শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সাজেকের পথে

at শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫  |  No comments

 দীর্ঘদিন কোথাও যাই না। যাই না মানে কেবল বাড়ি যাই, আর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরি। অথচ গত দেড় বছরে ছোট বড় হাফ ডজন পরিকল্পনা করে ব্যর্থ। কারণ আমার সময় হইলে বন্ধুদের হয় না, বন্ধুদের হলে আমার হয় না। যা শালা! এই সংকট যদি না কাটে তবে তো মহা বিপদ। এই বিপদ কাটানোর জন্য আর কারো সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অফিসে ছুটি চাইলাম। পাওনা ছুটি, সে-ও পাইতে বহুত পথ পারি দিতে হইলো। কী আর করা! নিজের শিডিউলই দুই বার পিছাইয়া শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের টিকিট করে তূর্ণা এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম। তবে মূল গন্তব্য চট্টগ্রাম নয়। শিল্প নগরী কেবল ভায়া। মূল লক্ষ্য পার্বত্য জেলাগুলোর তুলনামূলক কম পরিচিত ও পরিচিত জায়গাগুলো।

২৩ তারিখ সকালে চট্টগ্রাম গিয়ে নেমে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়িতে একটা গ্রামের নাম আছে ‘খাগুয্যাছড়ি’। এই নাম থেকেই কি খাগড়াছড়ি নামকরণ হইছে? হতে পারে। চট্টগ্রাম পাড় হয়ে যখন খাগড়াছড়ির বাসে উঠি, তখন মনে হলো এখানেই আমার ছোট চাচা আজ প্রায় ২০/২২ বছর ধরে থাকছেন অথচ কখনো যাওয়া হয় নি। এবার গেলেও সেখানে যাওয়া হচ্ছে না। যাচ্ছি অন্য কোনও খানে। যাচ্ছি সাজেক। যেই জায়গাটা আসলে পড়েছে রাঙ্গামাটি জেলায়। কিন্তু একমাত্র পথ খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া। খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার আগে একাধিক বড় বড় পাহাড় পার হতে হয়, এই পথে আমি মোটেও অভ্যস্থ নই বিধায় আমার মুগ্ধতা বাড়েই কেবল। শহরটা এমনই। চারপাশে পাহাড় মাঝখানে ছোট্ট একটা শহর। আসলেই ছোট্ট। ব্যাটারি চালিত অটো দিয়ে দশ মিনিট রাইড করলেই শহরের এক মাথা দিয়ে ঢুকে অন্য মাথা দিয়ে বের হয়ে যাওয়া যাবে। সাজেক যেতে হলে আপনাকে এই ছোট্ট শহরটিতে আসতেই হবে। যদি না সরাসরি হেলিকপ্টারে যেতে চান। আমার যেহেতু হেলিকপ্টারে করে সাজেক যাওয়ার ক্ষমতা নেই তাই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে। আর তাতে করে সবচে ভালো এবং সাশ্রয়ি বাহন হলো চান্দের গাড়ি। সেই লক্ষ্যে আমি যখন খাগড়াছড়ি পৌছালাইম তখন দুপুর ২টা। এই সময় তো দূরের কথা সকাল ১০টার পর খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য কোনও গাড়ি পাওয়া যায় না। তবে সাজেক যাওয়া যায় যে কোনও সময়। আমার ভরসা ছিলো ওইটাই। তাই প্রাইভেটে মোটর সাইকেলই ভরসা হইলো আমার। বিকাল ৩টায় রওনা দিয়ে ৭২ কিলোমিটার রাস্তার মাথায় ১৮শ উচ্চতার পাহাড়ে পৌছাইতে সময় লাগছে সাড়ে তিন ঘন্টা। তবে চান্দের গাড়িতে গেলে ঠিক কতক্ষণ লাগবে এই বিষয়ে আমার ধারণা নাই। যতটুকু শুনেছি, এর কাছাকাছি সময়ই লাগবে। তবে যাওয়ার সময়ই ফেরার ব্যবস্থা করে তারপর যাওয়া উচিত। যদি না আপনি চান্দের গাড়ি রিজার্ভ বা নিজের গাড়িতে না যান তবে ফেরার জন্য এমনও হতে পারে আপনাকে সেখানে অপেক্ষাই করতে হবে যতক্ষণ না আপনি অন্য কোনও ব্যবস্থা পাচ্ছেন।

আমি যখন যাই রাস্তায় সেনা বাহিনী চেকপোস্টে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলো আমার কোনও বুকিং আছে কি না। আমার ছিলো না। কিন্তু তারপরও আমি গিয়ে থাকার ব্যবস্থা পেয়ে গেছি। সাজেকে প্রতি উইকেন্ডে প্রচুর ট্যুরিস্ট যায়। তাই বুকিং ছাড়া যাওয়া অনেকটা রিস্কি। তবে সোমবার-বুধবার, এই তিনদিনের মধ্যে গেলে সাধারণ ট্যুরিস্টদের জন্য একদমই নয়। কারণ এর সর্বনি¤œ ভাড়া দশ হাজার টাকা নাইট। অন্য দিকে সাজেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত প্রথম রিসোর্ট (আলো রিসোর্ট) এর রুম ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা। অবশ্য সেবাও দুইটার সম্পূর্ণ পৃথক। তবে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলো রিসোর্টে আরও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা আছে। একটা কমন রুম আছে। যেখানে সিঙ্গেল বেড এর ভাড়া মাত্র সাড়ে তিনশ টাকা। তবে ভুল করে যদি বুকিং ছাড়া উইকএন্ডে চলে আসেন। তাহলে আপনার জন্য একমাত্র অবলম্বন হতে পারে লোকাল আদিবাসীদের বাড়ি। এখানে আদিবাসীরা খুব নামমাত্র টাকার বিনিময়ে ট্যুরিস্টদের থাকতে দেয়। যাওয়ার আগে মনে রাখতে হবে জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে। সেখানে পানির সংকট সব সময়ই। তাই শীতে উইকএন্ডে গেলে সম্ভব হলে সাথে মিনিমাম খাবার পানি নিয়ে যাওয়া নীরাপদ।

আমিতো বর্ষায় গেলাম। ফলে এই সময়ে এই সংকটটা নেই। কেনার মতো পানি সেখানে না থাকলেও প্রয়োজনীয় পানি ঠিকই পাওয়া গিয়েছিলো।
সাজেকে যাওয়াটা সবচে কঠিন। কঠিন বলতে সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় পরছে, কিন্তু যাইতে হয় খাগড়াছরি হয়ে। কোনও বিকল্প নাই। সেখানে দুইটা হ্যালিপ্যাড আছে। ইচ্ছা করলে যাইতে পারেন। ;) এছাড়া বাসে করে দিঘীনালা পর্যন্ত যাওয়া যায়। দিঘীনালা থেকে সাজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাইতে হলে রেগুলার চান্দের গাড়ি পাওয়া যায়। তবে তা বেশ দেরি করে আসে। ফলে খাগড়াছরি থেকে রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সবচে দ্রুততর এবং নিরাপদ। তবে হ্যা বিকল্প আরও ব্যবস্থা আছে। মোটরসাইকেল ও সিএনজি। সিএনজি কখনোই কাসালং বাজার পাড় হয় না। কাসালং থেকে সাজেক প্রায় ১৮ কিলোমিটার বা তারও একটু বেশি হবে। ঐটুক রাস্তাই সবচে বেশি থ্রিলিং এবং উঁচু নিচু। তাই চান্দেরগাড়ি ইজ বেস্ট। চান্দের গাড়ি সাজেক পর্যন্ত প্রতিদিন যায় না। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার, শনিবার তিন দিন সকালে যায়। এই তিনদিনে চান্দের গাড়িতে জনপ্রতি সাজেকের ভাড়া পড়বে সর্বোচ্চ ২শ থেকে আড়াই শ। অন্যদিন চান্দের গাড়ি রিজার্ভ (নিয়ে যাবে, প্রয়োজনে রাতে থেকে সকালে নিয়ে আসবে) করতে খরচ পড়ে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকা! ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে সরাসরি খাগড়াছরি যাওয়াই ভালো। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির সরাসরি একাধিক বাস (সেইন্ট মার্টিন, ঈগল, শ্যামলী, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি) আছে। নয় ঘন্টা লাগবে মিনিমাম।

Share
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম