০১.
এই যে আমি, কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠিতে এই যুগে
এসে জন্মিয়েছি।
হ্যা। অবশেষে এই পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছি যে আমি
আসলে আমি নই, পূর্বে জন্মে কালিদাস আমাকে চিঠি হিসেবে পাঠিয়েছিলো। আকশ পথ ভুলে চলে
এসেছি এই জমানায়। দেখি জমানার লাল-নীল-হলুদ-সবুজ আকাশ। আর ভেবে পাই না আমি কে, কি বা
আমার পরিচয়। মিথ্যে নয়, আমি কালিদাসের ডাকে পাঠানো চিঠি। তোমার পরিচয় বলো।
০২.
জানিনা, কেন জানি অফিসের সময় হয়ে আসার কিছুক্ষণ আগেই
আমার ঘুম পেতে থাকে। ঘুমাতে চেষ্টা করলেও ঘুম আসে না। এই ঘুম জড়ানো চোখে প্রতিদিন অফিস
যাই, অফিস করি। অফিস কিন্তু মন্দ লাগে না। মন্দ লাগে ঘুমের শত্রুদের অবাধ আচরণ। এইসব
যন্ত্রণার মুহূর্তগুলোতে তোমার কথা মনে আসে। আমি জানি, তোমার ঘুমের দিন ছোট হয়ে আসে
প্রতিদিন। তুমি জেগে থাকো অহর্নিস। আমি তোমার জেগে থাকা পাহাড়া দেই। সেই জেগে থাকার
পাহাড় যেনো ধসে না পড়ে রানা প্লাজার মতো। অন্তত সে পাহাড়ের নিচে যেন চাপা না পড়ে হাজারো
মানুষের মতো আমার স্বপ্নেরা। স্বপ্নেরা বেঁচে থাকুক এই নিয়ে বেঁচে থাকি আমি। অথচ কি
করুণ মৃত্যু আমার অপেক্ষা করছে তুমি জানো না। আমিতো জানি আমার মৃত্যু নেই। মৃত্যু আছে
আমার ছায়ায়। কিন্তু আজ জেনে গেছি এই সত্য গতকাল রাতের সূর্যাস্তের সাথে ডুবে গেছে এক
মায়াময় ভূবনে। সে গল্প অন্য কারো প্রভাতের জন্য তোলা থাক। তার চেয়ে তোমাকে বলি আমার
রহস্যের গল্প। তুমি বলেছো- আমাকে ভেবে কেউ
কষ্ট পাক সেটাও চাইনা। এ হয় না, হবার নয় তুমি জানো। কারণ, তুমিতো মানুষ। তোমাকে
ঘিরে কথা উপকথা নানা কথা মিলে একটি জগৎ তৈরি হবে। সেই জগতের সবাইকে তুমি নিশ্চয়ই
খুশী করতে পারবে না। সেই দায়িত্ব নিয়েও তুমি আসো নি। তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে এইসব
মোহময় পৃথিবীর যন্ত্রণাকে সইতে। হ্যা, মোহময় পৃথিবীর যন্ত্রণাকে সইতেই তোমাকে
বেঁচে থাকতে হবে। তোমার পালাবার কোনও পথ নেই। কারণ, তোমাকে বন্দী করেছে। তুমি তার
থেকে বেরুতে পারবে না প্রিয়তমা পাখি। তোমার জন্য এই কণ্টকাকীর্ণ পথ অপেক্ষা করছে।
ভালো থেকো বন্দিনী।
০৩.
এই পৃথিবীর মোহময়
বাতাসে আমি সেই ডাকপিয়নের ঝোলা থেকে উঠে আসা একটি ভুলের নাম। তোমার কাছে কতবার
বলবো সেই পঙক্তিমালা? আমি জানি তুমি তা শোনবে না। শোনার জন্য প্রস্তুত নও তুমি। অথচ
তোমাকে নিয়ের রাত্রির ঘোরে বসবাস করছে পাখিরা। আমি জানি, সেইসব পাখির নাম আমার নামে
নয়। তারা জন্মেছিলো তুমুল বৃষ্টির গন্ধ নিয়ে। মাঝ রাত্রে বারান্দায় বসে বসে সেই
বৃষ্টির গন্ধ বিলানোর জন্য তোমাকে প্রয়োজন। তোমার বুকের জামার ভেতর দেখো তার
আমন্ত্রণ রয়েছে কিনা। তুমি খোঁজে পাবে না জানি। ঐখানেই তোমার মিথ্যেয় ভরা জীবন। এই মিথ্যের দেয়াল যখন
ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে, তুমি টেরও পাবে না। বুঝবে না কোথা দিয়ে নিঃশ্বেস হয়ে যাবে
তোমার মিথ্যেয় ভরা জীবনের গোপন চাবি কাঠি। তুমি বাঁচবে কি করে? ঐ তো তোমার আনন্দ ও
বিষাদের ঘুড়িমাখা ডায়রী। তোমার উঠানে কি তখন রেলগাড়ির গোপন ঝমাঝম বাড়তে বাড়তে ঘুম
হয়ে যাবে শৈশব কৈশোর যৌবন? আমি জানি না। আমি এসব রহস্যের চেয়ে ভালোবাসি এইটুক
ছলনার আগে বেড়ে ওঠা অনুভূতির গল্প। হ্যা, তোমার মুখোমুখি বসে আমি আমার
অনুভূতিটুকুই বলতে চেয়েছিলাম বা চাই। আর
তা না পেরে আমি তৈরি হচ্ছি পৃথিবীর নির্জনতম অনুভূতির পাহাড় নিয়ে। এই পাহাড় বড় হচ্ছে
ধীরে ধীরে। সে বেড়ে উঠবে আকাশের মতো বিশাল হয়ে। এই করে করে জেনে গেছি এ এক অদ্ভুত
রোগ। এর থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন। আর আমি যদিও উপায়
জানি, কিন্তু তা এপ্লাই করার পদ্ধতি আমার জানা নাই। আমি তাই অচল মুদ্রার মতো।
৪.
সে এসে বিকেলে
বিষণ্নতার চিঠি লিখে দিয়ে গেলো। বললো এই বিষণ্নতা কেবল ভেতরে। বাইরে মোটেও নাই।
এবং তা ভয়াবহ আকারে। সেই অন্ধকারে আমি তার গোপন প্রেমের খবর জানতে চাই। জানতে চাই
তার বেঁচে থাকার গল্পগুলো। সে কি এখনো রাতের চেয়ে দিনেই বেশী বলে নিজেকে লুকিয়ে
রাখার গল্প? সেইসব গল্পেই যে বেঁচে আছে তার অনুভূতি। আমি জানি, আমার পৃথিবীর
মানুষজন আমার অনুভূতি বুঝতে চায় না। তাই চেয়ে থাকি সেইসব মুখেদের ভিড়ে। যারা গল্প
বলেন, নিজের অথবা তার জানালার অনুভূতির। তার জানালার পাশে যে শিউলী ফুলের গাছ, তার
জন্য যে আমি মরে যাই। তাকে যে ভালোবাসি বলা হয় না সেই কথা। অথচ বেঁচে আছি তা-ই
বলতে। দেখো কত তীব্রভাবে জমে আছে তার ভালোবাসার বরফ। এই ছুলো বলে সে ধরে আছে
বৃষ্টি। অথচ আমি নেই সেইসব পাথর খন্ডের জীবনের আশ-পাশে। থাক না এইসব ছা-পোশা জীবনের স্বপ্ন সম্ভব
গল্পের জন্ম মৃত্যুর ঠিকুজি। বরং এবার একটু গল্প করে কাটাই।
৫
-তুমি কখনো কাউরে বার
বার চেষ্টার পর রিচ করতে না পেরে দেখছো তোমার অনুভূতি কি হয়?
-এক্ষেত্রে হয়ত আমি
আপনার অনুভূতি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারছিনা, সেটা সম্ভব'ও না! কিন্তু তাহলে
আপনাকে দুইটা পথের একটাই বেছে নিতে হবে। কারন এখন যদি আবার কোনভাবে যোগাযোগ
স্থাপিত হয় এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন কিছু এই অনুভূতি আরো তীব্র রূপ
নিবে!
বহুবার ভেবেছি। এই
পৃথিবীর আলো বাতাস এইসব গল্পের জন্য নয়। এইসব গল্পের আগে ও পরে কিছু থেকে যায়। রয়ে
যায় কেবল ধুলোর বাক্সে গুচ্ছ গুচ্ছ অনুভূতির পঙক্তি। তাই আর কিছু বলার আগে আমি
কেনো হলুদ খামে পোস্ট করা ভুল ঠিকানার চিঠি হয়ে যাই না?
আবেগ ছুঁয়ে গেলো আমাকেও। ভালো, খুব ভালো।
উত্তরমুছুন