শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১১

পদের নাম চীফ এ্যাডভাইজার

at শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১  |  No comments

ক.
হঠাৎই আদালত চত্ত্বরে একটি শোরগোল শুরু হলো। অথচ তেমন কোন বিষয় না বিষয়টা। মাত্র দুই বছর কারাবাসের হুকুম হয়েছে এক আসামীর। আর এই আদেশেই তার স্বজনদের এই আহাজারী। অথচ লোকজন এই ঘটনার আকস্মিকতায় আশ্চর্য হয়ে গেছে। আসামীদ্বয় জেলখানার দিকে চলে যাওয়ার পর পেছন থেকে লোকজন নানা কথা বলা শুরু করছিলো। তার মাঝে একজন বলছিলো, দশ বছর হলে তো না জানি কি হইতো? পেছন থেকে আরও একজন বলে উঠল, মনে হয় মরে গেলেও এরকম আহাজারী শোনা যেত কি না সন্দেহ! এরকম বিচিত্রতার মাঝেই জীবন যাপন করছে রফিক। মাঝে মাঝে তার এই কাজ মনে হয় বিরক্তির চরমতম এক উদাহরণ, মাঝে মাঝে খুব উৎসাহ ব্যঞ্জক। এই আশা নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় তার রুটি-রোজগারের একমাত্র উৎসটি। অথচ এরকম নাও হতে পারতো। হতে পারতো আরও চমৎকার একটি যাপনীয় জীবন। অথবা তার চেয়ে খারাপও তো হতে পারতো। যে কোন রকমই হতে পারতো। এই কাজটি সে হঠাৎই পেয়ে যায়। কাজটিতে টাকা কম। তারপরও ঢাকা শহরে বেঁচে বর্তে থাকতে হলে ন্যূনতম এরকম একটি কাজ না হলে কিন্তু চলে না। যদিও এরচেয়ে অনেক কম টাকায় এরচেয়ে কম খরচের জীবন রয়েছে। কিন্তু রফিকের যাপিত জীবনের যে ধারাবাহিকতা তার জন্য ন্যূনতম এই যথেষ্ঠ। প্রকৃত অর্থে তার সম সাময়িকেরা তার মত কেউ নেই। এই জায়গাটাতেই তার যত তৃপ্তি। অন্যরা হয় তারচেয়ে এক বা দুই ধাপ এগিয়ে; নয়তো আরো একধাপ নিচে। তার ধাপে কেউ নেই বলেই কিনা সে হয়তো এই কাজটি করতে তৃপ্তি পায়। কাজটিও তেমন কিছু না। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সচিবের মতই। কিন্তু ব্যক্তিগত সচিব নয়। যেমন ব্যক্তিগত সচিব তার কর্মকান্ডের হিসাব নিকাশ সামলান সে সামলান তার স্বপ্নের হিসাব নিকাশ। বলতে গেলে রাজনৈতিক ব্যক্তিটির কোন প্রকার সৃজনভাবনার অধিকারী না হলেও বর্তমানে তার নির্বাচিত এলাকায় সে যথেষ্ঠ সৃজনশীল বলে পরিচিতি পাচ্ছে। তার কারণ রফিকের এই কাজ। রফিকের সাথে তার প্রত্যেকদিন সন্ধ্যার সময় একটা সিটিং হয়। এই সিটিং এর মাঝে সারাদিনের কাজের বিশ্লেষণ এবং আগামীতে এই কাজকর্মের ভেতর কিভাবে সৃজন মানসিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় তাই নিয়ে এই বৈঠক। বৈঠক চলে সপ্তাহে সাত দিনই। ছয় দিনের কর্মচাঞ্চল্যের একটি কাঠামোবদ্ধ সিটিং। এবং মাস শেষে কি কি কর্ম চাঞ্চল্য জনসাধারণের মাঝে তাকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলবে এই বিষয়গুলোও আলোচনা হতো রফিকের সাথে। রফিকের আলাদা একটি কবি সত্ত্বা রয়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে হর হামেশাই এই কবির কবিতা ছাপা হয়। তার কবি নামখানাও চোস্ত। ফলে এই নামের কবি সত্ত্বার আড়ালে কোন প্রকার রোজগার না থাকায় পরিবারের বোঝা হয়ে উঠছিলো রফিক। আর শেষ পর্যন্ত এই বোঝা থেকে সে সরে দাঁড়াতে পেরেছে সেটাই বা কম কিসে? নিজেকে চালাতে পারার এই আনন্দ তার কম নয়। তার সম সাময়িক বন্ধুরা যারা কবিতা লেখে, যারা পড়াশোনা করে সকলেই এই মুহূর্তে বেকার। অথচ রফিক কিন্তু নিজেকে চালাতে পারছে।
নেতার একটা বিশেষ প্রোগ্রাম ছিলো আদালত পাড়ায়। আর তার চলে যাওয়ার পর রফিক আদালত চত্ত্বরে এসেছে পূর্ব সফরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। বিভিন্ন পরিচিত এডভোকেটের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কেমন আছেন? কি খবর? এই সব। বেশ কিছুণ যেখানে বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই প্রসঙ্গান্তরে তিনি নেতার প্রসঙ্গ তুলেন। লোকজন বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখান। কেউ কেউ বলেন, আমাদের নেতা তার বিগত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনও আদালত চত্ত্বরে আসেন নাই, কিন্তু এবার আসছেন তাতে এখানকার যে তার সমর্থক সমাজ রয়েছে তারা খুব খুশি হয়েছে। তবে এই আসা যাওয়া অব্যাহত রাখতে হবে। তাতে এই সমর্থকেরা আরও বেশি খুশি হবেন। অথচ তার সম্পূর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়াও সে পেয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, এটা একটা স্যানসেটিভ জায়গা। জনসাধারনের নিরপে বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্যই একজন জনপ্রতিনিধির আদালত চত্ত্বরে আসা একদম ঠিক হয় নি। এতে বিচারকরা ও এক শ্রেণীর আইনজীবীরা প্রভাবিত হতে পারে। যা ন্যায় বিচারের জন্য প্রতিবন্ধক। আরও আশ্চর্য হয়েছে রফিক বিরোধী দলীয় আইনজীবীদের কথায়। তারা বলছে, আরে বুঝেন না, কোন কাজ নাই তো আসছে মতা দেখাতে! আমরা কিছু বুঝিনা মনে করেন, সব লোক দেখানো। এত কিছুর উপর নির্ভর করে রফিকের সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। এক দিক থেকে বিষয়টা তার ভালোই লাগে। যে মানুষটিকে কিছুদিন পূর্বে দূরে থেকে দেখতে হতো; একমাত্র নির্বাচনের সময় অথবা জনসভায়ই কেবল তাকে কাছ থেকে পাওয়া যেত সেই মানুষটিকেই এখন সে পরামর্শ দেয়; ভাবতেই রফিক মাঝে মাঝে শিহরিত হয়। অথচ এই কাজটা পাওয়ার আগে তাকে সে একবারই দেখতে পেরেছিলো। সেই একবার আবার নির্বাচনী জনসভায়, অনেক দূরের দেখা। এখন এই লোকটির সাথে তার নিত্য দেখা হয়, কথা হয়, আলাপ পরামর্শ হয়। রফিকের ুদ্র জীবনে এ এক আশ্চর্য ঘটনা। তাকে কেন্দ্র করে মূল কাজটি করতে হয় মাসের শেষে বা প্রথম সপ্তাহে। তখনই সারা মাসের কর্ম পরিকল্পনার ভুল বা দূর্বলতা নিয়ে আলাপ আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত জানায় রফিক। এখন পর্যন্ত যে সকল সিদ্ধান্ত সে জানিয়েছে তার সব কটিই দারুণ কাজে লেগেছে বলে সে নিজেও তার সাফল্যে কিছুটা আনন্দিত। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে বলে মোটেই ভাবিত নয় সে। চলছে তো... এই বেশ।


খ.
ইদানীং তার এই কাজটিকে ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু ভাবাচ্ছে। অতিরিক্ত মানে একটু নিজের মত বেশ কিছু। প্রথমত তার কবি সত্ত্বা একটু ঝিমিয়ে পড়ছে এতে। এই কাজটি শুরু করার আগে প্রায় প্রত্যেক মাসে একটি না পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হতো। বেশ কিছুদিন পর পর একটা আধটা গল্প বা গদ্য। আরো নিত্য নতুন আইডিয়া প্রকাশ হতো মাথা থেকে। চমক দেওয়ার মত বেশ কিছু আইডিয়া তার চারপাশে চাউর হলেই বন্ধু মহলে বিশেষ একটা সুনাম ক্ুঁড়িয়েছে রফিক। কেউ কেউ তাকে মজা করে ডাকতো পরিকল্পণা প্রতিমন্ত্রী। এই সুনামের সুবাদেই জুটে গিয়েছিলো তার প্রাণের মানুষ। ধীরে ধীরে তার প্রাণের মানুষ এই সময়ে আরও কাছে এসেছিলো। যাকে নিয়েই ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখা শুরু করেছিলো রফিক। কিন্তু এই সময়ে রফিকের এই কাজটিই যত গন্ডগোল বাধিয়েছে। এই কাজটি পাওয়ায় সে অন্য দিকে কোনও চেষ্টাও করছে না। অথচ একটি স্থায়ী চাকরী হলে সংসার বাঁধার চিন্তাটা করতে পারতো। এখন একপাশে নতুন ধরনের একটি কাজ। কাজটিতে একটি মাসিক পরিকল্পণা সফল হলেই কেবল তার টাকা পয়সা মিলে। পাশাপাশি নেতার প্রাপ্য জনগনের অভিনন্দনের একটা বড় অংশও মেলে তার। এ নিয়ে তার গর্বও কম নয়। এ পথে আর কিছু পয়সা হলে সে এই পেশাতেই স্থায়ী হতে চেষ্টা করতো। অবশ্য এর জন্য কষ্টও কম নয়, এই জন্য তাকে জনগনের মনস্তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে হয় অনেক। মনস্তত্ত্বের তাত্ত্বিক জ্ঞান আর ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে বিস্তর মাথা খাটাতে হয়। আর এর ফলে তার সাহিত্য চর্চা ব্যহত হয়। কিছুদিন পূর্বে একটা পত্রিকার বিশেষ একটা এসাইনমেন্ট তাকে দিয়ে লেখাতে চেয়েছিলো সাহিত্য পাতার সম্পাদক, তার সময় ছিলো না বলে সে রাজি হয় নি। অথচ সেই সাহিত্য সম্পাদক তাকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলো সেই পত্রিকা অফিসে একটা কাজ যোগার করে দেবে। কাজটি পেলে সে একটু থিতু হতে পারতো। কিন্তু কি এক দুর্বোধ্য ভালোবাসায় সে এই ফ্রি-ল্যান্স কাজটি করছে। অথচ তা কিন্তু কখনোই পারমানেন্ট নয়। এদিকে তার প্রেমিকার বাড়িতে প্রতিনিয়ত বিয়ের তাড়া। এই বুঝি হয় হয়। এখন কোনও রকমে আটকে আছে কিন্তু যে কোন মুহূর্তে বিয়েটা হয়ে যেতে পারে। আর তার বিয়ে হয়ে গেলে তার অবস্থা কি হবে সে কিছু ভাবতেই পারছে না। ইদানিং মেয়েটি তার একটা বড় অবলম্বন হয়ে পড়েছিলো। হঠাৎ করে এই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে রফিক সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বে। মাঝে মাঝে যে এই ভাবনা তাকে পেয়ে বসে। তখন তার গবেষনা শিকেয় ওঠে। জাহান্নামে যায় তার এ্যাডভাইজিং জব। মনে হয় পৃথিবীর সর্ব নিকৃষ্ট দোজখে বসবাস করছে সে। এই সময় অন্য কোন ভাবানাও তার মাথায় আসে না। কি থেকে কি করবে ভেবে পায় না। তবে সা¤প্রতিক কালে অবশ্য তার একটা বড় পরিকল্পণা সফল হয়েছে। যার ফলশ্র“তিতে একটা বড় অঙ্কের টাকাও পেয়েছে। বস কে বলেছিলো এক সপ্তাহের ছুটি দিতে। এতে মানসিক মুক্তি মিললে পরবর্তিতে আরও বেশি ক্রিয়েটিভ আইডিয়া মাথা থেকে আসতে পারে। কিন্তু বস বললো সামনে বাজেট। তাই বাজেটের জন্য অনেক কাজ। এই সময় তোমার এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং তুমি সকাল সন্ধ্যা একটা ট্যুর কাটিয়ে আস। এতে আপাতত বাজেটের পূর্বে তুমি কিছুদিন ফ্রেশ থাকতেও পারবে, বাজেটটাও শেষ হয়ে যাবে। পরে না হয় আরেকবার এক সপ্তাহের ছুটি কাটিয়ে এসো। বসের হুকুম শিরোধার্য মনে করে রফিক একদিনের ছুটি নিয়েই আপাতত শান্ত। তবে এই ছুটিটা সে কাটিয়েছে তার প্রেমিকাকে নিয়েই। সারা দিনের ছুটি কাটাতে তারা চলে গিয়েছিলো তাদের শহর যমুনার চর দেখতে। বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুরে বালু আর বালুর চর। এই চরের মাঝে অল্প অল্প করে ধান বোনা। মাঝে মাঝে অন্য শস্যও চোখে পড়ে। তরমুজ, বাঙ্গি’র মত বালু মাটিতে হওয়া শস্যগুলো দেখিয়ে রফিক রূপাকে বলেছিলো আমি হলাম এই নদীর মতো। বর্ষায় প্লাবন আর খরায় চর। আর তুমি হলে এই শস্যের তে। মাঝে মাঝে ফসলের আনাগোনায় আমাকে সতেজ রাখার চেষ্টা করা। তার কথায় মৃদু মৃদু হেসেছিলো রূপা। তার চোখে দেখা দিয়েছিলো এক আনন্দের ঝিলিক। এই আনন্দই রফিকের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসার পর রফিক সব কিছু নিজের করে ভাবতে পেরেছিলো বলতে গেলে রূপার একক কৃতিত্বে। রূপা এই সময় তাকে প্রচুর সহায়তা করেছে। রূপার নিজেরও তখন পরিবারে চলছিলো টানা পোড়েন। কিন্তু সেই টানা-পোড়েন কে দু পায়ে পিষে এগিয়ে এসেছিলো রফিকের জীবনকে সুস্থির করতে। দুজনেরই সামনে তখন মাস্টার্স পরীা। অথচ রফিকের একমাত্র বড় ভাই তাকে যখন আর টাকা পয়সা দিতে পারবে না বলে ঘোষণা দিয়ে দিলো তখন রফিক সম্পূর্ণ বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলো। কারণ, টিউশনির মতো শিা বাণিজ্য করে সে কখনোই টাকা পয়সা কামানোর কথা ভাবতেই পারে না। এটা তার কাছে অশিার ফল বলে মনে হয়। মনে হয় যারা প্রকৃত শিায় শিতি হতে পারে নি তারাই কেবল এই পেশায় যেতে পারে। যার ফলে অল্পতেই অতলে চলে যাওয়ার এক বিরাট বিপদ থেকে রফিক মুক্তি পেয়েছে সেই সময়। অথচ এই সময় বিশেষ করে এই পরীা শেষের পর রূপার বিয়েটা কোন ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। একমাত্র উপায় হলো একটা চাকরী যোগার করা। কিন্তু রফিকের কোন গত্যন্তর না দেখে রূপা বলে উঠল আমার পে আর একদিনও এভাবে চলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আর পরিবার কে দমিয়ে রাখতে পারছি না। তুমি একটা কিছু কর। না হলে আর কিভাবে? এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আমাকে তোমার হারাতে হতে পারে। এমনকি বিনা নোটিশে! এই কথা শোনার পর রফিক তার নেতা’র সাথে এক বৈঠকে বসলো। তার বস তাকে বললো তুমি আর কটা দিন অপো কর। বাজেটের প্রথম অধিবেশন হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাজেট ইতিমধ্যে ঘোষনা দিয়েছে। কিন্তু আমি আমার এলাকার জন্য কতটুকু বরাদ্দ পাব আগামী এক অর্থ বছরে তা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপরই আমি তোমার কাজের একটা পরিপূর্ণ চাহিদা আমি তোমাকে জানাতে পারব। আর মাত্র কটা দিন। এত সাবলীল ভাষায় এবং ধীরস্থীর ভাবে তিনি বললেন যে, তার মুখের উপর অন্য কোন কথা বলা গেল না। অথচ তিনি তার স্ত্রীর কাছেও একই রকম ভাবে কথা বলেন কি না রফিকের যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। পর মুহূর্তেই সে ভাবলো সা¤প্রতিক কালের নেতারা তো এই রকমই হয়। মুখের কথা দিয়েই তো জনগণকে ভুলিয়ে রাখে। কাজে আর কতণ। হয়তো তার আগামী পরিকল্পণার পর তাকে আশা দিয়েই রাখবে, কোনও ফলাফল পাবে না। তাই ভবিষ্যতের কথা তাকে ভাবতেই হচ্ছে। কি করবে সে? কী’ই বা করতে পারে।

গ.
শুরু হয়ে গেল নতুন চাকরি খোঁজাখোঁজি। পরদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে একটু আগে ভাগে উঠে হকারকে বলে দিল একটা করে চাকরির পত্রিকা দেওয়ার জন্য। আজ থেকে চাকরি খোঁজা শুরু করে দিয়েছে এই কথা জানিয়ে দিলো রূপাকে। জানানো হল আর মাত্র পনেরটা দিন বাসাকে ম্যানেজ করো। এই পনের দিনের ভেতর একটা কাজ যোগার ঠিকই করে নিব। তারপর তো আর কোনও চিন্তা থাকবে না। কিন্তু রফিকের কথায় রূপা পুরোপুরি আশ্বস্থ হতে পারে না। বলে এই ভাবে বললেই তো হবে না। কিছু একটা করে দেখাতে হবে। আমি না হয় এই পনের দিন কোনও মতে পরিবারকে বোঝালাম। কিন্তু তারপর কি হবে আমি আর বলতে পারছি না। আমার পরিবার ুধার্ত বাঘের মত হয়ে হয়ে গেছে। কোনও ভাবে আমাকে একটা বিয়ে দিতে পারলেই তাদের হলো। বুঝতে পারছো? হুম, এই বলে রফিক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। সপ্তাহান্তে চাকরীর বিজ্ঞাপনের পত্রিকাটা এলে খুব মনোযোগ সহকারে পত্রিকাটির প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখলো। একটা বিজ্ঞাপন তার পছন্দ হয়ে গেল। তারা একটি মাত্র লোক নিয়োগ করবে। স্নাতকোত্তর চেয়েছে। তার স্নাতকোত্তর না হলেও যে অভিজ্ঞতা তার বিগত ছয় মাসে সে অর্জন করেছে তাতে এই চাকরিটা সে পেয়েও যেতে পারে। ওয়াক ইন ইন্টারভিউ সার্কুলারে আগামী সপ্তাহেই তাকে যেতে হচ্ছে ঢাকায়। আজ থেকে আর মাত্র আট দিন সময়। এদিকে রূপাকে দেয়া দিন কয়েকের সময় শেষ হয়ে আসছে। পাঁচদিন ইতিমধ্যে চলে গেছে। আর মাত্র দশ দিন। এই শেষ ক’দিনে একটা কবিতাও লিখতে পারে নি রফিক। প্রচণ্ড মানসিক চাপে কোনও প্রকার কবিতার কথা মাথায়ই আনতে পারে নি। কবিতা লিখতে বসলেই শুধু পরামর্শ মাথায় আসে। কবিতার খসড়াগুলো একে একে পরামর্শের খসড়া হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এই চিন্তায় সে আরও বেশি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। ভাবে কবিতা কি আর লিখতে পারবো না? তাহলে বাঁচবো কিভাবে? কবিতা আর রূপাকে ছাড়া সে বাঁচতে পারবে না বলে নিজেকে মনে করে। পরামর্শ দেয়ার এই কাজটি সে এতই ভালোবেসে ফেলেছে যে এই ধরনের কাজই সে এখন খুঁজতেছিলো। ভাগ্যে থাকলে পেয়েও যেতে পারে এই কাজটি। অবশেষে এই করে করেই তার চাকরির ইন্টারভিউ এর দিন চলে এলো। আগের দিন বিকালেই তার বস জন নন্দিত নেতার কাছ থেকে একটা বিশেষ সুপারিশ তার জীবন-বৃত্তান্তে নিয়ে নিলো। ঠিক সুপারিশ বলা যায় না, তবে তা সুপারিশের মতই একরকম। তার অধীনে তার জন্য যে উপদেশক হিসেবে তিনি কাজ করেছে তার একটি সনদপত্র বলতে গেলে। তবে এই সনদপত্রের মূল ল্য হলো কাজটি যেন হয়ে যায়। কাজটি হলেই আপাতত রূপাকে নিয়ে আর ভাবতে হবে না। ভেবেই সে রওনা হলো ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্যে।

ঘ.
রূপার বাড়িতে দীর্ঘ দিনের চাপ আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না। সেই দিন, যে দিন রফিক ঢাকা রওনা হলো। সেই দিন সন্ধ্যায় কোন প্রকার বিনা নোটিশে রূপার বিয়ে হয়ে গেল। এর মাঝ দিয়ে রফিকের বেঁচে থাকার একটি প্রধান অমলম্বন হারালো তার অজান্তেই। ঢাকা থেকে যখন চাকরির সংবাদটা নিয়ে ফিরে আসলো রফিক দেখলো প্রথমতম নির্ভরতার স্থান আর তার নেই। আগামী সপ্তাহেই তার চাকরির জয়েনিং। সেলারি প্রাথমিক অবস্থায় পঁচিশ হাজার টাকা। পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে আরও বাড়বে। আর না পারলে চাকরি থাকবে না। এই শর্তে পাওয়া চাকরিটা পেয়েছিলো রফিক। ভেবে পাচ্ছিলো না তখন সে কি করবে? রফিক আহাম্মেদ নামের কবি সত্ত্বা আর রফিকুল ইসলাম নামের যে বেসরকারি কোম্পানীর চীফ এ্যাডভাইজারের পদটি তার এখন রয়েছে কোনটিকে সে বেছে নেবে? আস্থার কোনও প্রতিদান সে দিতে পারে নি রূপার কাছে। কবিতাও তার কাছে রাখছে না আস্থা। এই কান্তিলগ্নের শেষে আগামীকাল ভোরে বাড়িওয়ালা আসবে এই মাসের ভাড়া নিতে আর আগামী মাসে সে থাকবে কি না জানতে। এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমানো যাক। সকালে যা বলার তাই তো বলা যাবে। 

Share
Posted by eliuskomol
About the Author

Write admin description here..

0 মন্তব্য(গুলি):

এই সাইটের যে কোনও লেখা যে কেউ অনলাইনে ব্যবহার করতে পারবে। তবে লেখকের নাম ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক।

Blogger template Proudly Powered by Blogger. Arranged By: এতক্ষণে অরিন্দম