলে বলে? আমি ভালো ছেলে নই। মাইরি বলছি, ভালো ছেলে হবার লোভে আমি জন্মাইনি। আমি মানুষ হওয়ার লোভে জন্মিয়েছি। যেই মানুষটার লোভ, লালসা, স্বপ্ন আর সাধ যেমন থাকবে তেমনি যেনো থাকে মায়া ও প্রেম। মানুষটা তাই তোমাকে তীব্রভাবে চাইতে যেমন পারে, যেতে পারে ফেলে রেখেও।  আবারও বারবার কেনো অস্তিত্বের প্রসঙ্গ উঠে আসছে? চ্যাপ্টার বাদ।
তারচে একটা স্বপ্নের কথা শোনাই তোমাকে। এই বলেই বিদেয় নিবো। খুব মহান কিছু না। একটি বিছানার শয্যা, যার চারপাশে বসবাস রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়ার গ্যেটে থেকে শুরু করে লালন ও গৌতম। (তুমি চাইলে আরও কাউকে এখানে নিমন্ত্রণ করে পারো।) যদি না চাও তবে তালের রসের মতো মাতাল কোনও কবিতার তাক থাকবে না আশপাসে। অথবা সবগুলো তাকের ছায়া ভর্তি হয়ে যাবে তুমি তে।
তোমাকে নিয়ে আর পারলাম না। কেবল তুমিতে ভর্তি হয়ে এলো এখানে সব। কেবল তুমি হয়ে যাওয়া কেমন যেন অস্পৃশ্য মনে হয় না?

Share
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম